পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
ভর্তি পরীক্ষার হতাশাজনক সময়ের অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা অভিজ্ঞতা এক বিভীষিকা। এ অভিজ্ঞতা একজন ভাল স্টুডেন্টকেও তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মনে প্রশ্ন জাগায়। তবুও নিজের স্বপ্নের ঘুড়ির সুতাটা নিজে কেটে দেবার সিদ্ধান্তটা এতটাও সহজ না। কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, নিরাশ না হয়ে সামনে এগিয়ে চলার জন্যই কিছু গুরত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরবো।
তুমি ফার্স্ট টাইমার বা সেকেন্ড টাইমার যেটাই হও না কেন, মনের কোণায় একটা ভয় থেকেই যায়; যদি সরকারি মেডিকেলে (চান্স) না পাই? তখন কি করবো? একগাদা প্রশ্নের ভীড়ে যখন নিজেকে গন্তব্যহীন বলে মনে হয় তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্যই লেখা এসব কথা।
সরকারিতে চান্স না পেলে মনে দ্বিধাবোধ জন্ম নেয়, তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনোবল হেরে যায় দ্বিধাবোধের কাছে। মেডিকেল ভর্তির ব্যাপারে তখন সঙ্কোচ তৈরি হয়। মনে জন্ম নেয় অজস্র প্রশ্ন; যার মধ্যে বেশির ভাগই পড়াশোনার মান, পড়াশোনার ধরণ নিয়ে।
যদি সরকারিতে না হয়, কিন্তু লক্ষ্যস্থির রেখে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও, তবে মনোবল শক্ত রাখতে হবে। প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির আগে নিজের সিদ্ধান্তের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে নিজেকে নিশ্চিত হতে হবে। আর্থিক সবলতা এবং ডাক্তার হবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যদি থেকে থাকে, তবে কিছু তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত,
ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় এ্যাডমিশন ফর্ম তোলা এবং জমা দেওয়ার সময় নিজে গিয়ে কাজগুলো করতে হবে। এতে বিভিন্ন হাসপাতাল সম্পর্কে ধারনা আসবে যা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অনেক সাহায্য করবে। তাছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে যা তোমাকে হাসপাতালের পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা দিবে।
দ্বিতীয়ত,
নিজের পছন্দের তালিকাভুক্ত কলেজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উক্ত কলেজের সিনিয়ারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো, যাতে তাদের কাছ থেকে পড়াশোনার মান, পরিবেশ এবং শিক্ষকদের সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা পাওয়া যায়। সিনিয়ারদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লাস সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে। মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ক্লাস হয় কিনা, পরীক্ষাগুলো ঠিকভাবে অনুস্থিত কিনা, শিক্ষকদের পড়ানো কেমন এগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারো।
তৃতীয়ত,
গুগল করে জেনে নাও টপ প্রাইভেট কলেজগুলো এবং তাদের পূর্ববর্তী রেজাল্ট। এ তথ্যগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ তথ্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে উক্ত কলেজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
চতুর্থত,
যদি মেডিকেল কোচিং করে থাকো, তবে কোচিং এর বড় ভাইয়া-আপু যারা ইন্সট্রাক্টর ছিলেন, তাদের কাছ থেকে মন্তব্য জেনে নিতে পারো। তারা বিভিন্ন কলেজ সম্পর্কে ভাল জানেন। তাছাড়া যদি তোমার পছন্দের উক্ত কলেজটিতে কোন সিনিয়ার চেনা না থেকে থাকে, তবে তাদের চেনা কার কাছ থেকে হেল্প নিতে পার।
পঞ্চমত,
মেডিকেল কলেজের সুবিধাসমুহ সম্পর্কে অবগত হতে হবে। ল্যাবগুলোতে সব সরঞ্জাম আছে কিনা, ডিসেকশনের ক্ষেত্রে যাবতীয় যা যা প্রয়োজন তা কলেজটি সরবরাহ করে থাকে কিনা তা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
ষষ্ঠত,
ভর্তির পূর্বে মেডিকেলের পড়াশোনার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জেনে নেয়াটা ভাল। যেগুলো না জানলেই না, যেমন- পরীক্ষার পদ্ধতি, পড়াশোনার বিভিন্নতা, গ্রুপ স্টাডি ইত্যাদি। কেননা, ইউনিভার্সিটির নিয়মগুলো থেকে এটি অনেক ভিন্নতর হয়ে থাকে।
সবশেষে মেডিকেল জীবন সম্পর্কে কিছু কথা, যেন কিছুটা হলেও এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। হ্যাঁ মেডিকেল জীবন আসলেই কঠিন। অনেক কিছু পার করতে হবে; যার মধ্যে রাত জেগে পড়াশোনা খুবই কমন, থাকবে প্রতিদিন পরীক্ষা, ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে এগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
মেডিকেলের প্রাইভেট এবং সরকারি প্রফ পরীক্ষাগুলো একই নিয়ম এবং প্রশ্নের ভিত্তিতে হয়। এক্ষেত্রে ফলাফল ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। তাই সরকারি বা প্রাইভেট নিয়ে ভবিষ্যতে তেমন সমস্যা হয় না। সুতরাং নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ নেই।
ছোটবেলার ডাক্তার হবার ইচ্ছেটাকে বাস্তবতাতে রুপান্তরিত করার চেয়ে বড় প্রাপ্তি নেই।
কিছু বিষয় সম্পর্কে নিজে সতর্ক হতে হবে। প্রাইভেট মেডিকেলের ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রেখে, নিজ লক্ষ্যস্থিরতার প্রতি নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। কেননা এখানে পিছিয়ে পড়া যাবেনা কোনোভাবেই। পড়াশুনায় গাফেলতি যেন কোনোভাবে না হয় তা আগে থেকেই অবগত হয়ে নাও, মেডিকেলে কোন ধাপে পিছিয়ে পড়লে তা থেকে রিকাভার করে উঠাটা কঠিন। তাই, প্রথম থেকেই পড়াশোনাটা নিজের আয়ত্তে রাখতে হবে। রেজাল্ট যেন খারাপ না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রেজাল্ট খারাপ হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ডিফল্টার বা ড্রপআউটের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়গুলো অনেকেরই অজানা থেকে যায়, ভর্তির আগেই এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা ভাল।
মেডিকেল অনেক ভাল কিছু প্রাপ্তি নিয়ে আসবে। জীবনের সবচেয়ে ভাল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের সন্ধান মিলবে এখানে। নিজের জীবন শৃঙ্খলাবদ্ধ এক রুটিনে চলে আসবে। অনেক মানুষের সাথে কাজ করার এবং শেখার সুযোগ আসবে। এ অভিজ্ঞতাগুলো এমন যে, তখন মনে হবে, প্রত্যেকটা কষ্টের পেছনে ঘাম ফেলাটা বৃথা যায়না। মেডিকেলের প্রতি যদি নিজের ব্যক্তিগত দূর্বলতা না থাকে, তবে এখানে টিকে থাকাটা কষ্টের। কেননা মেডিকেলের মানসিক প্রেশারটা নিতে পারাটা কঠিন। প্রতিদিনকার পরীক্ষার চাপ নিতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে হয়। এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয় যা কেবল ডাক্তারদেরকেই মুখোমুখি হতে হয়।
সব কথার মূল কথা, ছোটবেলার ডাক্তার হবার ইচ্ছেটাকে বাস্তবতাতে রুপান্তরিত করার চেয়ে বড় প্রাপ্তি নেই। In what other way can you feel like a superhero wearing a cape every day? Oops, that’s your white apron which will give you an identity for the rest of your life.
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন