স্বপ্ন তো আমরা ঘুমের মধ্যে সবাই দেখি। কখনো স্বপ্নে আমরা উড়ছি, কখনো সুপারহিরোদের মত ফাইট করছি আবার কখনো বা সাপের কামড় খাচ্ছি! পুরো স্বপ্নটাই যেন যত্ন করে বানানো একটা মুভি, কেউ যেন আমাদের চোখের সামনে চালিয়ে দিয়েছে শুধু!
আজ আমি তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো এমন এক ধরনের স্বপ্নের যেটা কিনা মুভির মতন নয়, বরং ভিডিও গেমসের মত।
আমরা তো ভিডিও গেমস জয়স্টিক দিয়ে নিজের ইচ্ছা মত কন্ট্রোল করতে পারি। তাই না? আচ্ছা, ভাবো তো, স্বপ্নকে যদি নিয়ন্ত্রন করা যেত, তবে কেমন হতো?
যেমন ধরো, তুমি স্বপ্নে দেখছো তুমি কিছুর দানবের তাড়া খেয়ে দৌড়াচ্ছো, ক্লান্ত হয়ে একেবারে হাঁপিয়েই উঠেছো তুমি! তুমি এখন করলে কী, দৃশ্যটা পরিবর্তন করে দিলে, এখন তুমি ঘুরে দাঁড়ালে এবং দানবগুলোর সাথে ফাইট করে তাদের পরাস্ত করলে। একদম সুপারহিরোদের মত!
খেয়াল করো, তুমি কিন্তু নিজের ইচ্ছা মতন স্বপ্নের দৃশ্য পরিবর্তন করলে এবং চালনা করলে। তাহলে, আজ আমরা এমন এক স্বপ্নের কথা জানবো যা আমরা স্বপ্নে থাকাকালীন অবস্থায়ই নিয়ন্ত্রন করতে পারি।
এ ধরনের স্বপ্নকে বলা হয় লুসিড ড্রিমিং। লুসিড মানে কী, বলো তো? লুসিড অর্থ পরিষ্কার। লুসিড ড্রিমিং শুরুই হয় এমন একটা অবস্থা থেকে যখন তুমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারো যে তুমি স্বপ্ন দেখছো!
তুমি ঘুমের মধ্যেই আছো এবং স্বপ্ন দেখছো এবং বুঝতেও পারছো সেটা স্বপ্ন। তোমার ঘুম কিন্তু ভাঙ্গছে না। এর মানে কি জানো? চেতন ও অবচেতন মন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে!
লুসিড ড্রিমিং এর অভিনব জগতে তোমাদের স্বাগতম!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
লুসিড ড্রিমিং কী?
মনোবিজ্ঞানের একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় এই লুসিড ড্রিমিং। এটি হলো এমন এক ধরনের স্বপ্ন যেখানে তোমার চেতনা কাজ করে। তুমি স্বপ্নের মধ্যেই বুঝতে পারো যে তুমি স্বপ্ন দেখছো এবং তোমার ঘুম ও ভাঙ্গে না।
চেতন ও অবচেতন মনের একটি বিরল সংমিশ্রণে এমনটা হয়। সাধারণত লুসিড ড্রিমিং এর সময় তুমি স্বপ্ন বেশ পরিষ্কারভাবে দেখতে পাও এবং স্বপ্নে প্রদত্ত অনুভুতিগুলো খুবই তীব্র হয়, প্রায় বাস্তবের মতন এবং তুমি চাইলেই স্বপ্ন দৃশ্য নিজের ইচ্ছের মতন করে নিতে পারো। নিজের স্বপ্ন নিজের মত দেখতে পারো। স্বপ্নের মধ্যে নিজের নিয়ন্ত্রণ খাটে না, এ কথাটাই লুসিড ড্রিমিং-এ খাটে না!
সাধারণত REM Sleep থেকেই স্বপ্ন দেখা প্রক্রিয়া শুরু হয়।
শুরুর কথা
বলছি ৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা। সেইন্ট অগাস্টিন অব হিপ্পো একটি চিঠি লিখলেন ডক্টর গেনডিয়াসের কাছে। সেই চিঠিতে তিনি বললেন এমন একজন মানুষের কথা যে কিনা স্বপ্ন দেখার সময় বুঝতে পারেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন এবং ঘুমের মধ্যে নিজের স্বপ্ন নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।
এই একই ঘটনা ঘটে অ্যারিস্টোটলের সাথে। তিনি লিখেছিলেন, মাঝেমধ্যে ঘুমানোর পরেও তাঁর সচেতন একটা অংশ জাগ্রত থাকে এবং স্বপ্ন দেখার মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
আবার ১৭ শতকে স্যার থমাস ব্রাউনি একই ব্যপার ব্যাখ্যা করেন।
১৯ শতকে ফ্রেঞ্চ সাইকোলজিস্ট মেরি-জি-লিন শুধু লুসিড ড্রিমিং এর উপরেই বই লিখে ফেলেন।
স্যামুয়েল পেপিস ১৬৬৫ সালের ১৫ আগস্ট তার ডায়েরিতে একটি স্বপ্নের রেকর্ড রাখেন যেটি ছিল হুবহু এরকম-
“I had my Lady Castlemayne in my arms and was admitted to use all the dalliance I desired with her, and then dreamt that this could not be awake, but that it was only a dream.”
তাহলে বুঝতে পারছো লুসিড ড্রিমিং আসলে নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে অনেকেরই এই অভিজ্ঞতা হয়েছে!
আরও পড়ুন:
সোশ্যাল মিডিয়া এর সদ্ব্যবহার: জেনে নাও কয়েকটি টিপস!
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
লুসিড ড্রিমিং কীভাবে হয়?
সাল ১৯৭০, কিথ হেরেন নামের একজন প্যারাসাইকোলজিস্ট লুসিড ড্রিমিং কীভাবে হয় তা জানার জন্যে গবেষণা শুরু করেন। আ্যলান ওসলি নামের এক স্বেচ্ছাসেবক সেই রিসার্চটিতে দেখান লুসিড ড্রিমিং, রেম স্লিপ (REM Sleep)-এর সময় দেখা যায়। REM বা Rapid Eye Movement যা কিনা খুবই স্বাভাবিক, এবং স্বপ্ন দেখা শুরু হলে চোখের পাতার অনিয়মিত কাঁপন থেকেই এর নাম এমন হয়েছে!
সাধারণত রেম স্লিপ থেকেই স্বপ্ন দেখা প্রক্রিয়া শুরু হয়।
নিউরোলজিস্ট জে. অ্যালান হবসন লুসিড ড্রিমিং এর সময় মস্তিষ্কের কাজ কেমন হয় তা নিয়ে একটা হাইপোথেসিস দেন।
তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখার সময় কোনো কিছু চিনে ফেলা হলো লুসিড ড্রিমিং এর প্রথম পর্যায়। কাউকে চিনে ফেললে dorosolateral prefrontal cortex-এ সাড়া জাগে যা কিনা রেম স্লিপ এর প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো খুলে দেয় এবং একে সক্রিয় করে তোলে।
এর ফলে স্বপ্ন আমাদের মনে থাকে এবং এই কাজের সময় amygdala এবং parahippocampal cortex উদ্দীপ্ত হয় এবং ড্রিম হ্যালুসিনেশন শুরু হয়।
এভাবেই রেম স্লিপ ও লুসিড ড্রিমিং এর সম্পর্ক বেশ গভীর!
লুসিড ড্রিমিং-এর ব্যবহার
ভাবছো তো, লুসিড ড্রিমিং ব্যবহার কীভাবে করা যায়? এটা তো শুধুমাত্র একটা স্বপ্ন!
তিব্বতের সাধুরা কিন্তু এমন ভাবে না। তারা রীতিমত লুসিড ড্রিমিং এর চর্চা করে! এটাকে ড্রিম ইয়োগা-ও বলা হয়ে থাকে!
আবার খুব সহজ একটা ব্যবহার হলো, দুঃস্বপ্ন পরিবর্তন করে ফেলা। তুমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছো, এখন তুমি খুব সহজেই ইচ্ছা করলে স্বপ্নটা পরিবর্তন করে ফেলতে পারো!
ধরো, তুমি স্বপ্নে দশ তলার উপর থেকে নিচে পড়ছো, কিছুক্ষণ পরেই পড়বে শক্ত মাটিতে। এমন সময় তুমি নিয়ন্ত্রণ শক্তি দিয়ে মাটির পরিবর্তে একটা ট্র্যাম্পোলিন বসালে এবং সেখানে পড়লে। দারুণ হয় না ব্যাপার টা?
তাছাড়াও লুসিড ড্রিমিং মানসিক শক্তি এবং সৃজনশীলতা বাড়ায়!
লুসিড ড্রিমিং চর্চা
লুসিড ড্রিমিং যে এমনি এমনি হয় তা কিন্তু না, কেউ ইচ্ছা করলে চর্চার মাধ্যমেও লুসিড ড্রিমিং করতে পারে। এজন্য যা করতে হবে তা হলো, ঘুমোতে যাবার আগে নিজেকে বারবার বলতে হবে , ‘আজ আমি স্বপ্ন নিয়ন্ত্রন করতে পারবো’ অথবা ‘আজ স্বপ্ন দেখার সময় আমি বুঝতে পারবো’।
তাছাড়া, আমরা যখন স্বপ্ন দেখি, ঘুম থেকে উঠে আমাদের পরিষ্কার মনে থাকে, কিন্তু খানিক পরেও ভুলে যাই।
আমরা বিছানার পাশে একটা ডায়েরি এবং কলম রাখতে পারি, ঘুম থেকে স্বপ্ন দেখে উঠেই যাতে সেখানে লিখে রাখা যায়। এটা আমাদের স্বপ্ন মনে রাখতে সাহায্য করবে এবং এতে স্বপ্নের সময় চেতনাও সজাগ হয়ে যাবে। আবার বেশি বেশি ভিডিও গেমস খেললেও স্বপ্ন নিয়ন্ত্রন সম্ভব!
এমনকি একটা ড্রাগস আছে যা কিনা লুসিড ড্রিমিং এ সাহায্য করে। আমি তার নাম বলবো না, নাম বললে চাকরি থাকবে না!
তাহলে, হয়ে যাক লুসিড ড্রিমিং চর্চা?
লুসিড ড্রিমিং-এর বিপদ
যারা নিয়মিত লুসিড ড্রিমিং করে তারা মাঝেমধ্যেই স্বপ্ন এবং বাস্তব জীবন গুলিয়ে ফেলে এবং কখনো কখনো কারো কাছে স্বপ্নের জীবনটাই বেশি সুন্দর মনে হয়! এমনকি বেশি লুসিড ড্রিমিং তোমাকে সমাজ জীবন থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে!
কিছু প্রশ্ন
এরকম দারুণ একটা ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না, তাই কি হতে পারে? বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মানুষের প্রশ্ন আছে এই লুসিড ড্রিমিং নিয়ে। যেমন ধরো, ‘যদি লুসিড ড্রিম চলাকালে কেউ মারা যায়, সে কি বাস্তবেও মারা যাবে? ‘
অথবা, ‘লুসিড ড্রিমিং এ কি গন্ধ অনুভব করা যায়?’
আবার, ‘লুসিড ড্রিমিং এ যা হয় তা কি বাস্তবেও সত্যি হয়?’
এমন অনেক আজগুবি প্রশ্নের উদ্রেক করে লুসিড ড্রিমিং!
পুরো পপুলেশনের প্রায় ২৩% লুসিড ড্রিমিং করে, কেউ প্রাকৃতিক ভাবে কেউ বা চর্চা করে। লুসিড ড্রিমিং ব্যবহার করে কেউ মানসিক শান্তি পেতে পারে, কেউ আবার বাস্তব জীবনে অনাগ্রাহী হতে পারে। ‘Inception’-এর মত মুভিতে আমরা লুসিড ড্রিমিং এর জটিল রূপ দেখতে পাই!
যাই হোক, আজ জানতে তো পারলে লুসিড ড্রিমিং সম্পর্কে। এবার খুব বড়সড় সুযোগ তোমার সামনে। চাইলে এখন তুমি নিজেও কিন্তু ঘুরে আসতে পারো স্বপ্নের জাদুকরী দুনিয়া!
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন