আমাদের মধ্যে অনেকেরই ইচ্ছা, উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া। সেটা হতে পারে আন্ডার গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন কিংবা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকি। কারণ, বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট নতুন এবং আমরা সেরকম দক্ষ মেন্টরও পাই না, যারা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। যার ফলে আমরা অনেকেই মিসকন্সেপশনে ভুগে থাকি এবং এই কারণে অনেক উল্টোপাল্টা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
অনেকসময় বিভিন্ন দালাল কিংবা এজেন্সির লোকেরা এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে আমাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে এই বলে যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা এবং পাসপোর্ট দিলেই তারা ভিসা- থাকা- খাওয়া ও পড়ার ব্যবস্থা করে দেবে। এইসব ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই নিজের লাখ লাখ টাকার লোকসান করেছেন। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সকল খুঁটিনাটি নিয়ে লেখা এই ব্লগটি তাদের জন্য, যারা এখন বিদেশে পড়তে যাবেন কিংবা ভবিষ্যতে বিদেশে পড়াশুনা করতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন।
কেনো বিদেশে পড়তে যাবো?
বিদেশে কেনো পড়তে যাবো, এই প্রশ্নটা আগে নিজেরই নিজেকে করা উচিত। যদি উত্তর হয় চাকরিক্ষেত্রে বাড়তি লাভ কিংবা সিভিটা একটু ভারী করা, তাহলে বিদেশে পড়তে যাওয়া আপনার জন্য নয়।
আমাদের দেশের মানুষেরা ভাবেন, এইচএসসি পাশ করেই আন্ডার গ্রাজুয়েশনের জন্য নিজেদের সন্তানদের বিদেশে পড়াতে পাঠিয়ে দেওয়াই হলো সঠিক সিদ্ধান্ত। আবার অনেকেই দেশের কোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পেয়ে দেশের বাইরে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিদেশে যেয়ে গ্রাজুয়েশন করার আগে দেশে থেকেই ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করে যাওয়া ভাল। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, বিদেশে যেয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিজের পড়াশুনাটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারেন না। কেননা তাদের মধ্যে বেশিরভাগই টিউশন ফি দিয়ে বিদেশে পড়তে যান। যার ফলে তারা সেই দেশে যেয়ে কোন রেঁস্তোরায় বা পেট্রোল পাম্পে পার্টটাইম চাকরি করেন।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
IELTS Course by Munzereen Shahid
আর এই পার্টটাইম চাকরির পেছনে এতটাই সময় চলে যায় যে এরপর সময়মতো ক্লাসে যাওয়া, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া, পরীক্ষা দেওয়ার সময় পান না। তখন দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু এখানেই বাঁধে বিপত্তি। কেননা দেশ থেকে অনার্স কমপ্লিট না করে যাওয়ায়, দেশে ফিরে তারা হয়ে যান ইন্টারমিডিয়েট পাশ। তখন তারা মনমতো কোনো চাকরিও পান না, চাকরির বয়সও পার হয়ে যেতে থাকে। যেই সময়টায় বন্ধুরা সবাই চাকরিতে ঢুকে পড়ে। আবার বিদেশে পড়াশুনা শেষ না করে কোনো ভাল চাকরিও পাওয়া যায় না, আপনার যত দক্ষতাই থাকুক না কেন। তখন হয়তো সেই পার্টটাইম কাজটাই আপনাকে ফুলটাইম মানে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হবে।
তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে সবকিছু ভেবেচিন্তে যাওয়াটাই জরুরি৷ বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা বেশ ব্যয়বহুল। তাই শুধু সামর্থ্য থাকলেই টিউশন ফি দিয়ে পড়া উচিত, নাহলে না।
বিশ্বের অনেক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে। তাই সেইসব ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে যেয়ে দেখতে হবে স্কলারশিপের ধরণ, স্কলারশিপ দেবে কিনা, স্কলারশিপ পেতে হলে কী কী যোগ্যতা থাকা লাগবে। যদি স্কলারশিপ না পান, তাহলে টিউশন ফি ছাড়া কোনো ইউনিভার্সিটি আছে নাকি, সেটার খোঁজ করতে হবে। আজকাল অনেক ইউনিভার্সিটিতেই টিউশন ফি ছাড়া পড়ানো হয়। ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করলেই সেটার খোঁজ পাবেন।
যদি টিউশন ফি ছাড়া পড়ারও কোনো অপশন থাকে না, তাহলে শুধু সামর্থ্য থাকলেই আপনার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার পথটুকু খোলা থাকবে। এছাড়াও আপনি যেই কোর্সটা করতে যাচ্ছেন, তার চাহিদা বিশ্ববাজারে কেমন, ১০ বছর পর এর চাহিদা কেমন হবে, দেশে ফিরে এই কোর্স নিয়ে আবার পড়াশুনা করা যাবে নাকি, কেমন চাকরি করতে পারবেন- এইসব বিষয়ও মাথায় রাখাটা দরকার। অনেকেই এইসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অথৈ জলে হাবুডুবু খেতে থাকেন।
স্কলারশিপের খোঁজ-খবর:
আমরা অনেকেই Youth Opportunities-এর নাম শুনেছি। এই ওয়েবসাইটে বিশ্বের কোথায় কোন প্রতিযোগিতা হচ্ছে, কোথায় ভলান্টিয়ার লাগবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পেইড ইন্টার্ন নিচ্ছে এমনকি স্কলারশিপের খোঁজ-খবরও দেওয়া হয়। আপনারা চাইলেই কোন কোন দেশে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, তাদের ওয়েবসাইটে যেয়ে একটু ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।
লিংক: https://www.youthop.com/
লিংক : https://bangla.youthop.com/
এছাড়াও বাংলাদেশ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট : https://moedu.gov.bd/
স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের টার্গেট কান্ট্রি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং রাশিয়া। এইসকল দেশের স্কলারশিপ সংক্রান্ত খোঁজখবর মিলবে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইগুলোতে। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার তথ্যের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের লিংক:
2. www.ucas.com
3. study-uk.britishcouncil.org
যুক্তরাজ্যের অনুমোদিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা পাওয়া যাবে এই লিংকে- https://www.gov.uk/browse/visas-immigration/student-visas অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে- http://studyinaustralia.gov.au সাইটে। কানাডায় উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় তথ্য মিলবে www.cic.gc.ca/english/information/applications/student.asp
এছাড়াও ঢাকাস্থ এইসব দেশের দূতাবাসে গেলেও প্রয়োজনীয় সব তথ্যই পাওয়া যাবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার উপকারিতা কী?
বিদেশে পড়তে যাওয়ার উপকারিতা অবশ্যই আছে, নাহলে তো সবাই বিদেশে পড়ার জন্য উঠে পড়ে লাগতো না! বিদেশে সবাই পড়তে যায় ভালমানের উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, “কেনো? দেশে কী উচ্চশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই?”
অবশ্যই আছে! কিন্তু দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে বিদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বেশ বড় একটা ফারাক আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কোনো রাজনীতি নেই, নেই কোনো সেশনজট। গবেষণা করার অফুরান্ত সুযোগ পাওয়া যায় বিদেশে৷ আর একাজে সেই কোর্সের প্রফেসর থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্ট হেড, সকলেই খুব সাহায্য করে থাকেন।
আরও পড়ুন:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন করণীয়! (পর্ব ২- IELTS)
মহাদেশ কী? মহাদেশ কয়টি ও কি কি?
এছাড়াও শিক্ষা গ্রহণের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই।
“The world is a book, and those who do not travel read only one page.”
– Saint Augustine
অর্থাৎ পুরো পৃথিবী না ঘুরলে এই বিশ্ব সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা যাবে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটাতে এবং বিভিন্ন কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
যারা বিদেশে থেকে পড়াশুনা করেছেন, তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি স্বাধীনচেতা, আত্মনির্ভরশীল, বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীল ক্ষমতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। নিজের পরিবার ছেড়ে যেহেতু বিদেশে সম্পূর্ণ একা থাকতে হয়, তাই তারা আত্মনির্ভরশীল এবং সমস্যা সমাধানে পটু। শুধু তাই নয়, তারা কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পিছপা হয় না। বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অনেক মূল্যবান, যদি দেশে এসে সেই অর্জিত জ্ঞান আপনি সঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারেন।
বিদেশে অবস্থানের ফলে আপনি সেই দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত হবেন। এর পাশাপাশি বিশ্ব সম্পর্কে আপনার এক অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাবে। বিশ্বের রাজনৈতিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিদেশে থাকার ফলে আপনাকে সেই দেশের ভাষা শিখতে হবে, যা আপনার অভিজ্ঞতার মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ফলে তা শুধু আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটাবে না, পাশাপাশি আপনার পেশাগত দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। চাকরির বাজারে আপনার চাহিদা বেড়ে যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
বিদেশ ফেরত গ্র্যাজুয়েটরা আন্তর্জাতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং মাতৃভাষা ছাড়াও এক বা একাধিক ভাষাতে দক্ষ; আর এই দু’টি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে থাকে এই আন্তর্জাতিক বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও তাদের কমিউনিকেশন স্কিল, অন্য সংস্কৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় এবং সেই সাথে নতুন পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায় ভাবা এবং ঝুঁকি নেয়া সম্ভব হয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সর্বোচ্চ রকম সুযোগ-সুবিধা প্রস্তাব দিয়ে থাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রাখার জন্য।
এবার প্রস্তুতি নেওয়ার পালা:
কেনো বিদেশে পড়তে যাবো, তার কারণ নাহয় জানা গেলো। এবার পরবর্তী ধাপ হলো বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা৷ বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে না নেওয়াটাই ভাল। সবচেয়ে ভাল হয়, বিদেশে পড়তে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা ইন্টারমিডিয়েটের সময়েই যদি করে ফেলা যায়। তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার খুব ভাল পরিমাণের সময় পাওয়া যাবে। শুধু ভাল ফল অর্জন করলেই চলবে না, বিদেশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতাটাও সাথে থাকার প্রয়োজন।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে প্রধান ভাষা ইংরেজি হওয়ায়, তাল মেলাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স বা জার্মানীর মত দেশগুলোয় প্রধান ভাষা ইংরেজি নয়। তাদের রয়েছে নিজেদের মাতৃভাষা। অনেক ক্ষেত্রে এসব দেশে পড়তে যেতে হলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে নিলে সুবিধা হয়। কিন্তু এসব দেশেও ইংরেজীতে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। তবে রাস্তায় মানুষদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তাদের নিজস্ব ভাষাটা শিখে নেওয়াই শ্রেয়।
সূত্র:
https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/badol777/29760104
https://www.internationalstudent.com/study-abroad/guide/ten-benefits-to-studying-abroad/
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- IELTS Course by Munzereen Shahid
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- সবার জন্য Vocabulary by Munzereen Shahid
- Spoken English for Kids by Munzereen Shahid
- IELTS Mock Test Solutions Course (by Munzereen Shahid)
- English Writing for Students by Sakib Bin Rashid and Shahnawaz Hossain Jay
- চাকরিজীবীদের জন্য English by Munzereen Shahid
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন