সিফাত তার বন্ধুদের সাথে KFC রেস্টুরেন্টে খেতে গেলো। সিফাত এর আগে কখনো KFC -তে যায়নি। রেস্টুরেন্টের ভিতর এক বুড়ো লোকের মূর্তি দেখে সে তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলো, “ইনি কে? মালিক? কই ইনাকে তো দেখছি না”। সিফাতের কথা শুনে তার বন্ধুরা সবাই একসাথে হেসে উঠলো। তাতে সে একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো। বাসায় ফিরে ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করলো সেই বুড়োর রহস্য ও পরিচয়। জানতে পারলো KFC -এর প্রতিষ্ঠাতা হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জীবনের অবিশ্বাস্য গল্প।
সাফল্য প্রাপ্তির নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। সারাটা জীবন আপনাকে পরিশ্রম করে যেতে হবে, কঠোর শ্রমের মাধ্যমে আত্মনিয়োগ করতে হবে নিজেকে। সাফল্য যে কখন এসে ধরা দেয় সেটা কেবল বিধাতাই জানেন। সেটা হতে পারে তারুণ্যে, হতে পারে মধ্যবয়সে, অথবা জীবনসায়াহ্নে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেও! বয়সের খাতায় প্রায় পঁয়ষট্টির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে যে মানুষটা নাম লিখিয়েছিলেন সফলদের কাতারে তার নাম কর্ণেল স্যান্ডার্স। KFC -র লোগোতে বুড়ো একটা মানুষের ছবি প্রায় সবাই দেখেছে, সেই মানুষটাই আমাদের স্যান্ডার্স, KFC -র প্রতিষ্ঠাতা, যার উদ্ভাবিত চিকেন ফ্রাইয়ের রেসিপিতে ডুবেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ!
Personal Finance Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
স্যান্ডার্স জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে। বাবা ছিলেন কৃষক, আশি একরের একটা ফার্ম ছিল তাঁদের। তাঁর যখন মাত্র পাঁচ বছর বয়স, তখন হুট করেই বাবা মারা গেলেন; জীবনের পথটা যে মসৃণ নয় সেটা সেই শৈশবেই বুঝে গিয়েছিলেন স্যান্ডার্স। তবুও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করেছিলেন, পড়াশোনায় মন না থাকলেও পাশ করতেন ঠিকঠাক। বারো বছর যখন তাঁর বয়স তখন মা আবার বিয়ে করলেন। জলের দরে খামারটা বিক্রি করে ওরা চলে এলেন গ্রীনউডে। ছন্দপতনের শুরুটা এখান থেকেই। সৎ বাবার সঙ্গে বনিবনা হতো না তাঁর, মানুষটাকে একদমই পছন্দ করতেন না তিনি। তের বছর বয়সেই ঘর ছাড়লেন স্যান্ডার্স।
পড়াশোনার পালা তো গেল, ক্ষেতে-খামারে শ্রমিকের কাজ করা শুরু করলেন। তারপর কিছুদিন করলেন ইন্ডিয়ানা পুলিশের ঘোড়ার গাড়িতে রঙ করার কাজ। সেটাও ভালো লাগলো না বেশিদিন। ছোটবেলা থেকেই স্যান্ডার্স ছিলেন অস্থিরচিত্তের মানুষ, মনটা ছিল বিক্ষিপ্ত, কোথাও একটানা অনেকদিন থাকলেই হাঁপিয়ে উঠতেন। এই স্বভাবটা সারা জীবন ধরেই তাঁর সঙ্গী ছিল। রংমিস্ত্রীর কাজ ছেড়ে বাসের কন্ডাক্টর হয়েছেন, কামারশালায় কাজ করেছেন, কিন্ত স্থির হতে পারেননি কোথাও। কয়লাচালিত ট্রেনের ছাইয়ের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের কাজ, ফায়ারম্যান, দিনমজুর- কোন পেশা বাদ যায়নি ক্যারিয়ারে। অথচ বয়স তখন মাত্র সতেরো! এরমধ্যেই চারবার চাকুরি হারিয়েছিলেন তিনি।
বয়সটা আবেগের, সেই আবেগে পড়েই ধুম করে বিয়ে করে বসলেন মাত্র আঠারো বছর বয়সে। কিন্ত ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা, স্যান্ডার্সের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। পরের বছর কন্যাসন্তানের বাবাও হয়ে গেলেন তিনি! নিজেদেরই খাবার জোটে না দুই বেলা, মেয়েকে কী খাওয়াবেন? এরপরে আরও দুই সন্তানের জন্ম হয়েছিল তাঁর, ১৯৩২ সালে তাঁর একমাত্র ছেলে হারল্যান্ড জুনিয়র টনসিলে আক্রান্ত হয়ে মার যায়। ব্যর্থ পিতার মতো মৃত্যুপথযাত্রী ছেলের শিয়রে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি। এর কিছুদিনের মাথায় জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলেন তিনি, স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গেল, সঙ্গে নিয়ে গেল দুই মেয়েকে। সেই শোক সামলে উঠতে বহুদিন লেগেছিল স্যান্ডার্সের, মেয়েদের শোকে পাগলপারা অবস্থা হয়েছিল তাঁর।
আরও পড়ুন:
কী করে ভুলে যাবেন একটি বাজে ঘটনাকে?
মনোযোগ বাড়াতে পারে যে ১০টি অনুশীলন!
পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে হলে টাকা লাগবে, আর টাকা রোজগারে পড়ালেখা ছাড়া গতি নেই, বুঝে গিয়েছিলেন ততদিনে। আর তাই ফিরে গিয়েছিলেন বিরক্তিকর সেই জায়গাটিতে। আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তিনি, এক্সটেনশন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী নিয়ে নেমেছিলেন প্র্যাকটিসে। কিন্ত নিজের মক্কেলের সঙ্গেই বিবাদে জড়িয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন এই কাজটাও! হেনরিভিলে মায়ের কাছে ফিরে গেলেন তিনি, রেলওয়ের শ্রমিক হিসেবে আবার কাজ শুরু করলেন। সেটা ছেড়ে একটা বীমা কোম্পানীতে কাজ নেন, কিন্ত টিকতে পারেননি সেখানেও। তবে নিউজার্সিতে গিয়ে সেলসম্যানের চাকুরি জুটিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি তাঁর।
১৯২০ সালে জমানো কিছু টাকা দিয়ে একটা বোট কোম্পানি খুললেন তিনি, শুরুতে সম্বল ছিল মোটে পাঁচটি নৌকা। ওহিও নদীতে চলমান ডিঙ্গি নৌকা সরবরাহ করতে শুরু করলেন তিনি। এরমধ্যে ইন্ডিয়ানার চেম্বার অব কমার্সে একটা চাকুরিও পেলেন, কিন্ত চাকুরিতে তো কোনকালেই মন বসেনি তাঁর, নিজেকে স্থির করতে পারেননি কোথাও। তাই এক বছরের মাথায় চাকরিটা ছাড়লেন, মাথায় ভূত চাপলো, বোট কোম্পানিটাও বাইশ হাজার ডলারে বিক্রি করে দিলেন। পাড়ি জমালেন কেন্টাকি রাজ্যে।
কেন্টাকিতে আবার সেলসম্যানের চাকুরি, এবার একটা টায়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে। কিন্ত তখন তাঁর সময়টাই খারাপ যাচ্ছে, কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে গেল ১৯২৪ সালে। এরমধ্যে তাঁর সঙ্গে ভালো খাতির জমে গিয়েছিল কেন্টাকির স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে, সেই লোকের সুপারিশেই স্যান্ডার্স চাকুরি পেয়ে গেলেন একটা সার্ভিস স্টেশনে। কিন্ত বিধি বাম! এই কোম্পানিটাও দেউলিয়া হয়ে গেল ১৯৩০ সালে, বেকার হয়ে পড়লেন স্যান্ডার্স, তাঁর বয়স তখন চল্লিশ বছর। এই বয়সে কে দেবে তাঁকে নতুন চাকুরি?
অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে শুরু করলেন তিনি, কিন্ত হাল ছাড়লেন না। খাবার তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সরবরাহ করা শুরু করেন। শুরুতে নিজের বাড়ি থেকেই রান্না আর খাবার সরবরাহের কাজ করতেন তিনি, পরে শেল অয়েল কোম্পানি তাদের অফিসের পাশেই খানিকটা জায়গা দিল তাঁকে, ভাড়া দিতে হতো না সেটার জন্যে, শুধু আয়ের একটা ছোট অংশ দিলেই চলতো। স্যান্ডার্স সেখানে বসে নতুন নতুন আইটেম তৈরি করতে লাগলেন, জায়গাটা ছোট হওয়ায় বাড়ি থেকে রান্না করে আনা লাগতো। চিকেন দিয়ে তৈরি করা ডিশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে কান্ট্রি হ্যাম আর স্টেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকলো শহরজুড়ে। এরমধ্যে তাঁর জীবনের ওপরও হামলা হয়েছিল! ম্যাট স্টুয়ার্ট নামের এক স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী স্যান্ডার্সের ব্যবসার রমরমা অবস্থা দেখে তাঁকে নিজের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে হামলা করে স্যান্ডার্সের দোকানে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান স্যান্ডার্স, গুলি তাঁর গায়ে না লেগে শেল অয়েলের এক কর্মীর গায়ে লেগেছিল, সেই লোকটা ঘটনাস্থলেই মারা যান। ১৯৩৫ সালে স্থানীয় গভর্নর স্যান্ডার্সকে ‘কেন্টাকির কর্ণেল’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
তবে দীর্ঘ সফরের আরো অনেকটা পথ বাকি ছিল, সংগ্রামটাও শেষ হয়নি তখনও। ১৯৩৯ সালে নর্থ ক্যারোলিনার অ্যাশভিলে একটা মোটেল খুলেছিলেন তিনি, অনেক টাকা পুঁজি ঢেলেছিলেন এটার পেছনে। কিন্ত সেবছরের নভেম্বরে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো মোটেলটি পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। দমে না গিয়ে সেই ধ্বংসাবশেষের জায়গাটায় তিনি ১৪০ আসনের একটা রেস্টুরেন্ট খুলে বসলেন। ১৯৪০ সালে স্যান্ডার্স তাঁর ‘সিক্রেট রেসিপি’ চিকেন ফ্রাই তৈরি শুরু করেছিলেন, কিন্ত সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোক্তাদের সামনে আনার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্যান্ডার্সকে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল সেই হোটেলটা। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁকে সিয়াটলের সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল, এরপরে তিনি সরকারি সৈন্য আর কর্মীদের জন্যে ক্যাফেটেরিয়া চালাতেন।
১৯৫২ সালে তিনি বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে এলেন তাঁর অনেক সাধনার রেসিপি- ‘কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন’। শেলবিভিলে’তে নতুন একটা রেস্তোরা খুললেন তিনি, যেখানে শুধু ফ্রাইড চিকেনের এই ডিশটাই পাওয়া যাবে। লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়লো নতুন এই আইটেম চেখে দেখতে, সবার পছন্দও হলো। বিক্রি করে কূলোতে পারছিলেন না কর্নেল স্যান্ডার্স, শুরু করলেন বিভিন্ন শহরে কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেনের শাখা খোলা, প্রথমে আমেরিকা আর তারপরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো KFC। ১৯৫৫-১৯৬৫ এই দশ বছরে চীন, কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে KFC -র প্রায় ছয়শো’র বেশী শাখা খোলা হয়েছিল, রমরমা ব্যবসা চলছিল, এতদিনে দেখা দেয়া সাফল্যের তরী চলা শুরু করলো নিরন্তর গতিতে!
বয়স বাড়ছিল, ব্যবসার এতসব দক্ষযজ্ঞ সামলানোর মতো অবস্থা কর্ণেল স্যান্ডার্সের ছিল না। আর তাই ১৯৬৪ সালে তাঁর ‘কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন কর্পোরেশন’ দুই মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি করে দেন, অবশ্য সেখানেও একটা অংশের শেয়ার তাঁর নামে ছিল। তিনি KFC -র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর হিসেবে বহাল থাকলেন। নিজে ঘুরে বেড়াতে থাকলেন বিশ্বজুড়ে, KFC -কে ছড়িয়ে দিতে থাকলেন। প্রায় দুই লক্ষ মাইল তিনি ভ্রমণ করেছেন এক বছরে, অংশ নিয়েছেন কোম্পানির বিজ্ঞাপনী কর্মকাণ্ডে। KFC -র কোন শাখায় গিয়ে খাবারের মান নিয়ে তাঁর মনে অসন্তোষ এলে নগদে সেই শাখাটি নিজে কিনে নিতেন তিনি, বন্ধ করে দিতেন এর কার্যক্রম!
Communication Masterclass by Tahsan Khan
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
১৯৮০ সালে নব্বই বছর বয়সে অবসান হয় এই সংগ্রামী জীবনের, যে জীবন হার মানতে শেখেনি, ভেঙে পড়েছে, কিন্ত মচকে যায়নি, যে জীবন সফলতার জন্যে উন্মুখ হয়ে ছুটেছে বছরের পর বছর, যে জীবন অন্যদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- থেমে থাকার সময় নেই এখানে! জীবন নিয়ে জুয়া খেলা, বারবার নিজের সামর্থ্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো সেই মানুষটার প্রতিষ্ঠিত KFC গত চারযুগ ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুড চেইনশপগুলোর একটি! কর্নেল স্যান্ডার্স তাই আট’শ কোটির পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষের জন্যে জ্বলন্ত এক অনুপ্রেরণার নাম।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
আপনার কমেন্ট লিখুন