বর্তমান সময়ে গ্রাফিক ডিজাইন একটি খুবই জনপ্রিয় পেশা। আর, লোগো ডিজাইনিং হলো গ্রাফিক ডিজাইনারদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে অন্যতম। দিন দিন লোগো ডিজাইনারদের গুরুত্ব বাড়ছেই। কারণ, লোগো দিয়েই একটি কোম্পানি বা ব্যবসার সার্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে, আর বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে অসংখ্য ব্যবসা। এছাড়াও দেখবেন, বিগত ৫-১০ বছরে বড় বড় সব কোম্পানি কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাদের লোগো আপডেট করেছে।
তাই এখনকার সময়ে লোগো ডিজাইন হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যম। অতএব, লোগো কী? লোগো কীভাবে ডিজাইন করে? লোগো ডিজাইন করার উপায়, লোগো তৈরির সফটওয়্যার ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এই লেখা। তো চলুন, মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
লোগো কী?
লোগো হচ্ছে এমন এক ধরনের অনন্য ডিজাইন বা প্রতীক, যা কিনা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার পরিচয় বহন করে। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী লোগো হলো:
A printed design or symbol that a company or an organization uses as its special sign.
এই সংজ্ঞা থেকেও আমরা লোগো নিয়ে বেশ ভালো একটা ধারণা পাচ্ছি। নিচের লোগোটি দেখুন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। লোগো থেকেই কোম্পানির নাম মাথায় এসে যাচ্ছে না? এটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-এর লোগো।
এভাবেই লোগোর মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং খুব সুন্দরভাবে হয়ে যায় এবং সহজেই চেনা যায়। এজন্যই পুরো বিশ্বের কাছে লোগোর এত গুরুত্ব। স্টারবাক্সের একটি লোগোই কিন্তু পুরো প্রতিষ্ঠানকে রিপ্রেজেন্ট করে। বড় বড় কোম্পানি মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকে লোগোর পেছনে। তাহলে বুঝতে বাকি নেই লোগোর গুরুত্ব কতটা এবং এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়াটা কতটা চমৎকার হতে পারে!
তাই জেনে নিন লোগো তৈরির সফটওয়্যার এবং শিখতে শুরু করুন লোগো ডিজাইন!
লোগোর বৈশিষ্ট্য
অনেকেই ভাবতে পারেন, যেহেতু একটি প্রতীক তথা সিম্বল পুরো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করছে, সেহেতু লোগো নিশ্চয়ই অনেক জাঁকজমকপূর্ণ এবং রঙচঙে হতে হবে। আদতে বিষয়টা ঠিক উল্টো। লোগো হতে হবে একদম সাধারণ। এছাড়াও নানান বৈশিষ্ট্য থাকবে। যেমন:
- অনন্যতা
- সহজ ডিজাইন
- সুন্দর কনসেপ্ট
- রঙচঙে নয়
- নান্দনিক ডিজাইন প্যাটার্ন
- থিমেটিক ডিজাইন
ইত্যাদি। আমি একে একে এগুলো আলোচনা করছি।
লোগোর ক্ষেত্রে অনন্যতা খুবই জরুরি। নিচে ১০ মিনিট স্কুলের লোগো আইকনটি দেখুন।
ধরুন, আপনি নতুন সংগঠন চালু করছেন ১০ টাকার দোকান নামের। এখন আপনি যদি উপরের আইকন সরাসরি ব্যবহার করেন আপনি এমনকি মামলার শিকারও হতে পারেন। আবার, আপনি যদি এর কনসেপ্ট কপি করে একই ধরনের লোগো ডিজাইন করেন তাহলে সাধারণ মানুষ দু’টো প্রতিষ্ঠানকে গুলিয়ে ফেলবে। যেহেতু ১০ মিনিট স্কুল খুব জনপ্রিয়, তাই সকলে আপনার সংগঠনকে এটার অংশ বলে ধরে নেবে।
এবার আসি, লোগোর কম্পোজিশন নিয়ে। লোগো সাধারণ হলেও এর অর্থবহতা অনেক বেশি থাকতে হবে। যদিও আগে একসময় কিছুটা জাঁকজমক ও রঙচঙে লোগোর প্রচলন ছিল, বর্তমানে একদমই সেটা নেই। এমনকি যাদের লোগো আগে তেমন ছিল, তারা এখন নতুন ধারায় চলে এসেছে।
আগেই বলেছি, বড় বড় কোম্পানি মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকে লোগোর পেছনে। তাই লোগোর মানও তেমন হতে হবে। নান্দনিক ডিজাইন প্যাটার্ন ও থিমেটিক ডিজাইন হতে হবে। এভাবেই সুন্দর কনসেপ্ট তৈরি হবে। ধরুন, আপনি একটি ক্রিকেট বিষয়ক লোগো বানাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করবে আপনার লোগোতে ক্রিকেট বিষয়ক কোনো আইকন থাকবে।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেইমসের লোগো ডিজাইন করতে খরচ হয়েছিল ৬২৫ হাজার মার্কিন ডলার! যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকারও বেশি! সুতরাং ভালো লোগোর কদর অনেক অনেক বেশি, বলাই বাহুল্য।
লোগোর গুরুত্ব
লোগো মূলত আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে লোগোর গুরুত্ব অনেক। তাই লোগো হওয়া চাই দেখলেই মনে থাকার মতো। পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠান, অ্যাপের থিম তৈরি হয় লোগো থেকে। তাই লোগো একদিকে যেমন হতে হবে মিনিমালিস্টিক (সাধারণ), তেমনি অন্যদিকে করতে হবে সেই প্রতিষ্ঠান বা সেবার প্রতিনিধিত্ব। এভাবেই একটি ব্যবসার বিভিন্ন দিকে লোগোর ব্যবহার থাকায় লোগো ডিজাইন করার সময় অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Logo Design করে Freelancing
লোগো ডিজাইনিং শেখার জন্য করণীয়
যেহেতু আপনি ইতোমধ্যে বেশ ভালোভাবে লোগোর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন বলে ধরে নিচ্ছি, এখন আপনার প্রথম কাজ কিছু লোগো তৈরী করা। লোগো ডিজাইন করা হলে আপনি নিজের জন্য একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। সেখানে আপনার ডিজাইন করা সব লোগোর কালেকশন সুন্দর করে সাজানো থাকবে। আপনি কোথাও লোগো ডিজাইনার হিসেবে চাকরির আবেদন করলে যেমন এই পোর্টফোলিও সাহায্য করবে, তেমনি আপনি যদি মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চান, সেখানেও আপনার এটি কাজে লেগে যাবে- বলাই বাহুল্য।
আরো পড়ুন: অ্যাডবি ফটোশপ: গ্রাফিকসের দুনিয়ার জাদুর কাঠি
লোগো ডিজাইন করার ১১টি ধাপ
লোগো ডিজাইনের ধাপগুলোকে ১১টি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো:
- ব্র্যান্ড পরিচয় প্রকাশ করুন
- আইডিয়া খুঁজুন
- লোগো স্টাইল ভাবুন
- ধরন ঠিক করুন
- রংয়ের তালিকা ঠিক করুন
- ফন্ট ঠিক করুন
- জ্যামিতিক আকৃতি ব্যবহার করুন
- লোগো ডিজাইন করুন
- ফলাফল পরিমার্জন করুন
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ
- লোগো কাজে লাগান
১. ব্র্যান্ড পরিচয় প্রকাশ করুন
উপরেই আলোচনা করেছি, লোগো কীভাবে একটি ব্র্যান্ডকে তুলে ধরে। এ জিনিসটি লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি। ব্র্যান্ড যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করে সে বিষয়টি লোগোতে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করতে হবে। ফলে লোগোটা মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য হবে এবং বিষয়টিও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।
২. আইডিয়া খুঁজুন
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে ইউনিক আইডিয়া বলে কিছু নেই। তাই, আইডিয়া খুঁজুন অন্যদের করা কাজ থেকে। এর মানে এই না যে আপনি আইডিয়া কপি করবেন। আইডিয়াকে ইন্সপিরেশন তথা অনুপ্রেরণা হিসেবে রাখুন। অনেক ধরনের উদাহরণ দেখলে আপনার মাথায় আইডিয়া আসা শুরু করবে।
ধরুন, আপনি একটি ফ্যাশন কোম্পানির জন্য লোগো বানাতে চাচ্ছেন। আপনার প্রথম কাজ হলো, এ ধরনের কিছু লোগোর আইডিয়া নেয়া। এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসবে, “আইডিয়া পাবো কোত্থেকে? আমি কি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে তাদের লোগো দেখবো?” অবশ্যই না। এর চেয়ে সহজ উপায় আছে। আপনি Behance ও Dribbble থেকে আইডিয়া নিতে পারবেন। এসব জায়গায় প্রফেশনাল লোগো ডিজাইনাররা তাদের করা ডিজাইন প্রকাশ করে তাদের পোর্টফোলিও গুছিয়ে রাখেন। ভালো লোগো ডিজাইনার হওয়ার যাত্রায় দক্ষ ডিজাইনারদের কাজ বারংবার দেখতে থাকা এবং এই ডিজাইনের পেছনে তাদের চিন্তার প্রক্রিয়া অনুমানের চেষ্টা করার প্র্যাকটিস অনেক কাজে দেবে।
৩. লোগো স্টাইল ভাবুন
সব লোগো কিন্তু একরকম হয় না। কিছু লোগো থাকে অনেক নকশাদার। কিছু লোগো একদম ছিমছাম। এগুলো কিন্তু এমনিই হয় না। এগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক হিসেব নিকেশ ও পরিকল্পনা। আপনার করা কাজের প্রতিষ্ঠান তথা ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করবে আপনি কী রকম ডিজাইন তৈরি করবেন।
ধরুন, আপনার ব্র্যান্ড হলো ক্লাসিক গোছের। সেক্ষেত্রে আপনার তৈরি করা লোগো হবে কম রঙচঙে। ডিজাইনেও ফুটিয়ে তুলতে হবে ক্লাসিক ভাইব। টুকটাক নকশা ব্যবহার করা যেতে পারে। ফন্টটাও হবে গাম্ভীর্যময়।
আপনার প্রতিষ্ঠান যদি হয় মিনিমালিস্ট, সেক্ষেত্রে আপনার লোগো হবে সাধারণ ও ছিমছাম। রংয়ের ব্যবহার কম হবে। ভালো হয় যেকোনো দুইটি রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে। উদাহরণ হিসেবে নিচে দেয়া টুইটারের লোগোটি দেখুন।
আবার ধরুন, আপনার লোগো তৈরী করতে হবে একটি রেস্টুরেন্টের জন্য, যে রেস্টুরেন্টে বিয়ে বাড়ির স্টাইলে বিরিয়ানি পাওয়া যায়। এরকম ক্ষেত্রে আপনার লোগো কিন্তু ছিমছাম হলে হবে না। একটু জাঁকজমকপূর্ণ হলেই বরং লোগোটা বেশি ভালো দেখাবে। লোগোটা নকশাদার হতে পারে। তবে, এটা যেহেতু রেস্টুরেন্টের লোগো তাই সেই রেস্টুরেন্টের সিগনেচার মেন্যুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করতে পারেন। ফন্টের মাধ্যমেও সেই ধারাটা বজায় রাখা উচিত।
৪. ধরন ঠিক করুন
লোগো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এখানে নির্দিষ্টতা নেই। আপনার স্বাধীনতা আছে, আপনি কোন ধরনের লোগো তৈরি করবেন। তবে সবসময় মাথায় রাখতে হবে, সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
বেশ কয়েক ধরনের লোগো হতে পারে। এখানে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
উডমার্ক
এ ধরনের লোগোতে মূলত ব্র্যান্ড নাম থাকে নির্দিষ্ট টাইপফেসের ফন্টে। এ ধরনের লোগো মূলত জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো বানিয়ে থাকে। কেননা সেসব প্রতিষ্ঠানকে সবাই এক নামে চিনবে। উডমার্ক লোগো ব্যবহারে কোম্পানির নামকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় বলে একটি সফল উডমার্ক লোগো হবে সেই লোগো যেটি কেবল একটি টাইপফেস দিয়ে অনেকাংশেই কোম্পানির ধরনকে প্রকাশ করবে। টেক জায়ান্ট গুগল কিংবা জনপ্রিয় পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলার লোগো বিখ্যাত উডমার্ক লোগোর উদাহরণ।
লেটারফর্মস
এ ধরনের লোগো অনেকটা উডমার্কের মতই প্রাতিষ্ঠানিক নামভিত্তিক হলেও, এ ধরনের লোগোতে শুধু কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে টাইপোগ্রাফি করা হয়। নেটফ্লিক্স কিংবা ম্যাকডোনাল্ডসের লোগো দেখলেই সফল লেটারফর্ম লোগোর উদাহরণ মিলবে।
সিম্বলিক
এ ধরনের লোগোর ক্ষেত্রে কোনো লেখা থাকে না। বরং একটি নির্দিষ্ট ও কাজের ধরনের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রেও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসব করা হয় যাতে প্রতীক দেখলেই সবাই চিনবে। বিখ্যাত যেসব কোম্পানি সিম্বলিক লোগো ব্যবহার করে তার মধ্যে অন্যতম হলো টুইটার, অ্যাপল, কিংবা নাইকি।
অ্যাবস্ট্রাক্ট
এ ধরনের লোগো জ্যামিতিক নকশাদার হয়ে থাকে। সচরাচর আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এমনটা করে। ফলে তাদের লোগো দেখে একবারেই চিনে নেয়া যায়।
এমব্লেম
এটা এমন এক ধরনের লোগো যেখানে ট্র্যাডিশনাল স্টাইল ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের লোগো মূলত ক্লাসিক ঘরানার চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
মিশ্র
সবসময় যে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডিজাইন হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। চাইলে অনেক ডিজাইন একত্রে মিশ্রিত করেও লোগো ডিজাইন করা যায়।
৫. রংয়ের তালিকা ঠিক করুন
যে প্রতিষ্ঠানের লোগো বানাবেন, তাদের নিশ্চয়ই একটি থিম রয়েছে? সেই থিমকে অনুসরণ করুন। সেরকম কিছু না থাকলে পণ্য বা সেবার সাথে সম্পর্কিত কিছু রং ব্যবহার করুন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ব্র্যান্ডিং-এর ক্ষেত্রে কালার থিওরি মেনে চলে এবং ব্র্যান্ড কালারও অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক করা থাকে। কালার প্যালেট বা থিম রং অনেকটাই সাইকোলজিক্যালি মানুষের উপর প্রভাব ফেলে।
সাদাকালো রং থাকলে অনেকটা ক্লাসিক আবহাওয়া তৈরি হয়। লাল রং থাকলে মানুষ একটা দৃঢ় বা সাহসী পজিশন মনে হয়। নীল রং একটা কুল ভাব তৈরি করে। সবুজ রং থাকলে প্রাকৃতিক, পজিটিভিটি এসব ধারণা তৈরি হয়। গোলাপি বা পার্পল রং থাকলে নারীদের জন্য আকষর্ণীয় হিসেবে প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি রোম্যান্স বা এ জাতীয় ক্ষেত্রেও ভালো কাজে দেয়। প্রত্যেকটি রঙের যে এই আলাদা আলাদা অর্থ আছে, একেই কালার থিওরি বলে। আর লোগো তৈরির ক্ষেত্রে রঙ বাছাইয়ে এই থিওরির ব্যবহার করা উচিত।
৬. ফন্ট ঠিক করুন
টাইপোগ্রাফি ধরনের লোগো তৈরী না করলে মোটামুটি স্যানস-সেরিফ, সেরিফ বা এ টাইপফেস জাতীয় ফন্ট বেশ ভালো কাজে দেবে। যেমন: এরিয়েল, টাইমস নিউ রোম্যান, কুরিয়ার নিউ, জর্জিয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে টাইপোগ্রাফিক লোগো ডিজাইন করলে যেকোনো ধরনের এবং যেকোনো স্টাইলের ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন আপনার ইচ্ছেমতো।
৭. জ্যামিতিক আকৃতি ব্যবহার করুন
জ্যামিতিক আকৃতি লোগোতে প্রাণ দান করে। যদি না আপনি মিনিমাম ধাঁচের লোগো তৈরী করতে চান, জ্যামিতিক আকৃতি ও নকশা আপনার লোগোতে অলংকৃত করতে বাধ্য। বিভিন্ন ধরনের আকৃতির আবার চাইলে সংমিশ্রণ করতে পারেন। ফলে সেগুলো আরও চমৎকার ডিজাইন ফুটিয়ে তুলবে।
৮. লোগো ডিজাইন করুন
অনেক কিছু তো দেখলেন, পড়লেন, বুঝলেন ও শিখলেন; এখন কাজ হচ্ছে নিজেই একটি লোগো তৈরী করে ফেলা। শুরুতে হয়তো ভালো আইডিয়ার লোগো হবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে ভালো লোগো ডিজাইন করতে সক্ষম হবেন, বলাই বাহুল্য।
৯. ফলাফল পরিমার্জন করুন
লোগো তো তৈরী করলেন। এখন সেটা কেমন হয়েছে, কী কী থাকলে ভালো লাগতো, কী কী না থাকলে ভালো হতো এসব পর্যালোচনা করার সময় হয়েছে। নিজেই অন্যান্য লোগোর সাথে আইডিয়া থেকে চিন্তা করুন, কোথায় কোথায় পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা যায়। সম্ভব হলে দক্ষ ডিজাইনার বা মেন্টরের সাহায্য নিন। ড্রিবল বা বিহ্যান্সের মতো ডিজাইনারদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলেও অনেক সময় দক্ষ ডিজাইনারদের ফীডব্যাক পাওয়া যায়।
১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণ
এখন সময় হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার যে লোগোটি আপনি রাখবেন কি রাখবেন না। এক্ষেত্রে আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের থেকে মতামত নিতে পারবেন। কেননা আপনি এই কাজে একদম নতুন। অন্যদের মতামত থেকে আপনি ধারণা পাবেন। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।
১১. লোগো কাজে লাগান
ধরে নিচ্ছি, লোগো তৈরির সফটওয়্যার দিয়ে আপনার লোগো সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে যা কোনো ব্র্যান্ডকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারবে। এখন এই লোগো কাজে লাগানোর পালা। আপনি আপনার লোগোকে ভেক্টর ফাইল বা প্রয়োজনীয় ফাইল আকারে সেভ করে নিন। যদি নিজের কাজের জন্য হয়, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডে লোগোটিকে বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিন।
পাশাপাশি বিভিন্ন সাইজের লোগো তৈরী করে নিন, ফেভিকন ও অন্যান্য আইকনের জন্য।
আরো পড়ুন: পাওয়ারপয়েন্ট -এ 3D Model এবং এনিমেশন কীভাবে ব্যবহার করবে?
একটি লোগো ডিজাইন
লোগো ডিজাইন নিয়ে অনেক তো হলো আলোচনা। এবার চলুন একটি লোগো ডিজাইন করেই ফেলি! আপনাকে কোনো লোগো ডিজাইন করতে হলে যে পাঁচটি জিনিস সবসময় মাথায় রাখতে হবে তা এখন আমি আলোচনা করবো।
- এই লোগো কাদের জন্য বানাচ্ছেন এবং কী নাম দিলে মানুষ সহজে রিলেট করতে পারবে সেটা চিন্তা করে বের করতে হবে। যেমন ধরুন, আমি আমার স্টার্টআপের ব্যাপারে চিন্তা করেছি আমি অনলাইন ফেইসবুক এর মাধ্যমে যে কোন প্রোডাক্ট বিক্রয় করবো। অনেকগুলো নামের মধ্যে আমার কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখে একটি বাংলা নাম সিলেক্ট করেছি। তার নাম ছিল ব্যবসাপাতি।
- কালার প্যালেট কী হবে, কোন কালার আসলে পজিটিভ একটা ভাইব দিবে সেটা একটু চিন্তা করে বের করতে হবে। যেমন ব্যবসাপাতি নাম ঠিক করার পরে আমি কালার প্যালেট ঠিক এভাবে সিলেক্ট করেছিলাম লোগোতে।
- কোন ফন্ট অথবা আইকন ব্যবহার করবো? ব্র্যান্ডের নাম লিখার ক্ষেত্রে কোন ফন্ট ব্যবহার করব তা ব্র্যান্ডের কাজের ধরনের সাথে যেন মিল থাকে সেই বিষয় মাথায় রেখেই সিলেক্ট করবো আর যদি নিজের বানানো টাইপোগ্রাফি দিয়ে বানানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে তো আরো ভালো হয় ব্যাপারটা। আমি ব্যবসাপাতি লোগোর টাইপোগ্রাফি ফ্রি বাংলা ফন্ট “হরপ্পা লিপি” থেকে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছি ঠিক এরকম ভাবে।
- আইকন দিয়ে কোনো সিম্বল বানানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করা যে, কোনো আইকন দিয়ে যদি সহজেই ব্র্যান্ডের নাম বোঝানো যায় তাহলে আইকনের নিচে নাম লিখে দিয়ে অথবা আইকনের সাথে একত্রিত করলেও কোনো সমস্যা নেই। আইকন মূলত ব্র্যান্ডের নামকে ছবির সাহায্যে বোঝানো। ঠিক তেমনি ব্যবসাপাতির লোগোতে আমি শুধু মাত্র টাইপোগ্রাফি দিয়েই বানিয়েছি। এখানে কোনো আইকন ব্যবহার করিনি।
- সবকিছুর গবেষণা হয়ে গেলে এবার আপনার লোগো ডিজাইন করা শুরু করে দিন এবং কয়েকটা ভার্সন ডিজাইন করে সবার কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে ফাইনাল একটি লোগো সিলেক্ট করুন।
এটা হচ্ছে ব্যবসাপাতির একদম ফাইনাল লোগো ডিজাইন।
উপরে ৫টি স্টেপস ফলো করে ডিজাইন করে ফেলুন তোমার নতুন লোগো ডিজাইনটি আর আমি আছি তোমার লোগো ডিজাইন (Logo Design) দেখার অপেক্ষায়।
১০টি সেরা লোগো ডিজাইন টিপস
নতুন যারা লোগো তৈরী করা শিখতে যাচ্ছেন, তাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত জনপ্রিয় লোগোগুলো নিয়ে স্টাডি করা। তাদের গল্পগুলো বোঝা। কথায় আছে, “লেখক হতে হলে আগে ভালো পাঠক হতে হয়।” তেমনি, নতুন আইডিয়া তৈরি করতে হলে আগে পুরাতন আইডিয়া নিয়ে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এখানে নতুনদের লোগো ডিজাইন শেখার জন্য সেরা ৫টি টিপস দিচ্ছি:
- আপনার দর্শকদের বুঝতে চেষ্টা করুন
- আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং এবং মান জানুন
- লোগো দিয়ে একটি গল্প বলার চেষ্টা করুন
- ভিন্ন ও নতুন কিছু করুন
- সহজবোধ্য তবে গভীর চিন্তা ফুটিয়ে তুলুন
- সাধারণ ডিজাইন রাখুন
- শুরুটা সাদাকালো দিয়েই করুন
- কাগজে খসড়া করুন
- বর্ণ ও আকৃতি ঠিকঠাক ব্যবহার করুন
- লোগোর পরিমার্জনকে সাধারণভাবে নিন
আপনার দর্শকদের বুঝতে চেষ্টা করুন
লোগো ডিজাইন করার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষ তথা দর্শকদের কাছে তুলে ধরাই। তাই, দর্শক বুঝে কাজ করতে হবে। দর্শকদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই লোগোটি ইমপ্যাক্টফুল হবে।
আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং এবং মান জানুন
দর্শকদের মন না হয় বুঝলেন, এবার ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে লোগো তৈরী করতে গেলে। এ অংশে ভালো করার উপায়গুলো উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লোগো দিয়ে একটি গল্প বলার চেষ্টা করুন
বিখ্যাত সব লোগো তৈরী এভাবেই হয়েছে। লোগোর পেছনে রয়েছে বিরাট বিরাট সব চমকপ্রদ গল্প। আপনার লোগোর পেছনেও যখন এমন গল্প থাকবে, তখন লোগোটাও নান্দনিক হবে মানুষের কাছে গুরুত্বের কারণও হবে।
Graphic Design করে Freelancing
এই কোর্সটি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করবে?
ভিন্ন ও নতুন কিছু করুন
আইডিয়া নেয়ার জন্য অন্যান্য লোগো দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইডিয়া কপি করে ফেলবেন না। নতুন কিছু ভাবুন।
সহজবোধ্য তবে গভীর চিন্তা ফুটিয়ে তুলুন
আপনার তৈরি লোগো হতে হবে জীবন্ত। দেখতে সহজবোধ্য হলেও ভেতরে থাকতে হবে অসাধারণত্ব। যা কি না এক দেখায় খেয়াল করা যাবে না।
সাধারণ ডিজাইন রাখুন
অনেকেই লোগো তৈরি করতে গিয়ে অনেক রংচংয়ে করে ফেলে। আবার অনেকে স্টাইল তৈরি করতে গিয়ে বেমানান ফন্ট ব্যবহার করে ফেলে। এটা খুব বড় বোকামি।
শুরুটা সাদাকালো দিয়েই করুন
লোগো ডিজাইন করার শুরুতেই রং নিয়ে বিশাল ভাবনায় পড়বেন না। শুরুতে আপনি সাদাকালো দিয়েই শুরু করুন। আপনার প্রথম লক্ষ্য থাকবে, একটা স্ট্রাকচার তৈরি করা। সেটা করতে পারলে, রং বসানো তেমন কঠিন কাজ হবে না।
কাগজে খসড়া করুন
আমরা অনেকেই শুরুটা করি গ্রাফিক্স বিষয়ক সফটওয়্যারে। অথচ আমরা এটা খেয়াল করি না, হাতে যেকোনো কিছু আঁকা সবচেয়ে সহজ। তাই প্রাথমিক খসড়া ডিজাইন কাগজেই করুন। বারবার বিভিন্ন প্যাটার্ন চেষ্টা করুন। তারপর মূল কাজে বসুন।
বর্ণ ও আকৃতি ঠিকঠাক ব্যবহার করুন
লেখায় আইকনের তুলনায় ফন্ট বড় বা ছোট হয়ে গেলে কিন্তু ভালো দেখায় না। একইভাবে আমরা বিভিন্ন শেপ বা আকৃতি যুক্ত করব। সেগুলোও ঠিকঠাক হতে হবে।
লোগোর পরিমার্জনকে সাধারণভাবে নিন
অনেক সময়ই আমাদের ডিজাইন করা লোগো পরিবর্তন করতে হবে অন্যদের মতামতের উপর ভিত্তি করে। বিষয়টাকে সাধারণভাবে নিন। আপনার আইডিয়ার চেয়ে ভালো আইডিয়া অন্য কারো কাছে থাকতেই পারে। তার আইডিয়া ভালো করে বুঝুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
লোগো ডিজাইনে ক্যারিয়ার
লোগো ডিজাইন করে আপনি অনেকভাবে নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে পারেন।
- প্রথমত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোগো ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করতে পারেন।
- দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে স্বাধীনভাবে কাজ তথা ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।
- তৃতীয়ত, নিজেই একটি ডিজাইন ফার্ম তৈরি করতে পারেন।
- চতুর্থত, শিক্ষকতা করতে পারেন।
অর্থাৎ, সুযোগের কমতি নেই। আপনি আপনার মতো করে নিজের ক্যারিয়ার ট্র্যাক পছন্দ করে নিতে পারেন।
লোগো ডিজাইন করে আয়
জনপ্রিয় চাকরি প্রকাশের মাধ্যম ইনডিডের মতে, একজন লোগো ডিজাইনার ঢাকায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করে মাসে প্রায় ৫৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা আয় করে থাকেন! তাই লোগো ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নিশ্চিন্তে এগিয়ে যান।
লোগো ডিজাইন করে ফ্রিল্যান্সিং
জনপ্রিয় পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট কম্পেয়ারেবলির মতে, একজন দক্ষ লোগো ডিজাইনার বছরে গড়ে প্রায় ২৮-৮১ হাজার ডলার তথা ৩০-৮৬ লাখ টাকা আয় করে থাকেন ফ্রিল্যান্সিং করে! ফ্রিল্যান্সিং জগতে লোগো ডিজাইনিং খুবই চাহিদাপূর্ণ একটি স্কিল। তাই, লোগো ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত যদি আপনি নিয়ে থাকেন তবে তা বেশ ভালো একটি ক্যারিয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কীভাবে শিখবেন লোগো তৈরী করা?
লোগো তৈরী শেখার জন্য উপায় তো অনেক আছে! এখানে আপনাদের জন্য সুবিধাজনক কিছু উপায় দেয়া হলো।
অনলাইনে খুব সহজে ১০ মিনিট স্কুল থেকেই লোগো ডিজাইন শিখতে পারেন। এজন্য ১০ মিনিট স্কুলে একটি কোর্স আছে যার নাম Logo Design করে Freelancing। কোর্সটি করলে আপনি শুধু কাজই শিখবেন না বরং আয়েরও সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও, এখানে আপনি গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স যেমন: Adobe Illustrator, Graphic Designing with Photoshop, Graphic Designing with PowerPoint, মোবাইল দিয়ে Graphic Designing ইত্যাদি কোর্স করতে পারেন। এগুলো বাংলায় হওয়ায় খুব সহজেই শিখতে পারবেন। তাই নতুন হিসেবে এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো ও সহজ উপায় হবে।
Graphic Designing with Photoshop
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
শেষ কথা
যদি লোগো ডিজাইনিং নিয়ে খুবই আগ্রহী থাকেন, তবে এটিই হতে পারে আপনার জীবনের ক্যারিয়ার পাথ। তবে, এ সেক্টরে সফল হতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য ও সৃজনশীলতা। এছাড়া কখনই এই সেক্টরে নিজেকে দীর্ঘ দিন ধরে রাখতে পারবেন না। কর্মনিষ্ঠতা-ই আপনার সৃজনশীলতা বাড়িয়ে দেবে, বলাই বাহুল্য। তাই, লোগো ডিজাইন শিখতে চাইলে কাজে লেগে পড়ুন আজই।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Graphic Design করে Freelancing Course (by Md. Kamruzzaman Shishir and A.S.M Arifuzzaman)
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন