পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
“ইস! কী বুদ্ধি! একদম বাবার মত হয়েছে!” আমার এক বন্ধু তার
আত্মীয়স্বজনের থেকে প্রায়ই এই একটা কথা শুনত। আর শুনবেই বা না কেন, ওর মত তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষ আমি আমার জীবনে কমই দেখেছি। তবে, ওর আত্মীয়স্বজনের এই উক্তিটার সাথে আমি কখনোই একমত পোষণ করতাম না। আমি বিশ্বাস করি, জেনেটিক কিছু ব্যাপার থাকলেও, এর পাশাপাশি অবশ্যই কিছু কৌশল রয়েছে, কিছু অভ্যাস, কিছু অনুশীলন রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তাকে ঝালাই করে নিতে পারে।
তাই একদিন সময় করে আমি আমার বন্ধুকে জেঁকে ধরলাম। ওকে আজকেই বলতেই হবে ওর এই সুবুদ্ধির রহস্য! এরপর ও বলা শুরু করল আর আমিও বসলাম আমার খাতা কলম নিয়ে। আসুন দেখি তো, মানসিক বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা কী কী
কৌশল অবলম্বন করতে পারি:
১। ডায়রী লিখুন
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ক্যাথরিন এম. কক্স, আইজ্যাক নিউটন, টমাস আলভা এডিসন এবং আইনস্টাইনের মত ৩০০ প্রতিভাবান ব্যক্তির অভ্যাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এই পড়াশোনায় তিনি যেই সাধারণ বৈশিষ্ট্যটি সবার মাঝেই পরিলক্ষণ করেছেন তা হচ্ছে, তাঁরা সবাই ডায়রী লিখতেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, এডিসন সারাজীবনে ৩০০ মিলিয়ন পৃষ্ঠা ডায়রী লিখেছেন। ডায়রী লিখলে আপনার দৈনন্দিন সব ঘটনাগুলো নোটেড থাকে। আপনার কোনো চিন্তা সময়ের সাথে হারিয়ে যায় না। সারাদিন পরে ডায়রী লেখার সময়টা আপনার জন্য সারাদিনের একটা রিয়ারভিউ মিররের মত কাজ করে। আপনি সারাদিন যা যা করেছেন সব আপনি মনে করতে থাকলে দিনশেষে আপনার ক্লান্ত মস্তিষ্ক আবার সচল হয়ে উঠবে।
২। নতুন কিছু করুন
রেগুলার রুটিনটা থেকে একটু বের হোন। নতুন কিছু করুন। নতুন একটা বই পড়ুন কিংবা নতুন কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসুন। সারাজীবন যদি নিজেকে একটা গন্ডি কিংবা পাঠ্যবইয়ের মাঝে আবদ্ধ করে রাখেন, তাহলে আপনার জ্ঞান ঐটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে।
নতুন কিছু করার জন্য কিন্তু খুব একটা কষ্ট যে করা লাগবে, তাও কিন্তু নয়। আপনি এক বিভাগের শিক্ষার্থী, চাইলেই কিন্তু আপনি একদিন একদম ভিন্ন একটা অনুষদের ভিন্ন একটা লেকচার শুনে আসতেই পারেন। আমাদের এক বন্ধুই তো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো অনুষদ নেই যেখানে ক্লাস করেনি। এতে করে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তার জ্ঞান কিন্তু অন্যান্য বিষয়েও অনেক বেড়েছে।
৩। নিজের পছন্দের বাইরে কিছু করুন
ধরে নিন, আপনি আপনার ক্লাসে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত। আপনার শখ হচ্ছে, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। এর বাইরে কিছু একটা করুন। কিছু একটা লিখুন বা পেইন্টিং করুন। আপনি যখন আপনার শখের কাজটাই বারবার করতে থাকেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের নতুন করে কিছু চিন্তা করতে হয় না। শখের বাইরে কিছু করা হচ্ছে জমিতে নতুন ফসল ফলানোর মত। এতে করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
৪। পোমোডোরো অনুসরণ করুন
ফ্রান্সিস্কো কারিলো আবিষ্কৃত পোমোডোরো মেথডের মূলনীতি হচ্ছে, ২৫ মিনিট কাজ করার পর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এতে করে আপনি এতক্ষণ যা করেছেন তার রিভিউ করার জন্য একটু সময় পাবেন আবার এরপরে কী করতে যাচ্ছেন তাও একটু সাজিয়ে নিতে পারবেন।
৫। ব্রেইন জীম করুন
মার্কিন বিশেষজ্ঞ ড. পল ডেনিসন মস্তিষ্কের কিছু ব্যায়াম উদ্ভাবন করেছেন যা আমাদের বুদ্ধিমত্তা, স্মরণশক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে, মানসিক ক্লান্তি দূর করতে, যেকোনো কাজ করতে এবং চিন্তা করতে সাহায্য করে। ব্রেইন জীমের একটা উল্লেখযোগ্য অনুশীলন হচ্ছে, ‘ব্রেইন বাটন’ যেখানে আপনাকে, আপনার একহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনী যথাক্রমে দুই কলার বোনের নিচে রেখে এবং অপর হাতের আঙ্গুল পেটে রেখে, পালস চেকিং এর ন্যায় হালকা চাপ দিতে হবে। প্রতিদিন দুই মিনিট ধরলে এমন করলে মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। এভাবে ক্রস ক্রল, হুক আপ এর মত নানা রকমের অনুশীলনের সমন্বয় তৈরি এই ব্রেইন জীম।
ক্রস ক্রল করার জন্য, আপনাকে প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। এরপর শ্বাস গ্রহণের সাথে সাথে আপনার ডান হাত এবং বাম পা আস্তে আস্তে উপরে উঠান। শ্বাসত্যাগের সাথে সাথে হাত এবং পা নামিয়ে ফেলুন। আবার শ্বাস নিন, এবার বাম হাত এবং ডান পা আস্তে আস্তে উঠান। শ্বাস ত্যাগের সাথে সাথে নামিয়ে ফেলুন।
হুক আপের জন্য, কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে, দুই হাত নিচে নামিয়ে ক্রস করে ধরুন। এরপর ঐ ভঙ্গিতেই হাত বুকের কাছে নিয়ে আসুন।
৬। মস্তিষ্কে একটু লাঙল চালান
লাঙল চালালে যেমন জমি চাষোপোযোগী হয়, তেমনি মস্তিষ্কও কর্মক্ষম হয়। মস্তিষ্কের লাঙল চালানোর উপায় হচ্ছে, ক্রিটিকাল রিজনিং, লজিকাল রিজনিং, গাণিতিক সমস্যা, দূরত্ব–সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি অনুশীলন করা।
৭। প্রতিযোগিতামূলক খেলা খেলুন
প্রতিযোগিতা আছে এ ধরনের খেলাগুলো খেলুন। যেমন, দাবা। এছাড়াও বিজনেস কম্পিটিশন, আইডিয়া কম্পিটিশন-এর মত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
৮। ডুয়েল এন ব্যাক খেলুন
ডুয়েল এন ব্যাক হচ্ছে আইকিউ লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এমন একটি অনলাইন গেম। গুগলে ‘Duel N Back’ লিখে সার্চ করলেই খেলার পদ্ধতিসহ গেমটি পেয়ে যাবেন।
৯। অলস সময়কে কাজে লাগান
আমরা না চাইতেও কিন্তু আমাদেরকে প্রতিদিন পার করতে হয় অনেক অলস সময়। যেমন, রাস্তার ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে, লাইনে দাঁড়িয়ে, অপেক্ষা করে ইত্যাদি। এই সময়টা আমরা আশেপাশের মানুষের সাথে গল্প করে কিংবা ফেসবুকিং করে নষ্ট না করে বরং, ক্রসওয়ার্ড পাজল, সুডোকু, রুবিক্স কিউব, আইকিউ টেস্ট ইত্যাদির পেছনে ব্যয় করতে পারি।
১০। ছোটখাট বিতর্ক করুন
আপনি যদি একজন প্রফেশনাল বিতার্কিক হোন তবে তা আপনার বুদ্ধিমত্তার জন্য খুবই উপকারী কিন্তু তা না হলেও সমস্যা নেই। কারণ, ছোটখাট কিছু বিতর্ক কিন্তু আপনি দৈনন্দিন জীবনে করতেই পারেন। গল্প নয়, বিতর্ক করুন। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক তাড়াতাড়ি এবং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে সক্ষম হবে।
১১। জ্ঞান বিতরণ করুন
নিজে যা সম্পর্কে ভাল জানেন, তা অন্যকেও বোঝান। এতে করে আপনি যা জানেন, তা আসলেই কতটুকু ভাল জানেন তা বুঝতে পারবেন।
১২। অনেক বই পড়ুন
বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। ফিকশনাল হোক আর নন ফিকশনাল, যেকোনো বইয়েই রয়েছে শেখার মত অনেক কিছু।
১৩। মেডিটেশন করুন
মেডিটেশন করার জন্য শান্ত, নিশ্চুপ এক জায়গায় বসে মন থেকে বাকি সব চিন্তা দূর করে দিয়ে শ্বাস–প্রশ্বাস নিন এবং শ্বাস–প্রশ্বাসেই আপনার সব মনোযোগ কেন্দ্রীভুত করুন। ইচ্ছা হলে হালকা কোনো সুর বাজিয়ে নিতে পারেন। মেডিটেশনের ফলে আপনার মনোযোগ এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
১৪। দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন
পর্যাপ্ত ঘুম, প্রতিদিন বাদাম জাতীয় এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা কিংবা অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জাঙ্কফুড পরিহার- এরকম কিছু অভ্যাস আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।
১৫। পুরোনো জিনিসগুলোই নতুনভাবে করুন
আগে যা করতেন তাই করুন কিন্তু ধরণটা একটু পরিবর্তন করে নিন। যেমন ধরে নিন, আপনি ডান হাত দিয়ে ব্রাশ করেন, আজকে একটু বাম হাত দিয়ে করার চেষ্টা করে দেখুন।
১৬। ক্যাল্কুলেটর থেকে সম্ভব হলে দূরে থাকুন
কোনো কিছু গণনা করতে হবে? ক্যাল্কুলেটর না খুঁজে মুখে মুখেই করে ফেলুন। এভাবে আস্তে আস্তে বড় বড় হিসাবগুলোও মুখে মুখে করে করে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৭। উপোস করুন
যদিও আমরা মনে করি যে খালি পেটে আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না, কিন্তু গবেষণা উল্টোটা বলে। গবেষণা মোতাবেক, অনেক সময় অনেক সময় না খেয়ে থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক আরো ভাল কাজ করতে পারে। তবে অবশ্যই না খেয়ে থাকাটা যেন আমাদের শরীরের ক্ষতি না করে।
১৮। প্রত্যেক ইন্দ্রিয়কে সজাগ করুন
আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ই যেন সমানভাবে কাজ করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়ার সময়, খাবার মুখে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন এতে কী কী উপাদান রয়েছে। রিক্সায় বসে চোখ বন্ধ করে আওয়াজে বুঝুন আশেপাশে কী হচ্ছে, কতটুকু দূরত্বে হচ্ছে।
১৯। নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশুন
প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই রয়েছে একেকটা জ্ঞানভান্ডার। তাই কখনো মনে করবেন না যে আপনি যে কয়েকটা মানুষকে জানেন, তাদের নিয়েই আপনি খুশি। পুরোনো বন্ধুরা থাকুক সাথে নতুন বন্ধুও হোক। আপনি নিজেও জানেন না কোন মানুষটার থেকে আপনি কোন নতুন জিনিসটা জেনে যেতে পারেন যা আপনি আগে কখনো চিন্তাও করেননি।
বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির এই ১৯টা উপায় বাতলে দিয়েই আমার বন্ধু ক্লাস আছে বলে উঠে গেল। কিন্তু আমার মনে হল কী, আমি কি কিছু দেখেও না দেখে যাচ্ছি? তবে কি ডুয়েল এন ব্যাক খেলা এখন আমার সময়ের দাবী? ঠিক তখনই আমার চোখে পড়ল যে, আমার বন্ধু তার ব্যাগ থেকে একটা মাউথঅর্গান বের করে বাজাতে বাজাতে যাচ্ছে। আর আমি আমার খাতায় টুকে ফেললাম।
২০। কোনো একটা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখা
একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে হলে দরকার হয় অনেক ধৈর্য এবং মনোযোগের। যার ফলে একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা আপনার বুদ্ধিমত্তাকে বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণে।
এরকম সকল অনুশীলনগুলো প্রতিদিন করতে থাকলে, কয়েক মাস পরে আপনি নিজেই নিজের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে ফাবিহা বুশরা
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Personal Finance Course by Nafeez Al Tarik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন