ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে শুরুতেই এ প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, মহাদেশ কয়টি ও কি কি? কিংবা মহাদেশ কী? মহাদেশ হলো বড় বড় ভূখণ্ড। দেশের সীমানা নির্ধারণে ভূখণ্ডের অবস্থা বা অবস্থানের উপর নির্ভরতা নেই তেমন, কিন্তু মহাদেশ সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে ভূখণ্ডের উপর।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে ভূগোল থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। সেসব প্রশ্নের ক্ষেত্রে মহাদেশ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক। এই লেখাতে আলোচনা করা হবে মহাদেশ কি, মহাদেশ কয়টি, কোন মহাদেশে কতটি দেশ এবং মহাদেশগুলোর পরিচয়। চলুন, প্রবেশ করি মূল আলোচনায়।
মহাদেশ কী?
মহাদেশ হলো মূলত এই পৃথিবীর বড় কোনো ভূখণ্ড তথা ভৌগলিক অঞ্চল। পৃথিবীর ভূমিকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন মডেল অনুসারে। সেগুলোকেই মূলত মহাদেশ বলা হয়। একেকটি মহাদেশে অনেকগুলো দেশ বিদ্যমান। যদিও মহাদেশ নামটি দেশের সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু মহাদেশ গঠনে দেশের বিশেষ কোন ভূমিকা থাকে না।
মহাদেশ কয়টি?
এ পৃথিবীতে মহাদেশ মোট সাতটি। সেগুলো হলো:
- এশিয়া
- আফ্রিকা
- ইউরোপ
- উত্তর আমেরিকা
- দক্ষিণ আমেরিকা
- ওশেনিয়া
- অ্যান্টার্কটিকা

যদিও এ সংখ্যাটি বিভিন্ন মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। এমনকি মডেলভেদে মহাদেশের নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। মডেলভেদে মহাদেশসমূহকে পৃথক করার কয়েকটি উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো:
মডেল | মহাদেশ | ||||||
চার মহাদেশ | আফ্রো-ইউরেশিয়া | আমেরিকা | অ্যান্টার্কটিকা | ওশেনিয়া | |||
ছয় মহাদেশ | আফ্রিকা | ইউরোপ | এশিয়া | আমেরিকা | অ্যান্টার্কটিকা | ওশেনিয়া | |
ছয় মহাদেশ | আফ্রিকা | ইউরেশিয়া | উত্তর আমেরিকা | দক্ষিণ আমেরিকা | অ্যান্টার্কটিকা | ওশেনিয়া | |
সাত মহাদেশ | আফ্রিকা | ইউরোপ | এশিয়া | উত্তর আমেরিকা | দক্ষিণ আমেরিকা | অ্যান্টার্কটিকা | ওশেনিয়া |
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের অবস্থানের ছবি:

Source: wikipedia.org
অনেকগুলো মডেল থাকা সত্ত্বেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭ মহাদেশ মডেল অনুসরন করা হয়।
কোন মহাদেশে কতটি দেশ?
কোন মহাদেশে কতটি দেশ- এটা বিভিন্ন পরীক্ষায় বেশ সাধারণ একটি প্রশ্ন। তাই নিচে কোন মহাদেশে কতটি দেশ তার একটি তালিকা দেয়া হলো:
- এশিয়া: ৪৯টি দেশ
- আফ্রিকা: ৫৪টি দেশ
- ইউরোপ: ৪৪টি দেশ
- উত্তর আমেরিকা: ২৩টি দেশ
- দক্ষিণ আমেরিকা: ১২টি দেশ
- ওশেনিয়া: ১৪টি দেশ
- অ্যান্টার্কটিকা: ০টি দেশ
এশিয়া মহাদেশ
এশিয়া মহাদেশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল মহাদেশ। তবে, দেশের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এশিয়া ও ইউরোপ একই ভূখণ্ডে অবস্থিত। ইউরোপের সাথে এশিয়ার কোনো সীমারেখা নেই। এশিয়া ও ইউরোপের এই ভূখণ্ডকে একত্রে ইউরেশিয়া বলা হয়। তাই এই মহাদেশের বিভাজন মূলত সংস্কৃতির ভিত্তিতে হয়েছিল। এশিয়া মূলত গ্রিক সভ্যতার একটি ধারণা।
এশিয়া মহাদেশ সাংস্কৃতিকভাবে খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। শুধুমাত্র ভারতেই সাংস্কৃতিক যে পরিমাণ বৈচিত্র্য দেখা যায়, সেটি অনেক ক্ষেত্রে একটি মহাদেশের বৈচিত্র্যতার চেয়েও বেশি! এমনকি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানেও বৈচিত্র্যতার কমতি নেই। এছাড়াও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ভাষা, ধর্ম, বর্ণের বৈচিত্র্যতা খুবই উচ্চ। যেটি এশিয়া মহাদেশকে পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা করে থাকে।
তবে, জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলে জীবনমান খুব একটা উন্নত নয়। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য বাদে এদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ বেশ কম। ফলে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের সংখ্যাও কম এই মহাদেশে। কিন্তু এদিককার জলবায়ুর অবস্থা বেশ সহিষ্ণু হওয়ায়, জীবনধারণ অন্যান্য মহাদেশ থেকে অনেকটাই সহজ।
এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ৪৯টি
- আয়তন: ৪,৪৫,৭৯,০০০ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৪,৫৬০,৬৬৭,১০৮ জন (২০১৮)
- পৃথিবীর ছাদ হিসেবে খ্যাত: পামির মালভূমি
- দীর্ঘতম নদী: ইয়াংসিকিয়াং (চীন)
- সর্বশেষ স্বাধীন রাষ্ট্র: পূর্ব তিমুর
- উচ্চতম স্থান: মাউন্ট এভারেস্ট (বিশ্বের উচ্চতম পর্বত)
- নিম্নতম স্থান: মৃত সাগর

আফ্রিকা মহাদেশ
আফ্রিকা মহাদেশ আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। তবে, দেশের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ। আফ্রিকা মহাদেশের অনেকটা অংশ জুড়েই মরুভূমি বিদ্যমান। এমনকি পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা এই আফ্রিকাতেই অবস্থিত। আফ্রিকার প্রায় মাঝ বরাবর নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে।
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। এই মহাদেশ উত্তর-পূর্ব কোনায় আফ্রিকা সিনাই উপদ্বীপের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত। আফ্রিকা মহাদেশের চারিদিকে চারটি মহাদেশ বিস্তৃত। এর উত্তরে ইউরোপ, পশ্চিমে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং পূর্বে এশিয়া।
আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যময় অঞ্চল বললে ভুল হবে না। কেননা স্বর্ণ, তেল, গ্যাস থেকে শুরু করে নানান প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল পরিমাণ ভান্ডার আফ্রিকাতেই রয়েছে। সে বিবেচনায় আফ্রিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মহাদেশ বলা যেতেই পারে।
সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনায় আফ্রিকা মহাদেশও খুবই বিচিত্র। শত শত ভাষার ব্যাবহার, অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির, ধর্ম, বর্ণ এ মহাদেশকে করেছে রঙিন। এমনকি এ অঞ্চলে এশিয়দের মত অনেক অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আনাগোনাও দেখা যায়। যাদের প্রত্যেকের রয়েছে নানান ভাষা ও সংস্কৃতি। তবে, অনেক অনেক ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এ মহাদেশের মানুষকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, ভূ-রাজনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন।
আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ৫৪টি
- আয়তন: ৩,০২,২১,৫৩২ কিমি২
- জনসংখ্যা: ১,২৭৫,৯২০,৯৭২ জন (২০১১)
- আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশ বিভক্ত করে: জিব্রাল্টার প্রণালী
- পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি: সাহারা
- ‘কেপ অব গুড হোপ’ বা ‘উত্তমাশা অন্তরীপ’ অবস্থিত: দক্ষিণ আফ্রিকায়
- উচ্চতম স্থান: কিলিমানজারো
- নিম্নতম স্থান: আসাল হ্রদ

ইউরোপ মহাদেশ
ইউরোপ হলো পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত একটি মহাদেশ। এটি বৃহত্তর ইউরেশিয়া অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমাংশ। এই মহাদেশ সরাসরিভাবে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ।
বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে (বিশেষত ১৫ শতকের শুরু থেকে), ইউরোপ মহাদেশের গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা সেই সহস্রাব্দে ইউরোপ তাদের উপনিবেশ তথা সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের অনেকটা অংশ দখল করতে সক্ষম হয়। ফলে, এখনও পুরো পৃথিবীতেই ইউরোপীয়দের বিশেষত ব্রিটিশদের সংস্কৃতির ছাপ পাওয়া যায়।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ একত্রে যুক্ত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে, সে দেশগুলোর মধ্যে কোন রাষ্ট্রীয় সীমারেখা কেন্দ্রিক বাধা নেই। ইউনিয়নের সকল দেশেই ভিসা ব্যতীত ভ্রমণ করা যায়। পাশাপাশি, ইউনিয়নের সকল দেশ একটি অভিন্ন মুদ্রা ব্যবহার করে যা ইউরো নামে পরিচিত। ফলে, দেশগুলোর মধ্যে খুব সহজেই ভ্রমণ ও বাণিজ্য করা সম্ভব হচ্ছে।
আগে ইউনাইটেড কিংডম তথা যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে থাকলেও, কয়েক বছর আগে তারা বের হয়ে আসে এ ইউনিয়ন থেকে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে ব্রেক্সিট নামে পরিচিত।
ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ৪৪টি
- আয়তন: ১,০১,৮০,০০০ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৭৪২,৪৫২,০০০ জন (২০১৩)
- বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ: গ্রিনল্যান্ড (মালিকানা ডেনমার্কের; তবে দ্বীপটি ভৌগোলিক দিক থেকে উত্তর আমেরিকার মধ্যে)
- দীর্ঘতম নদী: ভলগা
- দীর্ঘতম পর্বতমালা: আল্পস পর্বতমালা
- সম্মেলনের শহর: জেনেভা
- উচ্চতম স্থান: এলব্রুস পর্বত
- নিম্নতম স্থান: কাস্পিয়ান সাগর
উত্তর আমেরিকা মহাদেশ
উত্তর আমেরিকা মহাদেশ হলো আয়তনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও চতুর্থ জনবহুল মহাদেশ। তবে, দেশের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। অনেক ক্ষেত্রে একে আমেরিকা মহাদেশের একটি উপমহাদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাদেশটির উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় সাগর অবস্থিত।
উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ কানাডা। তার পরপরই প্রায় কাছাকাছি আয়তনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্র (যাকে সচরাচর আমেরিকা বলে সম্বোধন করা হয়)। এটি একাধারে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তিও। আমেরিকা শব্দটি এসেছে ইতালীয় পরিব্রাজক আমিরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে। ওনার নামে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয় দ্য আমেরিকাস। যদিও এ নামকরণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
উত্তর অঞ্চলে অবস্থানের কারণে এ অংশকে অনেকটা বরফের রাজ্য বললে ভুল হবে না। তবে, সব অঞ্চল এমন তেমনটা নয়। উত্তর আমেরিকায় মরুময় অঞ্চলও কিন্তু আছে! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত, উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা নামক দেশ দুটিতে যৌথভাবে অবস্থিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সর্বশেষ বরফ যুগের সময় বেরিং ভূসেতু অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম মানব বসতি শুরু হয়। তবে, বর্তমান অধিবাসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিন্যাসে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক, আদিবাসী আমেরিকান, আফ্রিকীয় দাস ও তাদের বংশধরদের প্রভাব বিদ্যমান। কারণ একটা লম্বা সময় ধরে মহাদেশটিতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে অধিকাংশ উত্তর আমেরিকার অধিবাসীরা মূলত ইংরেজি, স্পেনীয় ও ফরাসি ভাষায় কথা বলে। পাশাপাশি সেখানকার চলমান সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলি সাধারণত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। এখানে আমেরিকার আদিম অধিবাসী তথা রেড ইন্ডিয়ানদের পরিমাণ অনেক কম।
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ২৩টি
- আয়তন: ২,৪৭,০৯,০০০ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৫৬৫,২৬৫,০০০ জন (২০১৩)
- উত্তর আমেরিকা ও এশিয়াকে পৃথক করে: বেরিং প্রণালী
- উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা বিচ্ছিন্নকারী প্রণালী: পানামা খাল
- পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ: গ্রিনল্যান্ড (তবে দ্বীপটি রাজনৈতিক দিক থেকে ইউরোপের একটি অংশ)
- নায়াগ্রা জলপ্ৰপাত অবস্থিত: যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়
- বৃহত্তম হ্রদ: সুপিরিয়র হ্রদ
- উচ্চতম স্থান: দেনালি
- নিম্নতম স্থান: মৃত উপত্যকা

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ হলো আয়তনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও চতুর্থ জনবহুল মহাদেশ। এটি মোট স্থলভাগের ১২% নিয়ে গঠিত। তবে, দেশের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর পশ্চিম ও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। দক্ষিণ আমেরিকা মূলত উত্তর আমেরিকার নিচেই অবস্থিত। অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে একত্রে আমেরিকাস ডাকা হয়।
পাশাপাশি হওয়া সত্ত্বেও, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি, ভাষায় অনেক ভিন্নতা। তবে, আমেরিকার আদিম অধিবাসী তথা রেড ইন্ডিয়ানদের এই অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এই অঞ্চল অনেকটা আদিবাসীদের দ্বারাই পরিপূর্ণ। এখানে তারা হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। এদের অনেকে উত্তর আমেরিকার দিকেও বসবাস করে। কিন্তু এই মহাদেশেই বেশি।
এ মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট অ্যামাজন। অ্যামাজনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। এটি এতটাই বড় যে, এটি শুধু ব্রাজিল নয় বরং আরও ৭টি দেশে (যেমন: বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, গুয়েনা, সুরিয়ানামে) বিস্তৃত। অ্যামাজনের জীববৈচিত্র্যও অনেক উচ্চ।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ১২টি
- আয়তন: ১,৭৮,৪০,০০০ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৪২৩,৫৮১,০৭৮ জন
- পৃথিবীর সরু রাষ্ট্র: চিলি।
- পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা: আন্দিজ
- বিশ্বের উচ্চতম হ্রদ: টিটিকাকা, বলিভিয়া
- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট: অ্যামাজন
- চির বসন্তের দেশ: ইকুয়েডর
- উচ্চতম স্থান: অ্যাকনকাগুয়া পর্বত
- নিম্নতম স্থান: লাগুনা দেন কার্বন

ওশেনিয়া মহাদেশ
ওশেনিয়া মহাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ ও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম মহাদেশ। তবে, দেশের সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। অনেক ক্ষেত্রে এই মহাদেশকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সঠিক হিসেবে বিবেচ্য নয়। অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু অঞ্চল নিয়ে ওশেনিয়া মহাদেশ গঠিত। ওই বাড়তি দ্বীপ অংশেই এ মহাদেশের সবচেয়ে বেশি দেশ রয়েছে।
মূলত সমুদ্র ঘেরা অঞ্চল হওয়ায় এ মহাদেশের এরূপ নামকরন। এর মূল ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অস্ট্রেলিয়া দেশটি অবস্থিত। অর্থাৎ এ মহাদেশের একটি বড় অংশই হলো অস্ট্রেলিয়া নামক দেশটি। অস্ট্রেলিয়া এখানকার বৃহৎ দেশ হলেও জনসংখ্যা অনেক কম। এমনকি এর বেশিরভাগ অধিবাসী উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। ফলে অস্ট্রেলিয়া দেশটির একটি বড় অংশ ফাঁকাই থাকে।
ওশেনিয়া মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ১৪টি
- আয়তন: ৮৫,২৫,৯৮৯ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৩৬,৬৫৯,০০০ জন (২০১০)
- অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের বলা হয়: অ্যাবরিজিন
- গ্রেট বেরিয়ার রীফ অবস্থি; প্রশান্ত মহাসাগরে
- দীর্ঘতম নদী: মারে ডার্লিং
- উচ্চতম পর্বত: পুনাক জায়া
- উচ্চতম স্থান: পুঞ্চাক জায়া
- নিম্নতম স্থান: আয়ার হ্রদ

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ হলো আয়তনে পঞ্চম বৃহত্তম ও জনসংখ্যায় সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশ । অ্যান্টার্কটিক সার্কেল প্রায় সম্পূর্ণ দক্ষিণে অবস্থিত এবং দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। অ্যান্টার্কটিকা নামটি প্রকৃতপক্ষে গ্রিক যৌগিক শব্দ আন্তার্কতিকে শব্দের রোমান রূপ। পাশাপাশি, এই মহাদেশে কোন দেশ নেই।
বরফে ঢাকা হওয়ায় এই মহাদেশ অনেকটা জনমানবহীন। বিভিন্ন দেশের ১০০০ – ৫০০০ বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিকায় বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। এটি একটি চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের কোন স্থায়ী অধিবাসী নেই। কারণ এর আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল। ফলে, মানুষের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা খুবই কঠিন কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে একদমই অসম্ভব। সেজন্য সেখানে রাষ্ট্র গঠন কিংবা স্থায়ী বসতি স্থাপন করা সম্ভব নয়।
মজার ব্যাপার হলো, ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে এ মহাদেশকে দেখেছে এমন মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ এখানে প্রাচীন আমলে কোন মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা শূন্য বলাই যায়। তবে, এরকম একটি অঞ্চল যে আছে, সেটা নিয়ে প্রাচীন কাল থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। টলেমি মনে করতেন যে, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা নিয়ে গঠিত তৎকালীন যুগে পরিচিত পৃথিবীর ভূমিসমষ্টির সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এ মহাদেশ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এবং এ ধারনাই সঠিক হয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের বিভিন্ন তথ্যাদি
- দেশের সংখ্যা: ০টি
- আয়তন: ১,৪২,০০,০০০ কিমি২
- জনসংখ্যা: ৫০০০ জন
- বিশেষত্ব: বরফাবৃত মহাদেশ
- সক্রিয় আগ্নেয়গিরি: মাউন্ট ইরেবাস
- উচ্চতম পর্বত: ভিনসন ম্যাসিফ
- উচ্চতম স্থান: পুঞ্চাক জায়া
- নিম্নতম স্থান: আয়ার হ্রদ

পৃথিবীর উচ্চতম স্থান
মহাদেশভিত্তিক পৃথিবীর উচ্চতম স্থানগুলোর তালিকা ছক আকারে দেয়া হলো:
মহাদেশ | উচ্চতম স্থান | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (মিটার) | দেশ বা অঞ্চল |
---|---|---|---|
এশিয়া | মাউন্ট এভারেস্ট | ৮,৮৪৮ | চীন ও নেপাল |
আফ্রিকা | কিলিমানজারো | ৫,৮৯৫ | তানজানিয়া |
ইউরোপ | এলব্রুস পর্বত | ৫,৬৪২ | রাশিয়া |
উত্তর আমেরিকা | দেনালি | ৬,১৯৮ | যুক্তরাষ্ট্র |
দক্ষিণ আমেরিকা | অ্যাকনকাগুয়া পর্বত | ৬,৯৬০ | আর্জেন্টিনা |
অ্যান্টার্কটিকা | ভিনসন স্তূপপর্বত | ৪,৮২০ | (নেই) |
ওশেনিয়া | পুঞ্চাক জায়া | ৪,৮৮৪ | ইন্দোনেশিয়া (পাপুয়া) |
পৃথিবীর নিম্নতম স্থান
মহাদেশভিত্তিক পৃথিবীর উচ্চতম স্থানগুলোর তালিকা ছক আকারে দেয়া হলো:
মহাদেশ | নিম্নতম স্থান | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (মিটার) | দেশ বা অঞ্চল |
---|---|---|---|
এশিয়া | মৃত সাগর | -৪২৭ | ফিলিস্তিন ও জর্দান |
আফ্রিকা | আসাল হ্রদ | -১৫৫ | জিবুতি |
ইউরোপ | কাস্পিয়ান সাগর | -২৮ | রাশিয়া |
উত্তর আমেরিকা | মৃত উপত্যকা | -৮৬ | যুক্তরাষ্ট্র |
দক্ষিণ আমেরিকা | লাগুনা দেন কার্বন | -১০৫ | আর্জেন্টিনা |
অ্যান্টার্কটিকা | ভেস্টফোল্ড পর্বত | -৫০ | (নেই) |
ওশেনিয়া | আয়ার হ্রদ | -১৫ | অস্ট্রেলিয়া |
শেষ কথা
এই ছিল মহাদেশ নিয়ে আলোচনা। আশা করছি, পুরো আর্টিকল থেকে মহাদেশ কী কিংবা মহাদেশ কয়টি ও কি কি? এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। পাশাপাশি, সবগুলো মহাদেশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকেও এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নে এসব বিষয় বেশ কাজে দেবে।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঘরে বসে Spoken English Course (by Munzereen Shahid)
- Microsoft Word Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Excel Course (by Abtahi Iptesam)
- Microsoft PowerPoint Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle Course
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course (by Tahsan Khan)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন