ভুল থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে মন্দ কী? আর সেই “দারুণ কিছু” যদি হয় পৃথিবী কাঁপিয়ে দেওয়া সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, তবে তো কথাই নেই! মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো আসলে আবিষ্কার করার কথা কল্পনাই করেননি আবিষ্কারক! যা হওয়ার তা হয়েছে নিতান্ত দুর্ঘটনা বা ভুলবশত। এমন কিছু আবিষ্কার আর তার পেছনের মজার সব ঘটনা নিয়ে এই লেখা।
সুপার গ্লু
কোন জিনিস ভেঙে গেলে প্রথমেই আমাদের মাথায় যে জিনিসটির কথা আসে সেটি হচ্ছে সুপার গ্লু। এই সুপার গ্লুর উদ্ভাবনও হয়েছিলো নিতান্তই কাকতালীয়ভাবে!
১৯৪২ সালের কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। ড. হ্যারি কুভার গবেষণা করছিলেন মিত্র বাহিনীর পক্ষ নিয়ে। তিনি এমন একটি গান সাইট বানাতে চাইছিলেন যা মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা ব্যবহার করতে পারবে। কাজ করতে গিয়ে তিনি এক ধরনের আঠা তৈরি করে ফেললেন যেটি খুব দ্রুত ভীষণ শক্তিশালী বন্ধন গড়তে সক্ষম! কিন্তু গান সাইট তৈরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ড. কুভার তখন সেই আঠাটি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামালেন না।
তারপর কেটে গেলো অনেক বছর। ১৯৫১ সালে ড. কুভার কর্মরত ছিলেন ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানিতে। সেখানে প্লেনের ককপিটের উপরের আবরণের জন্য তাপ প্রতিরোধী দ্রব্য তৈরি নিয়ে কাজ করছিলেন। সেখানেই সেই নয় বছর আগেকার আঠা আবার উদ্ভাবন করেন তারা।
যখন আঠাটি একজোড়া রিফ্রাক্টোমিটার প্রিজমের মাঝে লাগালেন, তখন সবাই অবাক হয়ে দেখলো সেগুলো অত্যন্ত শক্তভাবে একে অপরের সাথে লেগে গিয়েছে! এবার আর নিজের আবিষ্কৃত আঠা “অ্যাডহেসিভ সায়ানোঅ্যাক্রিলেট” কে অবজ্ঞা করতে পারলেন না কুপার। বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো আজকের বহুল ব্যবহৃত সুপার গ্লু।
কোকা-কোলা
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়’র কথা উঠলে অবধারিতভাবেই চলে আসবে বিশ্বখ্যাত কোকা-কোলার কথা। কিন্তু এই কোকা-কোলার আবিষ্কার কীভাবে হলো সেটি কি জানো?
জন স্মিথ পেমবার্টন হলেন কোকা-কোলার আবিষ্কারক, পেশায় তিনি ছিলেন একজন হাতুড়ে ডাক্তার বা রসায়নবিদ। তিনি তাঁর তৈরি করা ওষুধ ফেরি করে বিক্রি করতেন, আর অবসরে আবিষ্কারের নেশায় মেতে থাকতেন। ১৮৮৬ সালে তিনি এক ধরনের সিরাপ আবিষ্কার করেন। তাঁর দাবি ছিল সিরাপটি মাথা ব্যথার টনিক হিসেবে চমৎকার কাজ করে। প্রথমদিকে সেটি ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে প্রতি গ্লাস ৫ সেন্ট করে বিক্রয় করা হতো। ভালই চলছিল ব্যবসা, এরই মাঝে এক কাণ্ড ঘটলো। একদিন দোকানে এক লোক এলো প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে, এসেই এক গ্লাস সিরাপ চাইলো। কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে সিরাপ ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে কার্বোনেটেড মেশানো পানির সাথে মিশ্রিত ছিল। মজার ব্যাপার লোকটি সেই বিচিত্র সিরাপ খেয়ে দারুণ আনন্দ পেলো!
তখনই পেমবার্টনের মাথায় আইডিয়া এলো এই পানীয়টি বাজারজাত করার। প্রথম বছরে তিনি ৫০ ডলার আয় করেন কিন্তু ব্যয় হয় ৭০ ডলার। গচ্চা খেয়ে বিমর্ষ পেমবার্টন তার প্যাটেন্টটি বিক্রি করে দেন।
মূলত কোকা-কোলা জনপ্রিয় হয় সেই ক্রেতার মাধ্যমেই। তারপরের গল্প সবারই জানা। বর্তমানে পৃথিবীর ২০০টি দেশে কোকা-কোলা বাজারজাত করা হয়। পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ বোতল কোকা-কোলা পান করা হয়ে থাকে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
পটেটো চিপস
পটেটো চিপস কার না পছন্দ? ছেলে–বুড়ো সবাই পছন্দ করে পটেটো চিপস।
পটেটো চিপস প্রথম তৈরি করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক শেফ। জর্জ ক্রাম নামের সেই শেফ কাজ করতেন মুন’স লেক হাউস নামের এক রেস্তোরাঁয়, সেখানে গ্রাহকদের কাছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার ছিল।
১৮৫৩ সালের কথা, একদিন এক ক্রেতা এসে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের অর্ডার দিলেন। যথারীতি জর্জ ক্রাম খাবার প্রস্তুত করে পাঠালেন, কিন্তু সেই ক্রেতা গ্রাহক ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের আলুগুলো খুব মোটা বলে অভিযোগ করেন এবং সেগুলো আরো পাতলা করে আনার জন্য ক্রামকে বার বার রান্নাঘরে পাঠাচ্ছিলেন।
বিরক্ত ক্রাম আলুর টুকরাগুলোকে একদম পাতলা করতে করতে কাগজের মতো পাতলা করে ফেললেন! তারপর সেগুলোকে মচমচে করে ভেজে বেশি করে লবণ মাখিয়ে সেই ক্রেতার সামনে পরিবেশন করেন। এবার কিন্তু ক্রামকে অবাক করে দিয়ে গ্রাহক সেগুলো খুব পছন্দ করে খেলেন। ব্যস! আবিষ্কার হয়ে গেল আমাদের প্রিয় পটেটো চিপস!
পটেটো চিপস কতোটা জনপ্রিয় সেটা জানতে একটি তথ্যই যথেষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মোটা হয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করেন পটেটো চিপসকে!
পেসমেকার
পেসমেকার হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিভাইস যেটি অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন মিনিটে ৬০-৯০ টি। হৃদস্পন্দন যখন কমে যায় তখন এটাকে স্বাভাবিক করার জন্য পেসমেকার ব্যবহৃত হয়। লাখো মানুষের প্রাণ রক্ষাকারী এই পেসমেকারের উদ্ভাবন হয়েছে একদম ভুলবশত!
১৯৬০ সালে পেসমেকার প্রথম মানুষের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়
উইলসন গ্রেটব্যাচ নামের এক বিজ্ঞানী ছিলেন, তিনি এমন একটি উপায় খুঁজছিলেন যেন হৃৎপিণ্ডের ব্লক সারিয়ে সেটিকে কর্মক্ষম করে তোলা যায়। পশুদের হৃৎস্পন্দনের শব্দ রেকর্ড করার জন্য তিনি একটি অসিলেটর আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে মনের ভুলে উইলসন একটি ট্রানজিস্টর সেই যন্ত্রে স্থাপন করেন। তারপর যখন সুইচ অন করেন তখন চেনা একটা শব্দের সাথে মিল খুঁজে পান! শব্দটি এমন একটি ধরণ মেনে চলছে যা মানুষের হৃৎস্পন্দনের সাথে হুবহু মিলে যায়!
উইলসনের এই আবিষ্কারের পরবর্তীতে নাম দেয়া হল পেসমেকার। তিনি এই যন্ত্র পশুদের দেহে স্থাপন করে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ১৯৬০ সালে পেসমেকার প্রথম মানুষের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। সূচনা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্তের।
স্যাকারিন
চিনির প্রধান বিকল্প স্যাকারিন। এটি আবিষ্কারের গল্পটা বেশ মজার। বিজ্ঞানীর অজান্তেই আবিষ্কার হয়ে গেল স্যাকারিন। কিন্তু কীভাবে?
১৮৭৯ সালের কথা। ল্যাবরেটরিতে কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংশ্লেষণের উপর গবেষণা করছিলেন কনস্টাইন ফাহলবার্গ। কাজের প্রচুর চাপ। অবসরটুকু কাজে লাগাবেন ভেবে গবেষণাগার থেকে ফাহলবার্গ হাতে করে কিছু সামগ্রী বাসায় নিয়ে এলেন। এদিকে খাওয়ার সময় সেই কখন পেরিয়ে গেছে! ফাহলবার্গ এর পেট জানান দিলো ক্ষুধা লেগেছে। কিছু খাবার নিয়ে চটপট খেতে বসে গেলেন ফাহলবার্গ।
আরও পড়ুন: টি-শার্ট ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা টি-শার্ট ডিজাইনিং টিপস
কিন্তু খাবার মুখে দিয়েই থমকে গেলেন তিনি। খাবারের ভেতর চিনিজাতীয় কিছুই নেই, তাহলে তার হাতের রুটিটাকে মিষ্টি লাগছে কেন? বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী ফাহলবার্গ বুঝতে পারলেন এই মিষ্টতার উৎস তার হাতের আঙ্গুল! গবেষণাগারে যে রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করছেন সেগুলো থেকে আঙ্গুলে মিষ্টতা এসেছে। মজা পেয়ে তিনি এই চিনিজাতীয় পদার্থের উপর আরো বেশী গবেষণা চালাতে লাগলেন। আবিষ্কার হলো চিনির প্রধান বিকল্প স্যাকারিন।
স্যাকারিনে ক্যালরি পাওয়া যায় না। তাই এটা শরীরের জন্য পুষ্টিকর নয়। পুষ্টিকর না হলেও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য স্যাকারিন আশীর্বাদ স্বরূপ, কারণ জিভে মিষ্টির স্বাদ পেতে কে না পেতে ভালবাসে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন