পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
“মন বসে না পড়ার টেবিলে” এই সমস্যা কমবেশি আমাদের সবারই। পড়তে বসে বইয়ের পাতার দিকে তাকালে হঠাৎ এমন অসহ্য লাগে পৃথিবীটাকে! মনে হয় সামনের সাদা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঐ যে একটা টিকটিকি দেয়ালে লেপ্টে আছে, ফ্যান ঘুরছে ঘটাং-ঘটাং, এগুলো দেখি বসে বসে, তবু পড়তে ইচ্ছা করে না!
একবার ভেবে দেখো, তোমার বাবা মায়ের চাকরি-বাকরি আছে, দিনের একটি বড় সময় তাদের প্রতিদিন কাটাতে হয় বাইরে কাজের মাঝে, মন না চাইলেও তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। তোমার জন্যও কিন্তু পড়ালেখা একটা চাকরির মতোই! তোমার উপর এটাই দায়িত্ব- ভালভাবে পড়াশোনা করে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। তাই মন না চাইলেও দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা যাবে না। পড়ায় মনোযোগ বসাতে এখন থেকে যেন আর সমস্যা না হয়, সেজন্য বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে সাতটি অব্যর্থ কৌশল বের করেছেন। দেখবে এবার পাল্টে যাবে সবকিছু, পড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠবে অচিরেই!
পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায়
১। পরীক্ষায় পাশ করার জন্য নয়, শেখার আনন্দে পড়ো
একটা নতুন টপিক পড়তে গিয়ে কতবার মনে হয়েছে- “এই জিনিস বাস্তব জীবনে কী কাজে আসবে আমার?”
কথা সত্যি, পাঠ্যবই গুলোয় কিছু জিনিস থাকে যেগুলো জীবনে খুব একটা প্রয়োজনে আসে না তেমন, কিন্তু তাই বলে একটা নতুন জিনিস শেখার সুযোগ হারাবে কেন?
ধরো তোমার ফুটবল দেখতে খুব ভালো লাগে, সারা রাত না ঘুমিয়ে ফুটবল দেখার চেয়ে আনন্দের কিছু আর হয় না তোমার জীবনে, খেলার যত খুঁটিনাটি নাড়িনক্ষত্র সব তোমার ঠোঁটস্থ। কেউ কিন্তু তোমাকে কখনো জোর করেনি এসব জানার জন্য, তুমি জেনেছো নিজের আগ্রহে, ভালোবাসায়।
অথচ বইয়ের একটা সহজ তথ্য তোমার কিছুতেই মনে থাকতে চায় না! কারণটা খুব সহজ, মানুষের মন অনিচ্ছায় কোন কাজ করতে চায় না। ঠিক যেই মুহূর্তে তোমার মনে হচ্ছে “ধুর! এখন বসে বসে এগুলি পড়তে হবে কালকে পরীক্ষার জন্য!” তখনই তোমার মন বিদ্রোহ করছে, একটা কণাও পড়তে ইচ্ছা করবে না। খেলা দেখতে তোমার বড় আনন্দ হয়, আগ্রহটা ভেতর থেকে আসে, তাই কোন ক্লাব কত গোল দিল ইত্যাদি খুঁটিনাটি তোমার মাথায় খুব সহজেই গেঁথে যায়। পড়ালেখার প্রতি এমন আগ্রহটা জাগিয়ে তুলো, দেখবে মনোযোগ আপনা থেকেই আসছে। পরীক্ষায় পাশ তো আপনাতেই হবে, পড়ালেখা যদি শেখার আনন্দে করো, এ জ্ঞান মনের মাঝে অক্ষয় থাকবে চিরদিন।
২। একটা লক্ষ্য ঠিক করো
“আজকে সারাদিন অঙ্ক করবো!” এটা বলা বেশ সোজা, এবং সারাদিন অঙ্ক বই হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি করে “বেশ পড়ালেখা হচ্ছে” একটা ভাবও আসে মনে, কিন্তু দিনের শেষে গিয়ে দেখা গেল কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়নি!
“অঙ্ক করবো” এটা কি ভাল একটা লক্ষ্য হলো?
“বড় হয়ে কী হবে?”
– “বড় হবো!” এটা কি একটা উত্তর হলো? একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হয়। যেমন ধরো ডাক্তার হবে। তাতেও আবার কতরকম বৈচিত্র্য। চোখের ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার, শল্যচিকিৎসক আরো কত কী!
সুতরাং “অঙ্ক করবো” না বলে “অমুক চ্যাপ্টারের অমুক অঙ্কগুলো করে সন্ধ্যার আগেই শেষ করবো” এমন একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করো। তাহলে দেখবে লক্ষ্যটা অনেক বেশি কাজে আসবে, এবং লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তোমার চেয়ার থেকে উঠতেই ইচ্ছা করবে না! একটা জেদ চেপে যাবে মনে, এবং আরো বেশি করে মনোযোগ চলে আসবে ভেতর থেকে, একটা কঠিন লক্ষ্য তুমি ঠিক করেছিলে, এবং ঠিক ঠিক সেটা ছুঁয়েও ফেললে-এই আনন্দের কি কোন তুলনা হয়?
৩। মনযোগে বিঘ্ন ঘটে এমন জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলো
হয়তো তোমার ফেসবুকে ভীষণ আসক্তি, প্রতি পাঁচ মিনিটে একবার টাইমলাইনে ঘুরে না আসলে তোমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, মনে হয় “ইশ্! ফেসবুকটা না থাকলে কত্তো ভাল হতো!”
ফেসবুকের আগের যুগে কি মানুষ সময় নষ্ট করতো না?
তখন ফেসবুক ছিলো না, কিন্তু পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা বসতো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেজুরে আলাপ হতো। সময় অপচয় করার মত আনন্দ আর কিছুতে নেই, মানুষ সবসময়ই বিচিত্র সব উপায়ে মহানন্দে বিলিয়ে বেড়ায় সময়, তুমি আমি কেউ এর ব্যতিক্রম নই! টিভি যখন ছিল না তখন টিভি না দেখতে পারার দুঃখে কেউ মারা যায়নি, কিন্তু এখন মানুষকে টেনে তোলা যায় না টিভির সামনে থেকে! সবই আসলে ব্যবহারের উপর। সুতরাং প্রযুক্তিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কী করা যায়?
আরো পড়ুন: রমজানের পর পরীক্ষা? পড়াশোনা চালিয়ে যাও ৮টি ধাপে
পড়তে বসার সময় সবকিছু সরিয়ে ফেলো টেবিল থেকে। এই সময়টিতে কেবল দুটি সত্ত্বা- তুমি আর তোমার বইখাতা, আর কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই জগতে, যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে পড়া, মনোযোগের গভীর অতলে ডুবে যাও তুমি। মোবাইল সামনে থাকলে “জাস্ট একবার দেখে আসি কোন নোটিফিকেশান আছে কিনা!” এই লোভ সংবরণ করা সত্যি অসম্ভব! বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ হচ্ছে, তুমি বই নিয়ে টিভির সামনে বসলে “জাস্ট স্কোরটা দেখবো খালি” ভেবে, দেখবে কখন যে বইখাতা ফেলে খেলায় বুঁদ হয়ে ডুবে গেছো টেরই পাবে না! সুতরাং পড়ার সময় মনোযোগ সরিয়ে ফেলার কোনরকম সুযোগ দেওয়াই যাবে না, এমন সব উপকরণ অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে সামনে থেকে!
৪। নিজেকে পুরষ্কৃত করো!
পুরষ্কার পেতে কার না ভাল লাগে! হয়তো তোমার চকলেট খেতে দারুণ পছন্দ, কিন্তু বেশি খেলে দাঁতে পোকা ধরবে, মোটা হয়ে যাবে ইত্যাদি সমস্যা, এক কাজ করতে পারো তো, বইয়ের যেই পাতা পর্যন্ত পড়বে ঠিক করেছ শেষ পাতায় একটা চকলেট গুঁজে রাখলে! কত কষ্ট করে পড়েছ এতকিছু, দাঁতের পোকার ভয় উপেক্ষা করে নিজেকে এটুকু পুরষ্কার দেওয়াটা যথার্থই বটে!
সবসময় পড়ার সাথে এমন প্রিয় জিনিসগুলো জড়িয়ে নাও, দেখবে পড়তে বসে আর খারাপ লাগছে না আগের মতো, বেশ মনোযোগ এসে পড়ছে! (সেটা হোক নাহয় প্রিয় জিনিসের লোভেই!) ভালো লাগার জিনিসের প্রতি মানুষের সহজাত আগ্রহ, “পড়ালেখা” শব্দটা শুনলেই যদি তোমার মাথায় “চকলেট” শব্দটা এসে পড়ে, তাহলে কি আর পড়ালেখা ভাল না লেগে পারে?!
৫। ছোট্ট ছোট্ট বিরতি
তোমার ক্লাসে সবসময়ই কিছু মানুষ থাকবে, যারা সারাদিন ঘোরাঘুরি করে পার করে দেয়, পড়ালেখার চিন্তা খুব কম, পড়ালেখা বাস্তবে করে তারচেয়েও কম, কিন্তু রাতদিন পড়েও দেখা যায় পরীক্ষায় তাদের চেয়ে কম নাম্বার পাচ্ছো তুমি!
ব্যাপারটা ভীষণ মন খারাপ করে দেয় নিশ্চয়ই? মন খারাপের কিছু নেই, একটা ছোট্ট ব্যাপার বদলে ফেললেই ঠিক হয়ে যাবে সব।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়া খুব কাজের কথা নয়। শুরুতেই বলেছি, তোমার লক্ষ্য হচ্ছে “শেখা”, বই সামনে নিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পড়া নয়! সুতরাং টানা অনেকক্ষণ না পড়ে চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট পর পর একটা ছোট্ট বিরতি নাও। এটাই হলো বেশি সময় পড়ার উপায়!
একসাথে অনেক কিছু মস্তিষ্কে ঠেসে দেওয়া হয়তো সম্ভব, কিন্তু এভাবে শেখা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ! একটু বিরতি নিয়ে নিয়ে পড়ো, আনন্দের সাথে পড়ো, ক্লান্ত লাগলে একবার ঘুরে আসো, কিছু খাও, দুই মিনিট গল্প করো- সোজা কথা মনটাকে সতেজ রাখো, দেখবে কম সময় পড়েও অনেক দ্রুত মাথায় গেঁথে যাচ্ছে সব! সহজেই মনোযোগ ধরে রাখার উপায় হলো বিরতি নিয়ে পড়া।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
English Writing for Students
৬। কাউকে শেখাতে যাও
ইংরেজি আমরা সবাই অনেক পড়েছি, কিন্তু বলতে গেলেই কেমন আটকে যায় মুখে! পাঠ্যবই পড়তে পড়তে ঝালাপালা করে ফেলেছ হয়তো, তবু দেখা যায় পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে দাঁত কামড়ে ভাবতে হয় “এভাবে তো চিন্তা করিনি আগে!”
তাই কিছু পড়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে সেটা আরেকজনকে শেখাতে যাওয়া। তখন নিজের ভুলগুলো চোখে পড়বে তোমার, মানুষটির নানা প্রশ্নের জবাব দিতে টপিকটি নিয়ে অনেক বিস্তারিত পড়াশোনা করতে হবে তোমাকে, পুরো বিষয়টি হাতের মুঠোয় না আসা পর্যন্ত নিস্তার নেই- নিজে না বুঝলে আরেকজনকে শেখাবে কিভাবে?
তাই এক কাজ করো, আজকে যে বিষয়টি পড়বে, বন্ধুকে জানিয়ে রাখবো কাল এ বিষয়টি বুঝাবে তাকে, দেখবে পরীক্ষার কথা দূরে থাক, তাকে বুঝানোর চিন্তাতেই তোমার পড়তে হচ্ছে অনেক মনোযোগ দিয়ে, ওঠার সুযোগই মিলছে না পড়ার টেবিল থেকে!
৭। একটি সুস্বাস্থ্যময় জীবন
সারা রাত জেগে পড়ালেখা করা কোন বিরাট কৃতিত্বের কথা নয়! মানুষের শরীর যন্ত্র না, নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশ্রাম না দিলে শরীর খারাপ করবেই। দেখা যাবে সময় বাঁচাতে তুমি কম ঘুমালে, তারপর সারাদিন কাটলো ঢুলুঢুলু চোখে, কাজের কাজ হলো না কিছুই, অল্প কয়টি ঘন্টা বাঁচাতে গিয়ে পুরো দিনটিই নষ্ট করলে। তাই প্রতিরাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম ভীষণ প্রয়োজন সুস্বাস্থ্যের জন্য।
অবসাদ কাটাতে, মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যায়াম দারুণ কাজের একটি জিনিস। প্রতিদিন অল্প-স্বল্প ব্যায়াম করলে দেখবে বেশ সতেজ লাগছে শরীরটা, আগের মত পড়ার টেবিলে বসলেই ঘুমে মাথা ঢুলছে না!
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটিও মাথায় রেখো। বেশি বেশি ফাস্টফুড, তৈলাক্ত ভারি খাবারদাবার খেলে নিশ্চয়ই পড়তে বসে অখণ্ড মনোযোগে কাজ করার মত অবস্থা থাকবে না তোমার! তাই শাক-সবজি-মাছের পরিমাণটা বাড়াও খাওয়ার পাতে, শরীরও থাকবে সুস্থ, সজীব, পড়ালেখায় মনোযোগও আসবে আগের চেয়ে বেশি!
১০ মিনিট স্কুলের অনলাইন ব্যাচগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করো:
- ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির পড়াশোনার সবকিছু নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন ব্যাচ!
- ৯ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩ [বিজ্ঞান বিভাগ]
- ১০ম শ্রেণি [SSC 2024] অনলাইন ব্যাচ [বিজ্ঞান বিভাগ]
- SSC 2023 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বিজ্ঞান বিভাগ]
- HSC 2023 শর্ট সিলেবাস ক্র্যাশ কোর্স [বিজ্ঞান বিভাগ]
- HSC 2024 ক্র্যাশ কোর্স – প্রথম পত্র [বিজ্ঞান বিভাগ]
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন