পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
“অন্যের সাথে যোগাযোগ করা? আরেহ, সে তো পানি ভাত! যোগাযোগের আবার দক্ষতা, অদক্ষতার কী আছে? সে তো সবাই জন্মের পর থেকেই শিখে আসে”। আপনি যদি ১০জন মানুষের কাছে গিয়ে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাতে চান, তাহলে তার মাঝে ৭–৮ জন মানুষের প্রতিক্রিয়াই হবে উপরের এই লাইনগুলোর মত।
হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? অনেক আগে একটা খ্যাতিমান টেলিকম কোম্পানি বিজ্ঞাপনে দেখা যেতো যে, হঠাৎ করেই যদি মানুষের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় তবে পৃথিবীটা কেমন থেমে যাবে। এর থেকে তো বোঝাই যায় যে, অন্যের সাথে কথা বলা আমাদের কত স্বভাবজাত একটা ব্যপার। তাহলে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি কীভাবে করে তা আবার জানার কীইবা দরকার আছে?
আছে, কারণ আমরা অনেকেই কথা বলাটাকেই যোগাযোগ করা বুঝি। কিন্তু আসলে কথা বলা আর অন্যের সাথে যোগাযোগ করা একই কথা না। যোগাযোগ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। লিখিত, মৌখিক আবার অনেক সময় সাংকেতিক। তবে যেহেতু ৯৭% যোগাযোগই মৌখিক হয়, আমরা ধরেই নিতে পারি যে কথা বলাই যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু শুধু কথা বললেই কি যোগাযোগ হবে? না। আপনি যখন কারো সাথে যোগাযোগ করেন, তখন অবশ্যই আপনার কোনো উদ্দেশ্য থাকে।
কঠিন কথায় না গিয়ে সহজ উদাহরণে বলতে পারি যে, আপনি যখন আপনার কোনো বন্ধুর সাথে কিছু শেয়ার করেন, তখন আপনার উদ্দেশ্য থাকে, আপনার মনকে হালকা করা কিংবা তার মতামত জানা কিংবা তাকে ব্যপারটা জানানো। এই উদ্দেশ্য তখনই হাসিল হবে যখন আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন। আর সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে হলে শুধু কথা বললেই বা লিখলেই হবে না বরং সেই কথার বা লেখার মাঝে থাকতে হবে সাতটি গুণ যাকে আমরা যোগাযোগের সেভেন সি হিসেবে জানি।
অধ্যাপক স্কট এম. কাটলিপ এবং এ্যালেন এইচ. সেন্টার ১৯৫২ সালে এই সেভেন সি এর কথা উল্লেখ করেন।
১। পরিপূর্ণতা (Completeness):
আপনার কথা বা লেখা সবসময় পরিপূর্ণ হতে হবে। কথাটা যেন আপনার শ্রোতার সবরকমের জানার আগ্রহকে নিবারণ করতে সক্ষম হয়। কথা বলার বা লেখার সময় মাথায় রাখতে হবে যে আপনার কথার বা লেখার উপর ভিত্তি করেই শ্রোতা বা পাঠক তার প্রতিক্রিয়া দেখাবে। একটা পরিপূর্ণ লেখা বা কথায় আমরা যে ভালো দিকগুলো দেখতে পারি:
* পরিপূর্ণ যোগাযোগ একটা সংগঠন বা ব্যক্তির প্রফেশলানিজম বৃদ্ধি করে।
* এটা সময় এবং অর্থের অপচয় কমায়। ধরে নিন, আপনি একটা চিঠি লিখেছেন তা কুরিয়ার করতে কিছু খরচ হয়েছে। এখন তাতে যদি পরিপূর্ণ তথ্য নাই থাকে তবে আপনার তা আবার পাঠাতে হবে এবং আবারো কুরিয়ারের খরচ হবে। আপনি কাউকে কিছু বর্ণনা করেছেন। সে অনেক কিছুই বুঝতে পারে নি। তখন আপনাকে আবার পুরো ব্যপারটা তাকে বোঝাতে হবে যাতে করে সময় ব্যয় হবে।
* এটা শ্রোতার বা পাঠকের মনে নতুন কোনো প্রশ্ন জাগায় না।
* এর থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
২। সংক্ষিপ্ততা (Conciseness):
সংক্ষিপ্ততা মানে হচ্ছে, মূল কথাটাকে যতটা সম্ভব কম শব্দে বলা এবং তাতে যেন সুষ্ঠু যোগাযোগের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তা মেনে চলা। যোগাযোগের সময় একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, শ্রোতা বা পাঠক ব্যস্ত। তাই প্রশস্তভাবে কথা বললে কিংবা লিখলে, কথার মূলভাব বোঝার জন্য তার অনেক সময় ব্যয় হবে এবং সে বিরক্ত হবে। লেখা বা কথা সংক্ষিপ্ত হলে এমনটা হয় না। এর দ্বারা সময় অপচয় রোধ হয়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
৩। বিবেচনা (Consideration):
যোগাযোগের সময় নিজেকে শ্রোতা বা পাঠকের স্থানে বসিয়ে দেখতে হবে। এখানে শ্রোতার শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাত, ধর্ম ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। গত বছরের কথা, আমাদের একটা প্রজেক্ট দেয়া হয় যেখানে আমাদের তিনটি টং-এর দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে তার উপর একটা শর্ট টার্মপেপার তৈরি করতে হয়েছিল। একজন বিবিএ-এর শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যবসায়িক বিভিন্ন ইংরেজি শব্দের সাথে আমার দৈনন্দিন থাকতে হয়।
প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে প্রথম যেই টং-এর দোকানে যাই আমি, সেখানে অভ্যাসগত কারণেই কথা বলার সময় ফাঁকে ফাঁকে দু’-একটা ব্যবসায়িক শব্দ বলে ফেলছিলাম আর যখনই আমি বলছিলাম, তখনই সেই টং-এর দোকানী একদম চুপ হয়ে যাচ্ছিল। এই যোগাযোগে বিবেচনার অভাব ছিল। টং-এর দোকানীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় আনলে যোগাযোগটা আরো সুষ্ঠু হত।
“একসময় অনেকগুলো মূল কথা বলতে গেলে শ্রোতা দ্বিধান্বিত হয়ে যায় এবং কোনো কথাই ঠিকমত বলা হয় না।”
এভাবেই যোগাযোগের সময় নিজেকে শ্রোতা বা পাঠকের জায়গায় রেখে তারপর করতে হবে। শ্রোতার বোধগম্যতার বাইরে যায় এমন কিছুও যেমন বলা যাবে না, তেমনি শ্রোতা নিজেকে তুচ্ছ মনে করে বা তার বিশ্বাসে আঘাত হানে এমন কিছু বলা যাবে না। কথা বলার সময় নেতিবাচক শব্দের পরিবর্তে যতটা সম্ভব ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
৪। স্পষ্টতা (Clarity):
যোগাযোগের সময় একটা মূল কথাতেই জোর দিতে হবে। একসময় অনেকগুলো মূল কথা বলতে গেলে শ্রোতা দ্বিধান্বিত হয়ে যায় এবং কোনো কথাই ঠিকমত বলা হয় না। এক সময় একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে তা শ্রোতার বুঝতে সুবিধা হয়। ব্যাপারটা আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলতে গেলেই বুঝবেন। অনেকজন বন্ধু-বান্ধব একসাথে কথা বলতে থাকলে সেখানে অনেক রকমের কথা মিশে যায় এবং অনেক কম সময়ই দেখবেন যে ঐখানে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে।
৫। নির্দিষ্টতা (Concreteness):
ধরে নিন, আপনাকে কেউ বলল কালকে সকালে তার সাথে দেখা করতে। এখন আপনি কখন দেখা করবেন? সকাল ৮ টায় না ১১ টায়? আবার সে দেখা করার স্থানে উল্লেখ করেছে, অমুক ভবন কিন্তু কত তলা তা বলে দেয়নি। এখন আপনি কোন তলায় খুঁজবেন তাকে? এই দুই ধরনের যোগাযোগে ছিল নির্দিষ্টতার অভাব।
আরও পড়ুন: শিশুর স্পোকেন ইংলিশ দক্ষতা বাড়াবেন যেভাবে
নির্দিষ্টতার অভাবে শ্রোতা বা পাঠকের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এটা তাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগায়। আবার অনেক সময় শ্রোতা বা পাঠক নির্দিষ্টতা ছাড়া বার্তার ভুল ব্যাখ্যাও করে। ধরে নিন, একই নামে দু’টি ভবন রয়েছে। এখন, বার্তা প্রেরক একটা ভবনের কথা চিন্তা করেছেন, কিন্তু প্রাপক ভেবেছেন আরেকটা। এতে করে অনেক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। নির্দিষ্টতা ছাড়া বার্তা খুবই আনপ্রফেশনালিজম-এর পরিচয় দেয়।
৬। ভদ্রতা (Courtesy):
বার্তা যোগাযোগের সকল বৈশিষ্ট্য বহন করলেও তা পেয়ে প্রাপক সন্তুষ্ট হবে না যদি না তা ভদ্র ভাষায় লেখা হয়। বার্তায় প্রাপককে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এবং বোঝাতে হবে যে প্রেরক আসলেই প্রাপকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। এর জন্য বার্তা বলতে কিংবা লিখতে হবে শ্রোতা বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এবং বার্তাটা যেন কোনোভাবে পক্ষপাতিত্বমূলক না হয়। এখানে সৌজন্যমূলক অনেক শব্দ থাকবে কিন্তু অবশ্যই তা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়।
সুন্দরভাবে লেখা বার্তা পড়লে প্রাপক এমনিতেই তাতে বর্ণিত বিষয়ের উপর আগ্রহী হয় এবং প্রাপক তার উত্তরও সুন্দরভাবে প্রেরণ করে। ধরে নিন, আপনি কাউকে কোনো জায়গা থেকে বাদ দিচ্ছেন, তখন আপনি তাকে আপনার বার্তার শুরুতে কিছু ‘Strategic buffer’ দিয়ে নিতে পারেন। Strategic buffer হচ্ছে, কোনো খারাপ সংবাদ দেয়ার আগে পরিস্থিতিকে হালকা করার জন্য বলা কিছু সৌজন্যমূলক কথা। আবার বার্তা শেষেও এরকম কিছু বলে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার কিছু সৌজন্যমূলক কথা একজনের দিনটাকে ভালো করার জন্য যথেষ্ট।
৭। শুদ্ধতা(Correctness):
শুদ্ধতা মানে হচ্ছে, আপনার বার্তায় কোনোরকমের ব্যাকরণগত ভুল থাকবে না। আপনার লিখিত প্রতিটা বাক্য আপনাকে উপস্থাপন করে। আপনার বাক্যে গ্রামাটিকাল ভুল থাকলে, আপনি যতই দক্ষ হোন না কেন, সেই বাক্যটি আপনাকে প্রাপকের সামনে দূর্বলভাবে উপস্থাপন করবে। যদি নিজের গ্রামাটিক জ্ঞানের উপর ভরসা না থাকে, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে চেক করিয়ে নিন। একটা গ্রামাটিকাল ভুল শুধু আপনারই নয় বরং আপনি যে সংগঠনের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠাচ্ছেন, তার মর্যাদাও কমিয়ে দেয়।
যোগাযোগের এই সাতটা নিয়ম মেনে চললে আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। বর্তমান যুগটাই হচ্ছে যোগাযোগের যুগ। এই যুগে আপনি কোনো কাজে যত দক্ষই হোন না কেন, যদি আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ না করতে পারেন তাহলে আপনি অনেক জায়গায়ই আপনার প্রাপ্য সম্মানটা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মনিরা আক্তার লাবনী
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
আপনার কমেন্ট লিখুন