সফলদের স্বপ্নগাঁথা: জেফ বেজোস যেভাবে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হলেন

May 9, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!

 

খবরটা ইতোমধ্যেই সবাই জেনে গেছে- টানা আঠারো বছর পৃথিবীর শীর্ষ ধনীর অবস্থান ধরে রাখা বিল গেটসকে টপকে জেফ বেজোস দখল করে নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ ধনীর খেতাব। ছোটবেলা থেকেই বিল গেটসের গল্প শুনে এসেছি আমরা, কিন্তু জেফ বেজোসের এই রাজকীয় উত্থানের গল্প অনেকেরই জানা নেই। ওয়াল স্ট্রিটের চাকরি থেকে বই বিক্রেতা- হরেক পেশায় হরেক প্রচেষ্টায় তাঁর আজকের কিংবদন্তী হয়ে ওঠার পথে গল্প রয়েছে অনেক। তেমনই কিছু গল্প নিয়ে এই লেখাটি।  

জেফ বেজোস খ্যাতিমান হয়েছেন আমাজনের (Amazon.com) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। আজকের এই অনলাইন শপিং পদ্ধতির জনক তিনিই। তিনিই প্রথম অন্তর্জালে কেনাকাটা চালু করেন আমাজন প্রতিষ্ঠা করে।

শৈশবের গল্প4 5

তাঁর পুরো নাম বেশ খটমটে- Jeffrey Preston Jorgensenlit। তিনি ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। বিয়ের বছরখানেক পরেই তাঁর বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে । বেজোসের শৈশব কাটে সৎ বাবার আশ্রয়ে। ‘বেজোস’ নামটি তিনি সেখান থেকেই পেয়েছেন।

ছেলেবেলায় তাঁর মনন গঠনে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখেন দাদু লরেন্স প্রিস্টন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এটোমিক এজেন্সি কমিশনের আঞ্চলিক ডিরেক্টর ছিলেন। দাদু তাঁর মনে প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ গড়ে তোলেন, কম্পিউটারের গল্প শোনান। দাদুর কারণেই বেজোস কম্পিউটারের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। যেটা পরবর্তীতে শুধু তাঁর একার নয়, বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জীবনকে বদলে দিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

প্রযুক্তিপ্রেমী বেজোস ছোটবেলা থেকেই দারুণ কৌতূহলী ছিলেন চারপাশের জগত কীভাবে কাজ করে সেটি নিয়ে জানতে। প্রায়ই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খুলে দেখেশুনে আবার জোড়া লাগিয়ে দিতেন। নষ্ট যন্ত্র সারিয়ে তুলতে ছিলো তাঁর জুড়ি মেলা ভার! এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতেই তিনি নানারকম জিনিস তৈরি করে ফেলেন- সোলার কুকার, হোভারক্রাফট, রোবট, ইলেকট্রিক এলার্ম ইত্যাদি বানিয়ে ফেলেন একদম নিজে নিজে! নিজের তৈরি করা এলার্ম একটি সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে কাজে লাগাতেন।

যাত্রা হলো শুরু

জেফ কর্মজীবন শুরু করেন ফিটেল নামের একটা টেলিকমিউনিকেশন সংস্থায়। তারপর একটি ব্যাংকার্স ট্রাস্টে চাকরি নেন। সেখানেও মন টিকলো না। এরপর তিনি ওয়াল স্ট্রিটে D.E. Shaw নামের একটা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে যোগদান করেন। বেজোস চাকরি থেকে মোটা অঙ্কের বেতন পাচ্ছিলেন, কিন্তু মনে শান্তি ছিলো না।

তিনি ঠিক করলেন নিজেই একটি ব্যবসা দাঁড় করাবেন। ইন্টারনেটে বই বিক্রি করার একটি মাধ্যম তৈরি করলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ, ওয়াল স্ট্রিটকে বিদায় জানিয়ে নেমে পড়লেন স্বপ্নপূরণে, তৈরি হলো আমাজনের।


entrepreneurship, life hacks

আরো পড়ুন: যে গুণটি বদলে দেবে তোমার জীবন


AMAZON.TOAST!

১৯৯৭ সালের কথা, আমাজন তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমাজনের সাফল্য দেখে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও এগিয়ে আসছে প্রযুক্তি ব্যবহারে। আমাজনের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক বড় একটি কোম্পানি- বার্নস এন্ড নোবল তাদের সাইট তৈরি করলো। সবার মাঝে সাড়া পড়ে গেলো। একজন গবেষক তো লিখেই ফেললেন প্রবন্ধ- ‘আমাজন এখন টোস্ট হয়ে যাবে। আমাজন ডট কম হবে আমাজন ডট টোস্ট। বার্নস এন্ড নোবল জ্যান্ত গিলে খাবে আমাজনকে।’ সবাই ব্যাপারটি নিয়ে হাসাহাসি করছে। ৩০ হাজার কর্মী নিয়ে গঠিত সেই কোম্পানি, ৩ বিলিয়ন ডলার আয় কেবল বিক্রিতেই আসে।

জেফ বেজোস এই অবস্থায় একটি মিটিং ডাকলেন আমাজনের সব কর্মীকে নিয়ে। প্রধান কর্মকর্তা থেকে পিয়ন, সবাই। একটি রুমে মিটিং হলো। জায়গা সংকুলানে সমস্যা হয়নি, কারণ তখন আমাজনের মোট কর্মী ছিলো সাকুল্যে ১২৫ জন! বেজোস বললেন, ‘দেখুন আপনারা সবাই একটি ভীতিকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি।

ঘরে বসে Spoken English

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • জব ইন্টারভিউ, ভাইভা, প্রেজেন্টেশন, দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্ট মিটিং, কলিগদের সাথে আলাপচারিতা, পাবলিক স্পিকিং, অপরিচিত কারো সাথে কথা শুরু করা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইংরেজিতে কথা বলা
  • আপনারা অবশ্যই ভীত হবেন, ভয়ে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাবে- কিন্তু সেটি বার্নস এন্ড নোবলের জন্য নয়, আমাদের ক্রেতাদের জন্য! আমাদের ক্রেতারা আমাজনের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা সেটি নিয়ে আপনারা সারাক্ষণ ভাববেন। এছাড়া কোন কোম্পানি কী করছে সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন মানে হয় না। আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকলে আমাদের বিজয় হবেই!’

    সবাই সেদিন তাদের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন, তার ফলাফল তো সবার জানাই!

    বেজোসের বিখ্যাত হাসি!

    jeff bezos 1490941882

    একবার হার্ভার্ড থেকে গবেষকরা এলেন বেজোসের ইন্টারভিউ নিতে। চশমা নাকের ডগায়, পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল, ঢোলা স্যুট পরা গবেষক- অনেক কর্পোরেট কাঠখোট্টা একটি ইন্টারভিউ হবে সবাই ভেবেই নিয়েছে। বেজোসের স্ত্রী এসে বললেন, ‘আপনাদের এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। আরাম করে বসুন। আমি বাজি ধরে বলতে পারি বেজোস ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের ভেতর অন্তত একবার ঘর কাঁপিয়ে হাসবে!

    বেজোস সবকিছুতেই অভিনব সব কর্মপন্থা অবলম্বন করেন

    এবং সত্যিই তাই! বেজোস সবসময়ই এমন ফূর্তিবাজ হিসেবে পরিচিত। Very SINCERE, but Never SERIOUS. কাজকে যেমন অসম্ভব আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করেন, তেমনি কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজে নিতেও ভুলেন না। ইউটিউবে ‘Jeff Bezos laugh’ সার্চ করলেই দেখতে পাবে তাঁর বিচিত্র হাসির বাহার! এই হাসির জোরেই সবাইকে মাতিয়ে রাখেন তিনি।

    বেজোস নিজেই স্বীকার করেন তাঁদের অফিসের পরিবেশ অনেকটাই এলোমেলো। হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, হঠাত বেজোস কারো কথার সূত্র ধরে বলে উঠবেন, “আরে বলো না, আমার সাথে সেদিন যেই কাহিনী ঘটেছে…’’ এই শুরু হয়ে গেলো মজার কোন গল্প, সাথে তাঁর গা কাঁপিয়ে হাসি! অফিসের সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি। এরই মাঝে কেউ এসে হাল ধরতে হয়, “হ্যা, বেজোস যথেষ্ট হয়েছে। এবার কাজের কথায় আসা যাক!’’

    ঘরে বসে Freelancing

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত গাইডলাইন।
  • আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (যেমন: Upwork, Fiverr) এ নিজের প্রোফাইল তৈরি এবং কাজ পাবার উপায়।
  •  

    Two Pizza Rule

    বেজোস সবকিছুতেই অভিনব সব কর্মপন্থা অবলম্বন করেন। যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং, কোটি কোটি ডলারের লেনদেন- সবই হবে ‘দুই পিজ্জা নীতি’তে! বেজোস প্রমাণ সাইজ দুটি পিজ্জা অর্ডার দিবেন, এবং সেগুলো খেতে খেতে মিটিং হবে। কিন্তু মানুষ তো অনেক, দুটি পিজ্জায় কি সবার হবে?

    এখানেই মজা, বেজোসের নীতি হচ্ছে দুটি পিজ্জা খাওয়ার পরিমাণ মানুষ নিয়েই মিটিং হবে। খুব অল্প কয়জন থাকবে। স্যুট-টাই পরা কর্পোরেট ভারিক্কি কথাবার্তা চলবে না। একদম গল্পচ্ছলে আগাবে কাজ। তিনি বিশ্বাস করেন ছোট টিম অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে।

    ‘না’ বলতে শেখা

    বেজোসকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন, অসম্ভব ক্ষমতাধর একজন মানুষ। আপনার মুখের উপর কেউ না বলার সাহস করে আমাজনে?’

    জেফ বেজোস হেসে বললেন, ‘না বলতে পারে না এমন কারো নামই তো মাথায় আসছে না!’

    আমাজনের পরিবেশটিই এমন। আমাদের দেশে যেমন ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট!’ নীতি চলে, আমাজনে কখনোই এমন চলে না। একজন পিয়নও গিয়ে বেজোসকে বলতে পারে, ‘মি. বেজোস, আমার মনে হয় অমুক কাজটি এভাবে করলে আরো ভাল হতে পারে।’ সেখানে কোন ইগো নেই, খবরদারি দেখানোর মানসিকতা নেই।

    কাজের আনন্দ, সবার মাঝে বন্ধন, আর ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার মানসিকতাই জেফ বেজোসকে করে তুলেছে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ব্যক্তি।

    এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মেহের আফরোজ শাওলী


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন: 



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


    ১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/

    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন