ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত- সারাংশ বাংলা দ্বিতীয় পত্রে থাকবেই। কাজেই সারাংশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা আমাদের সবারই মোটামুটি আছে। এসএসসি কিংবা এইচিএসসি, দুটো বোর্ড পরীক্ষাতেই সারাংশের ওপর ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। অনেকে হয়তো মনে করে যে অল্প কয়েকটা লাইন লিখলেই দশ নম্বর, সারাংশ বোধহয় বেশ সোজা! আমার পরামর্শ হচ্ছে মোটেই এমনটা মনে না করা।
আপাতদৃষ্টিতে যেমন মনে হয়, সারাংশ তার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো নম্বরের জন্যই না। সারাংশ হচ্ছে একটা অনুচ্ছেদের মূল ভাবনা খুব সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা। একটি সারাংশ পড়ে যেন মূল অনুচ্ছেদের ব্যাপারে খুব দ্রুতই একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়, এই দিকে বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং সারাংশ লিখতে হয় খুবই বুঝে শুনে। আর সারাংশ লেখার জ্ঞান থাকাটা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী।
অনেকে অনুচ্ছেদ একবার পড়ে তেমন কিছু না ভেবেই কয়েক লাইনের ভেতরে সারাংশ লিখে দেয়। এক্ষেত্রে পুরো নম্বর পাওয়া তো দুরের কথা, শূন্যও পেয়ে বসতে হতে পারে!
আজকের লেখায় আলোচনা করবো সারাংশ বুঝে শুনে লেখার পাশাপাশি ভালো নম্বর পাওয়ার উপায়, আর বোর্ড পরীক্ষায় অনেকবার এসেছে এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সারাংশ।
সারাংশ কী?
বইয়ের ভাষায় সারাংশ বা সারমর্ম হচ্ছে- গদ্য বা কবিতা রচনায় যেসব যুক্তি, দৃষ্টান্ত, উপমা ও অলঙ্কার থাকে তা বাদ দিয়ে সহজ-সরল ভাষায় বিষয়টি সংক্ষেপে প্রকাশ করা। সারাংশ শব্দের অর্থ ‘সার’ অংশ বা ‘মূল’ অংশ। যে কোন একটি লেখা পড়লে আমরা দেখতে পাই, লেখকের মনের মূলভাবটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল ভাবের সহায়ক অনেক কথা বলতে হয়।
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৫
সারাংশনকে ইংরেজিতে বলা হয় Abstract. সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ রচনার শুরুতে বা কখনো কখনো রচনার শেষে সারাংশ সংযুক্ত করা হয়। সারাংশ যেহেতু যেকোনো লেখার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমাদের এটি শিখে রাখাও জরুরী।
সারাংশ -তে ভালো করবো কীভাবে?
যেমনটা বললাম, অনেকে পরীক্ষার হলে দুয়েকবার কোনোমতে অনুচ্ছেদ পড়ে নাচতে নাচতে সারাংশ লিখে দিয়ে আসে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা অর্ধেক নম্বরও পায়না। সারাংশ লিখতে হলে প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বনের।
- সবার আগে মাথা ঠান্ডা করে অনুচ্ছেদটি বারবার পড়ে নিতে হবে। অনুচ্ছেদে কী বোঝাতে চেয়েছে, তা মাথায় সাজিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে তুমি মনে মনে একটা সারাংশ কল্পনা করে সেটা রাফ পৃষ্ঠায় লিখতে পারো। এরপর দেখবে অনুচ্ছেদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ অংশ তোমার সারাংশে বাদ পড়েছে কিনা। আবার এটিও দেখবে তোমার সারাংশে অযাচিত কোনো লাইন উঠে এসেছে কিনা। দুই দিক বিবেচনায় এনে তুমি তোমার সারাংশ কাট-ছাট করবে।
- অনেকে ভাবে মাত্র তিন-চার লাইন লিখলাম, দশ নম্বর যদি না দেয়! এই ভেবে তারা বাড়িয়ে-চাড়িয়ে লিখে দিয়ে আসে। তুমি কিন্তু ঘুনাক্ষরেও এই ভুল করতে যেওনা!
- সারাংশ লেখার একটি অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, মূল অনুচ্ছেদের পরিমাণের তিন ভাগ এর চেয়ে সারাংশ বড় করা যাবেনা। অর্থাৎ, তোমার মূল অনুচ্ছেদ যদি হয় নয় বাক্যের, তাহলে সারাংশ হবে সর্বোচ্চ তিন বাক্যের!
- মস্তিষ্ক খাটিয়ে কেবল মাত্র গুরুত্বপূর্ণ ধারণাটিই তুলে আনতে হবে। তুমি কতো কম শব্দে পুরো অনুচ্ছেদের কতো গুছানো ধারণা দিতে পারছো, এটিই কিন্তু এখানে মূল দেখার বিষয়।
নিচে বোর্ড পরীক্ষায় বারবার আসা কয়েকটি সারাংশ তুলে দিচ্ছি। এগুলো প্রচুর পরিমাণে প্র্যাক্টিস করবে। মনে রেখো, সারাংশ এমন একটি বিষয়, অনেক বেশি অনুশীলন করে দক্ষতা অর্জন না করলে এতে ভালো নম্বর তোলার উপায় থাকেনা!
১) মানুষের মূল্য কোথায় সারাংশ
মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। বস্তুত চরিত্রবলেই মানুষের জীবনে যা-কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে । চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছুই নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, সে শুধু চরিত্রের জন্য। অন্য কোনো কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে নত হবার দরকার নেই ৷
জগতে যে-সকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরব মূলে এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক । এ কথার অর্থ এই নয় যে, তুমি শুধু লম্পট নও, তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ কর; তুমি পরদুঃখকাতর, ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয়। চরিত্রবান মানে এই ৷
সারাংশ : চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মের ওপর নির্ভর করে মানুষের মর্যাদা। এসবের মধ্যে চরিত্রই মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। চরিত্রগুণেই মানুষ শ্রদ্ধা অর্জন করে। যিনি সত্যবাদী, বিনয়ী, জ্ঞানী, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, স্বাধীনতাপ্রিয় ও সজ্জন তিনিই চরিত্রবান। |
২) বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ সারাংশ
বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কিন্তু চরিত্র তদপেক্ষাও মূল্যবান। অতএব, কেবল বিদ্বান বলিয়াই কোনো লোক সমাদর লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে না। চরিত্রহীন ব্যক্তি যদি নানা বিদ্যায় আপনার জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াও থাকে, তথাপি তাহার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে যে, কোনো কোনো বিষধর সর্পের মস্তকে মণি থাকে। মণি মহামূল্যবান পদার্থ বটে, কিন্তু তাই বলিয়া যেমন মণি লাভের নিমিত্ত বিষধর সর্পের সাহচর্য লাভ করা বুদ্ধিমানের কার্য নহে, সেইরূপ বিদ্যা আদরণীয় হইলেও বিদ্যালাভের নিমিত্ত বিদ্বান দুর্জনের নিকট গমন বিধেয় নহে।
সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার এবং তা বিদ্যার চেয়েও অধিক মূল্যবান । চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা, দুর্জনের সাহচর্যে সচ্চরিত্র ব্যক্তির চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। |
৩) আজকের দুনিয়াটা সারাংশ
আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থ বা বিত্তের ওপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচণ্ড বেগে শুধু আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় করতে না পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই লোপ পেয়ে যাবে। মানুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখান থেকে আর হয়তো নামবার উপায় নেই, এবার উঠবার সিঁড়ি না খুঁজলেই নয়। উঠবার সিঁড়িটা না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না ।
সারাংশ : অর্থ-সম্পদের অন্ধ নেশা একালে মানুষকে এক চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পেলে মানুষের মনুষ্যত্বই হয়তো লোপ পেয়ে যাবে। |
৪) অতীতকে ভুলে যাও সারাংশ
অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝা অতীতের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎকাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। আজই ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়বিক দুর্বলতায়। অতএব, অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও আর শুরু কর দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে ।
সারাংশ : অতীতের ব্যর্থতার জন্য আক্ষেপ করে কিংবা ভবিষ্যতের সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বর্তমানকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং বর্তমানকে কাজে লাগানো উচিত সবচেয়ে বেশি। কারণ বর্তমানের কাজের মধ্যেই নিহিত মানুষের ভবিষ্যৎ সুখ ও সমৃদ্ধি। |
৫) সবুজ শ্যামল বনভূমি সারাংশ
সবুজ শ্যামল বনভূমি মাঠ নদীতীর বালুচর
সবখানে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘর।
সোনার দেশের মাঠে মাঠে ফলে সোনাধান রাশি রাশি
ফসলের হাসি দেখে মনে হয় শেখ মুজিবের হাসি ।
শিশুর মধুর হাসিতে যখন ভরে বাঙালির ঘর
মনে হয় যেন শিশু হয়ে হাসে চিরশিশু মুজিবর।
আমরা বাঙালি যতদিন বেঁচে রইব এ বাংলায়
স্বাধীন বাংলা ডাকবে : মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়!
সারমর্ম : বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি—সব জায়গাতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব অনুভূত হয়। নিসর্গ ও মানুষের সকল সৌন্দর্যেও তাঁকে প্রত্যক্ষ করা যায়। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক ও চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু । |
৬) সময় ও স্রোত সারাংশ
সময় ও স্রোত কারও অপেক্ষায় বসে থাকে না। চিরকাল চলতে থাকে। সময়ের নিকট অনুনয় কর, একে ভয় দেখাও, ভ্রুক্ষেপও করবে না, সময় চলে যাবে আর ফিরবে না। নষ্ট স্বাস্থ্য ও হারানো ধন পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু সময় একবার গত হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। গত সময়ের জন্য অনুশোচনা করা নিষ্ফল। যতই কাঁদ না কেন, গত সময় কখনও ফিরে আসবে না।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
সারাংশ: সময় থেমে থাকে না। স্বাস্থ্য ও ধন হারালে তা পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব, কিন্তু যে সময় চলে গেছে তা আর ফিরে পাওয়া যায়না। তাই সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত। |
৭) শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সারাংশ
শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর। কালি-ধূলার মাঝে, রৌদ্র-বৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও। বাবু হয়ে ছায়ায় পাখার তলে থাকবার দরকার নেই। এ হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন। কাজের ভেতর কুবুদ্ধি কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না। কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে, স্বাস্থ্য, শক্তি, আনন্দ, স্ফূর্তি সকলই লাভ হয়। পরিশ্রমের পর যে অবকাশ লাভ হয় তা পরম আনন্দের অবকাশ। তখন কৃত্রিম আয়োজন করে আনন্দ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু চিন্তার দ্বারা জগতের হিতসাধন হয় না। মানব সমাজে মানুষের সঙ্গে কাজে, রাস্তায়, কারখানায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে ।
সারাংশ : কর্মহীন জীবন মানুষকে নির্জীব ও হীনপ্রবৃত্তিসম্পন্ন করে তোলে। বস্তুত, পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ পায় স্বাস্থ্যময় জীবন ও পরিচ্ছন্ন মন, হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ মানুষ। কর্মসূত্রেই মানুষ সৌজন্য শেখে, লাভ করে কাজের ও অবকাশের আনন্দ, অবদান রাখে জগতের কল্যাণে । |
৮) মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সারাংশ
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণ মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে, জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে। পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না। মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়। প্রকৃত মানুষই জাতীয় জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনয়নে সক্ষম ।
সারাংশ : জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেকের অধিকারী বলে মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী। পাশব শক্তি ও বিত্তের দাপট মানুষের মহিমার পরিচায়ক নয়। বরং জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মানুষ হয়ে ওঠে যথার্থ মানুষ। এ ধরনের মানুষের অবদানেই অর্জিত হয় জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতি । |
৯) যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেখানে জীবনের বিকাশ নেই সারাংশ
যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেখানে জীবনের বিকাশ নেই, উল্লাস নেই, প্রেরণা নেই, নেই কোন প্রয়াস। জীবনের জাগরণের জন্য চাই দ্বন্দ্ব, চাই সংঘাত। আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে যারা ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে পাপী-অপরাধী, আসামী, পরিণামে জয়ী তারাই। এমনি নতুন চিন্তা আঘাতেই জাগে, তাই এ চিন্তা আঘাতেরই সন্তান। এ অর্থে সে যে পরশ, সেই তো পুরস্কার। দুর্ব্বা ক্ষুদ্র ও কোমল। পায়ে দলিত হওয়াই তার নিয়তি। তবুও সে অমর ও চিন্ময়Ñ সবুজ ও প্রাণময়, তেমনি মানবতাবাদী মনীষীরা সংখ্যায় নগণ্য, বাহুবলে তুচ্ছ, নির্যাতনই তাদের ললাট লিপি।তবুও তারাই মানব ভাগ্যের নিয়ন্তা। তারা ভাঙেন কিন্তু মচকান না। নিজে মরেন কিন্তু দিয়ে যান হায়াত। চিন্তাবিদ বাহ্যত একক ব্যক্তি, কিন্তু আসলে রক্তজীব। দুর্ব্বার মতো চিন্তা ও চিন্তাবিদদের ধ্বংস নেই। সে মরে, মরেই বাঁচে।
সারাংশ: চিন্তার ভিতর দিয়ে বিকশিত জীবনের ধ্বংস নেই। মানব সভ্যতার বাতিঘর হয়ে তাই যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন চিন্তাবিদ, জ্ঞানী মনীষীরা। সংখ্যায় অতি ক্ষুদ্র এই মহৎ প্রাণ মানুষগণ সমস্ত জাতির পথ প্রদর্শক। তাদের চিন্তার খোরাক জাগে সংঘাত আর দ্বন্দ্ব থেকে। |
আপনার কমেন্ট লিখুন