তুমি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ো না কেন, শিক্ষাজীবনের কোন না কোন সময়ে তোমাকে প্রেজেন্টেশন দিতেই হয়। যদি কোনকালে সেটাও না করা লাগে, দিনশেষে চাকুরিজীবনে এই প্রেজেন্টেশন নামের বিপদে পড়তেই হয় তোমাকে!
প্রেজেন্টেশন কি বলতে গেলে বিষয়টা আসলে ক্লাস সিক্স সেভেনের ওই সরল অংকের মত। সরল অংকগুলো বিশাল, দেখলে অনেক ভয় লাগে, একটু ভুল হলেই পুরোটা শেষ! প্রেজেন্টেশনের বিষয়টাও সেরকম শুনতে অনেক বিশাল লাগে, মনে হয় কতই না জটিল এক একটা কাজ। কিন্তু সরল অংক একবার যে ঠিকভাবে শিখে ফেলে, তাকে যেমন বিশ্বের কোন সরল অংকই আটকাতে পারে না, প্রেজেন্টেশনের বিষয়টাও কিন্তু একদমই সেরকম। আপাতদৃষ্টিতে জটিল এই প্রেজেন্টেশন দেওয়ার নিয়ম একবার যদি রপ্ত করে ফেলতে পারো, তাহলে আর কখনোই সেটা নিয়ে সমস্যা হবে না।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করো, আমার চোখে প্রেজেন্টেশনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর শুরুটা। কেন জানো? কারণ হচ্ছে শুরুতে তোমার দর্শকদের আগ্রহটা থাকে চূড়াতে। যদি একটা গ্রাফে আঁকাও দর্শকের আগ্রহটাকে, দেখবে যে প্রেজেন্টেশনের শুরুতে সবথেকে বেশি দর্শক আগ্রহী থাকে, আর যতো সময় যায় তাঁদের আগ্রহ ততোই কমতে থাকে। এই কারণেই দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নিতে তোমার হাতে ওই শুরুর এক মিনিটই থাকে। এই এক মিনিটের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে তাই, একটা ভালো প্রেজেন্টেশন তৈরি হতে হলে। এক্ষেত্রে কিছু টিপস দেয়া যেতে পারে।
তাই চলো আগে জেনে নিই, প্রেজেন্টেশন কাকে বলে!
Microsoft PowerPoint Course
এই কোর্সটি যাদের জন্য:
প্রেজেন্টেশন কি?
প্রেজেন্টেশন কি বলতে গেলে, এটি হলো এক ধরনের উপস্থাপন ব্যবস্থা, যেটা দিয়ে একজন বক্তা তার দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, তথ্যাদি ইত্যাদি শ্রোতার কাছে খুব সহজেই পৌঁছাতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠানে প্রেজেন্টেশনগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়, যেমন: একটি গ্রুপের সাথে কথা বলা, একটি মিটিং করা, একটি নতুন পণ্য প্রদর্শন করা কিংবা একটি গ্রুপকে কোন কিছু ব্রিফ করা। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়, সমস্যা অথবা নতুন ধারণা উপস্থাপন করতে খুবই কার্যকর একটি উপায়। তাই প্রেজেন্টেশন কি চমৎকার জিনিস, তা বলাই বাহুল্য।
আরো পড়ুন: ইংরেজিতে কীভাবে প্রেজেন্টেশন দিবেন
প্রেজেন্টেশন শুরু করার পূর্বে
প্রেজেন্টেশন কি তা তো জানাই হলো। এখন জানতে হবে এরপর কি। প্রেজেন্টেশন দিতে যাওয়ার আগে কিছু প্রেজেন্টেশন দেওয়ার নিয়ম জেনে নেয়া অনেক বেশি জরুরি। পূর্বপ্রস্তুতি ভাল হলে প্রেজেন্টেশনের অন্যান্য ধাপগুলোতে এগুনো অনেক সহজ হয়ে যায়। একটা ভাল পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ৩টি উপদেশ দিব যা অনুসরণ করলে তোমাদের জন্য প্রেজেন্টেশন তৈরি খুব সহজ হয়ে যেতে পারে।
- যে যায়গায় প্রেজেন্টেশন দিবে, সে জায়গায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবে। এটা করা হলে দর্শকের সম্পর্কে ভাল একটি ধারণা পাওয়া যায়। তা না হলে, হঠাৎ করে বিশাল দর্শকের সামনে গেলে খুব নার্ভাস হয়ে যাবে,যা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছ সব ভুলে যাবে।
- যে বিষয়টার উপর প্রেজেন্টেশন দেবে সেটার উপর খুব ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবা। শুধু আয়নার উপর নির্ভর না করে বন্ধুদের সামনে কয়েকবার চর্চা করলে অনেক বেশি কার্যকর হয়, ভয় অনেকটাই কেটে যায়। আয়নায় শুধু নিজের ছবিটা দেখা যায় বলে ভয় তেমনটা দূর হয় না, কারণ নিজেকে কেউ ভয় পায় না।
- প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় পরিচিত জনদের সামনে দেখলে নার্ভাস কম লাগে। তাই, তোমার ভাল বন্ধুদের সামনের সারিতেই বসিয়ে দাও, তখন তোমার মনে হবে তুমি বন্ধুদের সাথেই আড্ডা দিচ্ছো।
প্রেজেন্টেশন শুরু করার নিয়ম
প্রেজেন্টেশন দেওয়ার নিয়ম -এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনটা জানো? প্রেজেন্টেশনের শুরু। তাও যে-সে শুরু না। প্রথমেই যে ত্রিশ সেকেন্ড, মোটামুটিভাবে ওই সময়টুকুই তোমার বিচারকদের আর দর্শকদের জন্য যথেষ্ট। প্রেজেন্টেশন কি পরিমাণ উপভোগ্য হবে, সেটা এ সময়েই বোঝা যায়। প্রথম ত্রিশ সেকেন্ডেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে, যে তারা তোমার প্রেজেন্টেশন কি দেখবে নাকি দেখার ভান করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এরকম একটা অবস্থায় বুঝতেই পারছো, শুরুর ত্রিশ সেকেন্ডের দাম কতোখানি!
এখন আমরা জানবো প্রেজেন্টেশন কিভাবে শুরু করতে হয়। প্রেজেন্টেশন শুরু করার নিয়ম কী তাহলে? শুরুটা করতে পারো কোন একটা কোটেশন দিয়ে। হতে পারে, সেই কোটেশনটা সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করা কোন ব্যক্তির, হতে পারে সেটি কোন মজাদার অচেনা উক্তি যেটা দর্শকদের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি অবাকও করবে! আবার তুমি শুরু করতে পারো বিশাল কোন সংখ্যা দিয়ে। এমন সে সংখ্যা, দর্শক অবাক না হয়ে পারবেই না! প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে গিয়ে এসব খেয়াল রাখা জরুরি।
এমন কিছু টিপস হলো:
-
শুরুটা করো একটা গল্প দিয়ে
গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে? গল্প-সে যেরকমই হোক না কেন, মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে সবসময়ই থাকে গল্পগুলো। আর এর সাথে যদি মানুষ নিজের জীবনকে রিলেট করতে পারে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!
গতানুগতিক শুরু তো সবাই করে। এই প্রেজেন্টেশনটা শুরু করছি আমি অমুক, প্রেজেন্টেশনটি করছি তমুক স্যারের কাছে- এসব কথা তো সবাই জানেই। তাহলে তুমি তোমার সর্বোচ্চ অ্যাটেনশনের সময়টাকে এইসব বলে নষ্ট করবে কেন? তুমি শুরু করো একটা গল্প দিয়ে। গল্প হতে পারে তোমার প্রেজেন্টেশন টপিক নিয়েই। পুরো প্রেজেন্টেশন টপিক থেকে একটি গল্পের দুজন চরিত্রকে দিয়ে দেখাতে পারো। তাতে তোমার প্রেজেন্টেশনটা যেমন মনোমুগ্ধকর হবে, তেমনি দর্শকপ্রিয়তাও পাবে। দর্শকদের দেখিয়ে দাও, প্রেজেন্টেশন কাকে বলে!
-
“আপনি জানেন কী?”
আমি একটা বিখ্যাত প্রেজেন্টেশন দেখেছিলাম। সেখানে শুরুতেই ন্যারেটর এয়ারটেলের টিউনটা গাইতে গাইতে আসে। এরপর দর্শককে জিজ্ঞেস করে, এই টিউনটা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে না এয়ারটেলের কথা? দর্শক সারি তুমুল আনন্দে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ!”
এভাবে যদি দর্শকদের নিয়েই কাজ করা যায়, যদি দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে আগ্রহী করে রাখা যায়, তাহলেই কেল্লাফতে! মনে রাখবে, যখনই দর্শক এবং বিচারকরা মনে করবেন যে তাদেরকে পুরো প্রেজেন্টেশনে ব্যস্ত রাখা যাচ্ছে, তখনই তোমার বোনাস পয়েন্ট!
-
উক্তি বা ফ্যাক্টস ব্যবহার করো
তোমার প্রেজেন্টেশনটা যদি শুরু হয় খুব ইন্টারেস্টিং একটা ফ্যাক্ট দিয়ে, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা অনেক মজাদার হবে দর্শকদের জন্যে! ধরো তুমি তোমার টপিক রিলেটেড অদ্ভুত একটা তথ্য, যেটা বেশিরভাগ মানুষই জানে না- সেটা নিয়ে তুমি বলে বসলে। তাহলে অবশ্যই বিচারক এবং দর্শকরা বিমোহিত হবে!
আবার তুমি যদি চমৎকার কোন কোটেশন দিয়েই শুরুটা করে ফেলো, তাহলে কিন্তু আরেক রকম ব্যাপার হবে। অনেক দর্শক আছেন যারা গল্প পছন্দ করবেন না। তারা যদি একটুখানি জীবনধর্মী উক্তি শুনে প্রেজেন্টেশন দেখে, বোনাস পয়েন্টটা কিন্তু পাচ্ছো তুমিই! প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় এগুলো খেয়াল রাখা জরুরি।
Communication Masterclass by Tahsan Khan
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
-
ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করো
আমার মনে আছে, কিছুদিন আগে একটা কম্পিটিশনের প্রেজেন্টেশনে গিয়েছিলাম আমি। সেখানে আমরা প্রেজেন্টেশনের শুরুটাই করেছিলাম একটা গান দিয়ে, সেই গানে নাচতে নাচতে প্রবেশ করেছিলাম স্টেজে। তাতে যেটা হলো, প্রায় ত্রিশটা দেশের মানুষ হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছিল আমাদের, কারণ শুরুটাই ছিল অভিনব।
তুমিও চাইলে এইরকম ইন্টারেস্টিং বা একটু আলাদা ধরণের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারো। হ্যাঁ, খেয়াল রাখতে হবে যে তোমার আইডিয়াটা যেন উগ্র না হয় এবং যেন ভদ্রতা আর এটিকেট বজায় থাকে, কিন্তু ফরম্যালি যতটুকু অভিনব থাকা যায়, ততো ভালো!
একটা প্রেজেন্টেশনের শুরুটাই বলা যায় প্রেজেন্টেশনের প্রাণ। তোমার পরের প্রেজেন্টেশনে এই টিপসগুলো কাজে লাগিয়েই দেখো, সাফল্য আগের থেকে বেশি হতেই হবে!
প্রেজেন্টেশন শেষ করার নিয়ম
প্রেজেন্টেশন কিভাবে শুরু করতে হয় জেনে এবার আমরা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার নিয়ম -এর শেষ অংশে চলে এলাম। একটা প্রেজেন্টেশনের শুরুর দিকে যেমনি মনোযোগ বেশি থাকে তেমনি শেষের দিকে গিয়েও মনোযোগ একটু বাড়তে থাকে। মাঝখানে গিয়ে একটু কমে যায়। দর্শক প্রথম এবং শেষের কথাগুলো খুব বেশি মনে রাখে, মাঝখানের কথাগুলো তেমন মনে রাখে না। মাঝের সময়টায় দর্শক ঝিমিয়ে যায়। তাই শেষের অংশটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমের মত শেষের অংশটাও একটা চমৎকার উপায়ে শেষ করতে হবে।
তুমি কি জানো পৃথিবীর ৯৯ ভাগ প্রেজেন্টেশন দুটো শব্দ দিয়ে শেষ হয়? সেটা হল- ‘Thank You’। যদি তোমার প্রেজেন্টেশনটা ‘Thank you’ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে শেষ করা যায় তাহলে দর্শক অনেক বেশি মনে রাখবে। এখন আলোচনা করব কী কী চমৎকার উপায়ে তোমার প্রেজেন্টেশন শেষ করতে পারো।
চিন্তার খোরাক জিনিসটা হলো এমন কোন কথা বা এমন কোন ইঙ্গিত, যেটা দর্শক বাড়ির পথে রওনা দিতে দিতে ভাবতে পারে, চিন্তা করতে পারে যে এটা এমন হলে কেমন হতো! তোমার এই শেষ করাটা রেশ রেখে যাবে তাদের মনে।
একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখবে। প্রেজেন্টেশনের দর্শকরা কিন্তু কখনোই চান না যে তুমি না পারো, বারবার তোতলাও কিংবা পুরো প্রেজেন্টেশনটা একটা জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলো। দর্শকরা সবসময় এটাই চাইবেন, যেন তুমি প্রেজেন্টেশন ভালো করে দাও, তোমার থেকে যেন তারা কিছু শিখতে পারে। তাই দর্শকদের শুভকামনাকে সাথে রেখে তুমি প্রেজেন্ট করে ফেলো সেরা একটা প্রেজেন্টেশন আর দেখিয়ে দাও প্রেজেন্টেশন কাকে বলে!
আরো পড়ুন: মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট কী? প্রেজেন্টেশন তৈরির ১৬টি কার্যকরী টিপস
চমৎকার প্রশ্ন
দর্শকদের উদ্দেশ্য একটা চমৎকার প্রশ্ন দিয়ে শেষ করতে পারো। এর ফলে শেষ হওয়ার পরেও সবাই তোমার প্রেজেন্টেশন কি সুন্দর হয়েছিল ছিল তা নিয়ে ভাবতে থাকবে।
সুন্দর সমাপ্তি
একটা ভাল মুভি দেখলে লক্ষ্য করবে অনেকগুলো প্লট টুইস্ট থাকে, কেউ বুঝতেই পারেনা আসলে কি হবে। শেষে গিয়ে আসল জিনিসটা ফাঁস হয়ে যায়। তেমনি তোমাদের প্রেজেন্টেশনগুলো সে উপায়েই উপস্থাপন করো। শেষে গিয়ে একটি বোমা ফাটিয়ে দাও। মুভি যেমন আমরা সবাই দেখি তেমনি তোমার প্রেজেন্টেশনও সবাই আগ্রহ নিয়েই দেখবে।
কল টু অ্যাকশন
কল টু অ্যাকশন হলো প্রেজেন্টেশনর শেষে গিয়ে বলে দেয়া- দর্শকদের কী করা উচিত। একটা প্রেজেন্টেশন দেয়ার পেছনে অবশ্যই একটা কারণ থাকে। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুমি সবাইকে যে জিনিসটা জানাতে বা বুঝাতে চাও সেটা জানার পর তাদের কি করা উচিত, এই জিনিসটা বলে দাও তোমার প্রেজেন্টেশনের শেষে।
অসাধারণ প্রেজেন্টেশন দেয়ার নিয়ম
প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করে নয়, বুঝে পড়ে যাও
অনেককেই দেখেছি প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করে নিয়ে যেতে। অনেকে আবার এককাঠি সরেস, তারা মুখস্থ করে সেটা আবার ছোট কাগজে লিখে নিয়ে আসে! তারপরে দেখা যায় প্রেজেন্টেশনের মাঝপথে সেই কাগজ ঘামে ভিজে একটা দলা টাইপ কিছু হয়ে আছে! এই দুই ধরণের কাজ না করে, তোমাদের উচিত প্রেজেন্টেশনটা বুঝে বুঝে তারপর দেয়া।
মুখস্থ করা প্রেজেন্টেশন শুনতেই কেমন অদ্ভুত আর রোবটিক লাগে, মনে হয় এটা কেমন হলো! এইজন্যে চেষ্টা করবে প্রেজেন্টেশন মুখস্থ না করে নিজের মতো করে বুঝে বুঝে বলতে। আর নিজের ভাষায় একটা জিনিস গুছিয়ে বুঝিয়ে বললে দর্শক এবং বিচারক সবার কাছেই একটি আলাদা স্থান পাবে তুমি!
উৎফুল্ল থাকো, হাসিমুখে থাকো
একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবে, হাই কিন্তু বেশ সংক্রামক একটা জিনিস। স্টেশনে বসে তুমি হাই তুললে একটু পরে কীভাবে যেন পাশের ভদ্রলোকটিও হাই তুলে বসবেন। হাসিও এমন আরেকটা সংক্রামক জিনিস, আর তাই তুমি হাসিমুখে থাকলে হাসিমুখ হবে সবাই! একটু বেশি এনার্জি দেখাতে পারলে দর্শকরাও এনার্জি পাবে, সবাই উৎফুল্ল হয়ে তোমার প্রেজেন্টেশন দেখবে।
তাছাড়া, তুমি গোমড়ামুখো হয়ে থাকলে তোমার টেনশন, নার্ভাসনেস এবং জড়তা তোমার দর্শকদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: ট্রানজিশন
আমরা কখনো একা প্রেজেন্টেশন দিই না (সেলফ প্রেজেন্টেশন ছাড়া)। সাথে ৩, ৪, ৫ বা তারও বেশি টিম মেম্বার থাকে। একজন প্রেজেন্টেশন দেয়ার পর আরেকজন প্রেজেন্টেশন দিতে আসে। এই যে দলের সদস্যদের আসা-যাওয়া, সেটাকে বলা হয় ট্রানজিশন। এই অংশটাতে অনেক সমস্যা দেখা যায়। এসময়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি এবং সে সমস্যাগুলো খুব সহজভাবে সমাধানের উপায়গুলো নিয়ে তা নিয়েই এখনকার আলোচনা।
বক্তা পরিবর্তন
মনে কর তুমি অনেক জোরে জোরে প্রেজেন্টেশন দিলে, পরেরজন খুব আস্তে আস্তে প্রেজেন্টেশন দিল। তাহলে তোমাদের দুজনের কথায় একটা অসামঞ্জস্যতা এসে যায়। তাই সবসময় চেষ্টা করো যাতে দুজনের কথায় একটা সামঞ্জস্যতা থাকে। অর্থাৎ, ট্রানজিশন যেন ভালো হয়।
আরেকটা কাজ যেটা বেশিরভাগ মানুষ করে সেটা হল, একজন প্রেজেন্টেশন হঠাৎ শেষ করে দিয়েই বলে “That’s my part and now I would like to invite my team member X” এতে দর্শকরা ভাবে তারা কখনোই একই দলে কাজ করেনি, তারা আলাদা আলাদা দল। কিন্তু তাদের বোঝাতে হবে যে তোমরা একই দলের। সেজন্য তুমি শেষ করার আগে পরেরজনের একটা লাইন বলে তাকে ছেড়ে দাও। সাথে সাথে সে পরের লাইন থেকে শুরু করবে। যেমন – তুমি শেষ করলে ‘Now you finally understand why this class is so useful’ পরেরজন এসে শুরু করল ‘So, you must be wondering why this class is so useful, right?’ এবার দেখো আমার শেষ লাইন আর তার শুরুর লাইন শুনলেই মনে হয় লাইন দুইটা একজনেরই বলা। কেউ বুঝতে পারবে না যে আসলেই এখানে একটা স্মুদ হয়েছে।
তাই,সবসময় চেষ্টা করো দুজনের আসা যাওয়ার ট্রানজিশনটা যেন খুব স্মুদ হয়।
জরুরি বক্তা পরিবর্তন
মনে কর, তোমার দলের একজন সদস্য প্রেজেন্টেশন চলাকালীন অথবা প্রশ্নোত্তর পর্বে উত্তর দিতে গিয়ে ভয় পেয়ে, নার্ভাস হয়ে বা কোন কারণে হঠাৎ থেমে গেল। সবাই চুপচাপ, এতে একটা বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় একটা জরুরি ভিত্তিতে ট্রানজিশনের প্রয়োজন পড়ে। এটাকে বল হয় জরুরি বক্তা পরিবর্তন বা ইমারজেন্সি ট্রানজিশন। এক্ষেত্রে তুমি যেটা করতে পারো, তোমার বন্ধু যেখানেই থেমে গেল সেখান থেকেই ‘And to add to that’ বলে নিয়ে চালিয়ে যেতে পারো। এতে একজন সদস্যের দুর্বলতাটা দূর করে পুরো ডলের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখা যায়।
মিডিয়া ট্রানজিশন
ধরো, তুমি প্রেজেন্টেশনের মাঝখানে একটা ভিডিও দেখাতে চাও বা অন্য কোথাও শিফট করতে চাও। এটাকে বলা হয় মিডিয়া ট্রানজিশন। নরমালি শিফট করতে গেলে প্রেজেন্টেশন স্লাইড ক্লোজ করা, ভিডিও বা অন্য কোন জিনিস অন করা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এতে দর্শকরা বিরক্ত হয় এবং অনেক সময় ব্যয় হয়। তুমি চাইলেই এ জিনিসসটা খুব কম সময়ে এবং সহজে করতে পারো। এজন্য কি-বোর্ডের ‘Alt + Tab’ বাটন দুটি একত্রে চেপে ধরলেই সব উইন্ডোগুলো একসাথে চলে আসবে, সেখান থেকে খুব স্মুথলি এক উইন্ডো থেকে আরেক উইন্ডোতে শিফট করা যায়।
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
এটি হলো প্রেজেন্টেশনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হল মুখ দিয়ে কথা বলা ছাড়া যেটা চোখ,হাত-পা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিমার সাহায্যে আমাদের মনের ভাব মানুষের সামনে প্রকাশ করে। প্রেজেন্টেশনে মানুষের মুখের কথার চাইতে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক বেশি শক্তিশালী। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে মানুষ যখন কথা বলে তার ৪৫-৫৫ ভাগ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই বলে।
এখন আমি আলোচনা করব কিভাবে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কে খুব ভালভাবে প্রেজেন্টেবল করা যায়।
১. পশ্চার
তুমি কিভাবে দাঁড়িয়ে বা বসে আছো সেটাই তোমার পশ্চার। প্রেজেন্টেশনে অনেকেই বাঁকা হয়ে, ঝুঁকে বা হেলে যায়। এটা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং দেখতে খুব খারাপ লাগে। পশ্চার ঠিক রাখার একটা ছোট্ট ট্রিক হল সবসময় তোমার কাঁধ সোজা রাখবে। এতে তোমার পশ্চার ভাল দেখা যায়।
২. জেশ্চার
হাত পা নেড়ে কথা বলা, চোখ দিয়ে ইশারা করা, মাথা এদিক ওদিক ঘোরানো এগুলো হলো জেশ্চার। এটা মানুষকে শক্তি দেয়। ভালভাবে করতে পারলে এটা দর্শকদের মাঝে একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করে।কেউ কেউ এ জিনিসটাকে ভালভাবে হ্যান্ডল করতে পারে না। এক্ষেত্রে হাত দুটোকে মুষ্টিবদ্ধ রেখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে হয়। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা জেশ্চার দেয়ার ভঙ্গিমা গুলো আয়ত্ব করে নিতে পারো।
৩. নড়াচড়া
কেউ কেউ প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় খুব দ্রুত হাঁটাহাঁটি করে, আবার অনেকে একই জায়গায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকে। উভয়ক্ষেত্রেই প্রেজেন্টারকে দেখলেই মনে হয় খুব নার্ভাস। এসময় করণীয় হল খুব সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলা আর নড়াচড়ার সময় ধীরে ধীরে হাটা। এতে দর্শকদের তোমার উপর চোখ রাখতে সুবিধা হবে, তোমাকে দেখতেও খুব কনফিডেন্ট লাগবে।
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: আই কনট্যাক্ট
আমরা দর্শকের সাথেই যে কথা বলছি, সেটাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় আই কন্ট্যাক্ট এর মাধ্যমে। দর্শকের সাথে আই কন্ট্যাক্ট না রাখলে তারা মনে করবে না যে আমরা তাদের সাথেই কথা বলছি। কিন্তু বিশাল একটা দর্শকের সাথে আই কন্ট্যাক্ট করা খুব একটা সহজ ব্যাপার না। বিশেষ করে নতুন প্রেজেন্টারদের জন্য এটা খুব একটা ভয়ের ব্যাপার।
আজ আমি ৩টি উপায় বলব যেগুলো দিয়ে খুব সহজে সব দর্শকের চোখের দিকে না থাকিয়ে ও আই কন্ট্যাক্ট ঠিক করা যায়।
-
স্টেজ সম্বন্ধে ধারনা রাখুন
প্রেজেন্টেশন দেয়ার আগে স্টেজে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি কর যাতে বুঝতে পারো আসলে দর্শক তালিকাটা কত বড় এবং কোন জায়গায় কী কী আছে। এর ফলে জায়গাটা পরিচিত হয়ে যাবে এবং তুমি একটু স্বাভাবিক বোধ করবে।
-
কিছু দর্শক নির্ধারণ করুন
সবার দিকে তাকানোর দরকার নেই। তোমার ৪ জন বন্ধুকে ৪ কোণে বসিয়ে দাও অথবা ৪ কোণের ৪ জন সিলেক্ট করো। প্রেজেন্টেশন শুরু করার পর একবার সামনে ডানে, পিছে বামে আবার সামনে বামে, পিছে ডানের বন্ধুর দিকে তাকাবে। তাহলে মনে হবে তুমি পুরো দর্শকের দিকেই তাকাচ্ছ।
-
পয়েন্ট ঠিক করুন
মানুষ সিলেক্ট না করেও চার কোণায় ৪টা নির্দিষ্ট পয়েন্ট সিলেক্ট করতে পারো। যখন একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টের দিকে তাকাবে তখন ঐ পাশের দর্শকরা মনে করবে তুমি তাদের দিকেই তাকিয়ে আছো। এভাবেই তুমি মানুষের চোখের দিকে না তাকিয়েও আই কনট্যাক্ট ঠিক করতে পারবে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft PowerPoint Course
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: পোশাক
ভাল প্রেজেন্টেশন দেয়ার পাশাপাশি নিজেদেরকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাও অনেক বেশি জরুরি। বেশিরভাগ মানুষ তোমার পোশাক দেখে তোমাকে মূল্যায়ন করবে। তুমি কত দামী বা সুন্দর কাপড় পর সেটার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তুমি কাপড়গুলো দিয়ে নিজেকে কীভাবে ড্রেসড আপ করো সেটা। চলো দেখে নিই কীভাবে তুমি একটা ভালো ড্রেস কোড মেইনটেইন করতে পারো।
ছেলে
ছেলেদের জন্য পোশাক তথা ড্রেস কোডটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফর্মাল ড্রেস দিয়ে প্রেজেন্টেশন দেয়া উত্তম। চাইলে সেমি ফর্মাল ড্রেস দিয়েও প্রেজেন্টেশন করা যায়। তবে, কখনোই ক্যাজুয়াল ড্রেস দিয়ে করা যাবে না। ফর্মাল ড্রেসের কিছু এটিকেট নিয়ে আলোচনা করি।
-
টাইয়ের দৈর্ঘ্য
টাইয়ের দৈর্ঘ্য এমন হওয়া উচিত যাতে টাইয়ের শেষ প্রান্ত বেল্টের শুরুর অংশকে হালকাভাবে স্পর্শ করে। এর চেয়ে ছোট বা লম্বা হলে দেখতে খারাপ লাগবে।
-
বেল্ট ও জুতো
মনে রাখবে বেল্ট এবং জুতার কালার সবসময় একই হতে হবে। যেমন জুতা যদি ব্রাউন হয়, বেল্টও ব্রাউন হতে হবে।
-
স্যুট
স্যুটের যদি দুটি বোতাম থাকে, তাহলে নিচের বোতাম কখনও লাগাবে না এবং প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় বোতাম কখনো লাগবে না। বোতাম লাগানো থাকলে মনে হবে কেউ তোমাকে চেপে ধরে রেখেছে এবং এতে সহজে চলাচল করতে পারবে না।
মেয়ে
মেয়েদের ড্রেস কোড অনেকটাই শিথিল। তাদের জন্য দুইটা উপদেশ দেব:
- যেকোনো কাপড় পরতে পারো তবে সেটা যেন ভদ্র দেখায় এবং অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ না হয়।
- সবসময় যথাসম্ভব অলংকার বর্জন করো। এগুলো যত কম ব্যবহার করবে তত বেশি ফর্মাল লাগবে।
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: দলীয় কাজ
একটা দলে যদি ৫ জন মেম্বার থাকে এবং সেখান থেকে যদি একজন প্রেজেন্ট করে, বাকি ৪ জন প্রেজেন্ট না করলেও তারা দলের অংশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রেজেন্ট করে। কারণ দর্শকরা পুরো দলকে লক্ষ্য করে। তাই বাকি ৪ জন নিজেদের মধ্যে কথা বলা, ঠেলাঠেলি করা বা অন্য কোন উদ্ভট কাজ থেকে বিরত থাকবে। সেই সাথে নিচের উপদেশগুলো অনুসরণ করবে:
১. সম্মতি
ধর, তোমার দলের কেউ যখন প্রেজেন্টেশন দেয় তখন তুমি তার কথার সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করে মাথা ঝাকাচ্ছ, এটাই হল সম্মতি দেয়া বা অ্যাপ্রুভাল নোড। এটি করলে তোমার বন্ধুটির সাহস বেড়ে যাবে এবং দর্শক ভাববে তোমরা আসলেই একসাথে ভালমতো কাজ করেছ।
২. হাসি
এটিও অ্যাপ্রুভাল নোডের মতই কাজ করে। মনে করো, তোমার ফ্রেন্ড প্রেজেন্টেশনে একটি জোক বললো। তুমি সবার সাথে বন্ধুকে সম্মতি জানিয়ে একটা হাসি দিলে। এতে তোমার বন্ধু যেমন সাহস পাবে তেমনি দর্শক তোমাদের দলের সমন্বয়ের সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাবে।
৩. সহায়তা
যে প্রেজেন্ট করে তার অনেক সময় স্লাইড পরিবর্তন করা, ভিডিওতে শিফট করা বা অন্যান্য অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ যদি প্রেজেন্টার নিজে করে তাহলে প্রেজেন্টেশনের স্মুথনেসটা নষ্ট হয়ে যায় । তাই, তুমি দাঁড়িয়ে না থেকে তোমার বন্ধুকে এসব কাজে সাহায্য করো।
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: পাওয়ারপয়েন্ট হ্যাক
সাদা ও কালো স্ক্রিন
প্রেজেন্টেশন চলাকালীন সময়ে আমাদের অনেকসময় একটা সাদা বা কালো স্ক্রিনের দরকার পড়ে। এ কাজটি কিন্তু মাত্র এক ক্লিকেই করা যায়! সাদা স্ক্রিনের জন্য কীবোর্ডের W প্রেস করো। আগের জায়গায় ফিরে আসতে চাইলে আবার W প্রেস করো, আগের লেখায় চলে আসবে। কালো স্ক্রিনের জন্যও একই নিয়ম। তবে, তখন W এর জায়গায় B চাপতে হবে।
নির্দিষ্ট স্লাইডে যাওয়া
প্রেজেন্টেশন চলাকালীন সময়ে বা প্রশ্নোত্তরে সেশনে এক স্লাইড থেকে অন্য স্লাইডে যেতে হয় অনেক সময়। ধরো ১০ নাম্বার থেকে ১ নম্বর স্লাইডে যাবে। এজন্য একটা একটা করে পরিবর্তন না করে সরাসরি যেতে পারো। কীবোর্ডে স্লাইড নাম্বার লিখে করে Enter বাটনে চেপে সহজেই সেই স্লাইডে চলে যাওয়া যায়। তুমি যদি ১০ নম্বর স্লাইডে থাকো তাহলে ১ লিখে Enter দিলেই ১ এ চলে যাবে। এছাড়াও https://www.slideshare.net/aymansadiq16 এই লিংকে গিয়ে আরো অনেক মজার মজার প্রেজেন্টেশন হ্যাকস শিখতে পারো!
প্রেজেন্টেশন টিপস ও ট্রিক: ডেটা রিপ্রেজেন্টেশন
আমরা সাধরণত ডেটা প্রেজেন্ট করি বড় বড় বার গ্রাফ, পাই চার্ট, টেবিল বা বড় বড় নাম্বার দিয়ে। কিন্তু কখনো এগুলো দেখতে তেমন আকর্ষণীয় লাগে না। খুব কম দর্শক আছে যারা এসব গ্রাফ খেয়াল করে। কিন্তু চাইলে এই ডেটাগুলোকে একটা আকর্ষণীয় উপায়ে প্রেজেন্ট করা যায়, যেটা সবার বোধগম্য হয় এবং দর্শকরা দেখতে আকর্ষণ অনুভব করে।
তোমাদেরকে একজন বিখ্যাত প্রেজেন্টারের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। তিনি হলেন স্টিভ জবস। তিনি ডেটাগুলোকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করতেন যাতে সবাই খুব সহজে বুঝতে পারে। যেমন: প্রথমবার যখন iPod লঞ্চ করছিলেন তখন iPod-এর সাইজ ছিল ৫ জিবি। সাধারণ মানুষেরা ৫ জিবি আসলে কত বড় সেটা বুঝবে না। তাই তিনি ৫ জিবি না বলে বলেছিলেন, এই iPod এ ১০০০ গান রাখা যাবে। এতে সবাই খুব সহজেই বুঝে গেল কারণ এটা সবাই খুব সহজেই নিজের সাথে রিলেট করতে পারে। ওনার আরও একটি উদাহরণ দিই।
প্রথম যেদিন MacBook লঞ্চ করা হয় তখন এর থিকনেস ছিল ০.৭৬ ইঞ্চি। তিনি এভাবে বললে সবাই বুঝতো না আসলে এটা আসলে কতটুকু হবে। তিনি এভাবে না বলে একটা খামের ভেতর থেকে MacBook টা বের করে সবাইকে দেখিয়েছিলেন। একটা পাতলা খামের থেকে একটা ল্যাপটপ বের হয়ে আসা দেখে সবাই অবাক হয়েছিল এবং এটার থিকনেস খুব সহজে বুঝতে পেরেছিল।
তাই সবসময় চেষ্টা করো প্রেজেন্টেশন টপিক সম্পর্কিত একটি আকর্ষণীয় ও সহজ উপায়ে তথ্য উপস্থাপন করতে এবং দর্শকদের দেখিয়ে দাও প্রেজেন্টেশন কাকে বলে।
প্রেজেন্টেশন হ্যাকস
তিনের নিয়ম
এ অংশে আলোচনা হবে প্রেজেন্টেশন লেখার নিয়ম নিয়ে। প্রেজেন্টেশন হল একটা বিলবোর্ডের মত। বিলবোর্ডে যেমন যেমনি একটা বড় মেসেজ এবং কিছু পয়েন্ট থাকে তেমনি সবসময় চেষ্টা করো একটা প্রেজেন্টেশনে প্রতিটা স্লাইডে একটা বড় মেসেজ এবং সর্বোচ্চ ৩টা করে পয়েন্ট রাখতে। কারণ ৩টা পর্যন্ত পয়েন্ট মানুষ খুব সহজেই মনে রাখতে পারে কিন্তু ৪টা হলেই ভুলে যায়। এজন্যই বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ট্যাগ লাইনগুলো দেখলে খেয়াল করবে বেশিরভাগ তিন শব্দের হয়। যেমন: 10 Minute School এর ট্যাগ লাইন ‘Learn, practice, progress’, Horlicks এর ‘Taller, Stronger, sharper’ ইত্যাদি।
তাই তোমার প্রেজেন্টেশনের সব স্লাইডে সর্বোচ্চ তিনটি পয়েন্ট দিয়ে সাজালে মানুষ সেটা সহজেই মনে রাখতে পারবে। তাই উপরে দেয়া প্রেজেন্টেশন লেখার নিয়ম অনুসরণ করতে পারো।
কারিগরি ত্রুটি
প্রেজেন্টেশন চলাকালীন সময়ে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর বন্ধে হয়ে যাওয়া, কাজ না করা ইত্যাদি নানান কারিগরি ত্রুটি হতেই পারে। তাই এই সময় ঘাবড়ে না গিয়ে বা অস্থির না হয়ে সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন চালিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে দলের অন্যান্য সদস্যরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এটা তেমন খারাপ কিছু না, তবে প্রেজেন্টারকে বিচলিত না হয়ে শান্ত থেকে প্রেজেন্টেশন চালিয়ে যেতে হবে। অন্যরা তাকে সাহায্য করবে। এতে দর্শকরা বুঝতে পারবে যেকোনে পরিস্থিতিকে সামলে নেয়ার ক্ষমতা তোমাদের আছে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
এই সেশনটাকে অনেকেই ভেবে থাকে বিচারক এবং দলের মধ্যে একটা যুদ্ধ। প্রশ্নের উত্তর দিতে তর্কাতর্কি করতে হবে, ডিফেন্ড করতে হবে, পাল্টা জবাব দিতে হবে, হার মানতে পারবে না ইত্যাদি। বাস্তবে মোটেও ব্যাপারটা এরকম নয়। বিচারক কোন প্রশ্ন করলে আত্মবিশ্বাসের সাথে সেটার উত্তর দাও। যদি না পারো তাহলে সুন্দর করে বলো, “Sorry sir, I don’t know this answer.” কোন একটা প্রশ্ন না পারতেই পারো,তবে নম্রভাবে বললে বিচারকগণ তেমন কিছু মনে করবে না।
আর যেটাই করো, খেয়াল রাখবে যেন সেটা অবস্থার সাথে যায় এবং কারো মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে।
ফাইল ম্যানেজমেন্ট
অনেক সময় বিচারক প্রেজেন্টেশনের শেষেও তোমাদের প্রেজেন্টেশন ফাইল খুঁজতে পারে। এরকম হলে তাদের তুমি হয়ত গুগল ড্রাইভ নয়ত পেন ড্রাইভে একটা সফট কপি দিয়ে দিতে পারো। হঠাৎ করে তোমার ল্যাপটপ কাজ না করলেও যেকোনো কারো ল্যাপটপে গুগল ড্রাইভ বা পেন ড্রাইভ দিয়েই প্রেজেন্টেশন শুরু করতে পারো।
চার্জার ও অ্যাডাপ্টার
অনেকসময় প্রেজেন্টেশন শুরু হতে হতে বা চলাকালীন চার্জ শেষ হয়ে ল্যাপটপ অফ হয়ে যেতে পারে। তাই সবসময় চার্জার রাখাটা অনেক জরুরি। আবার অনেক ল্যাপটপে HDMI পোর্ট থাকে। কিন্তু প্রজেক্টরে VGI সাপোর্ট করে।তাই সবসময় HDMI এবং VGI সংযোগ করার একটা অ্যাডাপ্টার সাথে রাখবে।
প্রেজেন্টেশনে যা করা উচিত নয়
প্রেজেন্টারের কিছু আচরণ ও কাজকর্ম দর্শকদের উপর একটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলোকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন:
শুধুই দেখে দেখে পড়া
প্রেজেন্টারের কাজ কিন্তু পড়ে দেয়া না, বুঝিয়ে দেয়া। দর্শক ভালমতোই পড়তে পারে। তাই, উল্টোদিকে ঘুরে স্লাইড থেকে পড়ার কিংবা হাতের নোট থেকে অক্ষরে অক্ষরে পড়ার কাজটা কখনো করা যাবে না। এতে দর্শকরা খুব বিরক্ত হয় এবং মনোযোগ হারিয়ে ফেলে।
বিরক্তিকর মজা বা কথা
প্রেজেন্টেশন টপিক থেকে বাইরের কোন প্রকার শব্দ এবং খারাপ শব্দ বা স্ল্যাং ব্যবহার করা অথবা ইংরেজির মধ্যে বাংলা ঢুকিয়ে দেয়া ইত্যাদি কাজ কখনোই করা যাবে না। এতে প্রফেশনালিজম নষ্ট হয়ে যায় এবং দর্শকের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে গিয়ে এটা অবশ্যই ভেবে নিতে হবে।
বাড়তি শব্দ
অনেকে কথা বলার সময় আহ …., এহেম …., ওয়েল, সো, লাইক, অ্যাহ ইত্যাদি বাড়তি শব্দ বারবার ব্যবহার করে। এতে কথার ফ্লুয়েন্সি নষ্ট হয়ে যায় এবং এই ডিসফ্লুয়েন্সি দর্শকদের মারাত্বকভাবে বিরক্ত করে। তাই কথা বলার সময় এসব ডিসফ্লুয়েন্সি যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।কারো এ সমস্যাটা থাকলে আজ এখন থেকেই দূর করার চর্চা করো।
শেষ কথা
একটা প্রেজেন্টেশনের শুরুটাই বলা যায় প্রেজেন্টেশনের প্রাণ। তোমার পরের প্রেজেন্টেশনে এই টিপসগুলো কাজে লাগিয়েই দেখো, সাফল্য আগের থেকে বেশি হতেই হবে! প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলেই হবে। আর যেটাই করো, খেয়াল রাখবে যেন সেটা অবস্থার সাথে যায় এবং কারো মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে। এই প্রেজেন্টেশন টিপসগুলো যদি তোমার ভাল লেগে থাকে, তাহলে এক্ষুণি তোমার বন্ধুদের সাথে লেখাটি শেয়ার করে দাও। কারণ মহান মানুষেরা কখনো একা শেখে না সবাইকে সাথে নিয়েই শেখে।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Design করে Freelancing Course (by Md. Kamruzzaman Shishir and A.S.M Arifuzzaman)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন