ছোট থেকেই কল্পের কম্পিউটার নিয়ে খুনসুঁটির অভ্যাস। তার উপর সে গুছানো জিনিস পছন্দ করে। দেখা যায় ক্লাসের পড়ার বিভিন্ন টপিকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে সেগুলো নিজের মতো করে অনলাইনে নোট করে, সাজায়, পছন্দমতো ছবি বসায়। একদিন ছোট ভাই তামিমের একটা ক্লাস প্রেজেন্টেশনের স্লাইড বানাতেও সাহায্য করলো। এডোবি ফটোশপ ব্যবহার করে সুন্দর ডিজাইন এঁকে দিলো স্লাইডগুলোর পাশে।
অতো মনোযোগ দিয়ে না করলেও দেখা গেল বেশ সুন্দর হয়েছে জিনিসটা। এক বন্ধু জানালো এডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এইসব কাজ করা আরও সুবিধার। আগ্রহ থেকে কল্প বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটারে আঁকাআঁকি শুরু করলো, পাশাপাশি শুরু করে দিলো ঘরে বসে গ্রাফিক ডিজাইন শেখা।
শিখতে শিখতেই একদিন সময় করে এডোবি ইলাস্ট্রেটরে বসে মায়ের বিজনেস পিচ ডেকে সুন্দর ডিজাইন এঁকে দিলো, আরেকদিন বন্ধুর একটা ছোট ব্যবসার জন্য টিশার্ট ডিজাইন করে দিলো। গ্রাফিক্স ডিজাইন কি করে আশেপাশের মানুষের আরো কাজে লাগানো যায় সেটার চেষ্টা করতে থাকলো। এভাবে আস্তে আস্তে বন্ধু আর পরিবারমহল থেকে বাইরেও পরিচিত হতে শুরু করলো কল্প। পেশাদার গ্রাফিক ডিজাইনিং শিখে কল্প এখন ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়েছে।
Graphic Design করে Freelancing
এই কোর্সটি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করবে?
কী, কল্পের গল্প থেকে কিছুটা ধারণা কি পেলে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে? না পেলেও সমস্যা নেই। এই লেখায় আলোচনা করবো গ্রাফিক ডিজাইনের আদ্যোপান্ত, আর কীভাবে এই স্কিলটি শিখে তুমিও হয়ে যেতে পারো একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার!
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক ডিজাইন নাকি গ্রাফিক্স ডিজাইন?
ব্যাপারটিকে কয়েকটি বাক্যের মাঝে সংজ্ঞায়িত করা বেশ কঠিন। গ্রাফিক ডিজাইন কি-এর উত্তরে সহজভাবে বলা যায় কোনো একটা কনসেপ্ট বা ধারণাকে ছবি, ডিজাইন, শিল্প আর সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা। গ্রাফিক ডিজাইন বলতে আমরা অনেকে হয়তো বুঝি লোগো তৈরী করা কিংবা ওয়েবসাইট ডিজাইন করা।
অনেকে টেনেটুনে ইলাস্ট্রেটরে দুয়েকটা ব্যানার বানিয়েই নিজেকে ডিজাইনার দাবি করেন। এগুলো গ্রাফিক ডিজাইনের আওতায় পড়ে অবশ্যই, কিন্তু আদতে এর পরিসর অনেক বিস্তৃত।
গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে সবচাইতে বড় ভুল বোঝাবুঝিটা কোথায় জানো? একদম গোড়ায়, অর্থাৎ এর নামে। মজার ব্যপার না! এই স্কিলের কাজ করা মানুষের অধিকাংশই একে ডাকেন ভুল নামে। সবাই যেটাকে ‘গ্রাফিক্স ডিজাইন’ নামে জানে, সেটা আসলে গ্রাফিক ডিজাইন!
এই ব্লগ যেহেতু পড়তে এসেছো, আমি ধরে নিচ্ছি তুমি গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে আগ্রহী। আর আগ্রহের শুরু থেকেই শিখে নাও, যে সঠিক শব্দটা আসলে ‘গ্রাফিক ডিজাইন’, ‘গ্রাফিক্স ডিজাইন’ না!
যে ৬টি কারণে গ্রাফিক ডিজাইন শিখবে:
প্রযুক্তিনির্ভর আমাদের পৃথিবীর সাথে গ্রাফিক ডিজাইন একদম ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এই জিনিস কোথায় নেই? সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যেই টুথপেস্ট দিয়ে তুমি ব্রাশ করো, সেটার মোড়ক থেকে শুরু করে টিভিতে, অনলাইনে যত এডভারটাইজমেন্ট দেখি, সুপারশপের লোগো থেকে স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিন- সবকিছুতেই আছে। এমনকি তোমার প্রিয় ব্যান্ডের লোগো ওয়ালা টিশার্টটাও।
আরও পড়ুন: টি-শার্ট ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা টি-শার্ট ডিজাইনিং টিপস
এর মাধ্যমেই কোনো একটা পণ্য অথবা বার্তাকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমান পৃথিবী তো পুরোদস্তুর মার্কেটিং নির্ভর। আর এই মার্কেটিং এর কথা চিন্তাও করা যায়না গ্রাফিক ডিজাইন ছাড়া! এজন্যই এই স্কিল জানা একজন মানুষের জন্য তৈরী হয় বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এর পেছনে অনেক সময় আর পরিশ্রম দেয়া কেন সার্থক, চলো জেনে নেই এখন।
১) সবখানেই গ্রাফিক ডিজাইনার চাই:
একটু আগে যেমনটা বললাম, পুরো পৃথিবীটা হয়ে গেছে মার্কেটিং নির্ভর। প্রযুক্তি এতটাই বিস্তৃত এখন, যে একজন ছোট ব্যবসায়ীরও প্রচারের প্রয়োজন হয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ আরো অনেক ধরণের ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে শুরু করে অফলাইন মার্কেটিং – মানুষকে আকৃষ্ট করতে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ ফরজ। শুধু কি মার্কেটিং? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে তোমার মোটেই বেশি সময় লাগবেনা যে কিভাবে সবকিছু ছেয়ে আছে।
এইযে সবকিছুতে এত এত ডিজাইনের প্রয়োজন হয়, সেই তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিতে ডিজাইনারের পরিমাণ কিন্তু বেশ কম। কিছুদিন আগেই এই পরিমাণ একদমই নগণ্য ছিলো। বর্তমানে অনেকে ঈই স্কিলটি শিখে কাজ করা শুরু করেছে। কিন্তু মজার ব্যপার হলো, গ্রাফিক ডিজাইনারের চাহিদা এতটুকুও কমেনাই! এর কারণ, পৃথিবী প্রতিনিয়ত একটু বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে। আর সবখানে গ্রাফিক ডিজাইনের উপর দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য এই স্কিলের সবসময়ই চাহিদা থাকে।
ঠিকঠাকমতো কাজ জানলে একটা ব্যাপারে আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, যে তোমার কাজের কোনোদিনো অভাব হবেনা!
২) পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে কাজ করা যায়:
ধরো তুমি একজন দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার। একদিন সকালবেলা দিনাজপুরের ছোট একটা গ্রামে পুকুরপাড়ের মাচাঙে বসে মেক্সিকোর একজন ব্যাবসায়ীর একটা ইউটিউব প্রোফাইল ডিজাইন করে দিচ্ছো। তোমার মা পাশে এসে বসলেন এককাপ চা নিয়ে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি চমৎকার একটা ব্যাপার না? হ্যাঁ, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে তোমার পুরোদস্তুর একটা ক্যারিয়ার হতে পারে তোমার নিজের বাড়িতে বসে! পুরোটাই ইন্টারনেটের কল্যাণ। তুমি যদি ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার হও, তাহলে কাজ বুঝে নেবার পর তোমার আসলে কাজ দাতার সাথে বেশী একটা যোগাযোগের প্রয়োজন পড়বেনা। কাজের জন্য সরাসরি দেখা করার তো প্রশ্নই আসেনা। ফলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসেই তুমি তোমার কাজ করে উপার্জন করতে পারবে!
৩) গ্রাফিক ডিজাইন হতে পারে সেরা একটা আয়ের উৎস!
ফেসবুকে নিশ্চয়ই দেখেছো গ্রাফিক ডিজাইন শিখে ঘরে বসে আয় করার গল্পগুলো? গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়? আমাদের বাংলাদেশেই এখন অনেক ডিজাইনার আছেন, যারা সফলতার সাথে এই স্কিল শিখে, কাজ করে, অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন। অনেকে রীতিমতো গাড়ি-বাড়িও কিনে ফেলেছেন এই এক কাজ করে!
তাই বলে আবার মনে করে বোসোনা কাজটা হাতের তুড়ি দেবার মতো সহজ। এই স্কিল শিখতে প্রয়োজন হয় অনেক মনোযোগ, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের। প্রথমেই যে তুমি উপার্জন শুরু করে দিবে এমনও না ব্যাপারটা। তবে যথেষ্ট সময় দিলে, আর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তোমার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা এইটুকু নিশ্চয়তা আমি দিতেই পারি!
৪) কাজের স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা কাজে লাগাবার সুযোগ:
আমার এক মামা সেদিন খুব দুঃখ করে বলছিলেন কর্মক্ষেত্রে কীভাবে ওনার আইডিয়াগুলো কাজে লাগানো যায়না। তুমিও আত্মীয় কিংবা পরিচিত মানুষদের অনেক সময় বলতে শুনে থাকবে তাদের কর্মক্ষেত্র কেমন কঠিন, কিভাবে উর্ধ্বতনের কথা রোবটের মতো মেনে চলতে হয়, তাদের আইডিয়াগুলোর যথার্থ ব্যবহার হয়না।
কিন্তু তুমি যদি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে থাকো, তাহলে তোমার এমন ব্যাপারগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছেনা। কারণ, এইখানে তুমিই তোমার বস! আজ মায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে নিজ হাতে রান্নাবান্না করতে চাও? করো। আজ নাহয় একটা অর্ডার কম নিলে! একটা লোগোতে কালার শেড পছন্দ হচ্ছেনা? বদলে ফেলো।
ক্রেতার যদি ফাইনাল প্রডাক্ট পছন্দ হয়, তাহলে তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ তো দূরের কথা, উল্টো তিনি তোমাকে ধন্যবাদ দিবেন!
এই স্কিলটি কিন্তু একটা সৃজনশীলতার খেলা। তুমি যত বেশী নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাবে, তোমার
কাজ তত বেশি সমৃদ্ধ হবে!
৫) কাজে ভালো হলে বারবার ফিরে আসবেন ক্রেতা:
একটু আগে যেমনটা বললাম, তোমার সৃজনশীলতা আর কাজের ধরণ যদি ক্রেতার পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে তিনি কেন আবার কষ্ট করে নতুন একজনকে খুঁজতে যাবেন? তিনি যেটা করবেন সেটা হলো পরবর্তীতে আরো বড় একটা অর্ডার নিয়ে তোমার কাছে হাজির হবেন।
ধরো তুমি ওনার বিজনেস লোগো খুব সুন্দর করে বানিয়ে দিয়েছো। পরবর্তীতে ওনার ব্যবসার এডভার্টাইজমেন্টসহ বাকি সব কাজের দায়িত্ব উনি তোমাকেই দিবেন। হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তোমার নামও রেফার করে দিবেন। এভাবে ভালো কাজ করলে দ্রুতই তুমি একটা ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে। কাজেই বুঝতে পারছো, গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়- প্রশ্নটির উত্তর কিন্তু তখন তোমার নিজের হাতে।
৬) নিজে নিজে শেখা যায়!
অনেকের প্রশ্ন থাকে, গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব? একদম উপরের কল্পের গল্পটা কিন্তু মোটেই মিথ্যা নয়। কল্পের মতো অনেকেই ঘরে বসে গ্রাফিক ডিজাইন শিখে এখন সফল। মজার ব্যাপার হলো, এই স্কিলটা এমন যে তোমাকে এর জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নিতে হবেনা। অর্থাৎ, গ্র্যাজুয়েশান শেষ করা একজনের ঠিক পাশের বাসায় বসেই ক্লাস নাইনের একজন সমানতালে ডিজাইন করতে পারবে।
এখানে তোমার মূল হাতিয়ার তোমার সৃজনশীলতা, ইচ্ছাশক্তি আর দক্ষতা। গ্রাফিক ডিজাইনে তোমার কয়টা প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট আছে, এটা তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করবেনা কোনোদিনো। মজার না?
আর এই স্কিল শেখানোর জন্য ইন্টারনেটে অগণিত কোর্স, আর্টিকেল আর টিউটোরিয়াল তো আছেই! একটু ইচ্ছাশক্তির সাথে একমুঠো পরিশ্রম মেশালে ঘরে বসেই তুমি হয়ে যেতে পারবে চমৎকার দক্ষ একজন গ্রাফিক ডিজাইনার!
গ্রাফিক ডিজাইন শেখার ইচ্ছাশক্তিকে বাস্তব রুপ দিতে তুমি ভরসা করতে পারো আমাদের টেন মিনিট স্কুলের উপরে! বাংলায় খুব সুন্দর করে খুঁটিনাটিসহ বোঝানো আছে আমাদের এডোবি ইলাস্ট্রেটর, এডোবি ফটোশপ এই কোর্সগুলো। এমনকি যারা মোবাইলফোন দিয়ে শিখতে চাও, তাদের জন্যও আছে আমাদের বেসিক গ্রাফিক ডিজাইনের চমৎকার একটি কোর্স। কোর্সগুলোর লিংক দিয়ে দিচ্ছি লেখার শেষে।
৩টি সেরা গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার:
কিভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখব? কী দিয়ে শুরু করব? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে বেশিরভাগ ডিজাইনার যেই সফটওয়্যারগুলো দিয়ে শেখা শুরু করার পরামর্শ দেন, সেগুলোর ব্যাপারে এখানে আলোচনা করবো। সাথে তোমাদের জানিয়ে দেবো এগুলোর প্রচলিত কিছু সুবিধা-অসুবিধাও।
১) এডোবি ফটোশপ:
শুরু করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার হিসেবে বেশিরভাগ পেশাদারের ভোট এডোবি ফটোশপের দিকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ছবি এডিট করতে, বেসিক ডিজাইন করতে এডোবি ফটোশপকে বেছে নেয়। শেখার শুরুর দিকে মানুষ ছবি, ব্যানার ইত্যাদি তৈরীতে বেশি সময় দেয়। আর এই কাজের জন্য সবথেকে সুবিধার হচ্ছে এডোবি ফটোশপ।
ফটোশপে আঁকা, ডিজাইন করা, পেইন্টিং ছাড়াও আরো অনেক অনেক কাজের জন্য এই গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যারটির বিশেষায়িত ফিচার আছে।
এডোবি ফটোশপের অনেক সুবিধা যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু অসুবিধাও।
সুবিধা |
অসুবিধা |
একসাথে অনেকগুলো অবজেক্ট নিয়ে কাজ করা যায়। | সফটওয়্যারটি নতুনদের বোঝার ক্ষেত্রে কঠিন মনে হতে পারে। |
ইন্টারনেটে ব্যাবহারের জন্য HTML এ এক্সপোর্ট করা যায়। | অন্যান্য সফটওয়্যারের থেকে এর দাম বেশি। |
এটি গ্রাফিক্স এডিটিং এর জন্য অনেক উচ্চমানের একটি সফটওয়্যার। |
২) ক্যানভা:
ফ্রি জিনিস কে না পছন্দ করে! আর সেই ফ্রি জিনিসটা যদি হয় একটা গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার, তাহলে তো আর কথাই নেই! চমৎকার এই সফটওয়্যারটির বেশিরভাগ সুযোগ-সুবিধা ফ্রিতে পাওয়া যায়। একই সময়ে একদম পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে থেকেও একসাথে গ্রুপে কাজ করা যায় ক্যানভা দিয়ে।
সুবিধা |
অসুবিধা |
ব্যবহার করা অনেক সহজ। | একদম ইউনিক কোনো অবজেক্ট তৈরী করা যায়না। |
টেক্সট, ফন্ট, লেআউট খুব সহজে পরিবর্তন করা যায়। | ছোট স্ক্রিন, যেমন মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা সুবিধার না। |
আগে থেকে টেমপ্লেট ঠিক করা থাকে, ফলে কাজ করা সহজ হয়। | সৃজনশীলতা কাজে লাগানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। |
আরও পড়ুন:
৫টি ফ্রি অনলাইন কোর্স: ঘরে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষা
ফ্রিল্যান্সিং কি? এই ক্যারিয়ার গাইডলাইনগুলো জেনে নিন
৩) এডোবি ইলাস্ট্রেটর:
সবকিছু বিবেচনা করলে এডোবি ইলাস্ট্রেটর নিঃসন্দেহে সবচাইতে ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার। এডোবি ফটোশপের সাথে এর বেশ কিছু মিল থাকলেও, এডোবি ইলাস্ট্রেটর আদতে ফটোশপের বড়ভাই। ইলাস্ট্রেটর মূলত ভেক্টর ডিজাইনের ওপর জোর দেয়। ইউনিক ডিজাইন তৈরীতে ইলাস্ট্রেটরের জুড়ি মেলা ভার।
সুবিধা |
অসুবিধা |
আঁকাআঁকির জন্য অনেক চমৎকার টুলস আছে। | অনেক ভারী সফটওয়্যার। |
সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতর ডিজাইন তৈরী করা সম্ভব। | অন্যান্য ভেক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার থেকে বেশি দামী। |
গাণিতিক ব্যাখ্যা ব্যবহার করে ডিজাইন করা যায়। | এই গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার শিখতে অনেক পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। |
লাখ লাখ গ্রাফিক ইমেজ, ভিডিও এর এক্সেজ পাওয়া যায়। | ফটোশপের সাথে মিল আছে। |
খুঁজে নাও নিজের পছন্দের সফটওয়্যারটি!
তোমার নিজের জন্য কোন সফটওয়্যারটি সবথেকে বেশি উপযুক্ত, সেটা কিন্তু তোমাকে নিজে খুঁজেই বের করতে হবে। তোমার সুবিধার কথা মাথায় রেখে এখানে জনপ্রিয় কিছু সফটওয়্যারের প্রাথমিক তথ্য এখানে দিচ্ছি।
সফটওয়্যারের নাম |
টেমপ্লেট |
কোথায় ব্যবহার করা যাবে |
কোলাবরেশান করা যাবে কিনা |
দাম |
এডোবি ফটোশপ | হ্যাঁ | Windows, macOS | হ্যাঁ | সাত দিনের ফ্রি ট্রায়াল (US$20.99/mo) |
ক্যানভা |
হ্যাঁ | Browser, iOS, Android | হ্যাঁ | ফ্রি। প্রিমিয়াম (US $12.99/mo) |
এডোবি ইলাস্ট্রেটর | হ্যাঁ | Windows, macOS | হ্যাঁ | সাত দিনের ফ্রি ট্রায়াল (US$20.99/mo) |
এডোবি ইন-ডিজাইন | হ্যাঁ | Windows, macOS | হ্যাঁ | সাত দিনের ফ্রি ট্রায়াল (US$20.99/mo) |
কোরেল ড্র |
হ্যাঁ | macOS, Windows | হ্যাঁ | US $269 প্রতি বছর |
Eagle | হ্যাঁ | macOS | হ্যাঁ | US$70 |
Sketch |
হ্যাঁ | macOS Windows, macOS, Linux |
হ্যাঁ | US $9 per editor/monthly |
GIMP | হ্যাঁ | Windows, macOS, Linux | না | US $9 per editor/monthlyFREE |
এফিনিটি ডিজাইনার | হ্যাঁ | Windows, macOS | US $69 | |
কোরেল ভেক্টর | হ্যাঁ | Windows, macOS, Linux | হ্যাঁ | ১৫ দিনের ফ্রি ট্রায়াল (US $79.00/Year for PRO) |
ইনফিনিট ডিজাইন | না | Android, iOS | না | ফ্রি |
Inkscape | না | Windows, macOS, Linux | হ্যাঁ | ফ্রি |
এডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড | হ্যাঁ | Windows, macOS | হ্যাঁ | ফ্রি / প্রিমিয়াম ভার্শন $9.99/mo |
সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার ১০টি টিপস:
এবার আসি গ্রাফিক ডিজাইনার হবার পালায়। সফল হতে হলে তোমার কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে বেশী বেশী মন দেয়া চাই।
১) বেসিক শেখা, বোঝায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া:
এটা সত্য যে গ্রাফিক ডিজাইন করতে হলে তোমার পুঁথিগত বিদ্যার দরকার পড়বেনা। কিন্তু তোমাকে প্রাথমিক গ্রাফিক ডিজাইনটা মন দিয়ে শিখতে হবে। বেসিক মন দিয়ে শেখার পরেই তুমি দেখাতে পারবে তোমার সৃজনশীলতার খেলা।
২) অনলাইন কোর্স ভরসা!
যেহেতু এটি এখন বিশ্বজোড়া জনপ্রিয় একটা স্কিল, এটা শেখার জন্য অনলাইন কোর্স হচ্ছে সবথেকে সুবিধাজনক মাধ্যম। ঘরে বসেই তুমি পেয়ে যাবে অনেক অনেক অনলাইন কোর্স। কিন্তু যেকোনো কোর্সেই নিজের নাম ফেলোনা আবার। যে কোর্সটি সব মিলিয়ে তোমার জন্য সবথেকে বেশী সুবিধার, বুঝে শুনে সেটাই নির্বাচন করবে। এক্ষেত্রে আমি তোমাকে বলবো আমাদের টেন মিনিট স্কুলের গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সটি নিতে। কেন, তা একটু পরেই বলছি।
৩) প্রতিষ্ঠিতদের কাজ লক্ষ্য করা:
গ্রাফিক ডিজাইনে তোমার আগ্রহ? আজই বসে খ্যাতনামা ডিজাইনারদের খুঁজে বের করে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ফলো করা শুরু করে দাও। গ্রাফিক্স ডিজাইন কি করে তাঁদের জীবন বদলে দিচ্ছে, সেটা লক্ষ্য করো। যদি তোমার মধ্যে এই নিয়ে কোনো সংশয় কাজ করে, আজই সেটা ঝেড়ে ফেলে দাও। প্রতিষ্ঠিতদের দেখে তুমি অনেক কিছু শিখবে, নতুন আইডিয়া পাবে আর সবথেকে বেশী দরকারী যেটা, অনুপ্রেরণা পাবে।
৪) প্রয়োজনীয় সেটাপ জোগাড়:
এই ধাপটা আসবে তোমার বেসিক শিখে যাবার পর। যখন তুমি কাজ করা শুরু করবে, আস্তে আস্তে প্রয়োজন পড়বে নানান ডিভাইসের। এই স্কিল কিন্তু লেখালেখির মতো না, যে একটা ল্যাপটপ আর কিছু আইডিয়া নিয়েই তুমি কাজ করতে পারবে। এক্ষেত্রে একেবারে সব যোগাড় করা কষ্টসাধ্য হলে, আস্তে আস্তে যোগাড় করতে থাকো। ‘পুরো সেটাপ যেদিন আসবে সেদিন কাজ শুরু করবো’ ভাবলে তোমার কাজ কোনোদিনো হয়তো শুরু হবেনা।
৫) দরকার সত্যিকার কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের:
আজ এক ধরণের লোগো বানানো শিখলে? কোনো একটা নাম কল্পনা করে সেটার লোগো বানিয়ে ফেলো। তোমার প্রিয় বন্ধুর সাথে ধরো একটা ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন দেখছো। সেই ব্যাবসাটা কেমন হবে সেটা কল্পনা করে একটা কাল্পনিক লোগো বানিয়ে ফেলো (কে জানে, এই কাল্পনিক লোগো আবার পরবর্তীতে বিশ্বসেরা কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হবার কারণ হয়ে যেতে পারে!) এভাবে আস্তে আস্তে সত্যিকার কাজ করা শুরু করো।
একটু আত্মবিশ্বাস বাড়লে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট যেমন Upwork, Fiverr ইত্যাদিতে কাজ খোঁজ করা শুরু করে দাও। সত্যিকার কাজের অভিজ্ঞত থাকলে তুমি কী শিখছো, সেটার হাতেনাতে প্রমাণ পাবে। আর কাজ করা তো হচ্ছেই।
৬) চমৎকার একটা পোর্টফোলিও চাই:
ধরো জাপানের হারুতো সাহেবের একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রয়োজন। একজন প্রফেশোনাল হিসেবে তোমার প্রবল আত্মবিশ্বাস, তুমিই ওনার কাজটির জন্য সবথেকে যোগ্য। কিন্তু হারুতো সাহেব তা বুঝবেন কী করে? তুমি বললেই তো আর উনি বিশ্বাস করে বসবেন না।
এজন্য তোমার দরকার একটা চমৎকার পোর্টফোলিও, যাতে তোমার সব দক্ষতা আর কাজের অভিজ্ঞতা সুন্দরভাবে সাজানো থাকবে। মনে রাখতে হবে এই পোর্টফোলিওই তোমার পরিচয়। এটি দেখেই ক্রেতা কিংবা তোমার চাকুরীদাতা অনেকজনের মাঝে তোমাকে তার কাজের জন্য নির্বাচন করবেন।
আরও পড়ুন:
মোবাইল ফটোগ্রাফি টিপস জেনে হয়ে উঠুন একজন এক্সপার্ট!
জেনে নিন কেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ থাকবে সবসময়!
৭) প্রফেশনাল কপিরাইটিং শেখার পালা:
গ্রাফিক ডিজাইন হোক কিংবা অন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কপিরাইটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা স্কিল। তোমার এই স্কিল যতো ভালো হবে, তোমার কাজ ততো সুন্দর হবে। এজন্য প্রথম থেকেই খেয়াল রাখবে কপিরাইটিং ভালোভাবে আয়ত্ত করার দিকে।
৮) আপডেটেড ডিজাইন ট্রেন্ডের খোঁজখবর রাখা:
শিরোনামই বলে দিচ্ছে তোমাকে কী করতে হবে। ডিজাইন সমাজ, মানুষের মন-মানসিকতাকে ঘিরে প্রতিনিয়ত বদলাতেই থাকে। তোমার কাজ হলো এই পরিবর্তন সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা। শুধু ট্রেন্ড জানা এক্ষেত্রে যথেষ্ট না। আগের ডিজাইনের ধরণ, এক সময় থেকে আরেক সময়ের ডিজাইনের পরিবর্তন ইত্যাদি তোমার মাথায় রাখতে হবে।
৯) একটা নির্দিষ্ট দিকে বেশি জোর দেয়া:
গ্রাফিক ডিজাইন তো একটা মহাসমুদ্রের মতো। এর ভেতরে অনেক অনেক কাজের ধরণ আছে। তোমার উচিত হবে সব বিষয়েই টুকটাক ধারণা রাখা, কিন্তু যেকোন একটা দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে সেটার প্রো হবার চেষ্টা করা। অনেক কিছু একসাথে আয়ত্ত করার থেকে যেকোনো একটি বিষয়ে সর্বোচ্চটা দেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
১০) নেভার স্টপ লার্নিং!
আয়মান সাদিক ভাইয়ার এই কথা তো তুমি শুনেই থাকবে। এই নামে আস্ত একটা বইও লিখে ফেলেছেন তিনি। এই ‘নেভার স্টপ লার্নিং’- বাক্যটাকে তোমার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নাও।
শেখার কোন এক পর্যায়ে তোমার মনে হতে পারে তুমি একজন প্রফেশনাল, তোমার আর শেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিশ্বাস করো, শেখার শেষ আসলেই হয়না। তাছাড়াও এই স্কিলটি অল্প অল্প করে শেখার জিনিস। কয়েকদিনেই তুমি এটা আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেনা। অনেক অনেক বছরের অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনাররাও প্রতিনিয়ত নতুন জিনিস শিখতে থাকেন।
আবার প্রথম কয়েকদিন শেখার পর তোমার আগ্রহ কমতে থাকতে পারে। তখনও কিন্তু বেদবাক্যের মতো এই লাইন আওড়াতে পারো!
গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব?
উপরে বললাম, আবার বলি। গ্রাফিক ডিজাইন শেখা আসলে খুকির হাতের মোয়া না। এটি শিখতে যেমন ইচ্ছাশক্তি দরকার, ধৈর্য দরকার, তেমনি দরকার সঠিক গাইডলাইন। অনলাইনে তুমি অনেক কোর্স পেয়ে যাবে। এর মাঝে কোর্সেরা, ইউডেমি, খান একাডেমীর মতো ওয়েবসাইটের চমৎকার কিছু কোর্স আছে।
কিন্তু বেশ বড়সড় সমস্যা হচ্ছে, প্রথমত কোর্সগুলোর প্রায় সবই ইংরেজিতে। যতই ইংরেজি ভালো জানা থাকুক, ভাষার দেয়াল অনেকের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে আমরা যারা খুব ভালো ইংরেজি বুঝিনা, তারা গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব? দ্বিতীয়ত, বিগেনার দের কথা মাথায় রেখে এই কোর্সগুলোর অধিকাংশই ডিজাইন করা হয়নি। ফলে অনেক আগ্রহ নিয়ে শিখতে আসলেও পরে ব্যাপারটা এত জটিল মনে হয় যে, অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়।
টেন মিনিট স্কুল এই কথা মাথায় রেখে তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছে গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর বেশ কয়েকটি চমৎকার কোর্স। সবার কথা মাথায় রেখে এখানে সাজানো হয়েছে গ্রাফিক ডিজাইনের বেসিক থেকে শুরু করে প্রফেশনাল লেভেল, যেখানে বাংলায় সাবলীলভাবে বোঝানো আছে গ্রাফিক ডিজাইনের আদ্যোপান্ত। সুতরাং সবার কাছে গিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব – এই নিয়ে হা হুতাশ না করে তুমি চলে আসতে পারো আমাদের কাছে।
তাহলে আর অপেক্ষা কীসের? গ্রাফিক ডিজাইন শেখার এই এডভেঞ্চারাস পথযাত্রায় নেমে পড়ো টেন মিনিট স্কুলকে সাথী করে। পথে জটিলতা আসবে, কিন্তু হাল কখনোই ছেড়োনা! কারণ এই পথের শেষ হয়তো তোমার জন্য নিয়ে বসে আছে নতুন এক জীবনের অপার সম্ভাবনা!
- টেন মিনিট স্কুলের এডোবি ইলাস্ট্রেটর কোর্স
- টেন মিনিট স্কুলের এডোবি ফটোশপ কোর্স
তথ্যসূত্র:
- https://blueskygraphics.co.uk/why-study-graphic-design/
- https://justcreative.com/best-graphic-design-software/
- https://www.vectornator.io/blog/how-to-become-a-graphic-designer/
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Design করে Freelancing Course (by Md. Kamruzzaman Shishir and A.S.M Arifuzzaman)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
আপনার কমেন্ট লিখুন