অনলাইনে এবং অফলাইনে শিক্ষকতা করার সুবাদে অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা ও পড়ানোর সুযোগ হয়েছে আমার। সেদিক বিবেচনা করে আমার কাছে শিক্ষার্থী মূলত দুই ধরণের।
এক হলো ভালো শিক্ষার্থী, অপরটি হলো খুবই ভালো শিক্ষার্থী। আমার কাছে সবাই ভালো শিক্ষার্থী আর কেউ কেউ আছে যারা হলো খুবই ভালো শিক্ষার্থী। একজন ভালো শিক্ষার্থী আর একজন খুবই ভালো অর্থাৎ তুখোড় শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু ছোট্ট ছোট্ট পার্থক্য রয়েছে। এই ছোট্ট ছোট্ট বিশেষত্বগুলোই একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণ থেকে তুখোড় মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলে।
চলো জেনে নেওয়া যাক একজন তুখোড় মেধাবীর বিশেষত্বগুলো সম্পর্কে!
১) লেকচার কী নিয়ে সে সম্পর্কে ধারণা রাখে আগে থেকেই –
একজন তুখোড় মেধাবী ক্লাস বা লেকচারে কী নিয়ে কথা বলা হবে সেটা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা রাখে ক্লাসের আগে থেকেই। এবং তার পাশাপাশি ওই টপিক নিয়ে তার যাবতীয় কনফিউশন আর সমস্যাগুলোকে মার্ক করে নোট ডাউন করে রাখে। এবং সেগুলো ক্লাসেই সমাধান করিয়ে নেয়। ওরা ফ্লিপড ক্লাসরুম মডেল অনুসরণ করে। ক্লাসে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা ওদের অভ্যাস।
যারা সাধারণ থেকে তুখোড় মেধাবী হতে ইচ্ছুক তাদের বলছি, এখন থেকেই প্রতিটি ক্লাস বা লেকচারে অংশ নেওয়ার আগে সেখানে কী নিয়ে কথা বলা বা আলোচনা করা হবে সেটা নিয়ে আগে থেকে ধারণা নাও। প্রবলেম আর কনফিউশনগুলোকে মার্ক করে রাখো আগেভাগেই।
আরো পড়ুন: মেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট : মেধাবীদের পরামর্শ
২) আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী আর প্রত্যয়ী মনোভাববিশিষ্ট –
একজন সাধারণ আর একজন তুখোড় মেধাবীর আত্মবিশ্বাসের তফাত একদম আকাশ-পাতাল। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নিজের যোগ্যতা আর অবস্থান নিয়ে সংশয়ে ভোগে। সবসময় শর্টকাট বা কম পরিশ্রমে সফলতা অর্জনের রাস্তা খোঁজে। তবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তার অবস্থান নিয়ে সচেষ্ট এবং তার আত্মবিশ্বাস দৃঢ়। তারা সব সময় নতুন কিছু জানা আর শেখার জন্যে আগ্রহী। ওদের লক্ষ্য পূর্ব নির্ধারিত এবং ওরা এই লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে প্রতিনিয়ত উদ্যমের সাথে কাজ করে যায়।
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৪
৩) জেদ থাকাটা জরুরি –
শিক্ষক হবার সুবাদে অনেক শিক্ষার্থীদের অনেক রকমের সমস্যা শোনার সুযোগ হয়েছে আমার। বেশ সাধারণ একটা অভিযোগের মধ্যে একটা হলো পড়াশোনা নিয়ে বাবা – মায়ের শাসন। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ার যে জার্নি, সেখানে বাবা – মা কিন্তু কাউকে ঠেলে বা টেনে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবেন না। এই ক্ষেত্রে নিজের জেদ, ইচ্ছা, আগ্রহ আর প্রচেষ্টার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।
আর যারা বাবা – মায়ের শাসন নিয়ে কিঞ্চিত বিরক্ত তাদের জন্য বলি, বাবা – মা আর অভিভাবকেরা আমাদের ভালোই চান আর তাই তারা আমাদের ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন। সন্তান হিসেবে আমাদেরও কর্তব্য তাদেরকে এই নিশ্চয়তাটুকু দেওয়া যে আমরাও আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক।
৪) Be stronger than your strongest excuse –
কথায় বলে বাঙ্গালীর তিন হাত। ডান হাত, বাম হাত আর অজুহাত। অজুহাত দেখানোর সুযোগ পেলে সেটাকে হাতছাড়া করার মতো ভুল সচরাচর আমরা বাঙ্গালীরা সাধারণত করি না। এখানেও সাধারণ আর মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে তফাত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো অজুহাত পাওয়া মাত্রই সেটার সদ্ব্যবহার করে ফেলে। অন্য দিকে অজুহাত তুখোড় মেধাবীদের কাছে তেমন একটা পাত্তা দেয় না।
হাজারটা অজুহাত থাকা সত্ত্বেও দিনশেষে পড়াটা শেষ করেই ফেলে ওরা। ওদের জেদ আর উদ্যমের কাছে হেরে যায় সব ধরণের অজুহাত। তাই তুখোড় মেধাবী হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো অজুহাতকে এড়িয়ে চলার ক্ষমতা রাখা।
৫) Be Proactive. Don’t be Reactive –
Proactive হলো সেসব শিক্ষার্থীরা যারা সকল কিছু নিয়েই আগে থেকেই ধারণা রাখে। তুখোড় মেধাবীরাই হলো proactive। পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কিছু নিয়ে ধারণা রাখে তারা। পড়াশোনার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও ওদের সরব উপস্থিতি। এবং শেষ পর্যন্ত সফলতার সাক্ষাত পায় ওরাই।
অন্যদিকে Reactive হলো সেসব শিক্ষার্থীরা যাদেরকে তাড়া দিয়ে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়। তাই,
Be Proactive. Don’t be Reactive.
আর Proactive হওয়ার পাশাপাশি অভ্যাস করো ফলো আপের। কোনো ফেস্টে অ্যাপ্লাই করেই থেমে যেও না। খোঁজ করো নতুন কোনো তথ্য এলো কিনা। একটা নতুন কিছু পড়লে বা শিখেই রেখে দিলে চলবে না। আমরা অনেকেই ভোকাবুলারি শিখি, রেখে দেই আর তারপর ভুলে যাই। এটা অনুচিত। নিয়ম করে ফলো আপ করো অর্থাৎ রিভিশন দাও।
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
HSC 2024 ক্র্যাশ কোর্স - প্রথম পত্র [বিজ্ঞান বিভাগ]
৬) লক্ষ্য থাকা চাই পূর্ব নির্ধারিত –
“যদি লক্ষ্য থাকে অটুট
বিশ্বাস হৃদয়ে
হবেই হবে দেখা
দেখা হবে বিজয়ে।”
প্রথমত লক্ষ্য থাকা চাই পূর্ব নির্ধারিত এবং স্থির। তুখোড় মেধাবীরা এই লক্ষ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে সবসময়ই সতর্ক থাকে। এরা এদের স্থির করা লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যায়। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই লক্ষ্যের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন
৭) শিক্ষককে সাহায্য করার মানসিকতাটাও থাকা চাই –
একজন শিক্ষক হিসেবে আমার অভিধানে খারাপ শিক্ষার্থী বলে কোনো শব্দ নেই। কোনো শিক্ষার্থী আমার পড়ানো বুঝতে না পারলে সেটা একান্তই আমার ব্যর্থতা। এই একই অনুভূতিটা শিক্ষার্থীদের মাঝেও জাগ্রত হওয়া উচিত। আর তাহলেই সাধারণ থেকে তুখোড় মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ থেকেই শুরু করে দাও এই অভ্যাসগুলোর অনুশীলন, আশা করি আমাদের সবার সাধারণ থেকে তুখোড় মেধাবী হওয়ার রাস্তা আরও সহজ হয়ে যাবে! আর তুখোড় মেধাবীরা চালিয়ে যাও এই সুন্দরের চর্চা! সবার জন্য শুভকামনা রইল!
এই লেখাটি লিখতে সাহায্য করেছে তাওহিদা আলী জ্যোতি।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন