“বাবা বলে ছেলে নাম করবে,
সারা পৃথিবী তাকে মনে রাখবে।”
ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায় না সত্যি, কিন্তু চার্টাড একাউন্টেন্ট, অন্টারপ্রেণার এমনকি অর্থনীতিবিদ হওয়াও সম্ভব। কিন্তু আমাদের বাবা-মায়েরা, এবং আমরাও মনে করি, ‘নাম’- করতে হলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াটাই জরুরী! কিন্তু বিষয়টা কি তাই? মোটেই না! ক্যারিয়ার গড়ার প্রশ্নে বিজ্ঞান বিভাগের মতো ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ- ও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ কি, কেন পড়া উচিত, পড়তে হলে কি কি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, এবং ক্যারিয়ারের সুযোগগুলো কি কি- তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ব্যবসায় শিক্ষা শাখা কী?
বাংলাপিডিয়া অনুসারে, যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নীতি ও কলাকৌশল সংক্রান্ত জ্ঞানই ব্যবসায় শিক্ষা। তাই বলা যায়, ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ হলো এমন একটি জ্ঞানকান্ড, যেখানে বাজার ও প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিজনেস এন্টারপ্রাইজকে সঙ্ঘটিত করা, সে সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে এই শাখা কাজ করে।
আরো পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষা: ব্যবসায় শিক্ষা শাখা- শেষ সময়ে প্রস্তুত তো?
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে অন্যান্য বিষয়ের মতোই বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি পড়ানো হয়। পাশাপাশি বিভাগীয় বিষয় হিসেবে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন, ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বীমা, পরিসংখ্যান এবং অর্থনীতি পড়তে হয়। এই বিষয়গুলো অফিস প্রাকটিস, বুক কিপিং, কম্পিউটার স্টাডিজের সাথে যুক্ত।
অন্যান্য বিভাগের সাথে এর পার্থক্য হলো,
বিজ্ঞান বিভাগ | ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ | মানবিক বিভাগ |
যে শিক্ষার্থীরা সংখ্যা এবং লজিকাল রিজনিং-এ আগ্রহী তারা বিজ্ঞান বিভাগকে বেছে নিতে পারে | সে শিক্ষার্থীরা সংখ্যা এবং গাণিতিক বিষয়ে আগ্রহী তারা ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ বেছে নিতে পারে | যে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল ও সামাজিক বিজ্ঞানে আগ্রহী তারা মানবিক বিভাগ বেছে নিতে পারে |
এসএসসি বা এইচএসসির পর মানবিক বা ব্যবসা শিক্ষা- দুই বিভাগেই বিভাগ পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে | এসএসসি বা এইচএসসির পর মানবিক বিভাগে বিভাগ পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে | এসএসসি বা এইচএসসির পর বিভাগ পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে না |
পেশাগত দিক, যেমন মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দিকে এত দ্রুত এগোনো যায় না, ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগোতে হয় | খুব দ্রুতই পেশাগত দিক থেকে এগিয়ে যাওয়া যায়, যেমন CA অথবা CS হওয়া যায়। | সাধারণত সাংবাদিকতা কিংবা মনোবিদের মতো পেশাগত কাজগুলো গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর করা যায় |
গবেষণা ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার সংখ্যা অনেক বেশি | গবেষণা এখানে খুব একটা জনপ্রিয় ক্ষেত্র নয় | একাডেমিক বিষয়ে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণার সুযোগ রয়েছে। |
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: কী পড়বে?
শুরুতেই দেখে নেয়া যাক ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে তোমাকে কি কি বিষয় পড়তে হবে। অন্যান্য বিভাগের মতো এখানেও বাংলা ইংরেজি আছে, তবে অতিরিক্ত করে পড়তে হবে বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়গুলো। এগুলোর মধ্যে আছে হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যংকিং ও বীমা, ব্যবসা সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন, ব্যবসায় উদ্দ্যোগ ।
হিসাববিজ্ঞান হলো এমন এক ধরনের ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিষ্ঠানের অথবা ব্যক্তির লেনদেনগুলো সনাক্ত করা হয়, সেগুলোকে লিখে রাখা হয়। এখানে তুমি ব্যয় কি, ব্যায়ের শ্রেণীবিভাগ, উৎপাদন ব্যয় হিসাব, মজুদ পণ্যের হিসাব, কার্যপত্র, রেওয়ামিল-ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
-
ফিন্যান্স – ব্যংকিং ও বীমা
বর্তমানে টাকার মূল্য এবং ভবিষ্যতের টাকার মূল্যের মানের তারতম্য কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে তুমি এখানে ধারণা পাবে। এর উপরে ভিত্তি করে আমরা কেমন ঋণ নেবো, কোথা থেকে নেবো- এই সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এটা সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর। ব্যং কিভাবে কাজ করে, কিভাবে লাভ করে, ব্যংকে টাকা রাখলে লাভ কী, ব্যাংকের কার্যাবলী এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
-
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
ব্যবসা কী কী ধরনের হয়, মালিকানা কত ধরণের হয়, ব্যবসায় প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সম্পর্কে জানা ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা পড়ার মধ্য দিয়ে, জানা যায় ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত।
-
উৎপাদন ব্যবস্থা ও বিপনন
বিপনন বা মার্কেটং কী, শুরু থেকে শেষ অব্দি ব্যবসার কার্যাবলী কি এই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় উৎপাদন ব্যবস্থা ও বিপনন। এখানে তুমি জানবে যে মার্কেটিং ও শপিং এক জিনিস নয়, শপিং আসলে মার্কেটিং এর একটা অংশ মাত্র!
-
ব্যবসায় উদ্যোগ
ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়টি কেবল নবম দশম শ্রেণীতেই পড়ানো হয়। ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণা নিয়ে রচিত এই বই থেকে তুমি জানবে ব্যবসা কিভাবে শুরু করা হয়, ব্যবসার প্রথমিক ধারণাগুলো কী কী- এই বিষয়গুলো। ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণা বিশ্লেষণ করলে এর মধ্যে কিছু বিষয় তুমি খুঁজে পাবে। নতুন কোন আইডিয়াকে বাস্তবায়ন করা, ব্যবসা শুরু করতে সমস্ত উপাদান কি করে অর্গানাইজ করতে হয় সে সম্পর্কে এখানে ধারণা পাওয়া যায়।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
ভার্সিটি C Unit + গুচ্ছ এডমিশন কোর্স ২০২২
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ: কেন পড়বে?
ব্যবসা শিক্ষা শাখায় কেন পড়া উচিত, সে সম্পর্কিত কিছু কারণ নিচে আলোচনা করা হলো,
-
বিষয়টা সৃজনশীল
ব্যবসায় শিক্ষা কাঠখোট্টা নয় বরং খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিভাগ। অনেকেই মনে করে, “ব্যবসায় শিক্ষা! শুধু মুখস্থের ব্যাপার”। কিন্তু বাস্তবে এখানে ভাল করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মুখস্থ না করে বুঝে বুঝে পড়া। কারণ মুখস্থ করলে কখনোই ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ভাল ফল আশা করা যায় না।
-
এগিয়ে যাবে এক্সট্রা-কারিকুলারে
এই বিভাগে মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যায় যে পরীক্ষার অনেক আগেই পড়া সব শেষ। অথচ তখনো অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে। এই স্পেয়ার টাইমে নতুন করে সবগুলো পড়া রিভাইস করে ফেলা যায়, গিটারে মন দেয়া যায়, পড়ে ফেলা যায় ফাটাফাটি কোন উপন্যাস।
অন্যান্য বিভাগ যখন ব্যবহারিক নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, সেই সময়টা আনন্দ করে কাটানো যায়। স্কুলে থাকতে আমরা র্যাগ ডে করেছিলাম সবাই একসাথে একটা কিন্তু আমরা ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীরা করেছিলাম দুইটা! অতিরিক্তটা ক্লাস নাইনের শেষদিন; ঐদিন বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এসব করার প্রথম শর্ত কিন্তু এটাই যে পড়ার সময় ভালভাবে পড়তে হবে।
-
বিষয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত
ব্যবসায় শিক্ষার একটা বিষয়ের সাথে অন্য বিষয়ের অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন , হিসাববিজ্ঞান ও ফিন্যান্স; এমন প্রতিটা বিষয়ই পড়তে গেলে দেখা যায় যে অন্য বিষয়ের সাথে কিছু মিল পাওয়া যাচ্ছে।
-
বিষয়গুলো নতুন এবং মজার
এর আগে যে বিষয়গুলো পড়েছো সেগুলো আর ভাল লাগছেনা? নতুন কিছু নিয়ে পড়তে চাও? তাহলে ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ তোমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়াবে। কারণ আমি হলফ করে বলতে পারি যে এখানে এমন কিছুই পাওয়া যাবে না যা আগের ক্লাসগুলোতে পড়া হয়েছে।
-
সহজ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ-এ লেখাপড়ার সেক্টর কিছুটা কম কিন্তু প্রতিযোগীতা অনেক বেশি। আর তার থেকেও কম হচ্ছে ভার্সিটিতে সিটের সংখ্যা। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে একেকটা সেক্টরের জন্য একেকভাবে প্রস্ততি নিতে হয় যেটা এই বিভাগের ক্ষেত্রেও একই। ইংরেজী, বাংলা, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স/মার্কেটিং, হিসাববিজ্ঞান, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি একটা কমপ্লিট ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে সাহায্য করবে।
-
দ্রুত সফল হওয়া সম্ভব
স্কিল ভাল থাকলে গ্র্যাজুয়েশনের আগে কিংবা সাথে সাথে ভালো কোন জায়গায় জব হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না! সেই হিসেবে, আপনি যদি ছেলে হন তবে বেলার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই তাকে বলতে পারবেন, “চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?” আর মেয়ে হলে ৬ ফিট পাত্রের সমান হওয়ার জন্য আপনাকে গ্লো এ্যান্ড লাভলী মাখতে হবেনা।
-
প্রতিটা বিষয়ই ডিমান্ডেবল!
ভার্সিটিতে ভর্তির সময় কোনো বিষয় নিয়েই ভাবার প্রয়োজন হবেনা যে, “অমুক সাব্জেক্ট তো পেলাম, ভবিষ্যতে যে কি আছে?!” শুধু চোখ বন্ধ করে ভর্তি হয়ে যাওয়াই উত্ত, কারণ প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্যই আলাদা আলাদা সম্মানজনক জব সেক্টর আছে। এমনকি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভালভাবে পড়াশুনা করলে তোমার বিসিএস নিয়েও টেনশন করতে হয় না কারণ এমনিতেই অনেক ভাল একটা ভবিষ্যৎ পাওয়া সম্ভব।
-
অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমায়
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ অনেক রকমের স্কিল ডেভেলপ করতে সাহায্য করে। ব্যবসায়ের, ব্যবস্থাপনার, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির অনেক কৌশল শেখা যায় যা ভালভাবে রপ্ত করতে পারলে চাকরীর পেছনে ছুটতে হয় না বরং নিজের এবং আরো অনেকের আয়ের ব্যবস্থা নিজেই করে ফেলা যায়।
-
যোগাযোগমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক দক্ষতার উন্নয়ন
এই বিভাগে যে বিষয়েই পড়া যাক না কেনো, এখানে অনেক রকমের প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট রেডি করতে হয় যার দ্বারা আউটার নলেজ বৃদ্ধি পায় এবং যেকোনো কিছুই সুন্দর করে উপস্থাপন করতে শেখা যায়। বিবিএ করার সময় অনেক রকমের বিজনেস রিলেটেড ক্লাবে জয়েন করার সুযোগ থাকে যেখানে অনেক স্কিল্ড মানুষদের সাথে চলাফেরার এবং কাজ করার সুযোগ হয়।
-
দেশের স্বার্থে
একটা দেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োজন আমরা সবাই জানি কিন্তু দেশটার আর্থিক উন্নয়নে ব্যবসায়, বাণিজ্য, ব্যাংকিং ও বীমা কী পরিমাণ অবদান রাখে সেটাও কিন্তু দেখা জরুরী। এসব জিনিষ ছাড়া বাংলাদেশ কখনোই আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারবে না আর অর্থনৈতিক উন্নতি না আসলে এই দেশে কোনো রকমের বৈজ্ঞানিক গবেষনা হবে না।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, পশ্চিমে এমনকি পাশের দেশ ভারতেও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ অনেক সমাদৃত হলেও বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের মা-বাবা বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি বেশি আগ্রহী ফলশ্রুতিতে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরিধিটা এখানে আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যত বেশি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ বেছে নিবে, তত বেশি এই শাখার এবং আল্টিমেটলি দেশের উন্নতি হবে।
আরো পড়ুন: ঢাবি গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: জেনে নাও খুঁটিনাটি
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ: ক্যারিয়ারের সুযোগ
কেবল বিজ্ঞান বিভাগ নয়, ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকেও রয়েছে ক্যারিয়ারের বিপুল সুযোগ। এগুলোর মধ্যে আছে
-
চার্টার্ড একাউন্টেন্সি
একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট একাউন্টিং, অডিটিং, ট্যাক্সেশনে দক্ষ হন, তাই এটি ব্যবসা ক্ষেত্রে খুবই সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ক্যারিয়ার থেকে বেশ কিছু ডিগ্রি নিয়ে আরো অনেকদূর, যেমন CA, CPA, ACCA-এর মতো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব।
-
অর্থনীতিবিদ
একাউন্টেন্সের মতো, অর্থনীতিবিদদেরও চাহিদা সবসময়েই বেশি। অর্থনীতিবিদ হিসেবে একজন ব্যক্তিকে মানব শ্রম, আবাসন, পণ্য ও পরিষেবার খরচের মতো ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করতে হয়। একজন অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব হলো কোন প্রতিষ্ঠানের পরিসাংখ্যিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করা, সেগুলো বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি।
-
মার্কেটিং অফিসার
জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলোর প্রতি আকৃষ্ট এমন যে কেউ বাণিজ্য ও বিপনন, তথা মার্কেটিং অফিসার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। এই সেক্টরে একজন ব্যাক্তিকে নিজের প্রতিষ্ঠানের নতুন পণ্যগুলো মানুষের কাছে প্রচার করতে হয়, সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে ভোক্তাকে নিজের পণ্য সম্পর্কে অবহিত করাও তার দায়িত্ব।
-
টেকনোলজি অফিসার
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ-এ পড়াশোনার মধ্য দিয়ে তুমি বড় কোন টেক কোম্পানি কিংবা স্টার্টাপের প্রযুক্তিগত ব্যপারগুলোর সাথে যুক্ত হতে পারো। তোমার যদি অত্যাধুনিক গ্যাজেট সম্পর্কে আগ্রহ থাকে, যদি তোমার কাছে এমন কোন আইডিয়া থাকে যা দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেয়া সম্ভব, ব্যবসা শিক্ষা শাখা তোমাকে সে সুযোগ করে দিতে পারে।
-
ইন্টারন্যশনাল বিজনেস স্পেশালিস্ট
বিশ্বায়নের এই যুগে আন্তর্জাতিক ব্যবসাগুলোর কর্মপ্রনালী জানাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক জ্ঞান পৃথিবীর যে কোন জায়গায় কাজে লাগতে পারে। তাই বলা যায়, ব্যবসা শিক্ষা তোমাকে বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ার করতে সাহায্য করতে পারে। হতে পারে তুমি হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো ইকোনমিক সেন্টারগুলোতে কাজ করতে পারো, হতে পারো সরকারের বৈদেশী বাণিজ্যের সাথে যুক্ত কোন কর্মকর্তা। সম্ভাবনার কোন শেষ নেই!
-
উদ্যোক্তা
কেমন হয় যদি নিজেরই একটা ব্যবসা থাকে? এক্ষেত্রে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়াশোনা একটা সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। দামী রেস্তোরা থেকে ছোট মুদির দোকান, যে পর্যায়ের ব্যবসা হোক না কেন, এই বিভাগ তোমাকে ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞানগুলো দিয়ে আলোকিত করতে পারে, বাড়াতে পারে তোমার দক্ষতা।
-
শিক্ষকতা
ব্যবসা শিক্ষা যে কেবল ব্যবসা ক্ষেত্রের দিকেই তোমাকে নিয়ে যাবে এমন নয়, শিক্ষকতাও হতে পারে তোমার পেশা। সেক্ষেত্রে স্কুল কিংবা প্রাইভেট কলেজ, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, অথবা বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজে শিক্ষকরা করার সুযোগও রয়েছে।
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ: কিছু টিপস
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক যেকোনো স্তরে গিয়েই একজন শিক্ষার্থী ব্যবসায় শিক্ষায় অধ্যায়ন শুরু করতে পারে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক যেহেতু প্রাথমিক স্তর তাই আমি এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো গুরুগম্ভীর উপদেশ নয় বরং নিচে কয়েকটা পয়েন্টের মাধ্যমে কিছু বন্ধুসুলভ পরামর্শ দিব। মাধ্যমিক স্তর দিয়ে শুরু করছি।
১। ব্যবসায় উদ্যোগ পড়ার উদ্যোগ:
তুমি যদি তোমার ব্যবসায় উদ্যোগ বইটি ইতোমধ্যে দেখে থাক তবে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ যে এই বিষয়টি তেমন কঠিন নয়। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, পুরোপুরি তাত্ত্বিক হওয়ায় এই বিষয় মার্ক্স ওঠানো বাংলার মতই কঠিন। কিন্তু তুমি খেয়াল করলে দেখবে যে, ব্যবসায় উদ্যোগ প্রশ্নের উদ্দীপকেই তার উত্তরের হিন্ট দেয়া থাকে। সেই হিন্টটা ধরার জন্য তোমার বইটাতে যে পয়েন্ট গুলো দেয়া আছে সেগুলো ধরে বুঝে পড়তে হবে কারণ প্রশ্ন সেখান থেকেই হবে।
বিষয়টা একটু পরিষ্কার করা যাক। এই বিষয়ের সৃজনশীলগুলোর উদ্দীপকে একেকটা কাহিনী দেয়া থাকবে। ক-তে থাকবে এক লাইনের জ্ঞান এবং খ-তে থাকবে দু-তিন লাইনের অনুধাবন। গ-তে তোমাকে মূলত উদ্দীপকটা পড়ে ঐখানের যেই জিনিষের ব্যাখ্যা একটা কাহিনীর মাধ্যমে দেয়া আছে তা খুঁজে বের করে সেটাকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। আর ঘ-তে মূলত গ-এর বিষয়টি কোনো সমস্যা হলে তার নিরসন খুঁজে বের করতে হবে।
২। হিসাববিজ্ঞানের হিসাব:
ব্যবসায় শিক্ষা শাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তোমার জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন । হিসাববিজ্ঞান খুব-ই চমৎকার একটি বিষয় যদি একে ভালবাসা যায়, আর এরজন্য শুরু থেকেই চর্চা করতে হবে। নবম শ্রেণির শুরু থেকেই হিসাববিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বিষয় গুলো একটু একটু করে পরে ফেলা জরুরী। যদি মনে হয় যে, ‘না পারছিনা’ তবে নিজে নিজে চেষ্টা না করে কারো সাহায্য নেয়াটা উত্তম।
হিসাববিজ্ঞানে তত্ত্বীয় অংশ থেকে শুধুমাত্র নৈর্বেত্তিক আসবে। সৃজনশীল প্রশ্ন হবে পুরোপুরি গণিত দিয়ে। এ কারণে শুরু থেকে সময় হিসাব করে গণিত করার চেষ্টা করবে যাতে পরীক্ষার সময় সমস্যা না হয়। আর পরীক্ষার সময় যেটা পারবেনা সেটা নিয়ে বসে না থেকে আনুমানিক একটা ছক এঁকে(হিসাববিজ্ঞানের সব গণিত ছকে করতে হয়) পরের প্রশ্নে চলে যাবে। হিসাববিজ্ঞানের প্রশ্ন কিন্তু অনেক ঘুরিয়ে করা সম্ভব তাই যাতে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পার সেভাবে নিজেকে প্রস্তত করবে।
৩। ফিন্যান্স এর সূত্র:
নবম শ্রেণির জন্য একে একটি নতুন সংযোজিত বিষয় বলা যায়। ফিন্যান্সের তাত্ত্বিক অংশটা অনেক ইন্টারেস্টিং হলেও গণিতগুলো একটু কঠিন মনে হতে পারে তবে নিয়মিত চর্চা করলে এগুলোকে পিস অফ কেক মনে হবে। ফিন্যান্স হচ্ছে একটি সুত্রের খেলা। যত বেশি সূত্র মনে রাখতে পারবে ফিন্যান্স তত বেশি সহজ মনে হবে। আর সুত্র মনে রাখার জন্য ওগুলোকে একটি কাগজে বড় করে লিখে তুমি যেই ঘরে লেখাপড়া বাদে অন্য কোনো কাজ কর সেই ঘরে লাগিয়ে রাখবে যাতে করে ওটাতে বারবার চোখ পড়ে এবং মনে গেঁথে যায়।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
HSC 23 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বাংলা, ইংরেজি, ICT]
৪। এবং অন্যান্য:
অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কি করব? অন্যান্য বিষয়গুলো যেহেতু তুমি ছোট থেকেই পড়ে আসছো সেহেতু নতুন করে কিছু বলার নেই তবে এইটুকু বলব যে, এসএসসি পাশের পর ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাধারণ গণিতটা আর করা হয়না কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিসিএস এবং যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় এখান থেকেই প্রশ্ন হবে তাই এই দুবছরেই যদি সাধারণ গণিত অনেক ভালভাবে আয়ত্তে আনতে পার তবে ভবিষ্যতে এই নিয়ে আর ঝামেলা হবেনা।
পাশাপাশি, ইংরেজীটাও এই দুইবছরে অনেক ভালভাবে পড়ে ফেলবে কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ইংরেজীতে পারদর্শিতাকে অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। বাংলা ব্যাকারণের বেশিরভার প্রশ্নও মাধ্যমিকের বাংলা বই থেকে করা হয়।
এখন, যারা মাধ্যমিকে অন্য বিভাগে পড়ে উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ নতুন করে বেছে নিতে চাও, তাদের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলব উপরের ১ ও ৩ নম্বর পয়েন্ট দুটো পড়ে আসতে। এখানে ১ নম্বর পয়েন্টে যেটা করতে হবে ‘ব্যবসায় উদ্যোগ’ এর জায়গায় ‘ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘মার্কেটিং’ অথবা ‘ব্যাংকিং ও বিমা’ (যেই বিষয় তোমার থাকে) বসাতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের হিসাববিজ্ঞান বিষয়টা একটু জটিল। তাই শুরুতেই উচ্চমাধ্যমিকের বইটা না পড়ে মাধ্যমিকের বইটা থেকে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে এবং ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞান উভয় বিষয়ের পেছনেই একটু বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। আর হ্যাঁ, ইংরেজীতে কোনোপ্রকার অবহেলা চলবেনা!
শেষ কথা
সব শেষে বলব এই যে, ব্যবসায় শিক্ষা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় তবে এটা পুরোপুরি তোমার উপর নির্ভর করে যে তুমি এর সাথে বন্ধুত্ব করবে নাকি একে শত্রু বানাবে। আসলে, প্রতিটা বিভাগই তার নিজ নিজ দিক থেকে ভাল এবং ঠিকমত পড়লে যেকোনো বিষয়ের শিক্ষার্থী হয়েই তুমি জীবনে ভাল কিছু করতে পারবে। আর এই ‘ঠিকমত পড়া’টা সম্পূর্ণ তোমার উপর নির্ভর করে। হ্যাপি লার্নিং!
References:
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. Components of business studies
৫. 6 Reason why you should study business
৬. List of top careers in Business Studies
১০ মিনিট স্কুলের অনলাইন ব্যাচগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করো:
- ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির পড়াশোনার সবকিছু নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন ব্যাচ!
- SSC Bangla Crash Course
- SSC 2023 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান]
- HSC Bangla Crash Course
- HSC English Crash Course
- HSC – শর্ট সিলেবাস টেস্ট পেপার সল্ভ কোর্স (Bangla, English, ICT)
- HSC – শর্ট সিলেবাস টেস্ট পেপার সল্ভ কোর্স (Accounting, Finance)
- HSC 23 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বাংলা, ইংরেজি, ICT]
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন