১৯৬৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কত বছর কেটে গেলো? ৪৯ বছর! তাই না? এত বছর পরও আপনি শুনলেন মানুষ চাঁদেই যায়নি। কেমন লাগবে তবে?
সব করা হয়েছে নেভাডা নামক অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এরিয়া ফিফটি ওয়ানের বিস্তীর্ণ মরুভূমির প্রান্তরে। কঠিন সামরিক প্রহরায় চাঁদে পা রাখার নাটক মঞ্চস্থ হয় সেখানে এবং সেটিই বিশ্বাস করেন পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ! আপনি তাহলে কোনটা বিশ্বাস করবেন? এত বড় সাফল্য কোন চক্রান্তের কষাঘাতে আহত হলো? আর সত্যিই মানুষ চাঁদে গিয়েছিল কি না তারই বা প্রমাণ কী? আমি কোন থিওরীর পক্ষে? চাঁদে গিয়েছিল নাকি যায়নি? তাহলে আপনার বুঝার সুবিধার্থে এই কন্সপিরেসী থিওরীর সমাধান হতে যাচ্ছে কয়েকটি পর্বে ভাগ হয়ে। আর মানুষ সত্যিই চাঁদে গিয়েছিল কিনা তার উত্তর পেতে সবগুলো পর্বের উপর চোখ রাখতে হবে, নাহলে ধোঁয়াশার মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলা স্বাভাবিক।
আচ্ছা আমাকে প্রশ্ন করুন তো আমি কেন এত বড় একটি অভিযানের সত্য মিথ্যা যাচাইয়ে নেমেছি হঠাৎ? উত্তর দিচ্ছি কিছু অপ্রিয় সত্য তুলে ধরে:
এখন পর্যন্ত যতগুলো কন্সপিরেসী থিওরী বেঁচে আছে তার মধ্যে ফেইক মুন ল্যান্ডিং অন্যতম। ব্যাপারটা একটু হাস্যকর লাগলেও অবিশ্বাসীরা কঠিন কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে মেরেছিলেন বছরের পর বছর যার কিছু কিছু উত্তরের জন্য ৪০ বছর সময়ও অপেক্ষা করতে হয়েছে।
১৯৭৬ সালের ৩ জুন। বিল কইসিং রীতিমত বিখ্যাত বনে যান তাঁর সেই সময়ের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বই : We Never Went to the Moon: America’s Billion Dollar Swindle!-প্রকাশের মাধ্যমে।
এটি কিন্তু খুবই স্বাভাবিক যে যখন দেখছেন আপনিসহ সকলেই একটি সত্য জেনে দিন পার করছেন কিন্তু হঠাৎ এমন একটি বই বের হলো যা আপনার এতদিনের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে, আপনি সেই বইয়ের প্রতি আকর্ষিত হবেন। শুধু আপনি না, আমিসহ পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষের নজর সেই বইয়ের উপরই থাকবে যা একটি অতি সাধারণ সাইকোলজি। বিল কইসিংয়ের সেই বইটি একইভাবে কন্সপিরেসী থিওরীকে বেশ শক্তিশালী করেছিল।
তবে তার আগে আরও কিছু ঘটনা ঘটে যায়। যেমন ১৯৯৪ সালে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের একটি জরিপে দেখা যায় শতকরা ৯ ভাগ মানুষ চাঁদে পা রাখার ঘটনাটি বিশ্বাস করেন না। ১৯৯৯ সালে গেলাপের একটি জরিপে অবিশ্বাসীর সংখ্যা আরও শতকরা একভাগ বেড়ে হয় ৬ ভাগ। তবে ৯৫’ সালের সিএনএন কিংবা টাইমসের জরিপেও একই সংখ্যক অবিশ্বাসীদের ভোট দেখা যায়। এবার আসা যাক রাশিয়া এবং ব্রিটেনের পালা।
রাশিয়াতে ২০০০ সালে Public Opinion Foundation দ্বারা একটি জরিপের আয়োজন করা হয় যেখানে ২৮ ভাগ রাশিয়ানই নাসার চাঁদে যাওয়ার ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছেন, তৎকালীন শীতল যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশে পাড়ি দেয়ার ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নাটক মঞ্চস্থ করে পৃথিবীবাসীকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছিল বলে রাশিয়ানদের বিশ্বাস ছিল। আবার ২০০৯ সালে ব্রিটেনের চালানো একটি জরিপে দেখা যায় ২৫% যুক্তরাজ্যবাসী চন্দ্রাভিযানে বিশ্বাস করেন না, আর ২৫% মানুষ এই বিষয়ে ‘জানি না’ মত পোষণ করেন। তার মানে দেখা যায় সর্বমোট ৫০ ভাগ মানুষ চন্দ্রাভিযান নিয়ে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ দু’টোই পোষণ করেন।
এছাড়াও লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকাতেও জরিপের মাধ্যমে উঠে আসে যে অর্ধেক সংখ্যকই চন্দ্রাভিযানের সত্যতা নিয়ে বেশ সন্দিহান। কারণ? কারণ কিছু প্রশ্ন এবং একটু সাইকোলজির খেলা।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Video Editing with Premiere Pro
চলুন প্রথমে একটু জেনে নিই যে মানুষ কেন কন্সপিরেসী থিওরীতে বিশ্বাস করে:
গবেষকরা কন্সপিরেসী থিওরীতে বিশ্বাসের কারণকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন। যেমন-
১. বোঝার এবং নিশ্চয়তা পাবার প্রবণতা,
২. নিরাপত্তা এবং কন্ট্রোলের মধ্যে থাকার প্রবণতা,
৩. একটি পজিটিভ চেতনার মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করা।
ভবিষ্যতে উপরোক্ত তিনটি ক্যাটাগরির সবগুলোই বিস্তারিত আলোচনা হবে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনিও কি সন্দিহান যে মানুষ সত্যিই চাঁদে গিয়েছিল কিনা? উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ উপরের তথ্য পড়ার পর মনে একটু সন্দেহ জেগেছে’, তাহলে আমি বলবো আপনি প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়েছেন যেখানে আপনি আগে থেকে সব জেনেও শুধু নিশ্চয়তা পাবার জন্য আমার লেখার উপরে নির্ভরশীল হয়ে গেলেন! তাই না? তাহলে ভাবুন তো ৭৬ পরবর্তী সময়গুলো থেকে যখন একের পর এক মোটা মোটা বই রিলিজ পেতে থাকে, তখন সরল মনের মানুষদের পক্ষে সেগুলো এড়িয়ে গিয়ে চন্দ্রাভিযানে বিশ্বাস করাটা কঠিন ছিল কি না? হ্যাঁ অনেক কঠিনই ছিল তৎকালীন সময়ে। তাই যত দিন পার হতে লাগলো, জরিপে চন্দ্রাভিযানে অবিশ্বাসীর সংখ্যাও বাড়তে লাগলো!
বিল কইসিংয়ের বইটিতে এমন এমন সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিল যা দেখলে আপনি নিজেও সন্দেহ করতে শুরু করবেন চন্দ্রাভিযানের ব্যাপারে। বইটি দাবি করে যে চাঁদে মানুষের সফল অবতরণ এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় 0.0017% এবং ইউএসএসআর দ্বারা নজরদারি না থাকার দরুন নাসার পক্ষে চাঁদে যাওয়ার নাটক বানানো অসম্ভব ছিল না। এগুলোই ছিল বিল কইসিং-এর দাবি।
১৯৭৮ সালে একটি মুভি রিলিজ পায় যার নাম ‘কেপ্রিকন-১’। অ্যাপোলো ১১ মিশনে নভোচারীরা যেভাবে যেসকল ভিডিও পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, ঠিক সেই মুভিতেও একই দৃশ্য দেখানো হয়। কিন্তু মুভিটি ছিল মাত্র ৪ মিলিয়ন বাজেটের যেখানে মুভির পরিচালক অনেকটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙিতেই বলেছিলেন ‘আমরা ৪ মিলিয়ন বাজেট দিয়েই এরকম অ্যাপোলো মিশনের মুভি তৈরি করতে পারতাম, ৪০ বিলিয়নের দরকার হতো না’।
এখন তো বুঝতে পেরেছেন যে এই কন্সপিরেসী থিওরীর সমাধান কতটুকু তাৎপর্য পাচ্ছে? পৃথিবীর মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখার গৌরবের মত কি আর কিছু হতে পারে? কিন্তু সেখানেই আজ এত সন্দেহ, এত প্রশ্ন, এত হাসি তামাশা আর এত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা, সেখানে আপনি গর্ব করার আগে থেমে যেতে পারেন এবং এটিই স্বাভাবিক। আমি আজ থেকে এই কন্সপিরেসী থিওরীকে একটি সমাধানে নিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করবো যেখানে আসল সত্য উন্মোচিত হবে।
১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। Saturn-V রকেট ফ্লোরিডার আকাশ চিড়ে অভিকর্ষের মায়া কাটিয়ে ছুটে চললো পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের দিকে। রকেটের নাকের ডগায় কলাম্বিয়া মাদারশিপ এবং মাদারশিপের ভেতর সোনার পাতে মোড়ানো অ্যাপোলো-১১। ভেতরে তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন এবং মাইক কলিন্স।
তাহলে প্রথমে একটি বিষয় বলে রাখি, কন্সপিরেসী থিওরীস্টরা প্রথমে যে কারণে মহাকাশ ভ্রমণ কিংবা চন্দ্রভ্রমণে বিশ্বাস করতে চায় না তা হলো পৃথিবীর চারদিকে রহস্যময় ভ্যান অ্যালেন বেল্ট-এর বাঁধা। যা একটি ঢালস্বরুপ কাজ করে। এই ঢালটি হলো পৃথিবীকে ঘিরে নেস্টেড ডোনাট আকৃতির দুটি রিং-এর মত, এরা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০,০০০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ঢালের ভিতরের অংশ প্রচুর শক্তিশালী প্রোটনে পরিপূর্ণ, আর বাইরের অংশ প্রচণ্ড শক্তিশালী ইলেক্ট্রনে পরিপূর্ণ। যা মহাজগৎ থেকে আসা তীব্র গতির খুনি ইলেক্ট্রনসমূহ থেকে পৃথিবীর নভোমন্ডলকে রক্ষা করে। চাঁদে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে যারা মনে করেন তাদের প্রথম উপস্থাপিত কারণ হচ্ছে এই ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন! এটি পার করে মানুষ কোনোভাবেই যেতে পারবে না।
আসুন তবে আমরা আজ এই রেডিয়েশন পার করে মানুষের পক্ষে চাঁদে যাওয়া সত্যিই সম্ভব ছিল কিনা তা বুঝার চেষ্টা করি।
আরো পড়ুন: সপ্তাশ্চর্যের সাত সতেরো: সাগরতীরের সাতটি বিস্ময় (পর্ব-৫)
ভ্যান অ্যালেন বেল্ট এবং নভোচারীদের মোকাবেলা
অ্যাপোলো মহাকাশচারীদের মতো আসন্ন যে কোনো মহাজাগতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই বেল্ট অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে হবে কারণ চাঁদের কক্ষপথটি পৃথিবীর দ্রুততম লাইন-এর ভ্রমণ বরাবর অবস্থিত। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের দূরত্ব ~60 Re বা ~60 Earth Radii, অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ৬০গুণ।
সেক্ষেত্রে মহাকাশযানের গতি প্রায় ২৫ হাজার কিমি/ঘণ্টা হতে হবে। অ্যাপোলো ১১-এর মতো অন্য যে কোনো মহাকাশযানও যদি নির্দেশিত পথ (কালো বার) বরাবর ভ্রমণ করে তবে তাকে বাকি নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল অঞ্চল ভেদ করে যেতে হবে। কত মিনিট সময় এটি নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল অঞ্চলে ব্যয় করবে? একটু অপেক্ষা করুন হিসেব করে বের করা হবে।
প্রথমে একটু কন্সপিরেসী থিওরীস্টরা কী বলতে চাইছে তা আগে বুঝে নেই। অভিযোগটি এমন যে মানুষ এই ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের বাইরে বের হতে পারবে না কারণ তীব্র রেডিয়েশনের প্রভাবে সাথে সাথে দেহ ভস্মীভূত হবে। তাহলে আমাদের হিসেব করে বের করতে হবে যে কতটুকু রেডিয়েশন আমাদের নভোচারীরা দেহে বহন করেছিল এবং সেই বেল্ট অঞ্চলেই বা কতক্ষণ ছিল। আর সহনীয় মাত্রাই বা কতটুকু।
ভ্যান অ্যালেন বেল্টকে দু’টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। ভেতরের বেল্ট এবং বাইরের বেল্ট। আবার তার একটি অস্থায়ী তৃতীয় বেল্টও রয়েছে। ভেতরের বেল্টটি অনেক বেশি বিপজ্জনক! যা অনলস প্রোটন ধারণ করে। আর বাইরেটি কম বিপজ্জনক কারণ তা কম শক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন (বিটা কণা)। ধারণ করে। অ্যাপোলো মহাকাশযানটি মিনিটের মধ্যেই ভেতরের বেল্টটি অতিক্রম করে ফেলে এবং প্রায় ১ ঘণ্টার মতো সময় বাইরের বেল্টে ব্যয় করে। মহাকাশযানের বডিটি অ্যালুমিনিয়ামের আবরণ দ্বারা তৈরি হয়েছিল যার দ্বারা আয়নায়ন বিকিরণ থেকে মহাকাশচারীকে রক্ষা করা কোনো ব্যাপারই ছিল না। তাহলে ভ্যান অ্যালেন বেল্ট সম্পর্কে একটু ধারণা আমরা পেয়েছি? তাহলে সামনে এগোনো যাক!
US Occupation Safety and Health Agency (OSHA) এর তথ্য অনুযায়ী মানবদেহ যদি এক ঘণ্টায় প্রায় 300 rads-এর সংস্পর্শে থাকে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তাহলে ৩০০ রেডিয়ানসের মধ্য দিয়ে অ্যাপোলোর নভোচারীরা গিয়েছিল কিনা তা বের করে দেখতে হবে।
চলুন একটু গণিতের সাহায্য নিই।
প্রথমে বের করি অ্যাপোলো নভোচারীদের ঠিক কত সময় লেগেছিল ভ্যান অ্যালেন বেল্ট অঞ্চলটি পার হতে:
Blue: 1.8 Re x (6378 km/Re) x (1 hour/25,000 km) x (60 minutes/1 hour) = 27.6 minutes.
Yellow: (1.4 x 6378) /25,000 x 60 = 6.1 minutes.
Orange: (1.0 x 6378) / 25,000 x 60 = 15.3 minutes.
Green: (0.25 x 6378)/25,000 x 60 = 3.8 minutes.
Red: (এই অঞ্চলটি নভোযানের সংস্পর্শের বাইরে ছিল) =0 minutes.
তাহলে যোগ করি: (27.6+6.1+15.3+3.8+0) = 52.8 minutes.
মানে ৫২ মিনিট ৮ সেকেন্ড! অথবা একে এভাবেও বলা যায় ০.৮৮ ঘন্টা
সময় আমরা বের করে ফেললাম, এখন পালা এইটুকু সময়ে নভোচারীরা ঠিক কতটুকু রেডিয়েশনের সংস্পর্শে ছিল তা বের করা। চলুন হিসেব করি:
Blue: 27.6 minutes x ( 60 sec/ 1 minute) x (0.0001 Rads/sec) = 0.17 rads
Yellow: 6.1 minutes x ( 60 sec/minute x 0.005 rads/sec) = 1.83 rads
Orange: 15.3 minutes x (60 sec/minute x 0.01 rads/sec) = 9.18 rads
Green: 3.8 minutes x (60 sec/minute x 0.001 rads/sec) = 0.23 rads
52.8 minutes সময়ে সর্বমোট প্রাপ্ত রেডিয়েশন মাত্রা:
(0.17+1.83+9.18+0.23) rads
= 11.4 rads!
মাত্র 11.4 rads?
অর্থাৎ এক ঘন্টা বা 60 minutes এ সেটি দাঁড়ায় 13 rads!
তার মানে 300 rads এর চেয়ে অনেক এবং অনেক কম মাত্রার রেডিয়েশনের সংস্পর্শে ছিল নভোচারীরা যাতে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কিংবা শারীরিক অবনতির কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। নাসার বিবৃতিতেও এটি পরিষ্কার করে বলা হয় যে ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট নিয়ে এতদিন যা করা হয়েছিল তা সবই মিথ্যাচার এবং তা হিসেব কষেই প্রমাণিত!
অর্থাৎ ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট পার হয়ে অ্যাপোলো নভোচারীদের চাঁদে যাওয়া অসম্ভব- যুক্তিটি একদমই খাতা কলমে ভিত্তিহীন! কিন্তু যতটুকুই রেডিয়েশন নভোচারীদের দেহে বিদ্যমান ছিল তা কি একটুও ক্ষতি করেনি? হ্যাঁ অবশ্যই করেছে! ৯টি অ্যাপোলো মিশনের সর্বমোট ৩৬ জন ক্রুদের মধ্যে ৩৩ জনেরই খুব দ্রুত ছানি পড়েছিলো।
ভ্যান অ্যালেন বেল্ট নিয়ে এই কন্সপিরেসী থিওরীটির সমাধান হয়ে গেলো। তবুও আরও বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন : https://youtu.be/QWTvouzS3Mo
ভ্যান অ্যালেন বেল্ট তো পার হলাম, এখন চাঁদে নামার পালা। তার আগ পর্যন্ত অবশ্য কন্সপিরেসী থিওরীস্টরা কোনো অভিযোগ তোলেনি। তবে অভিযোগ তোলা শুরু হয়ে ল্যান্ডিংয়ের পর থেকে।
তাই আজকের পর্বে শেষ আরো একটি অভিযোগের যুক্তিখন্ডন করছি আর তা হলো :
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Facebook Marketing
ল্যান্ডিং এর সময় কেন নভোযান থেকে কোনো স্ফুলিঙ্গ বের হয়নি এবং মাটিতেও কোনো গর্ত না থাকার কারণ কি?
কার্টুনে আপনি আমি সারাজীবন যতো রকেট দেখেছি তা সবই দ্রুতগতিতে স্ফুলিঙ্গ বের করে হয় উৎক্ষেপিত হয়েছে আর নয়তো ভূমিতে নেমেছে। তা পৃথিবীতেই হোক, কিংবা চাঁদ, মঙ্গল এবং শনিতেই হোক। রকেট বা মহাকাশযান মানেই আগুন বের করে দ্রুতগতিতে উঠানামা, এই পর্যন্তই আমরা সকালে জ্ঞান রাখি। কিন্তু এই কন্সপিরেসী থিওরীকে সমাধান করতে হলে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের একদম বেসিক ধারণাগুলো রাখলেই চলবে।
নভোযানটি যখন চাঁদের মাটিতে স্পর্শ করতে প্রস্তুত, তখন তা ধীর গতিতে স্ফুলিঙ্গ বাইরে বহিষ্কার করে। ফলে এটি আস্তে আস্তে নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং সাইটে নামতে থাকে। সুতরাং কেন তবে চন্দ্রপৃষ্ঠে কোন গর্ত হলো না? উত্তর দিচ্ছি।
নভোযানটির একটি শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন (যা ডিসেন্ট ইঞ্জিন নামে পরিচিত) ছিল, এটি প্রায় 10,500 পাউন্ড ঘনত্বের স্ফুলিঙ্গ বহিষ্করণে সক্ষম। দেখা যাচ্ছে যে তাদের অবতরণের জন্য মাত্র 3,000 পাউন্ড প্রয়োজন। সুতরাং পুরোপুরি শক্তি প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন ছিল না। চাঁদে যেহেতু কোন বায়ু নেই সেহেতু কোন বায়ুচাপও নেই, তাই না? যার ফলে নিষ্কাশন করা গ্যাস সরাসরি একটি ঘনীভূত এলাকার দিকে চলে যেতে পারেনি।
যদি তা ঘটতো তবে সেখানে একটি গভীর গর্তের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বায়ুচাপহীন পরিবেশে সরাসরি নিষ্কাশনের পরিবর্তে এটি একটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চারদিক ছড়িয়ে যেতে যেতে মাটিতে নামতে শুরু করে। যার ফলে এটি মাটিতে তেমন ঘনত্বের চাপ সৃষ্টি করেনি বলে গর্তও সৃষ্টি হয়নি। যদি আপনি পৃষ্ঠের চাপ গণনা করেন তবে এটি প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে মাত্র 1.5 পাউন্ডের চাপ প্রয়োগ করে, আর তা কি মাটিতে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে গর্ত করার মতো যথেষ্ঠ? আবার অ্যাপোলো নভোযানটির ওজনও চাঁদের অভিকর্ষের প্রভাবে অনেক কমে হালকা হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং গর্ত সৃষ্টি হয়নি মানে চন্দ্রাভিযান মিথ্যা তা হাস্যকর বৈকি আর কিছুই না।
ল্যান্ডিং খুবই স্পর্শকাতর একটি অধ্যায়। যেখানে আগে থেকেই নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং সাইট ঠিক করা থাকে এবং সেখানে নামার চেষ্টা করা হয়। আর ল্যান্ডিংয়ের জন্য একটু পাথুরে এলাকাকে গুরুত্ব দেয়া হয়, অ্যাপোলো মিশনগুলোর ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম হয়নি। আবার নিরাপত্তাও এখানে মুখ্য বিষয় কারণ চাঁদের মাটি অনেকটা গানপাউডারের মতো যা পৃথিবীর মাটির চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই অধিক বালি সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবতরণ করতে গেলে অধিক ধূলার কারণে কিংবা গর্ত সৃষ্টির কারণে বড় ধরণের যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দিতে পারতো।
তবুও যদি মনে সন্দেহ থেকে থাকে, দেখে নিতে পারেন এই ভিডিওটি https://m.youtube.com/watch?v=CyH4Zaz3mEE
অর্থাৎ অবতরণের সময় চাঁদে কেন স্ফুলিঙ্গের দরুন কোনো গর্তের সৃষ্টি হয়নি তা নিয়ে হয়তো আর সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং এই কন্সপিরেসী থিওরীর সমাধানও হয়ে গেলো।
তাহলে আজ আমরা এই পর্বে ভ্যান অ্যালেন বেল্ট পার হয়ে সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করতে পেরেছি, অর্থাৎ চাঁদে অবতরণ পর্যন্ত যে দুটি কন্সপিরেসী থিওরী ছিল তা সমাধান হয়ে গেলো। তাহলে এখন একটু নভোযান থেকে নামুন, রোভার নিয়ে চাঁদের পরিবেশটি ঘুরে দেখুন।
ওহ হ্যাঁ, অ্যাপোলো ১৫ মিশনের কমান্ডার ডেভিড স্কট মুনওয়াকের সময় একটি হাতুরী আর কবুতরের পালক নিয়ে গিয়েছিলেন গ্যালিলীওর সূত্রটি প্রমাণ করার জন্য। দ্বিতীয় পর্বের আগ পর্যন্ত আপনিও এমন উদ্ভট কিছু করতে থাকুন। পরের পর্বে আরও কঠিন কিছু অভিযোগের ময়নাতদন্ত করতে হবে। ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
ধন্যবাদ!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন