বাংলা ২য় পত্রের টুকিটাকি: সারমর্ম লেখার নিয়ম

March 27, 2023 ...

সারমর্ম কী?

সার শব্দের অর্থ হলো ‘মূল’। আর ‘মর্ম’ অর্থ তাৎপর্য। কোনো পদ্য বা কবিতা রচনায় যেসব যুক্তি, দৃষ্টান্ত, উপমা ও অলঙ্কার থাকে তা বাদ দিয়ে সহজ-সরল ভাষায় বিষয়টি সংক্ষেপে প্রকাশ করার নামই সারমর্ম। সাধারণত কোনো কবিতা পড়লে আমরা দেখতে পাই, কবি তার মনের মূলভাবটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল ভাবের সহায়ক অনেক কথা বলেন। একটি ভাবকে যথার্থ ও সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য উপমা, উদাহরণ ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। সে লেখাটির মূল কথা বা সার কথা বা সারবস্তুই আসলে সারমর্ম।

সারমর্মে মূলভাবটি যথার্থ ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করাটাই মূল বিষয়। বাহুল্য কথার মধ্য থেকে মূল কথাটি খুঁজে বের করাই সারমর্ম লেখার উদ্দেশ্য একটি রচনা নানা রকম কারণে বড় হতে পারে। বিষয়বস্তুর কারণে সেখানে যুক্ত হতে পারে উপমা, উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের বাহুল্য। বিষয়ের আলোচনায় হয়তো এসব কিছুই হয়ত মানিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সারমর্ম লেখার ক্ষেত্রে এসব বাহুল্য একেবারে পরিতাজ্য। সেখানে অতিরিক্ত বিষয় বাদ দিয়ে সহজ সরল ভাষায় মূল বক্তব্য তুলে ধরতে হবে।

মোট কথা, কোনো লেখা ছোট আকারে আকর্ষণীয় ভাষায় প্রকাশ করার নামই সারাংশ বা সারমর্ম। কবিতার ক্ষেত্রে এই সংক্ষিপ্তকরণকে বলা হয় সারমর্ম।

সারমর্ম লেখার নিয়ম :

১. কবিতার নির্ধারিত অংশটি বারংবার পড়ে মূল বক্তব্য অনুসন্ধান করতে হবে।

২. মূল অংশে উপমা, অলঙ্কার, দৃষ্টান্ত এইসব অপ্রয়োজনীয় বিষয় গুলো সারমর্ম থেকে বাদ দিয়ে আসল কথাটা লিখতে হবে।

৩. একই কথার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। তেমনি প্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া যাবে না।।

৪. সারমর্ম মূল অংশের চেয়ে আকারে একটু ছোট হবে। খুব ছোট কিংবা বড় হবে না।

৫. বক্তব্যের বর্ণনায় বিশেষণ, ক্রিয়াপদ, অলঙ্কার, উপমা, রূপক ইত্যাদি অবান্তর। বহুল্য বাদ দিয়ে মূল বিষয়টি সরাসরি লিখতে হবে।

৬. মূল বিষয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো বিষয় সারমর্মে উল্লেখ করা যাবে না।

৭. সারাংশ কিংবা সারমর্ম রচনার ভাষা মূলের অনুগামী হওয়া প্রয়োজন। সহজ-সরল মৌলিক ভাষায় বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সবার সহজবোধ্য হয়।

৮. উদ্ধৃত রচনায় একাধিক বিষন্ন থাকলে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে এবং মূল বিষয়টি থেকে যাতে রচিত অংশটি সরে না আসে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

৯. শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে সংযম অবলম্বন করতে হবে। একাধিক বিশ্লেষণ প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়।

১০. কোনো সাংকেতিক বিষয় থাকলে তার তত্ত্ব বের করতে হবে। ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য থাকলে দুই পক্ষের বক্তব্য আলাদাভাবে প্রকাশ করতে হবে।

১১. প্রদত্ত অনুচ্ছেদ অথবা কবিতাংশটি বারবার পড়ে মূলভাবটি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

১২. উদ্ধৃত অংশের মূলভাবের বাক্য/বাক্যগুলি চিহ্নিত করা।

১৩. উপমা, উদাহরণ, উদ্ধৃতি ও রূপক আলাদাভাবে চিহ্নিত করা।

১৪. সারমর্ম লিখাল সময় লেখার আয়তন যেন বড় না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা।

১৫. মূলভাবটি যথাযথ ও সহজ বাক্যবিন্যাসে লেখা।

১৬. উপমা, রূপক উদ্ধৃতসহ সকল বাহুল্য বর্জন করা।

১৭. একই কথার পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

১৮. উদ্ধৃতাংশটি কোন কবি বা লেখকের সেটি বলার দরকার নেই।

১৯. যে বাক্য দিয়ে সারমর্ম লেখা শুরু করবে তা সহজ সরল ও মূলভাবের প্রতি নির্দেশক হবে।

২০. লেখার পর কয়েকবার পড়ে নিশ্চিত হবে যে প্রয়োজনীয় কোনো কিছু বাদ যায়নি তো।

নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো। এসব থেকে তোমরা ভালো ধারণা পেয়ে যাবে কীভাবে সারমর্ম লিখতে বা ভালো করতে হয়।

সারমর্ম উদাহরন #১ কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর ?
মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক, –মানুষেতে সুরাসুর !
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।

সারমর্ম:

পৃথিবীতে মানুষ তার কর্মের দ্বারাই স্বর্গ ও নরকের ফল ভোগ করে থাকে। মানুষ ভালো কর্মের দ্বারা লাভ করে স্বর্গীয় সুখ, আর অপকর্ম মানুষের জীবনে আনে নরক যন্ত্রণা। প্রীতি ও প্রেমের মাধ্যমে পৃথিবীতে স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করা যায়।

সারমর্ম উদাহরন #২ এসেছে নতুন শিশু

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

সারমর্ম:

নতুনের আগমনে পুরাতনের প্রস্থান – এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আগামী প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য ও অনুকূল করা আমাদের দায়িত্ব। পুরাতন পৃথিবীর ব্যর্থতা ও গ্লানি অপসারণ করে গড়তে হবে আনন্দময় নতুন সুন্দর পৃথিবী।

সারমর্ম উদাহরন #৩ বসুমতি কেন তুমি

বসুমতি, কেন তুমি এতই কৃপণা,
কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা, প্রসন্ন সহাস—
কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস।
বিনা চাষে শস্য দিলে কী তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতী,
আমার গৌরব তাহে সামান্যই বাড়ে,
তোমার গৌরব তাহে নিতান্তই ছাড়ে।

সারমর্ম:

মানবজীবনের গৌরব ও মর্যাদা অর্জিত হয় পরিশ্রমের মাধ্যমে। বিনা পরিশ্রমে কিছু অর্জনের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। তাতে মনুষ্যত্বের অবমাননাও হয়। বস্তুত করুণা বা দয়া নয়, পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনকে সার্থক ও গৌরবান্বিত করাই মানবজন্মের সার্থকতা।

সারমর্ম
Source: freepik.com

সারমর্ম উদাহরন #৪ সাম্যের গান গাই

সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।

বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি

অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।

জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান

মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।

কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,

কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি কত বোন দিল সেবা,

বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?

কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।

সারমর্ম :

মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। কিন্তু ইতিহাসে নারীদের তুলনায় পুরুষের কথা বেশি লেখা হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে তার কর্ম-স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন দিন এসেছে সম-অধিকারের। নারী-পুরুষ সবাইকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সারমর্ম উদাহরন #৫ পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে?

আপনার কথা ভুলিয়া যাও। পরের কারণে মরণেও সুখ,

‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;

যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,

ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে

আসে নাই কেহ অবনী পরে

সকলের তরে সকলে আমরা

প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

সারমর্ম :

ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়, একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচয়।

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন