প্রতিবেদন অংশে মোট নম্বরের দশ শতাংশ তো অন্তত আছেই। কাজেই নম্বর পাওয়ার মতো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর লিখলে, ভালো নম্বর পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। আবার ছোটখাটো ভুলের জন্য মোটা অঙ্ক খাতা থেকে সরে যাই যাই অবস্থা হয়। ব্যাপারটা প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায়- সঠিক কৌশল অবলম্বন। তাই প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণগুলোর কৌশল ধাপে ধাপে রপ্ত করে নেওয়া যাক।
১. প্রেক্ষাপট:
প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগ নেই। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন নানা রকম হতে পারে। নবম-দশম শ্রেণিতে প্রতিবেদনকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা : সংবাদ প্রতিবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন ও সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন।
২. সংবাদ প্রতিবেদন লেখার কৌশল:
- প্রথম অংশ: দুই লাইনের মধ্যে একটি দৃষ্টিনন্দন শিরোনাম দেয়া উচিত।
- দ্বিতীয় অংশ: এরপরের অংশে বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হয়। সংবাদ প্রতিবেদন লেখার সুবিধা হলো এতে শুধু শিরোনাম লিখেই সরাসরি মূল লেখায় চলে যাওয়া যায়। এ ধরনের প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে সম্পাদকের নিকট আনুষ্ঠানিক পত্র কিংবা খাম আঁকার প্রয়োজন নেই। প্রশ্নে সংবাদপত্র বা প্রতিবেদকের নাম থাকলে সেটা অনুসরণ করতে হবে। আর তা না থাকলে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. সাধারন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার কৌশল:
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাঁর প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবস পালন বা স্কুলের কোন সমস্যার বিবরণ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে থাকেন। এজন্য তিনি কাউকে প্রতিবেদন লেখার দায়িত্ব দিয়ে থাকেন।
যেমন : ধরো, তুমি ‘ক’ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিজয় দিবস উপলক্ষে তোমাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার অনুমতি চেয়ে প্রতিবেদন রচনা কর।
শুরুটা হয় এরকম:
*বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,*
দিয়ে এ জাতীয় প্রতিবেদন শুরু করতে হয়। এরপর প্রসঙ্গ অনুযায়ী শিরোনাম লিখে বিষয়বস্তু ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। পত্র শেষে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটা খাম দেওয়া যেতে পারে। না দিলেও সমস্যা হবে না। একটি কাঠামো মেনে লিখলে পুরোটা ব্যাপার সেজে থাকবে-
প্রশ্ন: তোমার বিদ্যালয়ে উদযাপিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ অনুষ্ঠানের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
প্রধান শিক্ষক,
‘গ’ স্কুল, ঢাকা।
বিষয় : বিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে প্রতিবেদন।
মহোদয়,
সম্প্রতি সমাপ্ত … (অনুষ্ঠানের বিবরণ, শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা, অনুষ্ঠানসূচী সহ সারমর্ম উল্লেখ করে বেশ বিস্তারিতভাবেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে হবে)
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা :
প্রতিবেদনের শিরোনাম : ‘গ’ স্কুলে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত।
তৈরির তারিখ :
প্রতিবেদন তৈরির সময় :
৪. তদন্ত প্রতিবেদন লেখার কৌশল:
সাধারন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়মের সাথে তদন্ত প্রতিবেদন লেখার খানিকটা মিল রয়েছে। তবে সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে এটা মিলবে না। এতে লেখকের ব্যক্তিগত মতামতের সম্পর্কে লিখতে হয়। দায়িত্ব প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয়।
– প্রতিবেদনের শুরুতে ঘটনা ব্যাখ্যা করার পর ঘটনার পুুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদককে জানাতে হয়।
– মনে কর, রাস্তায় সিগন্যাল বাতি না থাকার কারণে কোন একটি স্থানে বার বার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে থাকে। কারণ উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত কর।
একটি কাঠামো লক্ষ্য করে দেখলে পুরোটা বিষয় আরো পরিষ্কার হবে।
প্রশ্ন: তোমার এলাকায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্পর্কে একটি সংবাদ প্রতিবেদন রচনা কর।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট : প্রয়োজন আশু প্রতিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা : লোডশেডিং ঢাকা শহরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা…(তিন থেকে চার লাইন)
ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয়… (ব্যাখ্যা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কমপক্ষে দশ লাইন তো লেখাই উচিত)
*শেষ প্যারা দুই থেকে তিন লাইনে হবে যেখানে কিনা পুরোটা বিষয়ের সারমর্ম থাকবে।*
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : ‘খ’
৩/৩ মতিঝিল, ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : বিদ্যুৎ বিভ্রাট : প্রয়োজন আশু প্রতিকার
তৈরির সময় : সন্ধ্যা ৭:০০ টা
তৈরির তারিখ : জানুয়ারি ০১, ২০১৫
আবার,
মনে করো, মহাসড়কের কোন একটি স্থানে বার বার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে থাকে। কারণ উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত কর।
তারিখ : আগস্ট ০১, ২০১৫
জেলা প্রশাসক
যশোর
বিষয় : সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন।
মহোদয়
আপনার পত্র …………তদন্ত প্রতিবেদনটি পেশ করা হলো। (দুই থেকে তিন লাইন)
‘ঘ’ বারী
৩/৩ উত্তর যাত্রাবাড়ি
ঢাকা।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর কত !!
- কাঠামো অবলম্বন করে এবং শেষের দিকে প্রতিকার পয়েন্ট করে লিখতে হবে*
প্রতিবেদকের নাম :
প্রতিবেদকের ঠিকানা : ৩/৩ উত্তর যাত্রাবাড়ি
ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর কত !!
তৈরির সময় : সন্ধ্যা ৭ টা
তৈরির তারিখ : আগস্ট ০১, ২০১৫
এসব নিয়ম মেনে, একটু বুদ্ধি করে এবং সময় স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে যদি প্রতিবেদন লেখা যায়, তবে পরীক্ষক খুশি হয়ে শতভাগ নম্বর দিতেও দ্বিধাবোধ না করাটাই স্বাভাবিক।
আপনার কমেন্ট লিখুন