ভিডিও এডিটিং বিষয়টাকে আমরা অনেকেই বেশ ‘হ্যাপা’-র কাজ মনে করি, মনে করি প্রচুর ‘প্যারা’ খেতে হয় ভিডিও এডিট করার জন্য। অনেকেই মনে করি, এর জন্য প্রয়োজন ভালো ক্ষমতার ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ। সেই সাথে এটার মধ্যে ভালো সফটওয়্যারও ইন্সটল করে রাখা লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু বিষয়টা আসলে মোটেই এমন নয়।
এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে। ভিডিও এডিটিং কি, ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব, ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কী কী আছে ইত্যাদি নিয়ে আমাদের আলোচনা এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।
ভিডিও এডিটিং কি?
Jared Nelson- এর মতে, Video editing is the process of piecing together video clips, images, and sounds to create a movie. অর্থাৎ, ভিডিও ক্লিপস, ছবি, অডিও ফাইল- এই সকল কিছু পাশাপাশি বসিয়ে যখন নতুন কোনো গল্প বলার উদ্দেশ্যে একটা নতুন ভিডিও তৈরি করা হয়, তখন সে প্রক্রিয়াকে ভিডিও এডিটিং বলে। এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, ফিলমোরা- এমন কিছু সফটওয়্যার ভিডিও এডিটিং জগতে বেশ জনপ্রিয়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Video Editing with Premiere Pro
ভিডিও এডিটিং কেন শিখব?
তোমার মনে হতেই পারে, “শুধু শুধু ভিডিও এডিটিং শেখার কি দরকার!” কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখবে, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভিডিও কন্টেন্ট এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই, অন্তত চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকতে হলেও ভিডিও এডিটিং শেখা জরুরি। নিচে এমন আরো কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো যা তোমাকে ভিডিও এডিটিং শিখতে আগ্রহী করে তুলবে-
-
ভিডিও ভাবপ্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম
একটা ছবি হাজার কথা বলে, কিন্তু একটা ভিডিও বলে লাখো কথা! হ্যাঁ, তুমি যদি সঠিকভাবে একটা ভিডিও এডিট করতে পারো, তবে তার মধ্য দিয়ে তোমার কথাগুলো, ভাবনাগুলো খুব সহজেই আরো দশজনের কাছে, আরো ভালোভাবে পৌঁছে দিতে পারবে।
-
বর্তমানে ভিডিও অনেক সহজলভ্য
বর্তমানে ডিজিটাল ডিভাইস, যেমন ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে খুব সহজেই তোমার বানানো ভিডিও কন্টেন্ট- তা হতে পারে শিক্ষামূলক, কিংবা তোমার ক্ষুদ্র ব্যবসার কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন- মানুষজনের কাছে পৌঁছাবে আরো দ্রুত।
-
খুব বেশি খরচ বা উপকরণের প্রয়োজন নেই
কেবল একটা কম্পিউটার, অথবা হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়েই তুমি ভিডিও এডিটিং করতে পারো। যদিও তা হলিউড কোয়ালিটি হবে না, কিন্তু কাজ শুরু করার জন্য ঐটুকুই যথেষ্ট।
-
ভিডিও মানুষকে আকৃষ্ট করে বেশি
মানুষের হাতে সময় আজকাল বড্ড কম, কোনো একটা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়ার চাইতে তারা ইউটিউবে দেড়গুণ স্পিডে ঐ সম্পর্কে একটা ভিডিও দেখতে বেশি আগ্রহী। তাই নিজের পণ্য, নিজের ভাবনা- এই সকল কিছু সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ভিডিও তৈরির চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই।
-
ভবিষ্যতে এর বাজার আরো বাড়বে
বর্তমানে কোনো মিউজিশিয়ান আর অ্যালবাম বের করতে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করে না, তাদের মূল লক্ষ্য থাকে মিউজিক ভিডিওর দিকে। এর কারণ, পাব্লিক ডিমান্ড। নাটক সিনেমার টিজার, নানা জিনিসের প্রোমো- এই সকল কিছু ভিডিও এডিটিং -এর ফসল। দিনকে দিন এর চাহিদা বাড়ছে, ভবিষ্যতে এর প্রয়োজন আরো যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
এমন অনেক ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, যা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই ভিডিও এডিট করা সম্ভব। এমন কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়ার হলো-
১. VSDC Free Video Editor
ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে VSDC Free Video Editor আছে শীর্ষে। পেইড সফটওয়্যারের মতো এখানে কোনো ওয়াটার মার্ক থাকে না, আর এডিট করা ভিডিওর কোয়ালিটিও বেশ ভালো হয়। এই সফটওয়্যারে তুমি ফাইল সেভ করার বেশ কিছু ফরমেট পেয়ে যাবে, যা তোমাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিডিও পাবলিশ করতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট কী? প্রেজেন্টেশন তৈরির ১৬টি কার্যকরী টিপস
মাইক্রোসফট এক্সেল এর কাজ, সূত্র, প্রয়োজনীয়তা ও শেখার রিসোর্স
২. OpenShot
ফ্রি হলেও এই সফটওয়্যারে টুলের পরিমাণ অন্য আরো দশটা ফ্রি সফটওয়্যারের চেয়ে বেশি। Drag and Drop টুল ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই তুমি এখানে ভিডিও ইমপোর্ট করতে পারবে, কাটতে পারবে, জোড়া দিতে পারবে, পারবে পছন্দমতো অডিও ফাইল যুক্ত করতে।
৩. Lightworks
তুমি যদি প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার চাও, তবে তোমার জন্য আছে লাইটওয়ার্কস। তুমি জেনে অবাক হবে, হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘উলফ অফ ওয়াল স্ট্রীট’, ‘পাল্প ফিকশন’ এই সফটওয়্যার দিয়ে এডিট করা হয়েছিলো। যদিও এর বেশ কিছু ফিচার আনলক করতে হলে তোমাকে পয়সা গুণতে হবে, কিন্তু এর ফ্রি ভার্সনটাও তোমাকে হতাশ করবে না।
৪. Shotcut
শর্টকাট হলো আরেকটি ওপেন সোর্স ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার, যেখানে ওয়াটারমার্ক ছাড়াই ভিডিও ফাইল সেভ করা যায়। নব্য এডিটরদের কাছে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। এই সফটওয়্যারের সবচেয়ে অসাধারণ দিক হলো, এতে নেটিভ টাইমলাইন এডিটিং ফিচার রয়েছে, ফলে তোমাকে নতুন করে এখানে ভিডিও ফাইলগুলো ইমপোর্ট করতে হবে না।
৫. Apple iMovie
MacOs এবং IOS-এর জন্য সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এটি, যার সাহায্যে 4k ভিডিও এডিট করা সম্ভব। এর ইউজার ইন্টারফেস খুব সহজ এবং নতুন এডিটররা স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে কাজ করতে পারে। তবে সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো, তুমি তোমার আইফোন বা আইপ্যাড দিয়ে ভিডিও এডিট শুরু করে, পরে তা তোমার ম্যাকবুকে কোনো রকমের ঝামেলা ছাড়াই ট্রান্সফার করতে পারবে।
৬. Apple Final Cut Pro
পেশাদারদের কাছে এই সফওয়্যারের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এই এডিটিং সফটওয়্যার ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও, মাল্টি ক্যামেরা অপশন- এমন সকল ফিচার সম্বলিত। এতে আছে অবজেক্ট ট্র্যাকিং মোড, কালার কারেকশন মোড-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো, যার মাধ্যমে তুমি তোমার ভিডিওতে সিনেম্যাটিক লুক দিতে পারবে।
৭. Hitfilm Express
বিনামূল্যে পাওয়া এই সফটওয়্যারেও তুমি ওয়াটারমার্ক ছাড়াই ভিডিও এডিট করতে পারবে। মোশন ট্র্যাকিং ফিচার, এনিমেশন, ভিডিও এফেক্ট- এগুলো বিনামূল্যে পেলেও, কিছু ফিচার আনলক করতে হলে সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। সিনেমায় বা গেমসে দেখানো গোলাগুলির দৃশ্যের এফেক্টগুলো, কিংবা সাই-ফাই সিনেমার এলিয়েন শিপের এফেক্ট- প্রায় সবই বিনামূল্যে এখানে ব্যবহার করতে পারবে।
৮. Video Grabber
এটা আসলে একটা অনলাইন ভিডিও এডিটর, এটা ব্যবহার করতে হলে তোমাকে কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে না। ভিডিও ক্লিপ কেটে GIF বানানো, ভিডিও থেকে অডিও অংশটুকু কেটে নেয়া, দুটো ভিডিও জোড়া দেয়া, ভিডিও ক্রপ করা, রোটেট করা, সাবটাইটেল যুক্ত করা- এইসকল বেসিক ভিডিও এডিটিংগুলো এখানে করা সম্ভব। তাছাড়া এই এডিটর তুমি ফোনেও ব্যবহার করতে পারবে।
৯. Clipchamp
এটি মাইক্রোসফটের একটি ফ্রি অনলাইন এডিটর, এর দ্বারা কোনো প্রকার ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ভিডিও এডিট করা সম্ভব। অন্যান্য ভিডিও এডিটিং সফটোওয়্যারের মতো এখানেও ভিডিও কাটা, জোড়া দেয়া, কালার কারেকশন করা- এমন সব বেসিক কাজগুলো করা সম্ভব।
১০. Blender
টু-ডি এবং থ্রি-ডি এনিমেশনের কাজের জন্য এই ফ্রি সফটওয়্যারটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রফেশনাল লেভেলের কাজগুলোও এর মাধ্যমে করা সম্ভব। পিসির কনফিগারেশন কম হলে এখানে থাকা প্রক্সি রেন্ডারিং তোমাকে সাহায্য করবে। লেন্স কারেকশন, স্পিড কন্ট্রোল, স্ট্যাবিলাইজেশন- এমন হাজারো অপশন তুমি এখানে পেয়ে যাবে, তবে এটি শেখার জন্য তোমাকে বেশ কিছুদিন সময় ব্যয় করতে হবে।
পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
তবে সকল সফটওয়্যার যে তুমি ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবে এমনটাও নয়। বেশ কিছু প্রফেশনাল সফটওয়্যার (এবং সত্যি বলতে এগুলোই সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার!) তোমাকে কিনে ব্যবহার করতে হবে।
১. Adobe Premiere Pro
এডোবি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে অসাধারণ সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে একটি হলো এডোবি প্রিমিয়ার প্রো। এই সফটওয়্যার দিয়ে প্রফেশনাল লেভেলের সকল কাজই তুমি করতে পারবে। এটি একই সাথে উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএস সার্পোটেড।
-
সুবিধা:
১. সহজ ইন্টারফেস
২. বেশ কিছু টুল পাওয়া যায়, যা অন্য অনেক পেইড সফটওয়্যারে পাওয়া যাবে না
৩. অসংখ্য মাল্টিক্যাম এঙ্গেল ব্যবহার করা যায়
Video Making Course
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
-
অসুবিধা:
১. প্রফেশনাল নয় এমন মানুষদের জন্য এই সফটওয়্যার কিছুটা কঠিন হতে পারে
২. কিছু কিছু ফিচার ব্যবহার করার জন্য অন্য সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে হয়, যেমন আফটার এফেক্ট কিংবা মিডিয়া এনকোডার।
৩. সাউন্ড এফেক্ট স্যাম্পল পাওয়া যায় না
২. CyberLink PowerDirector 365
এই সফটওয়্যার তুমি একবার কিনে সবসময় ব্যবহার করতে পারবে, পরে নতুন করে কোনো সাবক্রিপশন চার্জের প্রয়োজন হবে না। PCMag এডিটরস চয়েসের শীর্ষে থাকা এই সফটওয়্যার দিয়ে তুমি সামান্য ভিডিও ট্রিম থেকে শুরু করে প্রো লেভেলের ভিএফএক্সের কাজও করতে পারবে। এর ইন্টারফেসটাও নব্য এডিটরদের জন্য বেশ সহজ।
-
সুবিধা:
১. প্রজেক্ট খুব দ্রুত রেন্ডার করা যায়।
২. বেশ কিছু এফেক্ট এবং AI টুলস পাওয়া যায়
৩. মাল্টিক্যাম এবং মোশন ট্রাকিং করা যায়
৪. স্ক্রিন রেকর্ডিং এর সুবিধা আছে
-
অসুবিধা:
১. অনেক বেশি ফিচার থাকায় প্রথম দিকে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে
৩. Corel VideoStudio Ultimate
এই সফটওয়্যারটি অনেক বেশি পরিচিত এর স্টপ মোশন টুলের কারণে। যারা ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার অপারেট করে অভ্যস্ত অর্থাৎ প্রফেশনাল, কিংবা ইউটিউবার- তাদের জন্য তৈরি করা। সাইবারলিংকের মতো এই সফটওয়্যারও তুমি একবার কিনে পরে সাবস্ক্রিপশন ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে।
-
সুবিধা:
১. এখানেও ফাস্ট রেন্ডারিং সুবিধা আছে
২. থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি ভি আর, ফোর-কে আলট্রা এইচডি, এবং থ্রিডি মিডিয়া সাপোর্ট করে
৩. মাল্টিপয়েন্ট মোশন ট্র্যাকিং এর সুবিধা আছে, আছে স্টপ মোশন টুল
-
অসুবিধা:
১. অডিও এডিটিং ফিচার খুব বেশি সমৃদ্ধ না
২. হাই ডিপিআই মনিটরে তেমন ভালো চলে না
৪. DaVinci Resolve
প্রোফেশনাল এবং নন প্রোফেশনাল- উভয় শ্রেণির কাছে এই সফটওয়্যার জনপ্রিয়। এর জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হলো, সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই এর অধিকাংশ ফিচার উপলভ্য। ‘এভাটার’, ‘ডিউন’- এমন বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা এই এডিটর ব্যবহার করেই এডিট করা।
-
সুবিধা:
১. সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু এডিটিং টুল বিদ্যমান
২. গোছানো ও সহজবোধ্য ইন্টারফেস
৩. অন্যান্য সফটওয়্যারে মোশন গ্রাফিক এবং অডিও এডিটিং টুল না থাকলেও এখানে তা পাওয়া যায়
-
অসুবিধা:
১. অনেকগুলো সিস্টেম রিসোর্সের প্রয়োজন
২. ইন্টারফেস সহজ হলেও এর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি কিছুটা জটিল, আর তাই শেখাটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
৫. Movavi Video Editor Plus
শখের ভিডিও এডিটর এবং ইউটিউবারদের জন্য আদর্শ একটি পেইড সফটওয়্যার এটি। এখানে বেশ কিছু গুড-লুকিং এফেক্ট এবং ট্রানজিশন আছে, আছে সরাসরি ইউটিউব এবং ভিমোতে রেন্ডার করা ভিডিও আপ্লোডের অপশন। একবার কিনে বাকি জীবন ফ্রি ব্যবহার করা যায়, আর উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএস- দু’টোর জন্যই সফটওয়্যারটি উপলভ্য।
-
সুবিধা:
১. ক্রোমা-কি ক্যাপিবিলিটি আছে
২. মোশন ট্র্যাকিং এবং পিকচার-ইন-পিকচার টুল আছে
৩. সাউন্ড সহ ট্রানজিশন পাওয়া যায়
-
অসুবিধা:
১. রেন্ডারিং কিছুটা ধীর গতিতে হয়
মোবাইলে ভিডিও এডিটিং
আজকাল আমাদের স্মার্টফোনেই চটজলদি ভিডিও এডিট করা যায়! ডেস্কটপের জন্য অনেক ভালো ভালো ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার থাকলেও এন্ড্রয়েড ফোনের প্লে স্টোরে গেলে দেখা যাবে স্মার্টফোনের জন্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপের কোনো কমতি নেই!
১. FilmoraGo:
মোবাইলে ভিডিও এডিটিং করতে চাইলে তোমাকে সাহায্য করতে পারে FilmoraGo, এখানে আছে ভিডিও ট্রিম, কাট, থিমযুক্ত করা, সাউন্ড ট্র্যাক এড করার সুবিধা। পাশাপাশি নিজের সুবিধামত ফ্রেমিংও করা যাবে৷ তুমি চাইলেই ইন্সটাগ্রামের জন্য ১:১ আর ইউটিউবের জন্য ১৬:৯ ফ্রেমের ভিডিও বানাতে পারো। এছাড়াও এই অ্যাপসের মাধ্যমে তুমি রিভার্স ভিডিও বানাতে পারবে, ট্রানজিশন এড করতে পারবে, টেক্সট যুক্ত করতে পারবে, এমনকি স্লো মোশন ভিডিও-ও বানাতে পারবে খুব সহজেই!
২. Adobe Premiere Clip:
এডোবির সব সফটওয়্যারগুলো আমরা সাধারণত ডেস্কটপে ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। তবে স্মার্টফোনেও এডোবি প্রিমিয়ার ক্লিপ ইন্সটল করে ব্যবহার করতে পারবে৷ যদিও তা একটু বেশিই জায়গা দখল করে এবং মাঝে মাঝে ফোন হ্যাং হয়ে যায়। Adobe Premiere Clip এর বেস্ট ফিচার হচ্ছে এর অটোমেটিক ভিডিও ক্রিয়েশন ক্যাপাবিলিটি! এই অ্যাপ ব্যবহার করার সময় কোনো এডও দেখানো হয় না। ভিডিও কাট করা, ট্রিম করা, ট্রানজিশন থেকে শুরু করে অডিও, টেক্সট, ফিল্টার, এফেক্ট ইত্যাদি যোগ করা যায় এই অ্যাপটিতে।
৩. Video Show:
এই অ্যাপটিকে বলা যায় ‘মোস্ট ট্যালেন্টেড অ্যাপ’! কেননা Video Show কিন্তু অনেকগুলো এওয়ার্ড পেয়েছে! তাই অনেকেই একে বেস্ট মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ হিসেবে চেনে। এর মাধ্যমে খুব সহজেই ভিডিও এডিট করা যায়, টেক্সট, এফেক্ট, সাউন্ড যুক্ত করা যায়, ডাব করা যায়। Video Show’তে তুমি পাবে কয়েক রকমের থিম। এছাড়া, কম্প্রেস করার মাধ্যমে ভিডিও’র সাইজ কমাতে ও বাড়াতেও পারবে!
৪. Power director Video Editor:
এই অ্যাপটি বেশ কার্যকর হলেও, টুলগুলোকে কন্ট্রোলে আনার জন্য একটু সময় লাগবে৷ কিন্তু একবার টুলস সম্পর্কে এক্সপার্ট হয়ে গেলে একদম প্রফেশনাল ভিডিও এডিটরদের মতন তুমি ভিডিও এডিট করা শুরু করে দিতে পারবে! আর সেটাও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই! এখানে ৩০+ বিভিন্ন এফেক্ট ও ট্রানজিশন এফেক্ট আছে। এই অ্যাপের বেশিরভাগ ফিচারই ফ্রি। তবে আপগ্রেড করলে ওয়াটার মার্ক ও এড রিমুভ করার সুযোগ রয়েছে। ভিডিও 1080 ও 4K রেজুলেশনে এক্সট্র্যাক্ট করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
৫. Kine Master:
প্রোফেশনাল স্টাইলের ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার হিসেবে এটি বেশ পরিচিত। এই অ্যাপটির ডিজাইন বেশ ভালো, সেই সাথে রয়েছে এর বেশ কিছু পাওয়ারফুল ফিচার! Drag-n-drop টেকনিকের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়াতে ফাইল ইম্পোর্ট করা যায়। সেই সাথে রয়েছে সাবটাইটেল যুক্ত করার সুবিধাও! লেয়ারের পর লেয়ার যুক্ত করে টেক্সট, গ্রাফিক্স, ইমেজ এড করা, পাশাপাশি কালার এডজাস্ট করা, ব্রাইটনেস বাড়ানো কমানো, স্পিড, টিউনিং-সব ধরনের সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে৷
৬. Quik:
ভিডিও স্মার্টলি এডিট করার জন্য এটি হলো আরো একটা মজাদার অ্যাপ! এটি বেশ ফাস্ট এবং ফ্রি! নিজের পছন্দমতো বেশ কিছু ছবি বা ভিডিও ক্লিপ সিলেক্ট করো, এরপর বানিয়ে ফেলো নিজের স্টোরি! এতে আছে অটোমেটিক ভিডিও ক্রিয়েশন ক্যাপাবিলিটি, সেই সাথে ক্রপিং, কুইকলি সিংক, টেক্সট সবকিছুই যুক্ত করা সম্ভব। এছাড়াও রয়েছে মিউজিকের অটো সিংকিং ব্যবস্থা৷ আর এই অ্যাপে কোনো প্রকার এডও দেখানো হয় না!
৭. Viva Video:
অনেক দৃষ্টিনন্দন ভিডিও এডিটিং ফিচার আছে Viva Video-তে! এটি এমনভাবে ডিজাইন করা, যাতে যেকোনো এন্ড্রয়েড ব্যবহাকারী এটি ইউজ করতে পারবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রো লেভেলের ভিডিও তৈরি করা যায়৷ ১০০ এর চেয়েও বেশি স্টিকার ও ফিল্টার পাবে এইখানে! শুধু তাই না, এর মধ্যে রয়েছে এনিমেটেড ক্লিপ ও সাবটাইটেল যুক্ত করার হরেক রকম ডিজাইন! এই অ্যাপে আছে স্লো মোশন ভিডিও মেকার এবং স্লাইড শো মেকারও! অন্যান্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপগুলোর মতন এখানেও আছে কাটিং, ভিডিও পোস্টিং, ক্রপিং, মার্জিং ক্লিপিংসহ আরো অনেক ফিচার!
৮. Lapselt:
Lapselt এর মাধ্যমে টাইম ল্যাপস ভিডিও খুব সহজেই বানানো যায়। সেই সাথে এক ক্লিকেই এটি শেয়ার করা যাবে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও! এছাড়াও রয়েছে হরেক রকম অডিও ট্র্যাক, এফেক্ট ও ফিল্টার! অ্যাপটি প্লে স্টোরে বিনামূল্যেই পাওয়া যাবে৷
৯. Cute Cut:
ইন্সটাগ্রামে ভিডিও কিংবা স্টোরি আপলোড দেওয়ার জন্য আরেকটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ হলো এই Cute Cut! ভিডিওর মধ্যে চাইলে ছবিও আঁকতে পারবে, এছাড়া নিজের ড্রয়িং, নানানরকম শেপ, টেক্সটও যুক্ত করতে পারবে৷ Cute Cut বিনামূল্যেই প্লে স্টোর থেকে নামাতে পারবে।
১০. InShot App:
সাধারণত ছবি এডিট করার জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করা হলেও, ভিডিও এডিটিংয়ের জন্যেও InShot বেশ উপকারি একটি অ্যাপ। ব্যবহার করা বেশ সোজা৷ ভয়েস ওভার, মিউজিক, ন্যারেশন, ইমোজি, ওভারলে-সহ আরো হরেক রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে এখানে!
ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব
প্রফেশনালদের মতো কিভাবে ভিডিও এডিটিং করা যায়, তা নিয়েই এখন বলবো। ইন্টারনেটে তুমি অনেক ভিডিও এডিটিং কোর্স তুমি খুঁজে পাবে, যার কয়েকটি তুমি ফ্রিতে পেলেও, বেশ কিছু কোর্স তোমাকে কিনে নিতে হবে। এমন কিছু কোর্সের কথাই বলবো এখন। তবে আগেই বলে রাখি, এখানে উল্ল্যেখ করা সবগুলো কোর্সই পেইড কোর্স, অর্থাৎ তোমাকে পয়সা খরচ করে এগুলো কিনতে হবে।
-
ইউডেমি
সারাবিশ্বে সেলফ লার্নারদের কাছে ইউডেমির আবেদন অনেক বেশি। এখানে একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি বেশ কিছু ভিডিও এডিটিং কোর্স তুমি পেয়ে যাবে। এর মধ্যে আছে,
১। VIDEO EDITING. Techniques loved by pro broadcast filmmakers
২। The Complete Video Production Bootcamp
৩। Premiere Pro CC for Beginners: Video Editing in Premiere
-
স্কিলশেয়ার
ইউডেমির পাশাপাশি স্কিলশেয়ার-ও তোমার জন্য সহায়ক হতে পারে। এখানেও তুমি বেশ কিছু ভিডিও এডিটিং শেখার কোর্স পেয়ে যাবে। তোমার জন্য সহায়ক হতে পারে এমন কোর্সগুলো হলো,
১। Video Editing with Adobe Premiere Pro for Beginners
২। Online Video Editing Classes
-
কোর্সেরা
কোর্সেরা বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় একটি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। সারা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি টেকনিক্যাল কোর্সের আওতায় বেশ কিছু ভিডিও এডিটিং কোর্স এখানে তুমি পেয়ে যাবে। এদের মধ্যে আছে,
১। Create a Promotional Video using Canva
-
টেন মিনিট স্কুল
বিশ্বখ্যাত যেসব প্ল্যাটফর্মের ভিডিও এডিটিং শেখার রিসোর্স তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম, তার প্রায় সবই ইংরেজিতে এবং অন্যান্য দেশের কথা মাথায় রেখে তৈরি। ঠিক তাই, তোমাদের জন্য টেন মিনিট স্কুল তৈরি করেছে কিছু সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার লার্নিং ও ভিডিও মেকিং কোর্স, সম্পূর্ণ বাংলায়, বাংলাদেশের ভিডিও কন্টেন্ট মার্কেট মাথায় রেখে। দেশসেরা সব ভিডিও মেকার ও এডিটরদের কাছ থেকে কাজ শিখতে চাইলে এখনি জয়েন করতে পারো আমাদের এই কোর্সগুলোতে! তোমার জন্য যে কোর্সগুলো আছে, তা হলো,
১। Video Editing with Premiere Pro
২। Video Making
৩। Motion Graphics in After Effects
শেষ কথা
আমরা আমাদের আলোচনা শুরু করেছিলাম ভিডিও এডিটিং কি, সে সম্পর্কে আলোচনার মধ্য দিয়ে। পরে আমাদের আলোচনা এগিয়েছে ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কী কী আছে, মোবাইলে ভিডিও এডিটিং এর কাজে কী কী অ্যাপস ব্যবহার করা যায়, ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব তার দিকে।
আমাদের এই আলোচনা তোমাকে ভিডিও এডিটিং শেখার দিকে আগ্রহী করবে, তোমাকে এগিয়ে রাখবে সবার চেয়ে- এমনটাই প্রত্যাশা!
References:
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Video Editing with Premiere Pro
- Cartoon Animation
- Adobe Illustrator
- কন্টেন্ট ক্রিয়েশন বান্ডেল
- Adobe 4 in 1 Bundle
- Mobile Photography and Videography
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন