ইউনিভার্সিটির প্রেজেন্টেশন কিংবা কর্পোরেট জগতের আইডিয়া পিচিং সেগমেন্ট- আপনার অতি সাধারণ আইডিয়াগুলোও অসাধারণ করে তোলে মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর কথা ক্লাস সিক্স থেকে স্কুলের আইসিটি বইয়ে জেনে আসলেও, আমাদের বেশিরভাগেরই এইটা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে। এটা এমন একটা সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে কোনো বক্তব্য, ব্রিফিং, বিজ্ঞাপন, ডাটা, গ্রাফ, চার্টের উপর অ্যানিমেশন, ট্রানজিশন বা ইফেক্ট এপ্লাই করে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যায়।
জেনে অবাক হবেন প্রতিদিন ৩০ মিলিয়নেরও বেশি পাওয়ারপয়েন্ট Presentation বানানো হয়,এবং তার মধ্যে ৮০% এরও বেশি হয় নিম্নমানের। আপনার প্রেজেন্টেশান ওইসব ৮০% এর মধ্যে নয় তো? কীভাবে আমরা ভাল একটা Presentation বানাতে পারি সেটা নিয়ে মূলত আলোচনা করব। প্রফেশনাল কাজের জগতে মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। কর্পোরেট জগতে অফিস সফটওয়্যারগুলোর পুরোপুরি বিকল্প আজ অবধি বাজারে আসেনি।
আর পাওয়ারপয়েন্টের যেকোনো স্লাইডের গুরুত্ব বহুলাংশ নির্ভর করে তার আউটলুক এবং উপস্থাপনার উপর। একই লেখা কেউ সুন্দর করে উপস্থাপন করে সবার প্রশংসার পাত্র হতে পারে, সেই কথাই আবার উপস্থাপনা দৈন্যদশার দরুন সবার হাসির খোরাকও হতে পারে! তাই পাওয়ার পয়েন্ট কি, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি, এবং মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এর খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফিচার ও টিপস নিয়ে আজকের এই ব্লগ!
পাওয়ার পয়েন্ট কি?
প্রেজেন্টেশনের জন্য আমাদের অনেকেরই ভরসা মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট। কিন্তু আপনি কি জানেন পাওয়ার পয়েন্ট কি? মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট হচ্ছে মাইক্রোসফটের প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য বেশ চমকপ্রদ একটি সফটওয়্যার, যাকে PP বা PPT’ও বলা হয়৷ মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর স্লাইডশো চার্ট ও ইমেজের মাধ্যমে তৈরি করে প্রেজেন্টেশন বানানো হয়৷ বিশেষ করে ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রেজেন্টেশনে পাওয়ারপয়েন্ট বহুলব্যবহৃত একটি সফটওয়্যার।
Microsoft PowerPoint Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
পাওয়ার পয়েন্ট কি, এইটা তো জানা হয়ে গেল। কিন্তু পাওয়ার পয়েন্ট কি কি কাজে লাগে, তা জানা আছে তো? মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট একটা গ্রাফিকস প্যাকেজ যা আপনাকে প্রফেশনাল প্রেজেন্টেশন তৈরিতে সাহায্য করে। পাওয়ারপয়েন্টের মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ড প্রসেসিং, ড্রয়িং, আউটলাইনিং, গ্রাফিং এবং ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করতে পারবেন। এটার প্রতিষ্ঠাতা ডেনিস অস্টিন এবং থমাস রুডকিন এবং তাদের সফটওয়্যার কোম্পানির নাম ছিল Forethought Inc.
শুরুতে একে প্রেজেন্টার বলা হলেও, ১৯৮৭ সালে এর নাম পাওয়ারপয়েন্ট রাখা হয়। আর ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম উইন্ডোজ ৩.০’তে এই অ্যাপ্লিকেশনটি রাখা হয়। প্রথমে এইটার ফিচার অল্পসংখ্যক থাকলেও, আস্তে আস্তে এর পরিধি ব্যাপক পরিসরে বাড়ানো হয়৷ এর এক্সটেনশন ফাইল হলো “.ppt”। এর ফিচারগুলো আপনার স্লাইডে গ্রাফিকস, ভিডিও ও অন্যান্য ফিচার যুক্ত করে প্রেজেন্টেশন আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
আরো পড়ুন: পাওয়ারপয়েন্ট -এ 3D Model এবং এনিমেশন কীভাবে ব্যবহার করবে?
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এর বিভিন্ন ব্যবহার
আগেই বলেছি, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন যা দিয়ে আপনার প্রেজেন্টেশন স্লাইডে টেক্সট, ডায়াগ্রাম অ্যানিমেশন, ছবি ও ট্রানজিশনাল ইফেক্ট ইত্যাদি যুক্ত করা যায়। পাওয়ার পয়েন্ট কি অফিস স্যুটের অন্তর্ভুক্ত? হ্যাঁ, এইটা অফিস স্যুটের একটি কমার্শিয়াল প্রেজেন্টেশন অ্যাপ্লিকেশন। বিভিন্ন কর্পোরেট ও এডুকেশনাল অর্গানাইজেশনের ভিজ্যুয়াল ইনফরমেশন প্রদর্শনীর জন্য পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট এর অ্যানিমেশন, গ্রাফিকস এবং টেক্সট ফিচারের মাধ্যমে ইউজাররা বেশ ডায়নামিক ও তথ্যবহুল স্লাইড তৈরি করতে পারেন।
এছাড়া পাওয়ার পয়েন্ট কি কি কাজে লাগে? এই স্লাইডগুলো এডুকেশনাল, ট্রেনিং বা বিজনেস প্রেজেন্টেশন এর প্রজেক্ট স্ক্রিনিং এর সময় দেখানো হয়। আপনার সৃজনশীলতা দিয়ে আপনি ম্যাক্রোস, টেবিল, চার্ট, ভিডিও, অডিও এবং ছবিও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এর কাজ ব্যবহারকারীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে৷ এর কিন্তু নানান বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। চলুন তাহলে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক!
শিক্ষাক্ষেত্রে পাওয়ারপয়েন্ট:
শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ের নানান অধ্যায় ও অনুশীলন পড়ানোর জন্য মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। তারা একটি বইয়ের সম্পূর্ণ অংশ বা চৌম্বক অংশ নিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারেন। এটা শিক্ষককে এক টপিকের উপর বিভিন্ন স্লাইড তৈরি করার সুবিধা দেয়। ট্রেনিং বা শিক্ষামূলক কাজের জন্য পাওয়ারপয়েন্ট দিয়ে আপনি খুব সহজেই ওয়ার্কশিট ও টিউটোরিয়াল বানাতে পারবেন। এই যেমন ভোকাবুলারি ওয়ার্কশিট ক্লিপ আর্ট হিসেবে স্কলাররা ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে প্রিন্টও করে নেওয়া যায়৷
ব্যবসাক্ষেত্রে পাওয়ারপয়েন্ট:
ব্যবসার কাজই হচ্ছে প্ল্যান ও মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে তা প্রয়োগ করা এবং মেথড বানিয়ে সেগুলো অনুসরণ করা। পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবসার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের প্ল্যান তৈরিতে এবং ব্যবসার স্ট্রাকচার বানাতে সহায়তা করে।
গৃহিণীদের জন্য পাওয়ারপয়েন্ট:
ঘরের কাজে পাওয়ারপয়েন্ট এর কি দরকার আছে? জি হ্যাঁ, গৃহিণীরা তাদের দৈনন্দিন কাজগুলোর জন্য খুব সহজেই পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন নম্বর, হিসাব, শব্দ বা শিশুদের শেখানোর জন্য শিক্ষণীয় কিছু স্লাইডে লিখে রাখতে পারেন। এগুলো পরে স্লাইডশো হিসেবে দেখা যাবে।
সরকারি কাজের জন্য পাওয়ারপয়েন্ট:
পাওয়ারপয়েন্ট ডকুমেন্ট যেকোনো সময় প্রিন্ট করা যায়৷ তাই কেউ যদি কোনো সরকারি অফিসে কাজের উদ্দেশ্যে যান, নিজেত ফাইল বা ডকুমেন্ট খুব সহজেই পিপিটি আকারে পেয়ে যাবেন।
চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য পাওয়ারপয়েন্ট:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর মতো পাওয়ার পয়েন্ট কি সিভি বানাতে সাহায্য করে? হ্যাঁ। চাকরি প্রত্যাশীরা পাওয়ারপয়েন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল রেজ্যুমি বা মাল্টিমিডিয়া রেজ্যুমি বানাতে পারবেন। আর এইটা নিয়োগকর্তার সামনে আপনার আকর্ষণীয় পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড তৈরির দক্ষতা প্রকাশ করবে।
আর্টিস্টদের জন্য পাওয়ারপয়েন্ট:
যারা ছবি আঁকা বা গ্রাফিকস ডিজাইনিং এর কাজ করেন, তারা সবাই ডিজিটাল পোর্টফলিও এর সাথে পরিচিত। এই পোর্টফলিওতে আপনার সমস্ত কাজের রেকর্ড রাখা হয়। আপনি যদি একটা ঝকঝকে ইলেক্ট্রনিক পোর্টফলিও বানাতে চান, সেক্ষেত্রে কিন্তু মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর কোনো জুড়ি নেই! এর মাধ্যমে আপনি আপনার গ্রাফিক ও ভিজ্যুয়াল ইমেজের কাজগুলো স্লাইড শো আকারে দেখাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এই পোর্টফলিও আপনি ইমেইলও করতে পারবেন। এর ফলে আদান-প্রদানের ঝক্কিটাও কমে গেল। চাইলে পাওয়ারপয়েন্ট ফাইলটিকে এইচটিএমএল/সিএসএস বা জাভাস্ক্রিপ্টে কনভার্ট করে অনলাইনে আপলোডও করা যাবে৷
অ্যানিমেশন তৈরিতে পাওয়ারপয়েন্ট:
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর মিউজিক, সাউন্ড ও ইফেক্ট টুলগুলো আপনার অ্যানিমেশনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। ক্লিপ আর্ট লাইব্রেরি থেকে অ্যানিমেট এলিমেন্টস হিসেবে নিজের ড্রয়িংও ব্যবহার করতে পারবেন। আবার পাওয়ারপয়েন্টের অ্যানিমেটেড টেমপ্লেটস থেকেও অ্যানিমেশন ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এটা অনেকটা সাবস্ক্রিপশন নির্ভর প্রেজেন্টারমিডিয়া হিসেবে কাজ করে।
ডিজিটাল অ্যালবাম তৈরিতে পাওয়ারপয়েন্ট:
পাওয়ারপয়েন্টের মাধ্যমে ছবির স্লাইড শো বা ডিজিটাল এলবাম প্রোমোশনাল ইউজের জন্য তৈরি হয় পারবেন। ছোটবেলার ছবি, বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের সাথে কাটানো ফ্রেমবন্দী সময়গুলো স্লাইডশো আকারে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন৷
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এ স্লাইড তৈরি
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর “Home” অপশনে যেয়ে “New slide” পপ-আপ মেন্যুতে ক্লিক করুন। সেখানে বিভিন্ন রকমের লেআউটসহ একটি লিস্ট ওপেন হবে। সেই লিস্ট থেকে আপনার পছন্দের লেআউটে ক্লিক করে এক বা একাধিক স্লাইড তৈরি করতে পারবেন।
একসময় আপনার মনে হলো শেষের স্লাইডটা মাঝের দিকে রাখলে ভালো দেখাতো। কিন্তু কী করে সেটা উপরের দিকে আনবেন তা আপনি জানেন না। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, যেই স্লাইডটা সরাতে চাইছেন সেটাকে মাউস দিয়ে ড্র্যাগ করে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যান। আবার “View” Menu-তে যেয়ে “Slide Sorter View” থেকেও স্লাইড বিন্যস্ত করতে পারবেন।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি
স্লাইড তো বানিয়ে ফেললেন, তবে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের একাধিক স্লাইড আপনার প্রেজেন্টেশনকে পানসে বানিয়ে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে স্লাইডগুলোকে একটু দৃষ্টিনন্দন করার জন্য ডিজাইন করতে পারেন। যে স্লাইডটির উপর ডিজাইন করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। তারপর রিবনের “Design” ট্যাব থেকে “Theme” গ্রুপের উপর ক্লিক করলেই স্লাইডের থিম পরিবর্তন হয়ে যাবে।
থিম পছন্দ হচ্ছে কিন্তু রঙ পছন্দ হচ্ছে না? সেটারও সমাধান আছে। “Theme” থেকে “Color” অপশনে ক্লিক করলে একটা কালার চার্ট সামনে আসবে। সেখান থেকে মনমতো রঙ নির্বাচন করলে আপনার স্লাইডের থিম বা ডিজাইন একই থাকবে, শুধু রঙ পাল্টে যাবে।
আর ফন্ট চেঞ্জ করার অপশন তো থাকছেই। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডের বিভিন্ন লেখায় একই রং ও ফন্ট ব্যবহার করার দিকে খেয়াল রাখুন। শিরোনামগুলো বড় ফন্টে আর অন্যান্য তথ্যের লেখাগুলো মাঝারি সাইজের ফন্টে লিখুন।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর সুবিধা ও কাজ:
শুধু প্রেজেন্টেশন বানানোই না, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর সাহায্যে অনেক সময়সাপেক্ষ কাজও আপনি চটজলদি করে ফেলতে পারবেন। সেসব কাজের মধ্যে রয়েছে: ভিডিও বানানো, ফটো এডিটিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং, সিভি, অ্যানিমেশন, ইনফোগ্রাফিক, চেকলিস্ট, বিজনেস কার্ড, জার্নাল, লোগো, ক্যালেন্ডার, ফ্লায়ার, বইয়ের কভার, যেকোনো ধরনের কার্ড, পোস্টার, লিফলেট তৈরি ইত্যাদি।
প্রজেক্টরে স্লাইড দেখানোর সময় অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রজেক্টরের মাপমতো আমাদের স্লাইডটা বানানো হয়নি। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এ সেই ঝামেলাটা নেই, কারণ এখানে সাধারণ প্রজেক্টরের মাপমতো 35 mm সাইজের স্লাইড সহজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও প্রেজেন্টেশন আকর্ষণীয় করতে এতে ডিজিটাল ভিডিও এবং অডিও সাউন্ড যোগ করা যায়।
আরো পড়ুন: প্রেজেন্টেশনের আদ্যোপান্ত
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট স্কিল থাকা কেন জরুরি:
আপনি যেকোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে গেলে সেখানে দেখবেন কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানা এবং মাইক্রোসফট অফিস, বিশেষ করে মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর ব্যবহার জানা আবশ্যক। কারণ প্রত্যেকটি অফিশিয়াল কাজেই আপনার এই দক্ষতাগুলোর প্রয়োজন হবে।
এটা শেখার জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার না হলেও, আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার চালানো জানতে হবে। এছাড়াও আজকাল অনেক অনলাইন ওয়েবসাইটে এইসব দক্ষতার উপর ফ্রি ক্লাস করানো হয়। ইউটিউবেও আপনি এই সংক্রান্ত অসংখ্য ভিডিও পাবেন। আর আমাদের ১০ মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটে কিন্তু সাদমান সাদিক ভাইয়ার মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট নিয়ে “Microsoft Powerpoint Beginner to Advanced” কোর্সও আছে!
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফিচার:
-
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট থিম:
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট-এ ডিফল্ট থিম ব্যবহার করা একরকম ক্রাইম। দেখতে ভালো লাগে না এবং আপনার বিষয়বস্তুর সাথেও হয়তো মিলবে না। নিজের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত থিম তৈরি করতে হবে। এতে দেখতে ভালো লাগবে এবং সহজে উপস্থাপন করতে পারবেন।
-
কালার:
কালার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফন্ট কালার, শেইপ কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড কালার সবগুলোর জন্য প্রফেশনাল এবং স্ট্যান্ডার্ড কালার চেনা অনেক জরুরি। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এর নিজস্ব কালার স্কিমে কিছু কিছু স্ট্যান্ডার্ড কালার আছে। কয়েকটা কালার এর মিশ্রণে ভাল কালার তৈরি করা যায়। স্ট্যান্ডার্ড কালারের একটা বৈশিষ্ট্য হল দেখতে সহজবোধ্য হবে এবং BORING লাগবে না।
১৩ বা এর পরবর্তী ভার্সন গুলোতে EYE DROPPER TOOL দিয়ে ওয়েব থেকে যেকোন কালার আনা যায়। মনে রাখতে হবে কালার বাছাই করতে হবে স্লাইডের বিষয়, থিম এগুলোর উপর ভিত্তি করেই। একটা স্লাইডে একাধিক ফন্ট, শেইপ, কালার ব্যবহার করা ঠিক নয়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেকটা স্লাইডে একটা ভাল Color Combination থাকতে হবে।
-
ফন্ট:
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় ফন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব কম নয়। এক্ষেত্রেও আমাদের প্রফেশনাল ফন্ট বাছাই করতে হবে। যেটাই ব্যবহার করি না কেন একটা প্রেজেন্টেশানে ২টি ফন্ট ব্যবহার করা উত্তম। একটা “Title” আর অন্যটা “Subtitle” বা বিবরণে। ফন্ট সাইজ এমন রাখতে হবে যেন পিছনের কেউ ও ভালভাবে দেখতে পায়।
-
সিম্পল স্লাইড:
অনেকেই দেখা যায় নিজে যা বলে তার সমস্ত কিছু পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডে লিখে দেয়। যেকোন কিছুর সংজ্ঞা বা তথ্য সব লিখে দেয়। এতে কেউ প্রেজেন্টারের দিকে তাকাবে না। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় মাথায় রাখতে হবে যে স্লাইডে আইডিয়াটা বড় করে লিখে দিয়ে যথাসম্ভব বাকিগুলা নিজেকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
-
চিত্রবহুল পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড:
মানুষ কিন্তু কম পড়তে ভালবাসে। তাই স্লাইডে অত লেখালেখি না করে যথাসম্ভব বিষয় সম্পর্কিত চিত্র, আইকন, গ্রাফ ব্যাবহার করতে হবে। এতে মানুষের দৃষ্টি এবং মনোযোগ দুটিই পাওয়া যায়।
-
ট্রানজিশন এবং এনিমেশন:
ট্রানজিশন হলো একটা মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড শেষ হয়ে অন্য স্লাইড শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী ইফেক্ট। ট্রানজিশন প্যানেল থেকেই পছন্দমতো ইফেক্ট নির্বাচন করতে পারবেন৷ তবে একেক স্লাইডে একেক ধরনের ট্রানজিশন ইফেক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। অ্যানিমেশনের অর্থ কিন্তু শুধুই কার্টুন বা স্পেশাল ইফেক্টস না। পাওয়ারপয়েন্টে অ্যানিমেশন তৈরির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই কোন বিষয়কে চিত্রের মাধ্যমে গতিশীল ও জীবন্ত করে তুলতে পারবেন।
Animation মেনুতে ক্লিক করলে Appear, Fade, Fly In এমন বেশকিছু অপশন দেখতে পারবেন। আপনার প্রেজেন্টেশনের সাথে মানানসই এমন ফিচার সিলেক্ট করে সেটার উপর প্রয়োগ করে দেখুন কেমন মানায়।
প্রথম প্রথম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় সবাই যত বেশি পারে ট্রানজিশন এবং এনিমেশন ব্যবহার করে। পাখি উড়ে যায়, পর্দা খুলে যায়, ফন্ট-শেইপ লাফাতে লাফাতে পড়ে। এটা করা যাবে না, প্রথমত এটা মনোযোগ নষ্ট করে দ্বিতীয়ত সময় নষ্ট হয়। তবে ভালো মানের কিছু এনিমেশন ব্যবহার করা যায় যেখানে প্রয়োজন পড়ে। এতে প্রেজেন্টেশানের মান উন্নত হয়। যেমন বলতে পারি স্লাইড চেঞ্জের জন্য “Parallax Effect.”
-
শেইপ:
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট কিন্তু এক প্রকার শেইপের খেলা। সাধারণ কিছু শেইপ দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারেন অসাধারণ ডিজাইন, টেমপ্লেট বা আইকন।
এছাড়াও মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এ আপনি আগে থেকে তৈরি করে রাখা অনেক ধরনের প্রি-ক্রিয়েটেড শেইপ থেকেও আপনার পছন্দের শেইপটি স্লাইডে যুক্ত করে নিতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে দুই বা ততোধিক শেইপকে একসাথে নিয়ে আপনার নিজেরও কোনো শেইপ বানাতে পারবেন!
এজন্য যে যে শেইপ দিয়ে নতুন একটা শেইপ তৈরি করবেন সেগুলো স্লাইডে আনুন। তারপর সকল অবজেক্টকে সিলেক্ট করে “Format” ট্যাবের “Drawing Tools” -এ চলে যান। সেখান থেকে “Merger Shapes” মেন্যুটি আপনার মনমতো ব্যবহার করুন। এই টুলটি কিন্তু কেবল শেইপের সাথে নয়, টেক্সটের উপরেও কাজ করবে।
-
মোশন পাথ:
ধরুন একটা গাড়ির ছবি দিয়ে অ্যানিমেশন তৈরি করবেন। ছবি এড করার পর গাড়িটাকে আর সরাতে পারছেন না। তাহলে উপায়? উপায়টা খুবই সহজ, এর জন্য আপনাকে মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এর মোশন পাথ ইফেক্ট ব্যবহার করতে হবে।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর সবচেয়ে ফ্লেক্সিবল অ্যানিমেশনগুলোর একটা হলো মোশন পাথ। অব্জেক্টকে নির্দিষ্ট পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূলত এর কাজ। মোশন পাথের মাধ্যমে সহজেই একটা শেইপ, টেক্সট বক্স অথবা ইমেজকে স্লাইডের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন।
অ্যানিমেশন ট্যাবের “Animation” সেকশনে গেলেই একদম নিচে “Motion Path” অপশনটা রয়েছে। একইভাবে “Add Animation” সেকশনেও” Motion Path” অপশন পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে আপনার দরকার অনুযায়ী মোশন পাথ বেছে নিতে পারবেন।
“Add Animations” এ ক্লিক করলে বেসিক মোশন পাথ যেমন: Entrance, Exit, Emphasis, Lines, Arcs, Turns, Shapes, Loops, 4 Point Star, Tear Drop সহ কাস্টমাইজড মোশন পাথও তৈরি করে নিতে পারবেন।
-
কনট্রাস্ট ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু:
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি -তে Contrast অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চোখ ধাঁধানো Contrast মানুষের দৃষ্টি ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। তাই Contrast সবসময় স্ট্যান্ডার্ড লেভেলে রাখা উচিত। বিনা কারণে ক্লিপ আর্ট, শেপ, ছবি অ্যাড করা মোটেও কাম্য নয়। খেয়াল রাখবেন প্রত্যেকটা ছবি, ক্লিপ আর্ট এমনকি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডও বিনা প্রয়োজনে রাখা যাবে না।
আরো পড়ুন: ইংরেজিতে কীভাবে প্রেজেন্টেশন দিবেন
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহারের যে ১৬টি টিপস না জানলেই নয়
১. ফন্টে নজর দিন
একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে লেখাটুকু আর লেখার দ্বারা ঠিকঠাক বার্তা যাচ্ছে কিনা এটা নিশ্চিত করে তার ফন্ট। বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে যে, ফন্টের দ্বারা কথার টোন পর্যন্ত বদলে যেতে পারে। ফন্টের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুব খেয়াল রাখতে হবে। তা হলো ফন্ট এমবেড করা। অনেকসময়ই দেখা যায় প্রেজেন্টেশন শেয়ার করার দরকার পড়ে, তখন যাতে অন্যের পিসিতে স্লাইডের লেখাগুলো ফেটে না যায়, সেজন্য এটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি। আরেকটি বিকল্প হতে পারে প্রেজেন্টেশন সব সময় পিডিএফ হিসেবে একটা কপি সেভ করে রাখা, কোনো অনিচ্ছাকৃত কারণে ডাটা করাপ্ট হলেও যেন ব্যাক-আপ থাকে।
২. ডিজাইনের আগে দরকার লিখে নেয়া
থ্রি সিক্সটি এইট নামে একটি ডিজাইন এজেন্সির সিইও কেনি নগুয়েন বলেন, একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বক্তার বলাকে সাহায্যটুকু করে থাকে। অর্থাৎ এটা আপনার মাথায় রাখতে হবে যে, স্লাইড কিন্তু কখনই বক্তব্যের বিকল্প নয়। তাই ডিজাইন যদি একশতে একশ থাকে, আর আসল স্পিচ তথৈবচ হয়, তাহলে কিন্তু চলবে না। এজন্যই বলা হয়, ডিজাইনের আগে দরকার হল মূল বিষয়বস্তু লিখে নেয়া, আসল স্পিচ রেডি রাখা। দরকারে হ্যান্ডনোট ব্যবহার করা।
হাতে-কলমে, কাগজে এই গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা যেতে পারে, এতে আসল রাফ বিষয়াদি সেরে যায়। রাফ সাজানোর জন্য প্রতি পেজের জন্য একটি করে হেডলাইন দিয়ে লেখা শুরু করতে পারেন, এরপর যা যা মাথায় আসে সব এলোমেলো চিন্তাগুলো খাতায় প্লট করে ফেলুন। রাফ পাতায় সব উগড়ে দেয়ার পর, ঠাণ্ডা মাথায় সাজিয়ে নিতে পারেন। এতে কোনো পয়েন্ট আর বাদ যাবে না।
৩. চিত্র এবং লেখার মাঝে প্রতিসমতা নিশ্চিত করা
আমেরিকান বিজ্ঞানী অ্যালান লাইটম্যান বলেন, মানবমস্তিস্ক প্রতিসমতার মাঝে ভালো কাজ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, এর কারণটা কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক, প্রতিসমতা বিভিন্ন বস্তুর মাঝে একটি নিয়মতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। আর আমরা এমনভাবেই ডিজাইন করা যাতে যেকোনো অর্ডার (নিয়মতন্ত্র) মেনে চলা সহজ হয়। তাই স্লাইডের মধ্যের অবজেক্টগুলো যাতে প্রতিসম থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটা অবজেক্টের মাঝের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ একটা একটা সিলেক্ট করে অ্যালাইন করা কঠিন, এর থেকে সবগুলো একসাথে সিলেক্ট করে অ্যালাইন করা বেশি সময়সাশ্রয়ী।
৪. স্লাইডে অডিও যোগ করা যেতে পারে
কিছুদিন দারুণভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেখবেন, এটাই আপনার প্রেজেন্টেশনের সবথেকে পছন্দের পার্ট হয়ে যাবে। এই অংশেই সবচেয়ে সৃজনশীল হওয়া যায়। আলতু ফালতু অডিও মোটেও যোগ করা যাবে না, যেটা বক্তব্যের টোনের সাথে যায়, এমন কিছুই যোগ করবেন। সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, অডিও যেন কোনোমতেই বক্তব্যের থেকে বেশি লাউড হয়ে না যায়। লঘু চালের হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ দিতে পারেন, এমন মিউজিক অনলাইন থেকে সহজেই নামিয়ে নিতে পারবেন।
৫. ফেইড অ্যানিমেশন হতে পারে সহজ সমাধান
স্লাইডের শুরুতে এবং শেষে ইন্ট্রো আর আউট্রো নিয়ে চিন্তিত? সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না? ফেইড অ্যানিমেশন হতে পারে আপনার মহৌষধ। কারণ ফেইড ইফেক্ট যেমন আপনার স্লাইডকে করবে স্মুদ, তেমনি দেখার এক্সপেরিয়েন্সটাকেও আরও শাণিত করবে। এই একই কথা কিন্তু খাটে ভিতরের এলিমেন্টগুলোর জন্যও। যেখানেই কোনো জেনেরিক সল্যুশন দরকার, ফেইড ব্যবহার করে দিতে পারেন নিশ্চিন্তে।
তাই বলে আবার একটা স্লাইডের সবকিছুতেই ফেইড দিবেন না, কোথায় লাগামটা টানতে হবে এটা ঠিক করতে হবে আপনাকেই। পরিমিত ব্যবহার করলেই এক ধরনের ওয়ান স্টপ সল্যুশন হয়ে যেতে পারে এই ফেইড অ্যানিমেশন।
৬. নিজস্ব অ্যানিমেশন বানিয়ে নিন
সুনির্দিষ্ট কোনো ডিজাইনের দরকার? যা অন্য কোথাও মিলছে না? আপনার মাথায় আইডিয়াটা ঘুরছে কিন্তু সেই টেম্পলেট বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে খুঁজেও পাচ্ছেন না? সহজ সমাধান, নিজেই বানিয়ে ফেলুন! হ্যাঁ, নিজের ওপর আস্থা রাখুন, এমনও হতে পারে, এক্সিস্টিং টেম্পলেটগুলোর থেকে আপনার বানানো কাস্টমমেড অ্যানিমেশনটাই বেশি ভালো লাগছে।
এজন্য যা করবেন, অ্যাড অ্যানিমেশন থেকে মোশন পার্টস, তারপর কাস্টম পাথসে গিয়ে নিজের দরকারমত ডিজাইন দিয়ে দিন। আঁকা শেষ হলে এস্কেপ বাটন চেপে বেরিয়ে আসুন। ব্যস, তৈরি হয়ে যাবে আপনার কাঙ্ক্ষিত অ্যানিমেশন! আবার ওখানে আগে থেকে দিয়ে রাখা মোশন পাথগুলো থেকেও এডিট করে করতে পারেন, যেভাবে আপনার সুবিধা হয়, সেটিই করবেন আরকি।
৭. পাওয়ারপয়েন্টের সাইজ কমিয়ে ফেলুন
এত পরিশ্রম করে সুন্দর একটা মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বানালাম আর তারপর বড় সাইজের বিড়ম্বনায় কাউকে সেন্ড করতে পারছি না, এই সমস্যায় হামেশাই আমাদের পড়তে হয়, তাইনা? এখন বলছি তার সমাধান। সবগুলো ছবিকে কমপ্রেস করে সাইজ অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায়।
এর জন্য যেতে হবে, ফরম্যাট, তারপর কমপ্রেস পিকচার, তারপর একটা ছবিতে কমাতে চাইলে তো কাজ শেষ। কিন্তু মজার বিষয় হল, এখানেই একবারে সবগুলো ছবির সাইজ কমপ্রেস করে ফেলা যায়, শুধু অ্যাপ্লাই অনলি টু দিস পিকচার এই অপশনটা ডিসিলেক্ট করে দিলেই হবে!
আরেকটা টোটকা বলি, স্লাইড একদম রেডি হয়ে গেলে, যখন দেখবেন আর কোনো প্রকার এডিট দরকার নেই, সেসময় নিশ্চিন্তে পিডিএফ আকারে সেভ করে ফেলুন! বুম, দেখবেন সাইজ অনেকটাই কমে গেছে। কাহিনি এখানেই শেষ নয়, আইলাভপিডিএফ ডট কম বা অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট প্রো… এদের কোনো একটির সাহায্যে এই পিডিএফের আকারও অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবেন! আর যদি প্রোজেক্টরে দেখানোর জন্য বানিয়ে থাকেন, সবশেষে ১৫০ ডিপিয়াই দিয়ে ওয়েব ভার্সন হিসেবে সেভ করে রাখতে পারেন। আর ফাইনালি ইমেল করতে হলে ৯৬ ডিপিয়াইই যথেষ্ট! তাই, সাইজ নিয়ে দুশ্চিন্তা- আর না, আর না!
৮. দরকারে ভিডিওতে কনভার্ট করুন
হাবস্পটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেজেন্টেশনে ভিডিওর ব্যবহার শুধু কার্যকরীই নয়, বরং দর্শকপ্রিয়ও। তাই নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যেতে ভিডিও। আর হ্যাঁ, স্লাইডকে ভিডিও বানানো কিন্তু খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তুড়ি মেরে করে ফেলুন, স্লাইডটি শুধু ভিডিও হিসেবে সেইভ দিয়েই! তবে একটা জায়গায় সাবধান, স্লাইড দেখে দেখে একটু যাচাই বাছাই করে টাইমিংটা দিবেন। নচেৎ দেখা যাবে, কোথাও লেখা না বুঝে উঠতেই পার হয়ে যাবে, আর কোথাওবা বসে থাকতে থাকতে দর্শক বিরক্ত হয়ে যাবে। এ অংশটা ঠিকঠাক করতে পারলেই অসাধারণ দর্শকনন্দিত ভিডিও তৈরি! সাথে হালকা চালে একটা থিম মিউজিক দিয়ে দিলেন নাহয়, একদম লা’জবাব প্রেজেন্টেশন হাজির।
৯. গ্রাফ-চার্ট ব্যবহারে সবকূল রক্ষা হয়
এটা আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি যে, যেকোনো বিষয়েরই তথ্য যখন টেক্সটের আকারে আসে তখনকার চেয়ে লোকজন পড়তে বা দেখতে পছন্দ করে যখন তা কোনো গ্রাফ বা পাই চার্ট অথবা বার ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। এজন্যে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় স্লাইডের মাঝে কিছু গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহার করা সবসময়ই পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এতে যেমন তথ্য সুন্দর করে উপস্থাপনও করা যায় সাথে দর্শকও খুশি থাকে। তাই সবকূলই রক্ষা হয় আরকি!
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
১০. জ্যামিতিক শেইপ এবং ড্রয়িং কাজে আসতে পারে
বিভিন্ন আকার আকৃতির জ্যামিতিক শেইপের ব্যাপারটা কিছুটা গ্রাফ চার্টের সাথে মিলে যায়, কিন্তু ড্রয়িং-এর দিকটা আবার স্বাতন্ত্র্যকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ ভিড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে চাইলে, কিছু হালকা-পাতলা ড্রয়িং হতে পারে তার সমাধান। কারণ, নরমাল এসব উপরোল্লিখিত টিপস তো যে কেউ অ্যাপ্লাই করতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ড্রয়িং বাকিদের থেকে আলাদা এবং সুন্দর হবে। আর সবথেকে দারুণ যে ব্যাপার, তা হল এটা আপনার প্রেজেন্টেশনকে দিবে ইউনিকনেস তথা স্বকীয়তা। এতে আপনার স্লাইড পাবে তার অসাধারণত্ব!
এইসব হ্যাকস ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি চাইলেই আপনার প্রেজেন্টেশন সুন্দর করে ফেলতে পারেন। সাথে এই দক্ষতাকে নতুন এক মাত্রা এনে দিতে ১০ মিনিট স্কুল আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এর জন্য এক সম্পূর্ণ কোর্স। এই কোর্সের ম্যাটেরিয়ালসগুলো আপনার পাওয়ারপয়েন্ট এক্সিলেন্সকে দিবে অনন্য এক স্তর, হয়ে উঠবেন পাওয়ারপয়েন্ট প্রো! তাহলে আর দেরী না করে, এখনই জয়েন করে ফেলুন আমাদের পাওয়ারপয়েন্ট কোর্সটিতে!
১১. লাইভ সাবটাইটেল:
কথা শোনার চাইতে দেখতে আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। Slideshow ট্যাব থেকে Always use subtitles এ যেয়ে নিজের মাইক্রোফোন ও ভাষা সিলেক্ট করে “Presenter view” -তে ক্লিক করে প্রেজেন্টেশন দিলে আপনার কথাটাই নিচে সাবটাইটেল হয়ে আসবে।
১২. থ্রিডি ইমেজ:
প্রথমেই “Insert” থেকে “Illustration” অপশনে চলে যান। সেখান থেকে “3D Models” ওপেন করে ড্রপ ডাউন মেনু থেকে Online Source এ ক্লিক করুন। চাইলে নিজের ফাইলে সেভ করে রাখা থ্রিডি ছবি দিয়েও কাজ করতে পারবেন। পছন্দমতো থ্রিডি ইমেজ স্লাইডে এনে এর উপর অ্যানিমেশন ইফেক্ট দিয়ে ছবি একদিক থেকে অন্যদিকে নিতে পারবেন, আবার রোটেটও করতে পারবেন।
১৩. ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে ফেলা:
প্রেজেন্টেশনের জন্য স্লাইডে অনেকধরনের ছবি যুক্ত করতে হয়। তার মধ্যে অনেক ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড নিষ্প্রয়োজন। বরং সেসব ছবি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই প্রেজেন্টেশনের সাথে আকর্ষণীয় মনে হয়।
সাধারণত এই ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করার কাজগুলোর জন্য আমরা ফটোশপের সাহায্য নিয়ে থাকি। তবে আপনি চাইলে সহজেই মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার করেও কোনো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে দিতে পারবেন।
যেই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করতে চান, তা আগে স্লাইডে ইম্পোর্ট করুন। তারপর ছবিটি সিলেক্ট করে Format ট্যাবের Picture Tools এ যান এবং সেখান থেকে Remove Background অপশনে ক্লিক করুন। এবার আপনার সিলেক্টকৃত ছবির পিছনে গোলাপি রঙয়ের একটি রেঞ্জ আসবে। এই রেঞ্জের মধ্যে যা যা থাকবে, পাওয়ারপয়েন্ট তা সব মুছে দিবে। এই রেঞ্জ আপনি নিজেও সিলেক্ট করে নিতে পারবেন।
১৪. Kiosk Mode:
মনে করুন আপনি বিলবোর্ডের জন্য একটা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বানাচ্ছেন। কিন্তু ম্যানুয়ালি বারবার একই স্লাইড দেখানো সম্ভব না। সেজন্য আমাদের ব্যবহার করতে হবে Kiosk Mode। এই মোড ব্যবহার করলে আপনার প্রেজেন্টেশনের একাধিকবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। অর্থাৎ কোনো প্রেজেন্টেশন শেষ না হয়ে আবার প্রথম থেকে শুরু হবে। বিলবোর্ড ছাড়াও এই ধরনের প্রেজেন্টেশন মোড বড় বড় মার্কেট কিংবা কোনো দোকানের সামনে পেয়ে থাকবেন। এই Kiosk মোড আপনার প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে Slide Show ট্যাবে ক্লিক করুন। একটি ডায়ালগ বক্স আপনার সামনে আসবে, সেখান থেকে Browsed at Kiosk এ ক্লিক করে Kiosk সেটআপ করে নিন। আর Kiosk মোড বন্ধ করতে Esc কি-তে চাপ দিলেই হবে।
১৫. ট্রিভিয়া বা কুইজ তৈরি:
স্লাইডের শুরুতেই গেমের নাম লিখে শেইপ বক্স থেকে চতুর্ভুজ এনে সেখানে ‘Start’ টাইপ করুন। চাইলে Format Background এ ক্লিক করে পছন্দমতো ব্যাকগ্রাউন্ডও সিলেক্ট করে নিতে পারেন।
এরপর চতুর্ভুজের Start এ ক্লিক করে হাইপার লিংকের মাধ্যমে আগের স্লাইডের সাথে পরবর্তী স্লাইড যুক্ত করুন। এভাবে প্রতিটা স্লাইডই হাইপার লিংকের মাধ্যমে যুক্ত করুন। শুধু Start এর পরিবর্তে পরের স্লাইডের বক্সে কুইজের প্রশ্ন থাকবে।
কুইজের প্রশ্নগুলোর উপর অ্যানিমেশন ইফেক্ট ব্যবহার করতে পারেন। যার মাধ্যমে ভুল উত্তরগুলোর নিচে ভুল এবং সঠিক উত্তরের নিচে ঠিক লেখা থাকবে।
১৬. আনসেভড ফাইল উদ্ধার:
অনেকসময় দেখা যায়, কাজ করতে যেয়ে অন্যমনস্কতার কারণে আমাদের এত কষ্টে তৈরি করা প্রেজেন্টেশন ফাইলটা ডিলিট হয়ে গিয়েছে। ফটোশপ কিংবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ডিলিট হয়ে যাওয়া বা সেভ না করা ফাইল রিকোভার করা একটু কঠিন হলেও, মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট -এ এই কাজটা খুবই সহজ।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এ যেয়ে ফাইলটি ওপেন করুন। সেখানের ডান পাশের অংশে আপনার সেভ করা সবগুলো ফাইল পাবেন। স্ক্রল করে একটু নিচের দিকে নামতেই দেখবেন ‘Recover Unsaved Presentations’ নামের একটা অপশন আছে। ব্যস, এক ক্লিকেই আবার সব ফিরে পাবেন!
জেনে নিন কিভাবে ২-৩ ঘণ্টার কাজ আধা ঘণ্টায় করা যায় MS Office দিয়ে!
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করার জন্য ফ্রি রিসোর্স
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট -এর ফ্রি রিসোর্স (Microsoft PowerPoint Free Resources) |
||||
ফ্রি পাওয়ারপয়েন্ট টেমপ্লেট (Free PowerPoint Template) | ফ্রি পাওয়ারপয়েন্ট ফন্ট (Free PowerPoint Font) | ফ্রি পাওয়ারপয়েন্ট আইকন (Free PowerPoint Icon) | ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ (Background Image) | |
1 | Behance | fonts.com | ICONFINDER | Pixabay |
2 | Slides Carnival | dafonts.com | Freepik | Unsplash |
3 | FPPT | Urban Fonts | Flaticon | Pexels |
4 | Slidesgo | Font Space | Icons8 | Slidesgo |
5 | 24Slides | 1001 Free Fonts | The Noun Project |
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Microsoft Office Starter Course
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- স্মার্ট প্রফেশনাল বান্ডেল Course
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন