সেই শৈশবের পাঠ্যবইগুলোর পেছনে কিংবা গুরুজনের উপদেশ হিসেবে শুনে আসা চিরপরিচিত উক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা যে, প্রচণ্ড কর্মব্যস্ত বর্তমান এ সময়টায় নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াটা আমাদের কারো কারো কাছে বিলাসিতা! কিন্তু শৈশবে শিখে আসা সেই চিরপরিচিত উক্তিরূপী উপদেশগুলো কি কেবল বলার জন্যেই বলা? সুস্বাস্থ্য নামের সম্পদ আর সুন্দর মনের অধিকারী হতে চাইলে যত্নশীল হতে হবে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি। মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মকানুন! নিয়মকানুন শুনে ভড়কে যাবার কারণ নেই। ছোট্ট কিছু কৌশল বা নিয়ম মেনে চলতে সক্ষম হলে সুস্বাস্থ্য নামের সম্পদ আর সুন্দর মনের অধিকারী হওয়াটা তেমন কঠিন কিংবা অসম্ভব কোনো কাজ নয়।
তো চলো জেনে নেওয়া যাক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় কার্যকরী কিছু টিপস!
১) সাবধান থেকো ভাতের দুষ্টুচক্র থেকেঃ
ভাত আর তরকারির অনুপাতের গড়মিল। ভাত বেশি তরকারি কম নয়তো তরকারি বেশি ভাত কম। আমাদের অনেকের সাথে খাওয়ার সময় প্রায়ই এই বিব্রতকর ঘটনাটা ঘটে থাকে। এই ভাত আর তরকারির পরিমাণে সামঞ্জস্য আনার নিমিত্তে অনেকেরই পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। পরিণামে বেড়ে যায় ওজন! এই অভ্যাস অর্থাৎ ভাতের দুষ্টুচক্র থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তরকারি যদি অসতর্কতায় বেশী নেওয়া হয়েই যায় প্রয়োজনে সেটা খালি খালি খেয়ে নেওয়াটা বরং বাড়তি ভাত খাওয়া অপেক্ষা শ্রেয়।
২) ২০-২০-২০ তে স্বস্তি মিলবে চোখেঃ
একবিংশ শতাব্দীর এ সময়টায় মানুষ বড্ড বেশী যন্ত্রনির্ভর! সারাক্ষণ স্মার্টফোন, ট্যাবে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা কিংবা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে বসে একটানা কাজ করাটা এখন অতি সাধারণ আর পরিচিত দৃশ্য। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দৃষ্টিশক্তি। চশমা এখন আমাদের অধিকাংশের নিত্যসঙ্গী। আর তাই, এ প্রজন্মকে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজন্ম বললে খুব একটা ভুল হবে না। একটানা বসে থেকে কোনো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা চোখের জন্যে বেশ ক্ষতিকর। এই ক্ষতির ঝুঁকিটাকে খানিকটা কমিয়ে আনতে একটা কৌশল অবলম্বন করতে পারো! এই কৌশলের নাম “২০-২০-২০ (টুয়েন্টি-টুয়েন্টি-টুয়েন্টি) রুল”। এক্ষেত্রে একটানা কোনো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তর ২০ ফিট দূরের কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করো। এতে করে চোখের ওপর চাপ কিছুটা কমবে।
৩) এক সাইকেলে হয়ে যাবে তিনটি দারুণ কাজঃ
কিনে ফেলো বাইসাইকেল, দেখবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়ে যাচ্ছে শরীরচর্চাও। সাইকেল চালানো অত্যন্ত কার্যকরী শরীরচর্চাগুলোর একটি। ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই সাইকেল রাখতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও পরিবহন হিসেবে সাইকেল হতে পারে ভরসা। সেক্ষেত্রে সাইকেল বাঁচিয়ে দেবে তোমার যাতায়াত এর ভাড়াবাবদ খরচ হওয়া টাকাগুলোও। তাই,
Save Money. Save Health. Buy a Bicycle.
৪) হাঁটা যখন সবচেয়ে উপযোগী শরীরচর্চাঃ
যাবতীয় শরীরচর্চায়গুলোর মধ্যে হাঁটা হলো সবচাইতে সহজ আর সবার জন্যে উপযোগী এবং একইসাথে কার্যকরী ব্যায়াম। সময় বাঁচাতে এখন আমরা সবাই কমবেশি অনলাইন রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো থেকে পরিবহন সেবা নিয়ে থাকি। অ্যাপ থেকে রাইড কল করার সময় নিজের অবস্থান থেকে একটু দূরে কল করলে ওই দুরুত্বটুকু হেঁটে গেলেও সেটা শরীরের জন্য বেশ উপকারী হবে। তবে কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবারই সময়মতো পৌঁছানোর তাড়া থাকে। তাই তখন হেঁটে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়াটা ক্ষেত্রবিশেষে বোকামি। ক্লাস কিংবা অফিস থেকে বাসায় ফেরার ক্ষেত্রে যেহেতু সময়মতো ফিরবার তাড়া সাধারণত থাকে না ওই সময়টাকে কাজে লাগানো যায় হাঁটার জন্যে। যানবাহনে যদি একান্তই উঠতে হয় চেষ্টা করো অন্তত কিছুটা পথ হেঁটে গিয়ে তারপর যানবাহনে ওঠো। এতে করে তোমার ব্যায়ামের কোটাটুকুও পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
৫) লিফট নয় সিঁড়িঃ
আমাদের অনেকেরই দোতলায় উঠতে গেলেও লিফটের প্রয়োজন হয়। নিজেদের সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে হলেও এই বাজে অভ্যাসটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামাও বেশ ভালো একটি ব্যায়াম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে লিফট এর পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করাটাই ভালো। এতে অনেকখানি ব্যায়াম হয়ে যায়।
চল স্বপ্ন ছুঁই!
আমাদের ছোট-বড় অনেকরকম স্বপ্ন থাকে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারি কতগুলো? এই দ্বিধা থেকে মুক্তি পেতে চল ঘুরে আসি ১০ মিনিট স্কুলের এই এক্সক্লুসিভ প্লে-লিস্ট থেকে!
৬) ‘থ্রি হোয়াইট পয়সনস’ কে ‘না’ বলোঃ
চিনি, লবণ আর ভাত খাদ্যতালিকার এই ত্রিরত্নকে বলা হয় ‘থ্রি হোয়াইট পয়সনস’। প্রয়োজনের অধিক গ্রহন করলে এই হোয়াইট পয়সনগুলো পয়সনের মতোই হুমকিস্বরূপ হয়ে যাবে আমাদের স্বাস্থের জন্যে। কখনো কখনো এই উপাদানগুলোই উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্রের মতো দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই, এই তিন সাদা আতংককে খাদ্য হিসেবে গ্রহনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা বেশ জরুরী। যতখানি কম পারা যায় পরিমাণ ঠিক ততখানিই রেখো খাদ্যতালিকায়।
৭) পানির অপর নাম জীবনঃ
পানির অপর নাম জীবন হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটা হলো এই পানি আমাদের হজম ও বিপাকে সহায়তা করে। খাবারের আধ ঘন্টা আগে পানি পান করলে আমাদের খাদ্য গ্রহন অন্য সময়ের তুলনায় বেশ অনেকখানি কমে যায়। যা কিনা ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী আমাদের সুস্বাস্থের স্বার্থেই পেটের তিনভাগের একভাগ খাদ্য দ্বারা, একভাগ পানি দ্বারা পূর্ণ করে অপরভাগ ফাঁকা রাখতে হয়। তাই,
খাওয়ার আগে পানি খাও, খাবারের ওপর চাপ কমাও।
৮) উল্টো নিয়মকেই এবার উল্টে দাওঃ
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আমাদের অধিকাংশই সকালের নাশতা করি নামেমাত্র। কেউ কেউ তো আবার এই ব্রেকফাস্ট নামের উটকো ঝামেলাকে এড়িয়েই চলেন রীতিমতো। তারপর দুপুরে পেটপুরে খাওয়া আর রাতে গলাপর্যন্ত খাওয়া হলো রোজকার রুটিন আমাদের অধিকাংশের। আর এজন্যেই স্থুলতা বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। অথচ প্রকৃত নিয়ম হলো সকালে রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো আর রাতে খেতে হবে ভিখিরির মতো। অর্থাৎ সকালের নাস্তাটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এই নাশতার পরই আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করে। তাই সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে খাওয়াদাওয়ার এই প্রচলিত নিয়মটাকে উল্টে দিতে হবে।
৯) দশ মিনিটেই বাজিমাতঃ
দশ মিনিটের মধ্যে অফিসের চেয়ারে বসেই কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মাধ্যমে শরীরচর্চার কাজটুকু করে ফেলা সম্ভব। টেন মিনিট অফিস এক্সারসাইজ নামের এই কনসেপ্টটি তোমাকে সাহায্য করবে অফিসে বসেই শরীরচর্চা করতে। আর বাসায় বসে সেভেন মিনিট ওয়ার্কআউট এর মাধ্যমে পূর্ণ করো তোমার ব্যায়ামের কোটা।
১০) বেছে নাও ছোট আকারের প্লেটঃ
খাবারের প্লেটের আকার কমিয়ে ফেলো। প্লেট হিসেবে বেছে নাও আকারে ছোট্ট প্লেটগুলোকে। আজকের সর্বশেষ আইডিয়াটি হলো এটা। এতে করে দেখবে প্লেটের আকারের সাথে সাথে কমে যাবে তোমার খাওয়ার পরিমাণও। বড় প্লেটভর্তি খাবার থেকে অনায়াসেই বেশি খাওয়া হয়ে যায়। আবার বড় প্লেটে পরিমাণে কম খাবার দেওয়া হলে দৃষ্টিকটু লাগে। কিন্তু প্লেটের আকার যদি ছোট হয় তাহলে এই বিষয়টা চোখে পড়ে না। তাই, খাওয়ার সময় প্লেট হিসেবে বেছে নাও আকারে ছোট প্লেটগুলোকে। দেখবে ভুঁড়ির আকারটাও এমনিতেই কমে যাবে।
স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত অনিয়ম করাটা কখনো কখনো বয়ে আনে নানা রোগ-বালাই! তাই, স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়াটাও বেশ জরুরী! আজ থেকেই অনুসরণ করো এই কৌশলগুলো যাতে করে তুমি থাকো সুস্থ, কর্মচঞ্চল আর উদ্যমী! মনে রেখো, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়াটা বিলাসীতা নয় এটা আবশ্যক! তাই, সুস্বাস্থ্য নামের সম্পদ আর সুন্দর মনের অধিকারী হওয়ার স্বার্থে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হও এখন থেকেই।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com