ফেসবুক লাইভ ব্যবহার করে কীভাবে মার্কেটিং করবেন

May 23, 2022 ...

আজকালকার দিনে আমাদের সবার জীবনেই সোশ্যাল মিডিয়ার যে প্রভাব, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ফেসবুক, টুইটারের মতো এই সাইটগুলোতে প্রতি মাসে কোটি কোটি মানুষ ভিজিট করছে। তাই এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সামনে আপনার ব্যবসার মার্কেটিং করাটা যে কতটা উপকারী হবে, তা বলাই বাহুল্য। সেলস বাড়ানোর জন্য ফেসবুকে ব্যবসা প্রসার করার টেকনিকটা কিন্তু বেশ আগে থেকেই বড় বড় কর্পোরেশনগুলো করতে শুরু করেছে।

ফেসবুক লাইভ ভিডিও দিনকে দিন শুধু জনপ্রিয়ই হয়ে চলেছে। টেকক্রাঞ্চের তথ্যমতে, ফেসবুকের ওয়াচটাইম দিনে একশ মিলিয়ন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, বর্তমানে যেটি আরও বেড়েই যাচ্ছে! শতকরা ৮০ ভাগ ভোক্তাই ব্লগ পড়ার চেয়ে ফেসবুক লাইভ ভিডিও দেখে একটি পণ্য সম্পর্কে জানতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে, লাইভস্ট্রিমের গবেষণা এমনটিই বলে।

তাই এই পরিস্থিতিতে বসে না থেকে যে-কোনো ব্যবসারই উচিত ফেইসবুক লাইভ -কে টার্গেট করে মার্কেটিং মডেল সাজানো। কীভাবে ফেইসবুক লাইভ আপনার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সাজাতে সাহায্য করবে, আজকের ব্লগে কথা হবে সেই সম্পর্কেই!

ফেসবুক লাইভ -এর জন্য টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করুন

ব্যবসায় একটা টার্ম খুব ব্যবহার হয়, সেটি হলো টিজি অর্থাৎ টার্গেট গ্রুপ। এটি খুবই জরুরি, নিশানা ঠিক না থাকলে কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যেতে পারে। প্রথমে সিলেক্ট করুন, ঠিক কোন কোন কাস্টমারদের কাছে আপনি ফেসবুক লাইভ -এর মাধ্যমে পৌঁছাতে চাচ্ছেন? এরপর তাদের প্রোফাইল অ্যানালাইসিস করুন।

Facebook Marketing

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • ফেসবুকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের ব্যবহার, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের অর্গানিক রিচ বাড়ানো।
  • ফেসবুক বুস্টিং ও ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড দাঁড় করানোর উপায়।
  •  

    শেষমেশ সিদ্ধান্তে আসুন কী কী করতে হবে ফেসবুক লাইভ ভিডিও -তে, যাতে কাস্টমারদের ইনগেজড রাখা যায়। কারণ সোশ্যাল সাইটগুলোতে রিটেনশন রেট ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

    ফেইসবুক লাইভ -এর বিজনেস গোল সেট করুন 

    যখন আপনার টার্গেট কাস্টমার প্রস্তুত, এরপর আপনার নিজের বিজনেস পারপাস ঠিক করুন এবং গোল সেট করে ফেলুন। আপনার অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মতই লাইভেরও একটা উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আপনার কোন ভিউয়াররা কোন ফেইসবুক লাইভ কতটুকু দেখছে এই তথ্যাদি আপনি অ্যানালিটিক্স থেকেই পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্তে আসুন, কে কোন কন্টেন্ট কেমন কনজিউম করছে, যেটা ভালো পারফর্ম করছে, সেরকম কন্টেন্ট বেশি চালান।

    ভিউ এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ইনগেজমেন্ট, কারণ ১০০০ জন ভিউয়ারের থেকেও ফেসবুক পছন্দ করে যদি ১০০ জনও লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে ফেইসবুক লাইভ -টিতে ইনগেজড হয়। এসব মাথায় রেখে আপনার নিজের ব্যবসার সাথে সঙ্গতি রেখে লক্ষ্য প্রস্তুত করুন। 

    ফেইসবুক লাইভ
    Source: Mind to success

    ফেসবুক লাইভ -এর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

    মার্কেটিং-এর দুনিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বহুল চর্চিত আর কার্যকরী এক মাধ্যম। এর সবথেকে অসাধারণ দিক হলো সেই বিশেষ ইনফ্লুয়েন্সারের অডিয়েন্সকে রিচ করা যায়, এভাবে নিজের ব্র্যান্ডের বাইরেও আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাশোনা তৈরি হবে।

    সার্চ ইঞ্জিন ওয়াচের বরাতে পাওয়া তথ্যমতে, শতকরা ৮৬ জন ক্রেতার সিদ্ধান্তেই আরেকজনের রিকমেন্ডেশন ভূমিকা রাখে। সেখানে ইনফুয়েন্সার হতে পারে সেই রিকমেন্ডেশনদাতা। অনেক ক্ষেত্রে ইনফুয়েন্সার মার্কেটিং অ্যাড প্লেসমেন্টের থেকেও বেশি কাজ করে। তাই ফেসবুক লাইভ ভিডিও -তে ইনফ্লুয়েন্সার এনে মার্কেটিং হতে পারে আপনার ব্যবসার জন্য পরবর্তী সেরা সিদ্ধান্ত!

    ফেইসবুক লাইভ -এ ভিডিও টক শো আয়োজন করা 

    ইউটিউব এর মত প্লাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তার অন্যতম একটা কারণ হলো, এতে অনেক চ্যানেল থাকে যেগুলো নিয়মিত তথ্যবহুল ভিডিও দিয়ে থাকে, টক শোর ব্যবস্থা করে। এই টেকনিক কিন্তু আপনি কাজে লাগাতে পারেন ফেইসবুক লাইভ -এর মাধ্যমেই। ফেসবুক সাজেস্ট করে, কমপক্ষে ১০ মিনিট যেন আপনার লাইভটি চলমান থাকে।

    তাই সেদিকে নজর রেখে অনুরূপ সময়কালের টক শো করতে পারেন আপনিও। তবে এক্ষেত্রে খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন, কখনোই এই সময় পূরণ করতে গিয়ে ভিডিওর মাঝে অযথা ফ্লাফ বা ফিলার দিয়ে সময়ক্ষেপণ না করা হয়। 

    ফেসবুক লাইভ -এ অথেনটিক থাকুন 

    কখনোই ফেইসবুক লাইভে গিয়ে এমন পণ্যের মার্কেটিং করবেন না, যেটি আপনার কাছে নেই। সবসময় আপনার ক্রেতাদের কাছে সৎ থাকুন। একটা বিষয় মনে রাখেবন, একবিংশ শতকে এসে লোকজনকে ধোঁকা দেয়া কিন্তু খুব একটা সহজ নয়; সাথে এটা এথিকাল তো নয়ই। তাই সবসময় নিজের প্রোডাক্ট বিষয়ে অথেনটিক তথ্য দিবেন।

    কারণ ব্র্যান্ড ভ্যালু বলে একটা জিনিস আছে, একবার যা চলে গেলে আর ফেরত আনা সম্ভব না। আর যেহেতু এটা লাইভ, অর্থাৎ পরে এডিট করাও যাবে না, তাই যে তথ্যাদিই কাস্টমারদের কাছে দিবেন তা যেন সঠিক হয়। শতকরা ৮০ জন ক্রেতা, ব্র্যান্ড ভ্যালুর সময় সততাকে প্রায়োরিটি দিয়ে থাকেন।


    আরও পড়ুন:

    ওয়ার্ডপ্রেস কী? ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন যেভাবে

    লোগো ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা লোগো ডিজাইনিং টিপস


     আপনার আপকামিং ইভেন্ট সম্পর্কে ফেসবুক লাইভ করুন 

    হতে পারে, সামনে আপনার কোনো কন্টেস্ট আসতে চলেছে। আপনি চাইলে এই বিষয়ে একটা ফেসবুক লাইভ ভিডিও করতে পারেন। এতে অনেকেই এ ব্যাপারে জানতে পারবে যারা আগে থেকে জানত না। ধরুন কনটেস্টের কথাই যদি বলি, আপনি কোনো ইভেন্ট সম্পর্কে অ্যানাউন্স করার কাজটা ফেইসবুক লাইভ দিয়ে সেরে ফেলতে পারেন, যা সচরাচর পোস্ট দিয়ে করা হয়ে থাকে।

    এখানে দুইটা কাজ করা খুব জরুরি, লাইভে আপনার অডিয়েন্সকে আপকামিং কনটেস্টে পার্টিসিপেট করতে বলবেন, এবং দ্বিতীয়ত লোকদেরকে একটা যৌক্তিক কারণ দেখাবেন, কেন এই ইভেন্টে অংশ নিতে হবে এটা বলে। এতে আপনার বিজনেস গ্রো করতে অনেক সাহায্য করবে, সাথে কনটেস্টের রিচও বাড়বে। 

    ফেসবুক লাইভ

    টিউটোরিয়াল আপলোড করতে পারেন 

    সার্চ ইঞ্জিন জার্নাল বলছে, হাউ টু জাতীয় কন্টেন্ট আজকের দিনে প্রসার পাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় ধাঁচগুলোর একটি। অর্থাৎ কোনো একটা বিষয় কীভাবে করতে হয় এরকম কন্টেন্ট ইউজাররা পছন্দ করে, গুগল, বিং, ইয়াহু বা এজাতীয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোও ভালো র‍্যাঙ্ক করে। তাই আপনি সহজেই টিউটোরিয়াল জাতীয় ভিডিও দিয়ে ফেইসবুক লাইভ করতে পারেন, অবশ্যই এটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে ইন্ডাস্ট্রি পার্থক্য হবে।

    তবে মূল বিষয়টা হলো, আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কাস্টমাররা যাতে তথ্য পেতে থাকে। হতে পারে আপনি মেকাপ প্রোডাক্টের ব্যবসা করছেন, সেক্ষেত্রে কীভাবে কোন পণ্য দিয়ে নিত্যনতুন ট্রেন্ডের সাথে খাপ খায় এমন সাজগোজ করা যায়, সে বিষয়ে টিউটোরিয়াল আপ দিতে পারেন। এতে আপনার ভিউয়ারশিপ যেমন বাড়বে, তেমনি আপনার পণ্যের মার্কেটিং টাও কিন্তু হয়ে গেলো সেই ফাঁকে! 

    ফেইসবুক লাইভ থেকে রেভিনিউ জেনারেট করার খাতগুলোতে জোর দিন

    সাধারণত কয়েক ভাবে আপনি রেভিনিউ আনতে পারেন, যেমন স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট, মার্চেন্ডাইজ আর ডিরেক্ট প্রোডাক্ট বা সার্ভিস। এগুলোর দিকে ফোকাস করে আগানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

    • স্পন্সরশিপ

    আপনার ফেসবুক পেজে এবং গ্রুপে অবশ্যই একটা কমিউনিটি আছে। আর এই কমিউনিটিটি বিজনেস সেন্সে একটি টার্গেট ডেমোগ্রাফিকও বটে। তাই এদের কাজে লাগিয়ে আপনি অন্যান্য কর্পোরেট কোম্পানির কাছে স্পন্সরশিপের অফার করতে পারেন। এরকম পেইড স্পন্সরশিপের মাধ্যমে বেশ ভালো পরিমাণে রেভিনিউ জেনারেট করা সম্ভব।

    Facebook Marketing

    ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং ফেসবুকে বুস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত শিখে আপনার ফেসবুক ব্যবসাকে পৌঁছে দিন টার্গেট কাস্টমারের কাছে। আজই এনরোল করে শিখুন ফেসবুক মার্কেটিং-এর খুঁটিনাটি।

     

    • অ্যাফিলিয়েট 

    এখানে পার্টনারশিপের কথা আসে। অন্যান্য ক্রিয়েটরের সাথে মিলে অ্যাফিলিয়েট মডেলে ব্যবসা করতে পারেন। অধিকাংশ কন্টেন্ট ক্রিয়েটরই প্রোডাক্ট তৈরি করে না, কিন্তু তাদের কন্টেন্টের মাঝে বিভিন্ন পণ্য চলে আসে। তাই তারা অ্যাপ্রোচ না করলে বরং আপনিই তাদের কাছে অ্যাপ্রোচ করুন। এবং আপনার পণ্য ডিস্কাউন্টে তাদের অডিয়েন্সের কাছেই বিক্রি করুন। এতে আপনার ক্রেডিবিলিটি আর ব্র্যান্ড ভ্যালু যেমন বাড়লো, সাথে সেলস তো বৃদ্ধি পেলই। 

    • মার্চেন্ডাইজ, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস 

    বাইরের দেশগুলোতে এই সেক্টর বেশ অগ্রসর, আমাদের দেশেও আগাচ্ছে। অনেক সেলিব্রিটির মার্চ কিনতে তার ভক্তকূল আগ্রহী থাকে, কিন্তু তিনি নিজে তো আর বানাতে পারেন না, তাই থার্ড পার্টি কিছু কোম্পানি তাদের হয়ে বানিয়ে দেয় এবং বেশ ভালো প্রফিট করতে পারে। আর নিজস্ব প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থাকলে তো কথাই নেই। 

    এইসব কিছুই কিন্তু ফেইসবুক লাইভ -এ এনে করা যায়। ফেসবুকে সাধারণ ভিডিওর থেকে  লাইভে অডিয়েন্স পাওয়া যায় বেশি, এই বড় জনগোষ্ঠীর কাছে নিজের সেবা ছড়িয়ে দিতে হলে প্ল্যান করে আগালেই কেবল ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। 

    শেষকথা 

    একটি ফেইসবুক লাইভ আপনাকে ভিউয়ারদের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে ইন্টার‍্যাক্ট করার সুবিধা দেয়, আরও বেশি ইনগেজমেন্টের সুযোগ দেয় এবং সর্বোপরি সবার সাথে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করুন, ফেইসবুক লাইভ চলাকালে ভিউয়ারদের আরও বেশি কিছু অফার করতে, যেন তারা উৎসাহটুকু ধরে রাখে।

    যেমন ফ্রি শাউট আউট দিতে পারেন, গিভঅ্যাওয়ে করতে পারেন বা কোনো স্পেশাল প্রোমো কোড দিতে পারেন শুধু সেইসময়ের ভিউয়ারদের জন্য।

    Facebook Marketing

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • ফেসবুকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের ব্যবহার, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের অর্গানিক রিচ বাড়ানো।
  • ফেসবুক বুস্টিং ও ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড দাঁড় করানোর উপায়।
  •  

    শেয়ারদাতাদের জন্য এবং কমেন্টে বন্ধুদের মেনশনকারীদের জন্য বিশেষ কোনো পুরষ্কারও রাখতে পারেন। এভাবে নিত্য নতুন আইডিয়ার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অপার সম্ভাবনার টুলটি ব্যবহার করে নিজের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে নিতে পারেন অনায়াসেই! আর ফেসবুকে নিজস্ব ব্যবসার মার্কেটিংকে অনন্য স্তরে উন্নত করতে ১০ মিনিট স্কুলের ফেসবুক মার্কেটিং কোর্সটিতে এনরোল করতে পারেন এখনই! 


    রেফারেন্স: 


    আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


     

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন