যেহেতু তুমি আমার এই লেখাটি পড়ছো, তাই ধরেই নিচ্ছি যে তুমি সদ্যই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছো এবং খুব শীঘ্রই জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছ। তাই শুরুতেই তোমাকে শুভকামনা জানাচ্ছি। যদি তুমি তোমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে, পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ পেয়ে থাক, তবে তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন! আর যদি দূর্ভাগ্যক্রমে তা না হয়, তবে মনে রাখবে, এখানেই শেষ নয়, দিনশেষে তোমার প্রতিষ্ঠানের থেকে মানুষ তুমি নিজে কী করলে, সেটাকে গুরুত্ব বেশি দিবে।
তুমি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ই ভর্তি হও না কেন, ক্লাস শুরুর আগে পাবে লম্বা একটা ছুটি। এই মুহুর্তে আমি তোমাকে আগেভাগেই তোমার ভবিষ্যতের দুইটা দুঃখজনক স্পয়লার দিয়ে নিতে চাই। প্রথমত, অবসর গ্রহণের আগে এটাই তোমার জীবনের সেরা এবং শেষ লম্বা ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয় একবার ভর্তি হয়ে গেলে কিংবা একবার পাশ করে বের হয়ে গেলে এমন ছুটি পাওয়া দুষ্কর। তাই এই ছুটিকে খুব ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে যাতে পরে কোনো আফসোস না থেকে যায়। দ্বিতীয়ত, “বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে কোনো পড়া নেই।“ এটা একটা মিথ। বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে সাধারণত স্কুল কলেজের চেয়ে পড়ার চাপটা একটু বেশি থাকে আর এর সাথে থাকে টার্ম পেপার, প্রেজেন্টেশন, মিড ইত্যাদি অনেক ঝামেলা তাই তুমি যদি মনে করে থাক যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে এই করবে সেই করবে, তাহলে তার বেশিরভাগটা এই ছুটির মাঝেই করে নিতে হবে।
এত লম্বা ছুটি পেয়ে যাতে তুমি আবার হিমিশিম না খেয়ে যাও, সেজন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই ছুটিতে তুমি কী কী করতে পার আজ তার কিছু পরামর্শ দিব।
১। কাগজপত্র ঠিক মত আছে তো?
হুমায়ূন আহমেদের রূপালী দ্বীপ উপন্যাসে এমন একটা কথা ছিল যে, মানুষের চেয়ে কাগজ বেশি বিশ্বাসযোগ্য যেটা অনেকটা সত্য। তাই এই বন্ধে তোমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। আর কোনোটাতে সমস্যা থাকলে অতিসত্ত্বর তা ঠিক করিয়ে নিতে হবে। কাগজপত্র বলতে তোমার চার পরীক্ষার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদি। এসবে তোমার সব তথ্য ঠিকমত না দেয়া থাকলে তা এই বন্ধের মাঝেই ঠিক করাতে হবে দুইটা কারণে; প্রথমত, এই কাগজপত্রের সব তথ্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কাগজে উঠে যাবে আর এরপরে তা সংশোধন করাটা খুব ঝামেলা হবে হয়ত সময়ও পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, এই কাগজগুলো ঠিক করা খুব সময়সাপেক্ষ আর হয়রানির কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনেই এত চাপ এর উপর কী দরকার নতুন চাপ নেবার?
২। ইংরেজী দক্ষতাটা মজবুত কর
তোমার মেজর যদি বাংলা না হয়, তবে এখন অফিসিয়ালি বাংলাকে সারাজীবনের মত বিদায় জানিয়ে দিতে হবে কারণ এরপর থেকে পুরো কারিকুলামটাই ইংরেজিতে। তাই শুরুতেই যেন ধাক্কা না খেতে হয় এজন্য ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন এখন থেকেই করতে হবে। ইংরেজি ছবি দেখ, বই পড়, অনলাইনে ইংরেজি কোর্স কর, ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে ইংরেজিতে দক্ষ হতে পারবে।
৩। প্রেজেন্টেশন আর পাওয়ার পয়েন্টের কাজ অনলাইনেই শিখে ফেল
বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে গিয়ে আমরা নতুন যে জিনিসটা পাই, তা হচ্ছে প্রেজেন্টেশন। আমরা স্কুল লাইফে অনেকেই প্রেজেন্টেশন দিয়ে আসলেও, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এই প্রথম দিতে হয়। তাই এই বন্ধেই অনলাইনে প্রেজেন্টেশন দেয়ার খুঁটিনাটি শিখে ফেল, ইংরেজীতে ফ্লুয়েন্সিটাও এর মাঝেই বাড়িয়ে ফেল। ইউটিউবে অসংখ্যা পাওয়ার পয়েন্ট টিউটোরিয়াল আছে যার থেকে আকর্ষণীয়ভাবে স্লাইড বানানো শিখতে পারবে। এমনিতেও পাওয়ার পয়েন্ট নিয়ে ১৫-১৬ দিন একটু নাড়াচাড়া করলেই অনেক কিছু শেখা যায়।
আরো পড়ুন: মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট কী? প্রেজেন্টেশন তৈরির ১৬টি কার্যকরী টিপস
৪। হয়ে যাও ট্রাইলিঙ্গুয়াল!
একটা এক্সট্রা ভাষার দক্ষতা, তোমার সিভির মূল্য অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় একবার খুলে গেলে তার পাশাপাশি কোনো ভাষা শেখাটা একটু কষ্টকর হয়ে পরে। তাই এই ছুটিতেই শিখে নিতে পার ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ কিংবা জার্মান যেকোনো একটা ভাষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশন অফ মডার্ন ল্যাংগুয়েজ তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, উইংস, গথ ইন্সটিটিউশন, জার্মান ল্যাংগুয়েজ স্কুল, এলপিসি সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে কোর্স করে খুব সহজেই যেকোনো ভাষার বেসিক আয়ত্তে নিয়ে আসা যায়।
৫। এখন থেকেই আয় করার পথ খুঁজে বের কর
আমরা সবসময় শুনি, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে নাকি টিউশনির অভাব হয় না। যেটাকে একটা মোটামুটি ভুল ধারণা বলে চালিয়ে দেয়া যায়। সত্য কথা হচ্ছে, টিউশনির অভাব শুধুমাত্র তাঁদের হয় না যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। আর পূর্ব অভিজ্ঞতা এখন থেকেই অর্জন করতে হবে, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই তোমার একটা আয়ের উৎস থাকে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় একবার শুরু হয়ে গেলে, বইপত্র কেনা, যাতায়াত ইত্যাদি অনেক খরচ হতেই থাকে আর সে সময়টা অভিভাবকের কাছে বারবার টাকা চাইতেও খারাপ লাগে। তাই আগেই একটা দুইটা টিউশনি কিংবা অন্য কোনো আয়ের উৎস ঠিক করে রাখলে, নিজের প্রতিদিনের খরচ নিজেই চালানো যায়।
৬। স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স কর
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কদর এখন সারা বিশ্বজুড়ে! আর বিজনেস কেস ক্র্যাকিং? সেটা তো নেক্সট বিগ থিং! এরকম কিছু স্কিল যদি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই ডেভেলপ করে নিতে পার, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শুধু পড়াশোনার উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না, সিজিপিএ হঠাত করে কমে গেলেও হতাশ হতে হবে না। অনেকেই বলে, সিজিপিএ কোন ব্যপারই না! কথা সত্য, কিন্তু শুধুমাত্র যখন তোমার অন্যান্য স্কিল খুব বেশি থাকবে।
৭। একজন সিনিয়র গাইড ঠিক করে রাখ
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানুষটা খুব বেশী কাজে আসে, তিনি হচ্ছে একজন ঘনিষ্ঠ সিনিয়র। বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজলেই তোমার সাথে কোনোভাবে রিলেটেড এরকম একজনকে অন্তত পেয়ে যাবে। রিলেটেড বলতে হতে পারে তোমার একই স্কুল কলেজের, কিংবা তোমার পরিচিত কারো পরিচিত কেউ। এমন একজন সিনিয়রই দেখবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময় হয়ে যাবে তোমার লাইফ সেভার!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
৮। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ কর
এই সময়টা কোথাও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য পারফেক্ট কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়ে যাওয়ার পরে অনেক ধরণের প্রেশার চলে আসার পরে তেমন একটা অবকাশ পাওয়া যাবে না আর গেলেও সেই অবকাশে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার ইচ্ছাটা অত হয় না।
৯। ক্লাসমেটদের সাথে পরিচিত হও
ক্লাস শুরুর আগেই যাদের সাথে চার বছর কাটাতে যাচ্ছ, তাদের সাথে পরিচিত হয়ে নাও। এতে করে ক্লাস শুরুর পরে অনেক সুবিধা হবে আর নতুন করে পরিচিত হবার ঝামেলাও থাকবে না। আর তুমি জানোও না বিশ্ববিদ্যালয় এর শুরু থেকেই তুমি ঠিকমত ক্লাস করতে পারবে কিনা, যদি না পার, তখন এই পূর্ব পরিচিত সহপাঠীরাই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। আর কে জানে, এর মাঝে থেকে হয়ত তুমি চার বছরের যাতায়াতের সঙ্গীও পেয়ে যাবে!
১০। চার বছরের জন্য বাসার বাইরে যাচ্ছ?
যদি তোমার বিশ্ববিদ্যালয় তোমার নিজ শহরে না হয়, অর্থাৎ তোমার হলে, হোস্টেলে কিংবা মেসে থাকতে হয়, তাহলে এখনই তোমার সাথে কী কী নিবে তা ঠিক করে রাখ যাতে শেষ মুহুর্তে ঝামেলা না হয়। নিজের ভালর জন্যই রান্নাটা একয় মাসে খুব ভাল করে শিখে নিতে হবে কারণ অন্য জায়গা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এই খাবারের সমস্যা নিয়েই।
সবশেষে, এমন সময় সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে নিজের পরিবার এবং স্কুলের বন্ধুদের সাথে অনেক সময় কাটানো। কারণ যেমনটা শুরুতে বলেছি, এমন ছুটি এরপর খুব কম আসবে আর কাছের মানুষদের নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগটা আগের মত পাওয়া যাবে না। সবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সুন্দর হোক, অনেক শুভ কামনা।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন