আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। আমরা যদি আমাদের শিক্ষাজীবনকে তিন ভাগে ভাগ করি তবে স্কুল ও কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষাজীবনের অন্তিম ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কথায় আছে- শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সুতরাং শিক্ষাজীবনের শেষ ভালো করতে হলে অবশ্যই তোমাকে ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। আর বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য কী পরিমাণ লড়াই করতে হয় তা তো তোমরা খুব ভালো করেই জানো।
কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা সহ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা – এসবের প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাপারটার নামই এখন হয়ে গেছে ‘ভর্তিযুদ্ধ’। আর কঠিন এই যুদ্ধে জেতার জন্যে দরকার কিছু অস্ত্র ও কৌশল, যা তোমাকে অনেক প্রতিকূলতার মাঝে সামনে এগিয়ে গিয়ে জয় এনে দিতে সাহায্য করবে।
ভর্তিযুদ্ধ জয়ের সেরা ৭টি জনপ্রিয় টিপস:
এই লেখায় থাকছে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ, যা তাদের এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে অনেকটা সহায়তা করবে। তাহলে চলো জেনে নেওয়া যাক সেই ৭টি জনপ্রিয় টিপসঃ
১। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব:
শৈশব থেকে লালিত কোনো পেশাজড়িত স্বপ্ন প্রায় সম্পূর্ণই নির্ভর করে এই পরীক্ষার উপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্নের কথা। এই স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য যথাক্রমে মেডিকেল কলেজ আর ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটা হলো প্রথম সোপান।
অনেকেই মনে করে, “সামান্য একটা পরীক্ষাই তো। জীবনে কত পরীক্ষা দিলাম! এ আর নতুন কী!” আর এই চিন্তাটাই হলো হোচট খাওয়ার প্রথম কারণ। জীবনে তুমি অসংখ্য পরীক্ষা দিয়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাটা আলাদা করে দেখতেই হবে; নিতে হবে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে।
২। কলেজ জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
তোমরা যারা এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছো, তারা এখন থেকেই শুরু করে দিতে পারো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। এতে করে তোমার নিজের পড়ার প্রতি মনোযোগ যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশাল পরিমান সিলেবাসের বোঝা। সুতরাং যারা এইচএসসি পরবর্তী সময়ে সারাদিন পড়ে পড়ে পাগল হয়ে যাবার ভয়ে এখন থেকেই তটস্থ, তারা কিন্তু খুব সহজেই কিছু পরিকল্পনা মাথায় রেখে সামনে এগোতে পারো। এতে করে যা হবে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অন্য সবার মত তোমার আর এত টেনশন থাকবেনা। তখন শুধু নিজের প্রস্তুতিকে ঝালাই করতে থাকলেই তুমি ভর্তিযুদ্ধের জন্য হয়ে যাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক যোদ্ধা। কলেজ থেকেই ভর্তি প্রস্তুতি যেভাবে নিতে পারো সেটি নিয়ে আলোচনা করছি এখানে।
লক্ষ্যকে করো স্থির
সবার প্রথম কাজই এটি। তুমি সায়েন্স, কমার্স বা আর্টস যে বিভাগের শিক্ষার্থীই হওনা কেন, তোমার প্রথম কাজ হলো নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে লক্ষ্য স্থির করা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি নেবার সময় সময় অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা যায়, তাদের আসলে কী পড়া উচিত তা নিয়ে তারা কনফিউজড থাকে। আর এজন্য স্পেসিফিক ভাবে প্রস্তুতি নেয়াটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি ক্ষুণ্ন হয়এবং প্রচুর সময় নষ্ট হয়। এ সমস্যা এড়াতে তোমার উচিত আগে থেকেই ক্যারিয়ারের লক্ষ্য স্থির করে ফেলা।
আরো পড়ুন: ঢাবি খ ইউনিট প্রস্তুতি: কিভাবে জিতবে ভর্তি যুদ্ধ?
তুমি যদি প্রশ্ন করো কিভাবে নিজের ক্যারিয়ার বা জীবনের লক্ষ্য স্থির করবে তার উত্তর কিন্তু বেশ গম্ভীর। তুমি নিজেকে জিজ্ঞেস করো তুমি কী নিয়ে পড়লে অথবা তোমার জীবনে কোন দিক ব্যবহার করে এগোলে তুমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। সেটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন বিষয়কেই বেছে নাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার লক্ষ্য হিসেবে। লক্ষ্যের সাথে তাল মিলিয়ে তোমাকে দিতে হতে পারে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সমাজবিজ্ঞানের জন্য স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা, এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। সবার সাথে তাল মিলিয়ে বা শুধু পাশের বাসার আন্টির সাথে জেদ করে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার কথা ভেবে ফেলো না কিন্তু! কারণ এটা যদি তোমার মনের মত বিষয় না হয় তবে কিন্তু সেটা তোমাকেই ভোগাবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তুতি ও খুঁটিনাটি
প্ল্যান করে ফেলো
নিজের লক্ষ্যকে যদি একটা গন্তব্য ধরো, তবে সেই গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য একটা প্ল্যান করা প্রয়োজন। প্ল্যানটা বিশাল মাপের না হলেও সেটা কার্যকরী হতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছে যাবার জার্নিটা কেমন হবে তা তুমি জানোনা। তাই আগে থেকেই সম্ভাব্য সমস্যা বা বাধার কথা ভেবে তুমি যদি একটা প্ল্যান করে ফেলো তবে কিন্তু তোমারই লাভ। ঘরের টেবিলে বসে পড়া থেকে শুরু করে একদম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি পর্যন্ত তোমার কর্মকান্ড কেমন হবে বা কেমন হওয়া উচিত তার উপর করে ফেলো একটি প্ল্যানের খসড়া, এই খসড়া তোমাকে অনুপ্রাণিত করবে, পাশাপাশি তোমাকে সঠিক ট্র্যাকে থাকতেও সাহায্য করবে।
এইচএসসি সবার আগে
অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এর প্রতি এত আগ্রহী হয়ে পড়ে যে, সামনে এইচএসসি পরীক্ষা, সেটার কথা ভুলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি যদিও খুব বেশী জরুরী, তোমার ভুলে গেলে চলবেনা যে, তুমি যদি দুর্ভাগ্যবশত উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়ে যাও তবে কিন্তু এত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি কোন কাজেই আসবেনা। অর্থাৎ এক কথায় উচ্চ মাধ্যমিকের ছাড়পত্র পরীক্ষা এইচএসসি হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা -র প্রায় একমাত্র টিকেট।
তাছাড়া তোমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে মান বন্টনে কিন্তু তোমার উচ্চ মাধ্যমিকের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মূল নম্বরের সাথে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রায় ৬০ নম্বর জায়গা পূরণ করা সম্ভব। তুমি উচ্চ মাধ্যমিক থেকেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি নাও তবে অবশ্যই এটা একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এজন্য নিজের বর্তমান অবস্থা ভুলে গেলে কিন্তু চলবেনা।
লক্ষ্যকে বাড়তি সময় দাও
তুমি যদি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হয়ে থাকো তবে তোমার প্রতিনিয়তই প্রত্যেকটি বিষয়কে প্রায় সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হয়। কারণ, এইচএসসিতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে সব বিষয়ে ভালো করার বিকল্প নেই। এজন্য কোন বিষয়কেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। তাছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এইচএসসির রেজাল্টের পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে বিষয়টাকে তুমি সহজ বা অন্যগুলোর তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলে সেই বিষয়টিতেই তোমার ফলাফল খারাপ হয়েছে। অথবা উচ্চতর গণিত, রসায়ন কিংবা ইংরেজির মত বিষয়গুলোতে তুমি ঠিকই ভালো করেছো কিন্তু বাংলা কিংবা সমাজবিজ্ঞান বিষয়কে তুমি সহজ ভেবে তেমন গুরুত্ব দাওনি, তাই নাম্বার ভালো পাওনি।
এ তো গেলো সোজা হিসেব। কিন্তু যেহেতু তুমি উচ্চ মাধ্যমিকে থাকা অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাও, তোমার জন্য সকল বিষয়ে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি, তোমার লক্ষ্য যেখানে স্থির সেখানে দিতে হবে অতিরিক্ত সময়। কেননা তোমার পরবর্তী জীবন এই লক্ষ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ধরা যাক তুমি ভবিষ্যতে একজন চিকিৎক হতে চাও। আর তাই তোমার লক্ষ্য এখন উচ্চ মাধ্যমিকের পর যে কোন মূল্যে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া।
যেহেতু মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটা তোমার লক্ষ্য, সুতরাং সেখানে ভর্তি হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের উপর প্রশ্ন থাকে সেসব বিষয়কে তোমার এখন থেকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। তুমি তোমার চেনা কোন মেডিকেলে পড়ুয়া ভাইয়া/আপু কিংবা খুব সহজেই গুগল মামার সাহায্যে তোমার কাঙ্ক্ষিত তথ্য নিয়ে সে বিষয়ের উপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করতে পারো আগেভাগে ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪; ফাঁদগুলোকে এড়িয়ে চলো
‘পাশ না করলে মূল্য ফেরত’ অথবা ‘চান্স পাওয়ার পর টাকা’ এই কথাগুলো ঢাকায় থেকেছে আর কখনোই দেখেনি এমন শিক্ষার্থী পাওয়া দুস্কর। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এর মৌসুম শুরু হবার আগেই ফার্মগেট কিংবা মতিঝিল সহ রাজধানীর বিশেষ বিশেষ এলাকায় এসব পোস্টার ছেয়ে যায়। লোভনীয় সব কথাবার্তা আর একদম চান্স পাওয়ার ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে ছাপানো পোস্টার বা কোচিং এর বিজ্ঞাপনগুলো যে একটাও তোমার কাজে আসবেনা, তা মনের মধ্যে ভালো করে গেঁথে রাখা দরকার। কেননা পড়াটা তোমার নিজের মাঝে। বাকিটা শিক্ষক ধরিয়ে দেন। সেখানে চান্স না পেলে মূল্য ফেরত কিংবা শতাধিক পাশের নিশ্চয়তা বলে আসলে কিছু নেই।
শুধু কি কোচিং! বিভিন্ন গাইড, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সহায়ক বই, অমুক সিরিজ, তমুক ক্যাপসুল নামে হাজারো বই তোমাকে প্রলোভন দেখিয়ে কেনার জন্য বাধ্য করবে। কলেজে পড়া অবস্থায় দ্বিতীয় বর্ষেই দেখবে বিভিন্ন কোচিং থেকে টানাটানি কিংবা বড় ভাইদের দিয়ে বিভিন্ন রকমের কথা দিয়ে তোমাদের ভোলানোর চেষ্টা করা হবে। একদম ঝেড়ে ফেলো এসব চিন্তা। বেশি সমস্যা হলে ঘরে বসে যে কোন সময় ঢুকে পড়ো টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটে। সেখানে বসেই তুমি সহজে ঢুকে যেতে পারো ‘Admission’ লেখা বাটনে। কী নেই সেখানে? বিষয় ভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল, পূর্বের লাইভ ক্লাস, স্মার্টবুক, কুইজ, পূর্ববর্তী বছরগুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর আরও অনেক কিছু।
আরো পড়ুন:সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা: একবার না পারিলে দেখো আরেকবার
এবার হও সিরিয়াস
অনেক তো ঘোরাঘুরি হলো, এবার সময় এসেছে সিরিয়াস হবার। কেননা তুমি কলেজ জীবনে, আর তোমার উচিত এখন থেকেই পড়াশনোয় সিরিয়াস হওয়া। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে খেয়াল করলেই দেখবে, শুধুমাত্র ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে ঢুঁ মেরে ঘন্টার পর ঘন্টা মূল্যবান সময় নষ্ট করছো। অথবা যখন পড়ার দরকার ছিলো তখন বন্ধু কিংবা অন্য কারো সাথে অপ্রয়োজনীয় আড্ডা বা চ্যাটিং এর মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছো।
এটাকে আসলে সময় কাটানো বলা যাবেনা, এটাকে বলা উচিত সময় নষ্ট। কারণ দেখো, এই সময়গুলোতে যদি ফেসবুকে বা ইউটিউবে ঢুঁ না মারতে কিংবা বন্ধুদের সাথে অপ্রয়োজনীইয় আড্ডা মেরেসময় নষ্ট না করতে, তবে কিন্তু এটুকু সময় বেশ ভালোভাবে পড়াশোনায় কাজে লাগানো যেত। প্রতিদিন যদি দুই ঘন্টা করে আড্ডা আর ফেসবুক বাদ দিয়ে পড়ার কাজে লাগাও, তবে মাস শেষে সেটি দাঁড়াচ্ছে ৬০ ঘন্টা। অর্থাৎ সেটি আস্ত দুই দিনেরও বেশি সময়! এই সময়ের কিছুটা অংশ যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নেবার কাজে লাগাও, তাহলে তুমি এগিয়ে থাকলে অনেকের থেকেই।
আমরা তো কত টাকা সঞ্চয় করে কত কিছু কিনি। কখনো কি ভেবেছো সময় ও সঞ্চয় করা সম্ভব! সময় সবচেয়ে বেশি মুল্যবান এ পৃথিবীতে। আজ থেকে সময় সঞ্চয় করে পড়াশোনায় হয়ে যাও সিরিয়াস। এখন হয়তো তুমি বলতে পারো টেবিলে বসলে পড়ায় সিরিয়াস হতে হলে কী কী করণীয়! এটা আসলে খুব সোজা। পড়াশনোয় সিরিয়াস হবার জন্য তুমি বেশ কিছু সহজ জিনিস মাথায় রাখতে পারো। যেমন ধরো, পড়ার নির্দিষ্ট টাইম মেনে চলতে পারো। অন্য সময় যাই করো না কেন পড়ার সময় পড়াটা রাখতে হবেই হবে। এছাড়াও ধরো পড়াতে সিরিয়াস ভাবে মন দিতে, পড়ার সময় হাতের নাগাল থেকে নিজের স্মার্ট ফোন দূরে রাখো যেন ইচ্ছে হলেই সেটি ধরতে না পারো। এতে পড়ায় তোমার মনোনিবেশ করতে সুবিধে হবে।
মন কে ঘোরাও নিজের লক্ষ্যে
নিজের মনকে নিজেই বোঝাও। এখন তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানর সময়। আড্ডাবাজি আর খেলাধুলো করে সময় কাটালে চলবে না, কারণ এই পথটা অনেক বড়। নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করো, এই পথে এখন থেকেই দৌড় শুরু না করলে তুমি সময় মত গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে তো! ঢাবিতে পড়ুয়া আমার এক ভাইয়া আমাকে বলেছিলে, মোটিভেশন বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। কারণ মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজেই। সুতরাং, তুমিও হয়ে যাও নিজেই নিজের অনুপ্রেরণাদাতা। এটি তোমার নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
হাল ছেড়োনা! হাল ছেড়োনা!
উপরে যেসব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তা কলেজ জীবনে মেনে চলা একটু কঠিনই বটে, তা বলতে দ্বিধা নেই। কিন্তু ব্যাপার হলো হতাশ হওয়া যাবেনা। দুদিন নিয়ম মাফিক চললেও তিন দিনের দিন দেখবে আর ভালো লাগছেনা। একদিন নিয়ম থেকে সরে যেতে ইচ্ছে করছে। তোমার কাছে মনে হবে মাত্র এক দিনই তো! অথবা মাত্র একবারই তো! কিন্তু এই ‘একবারই’ তোমার ধারাবাহিকতার কাল হয়ে দাঁড়াবে। তখন আবারো ইচ্ছে করবে একটু ঘুমুতে অথবা একটু ফেসবুকিং করতে।
এজন্যই দু’বার বলছি, হাল ছেড়োনা, হাল ছেড়োনা। যত কিছুই হোক তুমি তো ভবিষ্যতের ভর্তি যুদ্ধের একজন যোদ্ধা, তাইনা? তাই যোদ্ধার মত যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই থাকতে হবে অনড়। এবার তোমার উপর যেই বাধাই আসুক না কেন, যত বড় হতাশাই তোমাকে ঘিরে ধরুক না কেন, তুমি তোমার লক্ষ্যে খুঁটি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে সটান হয়ে।
বানাও তোমার মেন্টর
তোমরা কি আয়মান সাদিক ভাইয়ার ঐ ভিডিওটা দেখেছো, যেখানে আয়মান ভাইয়া ও সাদমান ভাইয়া বলেছিলেন তারা আসলে দুজন দুজনের মেন্টর? জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে মেন্টর নির্বাচন করা খুবই জরুরী। কারণ হলো একজন রোল মডেল যদি তোমার সামনে না থাকে, তবে তোমার কাছে নতুন যে কোন কিছু তৈরী করা বেশ কঠিন। যেমন ধরো আমি তোমাদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি এর বিষয়ে টিপস লিখছি, এটার জন্য আমার অনেকগুলো আর্টিকেল ও ব্লগ পড়তে হয়েছে। আমি টিপস জাতীয় যে কোন লেখা লিখতে হলে সবার আগে উঁকি দেই টেন মিনিট স্কুলের ব্লগের ওয়েবসাইটে।
টেন মিনিট স্কুলের ব্লগ সাইটটি মানুষ হলে, নিঃসন্দেহে আমি তাকে টিপস মেন্টর হিসেবে মেনে নিতাম। তো যাই হোক, তুমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এর জন্য যে লক্ষ্যে এগুচ্ছো সেক্ষত্রে যারা সফল এমন কাউকে নিজের মেন্টর বানিয়ে তার পরামর্শে তোমার পড়ালেখা বা অন্য কাজে আগাও। এজন্য তোমার একটু খুঁজে দেখতে হবে তোমার পছন্দের ক্ষেত্রের সফল ব্যক্তিদের। পছন্দমত একজন মানুষকে মেন্টর বানিয়ে তুমি উঠে আসতে পারো তোমার এই যুদ্ধের এক ধাপ উপরে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরুতেই মুখস্তকে জানাও বিদায়
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নাম শোনার সাথে সাথে তোমার প্রথম কাজ হলো – মুখস্থ শব্দটাকেই তোমার মনের ডিকশনারি থেকে মুছে ফেলা। মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকে কোন ভাবে একটা না একটা বিষয় মুখস্থ করে তুমি হয়তো পরীক্ষায় লিখে দিয়ে নাম্বার পেয়ে গেছো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে একদম শেষদিন পর্যন্ত বুঝে বুঝে পড়া ছাড়া বিকল্প নেই। তাই কলেজে কোন টপিক বা প্রশ্ন মুখস্থ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য সেটি এক্ষুনি বুঝে নেয়াটা একান্ত কর্তব্যের মাঝে পড়ে যায়। মুখস্থ কে যত তাড়াতাড়ি টাটা বায় বায় বলছো ততই তোমার মঙ্গল। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে মুলত শিক্ষা থেকে মুখস্থ শব্দটা কে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য। সুতরাং মুখস্থে কে করো বিদায়, বুঝে পড়া কে বলো Hi!
সহজ ভাবে এসব টিপস মেনে চললে তুমি কলজে থাকতেই ঝালিয়ে নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি।
৩। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রায় চার মাস সময় হাতে পায়। এই চার মাস তার জীবনের জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময়টাতে প্রচুর পড়াশোনা করলে তবেই আসবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। অন্যসব সময়সাপেক্ষ কাজ-কর্ম বর্জন করতে হবে।
অনেকেই প্রশ্ন করে ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে দৈনিক কত ঘণ্টা পড়ব?’ এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটি একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে কথা হচ্ছে যতক্ষণ না তুমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবে যে তুমি চান্স পাওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছো, ততক্ষণ পর্যন্ত পড়তেই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো অধ্যায় বাদ দিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। সব অধ্যায়ই পড়তে হবে। তবে বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে অধ্যায়ের গুরুত্ব জানা যাবে। তবে এই ব্যাপারটি ভার্সিটিভিত্তিক। অর্থাৎ একটি ভার্সিটির ভর্তি প্রশ্নে যে অধ্যায় থেকে সচরাচর প্রশ্ন কম আসে তা কেবল ঐ ভার্সিটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে ঐ ভার্সিটির জন্য কোন অধ্যায় বা টপিক গুরুত্বপূর্ণ। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এর ক্ষেত্রে আগের প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে, আর খুব মনোযোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোয় বেশি মনযোগ দিতে হবে।
আর অবশ্যই পড়ার পাশাপাশি প্রচুর প্রশ্ন সমাধান অনুশীলন করতে হবে। এর মাধ্যমে পড়া আরও ঝালাই হবে, প্রশ্নের সাথে পরিচিতি হবে এবং প্রশ্ন দেখার পর উত্তর মাথায় আনার দক্ষতা অর্জিত হবে।
যেমন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য মূল পাঠ্যবই খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। সব প্রশ্ন একদম বই থেকেই হয় তাই মূল বইয়ের আগে কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিলে চলবে না। ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রথমত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের ব্যাসিক শক্তিশালী হতে হবে। এরপর প্রচুর গাণিতিক সমস্যা সমাধানের অনুশীলন করতে হবে।
৪। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি: ভর্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র
ভর্তিযুদ্ধের দুইটি বিশেষ অস্ত্রের নাম ‘আত্মবিশ্বাস’ ও ‘দৃঢ় মনোবল’। ভর্তি পরীক্ষার আগের চার মাস তুমি পদে পদে হোঁচট খাবে। বারবার মনে হবে যে তোমাকে দিয়ে হবে না। ভর্তি কোচিং-এর পরীক্ষা কোনোটা ভালো হবে আবার কোনোটা খুব খারাপ হবে। এই স্রোতের ওঠানামার সাথে টিকে থাকাটা কঠিন। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখাটাও খুব কঠিন। কিন্তু মনে রাখবে “হোঁচট খাওয়ার মানেই হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়ের শুরু হয়।”
আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, তবে সীমার মধ্যে। ‘আমি পারবো’ আর ‘আমি পারবোই’ এর মধ্যে তফাৎ আছে। বারবার পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে চলা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আর চেষ্টা করি বা না করি আমি পারবোই- এ ধরনের মানসিকতা হচ্ছে ‘ওভার কনফিডেন্স’ যা মানুষকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরাজয় এনে দেয়।
মানসিক অবস্থা দৃঢ় রাখার মূলমন্ত্র হলো অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা না করা। এই চার মাস দেখবে অন্যের প্রাপ্ত নম্বর দেখে হতাশ লাগবে। প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বর দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে হবে, কিন্তু লড়াইটা করতে হবে নিজের সাথে। তোমার প্রতিযোগী তুমি নিজেই। আজকে পরীক্ষায় যত নম্বর পেলে, পরের পরীক্ষায় নিজেরই সেই নম্বরকে টেক্কা দাও। এভাবে প্রতিদিন ছাড়িয়ে যাও গতকালের তুমিকে। একটা কথা মনে রেখো, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার এই প্রতিযোগিতাটা ‘সুইমিং রেইস’ না। মানে এমনটা না যে তুমি সাঁতরে সবার আগে ওপারে গেলে তুমি জিতে যাবে। বরং এটা ডুবে না গিয়ে টিকে থাকার লড়াই। তাই অন্যের দিকে না তাকিয়ে, অন্যের সাথে তুলনা না করে নিজের মতো এগিয়ে যাও, নিজের সেরাটা দিতে পারাই মূল কথা।
আরো পড়ুন: কেমন হবে নতুন নিয়মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা?
৫। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪; ভর্তি আবেদন সম্পর্কে কিছু কথা:
প্রথমত, চেষ্টা করবে যত বেশি সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া সম্ভব ,যেন দিতে পারো। অনেকেই মনে মনে নির্বাচন করে অমুক ভার্সিটি আমার ভালো লাগে না, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা দিবোনা, তমুক ভার্সিটি দূরে, এতোদূর যেতে আলসেমি লাগে, পরীক্ষাই দেবো না ইত্যাদি। এসমস্ত চিন্তা মাথা থেকে এখনই ঝেড়ে ফেলো। ভর্তি পরীক্ষার চিত্রটা তোমার কল্পনারও বাইরে। তুমি যত ভালো শিক্ষার্থীই হও না কেন, অন্তত এখন কোনো ভার্সিটিকেই ছোট করে দেখবে না। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় একটা বিরাট ভূমিকা রাখে নিয়তি বা ভাগ্য। এই ভাগ্যের কাছে হেরে গিয়ে অনেক মেধাবী তাদের প্রাপ্য ভার্সিটিতে চান্স পায় না। তাই, অন্তত ভর্তি আবেদন করার ক্ষেত্রে বাছবিচার না করে সবখানে পরীক্ষা দাও।
দ্বিতীয়ত, প্রচণ্ড মানসিক চাপের এই সময়টাতে মাথা ঠিকঠাক কাজ করে না, অনেক কিছুই ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। এমন ঘটনা অহরহ ঘটে যে, কোনো ভার্সিটির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কবে দিলো, কিংবা কবে আবেদনের শেষ তারিখ চলে গেলো খেয়ালই করলো না। আবার এমনও ঘটতে দেখা যায় যে ফর্ম পূরণ করেছে অথচ টাকা জমা দেবো দেবো করে আর দিতে মনে নেই। ফলে পরীক্ষাই দেয়া হয় না সেসব ভার্সিটিতে। এতো কষ্ট করে প্রস্তুতি নিচ্ছো, যদি এভাবে পরীক্ষাই দিতে না পারো তাহলে তো সেটা মেনে নেয়ার মতো না। এইসব ভুল থেকে সাবধান থাকতে হবে। সব খোঁজ খবর রেখে ঠিকঠাক ভর্তি আবেদনের দায়িত্বটা তোমারই।
৬। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে অবশ্যই যা মাথায় রাখবে!
এবার আসা যাক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়ের ব্যাপারে। এই সময়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বুঝেশুনে পা ফেলতে হয়। আমার কাছে এই সময়কে স্নায়ুযুদ্ধের সময় লাগে। যে যতক্ষণ পর্যন্ত নার্ভ ঠিক রাখতে পারবে সেই তত বেশি সফল। তবে আমরা অনেকেই তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ফেলি। ৩/৪ মাসের পরিশ্রম একদিনেই শেষ! বলো তো আমরা কিভাবে সেটা করি? পরীক্ষার হলে! হ্যাঁ, ঠিক তাই।
আমাদের তিন চারমাস ধরে যুদ্ধের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা করে কি লাভ যদি আমরা যুদ্ধের দিনই সেগুলো কাজে লাগাতে না পারি? তাই শুধু প্রস্তুতি নিলেই হবে না, তা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে তবেই যুদ্ধের জয়ী হতে পারবে।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা (University admission test) এর পড়ালেখা করতে করতে অন্য কিছুকে তেমন মাথায় রাখি না। তবে এমন কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো মাথায় রেখে কাজ করলে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়ে। আবার এইগুলোর কথা ভুলে গিয়ে কেবল পড়ালেখা করে গেলে কিন্তু ঐ অবহেলা করা জিনিস বা ব্যাপার গুলোই অনেক ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর সময় আমি কিছু ভুল করেছিলাম। যদিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমি এখন ভালো জায়গাতেই পড়ছি। যা চেয়েছি তা পেয়েছি। একটা আলহামদুলিল্লাহ স্ট্যাটাস ও দিয়েছিলাম!
আমি ভুল করেছি বলেই আমি চাই না তুমি সেই ভুল করো। কারণ, ভাগ্য তোমার সহায় না হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষার আগেরদিন এবং ভর্তি পরীক্ষার দিন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তখন থেকেই কঠিনতম স্নায়ুযুদ্ধটা শুরু হয়। এই দুইদিন তুমি যত ঠান্ডা মাথায় কাজ করবে, ভাববে ততই তুমি এগিয়ে যাবে তোমার কাঙ্ক্ষিত জয়ের দিকে। আজকে তোমাদের সাথে তাই কিছু কথা বলতে যাচ্ছি যেগুলো পড়ালেখার বাইরের জিনিস হলেও আমি মনে করি মেনে চলা অত্যাবশ্যক। কিছু সাজেশন দিচ্ছি আরকি। ঐ যে বলেনা University admission test tips and tricks? ধরে নাও তেমনই কিছু।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা যুদ্ধের আগের দিন! সব প্রস্তুতি শেষ করে এবার রণক্ষেত্রে নামবার পালা! তাই ভর্তি পরীক্ষা এর আগের দিনটি হওয়া চাই নির্ঝঞ্ঝাট। কোনোরকম ঝামেলায় জড়ানো যাবে না, কোনো ঝামেলা লাগানোও যাবেনা। ভর্তি পরীক্ষা এর আগের দিনে যা যা করা উচিত, যা যা উচিত নয় তা বলছি ।
১) পরিমাণমত স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করা :
আমাদের অনেক এতই পড়ালেখা করি যে নাওয়া খাওয়াই ভুলে যাই। পড়তে পড়তে খাওয়ার কথা মনে রাখি না। আমি আবার উল্টো। ক্ষুধার্ত পেটে একদমই পড়তে পারি না। যাই হোক, ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন যাতে পেটকে খাওয়া থেকে বঞ্চিত না করো সেইদিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে। নাহলে, ভর্তি পরীক্ষা এর দিন এই খাওয়া দাওয়ার অভাবে শরীরে লেখার কোনো শক্তিই আসবেনা। প্রেশার লো হয়ে গেলে তো আরো খারাপ অবস্থাতে পড়তে হবে! তাই ভর্তি পরীক্ষা এর আগেরদিন পরিমাণমতো খাওয়া অবশ্য করণীয়।
আবার ভর্তি পরীক্ষা আসার ১/২ দিন আগে এলাহী ভোজ না করাই ভালো। আমি বলেছিলাম না আমি কিছু কিছু ভুল করেছিলাম ভর্তি পরীক্ষা এর সময়ে? এটা তার মধ্যে প্রধান ছিল! আমি করেছিলাম কি, ভর্তি পরীক্ষা এর ঠিক দুইদিন আগে গিয়েছি দাওয়াত খেতে! একদম শাহী খাবার দাবার ছিল। আমি তো খাবারের ব্যাপারে একদমই সংকোচ করি না। তাই খেয়েছিও অনেক কবজি ডুবিয়ে।
ফলাফল কী হলো জানো? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা এর আগের দিন তিনবার বমি হয়েছে! এবং এতই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম যে একবার মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলাম! পরে স্যালাইন হাতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছিল। বমি হওয়ার কারণ, আমার ফুড পয়জনিং হয়েছিল। পরে সেই ফুড পয়জনিং থেকেই পেটে অসুখ হয়ে যায়! তখন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। তাহলে বুঝো আমার অবস্থা! শুনতে এখন কিছুটা হাস্যকর শোনালেও, আমার যে কী করুণ অবস্থা হয়েছিল সেটা আমিই কেবল জানি।
তাই বলছি, যারা আমার মতো শাহী খাবার খুব পছন্দ করো তা কিছুটা সামলিয়ে রেখো নিজেদের। এসময় পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবে। রিচ ফুড, ফাস্ট ফুড এসব যত পারো বাদ দিও।
তো বুঝতেই পারছো, পরীক্ষার আগের দিনের খাওয়া দাওয়া ও কতো গুরুত্বপূর্ণ! কারণ এর থেকেই তো শক্তি আসে। শক্তি না থাকলে লড়বে কিভাবে? ৩/৪ মাসের সব পরিশ্রমই তো বৃথা যাবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অ্যাডমিট কার্ডের প্রিন্ট রেডি রাখা:
আমি লিখছি আর ভাবছি আমি এত এত ভুল কিভাবে করেছিলাম! আমার একটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগের রাতের কাহিনী বলি। রাতের ৮টা বাজে। আমি কোচিং এর জন্য ঢাকায় ছিলাম ১ মাস ফুপির বাসায়। আব্বু আম্মু সেদিন আসলো চিটাগং থেকে। রাতের ৮টা বাজে যখন আম্মু জানতে পারে আমার অ্যাডমিট প্রিন্ট করা হয়নি এখনো, কী ঝামেলাই না বেঁধেছিলো! পরে অবশ্য গিয়ে করিয়ে এনেছি।
তোমরা যা করবে, যেকোনো বিপদ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর অন্তত দুইদিন আগে প্রিন্ট করে রেখে দেবে যাতে করে পরীক্ষার আগের রাতে পড়া বাদ দিয়ে বের হতে না হয়।
৩) নতুন টপিক না ধরা:
এটা হয়তো অনেকবারই শুনেছো! পরীক্ষার আগের রাতে নতুন টপিক ধরলে সেটা আয়ত্তে তো আসেই না বরং সময়ের অপচয় হয়। কারণ, হুট করে একটা জিনিস পড়া শুরু করলে সেটা বুঝতে এবং পুরোপুরি দখলে আনতে কিছুটা হলেও সময় লাগে যেটা পরীক্ষার ঠিক আগের রাতের পাওয়া যায় না।
৪) পর্যাপ্ত ঘুম এবং কম পড়া:
আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগের রাতে কম পড়াটাই শ্রেয়। বেশি পড়লে মাথায় লোড বেশি হয়ে যাবে এবং সবকিছু উল্টাপাল্টাও হয়ে যেতে পারে। তাই পরীক্ষার আগের রাতে মাথাকে এত প্রেশার না দেওয়াই ভালো। কারণ, পরেরদিন মাথাকে আরও সচল রাখতে হবে।
সারারাত জাগা যাবেনা। সারারাত জেগে পড়লে সেই পড়াটা পড়ে লাভ তো হবেই না, দেখা যাবে পরীক্ষা এর সময় ঝিমুনি আসছে! আচ্ছা, একবার ভাবো, তোমার ৩/৪ মাসের কষ্টের পর তুমি ভর্তি পরীক্ষা এর হলে ১/২ ঘণ্টা ঝিমুতে ঝিমুতেই কাটিয়ে দিলে! ভাবতেই তো গা শিউরে উঠছে। এত মাসের পরিশ্রম ঝিমুনির জন্য বৃথা হয়ে গেলো!
তাই বেশি পড়ালেখা না করে সেদিন বরং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়।
৫) শান্ত থাকা :
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগের দিন যত পারো ঝামেলা এড়িয়ে যাবে। কোনো ঝগড়াঝাটি তো নয়ই বরং কোনো অতি উত্তেজনাকর খবর ও যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। ওহ, আরেকটি কাহিনী মনে পড়লো। আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগের রাতে আমি পড়ছি, তখন আমার ফ্রেন্ড একটা আমাকে মেসেজ দিলো যে, আজকে তার আয়মান সাদিক ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে। তার কোন কাজিন নাকি আইবিএ তে পড়ে উনি তার বাসায় এসেছিলেন। আমি তখন আয়মান ভাইয়াকে দেখা তো দূরের কথা, টেন মিনিট স্কুলে লেখালেখিও করতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগের রাতে এমন উত্তেজনাকর মেসেজ দেখলে আর পড়তে ইচ্ছা হয়!
সবচেয়ে ভালো হয়, সেদিনের জন্য মোবাইল অফ করে রাখলে।
৭। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর দিন:
এবার যুদ্ধের দিন! এইদিনে কি করবে না করবে তা নিয়ে হয়তো ইতোমধ্যেই অনেকেই অনেক কিছু বলেছে তোমাদের। আমি তাই বেশি কিছু বলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর আগে তোমাদের তেমন বিরক্ত করবো না। কিছু জিনিস বলব যেগুলো আশা করছি তোমাদের পরীক্ষাতে দ্রুততার সাথে আন্সার করতে সাহায্য করবে!
১) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা তে জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন আগে দাগাও :
আমি একবার এক মডেল টেস্ট দিতে গিয়ে বীরত্বের সাথে ম্যাথ আনসার করা শুরু করেছিলাম প্রথমে। আমি তো একের পর এক ম্যাথ সল্ভ করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি মন দিয়ে। সময়ের দিকে আমার আর কোনো খেয়াল নেই। হুট করে দেখি! হায় হায় আমি তো এখনো ম্যাথ পার্টেই আছি, আর ঐদিকে সময় প্রায় ফুরিয়ে আসলো বলে! সেবার বেশি দাগাতে পারিনি। ভাগ্য ভালো আমার আমি মডেল টেস্টে এমন ভুল করেছি! আসল ভর্তি পরীক্ষা তে করলে কি হতো!
তেমনি যেসব অংশ একটু মাথা খেটে বের করতে হয় বা এনালিটিকাল অংশ সেসব পরে আন্সার করাই যুক্তিযুক্ত। নাহলে দেখা যাবে ঐ পার্ট করতে করতে বাকিগুলো আন্সার করাই যাবে না। কারণ ধরো ম্যাথ একটা করে আন্সার দাগানোতে যে সময় লাগে সেই সময়ে তুমি অন্তত ৩টা বাংলার প্রশ্ন পড়ে উত্তর দাগিয়ে দিতে পারো। তাহলে ভেবে দেখো, ১টা ম্যাথ প্রশ্ন ছেড়ে আসা ভালো নাকি ৩টা বাংলা প্রশ্ন। বলতে গেলে যেগুলো চটপট করে আন্সার করা যায় সেগুলোই আগে ধরা উচিত।
আবার ইংরেজি অংশে কম্প্রিহেনশন অংশটিও পরে ধরা উচিত। কারণ, পুরো প্যাসেজ পড়তে পড়তে আবার সেই অনুসারে প্রশ্ন দাগাতে দাগাতে তুমি অন্য ৩/৪ টা প্রশ্নের উত্তর দাগাতে পারবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা তে নিশ্চিত না হলে উত্তর না দাগানো :
আমি আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ডি ইউনিটের টেস্টে ১০০টা প্রশ্নের মধ্যে আন্সার করেছিলাম মাত্র ৭৪টা। যাকেই জিজ্ঞেস করি, সেই আমার থেকে বেশি আন্সার করেছে। আমি তো ভয়ে অর্ধেক! হায় হায়! আমি এত কম আন্সার করলাম কেন? তার মানে কি আমি টিকব না?
পরে তো টিকেছি। অর্থনীতিতে পড়ছি এখন। এর মানে কি দাঁড়ায় জানো? বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা তে ১০০% নিশ্চিত না হলে উত্তর না দাগানোই ভালো। আমি অনেক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সন্দিহান ছিলাম তাই দাগাই নি। কারণ নেগেটিভ মার্কিং আছে তো। আমি আসলে কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছিলাম না।
তাই বলছি রিস্ক না নিয়ে যতটুকু জানো ততটুকুই দাগাও। অনেকে ৮০/৯০ এর উত্তর দিয়ে ১৫/২০ টা ভুল হলে ভালো নাকি ৭০ এর আন্সার করে ২/৩ টা ভুল হওয়া ভালো সেটা তোমরা ভেবে দেখো।
শেষ কথা:
আমার মতো এত এত ভুল করা মানুষ খুব বেশি সাজেশন দিতে পারছে না তোমাদের। তবে আশা করি, এই কথাগুলো একটু কষ্ট করে মেনে চললে ভালো রেজাল্ট পাবে। আরেকটা বোনাস সাজেশন হলো ঘাবড়ে না যাওয়া। ভর্তি পরীক্ষা এর দিন শেষমুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ দেখবে, অনেককেই দেখবে বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজিয়ে পড়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে! তুমি ভয় পেয়ো না। আস্থা রাখো নিজের প্রতি। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবেই।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঢাবি A Unit কোশ্চেন সলভ কোর্স
- ঢাবি A Unit এডমিশন কোর্স
- ঢাবি B Unit এডমিশন কোর্স
- ঢাবি C Unit এডমিশন কোর্স
- ঢাবি B Unit সেকেন্ড টাইমার এডমিশন কোর্স
ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বাকি কোর্সসমূহ:
ঘরে বসে বিভিন্ন বিষয়ে করো স্কিল ডেভেলপ:
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা: Study Abroad Complete Guideline
- IELTS Course by Munzereen Shahid
- ঘরে বসে Freelancing
- Python দিয়ে Programming
- Facebook Marketing
- Microsoft Excel
- Microsoft PowerPoint
- Microsoft Word
- Career Guidance
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
এছাড়াও যেকোনো জিজ্ঞাসায় কল করুন 16910 নম্বরে।
আপনার কমেন্ট লিখুন