হিমশীতল অ্যান্টার্কটিকায় বসবাসের গল্প: ৭টি মজার তথ্য!

December 11, 2018 ...

মানচিত্রের একদম তলানিতে পড়ে থাকা অ্যান্টার্কটিকা অনেকসময় আমাদের চোখেই পড়ে না। কিন্তু বিশাল জায়গা জুড়ে তুষারের রাজত্ব করা এই অ্যান্টার্কটিকার বিচিত্র সব বৈশিষ্ট্য আছে। অদ্ভুত সেসব বৈশিষ্ট্যের জন্য অ্যান্টার্কটিকাকে ‘সাদা মঙ্গলগ্রহ’ (White Mars) ও বলা হয়! জীবনযাপনের জন্য প্রতিকূল এই তুষারে ঢাকা মহাদেশটিতে তবু মানুষ বসতি গড়েছে। ২০০৫ সালে কনকর্ডিয়া (Concordia) নামে ফ্রেঞ্চ-ইতালিয়ান একটি পোলার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা সেখানে গবেষণা করেন। একসাথে প্রায় ৬০ জন বিজ্ঞানী থাকতে পারেন কনকর্ডিয়ায়।

তবে সেখানে থাকা কোন চাট্টিখানি কথা নয়। ভয়াবহ নিম্ন তাপমাত্রা, বাইরের পৃথিবী থেকে একদম বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, সূর্যের আলো, হাওয়া এমনকি বাতাসে অক্সিজেন ছাড়া টিকে থাকতে প্রায় বছরখানেক সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেন বিজ্ঞানীরা! তবেই তারা সুযোগ পান কনকর্ডিয়াতে প্রবেশের। সেখানে দু’টো ভবন আছে। একটির নাম হচ্ছে ‘নীরব’ (Quiet) সেখানে আছে গবেষণাগার, হাসপাতাল, ঘুমানোর কক্ষ; আরেকটির নাম হচ্ছে ‘সরব’ (Noisy) সেখানে আছে ব্যায়ামাগার, মুভি থিয়েটার, ডাইনিং হল ইত্যাদি।  আজকে তোমাদের শোনাবো সেই কনকর্ডিয়ায় জনমানব বিচ্ছিন্ন হিমশীতল তুষার রাজ্যে বিজ্ঞানীদের জীবনযাপনের গল্প।

বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিন পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাসের ওপর নেওয়া লাইভ ক্লাস, লেকচার শিট, টপিকভিত্তিক এক্সাম ও সাপ্তাহিক পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট এর সাহায্যে।

 

১। হাড়কাঁপানো তাপমাত্রা, ব্যাকটেরিয়া এবং গন্ধ বিচিত্রা

অ্যান্টার্কটিকায় গড় তাপমাত্রা -৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তবে সেখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য সেটিকে ‘গরমকাল’ বলা যেতে পারে। কারণ শীতকালে তাপমাত্রা -১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও নেমে যায় কখনো কখনো! এটা যে কতোটা শীতল সেটা বুঝতে পারবে তুলনা করলে- ঢাকার গড় তাপমাত্রা ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মাঘের হাড় কাঁপানো শীতেও ৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ঢের উপরে থাকে তাপমাত্রা। এবার তাহলে বুঝো অ্যান্টার্কটিকা আসলে কতোটা শীতল!

এতো ঠাণ্ডায় সেখানে ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না! কনকর্ডিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত, তাই বাতাস সেখানে অনেক পাতলা, বাতাসে অক্সিজেনও খুব কম। বাতাস এতোটাই পরিষ্কার যে সেখানে কোনরকম গন্ধ নেই! আমাদের চারপাশের বাতাসে নানারকম গন্ধ থাকে আমরা সবসময় তার মাঝে থেকে অভ্যস্ত বলে টের পাই না, কিন্তু কনকর্ডিয়া থেকে বিজ্ঞানীরা যখন সভ্যজগতে ফিরে আসেন তারা ভারী অবাক হয়ে যান বাতাসে এতো বিচিত্র সব গন্ধ আবিষ্কার করে!

অ্যান্টার্কটিকা
এই দেখো খাবারটা চামচে তুলতে না তুলতেই কিভাবে জমে বরফ হয়ে গেলো!

২। অন্ধকারে চার মাস!

অ্যান্টার্কটিকার মানুষদের আমাদের মতো সৌভাগ্য হয় না প্রতিদিন সকালে উঠে ঝলমলে সূর্য দেখার। শীতকালে সেখানে সূর্যের দেখাই মেলে না, সবাইকে টানা প্রায় চার মাস ঘুটঘুটে অন্ধকারে থাকতে হয়!

CIRCADIAN RHYTHM বলে একটি মজার ব্যাপার আছে। প্রতিদিন কোন একটা সময় তোমার খুব সতেজ লাগে আবার কোন সময় তোমার নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয়- এটা সার্কেডিয়ান রিদমের জন্যই হয়। আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই একটা ঘড়ি আছে। সেই ঘড়িটা ঠিক করে দেয় কখন আমাদের সতেজ-নিস্তেজ লাগবে। সাধারণত রাত ২-৪টা এবং দুপুর ১-৩টায় সবচেয়ে ক্লান্ত লাগে মানুষের।


51533364 415189505895307 2613148086746218496 n

আরো পড়ুন: জানা অজানার মাউন্ট এভারেস্ট


অ্যান্টার্কটিকার অদ্ভুত সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের জন্য সেখানে বসবাসকারীদের সার্কেডিয়ান রিদম এলোমেলো হয়ে যায়! ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে অবচেতন মন বলে ‘এখন তো গভীর রাত’ (যদিও তখন হয়তো দুপুর!) তাই খেতে বসলেও কেমন আজব একরকম অনুভূতি হয় (রমজানে প্রথম প্রথম ঘুম থেকে সেহেরি খেতে গেলে যেমন লাগে অনেকটা সেরকম!)।

চার মাস আঁধারের রাজত্বের পর যখন পূর্বাকাশে সূর্যের হাসি দেখা যায় তখন কনকর্ডিয়ার সবার আনন্দ দেখে কে! সবাই মিলে ছাদে উঠে সূর্যের আলোয় স্নান করে, শরীর মন চাঙ্গা করে নেয়!

2 1
অবশেষে সূর্যের দেখা মিলছে!

৩। সুপারমার্কেট!

কনকর্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা জনবসতি থেকে একদম বিচ্ছিন্ন থাকেন, কিন্তু তাদেরও তো খাওয়া-পরা লাগে! তাই সেখানে একটি সুপারমার্কেটও আছে! কিন্তু সেটি আমাদের মতো না যে চট করে চলে যাওয়া যায়। কনকর্ডিয়া থেকে সুপারমার্কেটটি প্রায় ২৫০০ মাইল দূরে অবস্থিত! (বাংলাদেশের এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত- টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যেতে ৬০০ মাইলের কিছু বেশি পাড়ি দিতে হয়। এবার তাহলে বুঝো কতো দূরে সেই মার্কেট!) মার্কেট থেকে বড় বড় চালান এসে পৌঁছতে ১০-১২ দিন লেগে যায় আর ছোটখাটো চালান প্লেনে করে আনা হয়!

তাই বলে কনকর্ডিয়ায় কষ্টেসৃষ্টে থাকতে হয় এমন মোটেই নয়! সেখানে বিজ্ঞানীরা ব্যাঙের পা থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজি সবরকম খাবারই রান্না করে থাকেন!

3 1
অতিকায় যানবাহনে করে চালান আনা হচ্ছে

৪। তুষারবন্দী জনপদ!

শীতকালে অ্যান্টার্কটিকার তুষারঝড় এমন ভয়ানক রূপ ধারণ করে যে কনকর্ডিয়া থেকে বের হওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না! তাই চার মাস একদম ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হয় সবাইকে। ব্যাপারটি শুনতে সহজ লাগলেও বাস্তবে এভাবে একদম একা একা থাকতে গেলে মনের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে।

সাধারণত শীতকালে ১৫ জনের মতো মানুষ থাকেন কনকর্ডিয়ায়। তারা সবাই একেকজন ‘সকল কাজের কাজী’ হয়ে থাকেন! যেই মানুষটি যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ করেন তিনি অপারেশনও করতে জানেন! যেই মানুষটি রান্না-বান্নার কাজ করেন তিনি হয়তো দমকল কর্মীর ভূমিকাও পালন করতে পারেন।  

সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো সেখানে যদি কোন বিপর্যয় ঘটেও যায়- বাইরে থেকে কোন সাহায্য পাওয়ার আশা নেই! তাদের নিজেদেরই মোকাবেলা করতে হয় সব বিপদ-আপদ। (অ্যান্টার্কটিকায় জনবিচ্ছিন্ন বিজ্ঞানীদের ভয়ানক এক বিভীষিকা মোকাবেলার গল্প নিয়ে ‘The Thing’ (1982) নামে অসাধারণ একটি হরর মুভি আছে, তোমরা সেটি দেখতে পারো!)

5 1
শীতকালে তুষারঝড়ে ঘরবন্দীই থাকতে হয় কনকর্ডিয়া বাসীদের

৫। মানুষ নিয়ে পরীক্ষা!

অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকরা বিভিন্ন জিনিসের উপর গবেষণা করতেই যান, কিন্তু সেখানে ভয়ানক প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবেলা করতে গিয়ে তাদের মাথায় আসলো, নিজেদের উপর গবেষণা করলে কেমন হয়?!

কারণটা বেশ মজার- তুষার রাজ্যের বিভীষিকাময় জীবনের সাথে মহাকাশ ভ্রমণের একরকম মিল আছে! দুই খানেই জনমানব বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি মানুষের মনের উপর ভয়ানক চাপ তৈরি করে- বিষণ্ণতা, দিশা হারিয়ে ফেলা, সব ছেড়েছুঁড়ে পালিয়ে যেতে চাওয়া, ভুলোমনা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিচিত্র সব ব্যাপার ঘটে মনের ভেতর।

তাই কনকর্ডিয়ার বিজ্ঞানীদের সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়- তাদের সবার বিশেষ ডিজিটাল ডায়েরি আছে, বিশেষ ডিজিটাল ঘড়ি আছে সেটি হিসেব করে রাখে তারা কতোক্ষণ ঘুমিয়েছে আর কাজ করেছে (কল্পনা করো আমাদের দেশে বাবা-মা দের কাছে এমন ডিজিটাল ঘড়ি থাকলে ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হতো!)

4 1
বিষণ্ণতা, দিশা হারিয়ে ফেলা, সব ছেড়েছুঁড়ে পালিয়ে যেতে চাওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার কনকর্ডিয়ায়

৬। পানি নিয়ে টানাটানি!

এ এক মজার সমস্যা- অ্যান্টার্কটিকায় সবখানেই বরফ, কিন্তু সেখানেই কিনা পানি নিয়ে টানাটানি? আসলে সেখানে পানির উৎসের অভাব নেই, কিন্তু বরফ গলিয়ে পানিতে পরিণত করতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানী খরচ করতে হয়। তাই কনকর্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা মজার সব কৌশল বের করেছেন পানি সাশ্রয়ের জন্য। গোসলে যে পানি ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে আবার পরিশোধন করে ব্যবহারের উপযোগী হয়।

তাই সেখানে তুমি গোসলে ইচ্ছেমতো সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারবে না। তোমাকে একটি তরল দেওয়া হবে যেটি ‘একের ভেতর তিন’ অর্থাৎ সাবান, শ্যাম্পু সব কাজই করতে পারে! আরেকটি বিচিত্র ব্যাপার আছে ইউরোপিয়ানদের অভ্যাসে- শাওয়ারে মূত্রত্যাগ করা! কিন্তু সেই মূত্রমিশ্রিত পানি পরিশোধন করা অনেক সমস্যা।

তাই কনকর্ডিয়ার এই কাজটি করা একদম নিষিদ্ধ। কিন্তু স্বভাব কি এতো সহজে যায়?! তাই মাঝে মাঝেই পরিশোধন কর্মীরা পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া দেখলে বুঝতে পারেন কেউ কাণ্ড ঘটিয়েছে এবং তখন রীতিমতো সভা ডাকা হয় এবং বেশ বকাবকি করা হয় এমন ছেলেমানুষি দুষ্টুমির জন্য!

6
পানি শোধন করাই এক বিশাল কর্মযজ্ঞ!

৭।  এরই মাঝে উৎসবে মেতে ওঠা

তুষার রাজ্যে কেবল বিবর্ণ তুষারে ছেয়ে থাকে বিজ্ঞানীদের মন এমন কিন্তু নয়, তারা অবসর পেলে সবাই মিলে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেন!

তারা বরফে Snow Ball খেলেন, গবেষকরা তাদের গবেষণাগারে সবাইকে বিচিত্র সব বৈজ্ঞানিক কলা-কৌশলের খেলা দেখান, সবাই মিলে মজার মজার জামাকাপড় পরে নাচানাচি করেন, বার্বিকিউ পার্টি করেন। কনকর্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন। তাই সব বিজ্ঞানীরই সেখানে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, ইংরেজি, রাশিয়ান, সুইস, জার্মান এমন অনেকগুলো ভাষা শেখা হয়ে যায়!

7
এত চ্যালেঞ্জের মাঝেও হাসি ঠাট্টা ভোলেন না এই বিজ্ঞানীরা!

বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স

কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • পিএসসি প্রণীত সিলেবাসের আলোকে সাজানো ৮০টি লাইভ ক্লাস
  • বিসিএস স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন মোকাবেলা করার কৌশল
  • ১৪৭টি রেকর্ডেড ভিডিও এবং ১৪৭টি ক্লাস ম্যাটেরিয়াল
  • ১২৫টি লেকচার শিট, ২৯৪০টি কুইজ ও ২৪টি মডেল টেস্ট


  • এছাড়া আরো কিছু চমৎকার ব্যাপার রয়েছে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোয় বিজ্ঞানীরা সুদূর সভ্যজগতের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ভিডিও চ্যাট করেন, বিজ্ঞান নিয়ে তাদের যতো কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব দেন। বড়দিনের ছুটিতে খোদ ইতালির প্রেসিডেন্ট কনকর্ডিয়ার সবার সাথে ভিডিও চ্যাটে গল্প করেন! কনকর্ডিয়ার জীবন আসলে কেমন, সেটি যেন তোমরা অনুভব করতে পারো সেজন্য বিজ্ঞানীরা তোমাদের জন্য একটি ভিডিও তৈরি করেছেন সেটি তোমরা দেখতে পাবে এখানে


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন: 



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন