বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কাউকে ইদানীং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে জিজ্ঞেস করলে দুই ধরণের উত্তর পাওয়া যায়। এক দল আছে যারা মহানন্দে নতুন এই জীবন উপভোগ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনটা বেশ উপভোগ্যই বলতে গেলে।
আরেকদল হচ্ছে সিজিপিএ পাবলিক। এদের দুনিয়ার সবকিছু ঘিরে সিজিপিএ। ডিবেট করতে যাবার কথা বললে তারা সিজিপিএর দোহাই দেয়। গান গাইতে বললে সিজিপিএ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে বললে সিজিপিএ, কোন ক্লাবে যোগ দেবার কথাতেও তাদের ওই একটাই উত্তর- কিন্তু আমার সিজিপিএর কি হবে? অবস্থা এমন যে এদের আবেগও হয়ে গিয়েছে সিজিপিএ নির্ভর। প্রেম তাদের শুধু সিজিপিএর সাথেই! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, এই দলের বেশিরভাগকেই যদি তাদের সিজিপিএ জিজ্ঞেস করা হয়, মুখটা কেমন কালো হয়ে যায়। মৃদু স্বরে উত্তর আসে, ২.৯০!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Facebook Marketing
আমরা আজকে প্রথম দলটা নিয়েই কথা বলবো। যারা শুধু সিজিপিএ না, বরং চারপাশের দুনিয়াটারও একটা জীবন্ত অংশ হতে চায়। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, দ্বিতীয় দল এভাবে পাগলের মতো সিজিপিএর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে কেন? খুব ভালো সিজিপিএ ছাড়া কি জীবনে সাফল্য পাওয়া যাবে না? চেষ্টা করবো সব প্রশ্নেরই উত্তর দিতে।
সিজিপিএ আসলে কতোটা দরকার?
সিজিপিএ হচ্ছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার একাডেমিক সাফল্যের প্রমাণ। সিজিপিএর অবশ্যই দরকার আছে। আমরা যখন এসএসসি দিয়ে কলেজে ওঠার ভর্তিযুদ্ধে প্রবেশ করি, তখন ভালো কলেজ পেতে হলে কিন্তু এসএসসির রেজাল্টটাই দেখা হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় সেই এইচএসসির নম্বরটাও কিন্তু যোগ করা হয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের সাথে, আর সেটা বড়ো একটা ভূমিকা রাখে নম্বরে।
ঠিক একইভাবে তোমার প্রথম জবে সিজিপিএ-ও ভালোই ভূমিকা রাখবে। কারণ যারা জব দেবে, তারা তোমাকে চেনে না, জানে না তোমার প্রতিভা আর কৃতিত্বের কথা। তারা তখন তোমার সিজিপিএ দিয়েই তোমাকে মূল্যায়ন করবেন। প্রথমবারের এই ঝক্কিঝামেলার পর থেকে পরের সব জবে তোমার অভিজ্ঞতা আর কর্মক্ষমতাই তোমার হয়ে কথা বলবে।
সিজিপিএ বনাম অন্যান্য
চাকুরির শুরুতেই সিজিপিএর এমন দরকার দেখে অনেকেই হয়তো মনে করছো, তাহলে কি সিজিপিএই সব? অন্যান্য কাজ, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি, এতশত ক্লাবে কাজ করা কি বৃথা? আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়। হ্যাঁ, ভালো একটা জব পেতে হলে সিজিপিএটা দরকার, কিন্তু তার পাশাপাশি দরকার হয় অভিজ্ঞতারও। ভালো সিজিপিএ আছে অনেকেরই, কিন্তু কোন ইভেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা, কিংবা হঠাৎ করে কোন অবস্থা সামলাতে পারার ক্ষমতা আছে ক’জনের?
সিজিপিএ’র পেছনে ছোটার পাশাপাশি এগুলো করলেও কিন্তু তুমি এগিয়ে থাকতে পারো অন্য সকলের থেকে। একটা রুমে যদি দুজন ক্যান্ডিডেট থাকে, যাদের একজনের অনেক ভালো সিজিপিএ কিন্তু বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নেই আর অন্যজনের মোটামুটি ভালো সিজিপিএর সাথে আছে অভিজ্ঞতার ঝুলি- দ্বিতীয়জনের দিকেই কিন্তু জবের পাল্লাটা ঘুরে যায়। তাই অন্য সবার থেকে তোমাকে এগিয়ে রাখতে দরকার একটুখানি অভিজ্ঞতার ঝলক!
কিন্তু কি করলে অর্জনকরা যাবে এসব অভিজ্ঞতা? কিভাবে অভিজ্ঞতার বলে এগিয়ে থাকা যাবে বাকিদের থেকে? এর জন্যে আসলে কোন শর্টকাট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছরটায় কিন্তু পড়ালেখা কিছুটা শিথিলভাবে চলে। এটাই হচ্ছে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে সেরা সময়। শিথিলতাটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারো তোমরা। যেমন:
এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি:
বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার বছরগুলি কেটে যাবে একের পর এক অনুষ্ঠান আর আয়োজনে। তুমি গান গাইতে পারো? তোমারই সুযোগ নিজের পরিচিতি বাড়ানোর এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে। তুমি নাচতে বা অভিনয় করতে পারো? অন্যান্য প্রতিভা আছে তোমার? সেগুলো দেখিয়ে দেবার শ্রেষ্ঠ সময় এটিই। শুধু বাসায় বসে পড়াশোনা না করে এমন প্রতিভার বিকাশ তোমার অভিজ্ঞতা আর পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া লেখালেখির অভ্যেস থাকলে সেটাও কাজে লাগাতে পারো তুমি। আমাদের 10 Minute School এর ইমেইলে লেখা দিয়ে তুমিও হয়ে যেতে পারো আমাদের ব্লগের একটা অংশ!
প্রতিযোগিতা:
ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত কোন না কোন বিষয়ের উপর নানা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিতর্ক ভালোবাসলে আছে নানা বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আছে বিজনেস কম্পিটিশন, যেখানে ভালো করলে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকে, সুযোগ থাকে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে সেখানে চাকুরি করারও! আরও আছে MUN, যাকে এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা বললে একটুও ভুল হবে না! MUN এ ভালো করতে পারলে সেটি নিঃসন্দেহে তোমার সিভিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে থাকবে!
ক্লাব:
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রকম ক্লাব থাকে। ডিবেট ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব আরো কতো কী? তুমিও যোগ দিতে পারো এসব ক্লাবে। ক্লাবগুলো থেকে বিভিন্ন দিবসে ইভেন্ট আয়োজন করা হয়, সেগুলোয় অংশ নিয়ে কিংবা ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেও তুমি অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারো! পড়ালেখার ফাঁকে ভিন্ন কিছু করলে মন্দ হয় না কিন্তু!
পার্ট টাইম জব:
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্যে পার্ট টাইম জব অসাধারণ একটি মাধ্যম। এখন বিভিন্ন অর্গানাইজেশন আছে যারা পার্ট টাইম জবের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের। এদের মধ্যে কোন কোনটা অবৈতনিক কাজ, আবার অন্য অনেকগুলো জব থেকে কিছুটা উপার্জনও করা সম্ভব। নিজে টাকা উপার্জন করলে কেমন একটা আনন্দ হয় না? তার সাথে যদি যোগ হয় অফুরন্ত অভিজ্ঞতা, ব্যাপারটা তখন সোনায় সোহাগা হয়ে দাঁড়ায়!
ইন্টার্নশিপ:
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি করার স্বপ্ন দেখাটাও অনেকটা দুঃসাহসের মতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন কোম্পানিতেও তোমরা কাজ করতে পারো ইন্টার্ন হিসেবে! এমন সব কোম্পানিগুলো প্রায়ই ইন্টার্ন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় খবরের কাগজে। নিজেকে প্রমান করে এমন কোন কোম্পানির ইন্টার্ন হতে পারলে তুমিও পাবে সেই অভিজ্ঞতা আর সিভিতে যোগ হবে আরেকটি শক্তিশালী কৃতিত্ব!
ভার্চুয়াল সুপারহিরো:
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে থাকতেই তুমি শিখে ফেলতে পারো পাওয়ারপয়েন্ট আর ডিজাইনিং নিয়ে নানা কিছু! শিখে সেগুলো প্রয়োগ করতে পারলে সেটি তোমার স্কিলের একটি অংশ হয়ে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া কাজে লাগিয়ে তুমি শুরু করতে পারো ইউটিউবিং আর সেগুলো প্রয়োগ করে হয়ে উঠতে পারো অভিজ্ঞ আর পরিচিত!
এতোকিছু বলার কারণ হচ্ছে যে, সিজিপিএই সব- এই ধারণা দূর করতে পারলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে। আজ আমরা চাই সবাই সিজিপিএর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করবে, তাদের জীবন হবে আরো রঙ্গিন। কিভাবে করতে হবে সেটা? উত্তর একটাই
‘কিন্তু সিজিপিএ’ এ লেখাটি পড়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবেই স্বপ্নের জগতে পাড়ি দেয়া সম্ভব হবে!
লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন