নেতৃত্ব নিয়ে লেখা বই ডিভেলপিং দ্যা লিডার উইদিন ইউ বইতে একটা ঘটনার উল্ল্যেখ আছে। একবার এক ছোট বাচ্চা সিম্ফনির অনুষ্ঠানে গিয়ে এক লোককে দেখে অবাক হয়। সকল যন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে লোকটা হাত নেড়ে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাচ্চাটি মুগ্ধ হয়ে লোকটিকে প্রশ্ন করেছিলো, আপনার মতো সঙ্গীতজ্ঞ হতে চাইলে আমাকে কী করতে হবে? লোকটি হেসে জবাব দিয়েছিলো, বেশি কিছু না, কেবল কখন কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে হবে, তার নির্দেশ দেয়া শিখতে হবে।
এই ব্লগে আমি আলোচনা করবো নেতৃত্ব কি, নেতৃত্বের গুণাবলিগুলো কী কী, নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি, ইত্যাদি। আলোচিত হবে নেতৃত্ব দানে কী কী বিষয় জানা উচিত, লক্ষ্য রাখা উচিত কী কী বিষয় নিয়ে। আর লেখাটি শেষ হবে নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি দিয়ে, যা আপনাকে বড় বড় নেতাদের মনজগতকে জানতে সাহায্য করবে।
নেতৃত্ব কি ?
কোন একটি লক্ষ্য সাধনের লক্ষ্যে যখন কোন ব্যক্তি একটি নিদৃষ্ট জনগোষ্ঠীকে পরিচালিত করেন, তখন তাকে নেতা এবং তার কাজকে নেতৃত্ব বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলে Leadership. ভ্যান ফ্লিটের মতে, Leadership is an influence process directed at shaping the behavior of others, অর্থাৎ, নেতৃত্ব হলো একটি প্রভাব-প্রক্রিয়া যা অন্যদের আচরণ পরিবর্তনে ব্যবহৃত হয়। তাই বলা যায়, বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতিপয় ব্যক্তি বা দলের কর্মতৎপরতাকে প্রভাবিত করার প্রক্রিয়াই হলো নেতৃত্ব।
নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি ?
কেবল পদেই নয়, একজন নেতার নেতা হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন কিছু গুণের। নেতৃত্বের গুণাবলী একজন নেতাকে সফল করে তোলে, করে তোলে নির্ভরযোগ্য। একজন আদর্শ নেতার কী কী গুণ থাকা উচিত তা নিচে আলোচনা করা হলো,
-
ব্যক্তিত্ব
নেতৃত্ব দানে একজন নেতাকে সর্বপ্রথম হতে হবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ব্যক্তিত্ব একজন নেতার প্রধান গুণ। ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে একজন নেতা তার দলের অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে কাজকে গিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
-
দূরদর্শিতা
নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনে একজন নেতাকে আবশ্যিকভাবে দুরদর্শি হতে হবে। এর ফলে বর্তমানের পরিকল্পনা ভবিষ্যতে পুরো দলকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সে অনুযায়ী পরের কর্মপরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত, এই সকল কিছু সম্পর্কে একজন আদর্শ নেতার ধারণা থাকা আবশ্যক।
দক্ষ নেতৃত্ব দিতে চাই দক্ষ যোগাযোগের ধারণা। একজন নেতা তখনই কোন কাজে পুরো দলকে সাথে নিয়ে সাফল্য অর্জন করেন, যখন তার মধ্যে অন্যের সাথে, এবং দলের অপরাপর সদস্যদের সাথে যোগাযোগের দিক থেকে কোন প্রকার কমতি না থাকে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
-
বুদ্ধিমত্তা
নেতাকে হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত, নচেৎ দল সাফল্যের মুখ দেখবে না। যে কোন কাজে দলকে জেতাতে হলে একজন নেতাকে অনেক রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সেই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারা আদর্শ নেতৃত্বের লক্ষণ।
-
ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা
একটি প্রতিষ্ঠান বা সং গঠন চালাতে গেলে ব্যার্থতা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে একজন যোগ্য নেতা কিন্তু চুপ করে বসে থাকেন না। আদর্শ নেতা সবসময় ঝুঁকি নেয়ার পক্ষপাতি, সঠিক কর্মপরিকল্পনা অনুসারে সর্বোচ্চ পরিশ্রমই তার মূল লক্ষ্য, সফলতার বা বিফলতার চিন্তা তার পথের অন্তরায় হতে পারে না।
ছাত্রজীবনে নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি ?
নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনের প্রচেষ্টা ছাত্রজীবন থেকে শুরু করলে তা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আপনাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে কাজটি দেখতে যতটা কঠিন মনে হয়, আসলে কিন্তু ঠিক ততটাই সহজ! আসুন দেখে নিই এমন কিছু গুণ যা চর্চার মধ্য দিয়ে আপনি একজন সফল নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন-
-
আদর্শ নেতা নির্বাচন করুন
যোগ্য নেতা হতে হলে প্রথমেই আপনাকে বেছে নিতে হবে এমন একজন মানুষকে, যার জীবনাদর্শ আপনাকে মুগ্ধ করে। আদর্শ মানুষটির ভালো গুণগুলোকে লিস্ট করে একটি নোট খাতায় টুকে ফেলুন। এরপর লক্ষ্য করুন, টুকে নেয়া শব্দগুলোর মধ্যে আপনি নিজের কোনো দিক খুঁজে পান কিনা। যদি না পান তবে হতাশ না হয়ে, দ্বিগুণ উদ্যমে ওই গুণগুলো চর্চা শুরু করে দিন!
আরো পড়ুন: ক্ষুদিরাম : আঠারোর নেতা
-
দূরদৃষ্টি
একজন ভালো নেতার বিশেষ একটি গুণ হলো, সে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। অর্থাৎ সে তার উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর গতিপথ সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত। নেতার দূরদর্শিতাই পারে কোন কাজে সাফল্য এনে দিতে। তাই কী করছি, কেন করছি, এই কাজের ভবিষ্যৎ কী, কীভাবে অগ্রসর হবো-এসকল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা ও আত্মবিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরি।
-
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে যেকোন কাজকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যেতে। দলীয় কাজে নেতার মনোবল শক্ত না থাকলে দলের বাকি সদস্যের মনোবলও ভেঙ্গে পড়ে। যেমন প্রচণ্ড ঝড়ে মাঝি সাহস নিয়ে শক্ত করে হাল না ধরলে নৌকার ডুবে যাওয়া অনিবার্য, তেমনি কোনো দলীয় কাজে সফলতার সাথে অগ্রসর হতে হলে নেতার সৎ সাহস এবং ধৈর্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাই সব কাজে ইতিবাচক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরি করুন, এতে যেকোনো কাজে আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
-
সময়নিষ্ঠ ও বিনয়ী হওয়া
সময়মত কাজে আসা এবং কাজ সম্পন্ন করা একজন যোগ্য নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দলগত কাজে সময় নিয়ে হেলাফেলা করলে কাজের অগ্রসরতা বাধাগ্রস্থ হয় অনেকটাই। তাছাড়া দলের প্রত্যেক সদস্যকে নির্বিচারে সমানভাবে বিচার করা, সুন্দর ব্যবহার করা- এসকল বিষয় চর্চা করা উচিত। মনে রাখবেন, একজন রুক্ষ, কর্কশ নেতার চেয়ে একজন বিনয়ী নেতার গুরুত্ব ঢের বেশি।
-
সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা
ঝড়ের সময় যেমন মাঝি নৌকার হাল ধরে যাত্রীদের রক্ষা করে, তেমনি যাত্রীদের যোগানো সাহসই মাঝির মানসিক শক্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনি, দলীয় কাজে যেমন একজন নেতার যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নেতারও দরকার সদস্যদের পূর্ণ সমর্থনের কিংবা সক্রিয় অংশগ্রহণের।
দূরদর্শী নেতৃত্বে দরকার রূপকল্প
রবার্ট কে. গ্রিনলিফ তাঁর বই The Servant as Leader-এ লিখেছেন, ‘দূরদর্শীতা হচ্ছে একজন নেতাকে নেতৃত্ব দেয়, তাকে পথ দেখায়। যখন তিনি তার এই দূরদর্শীতা হারিয়ে ফেলেন এবং অন্য বিষয় দ্বারা চালিত হন তখন তিনি কেবল নামমাত্র নেতা। হেলেন কেলারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার চেয়ে খারাপ কী হতে পারে?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘দৃষ্টি আছে কিন্তু রূপকল্প (vision) নেই।’ সকল মহান নেতাই দুই জিনিসের অধিকারী ছিলেন: তারা জানেন তারা কোথায় যাচ্ছেন এবং তারা অন্যদেরকে নিজেদের অনুসারী করতে সক্ষম।
দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের বিবৃতি
আপনি কল্পনায় যা দেখবেন আপনি তাই হতে পারবেন। এটা আপনার সম্ভাব্য শক্তি। আমি প্রায়ই নিজেকে জিজ্ঞেস করি: একটি রূপকল্প কি একজন নেতাকে নির্মাণ করে? নাকি একজন নেতা একটি রূপকল্পকে নির্মাণ করে?
আমি বিশ্বাস করি রূপকল্প প্রথমে আসে। আমি এমন বহু নেতাকে চিনি যারা রূপকল্প হারিয়ে ফেলেছে। সেইজন্য, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও তারা হারিয়ে ফেলেছে। লোকজনের অগ্রগতি নির্ভর করে দৃশ্যমান শিক্ষার ওপর। একটি রূপকল্প যখন একজন নেতার সাথে যুগলবন্দী হয় তখন একটি আন্দোলনের সূচনা ঘটে। লোকজন একটি স্বপ্নকে অনুসরণ করে না। তারা একজন নেতাকে অনুসরণ করে যার সেই স্বপ্ন আছে এবং এটাকে কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার সামর্থ্য আছে। সেইজন্য, একজন নেতার আরম্ভ বিন্দু হচ্ছে একটি রূপকল্প, কিন্তু সেই রূপকল্প বেড়ে ওঠার জন্য দরকার অনুসারী।
দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের চারটি পর্যায়
দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের গুরুত্ব কী তা তো আলোচনা করা হলো, এবার দেখা যাক এই রূপকল্পের চারটি পর্যায় নিয়ে,
- কিছু লোকজন এটা কখনো দেখে না। (তারা বিস্ময়বোধকারী)
- কিছু লোকজন এটা দেখে কিন্তু এটা পূরণে নিজ থেকে চেষ্টা করে না। (তারা অনুসারী)
- কিছু লোকজন এটা দেখে ও এটা পূরণে নিজ থেকে চেষ্টা করে। (তারা অর্জনকারী)
- কিছু লোকজন এটা দেখে, এটা পূরণে নিজ থেকে চেষ্টা করে ও অন্যদেরও দেখতে সাহায্য করে। (তারাই নেতা)
হুবার্ট এইচ. হামফ্রে নিজেই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি ১৯৩৫ সালে তাঁর স্ত্রীকে একটি চিঠি লেখেন: ‘আমরা যদি নিজেদের মনগুলোকে কাজ করতে স্থির করি এবং আরও বড় ও মহান কাজ করতে আমাদের মনকে কাজে লাগাই তবে আমরা হয়ত একদিন ওয়াশিংটনের সরকার, রাজনীতি বা সেবামূলক কাজে নিজেদের খুঁজে পাবো। যাই হোক, আমাকে চেষ্টা করে দেখতেই হবে।’ পরবর্তীতে তাঁর কাজই বলে দেয় যে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের ধাপগুলো
তাহলে এখন প্রশ্ন হতে পারে, দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের ধাপগুলো কী কী? এগুলো হলো,
-
আপনি তাই দেখেন যা আপনি দেখতে প্রস্তুত
কনরেড এডেনিউয়ার বলেছেন, ‘আমরা সকলে একই আকাশের নিচে বাস করি, কিন্তু আমরা সবাই আকাশের দিকে এক দৃষ্টিকোণে তাকাই না।’ দুইজন লোক একই জায়গায়, একই সময়ে থাকলেও উভয়েরই দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয় কেন? এটার উত্তরটা বেশ সহজ। আমরা তাই দেখি যা আমরা দেখতে প্রস্তুত, প্রকৃতপক্ষে জিনিসটি কেমন তা দেখি না। প্রত্যেক সফল নেতাই লোকজনের সম্পর্কে এই ব্যাপারটি বোঝে এবং তিনটি প্রশ্ন করে : অন্যরা কী দেখে; কেন তারা এইভাবে দেখে এবং আমি কীভাবে তাদের দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে পারি?
-
আপনি কল্পনায় যা দেখবেন আপনি তাই পাবেন
যখন ডিজনী ওয়ার্ল্ড প্রথম চালু হলো তখন ওয়াল্ট ডিজনী আর এই পৃথিবীতে নেই। মিসেস ওয়াল্ট ডিজনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পাশে দাঁড়ানো কেউ একজন মিসেস ডিজনীকে বললেন, ‘ইস, ওয়াল্ট যদি আজকের দিনটি দেখতে পেত।’ মিসেস ডিজনী বললেন, ‘সে দেখেছিল।’ ওয়াল্ট ডিজনি জানতেন। রবার্ট উডরুফ জানতেন। এমনকি ফ্লিপ উইলসনও জানতেন! আপনি কল্পনায় যা দেখবেন আপনি তাই পাবেন।
আরো পড়ুন: কিভাবে নিজেকে নেতা হিসেবে গড়ে তুলবে!
-
আপনার চারপাশে দেখুন: অন্যদের মধ্যে কী ঘটছে?
শুরুতেই আমরা এক বালকের কথা বলেছিলাম, যে একজন সঙ্গীতজ্ঞ হতে চেয়েছিলো সেই সিম্ফনির নেতাকে দেখে। তাই আপনার চারপাশে দেখুন, অন্যরা কী করছে, কী ঘটছে তাদের মধ্যে। একটি ভালো ধারণা তখনই মহান হয়ে ওঠে যখন লোকজন এটার জন্য প্রস্তুত। যে স্বতন্ত্র ব্যক্তি লোকজনের প্রতি অধৈর্যশীল সে নেতৃত্বে অকার্যকর হয়ে ওঠে। বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে শক্তি নিহিত থাকে না; বরং ধীর পদক্ষেপে অন্যদের সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াতেই কার্যকর নেতৃত্ব নির্ভর করে। যদি আমরা বেশি জোরে দৌড়াই তবে আমরা আমাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা হারাবো।
-
নিজেকে ছাড়িয়ে দেখুন: দেওয়ালের ওপারে বড় চিত্রটি কী?
সামনে দেওয়াল থাকলে যেমন আমাদের দৃষ্টি আটকে যায় তেমনি আমাদের জীবনের নানান ছোট ছোট সমস্যার কারণে আমরা মুখ্য লক্ষ্যটি ভুলে যাই। নিজেকে দেওয়ালের উপরে উঠানো মানে সমস্যা অতিক্রম করে বড় চিত্র দেখার চেষ্টা করুন। দেওয়ালের ওপারে বড় চিত্রটি কী? এই প্রশ্নটি একজন নেতাকে একজন ব্যবস্থাপক থেকে আলাদা করে। নেতারা সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। তারা সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে কম উদ্বিগ্ন। তাদের চিন্তা হচ্ছে সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য কীভাবে বজায় রাখা যায় এবং এটার জন্য কী অর্জন করা উচিত। তারা প্রতিটি সমস্যাকেই সুযোগে পরিণত করে এবং সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে আসে।
-
উপরে তাকান: সৃষ্টিকর্তা আপনার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?
আমার প্রতি সৃষ্টিকর্তার উপহার হচ্ছে আমার সম্ভাবনাময় গুণাবলি।আমি আমার এই সম্ভাবনাময় গুণাবলি দিয়ে যেসব ন্যায়পরায়ণ কাজ করেছি সেগুলোই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার উপহার হবে। আমি বিশ্বাস করি মহান নেতারা সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস রাখেন। যা তাদেরকে তাদের নিজেদের চেয়েও উপরে তুলে ধরে। মহান রূপকল্পগুলো সেই ব্যক্তির চেয়েও বড়। পক্ষান্তরে, সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা পুরোপুরি ব্যর্থ হয় যখন আপনি চূড়ায় উঠে খেয়াল করেন, আপনি ভুল ভবনের চূড়ায় উঠেছেন। তাই শুরু থেকেই সতর্ক হোন।
-
আপনার কাছে কী আছে তা খুঁজে দেখুন
যে ব্যক্তি একটি রূপকল্প দেখে রূপকল্পটি সেই ব্যক্তি থেকেও বড়, মহান হতে হবে।রূপকল্প পূরণ হলে বহু লোককে স্পর্শ করা উচিত। আমি বহুবার জন এফ. কেনেডির ভাষণ পড়েছি। সেই ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন ষাটের দশকের মধ্যে আমেরিকা চাঁদে পা রাখবে। সেই স্বপ্নই বহু লোকজনকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
দূরদর্শী নেতৃত্বে রূপকল্পের বাধা
আমরা নিজেরা যেমন আছি, আমরা যেকোন জিনিসকে সেই রকমই দেখি। তারপরও রূপকল্প পূর্ণ করতে যে বাধাগুলো আসে তা মূলত একটি লোকজন ভিত্তিক সমস্যা। সাধারণত দশ ধরনের লোক একটি সংগঠনে রূপকল্প পূরণ করতে বাধা দেয়। আপনি যদি এই দশ ধরনের লোক হতে সতর্ক থাকতে পারেন তবে আপনি আপনার রূপকল্প পূরণ করতে পারবেন।
-
সীমিত নেতা
সবকিছুর উত্থান ও পতন নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর। এই কথাটি রূপকল্পের জন্য নিশ্চিতভাবে সত্য। একজন সীমিত নেতার হয় রূপকল্প থাকে না, না-হয় সে অন্যদের মধ্যে এই রূপকল্পকে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। ফ্রান্সের এক রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘যদি আপনি বড় কিছু করেন, তবে আপনি বড় বড় লোকজনকে আকর্ষণ করবেন। আর আপনি যদি ছোট কিছু করেন, তবে আপনি ছোট লোকজনকে আকর্ষণ করবেন। সাধারণত ছোট লোকজনই সমস্যা তৈরি করে।’
-
বদ্ধ চিন্তাবিদ
বদ্ধ চিন্তা নিয়ে একটি কৌতুক বলি। আসাদ ও সোয়াদ দুই বন্ধু। আসাদ তার দুই হাত সোয়াদকে দেখিয়ে বললো, ‘এই হাতগুলো একদিন মহান জিনিস করে দেখাবে। এই হাতগুলো একদিন বড় বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করবে বা অসুস্থদের সুস্থ করবে বা দুনিয়া-কাঁপানো কোন উপন্যাস লিখবে। এই হাতগুলো একদিন বিশ্বকে পরিবর্তন করবে!’ সোয়াদ যে বদ্ধ চিন্তা করতো, জিনিসপত্র যেমন তেমনিই দেখতো, সে বললো, ‘এগুলোর মধ্যে ঝোল লেগে আছে। যা আগে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেল।’
-
কঠিন তর্কবাজ ও বাচাল
বেশিরভাগ রূপকল্পগুলো বাস্তবে পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে কিছু কঠিন তর্কবাজ ও বাচাল লোকজনের জন্য। আপনি যদি কিছু সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চান তবে আপনাকে এটা সম্পর্কে সবকিছু জানতে হবে অথবা পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে তর্কবাজ লোকজন সবকিছুই জানে কিন্তু কাজে লাগানোর মতো কিছু বলতে পারে না।যারা তর্কবাজ ও বাচাল তারা ঘটনা ঘটার পরে ঘটনার বর্ণনা দেয়। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে কোন ইঙ্গিত দিতে পারে না।
-
অতীত পরাজয়
বহু লোকজন তাদের অতীত পরাজয়, ব্যর্থতা নিয়ে পড়ে থাকে, ভয় পায়। তারা রূপকল্প নিয়ে ঝুঁকিতে থাকে। তাদের নীতি হচ্ছে, ‘যদি আপনি প্রথমবার সফল না হন, তবে আপনি যে চেষ্টাগুলো করেছেন তার সবকিছু মুছে ফেলুন।’ তারা অন্যদের চেষ্টা করাতেও বাধা দেয়।
-
সংরক্ষণশীল লোকজন
কিছু লোকজন অগ্রগতির জন্য নিজেকে বদলাতে চায় না, তারা যেমন আছে তেমনই থাকতে চায়। তাদের এই সংরক্ষণশীল আচরণ তাদেরকে কখনো রূপকল্প দেখতে বা কাজ করতে সহায়তা করে না। তারা অন্যের রূপকল্প পূরণেও বাধা দেয়। নিজেদের কোন স্বপ্ন না থাকার দরুন তারা অন্যের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টাকেও বাধা দেয়। এই ধরনের লোকজন একই কাজ একই পদ্ধতিতে করে যায়। নতুনত্বকে তারা ভয় পায়। নিজেদের পূর্বের অবস্থান থেকেই সবকাজ করতে চায়।
-
ভীড়ের মধ্যে থাকতে চাওয়া
কিছু লোকজন ভিড় থেকে বের হয়ে আলাদা হাঁটতে চায় না। তারা অস্বস্তি অনুভব করে। তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকতে চায়। নিজেদেরকে আলাদাভাবে দেখাতে তারা ভয় পায়। এ ধরনের লোকজন একটি রূপকল্পকে তখনই গ্রহণ করবে যখন অধিকাংশ লোকজন এটাকে গ্রহণ করে নিবে। তারা কখনো সামনের সারিতে আসতে চায় না। সাথে চলা লোকজন
-
সমস্যা খুঁজে বেড়ায়
কিছু লোকজন যেকোন সমাধানের মধ্যেও সমস্যা খুঁজে বেড়ায়। তারা যেকোন সমাধানেও সমস্যা দেখে। আসলে আপনি যখন আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে চোখ সরিয়ে ফেলবেন তখনই সমস্যা দেখবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিছু লোকজন মনে করে যে সমস্যা খুঁজে বের করতে পারাও একটি কৃতিত্ব। আসলে তা নয়। এটা হচ্ছে একজন ব্যক্তির রূপকল্পের অভাব। এই ধরনের লোকজন রূপকল্পকে পাশ কাটিয়ে কেবল সমস্যা দেখে বেড়ায়। আর কোন সমাধানও দিতে পারে না। এদের জীবনে কোন ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তারা একথা স্বীকারও করবে না। কোন রকম একটি আবছা চিন্তা নিয়ে তারা বাস করে।
-
স্বার্থপর
স্বার্থপর লোকদের কখনো ভবিষ্যৎ রূপকল্প থাকে না। তারা নিজেদের স্বার্থের প্রতি বেশি আগ্রহী। এজন্যই তারা অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা করতে পারে না, একত্রে কাজ করতে পারে না। এমনকি তারা অন্যের আনন্দে আনন্দিতও হতে পারে না। তাদের চিন্তা থাকে, ‘এতে আমার লাভ কী? আমি কী পাব?’ তাদের এই স্বার্থপর চিন্তাই তাদেরকে নিচুপদে বেঁধে রাখে।
-
ব্যর্থতার পূর্বাভাস দানকারী
কিছু লোকজনের স্বভাবই হচ্ছে ভুল পথে পা দেওয়া। তারা খুব ভালো যন্ত্রাংশ থেকেও ত্রুটি খুঁজে বের করে। তারা কেবল বৈসাদৃশ্য বের করতে সক্ষম। দলের মধ্যে অনৈক্য তৈরি করে। তারা কেবল নেতিবাচক সুরে গান গাইতে থাকে। তাদের গানের শব্দে থাকে ব্যর্থতা, পরাজয়। তারা সব জায়গায় কাজ করার জন্য অন্যের অনুমতি চেয়ে বেড়ায়। তাদের ছায়াতেই তাদের হতাশা, অন্ধকার ফুটে ওঠে। তাদের বাহ্যিক ভঙ্গি সর্বদা বিষণ্ণ, সর্বদা খারাপ সময় ও অর্থ সংকটে ভোগে। তাদের জীবনের সবকিছুই সংকুচিত হতে থাকে; কোনকিছুই প্রসারিত হয় না বা জীবনে কোন অগ্রগতি নেই।
নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি
- “নেতাদের উচিৎ তার লোকদের জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া। সব সিদ্ধান্ত নেতাদের একার নেয়া উচিৎ নয়” – বিল গেটস
- “নেতা মানে যে অন্যদের মনে আশা জাগিয়ে রাখতে পারে” – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট
- “ঘৃণার কারণে মন অন্ধকার হয়ে যায়, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি কাজ করে না। নেতা হতে হলে ঘৃণা করা যাবে না” – নেলসন ম্যান্ডেলা
- “ক্ষমতাবান সে-ই, যাকে অন্যরা ক্ষমতাবান বলে বিশ্বাস করে। এটা একটা বিভ্রম, দেয়ালের গায়ে ছায়ার মত। আর একজন অতি ক্ষূদ্র মানুষের ছায়াও বিশাল হতে পারে” – জর্জ আর.আর.মার্টিন
- “সত্যিকার নেতা আদর্শ খোঁজে না, সে আদর্শের জন্ম দেয়” – মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
- “পাহাড় চূড়া নেতাদের অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু সমতলেই তারা নেতায় পরিনত হয়” – উইনস্টন চার্চিল
- “একজন সত্যিকার নেতা তার কথায় বিনীত, কিন্তু কাজে আক্রমণাত্মক”– কনফুশিয়াস
শেষ কথা
আমার এই আলোচনা মূলত এগিয়েছে জন সি ম্যাক্সওয়েলের ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ বইকে আশ্রয় করে। এখানে আমি দেখাতে চেয়েছি নেতৃত্ব কী, নেতৃত্বে কী কী বিষয়ে নজর দিতে হয়, রূপকল্প কী এবং তার বিবৃতি। নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি, যা এই লেখার একদম শেষে এসে তুলে দেয়া হয়েছে, আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, আপনার চলার পথের পাথেয় হবে, এমনটাই আশা করি।
নেতৃত্ব নিয়ে আরো পরিষ্কার ধারণা পেতে, নিজেকে সকলের চেয়ে এগিয়ে রাখতে টেন মিনিট স্কুলের Leadership Excellence এবং Communication Masterclass কোর্সদুটো আপনার সহায় হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন