নিয়মিত আল কোরআন তেলাওয়াত করার অভ্যাস গড়বেন যেভাবে

January 26, 2023 ...

পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক, আয়াত ১)

মহান আল্লাহ পবিত্র আল কোরআনের প্রথম বাণীতেই জানিয়ে দিয়েছেন জ্ঞান অর্জন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আর একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে সত্য ও বিশ্বাসের মহিমায় আলোকিত হওয়ার জন্য পবিত্র কোরআন থেকে জ্ঞানার্জন শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, আবশ্যকও বটে। তাই এই ব্লগের পুরোটা জুড়েই আলোচনা করবো পবিত্র আল কুরআন নিয়ে। কোরআন শব্দটির অর্থ ও পরিচয় দিয়ে শুরু করে আলোচনা এগিয়ে যাবে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব নিয়ে এবং শেষ হবে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলওয়াতের কিছু লক্ষ্যণীয় বিষয় জানার মধ্য দিয়ে। এছাড়াও আপনি আরো জানতে পারবেন, এমন কিছু উপায় যা আপনাকে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়তে সাহায্য করবে।

কোরআন শব্দের অর্থ ও পরিচয়

কোরআন (আরবিতে: القرآن‎‎) শব্দটির বাংলা অর্থ পাঠ করা বা পড়া, পাঠযোগ্য বা পাঠের উপযুক্ত। আর ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতা জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানব জাতিকে হেদায়াতের পথ দেখানোর জন্য শেষ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নাম আল কোরআন। কোরআন তিলাওয়াত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়, তাই কোরআন -এর আরেকটি অর্থ যা নিকটে পৌঁছে দেয় বা নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।

কোরআন শরীফ এর ছবি (আল কোরআন তেলাওয়াত)
কুরআন শরীফ এর ছবি (Image Source: Freepik)

এবার জেনে নেই পবিত্র কুরআন মজিদ আরো কী কী নামে পরিচিত –

আল কোরআন আল্লাহর বাণী:

যুগে যুগে মানব জাতি মানবতার হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা যে কিতাবগুলো অবতীর্ণ করেছেন তাদেরকে আসমানী কিতাব বলা হয়। আল কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন – ‘‘নিশ্চয়ই কোরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।’’ (সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত ১৯২)

আল কোরআন হলো নূর বা আলো:

অন্ধকার আচ্ছন্ন জাতিকে সত্যিকারের আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য আল কুরআন হলো আলো বা নূর। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়াত দেন।’’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১৫-১৬)

কোরআন তেলাওয়াত করার ফজিলত

আল কোরআন তিলাওয়াত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় আমল। পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করার ফজিলত ও সওয়াব লিখে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কুরআন মজিদ তেলওয়াত করার অগণিত ফজিলতের মধ্যে রয়েছে –

আল কুরআন তিলাওয়াতে অন্তরে আসে প্রশান্তি

কুরআন শরীফ মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‌‌‌‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রা’দ, আয়াত ২৮)

আল কুরআন-এর একটি অক্ষরের বিনিময়ে দশটি করে সওয়াব

কুরআন মজিদ তেলওয়াতে প্রতিটি হরফে বা বর্ণে ১০টি করে নেকি বা সওয়াব পাওয়া যায়। কুরআন মজিদ তিলাওয়াতের সওয়াব সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন – ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তেলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকী পাবে, আর একটি নেকীর সওয়াব হবে দশগুণ’ (তিরমিজি, হাদিস ২৯১০)

আল কোরআন তেলাওয়াত
কোরআন তেলাওয়াত (Image source: Pexels)

আল কুরআন শ্রবণে ইমান বৃদ্ধি পায়

আল কুরআন তিলাওয়াতে শ্রবণে ইমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র আল কোরআন তিলাওয়াত ও শোনার বিশেষ আদব বা নিয়ম আছে। শ্রবণকারী মনে এই খেয়াল করবেন যে মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম তিলাওয়াত হচ্ছে, তাই অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধাসহকারে শুনতে হবে। এই সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যখন তাদের প্রতি কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ইমান বাড়িয়ে দেয়।’ (সূরা আনফাল, আয়াত ২)

আল কুরআন পাঠে কবরের আজাব থেকে মুক্তি

সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘যখন মানুষকে কবরে দাফন করা হয় তখন ফেরেশতা মাথার দিক থেকে আজাব দেওয়ার জন্য আসে, তখন কুরআন তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা সামনের দিক থেকে আসে, তখন দান-সদকা তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা পায়ের দিক থেকে আসে, তখন মসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া তাকে বাধা দেয়।’ (মু‘জামুল আওসাত, হাদি: ৯৪৩৮)

কোরআন তেলাওয়াত করলে দারিদ্র্য দূর হয়

সূরা ইখলাস কুরআন শরীফ -এর এমন একটি সূরা সবারই মুখস্থ আছে। বহু ফলাফল লাভের জন্য পরীক্ষিত এই সূরা ইখলাস। বেশি বেশি পড়লে আল্লাহ তা’আলা অভাব মোচন করে দেবেন। সাহল ইবনে সায়েদি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করল, রাসূল (সা.) তাকে বলেন, যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সূরা ইখলাস পড়বে। সাহাবি লাগাতার ক’দিন আমল করেন। ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূরীভূত হয়ে যায়। (কুরতুবি : ২০/১৮৫)

রোগমুক্তির উপায়

পবিত্র আল কোরআন তিলাওয়াত করা অথবা শোনা যেকোনো মানসিক ও শারীরিক থেকে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায়। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বলেন, 

অর্থসহ নামাজ শিক্ষা

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি
  • নামাজ আদায় করার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম কানুন ও বিধি-নিষেধ।
  • নামাজের আরকান, আহকাম এবং ওয়াজিব সমূহ।
  •  

    কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ার উপায়

    প্রত্যেক ইসলাম ধর্মের অনুসারীর জন্য মহান আল্লাহ তা’আলার পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন তেলাওয়াত শেখা আবশ্যক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বর্তমানে আমরা নিয়মিত কোরআন তেলওয়ার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারছি না। প্রতিদিন কুরআন শরীফ পড়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য যে উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন তা হলো –

    ১) কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নিজের লক্ষ্য স্থির করুন

    নিয়মিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি করার সর্বপ্রথম উপায় হলো নিজের লক্ষ্য স্থির করা এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আপনাকে অবশ্যই একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, যাই ঘটুক না কেন আপনি কখনই মাঝপথে কোরআন তেলাওয়াত ছেড়ে দিবেন না। প্রতিদিন পবিত্র আল কুরআন তেলাওয়াতের এই মহৎ কাজের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা হলে, স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের ধৈর্য্য শক্তি দেবেন।

    ২) ছোট থেকে শুরু করুন

    নিয়মিত আল কুরআন মজিদ তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কখনো অবাস্তব সিদ্ধান্ত নেবেন না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এক মাসে ৩বার সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পড়ার লক্ষ্য স্থি্র করলেন। অর্থাৎ ১০ দিনে ১বার সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পড়তে হবে। এই কঠিন প্রতিজ্ঞাগুলো আপনাকে শুধু ব্যর্থতার দিকেই নিয়ে যাবে এবং সেই সাথে কুরআন মজিদ তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কোনো ভূমিকা রাখবে না। তাই নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস করার জন্য ছোট ছোট আয়াত দিয়ে আল কোরআন তেলাওয়াত শুরু করুন।

    ৩) আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার

    আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। আপনি যখন কোথাও ভ্রমণ করবেন কিংবা কর্মস্থলে থাকবেন তখন আপনার সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ বহন করার দরকার নেই। গুগল প্লে ও অ্যাপ স্টোরে এমন অসংখ্য অ্যাপ রয়েছে, যার সাহায্যে আপনি যেকোনো জায়গায় পবিত্র আল কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারবেন, এমনকি শিখতেও পারবেন।

    ৪) কুরআন তেলাওয়াত শুনুন

    কোরআন তেলাওয়াত করার অভ্যাস করতে নিয়মিত পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত শোনার চেয়ে সহজ উপায় আর নেই। কুরআন মজিদ তেলাওয়াত শুনলে একদিকে যেমন আপনার অন্তর প্রশান্ত হবে, তেমনি সহীহভাবে কোরআন তেলাওয়াত শেখাও আরো সহজ হবে।

    ৫) অবসর সময়ের অর্ধেক কোরআন তেলাওয়াত শিখতে ব্যয় করুন

    আমাদের প্রত্যেকের দিনের কিছুটা সময় অবসর থাকে, যখন তেমন কোনো কাজ থাকে না। দৈনন্দিন জীবনের এই অবসর সময়গুলোর কিছু অংশ কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করায় ব্যয় করলে, নিয়মিত কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করার অভ্যাস তৈরি হবে।

    ৬) অনুবাদসহ কুরআন তেলাওয়াত করুন বা শুনুন

    নিজের মাতৃভাষায় অনুবাদসহ কুরআন শরীফ তেলাওয়াত শোনা কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। কারণ এর রয়েছে দ্বিমুখী সুবিধা। প্রথমত, আল কোরআন তেলওয়াত শোনার মাধ্যমে কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, আপনি বুঝতে পারবেন যে মহান আল্লাহ তা’য়ালা তার পবিত্র বাণীতে আমাদের জন্য কী বলছেন এবং আমাদের জন্য কী কী আদেশ-নিষেধ আছে।

    ৭) ফজরের সময় কিংবা প্রত্যেক নামাজের আগে বা পরে কুরআন শরীফ পড়ুন

    ফজরের সময়টি দিনের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সময়। দিনের বাকি অংশের তুলনায় এই সময়ে আপনি কম বিভ্রান্তির সম্মুখীন হবেন। তাই এই সময়ে কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা আপনার জন্য সহজতর হবে। এছাড়াও প্রতিটি নামাজের আগে অথবা পরে বা কোনো নির্দিষ্ট নামাজের পরে আপনি কুরআন শরীফ পড়ার রুটিন তৈরি করতে পারেন। এই কৌশলটির সুবিধা হলো আপনাকে আর আলাদা করে ওজু করতে হবে না।

    ২৪ ঘণ্টায় কোরআন শিখি

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • সঠিক কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি, যেমন: মুক্তবর্ণ, যুক্তাক্ষর, হরফ, হরকত, তানভীন, জযম, তাশদীদ, মাদ্দ, ওয়াকফ
  • কোরআন তিলাওয়াতের নিয়ম-কানুন এবং বিভিন্ন বিধি-নিষেধ
  •  


    আরও পড়ুন:

    নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?

    রমজানের পর পরীক্ষা? জেনে নাও ৮টি রমজানের স্টাডি টিপস


    কোরআন তেলাওয়াত করার সময় লক্ষণীয় 

    পবিত্র কুরআন শরীফ একটি অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র গ্রন্থ। মহান আল্লাহ তা’য়ালার বাণী সম্বলিত কোরআন তেলাওয়াত করার সময় কিছু আদব ও লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। পবিত্র কুরআন মজিদ পাঠের কিছু প্রয়োজনীয় রীতি হলো – 

    পরিচ্ছন্নতা ও ওজু অবস্থায় থাকা

    পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন স্পর্শ করার পূর্বশর্ত হলো পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে এবং ওজু করতে হবে। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ করেছেন – “যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে (কুরআন শরীফ) স্পর্শ করবে না।” (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)

    একটি সম্মানজনক স্থানে শালীনভাবে বসা

    পবিত্র আল কোরআন কোনো সাধারণ গ্রন্থ নয়। কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াত আল্লাহর পবিত্র বাণী, যা সমগ্র মানব জাতির জন্য আসমান থেকে জমিনে নেমে এসেছে। তাই আল কোরআন তেলাওয়াতের সময় অবশ্যই একটি পরিষ্কার জায়গায় বসতে হবে এবং শালীনভাবে বসে যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এছাড়াও পবিত্র কুরআনকে হাতে আঁকড়ে ধরার সময় শ্রদ্ধার সাথে বসতে হবে।

    আল কুরআন বালিশে বা উঁচু স্থানে রাখা

    মহান আল্লাহ তা’য়ালার পবিত্র কিতাব আল কুরআন তেলাওয়াতের সময় একটি ঝরঝরে ও পরিষ্কার বালিশে বা রেহাল (ভাঁজযোগ্য গ্রন্থধারক) -এর উপর রাখা উচিত। অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার কারণে এটিকে মেঝেতে রাখা এড়ানো উচিত। অর্থাৎ, কুরআনকে সসম্মানে উঁচু স্থানে রেখে তেলাওয়াত করতে হবে।

    আল কোরআন তেলওয়াত
    আল কুরআন রেহাল (ভাজযোগ্য গ্রন্থধারক) -এর উপর রাখা (Image source: iStock)

    পবিত্র আল কোরআন ডান হাতে রাখা

    রাসূল (সা.) -এর সুন্নাহ পূর্ণ করার মাধ্যমে, পবিত্র কুরআনকে যথাযথ মর্যাদা দিতে জন্য ডান হাতে ধরতে হবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ (সা.) যে কোনো ভালো কাজ করার সময় সর্বদা তাঁর ডান হাত ব্যবহার করতেন এবং অন্যান্য কাজ সম্পাদনে তার বাম হাত ব্যবহার করতেন।” (আবু দাউদ)

    অতএব, পবিত্র আল কোরআন তেলওয়াত করার সময় ডান হাত ব্যবহার করতে হবে।

    আল কোরআন তেলাওয়াত শুরু করার আগে “তাওজ” ও “তাসমিয়া” পড়া

    আল কোরআন তেলাওয়াত শুরু করার আগে অবশ্যই ‘তাওজ’ পড়তে হবে। যেহেতু, পবিত্র আল কুরআন তেলাওয়াতের জন্য অত্যন্ত মনোযোগ ও একাগ্রতার স্তর প্রয়োজন; তাই প্রত্যেক মুসলমানকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি পড়া অবশ্যক –

    আউজু বিল্লাহি মিনা-শয়তান-নির-রাজিম

    অর্থ: “আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।”

    ‘তাওজ’ ছাড়াও, অবশ্যই ‘তাসমিয়া’ পড়তে হবে –

    বিসমিল্লাহির-রহমান ইর-রহীম

    অর্থ: “পরম করুণাময়, আল্লাহর নামে শুরু করছি।”

    তাজবীদ বিধির পরিপূর্ণতা

    সঠিক উচ্চারণে পবিত্র আল কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য অত্যন্ত যত্ন সহকারে তেলাওয়াত করতে হবে। সুমধুর ও আকর্ষণীয় সুরে আল কোরআন সম্পর্কে সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহীহ বুখারি, হাদিস ৭০১৯)

    সঠিক উচ্চারণে তেলাওয়াত 

    আল কোরআন তেলওয়াত করার সময় উচ্চারণের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারণ আরবি ভাষায় সামান্য হরফ (অক্ষর) উচ্চারণের ত্রুটির জন্য শব্দের প্রকৃত অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

    কোরআন তেলাওয়াতের মাত্রা

    আল কুরআন তেলাওয়াত করার মাত্রা বলতে তেলাওয়াতের সময় কণ্ঠের উত্থান ও পতনকে বোঝানো হয়েছে। আরবি এমন একটি ভাষা, যেখানে মাত্রাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে এমনকি অর্থও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তাই, কোরআন তেলাওয়াত করার সময় কখন গুন্নাহ ও মাখরাজের ব্যবহার হবে অথবা কখন থামতে হবে এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার এই তেলাওয়াতের মাত্রার বিষয়গুলো আয়ত্ত্বে আনতে পারলে আপনার কোরআন তেলওয়াত আরো শুদ্ধ, সুন্দর ও সাবলীল হবে।

    ধীর গতিতে তেলাওয়াত করা

    সমগ্র মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর পবিত্র বাণী সংবলিত গ্রন্থ আল কোরআন অবশ্যই ধীরে ধীরে পাঠ করতে হবে, যাতে এর প্রত্যেকটি আয়াতের প্রকৃত সারমর্ম আরও ভালোভাবে বোঝা যায় এবং নিজের মধ্যে ধারণ করা যায়।

    কুরআনের সকল অধিকার পালন করা

    পবিত্র আল কোরআন তেলাওয়াত করার অধিকারের পরিপূর্ণতা সম্পর্কে বিশেষভাবে বলতে গেলে, পবিত্র আল কোরআনের মাঝে সেজদার কথা বলা যায়। আল কোরআন তেলাওয়াত করার সময় যেখানেই সেজদা চিহ্ন দেখা যায়, সেখানেই কেবলামুখী হয়ে সেজদা করতে হবে। এছাড়াও কিছু কিছু আয়াতের মাঝে “থামা বা বিরতি চিহ্ন” থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিরতি নেওয়া আবশ্যক।

    আল কোরআন তেলাওয়াত করার সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকা

    আল কোরআনের পবিত্র আয়াতের অপরিসীম তাৎপর্য ও সম্মান বজায় রাখতে কোরআন তেলাওয়াত করার সময় পার্থিব বিষয় নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে মোবাইলে শব্দে যাতে মনোযোগে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই যথাসম্ভব মোবাইলের শব্দ বন্ধ করে রাখা উচিত।

    আল কুরআন তেলাওয়াত খতম করে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করা

    কোরআন তেলাওয়াত করা শেষে, “সদকাল্লাহু আলাইউল আযীম” বলার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে।

    ২৪ ঘণ্টায় কোরআন শিখি

    দ্রুত ও সহজে সহীহ কোরআন তিলাওয়াত শিখুন বাংলায়, মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। কোরআন তিলাওয়াতের নিয়ম-কানুন এবং বিভিন্ন বিধি-নিষেধ মেনে শুদ্ধ নিয়মে কোরআন শিক্ষা শুরু করুন আজই।

     

    শেষ কথা

    ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন, যা মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান  হিসেবে পাঠিয়েন। সুতরাং, একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই সহীহ ও শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত জানা উচিত এবং সেই সাথে নিয়মিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তোলাও প্রয়োজন। তাই একজন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে ছোটবেলা আল কুরআনকে জানতে ও মানতে হবে। এভাবেই আল কুরআনের আলোয় আলোকিত হবে আমাদের জীবন।


    তথ্যসুত্র:


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:


    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com


     

    আপনার কমেন্ট লিখুন