পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
একটু যখন বড় হলাম, তখন কোন কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার একটা আগ্রহ তৈরী হয়। ক্লাস নাইন-টেনে যখন উঠলাম, তখন জীবনে “জীববিজ্ঞান” নামে একটা বিষয় আসলো! আগে হয়তো আগ্রহ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, জীববিজ্ঞান পড়ার পর সেটা জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ালো! কারণ, মোটেও ভালো করতাম না এই একটা বিষয়ে। পড়তেও তেমন আগ্রহ পেতাম না। আবার গণিত বা পদার্থে কিছুটা ভালো করতাম। পড়ে মজাও পেতাম। তাই তখনই সিদ্ধান্ত নেই, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে।
আমার স্কুল ছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যেটা দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোরই একটা। ২০১৩ সালে রংপুর থেকে এসে নটরডেম কলেজে ভর্তি হই। আমার স্কুল যথেষ্ট ভালো ছিল। ঢাকায় মা-বাবা ছাড়া আসতে হতো, সঙ্গে হাজারটা সমস্যা, যেগুলোর কোনোটাই আমাকে রংপুরে সম্মুখীন করতে হতো না। কিন্তু তারপরেও নটরডেম কলেজে এসে ভর্তি হই। কেন? কারণটা শুনে হাসি পেতে পারে, আবার অনেকে সেটা মনে মনে ভেবে রাখতেও পারে! কারণ ছোটবেলা থেকেই এই কলেজের ব্যাপারে অনেক শুনতাম।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Finance Course
যখন একটু বড় হলাম, তখন এমনও শুনতাম এই কলেজে পড়লে বুয়েটে পড়া সহজ হয়, অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সহজ হয়ে যায়! আর যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ারই ইচ্ছা ছিল, স্বপ্নে সবসময় বুয়েটই অগ্রাধিকার পেত! তাই খুব সম্ভবত বুয়েটে পড়ার তাড়না থেকেই নটরডেম কলেজে ভর্তি হই! আর দেশের অন্যতম সেরা আর ঐতিহ্যবাহী কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার একটা ব্যাপার তো ছিলই।
ক্লাস শুরু করলাম। কলেজে যেতাম, আসতাম। দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে আসলো। কলেজে প্রথম বড় পরীক্ষা। পরীক্ষা দিলাম। খুব খারাপ দেই নি হয়তো, আবার খুব ভালোও না। যথাসময়ে রেজাল্ট দিল। রেজাল্ট হাতে পেলাম, দেখলাম। বাসায় একটা ছোটখাটো দুর্যোগ বয়ে গেল! স্কুলে ফার্স্ট না হলেও, মোটামুটি ভালো ছাত্র ছিলাম। আর কলেজের প্রথম রেজাল্টের পর, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল, যে ওটা আসলে আমার রেজাল্ট ছিল! ভাবলাম, পরবর্তী টার্মে ভালো করতে হবে। আবার পরীক্ষা আসলো, দিলাম। অবস্থা তথৈবচ! আগেরবারের চেয়েও খারাপ করলাম!
কলেজে তখন সায়েন্সে প্রায় ১৫০০ ছাত্র। ১ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত প্লেস দেয়। ছেলেরা মজা করে যাদের পজিশন ১ হাজারের ওপর, তাদেরকে “হাজারী ক্লাব” বলতো। আমার পজিশন সেবার প্রায় “হাজারী ক্লাব” ছুঁইছুঁই! বাসায় চূড়ান্ত রকমের অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করলো! ভালো ছাত্র ছিলাম একসময়। এই ব্যাপারগুলো তাই আমার পাশাপাশি আমার বাবা-মাকেও অনেক হতাশায় ফেলে দিল। এরকম কথাও শুনতাম, যে নটরডেম কলেজে “এত’র” মধ্যে না থাকলে চান্স পাওয়া সম্ভব না!
খুব কঠিন ছিল সে সময়গুলো। সামনে টেস্ট পরীক্ষা। কিছুটা চেষ্টা করলাম। অনেক বেশি ভালো না করলেও আগের গুলোর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আসলো পজিশন। দেখতে দেখতে এইচএসসি পরীক্ষা চলে আসলো। পরীক্ষা দিলাম। কলেজে থাকতেই আশেপাশের অনেককে দেখতাম, অনেক রাইটারের বই করে ফেলছে, এমনকি রেসনিক হ্যালিডের ফিজিক্স, হাওয়ার্ড এন্টনের ক্যালকুলাস বইও পড়ে ফেলছে! তাই সেটাকে যদি ভালো প্রিপারেশনের মাপকাঠি ধরি, আমি বেশ ভাঙাচোরা একটা প্রিপারেশন নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে যাই।
“বিশাল” একটা এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল! মৌসুম আসলো ভর্তি কোচিংয়ের! আশপাশ দেখে মনে হলো, জীবনের একটা ভয়ংকর মোড়ে পৌঁছায় গেছি কোনোভাবে! বিশাল এক প্রতিযোগিতা। চারপাশে অসংখ্য স্বপ্নালু মেধাবী মুখ! তবুও ভড়কে যাই নি। নিজের ওপর বিশ্বাস হারাইনি। ভড়কে না যেয়ে একটা পরিকল্পনা বা রুটিন করে নিলাম, আর সেভাবে পড়ালেখা করতে থাকলাম। আগের প্রস্তুতি তেমন ভালো না থাকায়, আমাকে মোটামুটি একটা “জ্ঞানের সাগর” সাঁতরাতে নামতে হলো, যেটার জন্য সময় ছিল মোটামুটি দেড়-দুই বছর, আমার ব্যর্থতায় সেটা নেমে এসেছিল মোটামুটি ৩ মাসে!
আমাদের বেলায় বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাটা হয় ১৭ অক্টোবর। পরীক্ষা দিয়ে যখন বের হলাম, মনে হলো, পরীক্ষাটা খারাপ দেইনি। মনটা হালকা লাগছিল। এমনকি এতটাই কনফিডেন্স চলে এসেছিল যে, পরবর্তীতে ঢাবি, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, জাবি, আইইউটি, সাস্টের মত জায়গায় পরীক্ষা বাকি থাকলেও পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম! ২৯ অক্টোবর রাতে রেজাল্ট হয়। আমার নাম লিস্টে ছিল! বেশ ওপরের দিকেই ছিল! কলেজে পারফরমেন্স খুব ভালো না থাকার পরও, অনেকের চেয়ে পরবর্তী এই ৩ মাসে এগুতে পেরেছিলাম।
আমি এই সময়টায় কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতাম! তোমরাও একটু চেষ্টা করে দেখতে পারো! Believe me, it works (worked for me actually!). কিংবা বলতে পারো, তোমাদের বড় ভাই হিসেবে কিছু উপদেশ দেওয়ার লোভ ছাড়তে পারছিনা আরকি!
আরো পড়ুন: যে গুণটি বদলে দেবে তোমার জীবন
এক,
সময় খুব কম। এই সময়টার প্রতিটা সেকেন্ড, মিনিট মূল্যবান। সেটা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। এখন এই সময় নষ্ট দুভাবে হতে পারে। মানবসৃষ্ট (তোমার সৃষ্ট!) বা অসুস্থতা! ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, ভাইবার, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি আর ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান্স বা এখনকার পোকেমন, সব এই সময়ে নির্বাসনে পাঠাও! পড়তে ভালো লাগছে না? উঠে যাও, একটু হাঁট, বন্ধুদের সাথে বা বাসার আর সবার সাথে আড্ডা দাও। ৫ মিনিটের জন্য ফেসবুকে ঢুকে আসি- এটা কখনোই করবে না। দেখবে সময় কখন, কোনদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে, টেরই পাওনি। কয়দিন চেষ্টা করলেই দেখবে, পেরে গেছ।
আরেকটা হচ্ছে অসুস্থ হওয়া চলবে না। ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই এসে দেখা যায় ডেঙ্গু, জণ্ডিস, টাইফয়েড বাঁধিয়ে ফেল। একটু সতর্ক থাকলেই এটা থেকে দূরে থাকা যায়। বাইরে কখনোই পানি খাবে না, পানি খেতে হলে মিনারেল ওয়াটার কিনে খাবে। বাসায় অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খাবে। বাইরের খাবার পারতপক্ষে বাদই দিয়ে দাও এসময়। সকালে বা বিকালে পড়লে বা ঘুমানোর সময় অবশ্যই কয়েল বা মশারি দিয়ে রাখবে। এই ডেঙ্গু বা টাইফয়েড-জন্ডিসের কারণে অনেকেই নিজের যোগ্যতা অনুসারে ফল পায় না। তোমাকে যেন এই দুর্ভাগ্যের শিকার না হতে হয়।
দুই,
নিজের একটা স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে নাও। কিভাবে পড়বে, কিভাবে পরীক্ষা দিবে, কোনটা কখন পড়বে, কিভাবে এন্সার করবে, এসব। অনেকেই অনেক ধরণের কথা বলবে- আগে ম্যাথ উত্তর করতে হয়, আগে কেমিস্ট্রি উত্তর করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো শুনে কাজ করবে না। বরং নিজের স্ট্র্যাটেজি নিজে ঠিক করে নিবে।
তিন,
এসময় সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হয়, তা হলো ভয় বা হতাশা চলে আসে। বিশাল একটা কম্পিটিশন বা আশেপাশে অনেক রকমের কথা শুনে নিজের ওপর অনাস্থা চলে আসে। পুরো ব্যাপারটাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তোমার থেকে অনেকেই বেশি মেধাবী থাকতেই পারে, অনেকে কোচিংয়েরপরীক্ষা পড়াগুলো আগে থেকেই জেনে থাকতে পারে। আরেকজন তোমার থেকে বেশি নাম্বার পেতেই পারে। এটায় হতাশ হওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, “আমি পারবো”। এটা হারানো চলবে না। অনেকেই এই নার্ভ ঠিক রাখতে না পেরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
কোচিংয়ে অনেক কঠিন কঠিন বিষয় পড়াবে, অনেকে দেখবা সেগুলো পেরেও যাচ্ছে। তোমার তাতে হতাশ হওয়ার দরকার নেই। ভর্তি পরীক্ষায় তোমার পড়া বইয়ের বাইরে থেকে কিচ্ছু আসে না। নিজের বইটাই ভালোমত পড়তে হবে, গাইড বা অন্য কঠিন-কঠিন, স্বাস্থ্যবান বই বাদ দিয়ে! সবসময় মাথায় রাখবে, “Whenever you feel like quitting, just think about why you started!”
চার,
আরেকজনের সাথে প্রতিযোগিতা করা চলবে না। প্রতিযোগিতা করতে হবে নিজের সাথে। তোমার বন্ধু তোমার চেয়ে বেশি পেল, সেটা দেখা যাবে না। তুমি আজকে যেটা পেলে, আগামী পরীক্ষায় সেটা ছাড়িয়ে যেতে হবে। তোমার বন্ধু সবসময়ই তোমার থেকে বেশি পেয়ে গেল, এটা যতটা না ব্যর্থতা, তার চেয়ে অনেক বড় ব্যর্থতা যদি তুমি নিজেকে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যেতে না পারো। কেউই সব পেরে ভর্তি প্রস্তুতি নিতে আসে না। কিন্তু শুরুতে যা ছিলা তুমি, সেটা নিয়েই যদি পরীক্ষায় বসো, উন্নতি করতে না পারো, সেই ব্যর্থতা শুধু তোমার।
Do something today, that your future self will thank you for
পাঁচ,
নিজের একটা রুটিন বানিয়ে পড়ালেখা করো। দুইদিন খুব ভালোমত পড়লাম, দুইদিন মজায় থাকলাম, এভাবে না। রুটিনমাফিক আগাও। তাহলে কষ্ট হবে কম, ফলপ্রসূ হবে সেটা বেশি।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
একটু চেষ্টা করে দেখই না, আমি যে কথাগুলো বললাম, অনুসরণ করা যায় কিনা! দেখ, আমি কিন্তু কিছুটা পিছিয়ে থাকা অবস্থাতেও পরে পরিশ্রম করে এগিয়ে আসতে পেরেছি। অবশ্যই তুমিও পারবে! যদি তুমি চাও! তোমার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তোমারই হাতে। Like Michael Canton said, “Do something today, that your future self will thank you for”!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন