ছোটবেলায় খেলনা প্লেন চালাতে চালাতে অনেকেরই শখ হয় বড় হয়ে পাইলট হবে। প্লেন নিয়ে নীল আকাশ আর মেঘের রাজ্যে পাড়ি জমাবে। অনেকেই ভিডিও গেমসের অথবা হলিউড মুভির রোমাঞ্চকর পাইলটদের ফ্লাইং দেখে নিজেকেও একদিন ঐ জায়গায় দেখার স্বপ্ন দেখে। কারও বাবা অথবা বড় ভাই পাইলট ছিলেন,তাদের দেখে দেখেও স্বপ্ন জাগে পাইলট নামের এই রোমাঞ্চকর ও উত্তেজনাপূর্ণ পেশায় আসতে অনেকেরই। স্বপ্নগুলো যেভাবে দেখুক না কেউ বড় হয়ে এইচএসসির গন্ডি পেরিয়ে উদ্দেশ্য থাকে সবার একটাই, একজন ভালো পাইলট হওয়া ও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপদান করার। ঐ প্লেনটা চালানোর, যেটা সে ছোটবেলা থেকে চালানোর স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছে। ঐ নীল আকাশটাতে উড়ে বেড়ানোর য আকাশটাকে সব সময় খুব কাছ থেকে দেখতে চেয়েছে। তাই তারা ভবিষ্যতে পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাও তাদের জন্য এ ব্লগটি।
পাইলট হতে হলে কী কী যোগ্যতা লাগে, শিক্ষাগত গ্রাজুয়েশান ও চাকরি ক্ষেত্র নিয়ে যাবতীয় সব কিছু আজ তুলে ধরবো তোমাদের জন্য:
পাইলট দুই ধরনের হয়ে থাকে,
১) সামরিক পাইলট
২) বেসামরিক পাইলট
সামরিক পাইলট হলেন তারা, যারা বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীতে পাইলট হিসেবে কর্তব্যরত থাকেন। আর বেসামরিক পাইলটরা ফ্লাইং স্কুল / একাডেমী থেকে পাশ করে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানীতে পাইলট হিসেবে কর্তব্যরত থাকেন।
সামরিক পাইলট:
সামরিক পাইলটকে জি ডি পাইলট অথবা জি ডিপি ( জেনারেল ডিউটি পাইলট) বলা হয়। এইচএসসি পাশের পর পরই আবেদন করতে হয়। সাধারণত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে জি ডিপি পোস্টের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।
সেনা আর নৌবাহিনীতে পাইলট হিসেবে আবেদন প্রাথমিকভাবে নেই। রিকোয়ারমেন্টস অনুযায়ী তাদেরকে ডাকা হয়। এক্ষেত্রে তারা ক্যাডেট থেকেই পাইলট হয় না। ভিন্ন ব্রাঞ্চে কমিশনিংয়ের পর পাইলট হয় বিমান বাহিনীতে ট্রেনিং নিয়ে বা ফ্লাইং ক্লাবে ট্রেনিং নিয়ে৷
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Spoken English
পাইলট হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা:
শিক্ষার্থীর এইচএসসির ও এসএসসির মাঝে যে কোন একটিতে জিপিএ ৫. ০০ অন্যটিতে ৪.৫০ অথবা এর উপরে থাকতে হবে৷ (গণিত থাকতে হবে আবশ্যিক / ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে। ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষার্থীদের জন্য এ লেভেলে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত থাকা আবশ্যক এবং দুটি বিষয়ে নূন্যতম ডি গ্রেড থাকতে হবে।
বয়স:
১৬ বছর ৬ মাস থেকে ২১ বছর সময়সীমা।
* প্রার্থীকে বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
* শারীরিক যোগ্যতা / ফিটনেস:
এটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পাইলটদের জন্য৷
উচ্চতা: পুরুষ – ১৬২.৫৬ সে.মি ( ৬৪ ইঞ্চি), নারী ১৫৭. ৪৮ সে.মি (৬২ ইঞ্চি) , কমপক্ষে।
বক্ষ: পুরুষ -৩২”, নারী – ২৮ ”
বক্ষ প্রসারন: ২” ( ৫.০৮ সেন্টিমিটার)
ওজন: বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী
চক্ষু দক্ষতা: ৬/৬, স্বাভাবিক দৃষ্টিক্ষমতা সম্পন্ন।
বাছাই প্রক্রিয়া: এক্ষেত্রে ৬ টি ধাপে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
১) প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা ( সাধারণ জ্ঞান, আইকিউ ও ইংরেজীর উপর প্রশ্ন থাকে)
২) প্রাইমারী মেডিকেল ( প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা)
৩) প্রাইমারী ইন্টারভিউ
৪) ISSB board for 4 days
৫) ফাইনাল মেডিকেল টেস্ট
৬) ফাইনাল সিলেকশন ( এয়ার ফোর্স হেড কোয়ার্টারে ইন্টারভিউ)
আরো পড়ুন: স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা
ট্রেনিং ও চাকরি:
নতুন নির্বাচিত হওয়া ক্যাডেট পাইলটরা জয়েন করার পরে, তাদের তিন বছরের ট্রেনিং পিরিয়ড সম্পন্ন করতে হয়, এরপর তারা কমিশনের জন্য নির্বাচিত হন। প্রথম তিন মাস বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে ও পরে বাকি ট্রেনিং সম্পন্ন হয় বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমিতে। একাডেমি যশোর জেলার, মতিউর রহমান এয়ার ফোর্স বেসে অবস্থিত। একাডেমিতে ক্যাডেট পাইলটদের ৪ ধাপে ট্রেনিং সম্পন্ন হয়। প্রথম দুই টার্মে ক্যাডেটরা জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিং পান ও সার্ভিসের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ে পড়াশুনা করেন। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে পাইলটের ১২০ ঘণ্টার বেসিক ফ্লাইং ট্রেনিং কমপ্লিট করা লাগে এবং আরেক ধাপে ক্যাডেট পাইলটরা BSC degree in aeronautic, ইঞ্জিনিয়ারিংঅথবা যে কোন ব্যাচেলর ডিগ্রিতে অধ্যয়ন করার সুযোগ পান BUP ( Bangladesh university of professionals) এর অধীনে। তিন বছরের ট্রেনিং সফলভাবে সম্পন্ন করার পর পাইলট ক্যাডেটরা এয়ার ফোর্সে কাজ করা শুরু করেন।
এয়ার ফোর্সের অফিসার র্যাংকিং:
Air Chief marshal > Air marshal > Air Vice- marshal > Air commodore > Group captain > Wing commander > Squadron leader > Flight lieutenant > Flying officer
এক এক র্যাংকে উন্নিত হওয়ার সাথে সাথে বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বাড়বে। এখানে এয়ারফোর্সের বিস্তারিত জানালাম। সেনা ও নৌবাহিনীর ব্যপারে বিস্তারিত আরও জানতে পারো আর্মি ও নেভী ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশ আর্মি: https://joinbangladesharmy.army.mil.bd
বাংলাদেশ নেভী: https://www.joinnavy.mil.bd
বেসামরিক পাইলট :
সামরিক পাইলট ছাড়াও বেসামরিক পাইলট আছেন যারা, যারা ফিক্সড উইং বিমান চালানোতে দক্ষ। বাংলাদেশের এয়ারলাইনসের পাইলটরা সাধারণত Boeing 777-300 ER, Boeing 787-8, Bombardier Dash 8 Q400, ATR 72-500, Bombardier Dash 8 ইত্যাদি মডেলের প্লেনে করে যাত্রী পরিবহণ করেন।
হেলিকপ্টারের জন্য কোন ফ্লাইং স্কুল নেই। বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চালানোর যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে একটি সংস্থা, Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB)। তাদের ওয়েবসাইটে গেলে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে।
এয়ারলাইনসের পাইলট হতে হলে,
বেসামরিক পাইলট হওয়ার যোগ্যতা:
– এইচএসসি পাশ ( পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত থাকতে হবে) অথবা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
–মেডিকেল চেকআপ ( ক্লাস ১ মেডিকেল স্টাটাস)
নির্বাচিত হওয়ার পর যে ফ্লাইং স্কুল / একাডেমিতে আপনি ভর্তি হবেন তাদের অধীনে অধ্যায়নরত অবস্থায় আপনি শিক্ষানবিশ পাইলট হিসেবে গ্রাউন্ড ও ফ্লাইং লাইসেন্স নিতে পারবেন। শিক্ষানবিশ পাইলটদের দক্ষ পাইলটে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশে আছে বেশ কিছু ফ্লাইং একাডেমি। এছাড়া কেউ চাইলে বিদেশ থেকেও পড়ে আসতে পারেন যে কোন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইং স্কুল থেকে৷
ফ্লাইং একাডেমি:
১) Bangladesh Flying Academy: ১৯৪৮ সাল থেকে পাইলট বানানোর কাজটি করে আসছে এ কোম্পানী।
ঢাকা অফিস: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কুর্মিটোলা, ঢাকা।
রাজশাহী অফিস: শাহ মাখদুম এয়ারপোর্ট, রাজশাহী।
২) Arirang flying Scool
৩) GAlaxy flying academy limited
Level #12, house #44, road #1, sector #3
uttara model town, dhaka 1230
আরো পড়ুন: মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়
প্রায় সবগুলো একাডেমিতে ভর্তি প্রক্রিয়া ও পড়াশোনা প্রক্রিয়া একই। সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি এর অধীনে পাশ করতে হয় একজন শিক্ষানবিশ পাইলটকে। অর্জন করতে হয় প্রাইভেট লাইসেন্স ও কমার্শিয়াল লাইসেন্স। পড়াশোনার মেয়াদ ২.৫ বছর, তবে এক্ষেত্রে খরচটা শিক্ষার্থীর নিজের বহন করতে হয়। পুরা পড়াশোনা ও ট্রেনিং শেষ হতে ২৫- ৩০ লাখ বাংলাদেশী টাকা খরচ। এবার জেনে নেয়া যাক লাইসেন্স পাবার প্রক্রিয়া:
*প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ( PPL) –
-বয়স কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে।
– ডাক্তারি পরীক্ষা, ক্লাস ২ মেডিকেল স্টাটাস কোয়ালিফাই করতে হবে প্রত্যেক বছরে।
– অধ্যয়নরত গ্রাউন্ড সাবজেক্টে CAAB এর পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
– flying qualify, CAAB এর পরীক্ষকের অধীনে ৫০ ঘন্টা ফ্লাই করার অভিজ্ঞতা অর্জন। ফ্লাইং পরীক্ষা পাশ করলে তবেই PPL (private pilot licence) লাইসেন্স ইস্যু হয়।
* কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স ( CPL) –
– কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী হতে হবে।
– ডাক্তারি পরীক্ষা, ক্লাস ১ মেডিকেল টেস্ট কোয়ালিফাই।
– CAAB এর অধীনে অধ্যয়নরত গ্রাউন্ড সাবজেক্টে পাশ করা বাধ্যতামূলক।
-CAAB এর পরীক্ষকের কাছে ফ্লাইং পরীক্ষা কোয়ালিফাই করতে হবে। ২০০ ঘনটার মাঝে ১৫০ ঘন্টা সোলো ফ্লাইং কমপ্লিট করতে হবে। তবেই মিলবে CPL ( Commercial pilot licence) . এই কমার্শিয়াল লাইসেন্স পাওয়ার পর ও CAAB এর অধীনে যাবতীয় পরীক্ষা পাশের পর একজন পাইলট তৈরি এয়ারলাইন্সে কাজ করার জন্য। বাংলাদেশে যেসব এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহনের কাজে জড়িত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- Biman Bangladesh
- Novo air
- Regent airways
- US-bangla Airlines
এছাড়াও রয়েছে, মালামাল পরিবহনের জন্য কার্গো এয়ারলাইন্স।
এসব এয়ারলাইনস কোম্পানীর ওয়েবসাইটে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হয় ও চাকরির জন্য সার্কুলার দিলে এপ্লাই করতে হয়। একটি বিমানে সাধারণত পাইলট থাকে দুইজন, first officer (F_O) & captain. আর নতুন সদ্য যোগদানকারী পাইলটদের বলা হয় ক্যাডেট পাইলট। প্রথমে ক্যাডেট পদ থেকে 1st officer ও পরে captain পদে উন্নীত হতে হতে স্যালারী ও সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি পায়। একজন বেসামরিক বিমানের পাইলটের মাসিক আয় ১লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হয় বাংলাদেশী টাকায়। সময়, অভিজ্ঞতার সাথে বেতন ও সুযোগ সুবিধা বাড়ে। অভিজ্ঞতা বাড়লে অনেক পাইলট বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে চাকরি নিতে পারেন।
পাইলট হওয়ার সুবিধা:
মানুষের ছোটবেলার শখ থাকে পাইলট হওয়ার। কথায় আছে শখের দাম কোটি টাকা। তাই যদি নীল আকাশকে ভালবাসেন, এ পেশার প্রতি ভালাসা থাকে, সম্মান কাজ করে, তাহলে পেশা হিসেবে বেছে নেয়াই যায় পাইলট।
- এ পেশাতে অল্প বয়সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ আছে যা অন্য পেশাতে কম আছে। বিশেষ করে বাংলাদশে ছয় ডিজিটের স্যাালারী বাংলাদেশের যে কোন সাধারণ চাকরীজীবিএর জন্য কামানো, তাও ২৪-২৬ বছর বয়সে প্রায় অসম্ভব মনে হলেও, একজন পাইলটের জন্য ব্যাপারটা অসম্ভব না।
- দেশ বিদেশ ঘুরার শখ যাদের আছে, তাদের জন্য এ পেশা স্বপ্নের পেশা।
- পাইলট হলে আপনি পাবেন সরকার থেকে নানা সুযোগ সুবিধা ও মিশনে যাওয়ার সুযোগ।
পাইলট হওয়ার অসুবিধা:
- পরিবার পরিজন ও ব্যক্তিগত জীবন স্যাক্রিফাইস করতে হয়। হয়তো আকাশেই কাটিয়ে দেয়া লাগলো ঈদে অথবা পূজায় ডিউটি করে৷
- সাহস এ পেশায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্লেন দুর্ঘটনায় পাইলটের আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা অনেক শোনা যায়৷ নিজে জীবন দিয়ে হলেও পাইলট যাত্রীদের বাঁচিয়ে গেছেন এমন উদাহরন ও অসংখ্য। আর সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ বিমানের পাইলট হওয়াটা যে বিপদজনক এটাও সহজেই অনুধাবন করা যায়।
- নিয়ম মেনে চলা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়মিত পাইলটদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়। যাতে তারা সব সময় ফিট থাকেন প্লেন চালানোর জন্য।
রোমাঞ্চকর নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলার মাঝে প্লেন চালিয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্নে যারা বিভোর, শুভকামনা সবাইকে। আশা করি তোমাদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবে অনেক পাইলট, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী অথবা লেখক ৷
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন