দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো শুক্রবারের ভোরবেলায়। ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯।
বার্টোশেভস্কির ঘুম ভেঙে গেলো ভোর বেলায়। তখনও বাইরে আলো ফোটেনি, ভিলুন শহর তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। শেভস্কি ঘুমাতে চেষ্টা করলেন, সকালে একটা স্কুলে তার দাওয়াত আছে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ পাওয়ার পর তার এখন অনেক দায়িত্ব, ঘুমানোর সুযোগ নেই। এমন অসময়ে ঘুম ভেঙে গেলেও জোর করেই এখন ঘুমাতে চাইলেন তিনি।
চোখ লেগেও এলো কিছুক্ষণ পর, ঘুমের ঘোরে তিনি শুনতে পেলেন ভারী একটা গুঞ্জন। প্রথমে আধোঘুমে থাকা শেভস্কি বুঝতে না পারলেও আচমকা তার ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ হয়ে ওঠে, তিনি দ্রুত উঠে বসেন বিছানায়, এই সময় প্লেনের শব্দ কেন!
কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাছেপিঠে কোথাও বোমা পড়লো। শেভস্কি বুঝতে পারলেন না হচ্ছেটা কি। তার কুকুর ফ্রোডো ছুটে এসে বিছানার নিচে লুকালো। শেভস্কি বাইরে এলেন, চমকে গেলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে, আকাশ ছেয়ে গেছে বিমানে। হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি, কিছুক্ষণের মধ্যে সাধাসিধে ভিলুন শহর ধংসস্তুপে পরিণত হলো। শুরু হলো ২য় বিশ্বযুদ্ধ।
এই লেখায় আমি তুলে ধরবো ২য় বিশ্বযুদ্ধ-এর আদ্যোপান্ত। আলোচনা করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিলো, যুদ্ধের উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনাবলী। পাশাপাশি আলোচনা করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বে তার প্রভাবগুলো কী ছিলো তা নিয়ে।
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 3 ২য় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/LL-066-Kristen-D.-Burton.jpg)
২য় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়?
২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমনের মধ্য দিয়ে। এই যুদ্ধে অক্ষ শক্তি হিসেবে ছিলো জার্মানি, ইতালি ও জাপান। আর মিত্র শক্তি হিসেবে ছিলো ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভার্সাই চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে জার্মানিকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিলো, কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিলো জার্মান রাষ্ট্র। পরবর্তী সময়ে হিটলার ক্ষমতায় এলে নিজের কূটকৌশলের মধ্য দিয়ে পুনরায় লড়াই করবার প্রস্তুতি নেয়, যা পরবর্তী সময়ে ২য় বিশ্বযুদ্ধ অব্দি গড়ায়। এই বিষয়ে পরের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এত বেশি ছিলো যে, বলা হয়েছিলো এটাই আসলে সকল যুদ্ধের শেষ যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো, তা তো যথেষ্ঠ ছিলোই না, বরং কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে তা আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিলো মাত্র। বেশ কিছু কারণ ছিলো এই যুদ্ধের, এর মধ্যে আছে ভার্সাই চুক্তি, পৃথিবী জুড়ে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা, জার্মানি ও জাপানে গড়ে ওঠা নতুন সমরবাদী মনোভাব, লীগ অফ নেশনসের ব্যার্থতা ইত্যাদি। নিচে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিলো তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ১: ভার্সাই চুক্তি
১৯১৯ সালের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে ভার্সাই চুক্তি সাক্ষরিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির ভার চাপানো হয় জার্মানির কাঁধে, পাশাপাশি বাধ্য করা হয় এই চুক্তিতে জার্মানিকে সাক্ষর করতে। এই চুক্তির ফলে জার্মানির কাছ থেকে ১৩২ বিলিয়ন স্বর্ণমুদ্রা আদায় করে মিত্রপক্ষ। পাশাপাশি জার্মানি বাধ্য হয় অধিভুক্ত বেশ কিছু অঞ্চল অন্যান্য দেশের কাছে নিঃশর্তভাবে হস্তান্তর করতে। এই চুক্তি মোতাবেক জার্মানির সৈন্যসংখ্যা একলাখে সীমিত করা হয়, যুদ্ধ জাহাজগুলো তুলে দেয়া হয় ইংল্যান্ডের হাতে। ৬টি যুদ্ধ জাহাজ, ৩টি ছোট ক্রুজার, ৪টি ডেসট্রয়ার, ১২টী সাবমেরিন- এটুকুতেই জার্মানির সামরিক শক্তি আটকে যায় চুক্তির কাছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ২: অর্থনৈতিক মন্দা
১৯২০-এর দশকের শেষ দিকে সারা পৃথিবী অর্থনৈতিক মহামন্দায় পতিত হয়। ব্যাবসা বাণিজ্য কমে যায়, ব্যংকগুলো দেওলিয়া হতে শুরু করে, বেকারত্ব বাড়তে থাকে। ইতিহাসে একে বলা হয় The Great Depression. এই সুযোগে সারা পৃথিবীর রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগে, মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ফ্যাসিবাদ আর নাৎসিবাদ। এরই ধারাবাহিকতায়, জার্মানিকে আবারো নিজের গৌরব ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতার আসেন হিটলার। তার উগ্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ৩: জার্মানির সমরবাদ
ক্ষমতায় আসার পরপরই হিটলার গোপনে জার্মানির সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে শুরু করেন, শুরু করেন সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি ও অস্ত্র তৈরির মতো ভার্সাই চুক্তি বিরোধী সকল কাজ। মজার ব্যপার হলো, ব্রিটেন আর ফ্রান্স এই বিষয়গুলো জানতো, কিন্তু তারপরেও তারা এই ব্যপারে হস্তক্ষেপ করেনি, কারণ তারা ভেবেছিলো জার্মানি রাশিয়ার কমিউনিজমের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। ১৯৩৬ সালে, হিটলারের আদেশে জার্মান সৈন্যরা রাইনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়ার জার্মানভাষী অঞ্চলে প্রবেশ করে। তবে এই সময়ে ফ্রান্স বা ইতালির যুদ্ধ করার কোন পরিকল্পনা ছিলোনা। ইতালি ও জাপানের সাথে এই বছরই জার্মানির জোট গঠিত হয়, যা পরে অক্ষ শক্তি নামে পরিচিত হয়।
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 4 ২য় বিশ্বযুদ্ধ](https://www.history.com/.image/ar_215:100%2Cc_fill%2Ccs_srgb%2Cg_faces:center%2Cq_auto:good%2Cw_2560/MTk1MTQzMjg1OTYwODc3MjU1/adolf-hitler-gettyimages-119505258.webp)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ৪: চুক্তি ভঙ্গ
১৯৩০-এর দশকে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের রাজনীতিবিদদের মনে হয়ে থাকে যে, জার্মানির সাথে যা হয়েছে সেটা আসলে সঠিক না! ফলে জার্মানি তথা হিটলারের কর্মকান্ড তাদের কাছে সমর্থনযোগ্য বলে মনে হতে শুরু করে, একে বলা হয় Policy of Appeasement. উদাহরন হিসেবে জার্মানির চেকোস্লোভাকিয়া আঞ্চলে প্রবেশের ঘটনাটি বিবেচনা করা যায়। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স জার্মানির চেকোস্লোভাকিয়া অঞ্চলের জার্মানভাষী অংশ দখলে কোন প্রকার বাধা দেয়নি, বরং জার্মানির সাথে চুক্তি করে যে বাকি অঞ্চল যেন জার্মানি দখল না করে। ১৯৩৯ সালের মার্চা জার্মানি এই চুক্তি ভঙ্গ করে এবং এখানেও ব্রিটেন, ফ্রান্স – দুজনই ছিলো নিশ্চুপ। কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বর যখন জার্মান সৈন্য পোল্যান্ড আক্রমণ করে, তখন এই দুই দেশ যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ইউরোপের ভূমিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ৫: লীগ অফ নেশনসের ব্যার্থতা
১৯১৯ সালে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লীগ অফ নেশনসের জন্ম হয়। এই প্রতিষ্ঠানের নীতি ছিলো যে, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র এর সদস্য হবে, নিজেদের মধ্যে কোনো প্রকার কোন্দল হলে তা অস্ত্র নয় বরং আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে। লীগ অফ নেশনসের ধারণাটি দারুণ হলেও অল্প দিনের ব্যবধানে নেমে আসে ব্যার্থতা। সকল রাষ্ট্রের যোগদানের কথা থাকলেও সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি তারা, ছিলো না কোন সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ। ফলে ইথিওপিয়ার ওপর ইতালির কিংবা চীনের মাঞ্চুরিয়ার ওপর জাপানি আগাসনের কোন সুরাহা লীগ অফ নেশনস করতে পারেনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ৬: জাপানের সমরবাদ
১৯৩১ সালে, সারা পৃথিবীর মতো জাপান-ও অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়, জাপানি জনগণের বিশ্বাস হারায় সে দেশের সরকার। তাই, নিজেদেরকে এই অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্ত করতে তারা সামরিক শাসনের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে। নিজ দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের পণ্য উৎপাদনে জাপানের প্রয়োজন ছিলো প্রাকৃতিক সম্পদ। সেই লক্ষ্যে, জাপান চীনের মূল্যবান খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলে আক্রমণ চালায়। স্বাভাবিকভাবেই চীন তখন লীগ অফ নেশনসের কাছে সাহায্য চায়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Spoken English
লীগ অফ নেশনসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়া জাপান তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে, আগ্রাসন চালাতে থাকে চায়না ও কোরিয়ার মাটিতে। জাপান ধীরে ধীরে দক্ষিন পুর্ব এশিয়া, যেমন ভিয়েতনামের দিকেও হাত বাড়ায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। একটা সময় জাপান ভয় পেয়ে যায়, তারা আমেরিকার হস্তক্ষেপ এড়াতে পার্লহারবারে আক্রমণ চালিয়ে বসে। এর মধ্য দিয়ে ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে, এশিয়ায় ২য় বিশ্বযুদ্ধ- এর ঢেউ আছড়ে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন কোন দেশের মধ্যে হয়েছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পক্ষ ছিলো দুইটি- অক্ষশক্তি (Axis Power) এবং মিত্রশক্তি (Allies)। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
-
মিত্রশক্তি
মিত্রশক্তি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্য ছিলো অক্ষশক্তিকে পরাজিত করে শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা। মজার ব্যাপার হলো, প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের কাছে এই ‘শান্তি’ শব্দটির দোত্যনা ছিল আলদা আলাদা। যেমন চার্চিল তথা ব্রিটেনের কাছে শান্তিপূর্ণ বিশ্বের মানে ছিলো জার্মানির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া, যেন তারা আবারো মাথা চাড়া না দিতে পারে। রুজভেল্ট তথা আমেরিকার উদ্দেশ্য ছিলো জার্মানি, ইতালি ও জাপান থেকে ফ্যাসিজমকে সমূলে উৎপাটন করে গণতন্ত্রের বীজ বপণ করা। স্তালিন তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্দেশ্য ছিলো জার্মানিকে গুড়িয়ে দিয়ে ইউরোপে নিজেদের শাসন কায়েম করা। ব্রিটেন, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একত্রে তাদের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছিলো নিজস্ব এই উদ্দেশ্যগুলো হাসিল করবার লক্ষ্যে।
দেশ | তৎকালীন শাসক |
গ্রেট ব্রিটেন | উইনস্টন চার্চিল |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট |
সোভিয়েত ইউনিয়ন | জোসেফ স্তালিন |
চীনা প্রজাতন্ত্র | চিয়াং কাই শেক |
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 5 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/image-2.jpg)
-
অক্ষশক্তি
অক্ষশক্তি জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্ব ও সমাজ ব্যবস্থায় একটি নতুন শৃঙ্খলার প্রবর্তন করা, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করা ও নিজেদের মধ্যে সমৃদ্ধি ও কল্যাণ আনয়ন। জার্মানি, জাপান ও ইতালির এই জোটকে ত্রিশক্তি আঁতাত বলে অভিহিত করা হয়।
দেশ | তৎকালীন শাসক |
জার্মানি | এডলফ হিটলার |
ইতালি | বেনিতো মুসোলিনি |
জাপান | সম্রাট হিরোহিত, হিদেকি তোজো |
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 6 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস](https://preview.redd.it/wrz4phpwvs771.png?width=640&crop=smart&auto=webp&s=786a5b937e5f9a120c0fd5a29848819e5bfde21f)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
এই অংশে আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ১০টি গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা সম্পর্কে জানবো, যা আমাদের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরবে পরিষ্কারভাবে,
তারিখ | ঘটনা | সংক্ষিপ্ত তথ্য |
১ সেপ্টেম্বর,
১৯৩৯ |
জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণ |
|
২৯ ডিসেম্বর,
১৯৪০ |
ব্লিটজ |
|
৭ ডিসেম্বর,
১৯৪১ |
পার্ল হারবোর আক্রমণ |
|
ফেব্রুয়ারি,
১৯৪৩ |
স্তালিনগ্রাদ |
|
৬ জুন,
১৯৪৪ |
ডি-ডে |
|
২৩-২৬ অক্টোবর, ১৯৪৪ | লায়েতি গালফের যুদ্ধ |
|
ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫ | ইয়াল্টা সম্মেলন |
|
৮ মে, ১৯৪৫ | Victory day in Europe |
|
৯ আগস্ট, ১৯৪৫ | নাগাসাকি |
|
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ | জাপানের আত্মসমর্পণ |
|
ফলাফল
৬ জুন ১৯৪৪ সালে মিত্র বাহিনী নরম্যান্ডিতে অবতরণ করে। ১৯৪৪-৪৫ সালে জার্মানির আর্ডেনেস আক্রমণ ব্যর্থ হয়। রেড আর্মিরা খুব দ্রুত সোভিয়েত ইউনিয়নের আওতায় নতুন নতুন ভূখন্ড দখল করতে থাকে। মিত্রবাহিনী দখল করে নেয় বার্লিন শহর। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫-এ প্রতাপশালী হিটলার আত্মহত্যা করে, আর এর পরপরই ৪ মে ইউরোপে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
কিন্তু যুদ্ধ তখনো চলছে এশিয়ার অংশে। আমেরিকার মুহুর্মুহু আক্রমনে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলজুড়ে জাপানি স্থাপনাগুলো ধংস হচ্ছিলো দ্রুত, প্রাণ হারাচ্ছিলো লাখো মানুষ, প্রতিদিন। অবশেষে আমেরিকা ইতিহাসের নৃশংসতম কাজটি করে বসে, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক হামলার মাধ্যমে শেষ করে দেয় জাপানের যুদ্ধ করবার অবশিষ্ট শক্তিটুকু। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে জাপান আত্মসমর্পণ করে, শেষ হয় ইতিহাসের এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত মানুষ মারা যায় সে সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় সংখ্যাটি সাড়ে তিন থেকে ছয় কোটির মধ্যে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানী হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে, অন্তত এমনটাই ধারণা করা হয়। প্রায় ৪২ লক্ষ জার্মান এবং ১৯ লক্ষ জাপানি নাগরিক এই যুদ্ধে প্রাণ হারান।
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 7 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে হয়েছিল](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/Surrender_of_Japan_-_USS_Missouri.jpg)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ হিসেবে ৪টি বিষয়কে তুলে ধরেন ইতিহাসবেত্তাগণ। এগুলো হলো দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় রসদের ঘাটতি, একই সাথে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু হওয়া, এবং সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাব।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
English for Govt. Jobs
যুদ্ধ পরবর্তী প্রভাব
- যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে যেন নতুন করে কোন সংঘাতের সৃষ্টি না হয়, সেই লক্ষ্যে লীগ অফ নেশনসের আদলে নতুন একটি সংগঠনের জন্ম হয়, নাম জাতিসংঘ।
- পাশাপাশি এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্ব নতুন দুই পরাশক্তির জন্ম হয়, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। নতুন বিশ্বে নতুন করে রাজত্ব করবার লক্ষ্যে এই দুই পরাশক্তি নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে প্রতিযোগীতা করতে শুরু করে, ইতিহাসে তা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত।
- যুদ্ধের পর কলোনিয়াল রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে তাদের দখলকৃত ভূমিগুলো ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে উক্ত ভূমিগুলোতে স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। বেশ কিছু দেশ স্বাধীনতা লাভও করে। এর মধ্যে আছে ভারত ও পাকিস্তান।
- এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সারা দুনিয়া জুড়ে কলোনিয়াল শাসনের অবসান ঘটে সত্যি, কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধে বিবাবদমান দুই পরাশক্তি সারা পৃথিবীতে নব্য সাম্রাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠা করে।
- এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ-এর মূল উৎপাটিত হয়
- মোট ১১টি রাষ্ট্র, যুদ্ধের পর সমাজতন্ত্রকে তাদের রাষ্ট্রব্যাবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে
ফিরে দেখা
এই অংশে জানবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কিত কিছু key-fact,
বিষয় | সংক্ষিপ্ত তথ্য |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ |
মিত্রশক্তি | ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন |
অক্ষশক্তি |
জার্মানি, জাপান, ইতালি |
পার্ল হারবোর আক্রমণ |
৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ |
যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান- | ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১ |
ডেজার্ট ফক্স | জার্মান ফিল্ড মার্শাল রোমেল |
নাৎসি বাহিনী- | জার্মান সেনাবাহিনীর অন্য নাম |
নাৎসি বাহিনী এর পূর্ণরূপ | ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি |
যুদ্ধ শেষ হয় | ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত মানুষ মারা যায | সাড়ে তিন থেকে ছয় কোটি |
যুদ্ধে বিজয়ী দল | মিত্রশক্তি |
শেষ কথা
এই লেখায় আমি আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন কোন দেশের মধ্যে হয়েছিল- এমন নানা বিষয়ের পাশাপাশি আলোচিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ঘটনা সম্পর্কে।
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘটনা হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ইতিহাস চর্চাকারীগণ মনে করে থাকেন। ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ পৃথিবীকে নতুন ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, নৃশংসতা কাকে বলে। এই যুদ্ধের ফলে নড়েচড়ে বসে পৃথিবীর রাষ্ট্রব্যাবস্থা, নতুন জন্মের সাথে তুল্য এই ব্যবস্থা মানব সমাজের জন্য কতটা উপযোগী, আবার নতুন করে কোন বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু যুদ্ধ যে কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না, তা আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই আমাদেরকে শিখিয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা আর স্পর্শ না করুক কোন প্রাণকে, শান্তি নেমে আসুক জগৎ জুড়ে, এমনটাই প্রত্যাশা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: ছবি কথা বলে
১. জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণ, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 8 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত মানুষ মারা যায়](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/9543_-_waf_fall_of_warsaw_in_1939.jpg__1536x1536_q85_subsampling-2.jpg)
২. পার্ল হারবোরে জাপানের আক্রমণ, ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 9 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ](https://www.history.com/.image/ar_215:100%2Cc_fill%2Ccs_srgb%2Cg_faces:center%2Cq_auto:good%2Cw_2560/MTY4ODE4NTQ2MzcxOTk1NDA5/pearl-harbor-gettyimages-2660129-.webp)
৩. লায়েতে গালফের যুদ্ধে আমেরিকান জেনারেল ডাগলাস ম্যাকআর্থার, ২৬ অক্টোবর ১৯৪৪
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 10 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/ww2-111-sc-407101.jpeg)
৪. ইয়াল্টা সম্মেলনে তিন নেতা, ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 11 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/ww2-111-sc-260486.jpeg)
৫. নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা হামলা, ৯ আগস্ট ১৯৪৫
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 12 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন কোন দেশের মধ্যে হয়েছিল](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/200729173346-01-hiroshima-nagasaki-restricted.jpg)
৬. জাপানের আত্মসমর্পণ, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫
![দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: কারণ, ইতিহাস ও বদলে যাওয়া পৃথিবী 13 নাৎসি বাহিনী](https://blog.10minuteschool.com/wp-content/uploads/2023/02/red-03315-80-g-700777.jpg)
তথ্যসূত্র
- Causes of WW2
- Allies and Axis: Who’s Who in WW2?
- History Extra
- Significant Events of World War 2
- What were the turning points of world War 2?
- Second World War (1939-1945): Causes and Consequences
- ইতিহাস ২য় পত্র, ড. সৈয়দ মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন