আমাদের ক্লাসে দুইজন মাহির আছে। একজন লম্বা মাহির আরেকজন রাজশাহীর মাহির। তো রাজশাহীর মাহির খুবই ভ্রমণপিপাসু এক ছেলে। সে কথা বলবে একদম শুদ্ধ ভাষায়, প্রমিত বাংলা যাকে বলে। খুব সুন্দর করে এমন সব আবদার করবে তখন আমার একদমই না বলতে ইচ্ছা করে না। যেমন, এই কেকা চলো, ইন্ডিয়া ঘুরে আসি। তখন আমার মনে হয়, ইন্ডিয়া যেন দুই মিনিটের হাঁটার পথ। ক্লাসের ফাঁকে গিয়ে একটু ঘুরে আসাই যায়। আবার একদিন বলছে, “চলো কেকা, নাপিত্তাছড়া যাই।“ সেটা অবশ্য যাওয়াই যায়। আমার বাসার কাছেই তো। আবার একদিন আবদার করলো কী জানো? “কেকা, চলো কলম্বিয়া যাই!”
আমি তো শুনে হাঁ! বলে কী ছেলে! তবে ওর সাথে নানান জায়গা নিয়ে কথা হয় আমার। আমাদের কথার মেইন টপিকই থাকে ঘুরাঘুরি। তো ওর সাথে কথা বলতে বলতে আমার মতো অলসের এরকম ট্যুর/ট্রিপ দেওয়ার খুব শখ জেগেছে। তাই গুগলে দেশের আনাচে কানাচে কী কী আছে তাই নিয়েই খালি সার্চ দিই। কারণ, আপাতত যেভাবে অর্থসংকটে পড়ি, বিদেশ নিয়ে ভাবতে চাইলে আমার মানিব্যাগ সে ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ভাবছি, দেশকেই আগে চিনে নেওয়া যাক!
তাই, গুগল করতে করতে আমি অনেকগুলো জমিদার বাড়ির সন্ধান পেয়েছি। আর্কিটেকচার নিয়ে আমার আগ্রহ আছে খানিকটা। বাংলাদেশে যে এতো সুন্দর সুন্দর নান্দনিক স্থাপত্য আছে ভাবলেই অবাক হবে। তাও আবার শত বছর আগে তৈরি জমিদার বাড়িগুলো! সেসময়েও স্থাপত্যে কত সমৃদ্ধ ছিল বাংলাদেশ! আজকে আমি তোমাদের সাতটি জমিদার বাড়ির কথা বলব। আমি মনে করি তোমরা সুযোগ পেলেই এই জমিদার বাড়িগুলো দেখে এসো। এতো জোস জিনিস মিস করা একদমই অনুচিত।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
১. মহেরা জমিদার বাড়ি, টাঙ্গাইল
এই জমিদার বাড়িটি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা জমিদারবাড়ি। ১৮৯০ সালের দিকে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে বানানো হয় এটি। প্রথম জমিদার ছিলেন কালিচরণ সাহা। তারা ছিলেন অনেক জমির মালিক। কথিত আছে, এতই ধনী ছিলেন যে টাঙ্গাইলে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করার আগেই জমিদার বাড়িটি বানানো হয়।
বাড়ির মূল ফটক দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে যেই গোলাপি বিল্ডিং দেখা যাবে সেটি হচ্ছে চৌধুরী লজ। একটা গ্রীক ভাব আছে বিল্ডিংটার। অনেকের মতে আনন্দ লজ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিল্ডিং। শ্বেতশুভ্র বিল্ডিং মানুষকে মুগ্ধ করবেই। এমনকি একটা টেনিস কোর্ট ও আছে। মহারাজা লজ, কালিচরণ লজ, কাচারী ভবন, নায়েব ভবন সব মিলিয়ে মহেরা জমিদারবাড়ির স্থাপত্য একদম নজরকাড়া।
যেভাবে যাবে :
মহাখালী থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল বাস আছে। ভাড়া নেবে ১২০-১৫০ এর মধ্যে। টাঙ্গাইলের নটিয়া পাড়াতে নামতে হবে। যেতে লাগবে ২ঘণ্টার মত। জ্যামের উপর নির্ভর করছে। সেখান থেকে সিএনজি বা রিকশা করে যাওয়া যায়। জমিদার বাড়িতে ঢুকার প্রবেশমূল্য হচ্ছে ৫০ টাকা।
থাকা-খাওয়া :
চাইলে সেখানেই থাকা যাবে পরিবার নিয়ে। ঐখানেই পুলিশ একাডেমি কেন্দ্রের ক্যান্টিনে খাবারের ব্যবস্থা আছে।
২. তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর
রংপুর জেলা দক্ষিণ পূর্বে ৬ কিলোমিটার দূরে তাজহাট গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। ১৯১৭ সালে এই বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। মহারাজা গোপাল রায় এটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে, মান্না লাল রায় যিনি কিনা একজন টুপি ব্যবসায়ী ব্যবসা করার জন্য ভারতের পাঞ্জাব থেকে রংপুরের মাহীগঞ্জে আসেন, তিনি ছিলেন অনেক চতুর একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায় তাঁর মুনাফা এতই বেশি হয়েছিল যে তিনি দুর্ভিক্ষের সময় অনেক ভাইসরয়কেও টাকা ধার দিতে পারতেন। ফলে সেখানে তাঁর ক্ষমতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যেহেতু তিনি টুপি বিক্রি করতেন সেই থেকে “তাজ” বা মুকুট কথাটি আসে। তারপর তাঁর অনেক পরের প্রজন্ম ছিলে মহারাজা গোপাল রায়।
এই জমিদারবাড়িতে ১৯৯৫ সালে সরকার রংপুর জাদুঘর স্থানান্তর করেন। এটি বাড়ির ২য় তলায় আছে। মার্বেল সিড়ি বেয়ে উঠলেই আরঙ্গজেবের কুরআন, মহাভারত সহ বেশি কিছু আরবি সংস্কৃতে লেখা পাণ্ডুলিপি।
যেভাবে যাবে :
ঢাকা থেকে কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী যেকোনো বাসস্ট্যান্ডেই রংপুরগামী বাস পাওয়া যাবে। ৬০০ টাকা ভাড়া হবে। তবে এসি বা নন এসিভেদে টিকেটের মূল্য ভিন্ন হতে পারে। আর জমিদার বাড়িতে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা এবং জাদুঘরে প্রবেশমূল্য মাত্র ৫টাকা।
৩. বালিয়াহাটি জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ থেকে আট কিমি দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াহাটি গ্রামে এর অবস্থান। ২০০ বছরের এই জমিদার বাড়িতে প্রায় ১৬০০ বর্গমিটার জুড়ে আছে প্রায় ২০০টির মত রুম আছে। ১৯ শতকে নির্মিত এই বাড়ির সাথে রেনেসাঁ স্থাপত্যের বেশ মিল পাওয়া যায়। কথিত আছে গোবিন্দরাম সাহা বালিয়াহাটি জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন করেন।
যেভাবে যাবে :
ঢাকা থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে যেতে হবে। আরিচা বা মানিকগঞ্জগামী বাসে উঠতে হবে। সাটুরিয়াগামী এসবি লিংক বাসে উঠতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। সাটুরিয়ার জিরো পয়েন্টে নেমে ইজিবাইক বা সিএনজি করে জমিদারবাড়ি যেতে হবে। ভাড়া হবে ২০-৩০ টাকা। আর জমিদারবাড়িতে প্রবেশের মূল্য ২০ টাকা, তবে বিদেশী নাগরিকের জন্য সেটা ২০০ টাকা।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স
৪. উত্তরা গণভবন, নাটোর
রাজা দয়ারাম রায় এই জমিদারবাড়ির নির্মাতা। নাটোর শহর থেকে তিন কিমি দূরে দীঘাপতিয়া রাজবাড়িটি আজ সকলের কাছে উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই বাড়িটি অযত্নে থাকে। পরে তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান এর রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দেন এবং নামকরণ করেন “গভর্নর হাউস”। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে এর নামকরণ করা হয় “উত্তরা গণভবন”।
উত্তরা গণভবনের প্রধান ফটকে কলকাতায় তৈরি লন্ডন ‘‘কোক এন্ড তেলভী’’ কোম্পানির শতবর্ষী প্রাচীন বিরাট আকারের দৃষ্টিনন্দন ঘণ্টা (ঘড়ি) স্থাপিত হয়েছে, যা আজও সঠিক সময় প্রদান করছে।
এর ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বিশাল বড় এক কামান, যা কিনা রাজা ব্যবহার করতেন, আছে সুবিশাল বাগান যার নাম ইতালিয়ান বাগান। আছে নানারকম মার্বেল পাথরের মূর্তি।
যেভাবে যাবে :
ঢাকা থেকে নাটোর ট্রেনে বা বাসে যাওয়া যায়। বাসে যেতে হলে গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে উঠতে হবে। ভাড়া পড়বে ৩৮০ টাকা। এসি হলে আরেকটু বেশি হতে পারে। নাটোরের যেকোনো জায়গা থেকে জমিদারবাড়ি যাওয়ার জন্য রিকশা বা সিএনজি পাবে। আর জমিদারবাড়িতে প্রবেশ মূল্য মাত্র ২০ টাকা।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
৫. রোজ গার্ডেন প্যালেস, ঢাকা
কথিত আছে নব্য ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাসকে ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন একটা পাত্তা দিতেন না। এমনকি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর এক জলসায় গিয়ে তিনি অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। তখনি তিনি এই রোজ গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩১ এ তা নির্মাণ হয়। তবে অনেক কারুকার্য খচিত করেছিলেন বলে তিনি এটি বানানোর পরই দেউলিয়া হয়ে যান। তাই ১৯৩৭ সালে তিনি খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে বিক্রি করে দেন।
অনেক লতাপাতার দিয়ে কারুকাজ করা এই বাড়ির অনেক জায়গায় পাথরের মূর্তি সজ্জিত আছে। নিচ তলায় আছে ৮টি কামরা। ২য় তলায় ৫টি কামরার সাথে মাঝে আছে সুবিশাল নাচ ঘর।
এই ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের সূচনা হয়েছিল এই রোজ গার্ডেনেই ৭০ বছর আগে।
যেভাবে যাবে:
এটি যেহেতু ঢাকা শহরের কে এম দাস লেইনে অবস্থিত তাই বাস, রিকশা, ট্যাক্সি এমনকি উবার পাঠাও করেও যাওয়া যাবে।
৬. শশী লজ, ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহে অবস্থিত এই বাড়িটি নির্মাণ করেন সূর্যকান্ত আচার্য। ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামে খ্যাত এই বাড়িটি ১৯৫২ সাল থেকে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কথিত আছে, জমিদারবাড়ির মানুষজন বাচ্চা দত্তক নিতো পরে ঐ বাচ্চারাই শাসন ভার পেত। শশীকান্তকে সূর্যকান্ত দত্তক নিয়েছিলেন। সূর্যকান্ত তাঁর ছেলের নামানুসারে নাম রেখেছিলেন শশী লজ। ১৯ শতকে বানানো এই বাড়ি ১৮৯৭ সালের ভূমিম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৯১১ সালের দিকে সূর্যকান্ত আবার সেটি নির্মাণ করেন।
৯ একরের উপর অবস্থিত এই বাড়িতে আছে ১৬ টি গম্বুজ। আছে গ্রীক দেবীর মূর্তি।
যেভাবে যাবে:
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ডিরেক্ট বাস আছে। কল্যাণপুর, গাবতলী যেকোনো জায়গা থেকে এসি নন এসি বাস পাবে। ১৮০-৩৮০ এর মধ্যেই বাস পেয়ে যাবেন। যেতে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা লাগবে।
আবার ময়মনসিংহগামী ট্রেন করেও যেতে পারো। তিস্তা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস একটু খোঁজ নিলেই এই ট্রেনগুলোর সময়সূচি জেনে নিতে পারো।
৭. পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল সদর থেকে ৩৫ কিমি দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলার লৌহজং নদির তীরে এই জমিদারবাড়ি অবস্থিত। একটু পুরোনো ধাঁচ পেতে হলে এই জমিদারবাড়িতে যাওয়া যায়। এখানে বর্তমানে বিসিআর ডিগ্রী কলেজ চালু আছে।
বাড়ির মাঝখানে আছে দুইতলা বিশিষ্ট নাচের ঘর। তিনটি বাড়ির সামনে আছে তিনটি নাট মন্দির। এছাড়াও আছে লতাপাতার কাজ, ছোট ছোট নারীমূর্তি।
যেভাবে যাবে :
বাস করে যেতে পারো। সাটুরিয়া পার হয়ে পাকুরিয়া বাজারে নেমে অল্প হাঁটলেই জমিদার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। টাঙ্গাইল সদরে নামলে সেখান থেকে সিএনজি করে লাউহাটি হয়ে পাকুরিয়াগামী লোকাল পরিবহণ করে যেতে হবে।
বোনাস :
আহসান মঞ্জিল, পুরান ঢাকা :
আহসান মঞ্জিল নিয়ে সবাই কম বেশি জানো তাই আর বলছি। ক্লাসের ফাঁকে সময় থাকলে চাইলেই ঘুরে আসতে পারো এই গোলাপি বাড়িটি। পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই বাড়িটিতে যেতে হলে বাস, ট্যাক্সি, রিকশা সবই পাবে হাতের নাগালে।
তথ্যসূত্র :
১। http://www.charpashe.com/article/2395
৩। http://offroadbangladesh.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Personal Finance Course by Nafeez Al Tarik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন