যুগে যুগে কিছু নারী আসেন যারা ফেমিনিজ ও নারীত্বের স্বাক্ষর। তারা কাজে, কর্মে সফল যেমন নিজের জীবনে সফল। তেমনি প্রভাবিত করে যান হাজার হাজার নারীকে তাদের মতো হতে, তাদের পথ অনুসরন করতে। তেমনি এক সংগ্রামী নারী মালালা ইউসুফজাই। এ লেখায় আমরা জানবো আজ এই মহীয়সী নারীর ব্যাপারে:
জন্ম ও বেড়ে ওঠা:
মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জুলাই উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় পাশতুন জনজাতির অন্তর্ভুক্ত এক মুসলিম সুন্নি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।সেখানে মালালা তাঁর পিতা জিয়াউদ্দিন, মাতা তোর পেকাই ও দুই কনিষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে বসবাস করতেন।
শিক্ষার জন্য আন্দোলন:
২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তালেবান সে সময় তাদের এলাকা সোয়াত উপত্যকা দখল করে নিয়েছিল এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ সহ বিভিন্ন কঠর পদক্ষেপ গ্রহণ করছিল। ১৫ জানুয়ারির পরে কোনো ছাত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারবে না এই মর্মে তালিবানরা ফতোয়া জারি করে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট শতাধিক স্কুল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নষ্ট করে দেয়। ২০০৯ সালে যখন মালালার বয়স মাত্র ১১ বছর, তখনই তিনি বিবিসির উদ্যোগে এবং তার বাবার সহযোগিতায় “গুল মাকাই” ছদ্মনামে উর্দুভাষী একটি ব্লগে তালেবানের অধীনে তাদের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা লিখতে শুরু করেন।
এর পরে ২০১১ সালে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে মালালা ইউসুফজাই নিয়মিত সাক্ষাৎকার দেন, নানান অনুষ্ঠানে যোগ দান করেন আর জানান যে তিনি-ই ছিলেন বিবিসি ডায়েরির গুল মাকাই।
হত্যা প্রচেষ্টা:
মালালা ধীরে ধীরে বিখ্যাত হতে শুরু হলে তাঁর বিপদ বাড়তে শুরু করে। সংবাদপত্রে প্রকাশ করে, বাড়িতে ও ফেসবুকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া শুরু হয়। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে তালিবান নেতারা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।২০১২ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর, মালালা পরীক্ষা দিয়ে বাসে বাড়ি ফেরার সময়, একজন তালিবান বন্দুকধারী সেই বাসে উঠে পড়েন। এই বন্দুকধারী বাসে উঠে মালালা কে তা জানতে চেয়ে বাসের সকল যাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেন,এবং অবশেষে মালালাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি ছোড়ে, যার মধ্যে একটি তাঁর কপালের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে মুখমণ্ডল ও গলা দিয়ে কাঁধে পৌঁছয়।এই ঘটনায় কায়নাত রিয়াজ ও শাজিয়া রমজান নামক আরো দুই মেয়ে আহত হন।
আরো পড়ুন: অনুপ্রেরণার অভাব?
চিকিৎসা:
মালালাকে প্রথমে পেশাওয়ার শহরের একটি সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁর ওপর অস্ত্রোপচার করেন। পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাঁর কাঁধ থেকে গুলিটিকে বের করে আনতে সক্ষম হন। পরবর্তিতে পাকিস্তানি ও ব্রিটিশ চিকিৎসকের একটি দল তাঁকে রাওয়ালপিন্ডি শহরের আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালালার চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে।চিকিৎসক ও পরিবারের সম্মতিতে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খরচে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যাম শহরের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ও পরবর্তি চিকিৎসা চালানো হয়।সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
প্রতিক্রিয়া:
এই হত্যা প্রচেষ্টা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে মালালার জন্য সহমর্মিতা ও তালিবানদের বিরুদ্ধে ক্রোধের সঞ্চার ঘটে। আক্রমণের পরের দিন পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কুড়ি লক্ষাধিক মানুষ পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন, যার ফলে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষার অধিকার বিল আইন হিসেবে স্বীকৃত হয়।অপরদিকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মালালা নতুন উদ্যমে তার আন্দোলন চালিয়ে যান।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
“সন্ত্রাসবাদীরা ভেবেছিল তারা আমার লক্ষ্য পরিবর্তন করে দেবে আর আমার আকাঙ্ক্ষাকে বন্ধ করে দেবে, কিন্তু আমার জীবনে কিছুই পাল্টায়নি এটুকু ছাড়া: দুর্বলতা, ভয় আর নিরাশা মরে গেছে। শক্তি, ক্ষমতা আর সাহসের জন্ম হয়েছে … আমি কারোর বিরুদ্ধে নই, বা আমি এখানে তালিবান বা অন্য কোন সন্ত্রাসবাদী দলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ সম্বন্ধে বলতে আসিনি। আমি এখানে প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকারের পক্ষে বলতে এসেছি। আমি তালিবান এবং সকল সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থীদের ছেলে মেয়েদের জন্য শিক্ষা চাই। … আসুন আমরা অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি মহান সংগ্রাম শুরু করি, আমরা আমাদের বই আর আমাদের কলম তুলে নিই, ওগুলোই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই আর একটি কলম দুনিয়া বদলে দিতে পারে। শিক্ষাই একমাত্র সমাধান”
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই জাতিসংঘের ভাষণে মালালার বক্তব্যের কিয়দংশ।
এই নারীর কর্মকান্ড এতটাই ব্যাপক যে আপনি গুগলে মালালা লিখে সার্চ করলে পুরা একদিন ধরে তার বায়োগ্রাফি পড়তে পারবেন। এতটাই বিস্তর, বিস্তৃত, সফল ও সংগ্রামী এই নারী। পেয়েছেন নিজ কাজের জন্য সম্মাননা ও পুরস্কার।
পুরস্কার ও সম্মাননা:
মালালা ইউসুফজাই নিম্নলিখিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন:
২০১১: আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার (মনোনীত)
২০১১: জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার
জানুয়ারি, ২০১২: নৈতিক সাহসিকতার জন্য অ্যানা ফ্র্যাংক পুরস্কার
অক্টোবর, ২০১২:সিতারা-এ-শুজাত
নভেম্বর, ২০১২: ফরেন পলিসি সাময়িকীর সেরা ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদ
নভেম্বর, ২০১২: মাদার টেরিজা পুরস্কার
ডিসেম্বর, ২০১২: টাইম বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব বাছাই
ডিসেম্বর, ২০১২: শান্তি ও মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য রোম পুরস্কার
জানুয়ারি, ২০১৩: সাইমন দে বোভেয়ার পুরস্কার
মার্চ, ২০১৩: মেম্মিঙ্গার ফ্রেই হেইটস্প্রেইস ১৫২৫
মার্চ, ২০১৩: ডাউটি স্ট্রীট অ্যাডভোকেসি অ্যাওয়ার্ড অব ইন্ডেক্স অন সেন্সরশিপ
মার্চ, ২০১৩: ফ্রেড ও অ্যানা জার্ভিস পুরস্কার
এপ্রিল, ২০১৩: ভাইটাল ভয়েসেস গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডস
এপ্রিল, ২০১৩: টাইম সাময়িকী বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের একজন
মে, ২০১৩: প্রেমি ইন্তারন্যাসিওনাল কাতালুনিয়া অ্যাওয়ার্ড
জুন, ২০১৩: ওপেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিলের বার্ষিক উন্নয়ন পুরস্কার
জুন, ২০১৩: দ্য অবজার্ভার এথিক্যাল অ্যাওয়ার্ডসের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের সেরা আন্তর্জাতিক প্রচারক
অগাস্ট, ২০১৩: টিপেরারি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার
অগাস্ট, ২০১৩: আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার
সেপ্টেম্বর, ২০১৩: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে অ্যাম্বাসাডর অব কনসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড
সেপ্টেম্বর, ২০১৩: ক্লিন্টন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ডস
সেপ্টেম্বর, ২০১৩: হার্ভার্ড ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পিটার গোমস হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড
২০১৩: অ্যানা পোলিতকোবস্কায়া পুরস্কার
২০১৩: ওকলাহোমা সিটি ন্যাশনাল মেমোরিয়ালের পক্ষ থেকে রিফ্লেকশন অব হোপ অ্যাওয়ার্ড
২০১৩: শাখারভ পুরস্কার
২০১৩: এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাম্মানিক কলাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী
অক্টোবর, ২০১৩: প্রাইড অব ব্রিটেন টিনেজার অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড
নভেম্বর, ২০১৩: গ্ল্যামার ম্যাগাজিন বছরের সেরা নারী
নভেম্বর, ২০১৩: জিজি২ হ্যামার পুরস্কার
নভেম্বর, ২০১৩: ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড নন-ডিসক্রিমিনেশন
ফেব্রুয়ারি, ২০১৪: শিশু অধিকারের জন্য বিশ্ব শিশু পুরস্কার
মার্চ ২০১৪: আয়ার্ল্যান্ডের এক্সিকিউটিভ ইউনিয়নের সাম্মানিক আজীবন সদস্যপদ
২০১৪: স্কোল গ্লোবাল ট্রেজার অ্যাওয়ার্ড
২০১৪: সাম্মানিক ডক্টরেট, ইউনিভার্সিটি অব কিং’স কলেজ, হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা
যুগ্মভাবে ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীর সঙ্গে ২০১৪: নোবেল শান্তি পুরস্কার
২০১৪: ফিলাডেলফিয়া লিবার্টি মেডেল
২০১৪: টাইম ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৫ জন কিশোরবয়স্কদের একজন
২০১৪: সাম্মানিক কানাডীয় নাগরিকত্ব
২০১৫: তাঁর সম্মানে একটি গ্রহাণুর নামকরণ ৩১৬২০১ মালালা করা হয়।
যুগে যুগে সংগ্রামী নারীরা আসেন পৃথিবীতে। মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়াদের মতো এ যুগের মালালা। তারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন নারীরা দুর্বল না, তারা চাইলে পারেনা এমন কোন কাজ নেই। তারা যেমন পারে চার দেয়ালের মাঝে মুখ বুজে অন্যায় সহ্য করতে আবার বাইরের দুনিয়ার সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাতে, কলম ধরতে। যুগে যুগে এমন হাজারো মালালা আসুক এ সমাজে, এটাই প্রত্যাশা।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন