মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনের সিংহভাগ সময় হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন, কিন্তু কোন প্রতিবন্ধকতাই তাঁকে দমাতে পারেনি ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে নাম লেখাতে। তিনি স্টিফেন হকিং– কৃষ্ণগহ্বর, মহাজাগতিক নানা তত্ত্ব, বহির্বিশ্বের প্রাণ সহ বিবিধ ক্ষেত্রে গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখে যাওয়া পদার্থবিদ্যায় এযুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তাঁর “আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম” বইটি বিশ্বজুড়ে এক কোটিবারের বেশি বিক্রি হয়েছে, অনূদিত হয়েছে ৩০টিরও বেশি ভাষায়।
জীবনের তিন-চতুর্থাংশ সময় পক্ষাঘাতে অচল নির্বাক এই মানুষটি পদার্থবিদ্যার নানা জটিল বিষয় সাধারণ মানুষকে বলার চেষ্টা করেছেন, বিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন গোটা পৃথিবীকে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Freelancing
স্বল্প পরিসরে স্টিফেন হকিং এর জীবনী:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন উত্তাল পৃথিবী, ঠিক এমনই একটি সময়ে- ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ডে জন্ম স্টিফেন হকিংয়ের। বাবা ফ্রাঙ্ক হকিং ছিলেন গবেষক, মা ইসাবেল হকিং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। যুদ্ধের দামামা তখন সর্বত্র। খবর এলো জার্মান বোমারু বিমান আসছে! তড়িঘড়ি করে লন্ডন ছেড়ে অক্সফোর্ডে চলে যান সবাই। সেখানেই জন্ম হকিংয়ের। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ফের লন্ডনে ফেরত আসেন সবাই।
শৈশবে হকিং সেন্ট অ্যালবার স্কুলে পড়েন। ছেলেবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তাঁর। কিন্তু বিধিবাম, প্রাইমারি স্কুলে অনেকদিন কাটিয়ে দেওয়ার পরও হকিং পড়তে পারতেন না, এজন্য অবশ্য তিনি স্কুলকেই দায়ী করেছেন! অবশ্য এভাবে বেশিদিন কাটেনি, একবার পড়তে শিখে যাওয়ার পর তরতর করে এগিয়ে যান হকিং। ইন্টারমিডিয়েটও পাশ করে ফেলেছিলেন অন্যদের চেয়ে এক বছর আগেই, প্রধান শিক্ষকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে! স্কুলে অনেকেই তাকে “আইনস্টাইন” বলে ডাকতো। অবশ্য এতে আশ্চর্য হওয়ার তেমন কিছু নেই!
বাবা ফ্রাঙ্ক হকিং খুব করে চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। হকিং এর বয়স তখন মাত্র সতেরো। এ বয়সেই তিনি জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন- বাবার কথা না শুনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। ইচ্ছে ছিল গণিত নিয়ে পড়ার, কিন্তু সেসময়ে আলাদা করে গণিতের কোর্স না থাকায় পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
হকিং যখন কেমব্রিজে পিএইচডি করছেন, ঠিক তখন নিজের অসুখের কথা জানতে পারেন। বয়স মাত্র কুড়ির কোঠায়, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে যখন মেতে উঠবার কথা, তিনি মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন সেই সময়ে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। স্নায়ুর এই রোগ শরীরকে ধীরে ধীরে অবশ করে দেয়। ডাক্তার বললেন, খুব বেশি হলে ২-৩ বছর বা সর্বোচ্চ ৫ বছর বাঁচবেন তিনি। জীবনযোদ্ধা হকিং সেই ধাক্কা সামলে আরো পাঁচ দশক লড়াই চালিয়ে গেছেন!
অসুস্থতার লৌহ শৃঙখল জীবনের রং শুষে নিতে পারেনি। হকিং এর গতিহীন জীবনেও এসেছিল ভালবাসা তার সবটুকু মুগ্ধতার বর্ণালী নিয়ে। ১৯৬৫ সালে জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হকিং। ততদিনে অসুখ তাঁকে ছেয়ে ফেলেছে- মাত্র তেইশ বছরেই চলাফেরার জন্য হকিংকে ছড়ির আশ্রয় নিতে হয়!
হাসপাতাল থেকে গবেষকরা জানালেন পাত্রের আয়ু খুব বেশি হলে আর বছর দুয়েক! কিন্তু ভালবাসার পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জেন ওয়াইল্ড হকিংকে সব জেনেশুনেই ভালোবেসে বিয়ে করলেন। জীবন সায়াহ্নে এসে হকিং জানান- মমতাময়ী জেন-এর সেই ভালোবাসাই দুঃসময়ে তাঁকে জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে ও বেঁচে থাকতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
কিন্তু প্রতিবন্ধকতা তার পিছু ছাড়েনি। একের পর এক অমোঘ নিয়তির নিয়মে আঘাত আসতেই থাকে। ১৯৮৫ সালে ফের মৃত্যুর মুখ থেকে কোনমতে ফিরে আসেন হকিং। ভয়াবহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। অবস্থা এতো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে একসময়ে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল! একদম কোমায় চলে গিয়েছিলেন হকিং। সেখান থেকে স্রেফ মনের জোরকে পুঁজি করে লড়াই করে ফিরে আসেন তিনি।
আরো পড়ুন: স্টিফেন হকিং যখন আইনস্টাইনের বার্থডে গিফট!
মানুষ বেঁচে থাকে তার কাজের মাধ্যমে। বিজ্ঞানী হিসেবে হকিং খ্যাতি অর্জন করেন যখন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে প্রথম ব্ল্যাক হোল-এর অনিশ্চয়তার তত্ত্বে আলোকপাত করেন। কসমোলজি ও কোয়ান্টাম হকিংয়ের প্রধান গবেষণার ক্ষেত্র ছিল। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে নতুন মডেল তৈরি করেন হকিং। সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। প্রমাণ করেন ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকিরণের নাম পরবর্তীতে তাঁর নামেই রাখা হয়!
কিন্তু গবেষণায় অবদানের চেয়েও হকিং অনেক বেশি আদৃত হবেন চিরকাল একটি কারণে- খটমটে জটিল পদার্থবিদ্যাকে সরলভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়াও হকিংয়ের অনন্য এক সাফল্য। হকিং দেখিয়েছিলেন- মহাবিশ্বের কোনও স্থানই শূন্য নয়। প্রতিমুহূর্তেই কণা-প্রতিকণার সৃষ্টি হচ্ছে, আবার পরমুহূর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আইনস্টাইনের সময়ে আমাদের বেশিরভাগই এই পৃথিবীতে ছিলাম না। কার্ল সেগান যতোদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁকে চিনতাম খুব কম মানুষই। কিন্তু আমাদের খুব গৌরবের একটি বিষয় রয়েছে- আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে একই সময়ে
পৃথিবীতে থাকার সুযোগ পেয়েছি আমরা! অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। সেই কতো বছর আগে চিকিৎসকেরা তাঁর জীবনসীমা বেঁধে দিয়েছিলেন “আর মাত্র দু’বছর!” কিন্তু মানুষটি ঠিকই বেঁচে রইলেন! জড় পদার্থের মতো অচল হয়ে না, বরং কর্মচাঞ্চল্যের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে। জীবনের সিংহভাগ সময় হুইলচেয়ারে কাটিয়ে দেওয়া মানুষটির অবদান আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবো চিরকাল।
লেখাটি শেষ করছি কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য দিয়ে। স্টিফেন হকিং জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি। তিনশো বছর আগে ঠিক এই দিনেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আরেক কালজয়ী বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি!
স্টিফেন হকিং- সারাটি জীবন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যুদ্ধ করে কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলা অসাধারণ এই মানুষটি পৃথিবী ত্যাগ করলেন ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ। ১৩৯ বছর আগে ঠিক এইদিনেই জন্মেছিলেন আরেকজন অবিসংবাদিত কিংবদন্তি- আলবার্ট আইনস্টাইন!
প্রকৃতি তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ব্যাপারে এই ছোট্ট রহস্যটুকু ধরে রাখুক অনন্তকাল।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে তাহমিনা ইসলাম তামিমা
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন