পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
বাংলা সিনেমা! কে দেখে এই বাংলা সিনেমা? কাউকে যদি বাংলা সিনেমা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তবে তার উত্তর ঠিক এমনই হবে। আমরা অন্য দেশের সিনেমার কত প্রশংসাই না করি! তবে কখনো কি বাংলা সিনেমার প্রশংসা করি? আমাদের এই বাংলা সিনেমাও এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। সত্যজিৎ রায়ের কথা কে না শুনেছে? তিনি বাংলা সিনেমার জগতে যে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন, তা আজও ভুলবার নয়।
সেসব চলচ্চিত্র থেকে শুধু যে ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা নয়। কিছু সিনেমা জীবন সম্পর্কে এমন কিছু শিক্ষা দিয়ে যায় যার প্রভাব সারাজীবনই আমাদের মধ্যে রয়ে যায়। আজকে আমি কয়েকটি বিখ্যাত বাংলা সিনেমার কথা বলবো যা বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত একবার করে হলেও দেখে নেয়া।
১। পথের পাঁচালি (১৯৫৫):
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পথের পাঁচালি’ চলচ্চিত্রটি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা শিল্পকর্ম হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এটি অপু ট্রিলজির প্রথম চলচ্চিত্র এবং অপুর ছেলেবেলার গল্পই এখানে মূলত ফুটে উঠেছে। এটিই স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র যেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছিল। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
ঘুরে আসুন: যে ৪টি গল্প বদলে দেবে তোমার জীবন!
২। গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯):
হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রের যদি কোন তালিকা করা হয়, তবে এই সিনেমাটি থাকবে সবার প্রথমে। গুপী গাইন নামের একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গল্পটি সাজানো হয়েছে যেখানে সে বিখ্যাত গায়ক হতে চায়, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, সে গাইতে পারে না। হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে লেখা সত্যজিৎ রায়ের এই চলচ্চিত্রটি ১৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে ‘Best Feature Film’ এবং ’Best Direction’-এর জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
৩। জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০):
জহির রায়হান পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটির মূল পটভূমি বাংলার ভাষা আন্দোলন। সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে একটি পরিবারের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এটিকে ‘জাতীয় চলচ্চিত্রের’ উদাহরণ হিসেবে ব্যখ্যা করা হয়।
৪। মাটির ময়না (২০০২):
মুক্তিযুদ্ধের পটভুমিতে লেখা এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ। ‘Cannes Film Festival’-এ নির্বাচিত হওয়া সর্বপ্রথম বাংলা চলচ্চিত্র এটি।
৫। অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০):
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন সত্যজিৎ রায়। সেই সময়ে এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি যে এটি ২০তম Berlin International Film Festival-এ ‘Golden Bear’-এর জন্য মনোনয়ন পাওয়া একমাত্র বাংলা সিনেমা।
৬। হীরক রাজার দেশে (১৯৮০):
গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রের ২য় পর্ব এটি। বাংলায় গুটিকয়েক মিউজিকাল ফিচার ফিল্মস-এর মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এটি। শুধুমাত্র সঙ্গীতের জন্যেই অর্জন করেছে ৩টি জাতীয় পুরস্কার।
৭। নায়ক (১৯৬৬):
সত্যজিৎ রায়ের লেখা এবং পরিচালনায় তৈরি এই চলচ্চিত্রটি ১৯৬৭ সালে Best feature film হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এর মূল কাহিনী একজন শিল্পীকে ঘিরে যিনি জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করতে কলকাতা থেকে দিল্লি ভ্রমণ করেন। সেই ২৪ ঘণ্টার ট্রেন সফরে তার জীবনের গল্প একজন সাংবাদিকের কাছে ব্যক্ত করেন। খুবই সাধারণ ঘরানার চলচ্চিত্র মনে হলেও তা দেখার পর মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে দর্শকবৃন্দের।
৮। গেরিলা (২০১১):
‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই চলচ্চিত্রটির মূল পটভুমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা যে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন, তারই চিত্র এখানে অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের সাথে সাথে দেশে-বিদেশে কুড়িয়েছে প্রচুর সুনাম।
৯। অপুর সংসার (১৯৫৯):
বাংলা চলচ্চিত্রের আরেকটি মাস্টারপিসের নাম অপুর সংসার। এটিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়। পথের পাঁচালি চলচ্চিত্রের ২য় পর্ব এটি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর সুনাম ছাড়াও অর্জন করেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে নাসরোহ নাজিয়াত।
আপনার কমেন্ট লিখুন