প্রখ্যাত ইতালিয়ান ফটোগ্রাফার ডেভিড সাসোর দুটো ছবি দিয়েই শুরু করা যাক ।
আচ্ছা, এবার বলুনতো কোন ছবিটি আসল ? প্রথমটি নাকি দ্বিতীয়টি? নাকি কোনোটিই না?
আমিই বলে দিচ্ছি। সত্যি বলতে গেলে দুটি ছবিই আসল। কিন্তু পরের ছবিটি ডেভিড সাসো নিজেই এডিট করে বানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কেন এমন করে বানালেন ? অন্য রং দিয়ে নয় কেন?
উত্তরটা হোল, আপনি যদি সাধারণ দৃষ্টিক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকেন তবে ঝরা পাতার প্রথম ছবিটি আপনার জন্য। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা ঝরা পাতার দৃশ্যটিকে দ্বিতীয় ছবিটির মতো দেখবেন। আর সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হোল কেউ বলে দেয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা বুঝবেনই না যে তাঁরা ভুল রং দেখছেন! আপনি যদি এমন একজন হন তবে আপনিও দৃশ্যটি পরের ছবিটির মতো দেখবেন এবং ব্যাপারটা আপনার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় আপনি একজন কালার ব্লাইন্ড বা বাংলায় যেটিকে বলে বর্ণান্ধ। আর আপনার বর্ণান্ধতার ধরন হচ্ছে নীল-হলুদ বর্ণান্ধতা যার ইংরেজি নাম হোল ট্রাইটোনোপিয়া।
“সবই তো বুঝলাম, কিন্তু কালার ব্লাইন্ড কী?”
“কালার ব্লাইন্ড কেন হয়?”
“আমি কি কালার ব্লাইন্ড নাকি সেটি জানতে কালার ব্লাইন্ড টেস্ট কোথায় পাবো?”
“কালার ব্লাইন্ড এর কোনো চিকিৎসা আছে?”
আপনার সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই কিন্তু আমার কাছে আছে !
Facebook Marketing
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
চলুন, দেখে নেই মেডিকেল সায়েন্সের এই আজব ব্যাপারটির যতসব খুঁটিনাটি বিষয়!
কালার ব্লাইন্ড কী?
ছবিঃ Medium
একটু খেয়াল করে দেখুনতো উপরের ছবিটির বৃত্তের ভিতরে কোনো সংখ্যা আপনার চোখে আদৌ পড়ছে কিনা? যদি আপনি সংখ্যাটি দেখতে পান তবে সেটি অবশ্যই ইংরেজি সংখ্যা 12। কিন্তু আপনি যদি এমন কিছু দেখতে না পান তবে আপনার সমস্যাটি হচ্ছে আপনি দুটি আলাদা রঙের মাঝে পার্থক্য করতে পারেন না আর তাই মেডিকেল সায়েন্স আপনার নাম দিয়েছে কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ।
মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় তাহলে কালার ব্লাইন্ড কী?
কালার ব্লাইন্ডনেস হোল চোখের দৃষ্টিশক্তির এমন একটি অবস্থা যখন আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক আলোতে বিশেষ কিছু রঙের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান না। নীল, সবুজ, হলুদ বা লাল রং আলাদা করে চেনা কিংবা এইসব রঙের সংমিশ্রণ রয়েছে এমন রং দেখে বুঝতে পারা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। মূল রংটি আসলে কি সেটি বুঝতেই তাঁদের হিমশিম খেতে হয় আবার মজার ব্যাপার হোল অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা ভুল রং দেখছেন ! মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এইসব মানুষই কালার ব্লাইন্ড। এই ব্যাপারটির অন্য একটি নামও আছে আর তা হোল “কালার ভিশন ডেফিসিয়েন্সি” (CVD)।
“কালার ব্লাইন্ড কী?” প্রশ্নটির একদম সহজ উত্তর হোল- কিছু বঞ্চিত মানুষজন রয়েছেন যারা আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো পৃথিবীর সব রং দেখতে পান না। অনেক রকমের রং উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত এইসব মানুষই কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ !
ছবিঃ www.thisisinsider.com
উপরের ছবিটি ফটোগ্রাফার ডেভিড সাসোর সংগ্রহ থেকে নেয়া। ছবিটি থেকে খুব সহজেই সাধারণ দৃষ্টিশক্তি আর কালার ব্লাইন্ডনেস এর পার্থক্য করা যায়।
কালার ব্লাইন্ডঃ কেন হয় বর্ণান্ধতা?
“কালার ব্লাইন্ড কেন হয়?”
প্রশ্নটির সাথে বায়োলজি আর জেনেটিক সায়েন্সের অনেকগুলো ধারণা সম্পর্কিত। কালার ব্লাইন্ড হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন চোখের রেটিনার “রড” (Rod) আর “কোন” (Cone) কোষ সম্পর্কিত ধারণা।
মানুষের চোখের ভিতরে রেটিনা নামক একটি পাতলা স্তর রয়েছে যেটি দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ বা ফটোরিসেপ্টর (Photoreceptor) বহন করে । এদের নাম হোল রডকোষ এবং কোনকোষ। কোনকোষ আমাদের বিভিন্ন রং চেনাতে সাহায্য করে এবং এই কোষের মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন রঙের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি। অর্থাৎ আমরা চারপাশে রঙিন যা কিছু দেখি সবই কোনকোষের অবদান। আর অপরদিকে রডকোষগুলো আমাদেরকে আলো শনাক্ত করতে এবং আলোর ধরন বুঝতে সাহায্য করে কিন্তু রং চেনানোর ব্যাপারে রডকোষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
কালার ব্লাইন্ড হওয়ার ব্যাপারটি কোনকোষের সাথে জড়িত। আমাদের চোখে তিন ধরনের কোন কোষ রয়েছে। এই তিন ধরনের কোনকোষ তিনটি মৌলিক রং শনাক্ত করতে পারে। এরা হোল লাল, সবুজ ও নীল। চোখের রেটিনায় কোনোভাবে যদি এই তিন রকমের কোনকোষের যেকোনো একটির ঘাটতি দেখা যায় তাহলেই কালার ব্লাইন্ডনেস তৈরি হয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় যখন কোনো ব্যক্তির চোখের রেটিনায় এই তিন রকমের কোনকোষই অনুপস্থিত থাকে। দুঃখের বিষয় হোল ওই ব্যক্তি এই ধরনের সমস্যার কারণে সব রঙই ধূসর বা সাদা-কালো দেখবেন। এমনকি নিজের রক্তটাও তিনি সাদা কালো দেখবেন! কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
বর্ণান্ধতা কেন হয়ঃ জেনেটিক বা বংশগত কোনো কারণ আছে কি ?
কালার ব্লাইন্ড হওয়ার পেছনে জেনেটিক আর বংশগত- উভয় কারণই রয়েছে।
জেনেটিক কারণ
সাধারণত নারীদের থেকে পুরুষদের কালার ব্লাইন্ড হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আর পুরো ব্যাপারটাই সেক্স লিঙ্কড জিনের ইনহেরিটেন্সের কারণে হয়ে থাকে।
তাহলে “সেক্স লিঙ্কড জিনের ইনহেরিটেন্স” এই ব্যাপারটা কী?
জেনেটিক সায়েন্সের ভাষায়, প্রত্যেক পুরুষের দেহে একটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে অবশ্যই একটি Y ক্রোমোজোম থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, পুরুষের দেহে XY ধরনের ক্রোমোজোম থাকে। আবার প্রত্যেক নারীর দেহে সব সময়েই দুটি X ক্রোমোজোম থাকে অর্থাৎ নারীদের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের গঠন হচ্ছে XX।
আরো পড়ুন: জীনতত্ত্বঃ তোমার সাথে তোমার বাবা মায়ের এত মিল কেন?
আর জেনেটিক সায়েন্সের মতে, লাল আর সবুজ রঙের রিসেপ্টরের জন্য যেই জিন নারী বা পুরুষ উভয়ের জন্যই রয়েছে সেটির অবস্থান X ক্রোমোজোমে। কালার ব্লাইন্ড হওয়ার পেছনে X ক্রোমোজোমের এই রিসেপ্টর জিনকেই দায়ী করা যায়। যেহেতু পুরুষের দেহে একটি মাত্র X ক্রোমোজোম থাকে, তাই কোনোভাবে যদি এই X ক্রোমোজোমের জেনেটিক কোডে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটে তাহলে X ক্রোমোজোমটির আর কোনো ব্যাকআপ থাকে না।
আর এই ত্রুটিপূর্ণ জেনেটিক কোডের কারণেই পুরুষদের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের বর্ণান্ধতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে নারীদেহে দুইটি X ক্রোমোজোম থাকায় একটি X ক্রোমোজোমের জেনেটিক ব্যাঘাত ঘটলেও অন্য X ক্রোমোজোমটি ব্যাকআপ দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে দুইটি X ক্রোমোজোমেরই জেনেটিক কোডে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা কম। তাই এই ক্ষেত্রে কালার ব্লাইন্ড এর সংখ্যাটাও তুলনামুলক ভাবে কম। আর এটাই কালার ব্লাইন্ড হওয়ার জেনেটিক কারণ।
বংশগত কারণ
বংশগত কারণেও কিন্তু কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন ধরুন, কোনো বাবা-মা উভয়ই কালার ব্লাইন্ড। উদাহরণের কল্পিত বাবা-মায়ের যদি কোনো মেয়ে সন্তান থাকে তাহলে মেয়েটির কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কারণ মেয়েটির বাবা-মা উভয়ের X ক্রোমোজোমের জেনেটিক কোডে ব্যাঘাত ঘটার ফলে কালার রিসেপ্টর অনুপস্থিত। আর মেয়েটির ক্রোমোজোমের গঠন যেহেতু তার বাবা এবং মায়ের থেকে একটি করে X ক্রোমোজোম নিয়ে গঠিত (XX) , সেক্ষেত্রে মেয়েটির ক্রোমোজোমের
গঠনেও কালার রিসেপ্টর অনুপস্থিত। তাই মেয়েটির কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনাও শতভাগ। এই X ক্রোমোজোমের লেনদেনের ফলেই কিন্তু বংশগত কারণে কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কালার ব্লাইন্ড হওয়ার আর কি কারণ থাকতে পারে?
বংশগত বা জেনেটিক কারণ ছাড়াও কালার ব্লাইন্ড হওয়ার অন্য কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ
- কোনো ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে।
- গুরুতর আঘাত পাওয়ার ফলে।
- চোখে ছানি পড়ার কারণে।
- পারকিনসন রোগের কারণে।
- ভিটামিন A এর অভাবে।
- এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কালার ব্লাইন্ড এর কী কোনো প্রকারভেদ আছে?
হ্যাঁ, কালার ব্লাইন্ডনেস তিন ধরনের হতে পারে। যেমনঃ
লাল-সবুজ কালার ব্লাইন্ডনেস
এই ধরণের সমস্যা কয়েক রকমের হতে পারে। যেমনঃ প্রোটানোপিয়া (Protanopia), ডিউটেরানোপিয়া (Deuteranopia), প্রোটানোমালি(Protanomaly), এবং ডিউটেরানোমেলি (Deuteranomal)। কোনো ব্যক্তি লাল আর সবুজ রং আলাদা করে বুঝতে না পারলে বা লাল আর সবুজ রং দুইটি চিনতে না পারলে তিনি এই ধরণের কালার ব্লাইন্ডনেসে ভুগছেন। ছবির মাধ্যমে ব্যাপারটাকে সহজেই তুলে ধরা যায়ঃ
নীল-হলুদ কালার ব্লাইন্ডনেস
এই ধরনের কালার ব্লাইন্ডনেস দুই রকমের হয়। ট্রাইটানোপিয়া (Tritanopia) এবং ট্রাইটানোমালিতে (Tritanomaly) ভোগা মানুষজনদের নীলচে এবং সবুজাভ বর্ণের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে অসুবিধা হয়। এছাড়াও সবুজাভ-হলুদ রং চিনতে এঁদের বেশ বেগ পেতে হয়!
ছবিঃ boredpanda.com এবং dgl project.com
আরেক ধরনের কালার ব্লাইন্ড মানুষজন আবার কমপ্লিট কালার ব্লাইন্ডনেসে ভুগছেন। এই ধরনের মানুষজনের দুনিয়ায় সাদা,কালো আর ধূসর রং ছাড়া আর কোনো রংই নেই ! তাঁদের কাছে পুরো জীবনটাই রঙিন ছবির সাদা-কালো স্কেচের মতো !
ছবিঃ funnyjunk.com এবং Historum
কালার ব্লাইন্ড চিকিৎসাঃ
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কালার ব্লাইন্ডনেসের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। কিন্তু তাই বলে এই সমস্যার একেবারেই যে কোনো প্রতিকার নেই তা কিন্তু নয়। প্রতিনিয়ত কালার ব্লাইন্ডনেস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে আর তার সাথে কালার ব্লাইন্ডদের রঙিন জীবন উপভোগ করার সম্ভাবনাও বাড়ছে। এই যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এনক্রোমা নামক একটি প্রতিষ্ঠান কালার ব্লাইন্ডদের জন্য তৈরি করে ফেলেছে এনক্রোমা গ্লাস। কালার ব্লাইন্ড মানুষজন যাতে রঙের দেখা পায় সেই জন্যই তাঁদের এই প্রয়াস। তাঁদের চমৎকার কাজকর্ম আর দারুণ সব স্টাইলিস গ্লাসগুলো দেখতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন https://enchroma.com এই লিঙ্কটিতে।
এনক্রোমার মতো প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আইফোন আর অ্যানড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে কালার ব্লাইন্ডদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা আরও সহজ করার জন্য রয়েছে দারুণ সব অ্যাপ্স।
আইফোন অপারেটিং সিস্টেমে ColorBlinds Easy, HueVue, Chromatic Vision Simulator ছাড়াও নানান সব অ্যাপ্স কালার ব্লাইন্ডদের জীবনকে আরও সহজ করে দিচ্ছে নিমিষেই।
আই ফোনের অ্যাপ গুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই লিঙ্কটিতেঃ
https://www.color-blindness.com/2010/12/13/20-iphone-apps-for-the-color-blind/
অপরদিকে অ্যানড্রয়েড ভার্সনে কালার ব্লাইন্ডদের জন্য রয়েছে জনপ্রিয় “Color Blind Pal” নামক একটি অ্যাপ। এই অ্যাপটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে ঘুরে আসতে পারেন http://colorblindpal.com এই লিঙ্কটিতে। অ্যাপটির সাহায্যে একজন কালার ব্লাইন্ড ট্র্যাফিক সিগন্যালের রং কিংবা কাঁচা-পাকা ফলের রঙের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন খুব সহজেই !
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট (NEI) কালার ব্লাইন্ডনেস নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালাচ্ছে। জিন থেরাপি দিয়ে বয়স্ক বানরের কালার ব্লাইন্ডনেস দূর করা যায় নাকি সেটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কারণ জন্ম থেকেই পুরুষ বানরের লাল বা সবুজ রঙের যে কোনো একটির রিসেপ্টর অনুপস্থিত থাকে। বানরের জিনের মধ্যে লাল বা সবুজ কালার রিসেপ্টরের মিউটেশন ঘটিয়ে যদি সফলতা পাওয়া যায়, তাহলে কালার ব্লাইন্ডদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশা করা যায় যে অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই গবেষণার সফল প্রয়োগ দেখতে পারবো ।
আর কালার ব্লাইন্ডরা তাঁদের স্বপ্নের রংগুলো দুচোখ ভরে দেখতে পারবেন !
কালার ব্লাইন্ড টেস্টঃ
কালার ব্লাইন্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার একদম শুরুর দিকে একটি বৃত্তের ভিতরে কতগুলো রঙিন ডটের মধ্য থেকে আপনাকে ইংরেজি 12 সংখ্যাটি খুঁজে বের করতে বলা হয়েছিল। চলুন, একই ভাবে আপনার আরও কয়েকটি পরীক্ষা হয়ে যাক!
ছবিঃ Wikipedia এবং mooremedical.com
কয়টি সংখ্যা বের করতে পারলেন ? উত্তর গুলো আমি বলে দিচ্ছি মিলিয়ে নিনঃ 74,3 আর 42 ।
কালার ব্লাইন্ড টেস্টের এই পদ্ধিতিটির নাম “ইশিহারা”(Ishihara) কালার টেস্ট। টোকিও ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর ড. শিনবু ইশিহারা ১৯১৭ সালে সর্বপ্রথম এই ধরনের কালার ব্লাইন্ড টেস্টের সূচনা করেন। কতোগুলো এই পদ্ধতিতে অসমান সাইজের রঙিন ডট থেকে আপনাকে কোনো সংখ্যা বা অক্ষর খুঁজে বের করতে হবে।
আপনার দেখা সংখ্যা গুলোর সাথে আমার উত্তর কি মিলেছে?
মিলে গেলে অভিনন্দন। আর না মিললে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কালার ব্লাইন্ড টেস্টের আরও একটি পদ্ধতি হচ্ছে ক্যামব্রিজ কালার টেস্ট (Cambridge color test)। পদ্ধতিটি অনেকটাই এক রকম, কিন্তু এইবার আপনাকে অসংখ্য রঙিন ডটের মধ্য থেকে ইংরেজি “C’’ অক্ষরটি খুঁজে বের করতে হবে এবং অক্ষরটি কোন অবস্থায় আছে সেটিও বলতে হবে। চলুন পরীক্ষা হয়ে যাক!
ছবিঃ frontiersin.org
“C” অক্ষরটি দেখতে পাচ্ছেন? দেখতে পারলে সেটি কোন অবস্থায় আছে সেটি কি বুঝতে পারছেন?
কালার ব্লাইন্ড টেস্টের জন্য আপনি ঘুরে আসতে পারেন https://enchroma.com/pages/test এবং https://colormax.org/color-blind-test/ এই দুইটি লিঙ্কে। লিঙ্ক দুটিতে জনপ্রিয় ইশিহারা পদ্ধতিতে কালার ব্লাইন্ড টেস্ট করা হয়েছে।
ক্যামব্রিজ কালার টেস্ট করতে পারবেন এই লিঙ্কটিতে
লিঙ্কঃ https://colorlitelens.com/color-blindness-test.html#red-green
কিংবা এই ইউটিউব ভিডিওটি থেকেও কালার ব্লাইন্ড টেস্ট করে নেয়া যেতে পারে ।
লিঙ্কঃ https://youtu.be/CWyrp3hu4KE
টেস্টের ফলাফল স্বাভাবিক আসলে তো খুবই ভালো সংবাদ ! কিন্তু টেস্টে যদি আপনার কালার ব্লাইন্ডনেস ধরা পড়ে তাহলে হতাশ হবার কারণ নেই !
নিচের ছবি গুলো দেখুন তো একবার।
দা ডার্ক নাইট, ইন্টারস্টেলার, ইন্সেপশন কিংবা দা প্রেস্টিজ- দুনিয়া কাঁপানো এই সব হলিউড মুভির পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান কিন্তু লাল-সবুজ কালার ব্লাইন্ড !
ছবিঃ Time Magazine
ডিউক অফ ক্যামব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম কিন্তু কালার ব্লাইন্ড !
ছবিঃThe Mirror
তালিকায় আরও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন !
ছবিঃ usanewsonline.com
কিংবা টম সয়্যার আর হাকল বেরি ফিনের দুঃসাহসিক অভিযানের জন্মদাতা মার্ক টোয়েন ।
ছবিঃ CMG Worldwide
আরও রয়েছেন হলিউড অভিনেতা পল নিউমেন এবং কেনু রিভস ।
ছবিঃ biography.com এবং google.com
ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একজন লাল-সবুজ কালার ব্লাইন্ড ! একমাত্র নীল রঙটিই তিনি ভালো ভাবে দেখতে পারেন । সেই কারণেই ফেইসবুকের প্রায় প্রত্যেকটি জিনিসকেই তিনি নীল রং দিয়ে সাজিয়েছেন!
ছবিঃ Time Magazine
সব কাজের কাজী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন কালার ব্লাইন্ড !!
ছবিঃ organiser
ফ্রেঞ্চ পেইন্টার অস্কার ক্লাউদে মনেট (Claude Monet) কালার ব্লাইন্ড হওয়ার সত্ত্বেও অসাধারণ সব চিত্রশিল্পের জন্ম দিয়েছেন!
ছবিঃ Fine Art America এবং biography.com
সাধারণ দৃষ্টি শক্তির অধিকারী না হয়েও ছবির মানুষগুলো আমাদের অসাধারণ সব সৃষ্টি উপহার দিয়েছেন। তাঁদের এইসব অনবদ্য সৃষ্টি আমাদেরকে নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে।
কালার ব্লাইন্ড হওয়ার ফলে আপনি হয়তোবা কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন, কিন্তু যদি ভেবে থাকেন যে জীবনের দৌড়ে আপনি হেরে যাবেন তাহলে ব্যাপারটা একদম ভুল।
ফটোগ্রাফার ডেভিড সাসোর ছবি দিয়েই শেষ করা যাক।
নিচের ছবিগুলোর মতো আপনার জীবনের মলিন রংমেশালি হয়তো কোন সাধারণ দৃষ্টির মানুষের চোখে অনিন্দ্য স্বপ্নের রং !
তথ্যসুত্রঃ National Eye Institute , (NEI) https://9nei.nih.gov/health/color_blindness/facts_about
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন