এই লেখাটি নেয়া হয়েছে Spikestory ব্লগ থেকে।
ধরুন আপনি কোন চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে গেলেন কিংবা কোন পরীক্ষা দিতে গেলেন এ সময় আপনি লক্ষ্য করলেন আপনার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক এর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এর কারণ কি জানেন? এর কারণ আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব। আর এর ফলেই হয়ে যেতে পারে যে কোন রকম অঘটন।
সফলতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির মানসিক শক্তি সাধারণ যে কারো থেকে কয়েকগুণ বেশি থাকে। একমাত্র আত্মবিশ্বাসই মানুষের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে। এছাড়াও আত্মবিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
“Confidence is preparation. Everything else is beyond your control.” – Richard Kline
নিজেকে সবার মাঝে উপস্থিত করতে চাইলে দরকার আত্মবিশ্বাস। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে নিজেকে দেখতে চাইলে দরকার কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন। নিম্নে উল্লেখিত কিছু অভ্যাস আয়ত্ত্বের মাধ্যমেই আপনি বাড়িয়ে তুলতে পারেন নিজের আত্মবিশ্বাসঃ
১. তুলনা হোক নিজের সাথেঃ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটার মুখোমুখি হতে হয় তা হল অন্যের সাথে নিজের তুলনা। আমরা আশেপাশের কাউকে সফল হতে দেখলেই নিজের সাথে তার তুলনা করে বসি। এতে আমাদের নিজেদের সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়। নিজের উপর বিশ্বাস কমতে থাকে।
“Always be yourself and have faith in yourself. Do not go out and look for a successful personality and try to duplicate it.”– Bruce Lee
তুলনা করতে হলে নিজের সাথে করুন। নিজের সাথে প্রতিযোগিতায় নামুন। আজকে কোন কাজ ভাল না হলে পরের দিন সেটাকে ভাল করার চেষ্টা করুন। এভাবে নিজের স্কেলে নিজেকে মাপুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার কাজের প্রতি দক্ষতা এবং আগ্রহ বাড়ছে। এতে আপনার নিজের উপর বিশ্বাসটাও বাড়বে কয়েকগুণ।
২. নিজের ভুল স্বীকার করতে শিখুনঃ
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “To err is human.” যার অর্থ মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল করা মোটেও দোষের কিছু না। কিন্তু সেটা স্বীকার না করা দোষের। বরং নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া মানুষের মহৎ গুণ।
“An apology is the superglue of life. It can repair just about anything.” ― Lynn Johnston
নিজের ভুল স্বীকার করতে শিখুন। তার জন্য ক্ষমা চান। মনে রাখবেন ক্ষমা চাওয়া কিংবা ভুল স্বীকার করা কোনটাই আপনাকে ছোট করবে না বরং আপনার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে। আপনার উপর মানুষের বিশ্বাসটাকে বাড়িয়ে দেবে। মানুষকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ দেওয়া শিখুন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে শিখুন এতেও আপনার প্রতি তার বিশ্বাস বাড়বে।
আরো পড়ুন: স্পোকেন ইংলিশে আমাদের কিছু খারাপ অভ্যাস
৩. কথা বলুন হাসিমুখেঃ
মানুষের কথাবার্তার মাঝেই ফুটে উঠে ব্যক্তিত্বের ছাপ। স্পষ্ট হয় তার শিক্ষা, শিষ্টাচার, রুচি , মন ও মানসিকতা। আমরা স্বভাবত হাসি খুশি মানুষদের বেশি পছন্দ করি। তার কথার উপর আলাদা মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। হাসি মুখে যে কোন কথার গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়াও অপরিচিত কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলা উচিৎ এতে করে তার আপনার প্রতি আলাদা একটা ভাল লাগা কাজ করে। আপনার প্রতি ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
“A smile is a curve that sets everything straight.” – Phyllis Diller
হাসিমুখে কথা বললে আপনার গুরুত্ব অন্যদের কাছে বাড়বে। এছাড়াও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার ধরা হয় এই হাসিমুখে কথা বলা কে।
৪. মিথ্যা না বলাঃ
পৃথিবীতে যে কয়েকটি কাজ মানুষের মনুষ্যত্বকে বিঘ্নিত করে তার মধ্যে মিথ্যা অন্যতম। মিথ্যা মানুষকে শুধু ছোট করে না বিশ্বাসকেও করে তোলে নড়বড়ে। প্রায় সকল ধর্মেই মিথ্যাকে মহাপাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মিথ্যা আমাদের ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। মিথ্যা এমন এক ব্যধি যার জন্য মানুষের ছোট খাট সমস্যা থেকে প্রাণ নাশকের কারণও হতে পারে। তাই মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকুন। এতে আপনি সবার বিশ্বাসের পাত্র হতে পারবেন। অন্যদিকে এই বিশ্বাস আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করতে সাহায্য করবে।
“Never to lie is to have no lock on your door, you are never wholly alone.” – Elizabeth Bowen
মিথ্যা আপনাকে একটি বদ্ধ-ঘোরের মাঝে রাখবে যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে আস্তে আস্তে দূর্বল করে দিবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মিথ্যা বলা এক ধরনের বদ অভ্যাস এবং মানসিক ব্যধির মত যা মানুষের মানসিক শক্তি নষ্ট করে।
৫. ছোট লক্ষ্য করে এগিয়ে যানঃ
“ছোট ছোট বালুকণা
বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ
সাগর অতল।”
আমরা স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কোন কোর্স করি তখন আমাদের প্রতিদিন কোন না কোন টপিকে আস্তে আস্তে পড়ানো হত এবং পরীক্ষার আগে যে টপিকগুলো পড়ানো হয়েছে সেগুলো থেকে প্রশ্ন করা হত। যারা প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশুনা করত তারা পরীক্ষায় ভাল করত। ঠিক এমনি কাজের ক্ষেত্রেও প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজই দিনশেষে অনেক বড় একটি কাজের রূপ নিতে পারে। আপনার কাজের অংশগুলোকে ভাগ করে নিন। প্রতিদিন লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সে লক্ষ্য পূরণ করুন। দেখবেন একসময় খুব সহজে কাজটি শেষ করে ফেলেছেন। এতে আপনার উপর বাড়তি চাপ পড়বে না এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজগুলো করে ফেলতে পারবেন। কাজের চাপ কম থাকলে মানসিকভাবেও শক্তি পাবেন এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আরো পড়ুন: ৪টি শখ যা অসাধারণ কিছু অভ্যাস তৈরিতে সহায়তা করবে
৬. ইতিবাচক চিন্তা করুনঃ
মানুষ যা কিছু করে তার আগে সে চিন্তা করে। মানুষের চিন্তার উপর কাজ অনেকটা নির্ভরশীল। মানুষ যেভাবে চিন্তা করে কাজও ঠিক সেভাবেই হয়। সফল মানুষদের অন্যতম হাতিয়ার ইতিবাচক চিন্তা। যদি থমাস আলভা এডিসন, আলেক্সজান্ডার গ্রাহাম্বেল কিংবা আইনস্টাইন তাদের আবিষ্কার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ না করতেন তবে হয়ত আমরা আজ পিছিয়ে থাকতাম কয়েক যুগ। ঠিক তেমনি প্রত্যেক সফল ব্যক্তিদের ধারণা ছিল ইতিবাচক।
“Keep your thoughts positive because your thoughts become your words. Keep your words positive because your words become your behavior. Keep your behavior positive because your behavior becomes your habits. Keep your habits positive because your habits become your values. Keep your values positive because your values become your destiny.” – Mahatma Gandhi
ইতিবাচক চিন্তা আমাদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে সাফল্যের কাতারে এবং আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। তাই নিজের আত্মবিশ্বাসকে বাড়াতে ইতিবাচক চিন্তা করুন। সকল কাজে নিজের উপর ভরসা রাখুন।
৭. নিজের কাজে সন্তষ্ট থাকুনঃ
আমরা যখন নিজেকে নিয়ে ভাবি তখন চোখের সামনে সব কিছুর আগে নিজের ব্যর্থতাগুলো ভেসে উঠে। এতে নিজের উপর অসন্তষ্টি কাজ করে এবং আস্তে আস্তে হতাশা কাজ করবে।
“Success is peace of mind, which is a direct result of self-satisfaction in knowing you made the effort to become the best of which you are capable.” – John Wooden
নিজের ভাল কাজের কথা ভাবুন। নিজের সফলতার স্মৃতিচারণ করুন, এতে আপনার কাজের গতি বাড়বে, আপনার নিজের উপর বিশ্বাস অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন তার সফলতার কথা চিন্তা করে তখন তার মস্তিষ্কে উদ্দীপনা কাজ করে এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আপনি যখন নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ সন্তষ্টি লাভ করবেন তখন আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে এবং সে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
Microsoft Excel Course
এই কোর্সটি থেকে যা শিখবেন
৮. বই পড়ার অভ্যাসঃ
জ্ঞানের বাহক বই। একজন মানুষ বই পড়ে যে পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করতে পারে অন্য কোথাও থেকে তা অর্জন করতে পারেনা। বই মানুষের একাকীত্বও দূর করতে সক্ষম। একজন পরিপূর্ণ জ্ঞানী ব্যক্তি হতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রচুর পরিমাণ বই পড়তে হবে।
“Never trust anyone who has not brought a book with them.” – Lemony Snicket
একজন মানুষের মানসিক বিকাশের জন্য বইয়ের বিকল্প কিছু হতে পারে না। আপনি যখন নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করবেন তখন অনেক বিষয় সম্পর্কে আপনার ধারণা হবে। আপনি যখন কোন বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করবেন তখন আপনার ভেতর থেকে কুসংস্কার, হিংসা-বিদ্বেষের মত যাবতীয় মানসিক ব্যধির বিলুপ্তি ঘটবে। এছাড়াও বই পাঠের মাধ্যমে আপনি নিজের সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবেন, যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করবে।
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষই পারে তার সর্বোচ্চ সফলতা ধরে রাখতে। একজন সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হলে আপনার নিজের উপর বিশ্বাসটা গাঢ় করতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার আত্মবিশ্বাসটাই আপনাকে সাহায্য করবে। যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতায় কিংবা কর্মক্ষেত্রে একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির সফলতার হার অন্য যেকোন ব্যক্তির থেকে কয়েকগুণ বেশি।
এরকম আরো লেখা পড়তে ঘুরে এসো Spikestory-র ফেসবুক পেজ থেকে।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঘরে বসে Freelancing Course
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- T-Shirt Design করে Freelancing Course
- SEO Course for Beginners
- Web Design Course
- Cartoon Animation Course by Antik Mahmud
- Graphic Designing Course with Photoshop by Sadman Sadik
- Adobe Illustrator Course
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন