রাতদিন বাবা মা বলেই যান, “বেশি করে পড়াশোনা কর! রেজাল্ট ভাল হতে হবে এবার!” আমরাও ভাল রেজাল্টের জন্য অথবা ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার আশায় বইয়ে মুখ গুঁজে ডুবে থাকি পড়াশোনায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এত পরিশ্রমের পরও ফলাফল মন মতো হচ্ছে না। অথচ পাশের বাড়ির ছেলেটাই সারাদিন খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকার পরও পরীক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। এর কারণ কি শুধুই মেধার তারতম্য? কখনোই নয়! সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই সমান মেধা দিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেই মেধার সঠিক ব্যবহার আর পড়াশোনা করার নিয়মই ক্লাসের ফার্স্ট বয় আর লাস্ট বয়ের ব্যবধান তৈরী করে।
দৈনন্দিন পড়াশোনা পদ্ধতিতে ছোট্ট ছোট্ট কিছু পরিবর্তন, জাদুকরী এক ভূমিকা রাখবে তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করার পেছনে। পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় হিসেবে সবাই কিছু না কিছু কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু কয়েকটি টিপস মেনে চললে তোমার প্রস্তুতিটি আরও সহজ ও পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই আজকের এই ব্লগে থাকছে পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর কয়েকটি সহজ বৈজ্ঞানিক টিপস।
পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর কয়েকটি সহজ টিপস
একনাগাড়ে বেশিক্ষণ পড়াশোনা নয়
বিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা টানা ২৫-৩০ মিনিট পরিশ্রমের পর হ্রাস পেতে শুরু করে। সুতরাং, একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পড়ে থাকার অভ্যাস বন্ধ করো। পড়ার সময়টুকুকে ছোট্ট ছোট্ট ভাগে আলাদা করে সাজিয়ে নাও।
প্রত্যেকটা ভাগ শেষ হওয়ার পর পাঁচ মিনিট ব্রেক নিবে। এই সময়টুকু একদম chill! তোমার যা করতে ভালো লাগে (কিছু খাওয়া, গান শোনা, ফেসবুকে একবার ঢুঁ মেরে আসা) এই সময়টুকুতে করবে, তারপর সতেজ মনে আবার পড়াশোনা করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
মুখস্থ নয়, বুঝে পড়ো
ছোটবেলা থেকে আমাদের ছড়া, কবিতা ইত্যাদি দাঁড়িকমা সহ মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় সবকিছু মুখস্থ করে ফেলার। এটি খুব ভুল একটি পদ্ধতি। অনেকেই আছে, যাদের কোন কিছুর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে হুবুহু বই এর সংজ্ঞা গড়গড় করে বলে দিতে পারবে, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে বললেই নিশ্চুপ!
Don’t just study hard, study ‘smart’
বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় এই মুখস্থবিদ্যা নির্ভরতা তোমাকে একদমই সাহায্য করবে না ভালো ফল করতে। সুতরাং বই এর সংজ্ঞা মুখস্থ করা বন্ধ করে মূল টপিকটা বুঝতে চেষ্টা করো। কেননা, মুখস্থ দশবার করলে দশবার ভুলবে, কিন্তু একবার ভালভাবে বুঝে নিতে পারলে কোনদিনও ভুলার চান্স নেই!
বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়ো
বুঝে বুঝে পড়ার একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে একই টপিক বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়া। অন্ধের হাতি দেখার গল্প মনে আছে তো? শুধুমাত্র একটি বই থেকে পড়তে গেলে তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। সুতরাং সম্ভাব্য সবরকম সোর্স থেকে শেখার চেষ্টা করো। বন্ধুদের সাথে group study করো, বিভিন্ন লেখকের বই থেকে পড়ো, বড় ভাইয়া/আপুদের সাহায্য নাও। ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই চমৎকার সব শিক্ষামূলক সাইট পেয়ে যাবে তোমার টপিকের উপর।
10 Minute School এ তোমাদের পাঠ্যবই এর টপিকগুলো খুব সহজভাবে মজা করে শেখানো হয়, সেখানের live class গুলোয় অংশ নাও, ব্লগ/ভিডিও ব্লগ গুলো দেখো, আশা করি টপিকটা আয়ত্ত করতে তোমার একটুও কষ্ট হবেনা! পড়াশোনা যে আদৌ কোন ক্লান্তিকর কিছু নয়, বরং দারুণ মজার একটা জিনিস, 10 Minute School এর ভিডিওগুলো দেখলে খুব সহজেই বিষয়টি বুঝে যাবে তুমি।
কাউকে শেখাও
আইনস্টাইন বলেন, “একটা বিষয় তোমার পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হবে তখনই, যখন বিষয়টি তুমি কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবে।” পড়াশোনাকে যদি একটি গাড়ির সাথে তুলনা করো, তাহলে তুমি যখন একটি টপিক পড়লে, তখন সেটি হচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন। কিন্তু শুধু এটুকু দিয়েই তুমি কাউকে ঠিকভাবে বুঝাতে পারবে না টপিকটা। কেননা, কেবল ইঞ্জিন থাকলেই তো গাড়ি চলে না! গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশ – চেসিস, টায়ার ইত্যাদি সব মিলে যুক্ত হয়েই তৈরী হয় একটি গাড়ি।
যখন কাউকে একটি টপিক বুঝাতে যাবে, তখন লক্ষ্য করবে শুধু বইপড়া জ্ঞান দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ঠিক গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মতো, সবগুলো ঠিকমতো জোড়া দিলে তবেই চলবে গাড়ি, সেরকম তোমার টপিকটার বিভিন্ন আঙ্গিকের উপর সার্বিক একটা ধারণা থাকতে হবে, এবং সেটা গড়ে উঠবে কাউকে শেখাতে গেলেই, টপিকটার উপর তোমার জ্ঞান অনেক গভীরে পৌঁছাবে তখন।
নিবিড় মনোনিবেশ
একবার ভেবে দেখো তো, দিনে গড়ে কত ঘন্টা তুমি বইয়ের সামনে বসে কাটাও? এর মধ্যে কতটুকু সময় তোমার অখন্ড মনোযোগের সাথে পড়া হয়? খেয়াল করলে দেখবে, প্রচুর সময় হেলাফেলা করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। “জাস্ট ২ মিনিটের জন্য ফেসবুকে ঢুকবো!” “খেলার স্কোরটা দেখেই টিভি বন্ধ করে দিবো!” পড়তে বসলেই এমন অনেক ইচ্ছা কিলবিল করতে থাকে মাথার ভেতর। এই ইচ্ছাগুলো ঝেড়ে ফেলে দাও এখনই।
একই সাথে একাধিক কাজ করতে গেলে কোনটিই ভালোভাবে করা হয় না। যখন পড়তে বসবে, তখন সম্পুর্ণ মনোযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়। মনোযোগ নষ্ট করার মতো যা কিছু আছে, সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখবে এই সময়টুকুতে। অল্প সময় পড়বে, কিন্তু ১১০% মনোযোগের সাথে পড়বে। আর বিনোদনের জন্য স্টেপ ওয়ানে বলা পাঁচ মিনিটের ব্রেক তো আছেই!
ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরী করো
আমরা সবাই বছরের শুরুতে লক্ষ্য ঠিক করি, “এইবছর ফাটায়ে পড়াশোনা করবো!” এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা “লক্ষ্য” হয়েই থেকে যায়, কার্যকরী আদৌ হয়ে উঠেনা! কেন এমনটি হয় কখনো ভেবে দেখেছো? আমরা ছোট থাকতে গুরুজনেরা আমাদের খাইয়ে পরিয়ে দিতেন, নিয়মিত পড়া আদায় করাতেন। এখন তুমি বড় হয়েছো, এখন আর কেউ প্রতিদিন তোমার পড়া ধরতে আসে না। তোমার সাফল্য ব্যর্থতার দায়ভার তোমার নিজের হাতেই।
প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করো। “আমি এই টার্মে ফার্স্ট হতে চাই!” এত দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যানে না গিয়ে “আমি আজকে ম্যাথ অমুক চ্যাপ্টার কমপ্লিট করবো” এরকম একদিনের প্ল্যান ঠিক করো। এবং সেটা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। প্রতিদিন এরকম ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে করতে বছরের শেষে গিয়ে দেখবে সত্যিই বছরজুড়ে ফাটাফাটি পড়াশোনা হয়েছে!
আরো পড়ুন: পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত? চটজলদি জেনে নাও এই ২৫টি পড়া মনে রাখার উপায়!
পড়াশোনা হোক গল্পের, আনন্দের!
তুমি একদিন বাসে উঠে তোমার বন্ধুকে বললে, “এই জানিস! গতকাল কলেজের সামনে রাস্তায় কি কাহিনী ঘটেছে!” আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বাসের সবাই সাথেসাথে কান খাড়া করে ফেলবে “কি কাহিনী ঘটেছে” সেটা শোনার জন্য! কারণটা খুব সোজা, আমরা সবাই গল্প শুনতে ভীষণ ভালবাসি!
পড়াশোনাকে যখন সংজ্ঞা/ফর্মুলার নীরস জায়গা থেকে গল্পের ছাঁচে ফেলতে পারবে, দেখবে জিনিসটা আসলে কত মজার! গণিতের “x=?” এর সমাধান যেন গোয়েন্দা কাহিনীর “কে সেই কালপ্রিট?” বের করার মতোই! “ব্রেকিং ব্যাড” এর কল্যাণে রসায়নের ফর্মূলাগুলো তো এখন সবাই আগ্রহ নিয়েই শিখে!
মন বসে না পড়ার টেবিলে, আছে কি পড়ায় মন বসানোর উপায়?
অবশ্যই আছে! একটি না, দুইটি না, অনেকগুলো পড়ায় মন বসানোর উপায়ই আছে। পড়তে বসলেই আমাদের মন এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে অন্য দুনিয়ায় মজে যায়। মাঝখান দিয়ে পড়াশোনা চলে যায় গোল্লায়! তাই পড়ার প্রতি ‘মনোযোগ বৃদ্ধিতে’ কি কি করা যায় –
Study Music
ছোটবেলায় যেমন ঘুমপাড়ানি গান শুনলে ঘুম চলে আসতো তেমনি কিছু সুর পড়ার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়ার টপিকে কেন্দ্রীভূত করার কাজটি করে থাকে। ফলে অন্য কোনো চিন্তা থাকে একশ’ হাত দূরে। ইউটিউবে স্টাডি মিউজিক লিখে সার্চ দিলেই এমন অসংখ্য মিউজিক পেয়ে যাবে। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে এগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এখন থেকে তবে পড়ায় মনোযোগ না বসলে যেকোনো একটি Study Music চালু করে পড়তে বসো।
Think Big, Start Small
তুমি নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ একটানা পড়াশোনা করার চেষ্টা করো, কিন্তু মনোযোগ হারিয়ে যাওয়ায় তা আর সফল হয় না। তাই এখন থেকে ছোট একটি সময় নির্ধারণ করে পড়া শুরু করো। প্রথম কয়েকদিন ২০ মিনিট পড়ো, তারপর ১০ মিনিট বিরতি নাও। এরপর আবার ২০ মিনিট পড়ো ও আবার বিরতি নাও।
ধীরে ধীরে,কয়েকদিন পর ৩০ মিনিট, এরপর ৪০ মিনিট, এরপর ৫০ মিনিট- এভাবে সময়টিকে বাড়িয়ে নাও এবং নিজের ‘মস্তিষ্ককে অভ্যস্ত করাঙ্গো’। দেখবে তুমি ঠিকই একটি সময় পরে একটানা পড়তে পারছো।
পর্যাপ্ত ঘুম
একজন মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করে না এবং মনোযোগও কমে যায়। তাই অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সম্পন্ন করতে হবে (ঘুমটি বাসায় সম্পন্ন করবে, ক্লাসে না!)
Personal Fitness
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
পানি খাচ্ছো তো?
পড়ার সময় তোমার মস্তিষ্ক কিন্তু অনেক খাটনি করে আর এই খাটনি করতে তার প্রয়োজন হয় প্রচুর পানি! তাই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেয়ে তাকে আর্দ্র রাখো। নাহলে কিছু সময় পরেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে।
সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে পড়তে বসবে
খাতা, বই, নোট, কলম, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, শার্পনার, জ্যামিতি বাক্স, স্ট্যাপলার, গ্রাফ পেপার ইত্যাদি সবকিছু আগে থেকে একসাথে নিয়ে পড়তে বসো। ভুলে রেখে এসেছো বলে বারবার টেবিল থেকে উঠতে হলে মনোযোগ হারিয়ে যায়।
কঠিন পড়াগুলো আগে পড়ে ফেলো
কঠিনগুলো আগে পড়ে ফেললে তোমার মস্তিষ্ক বুঝবে যে পরবর্তীতে যেই পড়াগুলো আসছে, সেগুলো সহজ। ফলে তুমি চিন্তামুক্ত থাকবে । আর যদি সেই পড়াগুলো পরে পড়ার জন্য রেখে দাও, মস্তিষ্ক অনবরত ভাবতে থাকবে যে ‘সামনে কঠিন পড়া আসছে’ এবং ফলশ্রুতিতে চাপ সৃষ্টি হবে, আর তুমিও সেই চাপ থেকেই দ্রুত মনোযোগ হারাবে। তাই আগে আগেই সেরে ফেলো কঠিন পড়াগুলো!
Peak Concentration Time
সেই সময়ে পড়তে বসবে যখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই বিচিত্র এবং বিচিত্র তাদের মস্তিষ্কও। তোমার যদি বেলা ৩টা হতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যের সময়ে বেশি ভালো পড়া হয়, তাহলে ঐ সময়েই পড়তে বসবে।
পড়াশোনার জন্য যেমন পরিবেশ চাই
- এমন কোথাও পড়ো যেখানে Distraction সবচেয়ে কম,
- যেখানে মানুষের কথা/হাসির শব্দসহ যাবতীয় সব শব্দ ন্যূনতম অবস্থায় থাকবে
- মোবাইল ফোন অবশ্যই সাইলেন্ট করে পড়তে বসবে,
- টেবিলে বসে পড়ার চেষ্টা কড়ো, বিছানা কিংবা সোফায় নয়।
আশেপাশের শব্দ হজম না হলে…
পাশের বাসার আন্টি এসে গল্প জুড়ে দিয়েছে তোমার মায়ের সাথে। অন্যদিকে দাদি আর বড় বোন মিলে টিভিতে উচু ভলিউমে স্টার জলসা দেখছেন। মায়েদের হাসির বিকট শব্দ ও নাটকের চরিত্রদের আওয়াজ উপেক্ষা করে কোনভাবেই পড়ায় মন দিতে পারছো না। চিন্তা নেই! ইউটিউব বা গুগল থেকে ডাউনলোড করে নাও ‘ White Noise’।
White Noise তোমারর মস্তিষ্কের মনোযোগকে ‘একটি জায়গায়’ নিয়ে আসতে সাহায্য করে। তাই কানে হেডফোন গুঁজে নিয়ে White Noise চালু করো এবং পুনরায় ফোকাস করো নিজের পড়ায়!
আরও পড়ুন:
এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা : কীভাবে দেবো?
অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি কীভাবে নেবো? (প্রথম পর্ব: ম্যাথ)
নিজেকে নিজেই পুরস্কার দাও
নিজেকে বলো, “আমি আগামী ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম অধ্যায়ের ৩ পাতা পড়ে শেষ করব এবং তা সফলভাবে করতে পারলে ফ্রিজে রাখা আমার প্রিয় চকলেটটি খাবো কিংবা বন্ধুকে কল করে ৫ মিনিট গল্প করব”। এতে করে তুমি নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে পারবে এবং ভালো ফল নিশ্চয়ই পাবে।
Worry Time to Study Time
সময় কম কিন্তু সিলেবাস অনেক বেশি এবং তুমিও কিছুই পড়েন নি এখনো। এমন সময়গুলোতে ‘কিছু পারি না! কিছু পারব না! কীভাবে পড়ব এতো কিছু’ ইত্যাদি বলে হা- হুতাশ করতে করতেই কিন্তু তোমার সময় নষ্ট করে ফেললে।
তাই তোমার Worry Time কে তখন Study Time-এ পরিণত করতে হবে। সময় তো এমনিতেই কম! প্রতিটি মিনিটেরই অনেক মূল্য। তাই সময়টা ‘দুশ্চিন্তা’য় বিনিয়োগ না করে ‘পড়ায়’ বিনিয়োগ করো।
পড়াশোনার সময় অন্য সব চিন্তা দূর করার জাদুকরী টিপস
মুখে উচ্চারণ করে পড়
মনে মনে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করো। মনে মনে পড়ার সময় তুমি কখন যে অন্য চিন্তার সাগরে ডুব দেবে তা টেরও পাবে না। কিন্তু মুখে উচ্চারণ করে বা শব্দ করে পড়লে অন্য চিন্তা করামাত্রই তোমার পড়ার শব্দ থেমে যাবে, ফলে সহজেই বুঝতে পারবে কখন তুমি বিচ্ছিন্ন হচ্ছো।
অপরদিকে, আমাদের ব্রেইনের দেখা স্মৃতির তুলনায় শোনা স্মৃতি সংরক্ষণ করার ক্ষমতা বেশি। মনে মনে পড়লে তাই তা মস্তিষ্কে ক্ষণস্থায়ী হয় আর শব্দ করে পড়লে একইসাথে দেখা ও শোনা হওয়ায় তা ভালোভাবে মাথায় ঢোকে।
রিডিং পড়ার সময় মাঝে মাঝে দৃষ্টি সরাও
মানুষ তার সাবকনশ্যাস মাইন্ড বা অবচেতন মনে কিছু কিছু কাজ করতে পারে। যেমন ধরো তুমি শব্দ করেই অনর্গল রিডিং পড়ে যাচ্ছো অথচ তোমার মস্তিষ্কে সেগুলো পৌঁছাচ্ছে না, তুমি একইসাথে অন্য কোনোকিছু চিন্তা করছো।
এজন্য রিডিং পড়ার সময় প্রায়ই দৃষ্টি বইয়ের পাতা থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরাবে। যে বাক্যটা এইমাত্র পড়লে বা বুঝলে সাথে সাথে তা না দেখে বলবে। তাহলে ঐ অবচেতন মনে রিডিং পড়া হবে না, অন্য চিন্তাও মাথায় আসার সুযোগই পাবে না।
কান বন্ধ করে পড়
শুনতে আজব শোনালেও প্রকৃতপক্ষে এটি খুবই কার্যকরী। পড়ার সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় শব্দ আমাদের শুনতে হয়। হোক সেটা সিলিং ফ্যান ঘোরা বা ঘড়ির টিকটিক করা সামান্য শব্দ থেকে শুরু করে আরও কত কী!
অন্য সব শব্দকে দূরে ঠেলে শুধুমাত্র তোমার উচ্চারিত পড়ার শব্দ মস্তিষ্কে পাঠানোর পদ্ধতি এটি। যা তোমাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে যেখানে তুমি আর তোমার পড়া; অন্য সব চিন্তাদের সেই জগতে প্রবেশাধিকার নেই। তাই কান বন্ধ করে পড়।
লিখে লিখে পড়
পড়ার সময় অবশ্যই সামনে খাতা কলম রাখো। যে জিনিসটা সহজে মনে থাকে না তা চট করে খাতায় লিখে ফেলো। কারণ পড়ার থেকে লেখার সময় তুলনামূলকভাবে বেশি মনোযোগের প্রয়োজন পড়ে। ফলে মস্তিষ্ক অন্য কোনো চিন্তা করার সুযোগ পায় না।
ঘরে পায়চারি করে পড়
পড়ার সময় অন্য চিন্তা আসলে ঘরে পায়চারি করতে করতে অর্থাৎ হেঁটে হেঁটে কিছুক্ষণ পড়া যেতে পারে।
Brain Reminder
তোমার ব্রেইন যখন পড়ার বাইরে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে চায় তখন চোখ বন্ধ করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলো। তারপর নিজের ব্রেইনকে উদ্দেশ্য করে বলো, “BE HERE NOW” অথবা নিজেকে নিজে এমন কিছু কথা বলো। (বলতে পারো- আমি এখন পড়ছি, অন্য চিন্তারা দূর হও!)
এটা কয়েকবার করলে এরপর তুমি অন্যকিছু ভাবতে যাওয়ামাত্রই তোমার ব্রেইন নিজেই সেই রিমাইন্ডার দেবে এবং অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দেবে না। এটি সাইকোলজিক্যালি প্রমাণিত!
পড়ার জায়গা বদলে দেখো
অসুস্থ মানুষকে যেমন চিকিৎসকরা বায়ু বদলের পরামর্শ দেন তেমনি পড়ার ক্ষেত্রেও বায়ু বদল কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘ সময় একস্থানে বসে পড়লে সেখানে যদি নানা চিন্তা আসে, সেক্ষেত্রে এক ঘর বদলে অন্য ঘরে পড়া যেতে পারে।
Stop Multitasking
মাল্টি-টাস্কিং অর্থাৎ একইসাথে একাধিক কাজ করলে কখনোই ব্রেইন সবগুলো কাজে সমান ও সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে পারে না। পড়ার সময় মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার একটি অন্যতম কারণ এটি।
তাই পড়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা তো দূরে থাক, মোবাইল কাছেই রাখা উচিত নয়। তাহলে কেউ মেসেজ দিলো কিনা, ফেসবুকে নোটিফিকেশন আসলো কিনা ইত্যাদি চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাবে। পড়ার সময় শুধুই পড়তে হবে। অন্য কোনো কাজই করবে না।
জানার কৌতূহল নিয়ে পড়
জানার কৌতূহল নিয়ে পড়তে হবে। তুমি যখন গল্পের বই পড় তখন তাতে এতোই মগ্ন থাকো যে অনেক সময় ডাকলেও শুনো না। কেন জানো? কারণ তুমি গল্পের বই পড়ো কৌতূহল নিয়ে, এরপর ঘটনা কোনদিকে যাবে সেটা জানার কৌতূহল তোমার মধ্যে সর্বক্ষণ কাজ করতে থাকে। ফলে তুমি তাতে ডুবে থাকো। ঠিক একইভাবে পড়ার সময় যদি বিষয়টি জানার প্রবল কৌতূহল নিয়ে পড়ো তাহলে অন্য কোনো চিন্তা তোমার মাথায় আসবে না।
যে ১১টি কাজ করলে পরে, রেজাল্ট ভালো হবেই!
এরকম তো কতই হয়, সারাদিন ধরে পড়ে যাচ্ছি, কিন্তু পরীক্ষায় গিয়ে দেখা যায় রেজাল্টটা আশানুরূপ আসছে না। ঠিক কী করলে পড়া ইফেক্টিভ হবে? কিভাবে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে? ‘Study Hard’ মেনেও যখন ভালো ফল আসে না তখন ফলো করতে হয় ‘Study Smart’। আজ আমি ব্যাখ্যা করব ১১টি পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়, যে উপায়গুলো ফলো করলে অবশ্যই পড়াটা আরও ইফেক্টিভ হবে!
১) পড়ার মাঝে একটু ঘুমিয়ে নাও
তুমি দু- তিন ঘণ্টা ধরে পড়ছো, মাথার নিউরনে এখন জ্যাম ধরে আছে। তোমার প্রথম কাজ জ্যাম ছাড়ানো। কী করে? খানিকটা ঘুমিয়ে নিয়ে। ১৫ বা ৩০ মিনিটের ঘুমে তোমার মাথা একটা স্পেস পাবে। এতক্ষণ যা পড়েছো, মনের অজান্তেই তা আরেকবার নিউরনের কোণায় কোণায় ঘুরে আসবে। এতে পড়া মনে থাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। তাই পড়ার মাঝে একটু ঘুমিয়ে নাও। একটু ঘুমাও একটু পড়ো, এভাবেই পড়াটা ইফেক্টিভ হবে।
২) নিজের স্টাইল টি খুঁজে নাও
আমার এক বন্ধুকে দেখতাম হাঁটতে হাঁটতে পড়ত। আরেক বন্ধু খুব সকালে উঠে জানালার সামনে চা আর বই নিয়ে বসত। আমি সাধারণত খাবার নিয়ে পড়তে বসি। একেকজনের পড়ার স্টাইল একেকরকম। এবং মজার কথা হলো, নিজের এই স্টাইলে পড়ার সময় খুব আত্মবিশ্বাসী লাগে। মনে হয়, এভাবে পড়লেই পড়াটা ভালো মাথায় ঢুকবে।
তোমার নিজেরও একটা স্টাইল আছে আশা রাখি। আর না থাকলে খুঁজে নাও এবং সেভাবেই পড়ো। এতে তোমার পড়া আরও ভালো মাথায় ঢুকবে ও মনে থাকবে।
৩) রাতে লম্বা ঘুম
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি রাতে ৬ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই রাতে ঠিকভাবে ঘুমায় না। কেউ হয়ত ভোররাত পর্যন্ত জেগে থাকে। কিন্তু সেটা একদমই উচিত না। রাতে আমাদের নিউরনের দরকার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানে ঘুম।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব ছাত্ররা রাতজেগে পড়ে তাদের থেকে, যারা রাতে ঘুমিয়ে দিনে পড়ে তাদের রেজাল্ট ৩৫% ভালো হয়! তাহলে রাতে আর জেগে না থেকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসটি তৈরি করো।
৪) ফোকাস করো পড়ার সময়
তিন ঘণ্টা মনোযোগ না দিয়ে পড়ার থেকে ত্রিশ মিনিট সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়া ভালো। পড়ার সময় ফোকাস চলে যাওয়া বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। খটমটে গণিতের থেকে ইউটিউবে পছন্দের গায়কের গান শোনা বেশিই ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে ডিসট্র্যাকশন থেকে দূরে থাকতে হবে। ধরো, পড়ার সময় বারবার ফোনের দিকে নজর গেলে ফোনটা অফই করে দাও। বাসায় আওয়াজ বেশি হলে বই নিয়ে কোনো লাইব্রেরিতে চলে যাও। কিন্তু যত যাই হোক, ফোকাস করো!
৫) পড়া হবে সহজ, পোমোডরো টেকনিকে
২৫ মিনিট পড়ে, ৫ মিনিটের বিশ্রাম। আবার ২৫ মিনিট পড়া, আবার ৫ মিনিটের বিশ্রাম। এরকম সাইকেলটা চলতে থাকলে কেমন হয়?
এই টেকনিকটার নাম পোমোডরো টেকনিক। এভাবে পড়লে একঘেয়েমি আসে না, আবার ৫ মিনিটের বিশ্রামের পরে শরীর আর মনও থাকে এনার্জেটিক।
তাহলে, আর কী! পোমোডরো ফলো করে, পড়াটা আরও জম্পেশ হবে!
৬) আগে কঠিন টপিক!
পড়ার সময় আমরা কঠিন টপিকটি সবার শেষে রেখে দিই, এটা কিন্তু ভুল! আগে পড়তে হবে সবচে’ কঠিন টপিক বা বিষয়টি। তাহলে মনে একটা সাহস আসবে যে, আমি এত কঠিন টপিক শেষ করে ফেলেছি! এরপর বাকি পড়াটুকু হয়ে যাবে আত্মবিশ্বাস এর সাথে।
৭) ব্যায়াম, মেডিটেশন আর আলোচনা করা
নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীর না, মনকেও ফিট রাখে। আর মেডিটেশন বাড়ায় আমাদের ধৈর্য্য। নিউরনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এ কাজ দু’টির মাধ্যমে। আর যখন আমরা কারও সাথে স্পেসিফিক কিছু নিয়ে আলোচনা করি, তখন হয় ব্রেইনস্টর্মিং।
এ তিনটি ব্যাপারই গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। তারমধ্যে মেডিটেশন তোমার মনোযোগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। তবে যদি তোমার সময় কম থাকে, তুমি নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারো –
- ঘুম থেকে উঠে ৫ মিনিট যেকোনো ‘একটি আওয়াজের প্রতি’ মনোনিবেশ করো। তা হতে পারে সকাল বেলার পাখির ডাকের শব্দ, ফ্যানের শব্দ, এমনকি বাইরের গাড়ির হর্নের শব্দ (যেকোনো একটির প্রতি মনোনিবেশ করো)
- বিরতিতে গেলেই চোখ বন্ধ করে কয়েকটি গভীর নিঃশ্বাস নাও। ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি হবে এবং তুমি সতেজ অনুভব করবে।
৮) জায়গা বদল করে পড়
আমরা সবসময় ঘরের এককোণায়, একই টেবিলে কেন পড়ব? এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা জায়গা বদল করে পড়ে, তারা যারা একই জায়গায় যারা পড়ে তাদের থেকে পরীক্ষায় বেশ ভালো রেজাল্ট করছে! তাহলে আর দেরি কেন? এখন থেকেই শুরু করো জায়গা বদল করে পড়া।
৯) মজাটাকে সিরিয়াসলি নাও
‘পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা’ কথাটি এখন ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। এখন আমরা খেলতে খেলতে পড়ব। হয়ত প্রিয় গান শুনতে শুনতে ম্যাথ করতে বোরিং লাগবে না। অথবা মজার চকলেটটা খেতে খেতে ফিজিক্সের কঠিন চ্যাপ্টারটা ঘুরে আসা যেতেই পারে।
১০) নিজের পরীক্ষা নিজেই নাও
পড়ার সাথে সাথেই হয়ে যাক ইন্সট্যান্ট সেলফ টেস্ট। পড়ার পরে নিজের পরীক্ষা নিজেই নিলে ভুলগুলো চোখে পড়ে, এতে করে শোধরানোর উপায়টাও পাওয়া যায়। ইন্সট্যান্ট সেলফ টেস্ট আমাদের পরীক্ষাভীতিও কমায়।
১১) ডোন্ট ফোর্স ইট
এতকিছু করার পরেও পড়তে না ইচ্ছা করতে পারে। তাহলে জোর করে পড়ার দরকার নেই। ক্ষুধা না থাকলে জোর করে খাওয়ালে বমি হবার সম্ভাবনা বেশি। জোর করে পড়লে সেরকম ভুলে যাবার সম্ভাবনা বেশি। তারচেয়ে একটা বিরতি নাও। মনটাকে রিফ্রেশ করে আবার পড়তে বসো। সবটুকু ফোকাস দিয়ে।
পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পেতে চাইলে আগের রাতে বই নিয়ে বসলেই হয় না। নিতে হয় শক্তপোক্ত প্রস্তুতি আর স্মার্ট পদক্ষেপ। নিয়ম করে এই ১১টি পড়াশোনা করার নিয়ম কাজ করে দেখো না, আশানুরূপ ফল পাও কিনা?
কোর্সটিতে যা যা থাকছে
মেডিকেল এডমিশন কোর্স ২০২২
পড়াশোনার জন্য কার্যকরী ৭টি অ্যাপ
আমরা কম-বেশি সবাই এই উক্তিটির সাথে পরিচিত- “Don’t study hard, study smart!”
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়া লাগে না, মনোযোগ দিয়ে দিনে ২ঘণ্টা পড়াই যথেষ্ট। আর পড়াশুনার কাজটি যদি হয় গুছিয়ে, রুটিন করে এবং দৈনন্দিন সকল কাজকর্মের সাথে সামঞ্জস্য রেখে- তবে তো কথাই নেই!
যেই স্মার্টফোনে তুমি প্রতিনিয়ত সময় নষ্ট করে যাচ্ছো গেইম খেলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্থক সময় কাটিয়ে, সেই স্মার্টফোনেই রয়েছে কিছু বিশেষ অ্যাপ যা তোমাকে সফল করে তুলবে পড়াশোনায়। শুধু পড়াশোনা নয় বরং যেকোনো কাজই এখন হাতের মুঠোয় অর্থাৎ স্মার্টফোনে করা সম্ভব। চলো দেখে নেই এমন কিছু অ্যাপ যা স্মার্ট পদ্ধতিতে পড়াশুনা করতে সাহায্য করে:
আরও পড়ুন:
জেনে নাও জ্যামিতি শেখার সহজ উপায়!
Timetable
এই অ্যাপটি ক্লাস, পরীক্ষা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজের হিসাব খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে টুকে রাখে। তোমার প্রতিদিনের রুটিন তৈরী করে সেই শিডিউল অনুযায়ী টাইমার ও সেট করে নিতে পারবে। ব্যস্ততার মাঝে কোনো কাজ যাতে ভুলবশতঃ ছুটে না যায়, কিংবা সময়ের কাজ যাতে সময়ে শেষ করা যায় সেক্ষেত্রে এই অ্যাপের জুড়ি নেই!
সহজেই বিনা খরচে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারো এবং পড়াশোনার কাজগুলোকে দৈনন্দিন সকল কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করে ফেলতে পারো নিজস্ব রুটিন।
MyScript Stylus Beta
যদি তুমি টাইপিং এর বদলে হাতে লিখে নোট করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করো,তবে এই অ্যাপটি তোমার জন্য দারুণ কার্যকরী। এখানে হাতের লেখা হিজিবিজি হলেও সমস্যা নেই, অ্যাপটি সাধারণত লেখা বুঝে নিয়ে তা সাজিয়ে তোলে নোট আকারে। এতে সহজেই যেকোনো ভাষায় নোট করা এমনকি হাতের লেখা বিভিন্নভাবে এডিটও করতে পারবে।
তাছাড়া গণিতের বিভিন্ন সমীকরণ, চিত্র, পিডিএফ ফাইল সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং কম সময়ে দ্রুত যেকোনো বিষয় নোট করে ফেলার এই স্মার্ট অ্যাপটি হতে পারে তোমার নিত্যদিনের সহযোগী।
Quizlet
খেলাচ্ছলে শেখার জন্য অসাধারণ একটি অ্যাপ Quizlet। বিশেষ করে নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে এটি খুব উপকারী। তাছাড়া এখানে অডিও, ভিডিও এর মধ্যে দিয়ে শিখে নিতে পারো যেকোনো বিষয়।
পড়ার সময়ে পেজটি সাজিয়ে নিতে পারবে নিজের মত রঙে
পাশাপাশি নিজের প্রতিদিনের কাজের একটা সুস্পষ্ট অগ্রগতিও দেখিয়ে দিবে এই অ্যাপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী তুমি কতটা সফল কিংবা পিছিয়ে আছো তার সূক্ষ্ম ধারণা পেতে পারো এর মাধ্যমে। এতে করে কাজের প্রতি আগ্রহ যেমন বাড়বে তেমনি নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করার স্পৃহা জেগে উঠবে।
ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে এমন অনেক শিক্ষামূলক আর্টিকেল কিংবা ভিডিও চোখে পড়ে যা আমরা সাথে সাথে পড়ি না সময়ের অভাবে। সেসব কন্টেন্ট পরবর্তীতে পড়ার দারুণ ব্যবস্থা করেছে এই অ্যাপটি।
সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, একবার সেভ করে রাখলে পরে যেকোন সময়ে ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই অর্থাৎ অফলাইনে সেসকল কন্টেন্ট দেখতে বা পড়তে পারবে! তাছাড়া পড়ার সময়ে পেজটি সাজিয়ে নিতে পারবে নিজের মত রঙে। এই অ্যাপের সাহায্যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
Duolingo
এই অ্যাপটি বিশেষভাবে তাদের জন্য যারা নতুন কোনো ভাষা শিখতে আগ্রহী। এখানে বিভিন্ন খেলার ব্যবস্থা আছে যার মাধ্যমে মজায় মজায় শিখে নিতে পারো ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান এর মত অনেকগুলো ভাষা! নতুন ভাষা শেখার ব্যপারটা যতটা কঠিন মনে হয়, এই অ্যাপটি তাকে ততই সহজ করে তোলে।
Exam Countdown
যাবতীয় পরীক্ষার তারিখসমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য রয়েছে “এক্সাম কাউন্টডাউন”। অ্যাপটি পরবর্তীতে ক্রমাগত মনে করিয়ে দিবে, সাবধান করে দিবে পরীক্ষার ব্যাপারে। পরের পরীক্ষা ঠিক কত দিন কিংবা ঘণ্টা পর এর হিসাব রাখা এবং সতর্ক করে দেয়াই এর কাজ!
Forest!
এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন– দুটির জন্যই পাবে। এখানে তুমি একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিবে। ধরো ৩০ মিনিট নির্ধারণ করলে। সেই ৩০ মিনিটে স্ক্রিনে দেখবে যে একটি বীজ থেকে চারা এবং চারা থেকে গাছ তৈরি হচ্ছে। তবে শর্ত হলো, ঐ ৩০ মিনিটে তুমি ফোনে হাত দিতে পারবে না। ফোনে হাত দিলেই গাছটি নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব, নিজেকে ফোন হতে দূরে রাখতে এবার ফোনটাই ব্যবহার করো ভিন্নভাবে!
পড়াশোনার ৫টি বদ অভ্যাসের সহজ সমাধান
পড়াশোনায় ভালো করতে হলে কী কী করতে হবে, কী কী করা উচিত-এসব তো কমবেশি আমরা সবাই জানি। তবে কী কী করা উচিত না, কিংবা কোন কোন অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত তা নিয়ে কি কখনো ভেবেছি?
অভ্যাসবশতই আমরা অনেক সময়ে এমন কাজ করে থাকি যার ফলে হাজার চেষ্টা করেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এই দিকগুলোতে একটু কৌশলী হলে তুমিও এগিয়ে যেতে পারবে সাফল্যের দিকে। চলো দেখে নেই সেই বদ অভ্যাস এবং তার সমাধানগুলো।
১) ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকের উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য হুবহু লেখা
আমরা অনেকেই ক্লাস লেকচার খাতায় তোলার সময়ে শিক্ষকের বলা কথা হুবহু একনাগাড়ে লিখে যাই। যার ফলে ক্লাসের পুরোটা সময় লেখার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়, পড়া বুঝার আর সুযোগ পাওয়া যায় না। আবার না বুঝে হুবহু লিপিবদ্ধ করার ফলে দেখা যায় পরে ওই বিষয়গুলো নিজের কাছেই অপরিচিত লাগে, কঠিন মনে হয়।
এজন্য লেকচার লেখার সময়ে চেষ্টা করতে হবে যথাযথ সংক্ষেপে এবং কী-পয়েন্ট আকারে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরার। একনাগাড়ে সব লেখার চাইতে বিভিন্ন চিহ্ন এবং ছকের মাধ্যমে বিশাল বিষয়গুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে নিয়ে আসা ভালো।
২) অতিরিক্ত হাইলাইট করা
অতিরিক্ত হাইলাইট করে বইয়ের প্রতিটি পাতা ভরিয়ে ফেললে দিন শেষে লাভের খাতা শূন্যই থেকে যাবে! চেষ্টা করতে হবে বেছে বেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাক্য, নতুন শব্দ কিংবা শিরোনাম গুলো দাগানোর।
এক্ষেত্রে ভালো বুদ্ধি হলো “কালার-কোড” স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করা। অর্থাৎ একেক বিষয়ের জন্য একেক রঙের কালি ব্যবহার করা, যেমন- নতুন শব্দ গুলোর জন্য এক রঙের, সংজ্ঞাগুলো আরেক রঙের কালি দিয়ে দাগিয়ে ফেলা। তাছাড়া অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ- এই ভিত্তিতেও বিভিন্ন কালির ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩) একই অধ্যায় বারবার পড়া
আমাদের ছোটবেলা থেকেই যেকোন অধ্যায় বারবার পড়ার অভ্যাস করানো হয়। তবে, বারবার না বুঝে কোনো অধ্যায় পড়ার চেয়ে একবার মনোযোগ দিয়ে বুঝে পড়াই যথেষ্ট। তবে, প্রথমবার পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে কালো ব্যতিত অন্য কালির কলম নিয়ে বসতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্যারাগ্রাফগুলো চিহ্নিত করে ফেলতে হবে। এতে একবার সেই অধ্যায়টি পড়ার পর পুনরায় পুরো অধ্যায় পড়ার প্রয়োজন হবেনা, শুধু দাগানো অংশগুলো বারবার পড়ে লিখে ফেললেই চলবে।
শেষ মুহূর্তের জন্য অর্থাৎ পরীক্ষার আগের দিনের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা বদ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম
৪) পড়ার সময়ে ঘনঘন বিরতি নেয়া এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করা
একটানা কিছুক্ষণ পড়ার পর একঘেয়েমি লাগে, তাই পাঁচ মিনিট পড়ে দশ মিনিট বিরতি নেয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে আমাদের। হয়ত ৭টায় পড়া শুরু করে হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশন আসে, ৫ মিনিটের জন্য ফোন চেক করতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা ৮টা বা ৯টায় গিয়ে ঠেকে।
কিংবা ফোনে ডিকশনারি দেখতে গিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে কখন যে বুঁদ হয়ে যাই খেয়াল থাকে না! এভাবেই হাতের আশেপাশে মোবাইল রাখায় প্রচুর সময় এবং একইসাথে মনোযোগের অপচয় ঘটে। তাই পড়ার সময় যেকোনো গ্যাজেট দূরে রাখতে হবে এবং ঘন ঘন বিরতি না নিয়ে এক বা দেড় ঘন্টা পরপর বিরতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
এইচ এস সি রসায়ন দ্বিতীয় পত্র: শেষ মুহূর্তের টিপস
৫) শেষ মুহূর্তের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা
শেষ করছি একটি গল্প দিয়ে। ফাহিম প্রত্যেক পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে প্রতিজ্ঞা করে এরপর থেকে সে দিনের পড়া দিনেই শেষ করবে। তবে স্কুল থেকে ফিরে প্রতিরাতে পড়তে বসলেই “আজকে না, কালকে পড়বো”- এটা ভাবতে ভাবতেই তার দিন কেটে যায়, পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে।
ফলে সে সিলেবাসের বিশাল অংশ পরীক্ষার আগের রাতে শেষ করতে হিমশিম খায়। এভাবে এই পুরো ব্যাপারটি একটি চক্রের মত ফাহিমের জীবনে ঘুরপাক খেতে থাকে। সুতরাং শেষ মুহূর্তের জন্য অর্থাৎ পরীক্ষার আগের দিনের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা বদ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। জমিয়ে না রেখে বরং প্রতিদিন অল্প করে পড়া এগিয়ে রাখলেও পরীক্ষার আগে ফাহিমের মত হিমশিম খেতে হবে না!
পড়াশোনার সময় কীভাবে “না” বলবে মোবাইল ফোনকে
প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সময় মনোযোগের ব্যাঘাত ও সময় অপচয়ের বড় কারণ মোবাইল ফোন। কিন্তু তাহলে প্রযুক্তির এই উপহারকে কি আমরা ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবো? অবশ্যই না! আমরা শুধু পড়াশোনার সময়টুকুতে অপ্রয়োজনীয় মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করব। কিন্তু কীভাবে? এই কাজ তো এতো সোজা না। আমাদের বন্ধু মেহনাজে পারে নি তা করতে।
এটি সহজ না হলেও রকেট-সায়েন্সের মতো কঠিন কিছুও না। কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করেই তা করা সম্ভব। চলো, তাহলে দেখে নেই কী কী সেই কৌশল
১) বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার
এই পদ্ধতিকে বলা যায় “কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা”। কিছু অ্যাপ যেমন মোবাইলের প্রতি আসক্ত করে তোলে, তেমনি বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যা তোমাকে সাহায্য করবে সেই আসক্তি কাটিয়ে উঠে সময়ের চমৎকার ব্যবস্থাপনা করার। এসব অ্যাপের মধ্যে রয়েছে FOREST , Stay focused , Rescue time ইত্যাদি অ্যাপের কথা তো আগেও বলেছি। এছাড়াও Pomodoro অ্যাপ বা সাধারণ টাইমারও সাহায্য করবে তোমাকে সময় অপচয়ের হাত থেকে বাঁচাতে।
২) ফোন সুইচড অফ রাখা
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি বলা যায় এটিই। ফোন সুইচ অন ও অফ করতে ভালোই একটা সময় লাগায়। এতে তোমার চট করে ফেসবুক বা ইন্সটায় ঘুরে আসার আগ্রহ কমে যাবে অনেকটাই। এছাড়াও Airplane Mode বা Do not disturb মোডও কাজে দিবে। তবে অনেক সময় জরুরি কলও আসতে পারে। তাই বিকল্প হিসেবে ডেটা কানেকশন, Wi-Fi অফ রাখা ও শুধুমাত্র একান্ত জরুরি কল ধরা- এই পদ্ধতিও অনুসরণ করতে পারো।
৩) ফোন অন্যরুমে রেখে আসা
এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য তোমার ফোন যাতে তোমার আশে পাশে না থাকে। কারণ আশে পাশে ফোন থাকলে অনেকেই আগের ২টি বাধাও অতিক্রম করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে ফোন তুমি অন্য রুমে রেখে আসতে পারো, ড্রয়ার বা আলমারিতেও রাখতে পারো। এমন জায়গায় রাখবে যাতে তুমি পড়াশোনার সময় ফোনটি দেখতে না পারো।
৪) ফোন কারো কাছে রেখে আসা
এখানে কৌশলটি হল তুমি তোমার ফোন কাউকে দিয়ে বলে দিবে যাতে তোমাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে তোমার ফোন না ফেরত দেয়।এটি হতে পারে তোমার মা, বাবা, বড় ভাই, বোন, রুমমেট এমনকি ছোট ভাই-বোনও হতে পারে। যদি তোমার আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অনেক কম হয়ে থাকে, তাহলে অনেক কাজে দিবে এই পদ্ধতি। শুধু সময় অপচয় রোধ না, তোমার আত্ম-নিয়ন্ত্রণও বেড়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে।
সময় একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ
৫) বন্ধুদের তোমার ব্যস্ততার কথা জানানো
ফোন চেক করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমরা অনুভব করি যখন আমার বুঝতে পারি ম্যাসেঞ্জার বা ওয়াটসঅ্যাপে আমার জন্য কোনো নতুন টেক্সট এসেছে। অধিকাংশ সময় যে বন্ধুটি তোমাকে এটি পাঠায়, সে চিন্তা করে তুমিও হয়ত তার মতো ব্যস্ত নও।
এটি খুব সহজেই সমাধান করা যায় যদি তোমার সাথে যে বন্ধুদের কথা অনেক বেশি হয়, তাদেরকে তুমি তোমার ব্যস্ততার কথা জানাও এবং নির্দিষ্ট সময় পর টেক্সট করতে বল। এতে দু’টো জিনিস হবে–
- এক: অন্যদেরকে তোমার পড়াশোনার কথা বলা তোমার নিজের জন্যও এক ধরনের রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে।
- দুই: তোমার সেই বন্ধুটি যদি সময় নষ্ট করতে থাকে, তবে সেও অনুপ্রাণিত হবে সময় সচেতন হতে।
সময় একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। অন্য যেকোন সম্পদের মতো এটি রক্ষা করতেও তাই তোমাকে যথেষ্ট প্রচেষ্টা দিতে হবে আর সকল প্রয়াসের সূচনা হয় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে। তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরেই তুমি পারবে মনোযোগ বিক্ষিপ্তকারী ও সময় অপচয়কারী সব উপাদান থেকে দূরে থাকতে।
গ্রুপ স্টাডি: পড়াশোনা হোক বন্ধুদের সাথে
পরীক্ষা নিয়ে আমরা সবাই বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। হয়তো পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে অথবা হয়তো পরীক্ষার দিন সকালে রিভিশন দেয়ার সময়। যেমন, “দোস্ত, এটা তো মনে থাকছে না, কিভাবে মনে রাখব বল তো?” এইরকম পরিস্থিতির শিকার সবাই-ই কম বেশি হই। যেই টপিকটা অনেক সময় নিয়েও মাথায় ঢুকানো যায়নি, সেটাই তোমার বন্ধু হয়তো ১০ মিনিটে কৌশলে বুঝিয়ে দিতে পারবে অনায়াসে। ধরে নাও, এটা যদি পরীক্ষার আগের দিন না হয়ে আগেই বুঝে নেয়া যেত, জিনিসটা দারুণ হতো না? তাই চলো জেনে নেই group study করে কী কী সুবিধা পেতে পারো?
- Group Study করার মাধ্যমে তুমি সময়ের পড়াটা সময়ে শেষ করে ফেলতে পারবে। যদি তাও না হয়, কমপক্ষে একটা ভাল আইডিয়া থাকবে যা তোমাকে পরবর্তী সময়ে সাহায্য করবে পড়াটাকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য।
- যে টপিকটা তোমার জন্য কঠিন, যেটা হাজার চেষ্টা করেও সহজ উপায়ে মনে রাখতে পারছো না, সেটা Group Study করার জন্য রেখে দাও। আলোচনার মাধ্যমে কঠিন বিষয়টিও সহজ করে মনে রাখতে পারবে।
- পড়ার ক্ষেত্রে এমনটা প্রায়ই হয়, আধঘণ্টা পড়ার পর মনোযোগটা চলে যায়, বিশেষ করে যে পড়াগুলো খুব বেশি সময় লাগে পড়তে। এক্ষেত্রে, Group Study একটা সমাধান হয়ে দাঁড়াবে। এতে কয়েকজন মিলে সময়সাপেক্ষ পড়াগুলো সেরে নিতে পারবে আনন্দের সাথেই। কমপক্ষে পড়ার সময় একঘেয়েমিটা চলে আসবে না।
- Group Study থেকে শিখে নিতে পারবে পড়াশুনার বিভিন্ন কৌশল। সেটা হতে পারে মুখস্থ করার ক্ষেত্রে, কিংবা হতে পারে পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেয়া যায় তা সম্পর্কে।
- Group Study তোমাকে সাহায্য করবে নিজের ভুল সংশোধন করে নিতে। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই কম বেশি হয়েছে, পরীক্ষার খাতায় ভুল করে এসে হল থেকে বের হবার পর বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছি উত্তরটা অন্যভাবে হবে, যা হয়ত আগে জানাও ছিলো না।
- Group Study করার মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত হও। যে বিষয়গুলো তোমার কাছে জটিল মনে হচ্ছে, সেগুলো একটি নোট খাতায় গুছিয়ে নিতে পারো।
- ক্লাসে যে নোটগুলো দেয়া হয়, বা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়, সেগুলো রিভিউ করবে Group Study তে। এতে পড়াশুনাটা নিজের আয়ত্তে চলে আসবে খুব সহজেই।
- নিজের মনে রাখার ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে তোলো। Group Study করার সময় যখন একটা বিষয় নিয়ে পড়া হয় তখন চেষ্টা কর তোমার স্টাডি পার্টনারকে বিষয়টার উপর তোমার ধারণা ঠিক আছে কিনা তা চেক করিয়ে নিতে। এভাবে তোমার চিন্তাশক্তি বাড়বে, ধারণক্ষমতা বাড়বে; অপরদিকে তোমার স্টাডি পার্টনারেরও লাভ হবে, তারও পড়াটা ঝালাই করে নেয়া হবে।
Frustration, পড়াশোনা এবং কিছু কথা
স্কুল কিংবা কলেজে পাশে বসা “আমি-সব-প্রশ্নের-উত্তর-জানি” কিংবা “ঈশ্বর-প্রদত্ত-মেধাসম্পন্ন” বলে নামডাক ছড়ানো পরিচিত ছেলে কিংবা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কম বেশি আমরা সবাই একটা সময় বেশ frustrated হতাম, বা এখনো হই। অনেকে আবার হয়ত ভাবা শুরু করে “ছেলেটা/মেয়েটা গ্যালাক্সির অন্যপ্রান্ত থেকে আসা কোনো অ্যালিয়েন নয় তো!” হুম্, বেশ চিন্তার বিষয়! কিন্তু যত ভাবনা চিন্তাই করা হোক না কেন তার সকল রহস্য উদ্ঘাটনে, খুব কম ছাত্রছাত্রীই আছে যারা নিজ থেকে যেয়ে কথা বলে সেইসব ‘অ্যালিয়েন’দের সাথে তাদের ‘অস্বাভাবিক’ ফলাফলের কারণ জানতে।
এ তো গেল সমস্যার একটা অংশ। অনেকে আবার নিজের শোচনীয় অবস্থার কথা চিন্তা করে ভেঙ্গে পড়ে, হতাশায় ডুবতে থাকে একটু একটু করে…আর facebook এ pissed off স্ট্যাটাস দিয়েই সকল দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। আসলেই কি তাই? কিছুই কি করার নেই ‘হতাশা’ নামক বিষয়টা কাটিয়ে উঠার?
HSC 23 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বাংলা, ইংরেজি, ICT]
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
আমাদের দেশের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার একঘেয়ে স্টাইলের বদৌলতে পড়াশোনা মানেই এক বিভীষিকা ছাত্রছাত্রীদের কাছে। ‘পড়তে বসতে হবে’-এ কথা ভাবলেই যেখানে জ্বর উঠে যাবার উপক্রম হয় সবার, সেখানে পড়াশোনা নিয়ে হতাশ হওয়াটাই বোধ করি স্বাভাবিক। কিন্ত বাস্তবতা কী বলে?
নাহ। মোটেই না। হয়ত বা যারা এই লেখাটা পড়ছ/পড়ছেন, ইতিমধ্যেই তাদের নাক-ভ্রূ কুঁচকে গেছে। ‘পড়াশোনা’ বিষয়টা পবিত্র। জোর করে যেমন কিছু হয় না, এটাও ঠিক তাই। একে শ্রদ্ধা করতে হয়, ভালোবাসতে হয়, যত্ন করতে হয়, একটু একটু করে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয় এর সাথে। অদ্ভুত লাগছে কথাগুলো? বাস্তবতা কিন্তু এটাই। তোমরা যাদের “ঈশ্বর-প্রদত্ত-মেধাসম্পন্ন” বলে মনে কর, তারা ঠিক এই কাজটাই করে।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের অনেক উক্তির মাঝে একটা আমার বেশ পছন্দ। “Insanity: doing the same thing over and over again and expecting different results.” একদম খাঁটি কথা। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিনিয়ত একই কাজ দিনের পর দিন করে গেলে এই প্রচেষ্টা থেকে কখনো ভালো ফল আশা করা যায় না, আর যদি আশা করে থাকো তবে তুমি insane বা উন্মাদ বৈ আর কিছুই নও!
যারা নিজেদের এতদিন হতাশার সাগরে ডুবিয়ে রেখেছিলে, বুঝতেই পারছ কী দরকার তোমাদের। YOU NEED CHANGE. যদি ভালো কিছু করতে চাও তোমার বর্তমান অবস্থা থেকে, পরিবর্তন আনো। হতে পারে সেটা তোমার পড়ার স্টাইলে কিংবা পড়াশোনার প্রতি তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর তোমাদের কথা মাথায় রেখে এই ‘change’ এর সুবিধার্থে গুটিকয়েক পরামর্শ।
আরও পড়ুন:
সৃজনশীল প্রশ্ন: ভালো ফলাফল পেতে যেভাবে উত্তর করবে
ভালো রেজাল্ট করার ১০টি সহজ উপায়
লাগাতার পড়াশোনা: ঠিক তো?
কখনো কি এমন হয়েছে, তুমি পড়তে বসেছ ঘণ্টাখানেক আগে কিন্তু যতই সময় বাড়ছে ততই মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না? তুমিও আর না পেরে রাগ করে ‘আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’ ভাবতে ভাবতে উঠে পড়লে পড়া থেকে…কিংবা হয়তবা তুমিও ক্ষান্ত দেবার পাত্র নয়! লেগেই আছ পড়াটা নিয়ে……যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে দু’টোই ছিল তোমার ভুল! আমাদের অনেক সাধারণ ভুল পদ্ধতির একটা হল লাগাতার পড়ে সব শেষ করে ফেলার ঝোঁক।
আমরা সবাই ভাবি একটানা পড়লেই বোধহয় পড়ার flow-তে সব শেষ হয়ে যাবে। গবেষণা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। তুমি একটানা না পড়ে যদি বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে একই পড়াটা বিভিন্ন interval-এ পড়, তাহলে পড়াটা মনে থাকে বেশি। আমি কিন্তু এসব নিজ থেকে বলছি না। এগুলো সবই হল বিভিন্ন গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফল।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, “এত এত পড়া, interval নিয়ে পড়তে গেলে তো কিছুই শেষ হবে না!” একটু খেয়াল কর। আমি কিন্তু বলেছি “বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে একই পড়াটা বেশ বিভিন্ন interval এ পড়”- আমি কিন্তু বলিনি ‘বিভিন্ন পড়া!’ অর্থাৎ বিশ্রাম বলতে হতে পারে তুমি এতক্ষণ পদার্থবিজ্ঞান পড়ছিলে, এখন সেটা রেখে ইংরেজি পড়লে কিছুক্ষণ। আশা করি বুঝতে পেরেছো।
সঙ্গীতে মনচর্চা
আমার এক বন্ধু আছে। সারাদিন তো গান শুনেই, পড়ার মাঝে তো অবশ্যই। ওর মূলমন্ত্রই যেন, “Earphones in. Volume up. Ignore the world”। এটা নাকি ওর mind refresh করে পড়ার মাঝে। এ কথা শোনার পর আমি বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করলাম বিষয়টা নিয়ে আর আবিষ্কার করলাম আসলেই তাই! আমরা তো সবাই জানি যে ‘music cheers people up’। কিন্তু পড়াশোনার সাথে যে এর এত ঘনিষ্ট সম্পর্ক আর এটা নিয়ে যে ইতিমধ্যেই শত শত গবেষণা হয়ে গেল, তা আর কয়জনই বা জানতাম আমরা। তো পড়ার মাঝে কিংবা বিরতির ফাঁকে ফাঁকে যদি গান শোন, আশা করি উপকৃত হবে।
‘Human psychology’ বড্ড অদ্ভুত এক জিনিস। প্রতিটি মানুষ তার নিজের মত করে সব কিছু পেতে চায়, নিজের comfort zone থেকে বের হতে চায় না। এক্ষেত্রেও একই। সবাই চায় কঠিন বিষয়গুলো শেষে পড়তে। শুরুটা করতে চায় সহজ কোন topic দিয়ে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল কর। পড়তে বসার শুরুর দিকে আমাদের মনোযোগ বল আর পড়ার স্পৃহাই বল, দুটোই বেশি থাকে। ‘পরে পড়ব, এখন না’- এরকম করতে করতে হয়ত বা শেষে আর সময়ই পাবে না ভালোভাবে পড়ার। আর তাই কঠিন বিষয়গুলো আগে পড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। যদি তুমি ইতোমধ্যেই কঠিন বিষয়গুলো আগে পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে থাক, তাহলে তো ভালোই। আর যদি এখনো না হও, তবে আজ থেকেই শুরু করে দাও!
আমি জানি আমি কী করছি
এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা কিংবা বাসার প্রাইভেট টিউটর তোমার থেকে ভালো জানবেন না তোমার পড়াশোনার অবস্থা কিংবা কোন বিষয়ে তোমার বেশি নজর দেওয়া উচিত। এটা তুমি জানবে ভালো, যদি না তুমি ক্লাস থ্রি-ফোর এর হও! একটা কথা চিন্তা কর। যদি তুমি পড়াশোনা নিয়ে হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দাও কিংবা মন খারাপ করে বসে থাক তাহলে কিন্তু নিজেরই ক্ষতি। তোমার জীবনের দায়-দায়িত্ব তো নিশ্চয়ই আর কেউ নেবে না!
আর এভাবে থাকলে কিন্তু তোমার পড়াশোনার কোন উন্নতি হবে না, বরং দিন দিন খারাপ হবে। তাই তুমি কী করছ, সেটা ঠিক কিনা- এসব নিয়ে নিজের খুব ভালো ধারণা থাকা ভীষণ জরুরি। না হলে কিন্তু তোমার সব চেষ্টা, আমার এত কথা- সবই বৃথা যাবে।
পুরস্কার এখন হাতের মুঠোয়!
এটা কিন্তু বেশ উপকারি। পুরস্কার কিংবা খানিকটা বাহবা পেতে কে না ভালোবাসে। তাই বলে সেটা তো আর সবসময় পাওয়া সম্ভব নয়। আসলেই? কেমন হয় যদি বলি নিজের পুরস্কার নিজের থেকেই নাও! এও কি সম্ভব? অবশ্যই। মনে কর তোমার রসায়নের তিনটা অধ্যায় পড়ে শেষ করতে হবে। কিন্তু তোমার যে “মন বসে না পড়ার টেবিলে” টাইপ অবস্থা! কী করবে? এভাবে তো আর থাকা যায় না!
তো তুমি নিজের মনেই ঠিক করে ফেল, ‘আমি এই তিনটা অধ্যায় শেষ করতে পারলেই আমার প্রিয় সিরিজের দু’টো এপিসোড দেখবো, অন্যথায় না!’ পড়তে তো তোমাকে হবেই তখন, কারণ তুমি নিশ্চই এটা মিস করতে চাইবে না!
এটা তো গেল একটা সাধারণ উদাহরণ। তুমি কী পুরস্কার নিবে সেটা তো তুমি নিজেই ভালো জানো। দেখবে একবার দু’বার এরকম করলেই নিজের মাঝে একটা প্রফুল্লতা তো অনুভব করবেই, পড়াশোনাটাও ঠিকমত হবে। কথা একটাই- JUST FOCUS ON WHAT YOU REALLY NEED TO DO; DO ANYTHING TO MAKE THAT HAPPEN.
শেষ কথা
সবশেষে পড়াশোনায় যে কাজটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো অনুশীলন। কিছুদিন তুমি অনেক ভালো পড়াশোনা করলেও অনেক দিন প্র্যাক্টিসের বাহিরে থাকলে, তুমি আগের পড়াগুলোকে ভুলে যাবে। সেই সাথে তোমার নতুন পড়ার সাথে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে।
তাই পড়াশোনা করার নিয়ম আর পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়গুলোর পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলনে অনেক কঠিন পড়াও তোমার কাছে হয়ে উঠবে সহজ! আর তোমার পড়াশোনার এই সাহায্য করার জন্য ১০ মিনিট স্কুল তো আছেই।
এইচএসসি ও এডমিশন পরীক্ষার্থীদের জন্য আমাদের কোর্সসমূহঃ
- HSC 25 অনলাইন ব্যাচ ২.০ (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
- HSC 26 অনলাইন ব্যাচ (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
- HSC 25 অনলাইন ব্যাচ (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি)
- HSC 26 অনলাইন ব্যাচ (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি)
- মেডিকেল এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- ঢাকা ভার্সিটি A Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- ঢাকা ভার্সিটি B Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- বুয়েট কোশ্চেন সলভ কোর্স
- গুচ্ছ A Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
- গুচ্ছ B Unit এডমিশন কোর্স – ২০২৪
বছরজুড়ে অভিজ্ঞ টিচারদের সাথে ক্লাস 6-10 এর পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে আজই ভিজিট করো আমাদের অনলাইন ব্যাচ ২০২৫ -এ:
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন