একটা সময় ছিল যখন গ্রাফিক ডিজাইনাররা ডিজাইন করার জন্য বিভিন্ন টুলসের ওপর নির্ভর করতেন। যেমন: পেন্সিল, মার্কার, স্কেল, লিথোগ্রাফি ইত্যাদি ছিল লেআউট তৈরি করার টুল।
সময় বদলেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রাফিক ডিজাইনারদের টুলও ডিজিটাল হয়েছে। এই গ্রাফিক ডিজাইনিং টুলগুলোর সাহায্যে এখন খুব কম সময়েই শতভাগ পার্ফেকশনের সাথে যেকোনো ডিজাইন করতে পারেন ডিজাইনাররা, যা তাদের ডিজাইনে যোগ করছে ভিন্ন মাত্রা। এরই প্রেক্ষিতে যোগ হয়েছে মোশন গ্রাফিক্স। এই ক্ষেত্রটার বর্তমান জনপ্রিয়তা এতই বেশি যে এর জন্য সৃষ্টি হয়েছে আলাদা কর্মক্ষেত্র ও পেশা, যাদের বলা হয় মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনার (Motion Graphics Designer)।
অন্যদিকে হাল আমলে আরেক জনপ্রিয় টার্ম হল ‘অ্যানিমেশন’। কার্টুন থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট, সব জায়গাতেই অ্যানিমেশনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার লক্ষ্য করার মত।
সাধারণভাবে, মোশন গ্রাফিক্স আর অ্যানিমেশনকে এক ভেবে ভুল করেন অনেকেই। এক মনে হলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে এই দুটোর মধ্যে। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
মোশন গ্রাফিক্স (Motion Graphics) কী?
শুরুতেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো: What is motion graphics?
এককথায় বলতে গেলে মোশন গ্রাফিক্স অ্যানিমেশনের একটা স্টাইল।
কোনো এনিমেটেড ডিজাইন এলিমেন্ট (যেমন: শেইপ, অবজেক্ট, টেক্সট) কে যখন মুভ করানো হয় তখন তা মোশন গ্রাফিক্স হিসেবে প্রকাশিত হয়।
বড় বা জটিল আইডিয়াগুলোকে স্থির কোনো চিত্র বা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা বেশ কষ্টসাধ্য। সেখানে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মোশন গ্রাফিক্স জটিল সেসব আইডিয়াকে খুব সহজভাবে রিপ্রেজেন্ট করে।
Cartoon Animation Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ভেবে দেখুন, আপনি যখন একটি ভুল পাসওয়ার্ড টাইপ করেন তখন যে রেড সিগন্যাল বা ভাইব্রেশন আপনি দেখতে পান সেটি কিন্তু মোশন গ্রাফিক্সেরই উদাহরণ।
মোশন গ্রাফিক্সের মাধ্যমে খুব সহজেই অনেক বড় পরিসরে দর্শকদের আকর্ষণ করা যায়। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করেন না কেন, মোশন গ্রাফিক্স আপনার মেসেজকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও বিনোদনমূলক করে তুলতে পারে।
মোশন গ্রাফিক্সের রকমফের
মোশন গ্রাফিক্স অনেক ধরনের হতে পারে, অসংখ্য ভাবে একে প্রকাশ করা যায়:
- ব্যাখ্যামূলক ভিডিও
- UI অ্যানিমেশন
- ডুডলস
- ডায়নামিক লোগো
- ডায়নামিক আইকন
- এনিমেটেড পৃষ্ঠার শিরোনাম
- এনিমেটেড ইনফোগ্রাফিক্স’
- প্রেজেন্টেশন
- জিআইএফ (GIF)
মোশন গ্রাফিক্সের মাধ্যমে শেইপের মোশন:
কেন বেছে নেবেন মোশন গ্রাফিক্স?
১। মোশন গ্রাফিক্সকে বলা হয় ভিজ্যুয়াল এইড (Visual Aid). সাধারণত বেশিরভাগ মানুষই ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায় এমন কিছু বেশি মনে রাখতে পারে। মোশন গ্রাফিক্স –এর মাধ্যমে আইডিয়া বা কনসেপ্ট সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারণা দেওয়া সম্ভব, তা যত জটিলই হোক না কেন। ফলে দর্শকের জন্য ব্যাপারটা উপলব্ধি ও কল্পনা করা সহজ হয়।
২। মোশন গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয় যখন কোনো গল্প বা বড়সড় দৃশ্য তৈরি করার দরকার হয় না তখন। শুধুমাত্র আউটলাইন তৈরি করা বা কোনো ফ্যাক্ট বোঝানোর জন্য মোশন গ্রাফিক্স সবচেয়ে ভালো অপশন।
৩। মোশন গ্রাফিক্সের সিম্পল স্টাইল সব জায়গাতে এর গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করেছে।
কর্পোরেট বা ফর্মাল কাজে কার্টুন বা এনিমেটেড ডিজাইন কিছুটা দৃষ্টিকটু। সেখানে মোশন গ্রাফিক্সের মাধ্যমে সহজেই কোনো বিষয়কে খুব সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়।
আরও পড়ুন:
অ্যানিমেশন কি? কার্টুন ও এনিমেশন শিখতে যা যা দরকার
পাওয়ারপয়েন্ট -এ 3D Model এবং এনিমেশন কীভাবে ব্যবহার করবে?
অ্যানিমেশন (Animation) কী?
যদি প্রশ্ন করা হয়, what is animation বা অ্যানিমেশন কী, বেশিরভাগ মানুষই চোখ বন্ধ করে উত্তর দিবে: কার্টুন (Cartoon)।
বেশিরভাগের ধারণা, অ্যানিমেশন মানে শুধুই কার্টুন। কিন্তু অ্যানিমেশন টার্মটার পরিসর আরও অনেক বড়। যেকোনো ধরনের টেকনিক যা স্থির অবজেক্টকে গতিশীল করে, তাই অ্যানিমেশন। এর মধ্যে CGI, পেপার অ্যানিমেশন, হাতে আঁকা কার্টুন (Cartoon), বিভিন্ন ভিডিওর সংমিশ্রণ, মোশন গ্রাফিক্স ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
Motion Graphics in After Effects
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সাধারণত অ্যানিমেশন কোন গল্প বা কাহিনীকে ফোকাস করে তৈরি করা হয়। অন্তিক মাহমুদের কার্টুন ভ্লগ থেকে শুরু করে টম এন্ড জেরি, ডোরেমন; বাংলা কার্টুন যেমন: মিনা কার্টুন, ঠাকুমার ঝুলি, বাচ্চাদের মজার কার্টুন; বিভিন্ন অ্যানিমেশন মুভি যেমন: ফ্রোজেন, কুংফু পান্ডা, মিনিয়ন; বিভিন্ন জনপ্রিয় এনিমে যেমন: ড্রাগন বল, ডেথ নোট ইত্যাদি এসবই অ্যানিমেশনের মধ্যে পড়ে।
অ্যানিমেশন যেমন ব্যয়বহুল তেমনই তৈরিতে জটিলতা তুলনামূলক বেশি।
অ্যানিমেশনের প্রকারভেদ:
১. মৌলিক বা ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশন (Basic/ Traditional Animation)
প্রথম দিকে তৈরি হওয়া বড় পর্দার অ্যানিমেশনগুলো এই ধরনের অন্তর্ভুক্ত। হাতে আঁকা ছবিকে ফ্রেম বাই ফ্রেম ধারণ করে তৈরি করা হত একটি সম্পূর্ণ গল্প।
২. টু-ডি অ্যানিমেশন (2D Animation)
টুডি অ্যানিমেশন বলতে হাতে আঁকা বা ভেক্টর বেজড অ্যানিমেশনকে বুঝানো হয়। অ্যানিমেশনের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি এটি।
৩. থ্রি-ডি অ্যানিমেশন (3D Animation)
বর্তমানে ফিচার ফিল্ম, লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র ও ভিডিও গেমগুলোর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যানিমেশনের ধরন হল থ্রিডি অ্যানিমেশন। এই পদ্ধতিতে ক্যারেক্টারের মুভমেন্ট থেকে শুরু করে কম্পোজিশন, টেকনিক্যাল স্কিল সবই খুব সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করা যায়। আপনি চাইলে যেকোনো উপাদানকে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেল পর্যন্ত ঘোরাতে পারবেন।
৪. মোশন গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন (Motion Graphics Animation)
এই ধরনের অ্যানিমেশন সাধারণত কমার্শিয়াল এবং প্রমোশনাল কাজে ব্যবহার করা হয়। অ্যানিমেটেড লোগো, কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশন, টিভি প্রোমো, মোশন ওপেনিং টাইটেল- এসবই মোশন অ্যানিমেশনের কাজ। মূলত অ্যানিমেশনের একটি ক্ষুদ্র শাখা হল মোশন গ্রাফিক্স।
৫. স্টপ মোশন অ্যানিমেশন (Stop Motion Animation)
কোনো ছবি বা ফটোগ্রাফকে ফ্রেম বাই ফ্রেম সাজিয়ে তৈরি করা হয় স্টপ মোশন অ্যানিমেশন। এই অ্যানিমেশনের সকল চরিত্র ও বস্তু বাস্তব। শুরুটা করা হয় মডেলের ছবি তোলার মাধ্যমে। এরপর মডেলটি বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে বারবার ছবি তুলে পরপর সাজিয়ে ভিডিও বানানো হয়।
কেন বেছে নেবেন অ্যানিমেশনকে?
১। কোনো গল্প বর্ণনা করার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপায় হল অ্যানিমেশন।
২। বাস্তবসম্মত চিত্র তৈরি করার জন্য অ্যানিমেশনই উপযোগী। মোশন গ্রাফিক্স তৈরি করা অ্যানিমেশনের চেয়ে সহজ এবং এর পেছনে খরচ কম। কিন্তু অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করা যায়।
৩। এক পরিসংখ্যান বলছে, ওয়েবসাইটে অ্যানিমেশন যুক্ত করার মাধ্যমে ভিজিটরের Spent Time প্রায় ৮৮% বৃদ্ধি পায়।
মোশন গ্রাফিক্স vs. অ্যানিমেশন: পার্থক্য আসলে কী?
মনে করেন আপনি চাচ্ছেন আপনার ওয়েবসাইটের লোগোটি ক্রমাগত ঘুরতে থাকবে অথবা প্রেজেন্টেশনের সময় গ্রাফের বারগুলো ওঠা-নামা করতে থাকবে। এই সবই মোশন গ্রাফিক্সের কাজ।
অন্যদিকে, আপনি যদি চান একটি রূপকথার গল্পকে কার্টুনের মাধ্যমে দেখাতে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অ্যানিমেশনের সাহায্য নিতে হবে।
কোনো গল্প বলা হচ্ছে কিনা, এটিই মূলত ‘মোশন গ্রাফিক্স নাকি অ্যানিমেশন’ এই সিদ্ধান্তের মূল নির্ধারক।
আরও যেসব সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে দুটোর মধ্যে চলুন দেখে নিই:
১। মোশন গ্রাফিক্সের ভিডিওগুলো মূলত শেইপ, টেক্সট ও ছবির সংমিশ্রণ, যেখানে অ্যানিমেশন বিস্তারিত (Detailing) চরিত্রায়নের মাধ্যমে কোনো গল্পকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন করা ও ডেভেলপ করা তুলনামূলকভাবে সহজ কিন্তু অ্যানিমেশন তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য।
২। ‘লাইভ একশন ফুটেজ’ -এ মোশন গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে অ্যানিমেশনের বিস্তারিত কম্পিউটার জেনারেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে।
৩। এ দুটির মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য হলো এদের ডায়মেশনে। মোশন গ্রাফিক্স সাধারণত 2D হয়ে থাকে যেখানে অ্যানিমেশন 2D বা 3D হয়।
অ্যানিমেশন আর মোশন গ্রাফিক্সের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য থাকলেও এদের মধ্যে ওভারল্যাপটাও হয় অনেক বেশি। কখনো কখনো কোনটা কি তা আলাদা করা সম্ভব হয়না। মোশন গ্রাফিক্স বা অ্যানিমেশন যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন, তার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাই মুখ্য বিষয়।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Cartoon Animation Course (by Antik Mahmud)
- Motion Graphics in After Effects (by Ruhul Amin)
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Design করে Freelancing Course (by Md. Kamruzzaman Shishir and A.S.M Arifuzzaman)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন