ঢাবি গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: জেনে নাও খুঁটিনাটি

April 7, 2024 ...

ভবিষ্যতে ভালো একটা ক্যারিয়ার দাঁড় করানো কিংবা নিজের স্বপ্নের পিছে ছুটে চলা, উদ্দেশ্য যাইহোক না কেনো সে উদ্দেশ্য হাসিল করতে প্রস্তুতি শুরু হয় কলেজে থাকতে থাকতেই। এইচএসসি পরীক্ষার পর ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দেয়। 

সারাদেশের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়ুয়া সেই স্বপ্নবাজ মুখগুলোর প্রথম পছন্দ থাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাবি গ ইউনিট
উচ্চ মাধ্যমিকের পর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রথম পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;  Image Source: du.ac.bd

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা ঢাবি গ ইউনিট এর ভর্তি প্রস্তুতির সব খুঁটিনাটি বিষয়াদি- 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ ইউনিট বিষয়সমূহ ও আসন সংখ্যাঃ

ঢাবি গ ইউনিট ইউনিট এর ৯টি বিভাগে সর্বমোট ১০৫০টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২৩ হাজার ৩৪৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ ইউনিট মানবন্টন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ ইউনিট আসন সংখ্যা নিচে দেওয়া হলঃ

বিভাগ আসনসংখ্যা বিভাগ আসনসংখ্যা
ম্যানেজমেন্ট ১৫০ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস ১০০
অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ১৫০ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ১০০
ফিন্যান্স ১৫০ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ১০০
মার্কেটিং ১৫০ অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি এন্ড লিডারশিপ ৫০
ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স ১০০

ঢাবি C Unit Admission Course - 2024

দেশসেরা শিক্ষকদের গাইডলাইনের সাথে ঢাবি C Unit পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নাও আমাদের সাথে।

 

ঢাবি গ ইউনিট (DU C Unit) এ আবেদনের যোগ্যতা

ঢাবি গ ইউনিট এর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী –

  • ২০২২ এ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা/ এ লেভেল/ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং বিজ্ঞান/ থেকে মানবিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে।

ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য 

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যবসায় শিক্ষা/ এ লেভেল/ বিজনেস ম্যানেজমেন্টে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের – 

  • মাধ্যমিক/ সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ প্রাপ্ত জিপিএ দুটির যোগফল কমপক্ষে ৭.৫ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০) হতে হবে।
  • ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যবসায় শিক্ষা/ এ লেভেল/ বিজনেস ম্যানেজমেন্টে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হিসাবিজ্ঞান বিষয়টি অবশ্যই থাকতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ন্যূনতম ৩.০ হতে হবে।  

বিজ্ঞান শাখার জন্য 

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিজ্ঞান শাখায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের –

  • মাধ্যমিক/ সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ প্রাপ্ত জিপিএ দুটির যোগফল কমপক্ষে ৮.০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.৫) হতে হবে।
  • উচ্চমাধ্যমিকে ২০০ নম্বরের গণিত অথবা পরিসংখ্যান (আবশ্যিক/ঐচ্ছিক)  বিষয়টি অবশ্যই থাকতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ন্যূনতম ৩.০ হতে হবে।  

মানবিক শাখার জন্য 

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য মানবিক শাখায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের –

  • মাধ্যমিক/ সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ প্রাপ্ত জিপিএ দুটির যোগফল কমপক্ষে ৭.০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.৫) হতে হবে।
  • উচ্চমাধ্যমিকে ২০০ নম্বরের অর্থনীতি অথবা পরিসংখ্যান (আবশ্যিক/ঐচ্ছিক)  বিষয়টি অবশ্যই থাকতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ন্যূনতম ৩.০ হতে হবে।  

ঢাবি গ ইউনিট (DU C Unit) ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন

সাধারণত মেধাক্রম তৈরি করা হয় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএ এবং ভর্তিপরীক্ষায় প্রাপ্ত মোট নম্বরের ভিত্তিতে। জিপিএ-র ওপর নম্বরটা পরিস্থিতি কিংবা ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

২০২২-২৩ এর সার্কুলার অনুযায়ী পরীক্ষার মোট নম্বর ১২০ যার মধ্যে ২০ নম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জিপিএ-র ওপর (জিপিএ X ২) এবং বাকি ১০০ নম্বরের ওপর ছিল ভর্তি পরীক্ষা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষর জিপিএ-র ওপর নম্বর ছিল ৮০ (এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ X ১০ + এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ X ৬)।

এবার আসা যাক মূল পরীক্ষার ব্যাপারে,

২০১৮-১৯ পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ বহুনির্বাচনি বা MCQ ভিত্তিক। ২০১৯-২০ সাল থেকে বহুনির্বাচনির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে লিখিত অংশ। চলো দেখে নিই বিস্তারিত (ঢাবি গ ইউনিট ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২২-২৩ অনুযায়ী):

ব্যবসায় শিক্ষা শাখা

ক) বহুনির্বাচনি (MCQ) প্রশ্ন অংশ

  • বাংলা (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • ইংরেজি (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • হিসাববিজ্ঞান (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • মার্কেটিং অথবা ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা (যে কোনো একটি): ১২ নম্বর

খ) লিখিত অংশ

  • বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ: ৪ নম্বর
  • ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ: ৪ নম্বর
  • ভুল সংশোধনী (বাংলা): ৪ নম্বর
  • ভুল সংশোধনী (ইংরেজি): ৪ নম্বর
  • হিসাববিজ্ঞান (আবশ্যিক): ৮ নম্বর
  • ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ (আবশ্যিক): ৮ নম্বর
  • মার্কেটিং অথবা ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা (যে কোনো একটি): ৮ নম্বর

du a unit prep blogআরো পড়ুন: ঢাবি ক ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা: কীভাবে প্রস্তুতি নেবো?


বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা

ক) বহুনির্বাচনি (MCQ) প্রশ্ন অংশ

  • বাংলা (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • ইংরেজি (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • আইসিটি (আবশ্যিক): ১২ নম্বর
  • গণিত অথবা পরিসংখ্যান অথবা অর্থনীতি (যে কোনো একটি): ২৪ নম্বর

খ) লিখিত অংশ

  • বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ: ৫ নম্বর
  • ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ: ৫ নম্বর
  • ভুল সংশোধনী (বাংলা): ৫ নম্বর
  • ভুল সংশোধনী (ইংরেজি): ৫ নম্বর
  • আইসিটি : ১০ নম্বর
  • গণিত অথবা পরিসংখ্যান অথবা অর্থনীতি (যে কোনো একটি): ১০ নম্বর

A Level / Equivalent 

A Level শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয় এবং নম্বর বণ্টন:

A) MCQ Section

  • English (Compulsory): 16 marks
  • Advance English (Compulsory): 12 marks
    Business Subjects (Any Two)
  • Business Studies: 16 marks
  • Accounting: 16 marks
  • Economics: 16 marks
  • Mathematics: 16 marks

খ) Written Section

  • Essay Writing: 5 marks
  • Error Correction: 5 marks
    Business Subjects (Any Two)
  • Business Studies: 10 marks
  • Accounting: 16 marks
  • Economics: 10 marks
  • Mathematics: 10 marks

বহুনির্বাচনি (MCQ) অংশে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। লিখিত অংশের জন্য কোনো নেগেটিভ মার্কিং থাকবে না। 

ঢাবি গ ইউনিট প্রশ্ন ধরন (DU C Unit Question) :

প্রতি বছর ঢাবি গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় ১২৫০ আসনের বিপরীতে সাধারণত ৪০-৫০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। বুঝতেই পারছো, এতসংখ্যক পরীক্ষার্থীর মধ্যে মেধা তালিকায় নিজের নামটি দেখতে চাইলে কি পরিমাণ কঠোর পরিশ্রম করতে হবে? শুধু পরিশ্রম করে গেলেই হবে না, এর সাথে উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করেও পড়াশোনা করতে হবে। আর পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টা সময়ের যথার্থ ব্যবহার না করতে পারলে ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন কিন্তু অধরাই থেকে যাবে। তাই তুমি যাতে নিজের স্বপ্নের ক্যাম্পাসে পড়তে পারো, সেজন্য জানতে হবে ঢাবি গ ইউনিট প্রশ্নের ধরন।

ইংরেজি: এখানে মূলত গ্রামার থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়৷ এই যেমন: Vocabulary, Group Verb, Phrase and Idioms, Appropriate Preposition, Narration, Tense, Right Form of Verbs ইত্যাদি টপিক থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। প্রতিবছর গ্রামার থেকে ১০-১২টি প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে Right form of Verbs, Narration, Article, Tag Question, Sentence ও Parts of Speech-এর থেকে প্রশ্ন কমন পড়বেই। গ্রামারের ব্যতিক্রম নিয়মগুলো সম্পর্কে যেন সঠিক ধারণা থাকে। যেহেতু এসব জায়গায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই এখান থেকেই অনেক সময় প্রশ্ন করা হয়৷ 

ইংরেজি প্রথম পত্র বইটার কথা ভুললে চলবে না। কোনো সালে কবিতা ও কবির নাম, কবিতার প্রথম ও শেষ লাইন থেকে প্রশ্ন চলে আসতেও পারে। 

বাংলা: বাংলার জন্য উচ্চমাধ্যমিকের মূল বইটা আয়ত্তে আনা জরুরি। ঢাবি গ ইউনিট পরীক্ষায় বাংলা প্রথমপত্র থেকে গদ্য ও পদ্যের মূলভাব, উৎস, তথ্য, ছন্দ, কবি ও লেখক পরিচিতি, শব্দার্থ, কবিতায় কোন শব্দ কতবার ব্যবহার করা হয়েছে, বিভিন্ন চরিত্রাবলি থেকে প্রশ্ন, কোন উক্তিটি কার এসব থেকে প্রশ্ন আসে। এর পাশাপাশি ব্যাকরণ অংশের অনেক কিছুই গদ্য ও পদ্য থেকে চলে আসে। বাগধারা, বাচ্য,  এককথায় প্রকাশ, সন্ধি ইত্যাদি। 

ব্যাকরণ অংশে ভালো করার জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ব্যাকরণ ২য় পত্রের বোর্ড বইটা পড়তে পারো। ব্যাকরণের ধ্বনি প্রকরণ, যুক্ত ব্যঞ্জন বিশ্লেষণ, শব্দ সম্ভার, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, বচন, পদাশ্রিত নির্দেশক, উপসর্গ, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, পদ প্রকরণ, পদ পরিবর্তন, ক্রিয়ার কাল ও ভাব, বাক্য প্রকরণ, বাক্য রূপান্তর, বাচ্য, যতি ছেদ বিরাম, শুদ্ধিকরণ থেকে প্রতি বছরই প্রশ্ন এসে থাকে৷ 

ম্যানেজমেন্ট: সাম্প্রতিক দেশীয় বা বৈদেশিক ব্যবসায় প্রবাহ থেকে কিছু প্রশ্ন আসে। 

অ্যাকাউন্টিং: অংক বিষয়ক প্রশ্ন থেকে ৪-৫টা, অংক সম্পর্কিত প্রশ্ন হয় আরও ৪-৫টা হয়ে থাকে। আর বাকিগুলো ব্যবহারিকভিত্তিক প্রশ্ন। তাই তত্ত্বীয় প্রশ্নগুলোর ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

ঢাবি গ ইউনিট (DU C Unit) মেধাতালিকা

পরীক্ষা এবং জিপিএ-র সম্মিলিত নম্বরের ওপর ভিত্তি করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। তবে বহুনির্বাচনি অংশের ইংরেজিতে ন্যূনতম ৫ এবং সব মিলিয়ে ন্যূনতম ২৪ পেতে হবে। লিখিত অংশে ন্যূনতম পেতে হবে ১১। বহুনির্বাচনি ও লিখিত মিলিয়ে ন্যূনতম ৪০ নম্বর থাকতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়, বহুনির্বাচনি অংশে উত্তীর্ণ হলেই কেবল লিখিত অংশের মূল্যায়ন করা হবে।  

ঢাবি গ ইউনিট প্রস্তুতি (DU C Unit) যেভাবে নেবে

১. বই পড়ো, কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখো

পাঠ্য বই এর বিকল্প কিছু হতে পারেনা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ভর্তিযুদ্ধে খারাপ করার একটা বড় কারণ থাকে পাঠ্যবইকে গুরুত্ব না দেয়া। শুরু থেকেই বই এর খুঁটিনাটি এবং মূল বিষয়বস্তু বুঝে প্রস্তুতি নিলে সেটা বেশি ফলপ্রসূ হয়। অবশ্যই এবং অতি অবশ্যই বেসিক এবং কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখা জরুরি।

যেমন: ২০২০-২১ এ ঢাবি গ ইউনিট লিখিত প্রশ্নে, বাংলা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নটি ছিল মূলত অনুধাবনমূলক। আবার, বাংলা-ইংরেজি বা ইংরেজি-বাংলা অনুবাদ, Concept/ Precise Writing টা তখনই ভালো হবে যখন তোমার ইংরেজির বেসিকটা ভালো থাকবে।

পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়গুলো ভালো করে পড়তে হবে
পাঠ্যবইকে বেশি গুরুত্ব দাও; Image Source: Entrepreneur

২. প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করো

এ কাজটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, হুবহু একই প্রশ্ন না আসলেও প্রশ্নের প্যাটার্নটা অনেক ক্ষেত্রেই অভিন্ন থেকে যায়। তাই বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করাটা জরুরি। এতে যেমন প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ টপিকও চিহ্নিয় করা যায়। এতে প্রস্তুতি নেয়াটা সহজ হয়।

যেমন: ঢাবি গ ইউনিট ২০২১ এ ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোতে লিখিত প্রশ্নে গাণিতিক প্রশ্নের চেয়ে বর্ণনামূলক প্রশ্নগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। 

৩. জানতে হবে নিজের দুর্বলতা

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতার জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেই বিষয়ে বেশি সময় দিতে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে। কে কিভাবে পড়ছে, বেশি পড়ছে না কম পড়ছে এসব তুলনায় না গিয়ে নিজের দিকে ফোকাস করাটা বেশি জরুরি।

সময়ের জ্ঞান
লক্ষ্য রাখতে হবে সময়ের প্রতি; Image Source: Global Education Information- Quora

৪. ঘড়ি ধরে অনুশীলন 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রস্তুতি ভালো হলেও সময়ের সাথে তাল মিলাতে না পেরে পরীক্ষা খারাপ হয়। যেহেতু পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি আর লিখিত দুটোই থাকছে এবং প্রত্যেকটার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ তাই সময়ের মধ্যে শেষ করার অভ্যাসটা করতে হবে। আর এ জন্য দরকার সময় ধরে অনুশীলন। নেগেটিভ মার্কিং এর বিষয়টিও অনুশীলনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে ভুলো না যেনো। 

৫. নার্ভাস হওয়া যাবে না

পরীক্ষার মধ্যে কিছুটা নার্ভাসনেস কাজ করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হল অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে জানা জিনিসও ভুল করে আসা! এরকম মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। অনেকে ভর্তি পরীক্ষাটাকে ‘দেড় ঘণ্টার খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেন। কথাটা ভুল নয়। ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিতে হবে। যেহেতু প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, সামান্য একটু ভুলও তোমাকে নিয়ে যেতে পারে তোমার স্বপ্ন থেকে অনেক অনেক দূরে।

অভ্যাসে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে
আত্মবিশ্বাস রাখো নিজের উপর। এই উচ্ছ্বাসের অংশ হতে পারো তুমিও; Image Source: AskMen

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ সারাদেশের আনাচে কানাচের হাজার হাজার ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীর জন্য যেন এক স্বপ্নের নাম! আর এখানে অধ্যয়নের সুযোগ যাতে কোনোভাবেই হাতছাড়া হয়ে না যায় সে কারণে সকল শিক্ষার্থীরই ইচ্ছা থাকে এর ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারণা লাভের। তার জন্যই ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম শুরু হতে না হতেই সবাই তাদের প্রশ্নভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়ে যায় ইতোমধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কাছে। সেরকমই কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে এখানে, শুধুমাত্র তোমাদের প্রস্তুতি মজবুত করতে!

১। দৈনিক কতক্ষণ পড়তে হবে? কিভাবে পড়তে হবে?  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ ইউনিট এর জন্য দৈনিক কতক্ষণ পড়তে হবে তা সম্পূর্ণভাবে তোমার ধারণক্ষমতার উপর নির্ভর করেতবে এইটুকু বলব যে, যতক্ষণই পড় না কেন, মনোযোগ সহকারে পড়। যখন পড়তে একদমই ইচ্ছা করছে না, তখন বিরতি নাও নাহলে প্রেশারে আগের পড়াও ভুলে যাবে। 

পড়াশোনাটা নিয়মিত চালিয়ে যাও এবং রাত জেগে না পড়ে বরং ভোরবেলা উঠে পড়। কারণ, রাত জেগে পড়লে মাথায় সারাদিনের সব চিন্তা ভিড় করে যেখানে ভোরবেলা পড়তে গেলে মাথা পুরোপুরি পরিষ্কার থাকে এবং পড়া সহজে মনে থাকে। প্রতিদিনই কিছু কিছু ভোকাবুলারি অথবা প্রিপজিশন পড়ে ফেলা ভালো।


বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাআরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা জয়ের নীল নকশা: কিছু অজনপ্রিয় টিপস!


২। এত ভোকাবুলারি মনে রাখব কীভাবে?  

ভোকাবুলারি মনে রাখার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। এর মাঝেই প্রথমেই নেমোনিক। নেমোনিক হচ্ছে একটা জিনিস দিয়ে অন্য আরেকটা জিনিস মনে রাখা। ভোকাবুলারিগুলো পড়ার সময় প্রত্যেকটা শব্দকে অন্যকিছুর সাথে রিলেট করতে পারলেই ব্যপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

এছাড়াও স্টিকিনোটের ব্যবহার করা যায়। ফ্রিজে, বাথরুমে, ড্রেসিং টেবিলে এমন বিভিন্ন জায়গায় স্টিকি নোটে কিছু কিছু ভোকাবুলারি লিখে আটকিয়ে রাখলে তা বারবার চোখে পড়ে মাথায় গেঁথে যাবে। প্রত্যেকটা শব্দ পড়ার সাথে সাথে লিখে ফেললেও ভাল মনে রাখা যায়। প্রতি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে অন্তত দশটা করে পড়ে পরদিন সকালে উঠে ওগুলো মনে করার চেষ্টা করবে।  

৩। কোন বিষয়টাতে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে?  

সব বিষয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ইংরেজিতে আলাদাভাবে পামার্ক তুলতে হয় তাই ইংরেজিতে একটু জোর দেয়া ভাল। এখানে বলে রাখা ভাল যে, পরীক্ষা হলে ইংরেজি অংশটা একদম শেষে উত্তর করার ব্যাপারটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। কারণ, কোনোভাবে যদি সময় শেষ হয়ে যায় আর ইংরেজি থেকে নম্বর ছেড়ে আসতে হয় তাহলে পা করাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

৪। উচ্চমাধ্যমিকে মার্কেটিং পড়লে কি ফিন্যান্সের উত্তর করা যাবে? এতে করে কি ভবিষ্যতে বিষয় নির্বাচন প্রভাবিত হবে?

You’re free to answer either Finance or marketing! আর এই ব্যাপারটা চান্স পাওয়ার পর বিষয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

৫। নেগেটিভ মার্কিং হয়। সেক্ষেত্রে কি ১২০ নম্বরেরই উত্তর করে আসা বুদ্ধিমানের মত কাজ?

Negative marking is not negative at all! প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .২৪ করে তোমার মোট নম্বর থেকে বিয়োগ করা হবে। উল্টো দিকে প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য তুমি পেয়ে যাচ্ছ ১.২০ নম্বর। সেক্ষেত্রে তুমি যদি পাঁচটা প্রশ্ন অনুমানের ভিত্তিতে উত্তর কর, তাহলে এত লেখাপড়া করার পর আমার বিশ্বাস যে তোমার তার মাঝ থেকে অন্তত একটা সঠিক হবেই। আর সেই সঠিক উত্তরই তোমার বাকি চারটা ভুল উত্তরকে রিকভার করে ফেলবে। তবে অনুমানের উপর ভিত্তি করে খুব বেশি উত্তর করা উচিত না।

ঢাবি B Unit Admission Course - 2024

দেশসেরা শিক্ষকদের গাইডলাইনের সাথে ঢাবি B Unit এর পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নাও আমাদের সাথে।

 

৬। মেরিটে আসার জন্য কিংবা ভাল বিষয় পড়ার জন্য ন্যূনতম কত নম্বর পাওয়া লাগবে?

প্রথমত, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের যেকোনো বিষয়ই খুবই ভাল। আর ন্যূনতম নম্বরটা প্রশ্নের উপর নির্ভর করে। প্রশ্ন সহজ আসলে ন্যূনতম নম্বরটা অনেক বেশি হয়ে যায় আর প্রশ্ন কঠিন হলে তার বিপরীতটা।

 

৭। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া ভালো না কোচিং সেন্টারে? কোন কোচিং সেন্টারটা ভালো হবে?

লেখাপড়াটা পুরোপুরি তোমার উপরই নির্ভর করে। গৃহশিক্ষক এবং কোচিং শুধুমাত্র গাইডেন্স দিবে। সেক্ষেত্রে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লে কোচিংয়ে যাতায়াতের অনেক সময় বেঁচে যায় আর গৃহশিক্ষক যতক্ষণ পড়াবেন ততক্ষণ তাঁর মনোযোগ শুধুমাত্র তোমার প্রতিই থাকবে। আবার কোচিংয়ে পড়লে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের স্বাদ পাওয়া যায়। অনেক সময় কোনো অনিবার্য কারণে গৃহশিক্ষক অনুপস্থিত থাকতে পারে যে সমস্যাটা কোচিংয়ে হবে না।

আর সব কোচিং ই প্রায় কাছাকাছি মানেরই আর যেহেতু পড়াটা তোমার কাছে, সেহেতু কোচিং তেমন একটা ম্যাটার করে না এক্ষেত্রে। তবে শেষের দিকে নিজেকে যাচাই করার জন্য কোনো কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্ট দিলে ভাল হয়। আর এছাড়া 10 Minute School Live Classes তো আছেই!

 

৮। ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কিভাবে প্রস্তুতি নিবে?

ইংলিশ মিডিয়ামের প্রশ্নে ইংলিশ, অ্যাডভান্সড ইংলিশ এবং ইকোনমিক্স, অ্যাকাউন্টিং এবং ব্যবসায় এই তিনটা বিষয় থেকে যেকোনো দুইটা বিষয়ের উত্তর করতে হয় যা পুরোপুরি ও লেভেল এবং এ লেভেল বিশেষ করে এ লেভেলের সিলেবাস থেকে হয়।

ঢাবি C Unit Admission Course - 2024

কোর্সটিতে যা যা থাকছে

  • ঢাবি C ইউনিট ক্র্যাক করার বিভিন্ন টিপস এবং কৌশল শিখুন
  • সময় ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো জেনে নিন
  • কীভাবে অধ্যয়ন করতে হবে, কী অধ্যয়ন করতে হবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জানুন
  •  

    ৯। কোন বিষয়ের জন্য কোন বই ভালো হবে?

    প্রথমত সব বিষয়ের জন্যই উচ্চমাধ্যমিকের বইটা খুব ভাল করে পড়ে ফেলতে হবে শুধুমাত্র বাংলা ২য় পত্র বাদে কারণ বাংলা ব্যকারণের প্রশ্ন বেশিরভাগই হয় মাধ্যমিকের বই থেকে। ভর্তি পরীক্ষায় অনেক ধরনের সাম্প্রতিক এবং অতিরিক্ত তথ্য আসতে পারে যার জন্য বাজারে অনেক ধরনের বই পাওয়া যায়। এর মাঝে বাংলার জন্য সরোবর, হিসাববিজ্ঞানের জন্য RABS, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স এবং মার্কেটিং এর জন্য যথাক্রমে, Fundamental of Management, Fundamental of Finance এবং Fundamental of Marketing ভাল হবে।

    ইংরেজির জন্য Adroit এবং এর পাশাপাশি একটা পকেট ভোকাবুলারি গাইড রাখা যেতে পারে যেকোনো জায়গায় যখন তখন পড়ার জন্য। সব গাইডের পেছনেই বিগত বছরের প্রশ্ন দেয়া থাকে ওগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে আর পেছনে প্রশ্ন না পেলে পরীক্ষার আগে একমাস হাতে রেখে একটা Question Bank কিনে সমাধান করে ফেলতে হবে।

    ১০। মোটামুটি ধরনের শিক্ষার্থীরা কি পড়তে পারে এখানে?

    অবশ্যই হ্যাঁ! যে ধরনের শিক্ষার্থীই হোক না কেন, তার থাকতে হবে অদম্য ইচ্ছা এবং অধ্যবসায়। আমি নিজেই তো একজন মোটামুটি ধরনের শিক্ষার্থী!

    ১১। ঢাবি গ ইউনিট (DU C Unit) প্রস্ততির পাশাপাশি গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান কি পড়া উচিত? 

    সেটা পুরোপুরি তোমার সামর্থ্যর উপর নির্ভর করে। যেহেতু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাদে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষায় গণিত আসে তাই ঢাবি গ ইউনিট এর পাশাপাশি গণিত চর্চা করতে পারো। তবে তোমার যদি একমাত্র লক্ষ্য থাকে ঢাবি গ ইউনিট এবং যদি অনেক আত্মবিশ্বাস থাকে যে এখানে তুমি পড়তে পারবেই, তাহলে গণিত চর্চার দরকার নেই। 

    তবে হ্যাঁ, গণিতের বেসিকটা পরিষ্কার রাখতেই হবেসাধারণ জ্ঞান দরকার হয় মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের জন্য যার জন্য ঢাবি গ ইউনিট এর ফলাফলের পর এক মাস প্রস্ততি নেবার সময় পাওয়া যায়। তাই সাধারণ জ্ঞান ঐ এক মাসের জন্য রেখেই দিলেই বোধ হয় ভালো হয়।

    তো, পরীক্ষার্থীদের করা হরেক রকমের প্রশ্নের মাঝ থেকে এই কয়েকটা ছিল সবচেয়ে কমন যার কারণে উত্তরগুলো দিয়ে দিলাম। এরপরও যদি কোনো বিষয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয় তবে কমেন্ট সেকশন তো রয়েছেই!

    সবশেষে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখো এবং নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাও। ঢাবি গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা তথা তোমার স্বপ্নজয়ের যুদ্ধে অবশ্যই তুমি সফল হবে।


    বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:


    ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বাকি কোর্সসমূহ:


    ঘরে বসে বিভিন্ন বিষয়ে করো স্কিল ডেভেলপ:


    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com

    আপনার কমেন্ট লিখুন