পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
লেখা শুরু করবো ছোট্ট একটি গল্প দিয়ে:
আরবের এক প্রতাপশালী ব্যবসায়ী, দরিয়ার এপার-ওপার তার সম্পদের সাম্রাজ্য তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন চল্লিশ বছর ধরে, জীবনের গোধূলিলগ্নে এসে আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অবসরে যাবার, শেষ জীবনটুকু স্রষ্টার আরাধনায় কাটিয়ে দেওয়ার।
পরিবার বলতে আছে কেবল দুজন পুত্র, তাদের ডাকলেন তিনি ব্যবসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে।
“আমার সমস্ত ব্যবসা পরিচালনার দায়ভার আজ আমার কনিষ্ঠ পুত্রের উপর অর্পণ করছি।” ঘোষণা করলেন তিনি।
বড়ছেলের মুখে রা সরে না। তাকে ডিঙিয়ে ছোটভাইয়ের হাতে যাচ্ছে পুরো সাম্রাজ্য? ক্ষোভে-অপমানে মুখ লাল হয়ে এলো তার, থমথমে কণ্ঠে জানতে চাইলো কেন এমন সিদ্ধান্ত।
বৃদ্ধ ব্যবসায়ী উত্তরে বললেন, “তুমি যাও আমাদের যোগানদারের কাছে। জেনে আসো কী কী নতুন দ্রব্য সরবরাহ করতে পারবে সে।”
বড় ছেলে ছুটে বেরিয়ে গেলো, ফিরে এলো কিছু সময় পর, দায়িত্ব পালনের গর্বে বুক ফুলিয়ে বললো, “তিন ধরণের শস্য রয়েছে তাদের কাছে সরবরাহ করার মতো।”
বৃদ্ধ এবার একই কাজ দিয়ে পাঠালেন ছোট ছেলেকে, ফিরে এলো সেও কিছুক্ষণ পর। “সরবরাহ করার জন্য রয়েছে তিন রকম শস্য। প্রথম দুই প্রকার শস্য বেশি পরিমাণে নিলে তারা মূল্যছাড় দেবে বলেছে। নতুন জায়গা থেকে আহরণ করছে তারা, আমরা এখন কিছু পুঁজি খাটালে বেশ বড় অঙ্কের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” জানালো সে।
বৃদ্ধের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কথা শুনে, বড় ছেলের দিকে ফিরে বললেন, “বুঝতে পেরেছ কেন তোমার ছোটভাইয়ের হাতে তুলে দিচ্ছি এ ব্যবসার দায়িত্ব?”
দুই ভাইয়ের মাঝে কেবল একটি পার্থক্য ছিল- ছোট ভাইয়ের একটি গুণ, যা তাকে এনে দিল সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব, সেই গুণটি হচ্ছে- উদ্যোগ।
অদৃশ্য বাধার দেয়াল
আমাদের চারপাশে একটা অদৃশ্য দেয়াল আছে। চারদিকে দেয়ালে ঘেরা সেই বাক্সের ভেতরে থেকেই কেটে যায় আমাদের জীবন। সেই বাক্সটি কী দিয়ে তৈরি জানো? হতাশা, আলস্য, ব্যর্থতা -এমন সব নেতিবাচক অনুভূতি দিয়ে। তুমি যত বেশি হতাশায় ভুগবে, আলসেমিতে দিন পার করবে, দেয়াল ততোই উঁচু হতে থাকবে, ঢেকে দিতে থাকবে তোমার আকাশ।
খুব কম মানুষই সেই দেয়ালের ওপারে অকল্পনীয় সম্ভাবনার জগতে উঁকি দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। বেশিরভাগ মানুষ দেয়ালের ভেতর নিরাপদেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়।
সেজন্যই আমরা অনেকে পড়ালেখা করি কেবল পরীক্ষা পাসের জন্য, অথচ যেখানে পড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখা। কাজ করি কেবল যতটুকু না করলেই নয়, পুরোটা সময় মাথায় ঘুরতে থাকে, “কখন ছুটি হবে?”
কাজ থেকে, পড়া থেকে ছুটি নেওয়ার এই চিন্তা তোমাকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, সেটি কি বুঝতে পারছো?
ভেঙ্গে দাও মনের দেয়াল!
একটা কিছু করার আগে আমাদের অভ্যাস হচ্ছে বসে বসে ভাবা। ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় সময়, কাজ আর করা হয় না। আমরা ব্যর্থতাকে ভীষণ ভয় পাই, তাই কোন কাজ করার আগে একশবার ভেবে দেখি কোন ঝক্কিঝামেলা আছে নাকি তাতে! চারপাশ থেকে সবাই এসে বলে, “তোমাকে দিয়ে তো হবে না এ কাজ!” মনের বাঘ আরো পেয়ে বসে তখন, ভাবনা আর উদ্যোগে পরিণত হয় না। এই ভাবনার দেয়ালটিকে গুঁড়িয়ে দিতে জানতে হবে। সবসময় তুমি সফল হবে না জানা কথা, কিন্তু তাই বলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই হার মেনে নিলে কীভাবে হবে?!
যখন তুমি ভয়-ভাবনার দেয়ালটিকে ভেঙে ফেলবে, দেখবে জীবনটা যেন নতুন করে শুরু হবে, নতুন আঙ্গিকে উপভোগ করতে শিখবে তুমি সবকিছু।
উদ্যোগী হওয়ার তিনটি উপায়
উদ্যোগী হওয়ার কাজটি মোটেও সহজ নয়, সেজন্যই নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা ঠিক করার এক সপ্তাহের মাথায় সেগুলো ভেঙ্গে ফেলে ৯৫% মানুষ!
উদ্যোগ সফল করতে হলে সেটির পেছনে লেগে থাকতে হবে অনবরত
তাই উদ্যোগী হতে সাহায্য করবে তিনটি উপায়, সফল মানুষরা এগুলো মেনে চলেন জীবনে চলার পথে।
১. তোমার সমস্যার দায় নিজের কাঁধে নিতে শেখো
ভুল করলে সেটা মেনে নেবার মানসিকতা থাকতে হবে। আমাদের অভ্যাস হচ্ছে দোষগুলো সবসময় অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, সেটি করে আদৌ কি কোন লাভ হয়? পরাজয় মানে পরাজয়, সেটার জন্য কে দায়ী কার কারণে হয়েছে সেটা কেউ দেখতে যাবে না। তোমার পরীক্ষা খারাপ হলে সেটার পরিণতি একান্তই তোমাকে ভোগ করতে হবে, কেউ জানতে চাইবে না কেন খারাপ হয়েছিল। তাই কোন সমস্যা ঘটলে কে করেছে কার জন্য হয়েছে সেটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কাজ করো।
২. তোমার যেটুকু করার আছে, শুধু তা নিয়েই কাজ করো
সবচেয়ে কমন যেই জিনিসটি দেখা যায় আমাদের মাঝে- পরীক্ষা দিয়ে এসে কয়টা উত্তর সঠিক হয়েছে সেটা ঘেঁটে ঘেঁটে মিলানো, পরীক্ষা খারাপ হলে টেনশনে অস্থির হওয়া। অথচ উচিত ছিল এই সময়টুকু পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কয়টি উত্তর মিলেছে, পরীক্ষা ভাল না খারাপ হয়েছে সেটি বের করলে কি তোমার ফলাফল পরিবর্তিত হয়ে যাবে?
তাই সবসময় যেটুকু তোমার নিয়ন্ত্রণে আছে, কেবল সেটুকু নিয়েই মাথা ঘামাও। যা তোমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে চিন্তা করার কোন মানে হয়? দুশ্চিন্তা কখনোই সাহায্য করে না কোন কাজে, তাই আজ থেকে বন্ধ সবরকম দুশ্চিন্তা।
৩. লেগে থাকতে শেখো
পৃথিবীর ৯০% উদ্যোক্তা ব্যর্থ হন তাদের প্রকল্পে, তাহলে বাকি ১০% কীভাবে সফল হন? তারা কোনদিক থেকে আলাদা বাকিদের থেকে?
উত্তর একটাই- ধারাবাহিকতা।
একটি কাজ করতে নেমে প্রথম কয়েকদিন খুব উৎসাহ দেখিয়ে তারপর অনিয়মিত হয়ে পড়া বেশিরভাগ মানুষের বৈশিষ্ট্য। এভাবে কখনো সাফল্য আসে না। উদ্যোগ সফল করতে হলে সেটির পেছনে লেগে থাকতে হবে অনবরত। একটা করে শব্দ শিখেই একদিন একটি ভাষা শিখে ফেলতে পারবে তুমি, কিন্তু মাঝপথে হাল ছেড়ে দিলে প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে যাবে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন