টি-শার্ট ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা টি-শার্ট ডিজাইনিং টিপস

February 15, 2023 ...

সুন্দর টি-শার্ট কালেকশনে রাখা মারিয়ার প্রিয় শখ। পছন্দের সব বাংলা ব্যান্ডের গানের লাইন কিম্বা লোগো দিয়ে টি-শার্ট ওর থকা চাই। মাঝেসাঝেই কিছু কিছু টিশার্ট দেখে মনে হয় এই ডিজাইনটা একটু অন্যরকম হলে ভালো হতো, ওই টি-শার্টের লেখার ফন্ট আর রংটা বদলে দিলে ফাটাফাটি একটা ব্যাপার হতো। একদিন বন্ধু জুবায়ের বলেই ফেললো, এত আইডিয়া মাথায় থাকলে নিজের টি-শার্ট নিজেই ডিজাইন করে ফেল না!

আসলেই তো! আইডিয়াটা মন্দ না। নিজের টি-শার্ট নিজে ডিজাইন করলে কী মজাটাই না হবে! ব্যাস, মারিয়া নেমে পড়লো টি-শার্ট ডিজাইনের খুঁটিনাটি জানতে। নিজের ল্যাপটপে বেসিক কাজ শিখতে শিখতেই আইডিয়া আর মনের মাধুরী মিশিয়ে টি-শার্ট ডিজাইন করলো কয়েকটা। এরপর বঙ্গবাজার থেকে প্রিন্ট করিয়েও আনলো দামদর করে।

ইউনিউক ডিজাইন আর রঙের কম্বিনেশন দেখে বন্ধুরা একবার পিকনিকে কয়েকজন মিলে অর্ডার করে নিলো মারিয়ার ডিজাইন করা টি-শার্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দর ছবি দেখে এরপর আরো কিছু জায়গার অর্ডার আসলো। এভাবে অর্ডার আসা শুরু করলো, মারিয়াও উৎসাহ পেলো। সর্বোচ্চটা দিয়ে নেমে পড়লো এই খাতে। টি শার্ট ডিজাইন করে আয় করতে নেমে এখন মারিয়া ছোটখাটো একটি ব্র্যান্ডও দাঁড় করে ফেলেছে।
মারিয়ার মতো যাদের মাথায় নতুন নতুন ডিজাইনের আইডিয়া ঘুরঘুর করে, তারা পড়ে নিতে পারো এই লেখাটি। এই লেখায় আলোচনা করবো টি-শার্ট ডিজাইনের শুরু থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রো টিপস, আর টি শার্ট ডিজাইন করে আয় এর উপায়।

T-Shirt Design করে Freelancing

প্রফেশনাল গাইডলাইন, ইলাস্ট্রেটর টুলস সহ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী টি শার্ট ডিজাইন করে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যাবতীয় টিপস ও ট্রিক্স নিয়েই আমাদের এই কোর্স।

 

কেন শিখবে টি শার্ট ডিজাইন

অনেকে গ্রাফিক ডিজাইন শেখার শুরু করে টি-শার্ট ডিজাইন করা থেকে। টি-শার্ট ডিজাইন গ্রাফিক ডিজাইনের একটা সহজ দিক। এডোবি ইলাস্ট্রেটর এর কয়েকটা নির্দিষ্ট দিক আয়ত্ত করে ফেললেই হয়ে গেল  টি-শার্ট ডিজাইন  শেখা। মানে হচ্ছে, কোমর বেঁধে নামলে টি-শার্ট ডিজাইন শিখতে সময় লাগে মাত্র এক থেকে দুই মাস। এই এক-দুই মাসের পরিশ্রম দিয়ে তুমি একটা সম্ভাবনাময় স্কিল আয়ত্ত করে ফেলছো, ব্যাপারটা সুন্দর না?

টি-শার্ট ডিজাইন অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও এর মূল্য কিন্তু মোটেই কম না। এই এক টি-শার্ট ডিজাইন করা থেকেই অনেকে অনেক বড় ব্র্যান্ডের শুরু করেছে।  টি-শার্ট ডিজাইন করা শিখে তুমি নিজের একটা অভিনব কালেকশান রাখার পাশাপাশি পরিবারের আর বন্ধুদের জন্যও নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইন করে টি-শার্ট বানিয়ে নিতে পারবে। এমনকি শুরু করে ফেলতে পারবে একটা ছোটখাটো ব্যবসা। টি শার্ট ডিজাইন করে আয় এখন বেশ প্রচলিত। আর ডিজাইনার টি-শার্টের জনপ্রিয়তা কেমন, তা তোমাকে নতুন করে না বলি।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্স টি শার্ট ডিজাইন করেও অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সৃজনশীলতা আর দক্ষতাকে কাজে লাগালে টি-শার্ট ডিজাইন হতে পারে একটা চমৎকার আয়ের উৎস।

টি শার্ট ডিজাইন শিখে অনলাইনে নিজের ব্যবসা:

মারিয়ার মতো অনেকেই টি-শার্ট ডিজাইন করে অনলাইনে নিজের ব্যাবসা দাঁড় করেছে। অনলাইনকে বলতে পারো বর্তমানে মার্কেটিং এর ব্রহ্মাস্ত্র। ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রায় সব ধরণের প্রচার-প্রসারই অনলাইন কেন্দ্র করে। পৃথিবীর সবথেকে বড় কোম্পানী থেকে শুরু করে ছোটখাটো ঘরোয়া ব্যবসা, অনলাইন নির্ভর সবাই। আর চমৎকার এই মাধ্যম ব্যবহার করে তুমিও শুরু করতে পারো টি শার্ট ডিজাইন করে আয়। নিজে ডিজাইন করে এরপর সুবিধামতো দাম দিয়ে পাইকারী বিক্রেতার কাছে প্রিন্ট করে নিতে পারবে তোমার নিজস্ব টি-শার্ট।

ঢাকা সহ অন্যান্য শহরেও টি-শার্টের ছাপাখানা আছে। একটু খোঁজ করে কথাবার্তা বলে নিতে পারলেই পেয়ে যাবে ভালো একটি চুক্তি। এক্ষেত্রে পরিচিত কেউ থাকলে তাদের কাছেও বিস্তারিত পরামর্শ নিতে পারো। নিজের ডিজাইন করা টি-শার্ট আর ঠিকঠাক প্রচার-প্রচারণা দিয়ে তোমার নিজস্ব একটা ছোটখাটো ব্র্যান্ডও দাঁড় করে ফেলতে পারবে। বলা তো যায়না, তোমার আজকের এই ছোট ব্র্যান্ড হয়ে যেতে পারে দশ বছর পরের বিশ্বসেরা একটা প্রতিষ্ঠান!

টিশার্ট
Photo: Facebook

উপরের ছবিটি ফেসবুক মার্কেটপ্লেস থেকে নেয়া ঢাকা ভিত্তিক একটি টি-শার্ট ব্র্যান্ড Heavy Metal T-shirt এর । Creafty Ink, Wear DHK, Dacca সহ আরো অনেক দেশি টি-শার্ট ব্র্যান্ড এখন দেশ ছাপিয়ে বেশ ভালো করছে। এই ব্র্যান্ডগুলোর স্বপ্নদ্রষ্টা কিন্তু একদিন তোমার মতোই ছিলেন।

তোমার কাজ যদি আকর্ষণীয় হয়, তাহলে তোমার ছোট একটা প্রচারও জনপ্রিয়তা পেতে বেশি সময় লাগবেনা। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে নিশ্চয়ই বড় বড় টি-শার্ট ব্র্যান্ডের এডভার্টাইজমেন্ট দেখেছো? এদের অধিকাংশের শুরু মারিয়ার মতো একজনের ছোট্ট একটা স্বপ্ন, আর তার পেছনের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে।

টি শার্ট ডিজাইন শিখে ফ্রিল্যান্সিং:

এখনই নিজের ব্র্যান্ড খোলার বড়সড় প্ল্যান না থাকলে টি শার্ট ডিজাইন করে আয় করার উপায় হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে তোমার জন্য একটা চমৎকার অপশন। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট যেমন Fiverr, Upwork ইত্যাদিতে কাজ করে দেখতে পারো। প্রথম প্রথম বেশি সাড়া হয়তো পাবেনা, কিন্তু ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

Freelancing
Photo: Fiverr

উপরের ছবিটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট Fiverr এর টি-শার্ট ডিজাইন সেগমেন্ট এর।  আমাদের দেশের কয়েকজন ডিজাইনারের প্রোফাইল, তাদের কাজের দামসহ এখানে দেয়া আছে। এখান থেকে ধারণা নাও যে প্রতিটি টি-শার্ট ডিজাইনে কী রকমের আয় আসতে পারে। অবশ্য তোমার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে এই আয় ডিজাইন প্রতি দুই-আড়াইশো ডলার পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে!

টি শার্ট ডিজাইন কীভাবে করে?

টি-শার্ট ডিজাইন করা বেশ মজার একটা কাজ হলেও, প্রাথমিকভাবে তোমার কাছে এটি চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। এই কাজের সাফল্য নির্ভর করে কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর। নিচে টি-শার্ট ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো আলোচনা করছি, যেগুলো তোমাকে সফল একজন টি-শার্ট ডিজাইনার হতে সাহায্য করবে।


আরও পড়ুন:

লোগো ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা লোগো ডিজাইনিং টিপস

ওয়েব ডিজাইন কী? জেনে নিন ৯টি অসাধারণ ওয়েব ডিজাইন স্ট্র্যাটেজি


১) সবার আগে ঠিক করে ফেলো কী ধরণের টি-শার্ট চাও:

সবার আগে নির্ধারণ করে নাও তোমার ডিজাইন করা টি-শার্টটি  থেকে তুমি কী চাও। তুমি কি তোমার টি-শার্ট শুধুমাত্র তোমার মার্কেটিং এর জন্য করছো? কোনো নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যে করছো? কোনো ঐতিহাসিক দিন কিংবা ঘটনা মাথায় রেখে করছো?  নিজস্ব কোনো একটা আইডিয়া থেকে করছো?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের উপর ভিত্তি করে তোমার টি-শার্টের নীল নকশা মাথায় সাজিয়ে নাও। কোনো থিম থাকলে সেটা কেন্দ্র করে ডিজাইন চিন্তা করো। টি-শার্ট কেমন হবে এটা কল্পনা করে নিতে পারলে ধরে নাও তোমার কাজ অনেকখানি এগিয়ে গেছে।

২) খসড়া ডিজাইন সাজিয়ে নাও:

ঠিক করে নাও তোমার টি শার্ট এ তুমি কী লোগো বসাবে, কোন রঙ এর সাথে কোন রঙের কনট্রাস্ট করবে, কোন ফন্ট কীভাবে ব্যবহার করবে। এই ধাপটা টি শার্ট বানানোর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য দরকার হলে সময় নিয়ে কাজটি করবে। এই ধাপটা আরও বেশি জরুরী হয়ে দাঁড়ায়, যখন তুমি নির্দিষ্ট একটা উদ্দেশ্য বা ঘটনা উপলক্ষ্যে টি-শার্ট বানাচ্ছো।

মাথায় রাখতে হবে যেই উদ্দেশ্যে টি-শার্ট বানানো হচ্ছে, সেটা যেন ঠিক থাকে।  ধরো একটা বুক রিডিং ক্লাবের বার্ষিক আলোচনা সভার জন্য টি-শার্ট অর্ডার এসেছে। তোমার টি-শার্ট থেকে যেন বনভোজনের আমেজ না আসে!

৩) প্রতিটি আইডিয়া এক একটি অনুপ্রেরণা: 

টি-শার্ট ডিজাইন একটা সৃজনশীল ব্যাপার। লক্ষ্য করলেই দেখবে, মাত্র কয়েক বছর আগে থেকেও বর্তমানের ‘ট্রেন্ডি’ ডিজাইনগুলোয় পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস আর চলমান বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার ওপর ভিত্তি করে হতে পারে। আবার ভৌগলিক অবস্থানভেদেও টি-শার্ট এর একেকরকম ডিজাইনের চাহিদা থাকতে পারে। তুমি কাদের জন্য ডিজাইন করছো, কেন ডিজাইন করছো এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে হবে।

রাস্তায় চলতে-ফিরতে কিংবা অনলাইনে, কতোশত ডিজাইনই তো দেখি আমরা সবাই। এগুলো থেকে আমাদের মনে নতুন কোনো আইডিয়া আসে। এই আইডিয়াগুলোও মাথায় রাখা যেতে পারে।সেরা একটি টি-শার্ট ডিজাইন করার ক্ষেত্রে তোমার আগের ডিজাইনগুলোয় যেমন চোখ বুলিয়ে নিতে হবে, তেমনি তোমার নিজের আগের কোনো আইডিয়া থাকলে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

আগের ডিজাইন আর আইডিয়া তো রিভিশান দিয়ে নিলে, এবার তোমার কাজ হচ্ছে সেগুলোর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন কী করা যায় তা চিন্তাভাবনা করা। তোমার সৃজনশীলতাকে নতুন ছাঁচ দিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে পুরো একটা মহাবিশ্ব তো আছেই! এখানের একটা বন্য মাশরুম থেকে শুরু করে রকেট সাইন্স, সবকিছুর আইডিয়াই তুমি কাজে লাগাতে পারবে। অনলাইনে হাজার হাজার ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে রাস্তায় পড়ে থাকা একটা গাছের পাতাও তোমার টি-শার্টের ডিজাইনে সাহায্য করতে পারবে। শুধু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, আর নতুন আইডিয়া পাওয়া মাত্র ভুলে যাবার আগেই টুকে রাখতে হবে।

৪) এবার কাজে নেমে পড়ো:

ডিজাইন নিয়ে মাথা ঘামানোর পর একটা সিদ্ধান্তে তো আসলে। এবার দেরি না করে কাজে নেমে পড়ো। আলসেমি যত করবে, মনে রাখবে ততো ক্ষতি হচ্ছে আর ভালো একটা টি শার্ট ডিজাইন পাওয়া থেকে তুমি দূরে সরে পড়ছো। এই কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আছে। যেমন;

  • ডিজাইন চুড়ান্ত করে ফেলা।
  • রঙ নির্ধারণ করা।
  • ছবি, গ্রাফিক ডিজাইনের মাপের দিকে খেয়াল রাখা।
  • সঠিক টাইপোগ্রাফি ব্যবহার।
  •  রঙ ফুটিয়ে তোলা।
  • সব ঠিক হলে ফ্যাক্টরিতে দিয়ে ফেলা।

Graphic Design করে Freelancing

এই কোর্সটি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করবে?

  • গ্রাফিক ডিজাইনের প্রয়োজনীয় টুল, থিউরি, প্রোজেক্ট ফাইল ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন।
  • প্র্যাক্টিসের জন্য একটি ফ্রি ডিজাউন কন্টেন্ট লাইব্রেরি।
  • দেশি-বিদেশি চাকরি কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে পারবেন।
  • AI ব্যবহার করে আইডিয়া বের করে ডিজাইন করতে পারা।
  •  

    ১০টি সেরা টি শার্ট ডিজাইন টিপস:

    অভিজ্ঞরা টি শার্ট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর রাখতে বলেন বেশ কিছু দিকে। এখানে তোমাদের এমন কয়েকটি প্রো-টিপস জানিয়ে দিচ্ছি।

    ১) ডিজাইনের সাইজ ঠিক করা:

    ডিজাইনের সাইজের ওপর টি-শার্টের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ নির্ভর করে। ডিজাইনের সাইজের কারণে একটা টি-শার্ট যেমন সুন্দর দেখাতে পারে, তেমনি ডিজাইন সাইজের কারণেই টি-শার্ট বাজে দেখাতে পারে। সাইজ কেমন হবে এটা নির্ভর করবে ডিজাইনের নকশার ধরণ কেমন তার ওপর, শেপের উপর, আর ডিজাইনটি তোমাকে কী মেসেজ দিচ্ছে তার ওপর। বড় ডিজাইন থেকে ছোট ডিজাইন সাধারণত বেশি ভালো দেখায়। লোগোর ক্ষেত্রে আবার আলাদা ধরণের সাইজ থাকে।

    টি শার্ট ডিজাইন
    Photo: Rushordertees

    প্রো টিপ:  ডিজাইনের কোন সাইজ কেমন দেখাবে এটা বাসায় বসে নির্ধারণ করার জন্য পছন্দমতো সাইজের ডিজাইন প্রিন্ট করে, সেটা টি-শার্টের ওপর বসিয়ে দেখো। এক পাতায় ডিজাইন না ধরলে, দুই পাতায় অর্ধেক করে প্রিন্ট করে জোড়া লাগিয়ে তারপর সেটা টি-শার্টের সাথে তুলনা করতে পারো।

    ২) সঠিক জায়গায় ডিজাইন বসানো:

    ডিজাইনের প্রিন্ট কোন জায়গায় বসেছে, তার উপরেও অনেকাংশে নির্ভর করে টি-শার্টের সৌন্দর্য। সাধারণত একেক মাপের প্রিন্টের জন্য একেক সাইজের টি-শার্টে নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। যেমন অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রিন্ট শুরুর আদর্শ জায়গা ধরা হয় কলার থেকে ৪ ইঞ্চি নিচে। ক্ষেত্রবিশেষে এই মাপ পরিবর্তন হয়।

    টি-শার্ট
    Photo: Rushordertees

    তবে অনেকে অনেকসময় নতুন কিছু করতে গিয়ে প্রিন্টের জায়গা অদল-বদল করেন।  খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না থাকলে আসলে এটা করা উচিত না, হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাই বেশি। আবার সাধারণত জ্যামিতিক উপায়ে সব টি-শার্টে কেন্দ্র লক্ষ্য করে যেমন প্রিন্ট করা হয়, তোমার টি-শার্টের ক্ষেত্রে সেটা ভালো নাও দেখাতে পারে।

    ৩) ফন্ট আর টাইপোগ্রাফির দিকে নজর রাখা:

    ভেবে দেখো তো, একটা টি-শার্ট এর দিকে তাকালে সবার আগে আমাদের কোন জিনিসটা চোখে পড়ে?

    ঠিক ধরেছো, এর লেখা। আর এই লেখার সাথেই জড়িত টাইপোগ্রাফি। টাইপোগ্রাফিকে আবার ফন্ট ভেবে ভুল বুঝোনা। টাইপোগ্রাফির একটা অংশ হচ্ছে ফন্ট। ফন্ট ছাড়াও টাইপোগ্রাফিতে শব্দের মধ্যকার ফাঁকা জায়গা, লেখার ডিজাইন লাইনের তারতম্য, একটা লেখাকে কোনো একটা নির্দিষ্ট শেইপ দেয়া ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়।

    টি শার্ট ডিজাইন
    Photo: Rushordertees


    টাইপোগ্রাফি দিয়ে লেখাকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। তুমি চাইলে গ্রাফিক ডিজাইনের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছামতো টাইপোগ্রাফি করতে পারবে। টাইপোগ্রাফির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন,

    • সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো যেন সবার আগে নজরে আসে।
    • অক্ষর যেন বিশাল বিশাল না হয়ে যায়। (মনে রাখতে হবে তুমি পাব্লিক বাসের সাইড ডিজাইন করছো না)
    • শ্যাডো ব্যবহার করলে তোমার ডিজাইন আরো প্রাণবন্ত মনে হবে। কিন্তু এটা বেশি বেশি যেন মনে না হয়।
    • ‘লাইন ব্রেক’ কোথায় করছো এটা লক্ষ্য রাখবে। তোমার লেখা মেসেজটা একজন কীভাবে পড়বে, এটা কিন্তু লাইন ব্রেকের ওপর নির্ভর করে।
    • কোনো ছবি থাকলে, ছবির সাথে লেখার ডিজাইনের সামঞ্জস্য আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

    ৪) কম্পোজিশনের দিকে আলাদা খেয়াল:

    ছোটবেলার আর্ট ক্লাসে গ্রামের দৃশ্য আঁকার সময় এই ব্যাপারটা আমরা সবাই শিখে এসেছি- আকাশের নিচে থাকবে নদী, তার পাশে কুঁড়েঘর, উপরে সূর্য। তাইনা? বড় হয়ে অনেক ক্ষেত্রে কাজে না লাগলেও তোমার টি-শার্ট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে এই সামঞ্জস্য বজায় রাখাটা বেশ জরুরী। টি শার্টে ছবি, লেখা, আঁকাআঁকি অনেক কিছুই থাকতে পারে। তোমার কাজ হচ্ছে এইটা নিশ্চিত করা যে সবগুলো উপাদান একটা আরেকটার সাথে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে, এবং সুন্দরভাবে মিলে গেছে।

    T-Shirt.
    Photo: Rushordertees

    এক্ষেত্রে তুমি টি-শার্ট ডিজাইন এর মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলতে পারো। ওইযে বলেনা, নিয়ম ভাঙতে হলে আগে নিয়ম শিখতে হয়! আস্তে আস্তে অভিজ্ঞ হয়ে গেলে তুমি তোমার সৃজনশীলতা আর অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নতুন কিছু করতেই পারো! তবে অবশ্যই এবং অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যে, তুমি তোমার টি-শার্টের মাধ্যমে মানুষের কাছে যেই বার্তা পৌঁছাতে চাইছো, সেই বার্তা ছাড়া অন্য কোনো বার্তা যেন মানুষের কাছে পৌঁছে না যায়!


    আরও পড়ুন:

    ওয়ার্ডপ্রেস কী? ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন যেভাবে

    লোগো ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা লোগো ডিজাইনিং টিপস


    ৫) ছবির মান ঠিক আছে তো?

    ক্রেতাদের মাঝে সচরাচর যে অভিযোগ দেখা যায় সেটি হলো- টি শার্টে ছবির মান ঠিক নেই। লো-কোয়ালিটি ইমেইজ ব্যবহার করা হচ্ছে এই সমস্যার মূল কারণ। এত কষ্ট করে ডিজাইন করা একটা টি-শার্ট প্রিন্ট করাবার পরে যখন ছবির কোয়ালিটির কারণে ঠিকঠাক ফলাফল পাওয়া না যায়, তখন ডিজাইনের তেমন মূল্যও থাকেনা।

    T-Shirtdesign
    Photo: Rushordertees

    সাধারণত ফুল সাইজের একটি ছবি ২০০-৩০০ ডিপিআই হলে আদর্শ ধরা হয়। কিন্তু অনলাইনে পাওয়া ছবিগুলো ৭০ ডিপিআই এর বেশি হয়না সচরাচর। এজন্য অনলাইন থেকে কোনো ছবি ডাউনলোড করে সেটা বসিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবেনা। একটা প্রশ্ন আসতে পারে, যে তাহলে অনলাইন থেকে নেয়া ছবি প্রিন্ট করবো কিভাবে? উত্তর হচ্ছে স্ক্যানিং। স্ক্যান করলে ছবির মান অটুট থাকে, ফলে প্রিন্টের সময় ফেটে যাওয়া কিংবা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকেনা।

    প্রো টিপ: ভেক্টর ডিজাইন ব্যবহার করলে ছবির কোয়ালিটি নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়না। এজন্য চেষ্টা করতে পারো ভেক্টর ডিজাইন ব্যবহার করার। শুধু তাই না, ভেক্টর ব্যবহার করে করা টি শার্ট ডিজাইন সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার আর নিখুঁত দেখায়।

    ৬) রঙ আর কন্ট্রাস্ট হওয়া চাই ঢঙের:

    টি-শার্টের সাথে তোমার করা ডিজাইন এর রং আদৌ মানাচ্ছে কিনা, এটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে টিশার্টের রঙের শেডের সাথে ডিজাইনের রঙ শেড মিলিয়ে বসিয়ে দেখবে। অনেক অপশন হাতে থাকলে প্রতিটি অপশন এপ্লাই করে দেখতে পারো। এই প্রিন্টের সাথে টি-শার্টের রঙের মানিয়ে যাওয়া কে বলে কন্ট্রাস্ট।

    টি শার্ট ডিজাইন করে আয়
    Photo: Rushordertees

    টি-শার্টের কন্ট্রাস্ট, রঙ দেখতে সুন্দর লাগাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্ক্রিন প্রিন্টের ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী কিংবা ডিজাইনার হিসেবে তোমার লক্ষ্য থাকবে চেষ্টা করা, যত কম ধরণের রঙ ব্যবহার করা যায়।  কারন যতো বেশি রঙ, প্রিন্ট করতে ততো বেশি টাকা। তবে থিম অনুযায়ী অনেক ধরণের রঙ ব্যবহার করতে হলে তো করতে হবেই।

    বর্ডার, হাইলাইট এর দিকে নজর রাখা:

    অনেকসময় দেখা যায় একটা টি-শার্টে কোনো একটা ছবি শুধুমাত্র কপি-পেস্ট করে প্রিন্ট করা। এটা দেখতে অতিরিক্ত সাদামাটা তো মনে হবেই, পাশাপাশি আনপ্রোফেশনালও মনে হতে পারে। অথচ সামান্য একটা বর্ডার জুড়ে নেয়া কিংবা শ্যডো যোগ করা, মাস্কিং করা অথবা হাইলাইট করার মাধ্যমে একটা সাধারণ ছবিকেও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো সামান্য মনে হলেও, টি-শার্ট প্রিন্টের পর দেখা যায় এগুলোর অবদান কতো বিশাল!

    টি শার্ট ডিজাইন
    Photo: Rushordertees

    ভুল কোনো বার্তা দিচ্ছোনা তো?

    বলা হয় একটা প্রচারিত শব্দ একটা তলোয়ারের মতোই ধারালো হবার ক্ষমতা রাখে। তুমি যেই টি-শার্ট পরছো, সেই টি-শার্ট কিন্তু পুরো পৃথিবীকে তোমার সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। সুতরাং অবশ্যই এবং অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে তোমার টি-শার্ট যেন কাউকে ভুল বার্তা না দেয়।

    টি-শার্টে বানান, শব্দ আর অন্যান্য সবকিছুর পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো মিথ্যা বা ভুল কথা লেখা হচ্ছে কিনা।

    জটিলতা এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ!

    সবসময় মনে রাখবে তোমার কাজ যতো বেশি সাদামাটা হবে, ততো বেশি জনপ্রিয়তা পাবে। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক এক বারে অল্প তথ্য নিয়ে খুশি থাকতে পছন্দ করে। ডিজাইন আর লেখালেখির বাড়াবাড়িতে যদি এমন অবস্থা হয় বোঝার জন্য কাউকে টানা তিন মিনিট তোমার ডিজাইনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে, তাহলে সেটা বরং অবচেতনে কারো বিরক্তির কারণ হতে পারে। তোমার টি শার্ট ডিজাইন এর মাধ্যমে তুমি যা বলতে চাইছো, তা যতোটা সম্ভব সহজ আর সাদামাটা ভাবে উপস্থাপন করো।

    এইতো, এই ব্যপারগুলো মাথায় রেখে শেখা শুরু করলে অল্পদিনেই তুমিও হয়ে উঠতে পারো একজন প্রো টি-শার্ট ডিজাইনার!

    কীভাবে শিখবে টি শার্ট ডিজাইন করা?

    টি-শার্ট ডিজাইন বর্তমানে একটি প্রতিযোগীতাপূর্ণ খাত। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি পোশাক হবার কারণে এর চাহিদার কমতি নেই। এজন্য মোটামুটি ধরেই রাখতে পারো তোমার মস্তিষ্কপ্রসূত আইডিয়া দিয়ে বানানো একটা টি-শার্ট ডিজাইন কখনোই বৃথা যাবেনা। শুধু দরকার সঠিক গাইডলাইন আর স্কিল।

    T-Shirt Design করে Freelancing

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • বেসিক থেকে শুরু করে প্রফেশনাল টি-শার্ট ডিজাইন করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের টুলস ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড টি শার্ট ডিজাইন করার কৌশল ও উপায়
  • প্রফেশনাল টি-শার্ট ডিজাইন পোর্টফোলিও তৈরি করার স্ট্র্যাটেজি
  •  

    টি-শার্ট ডিজাইন শেখার জন্য অনলাইনই একমাত্র ভরসা বলা যায়। অনলাইনে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলে ডজনখানেক কোর্স তুমি পেয়ে যাবে। এর মাঝে কয়েকটি বেশ জনপ্রিয় কোর্সও আছে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো, এগুলোর অধিকাংশই ইংরেজি কিংবা অন্য ভাষায়। এই ভাষার দেয়াল আমাদের অনেকের জন্য বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

    টেন মিনিট স্কুল এই সমস্যা সমাধানে তোমার জন্য নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ বাংলায়, সহজ ভাষায় বোঝানো একটি টি-শার্ট ডিজাইন কোর্স। এই কোর্সে তুমি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে পাবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারকে, যিনি তোমাদের বেসিক থেকে শুরু করে প্রফেশনাল টি-শার্ট ডিজাইন করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের টুলস, ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড টি শার্ট ডিজাইন করার কৌশল, টাইপোগ্রাফি ও ভিনটেজ টি শার্ট ডিজাইন, প্রফেশনাল টি-শার্ট ডিজাইন, প্রফেশনাল পোর্টফোলিও তৈরি করার স্ট্র্যাটেজি ইত্যাদিসহ টি-শার্ট ডিজাইনের আদ্যোপান্ত নিয়ে একটি সম্পূর্ণ কোর্স।

    কী, তাহলে এবার টেন মিনিট স্কুলকে সাথী করে টি-শার্ট ডিজাইনের রঙিন দুনিয়ায় নেমে পড়তে তুমি প্রস্তুত তো?


    জেনে নিন কিভাবে টি-শার্ট ডিজাইন করে একটি সফল ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হয়!

    সাব্বিরের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার গল্প

    আপনি যদি টি-শার্ট ডিজাইন করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান, তাহলে টেন মিনিট স্কুলের "T-Shirt Design করে Freelancing" কোর্সটি আপনার জন্য!

     


    সূত্র:

    How to Design a Great Looking Custom T-Shirt | BONFIRE Blog

    10 T-Shirt Design Tips for Better Results | Imri Meritt | RushOrderTees


    আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:



    IELTS-এর ফ্রি ক্লাসে জয়েন করতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে: Book Your Free Class @ 10MS English Centre, Uttara


    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


     

     

    আপনার কমেন্ট লিখুন