পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট, ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের অন্যতম সেরা এক বীর হিসেবে তাঁর নাম লেখা থাকবে। যুদ্ধের ময়দানে অসম সাহসিকতা আর কৌশলের প্রখরতায় জয় করেছিলেন রাজ্যের পর রাজ্য। কিশোর বয়স থেকেই তার মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠেছিল বীরোচিত সাহস, যার সাথে সংমিশ্রণ ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার।
একবার এক ব্যবসায়ী ঘোড়া বিক্রির জন্য এলো আলেকজান্ডারের বাবা রাজা ফিলিপের কাছে। চমৎকার টগবগে একটি ঘোড়া, সচরাচর এমন সুন্দর ঘোড়া দেখা যায় না। রাজার পেয়াদারা ঘোড়াটিকে বাজিয়ে দেখার জন্য মাঠে নিয়ে যেতেই ঘোড়াটি আচমকা ফুঁসে উঠলো! যেউ কেউ তার পিঠের উপর চড়তে যায়, ঘোড়াটি লাফিয়ে তাকে শূন্যে ছুঁড়ে দেয়! পুরো ঘটনাটি দূর থেকে দেখছিলেন ফিলিপ এবং কিশোর আলেকজান্ডার।
বুদ্ধিমান আলেকজান্ডার বুঝতে পারলেন ঘোড়াটি নিজের ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে। তিনি শান্তভাবে ঘোড়ার পাশে গিয়ে আস্তে করে ঘোড়ার মুখটা ধরে সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। তারপর ঘোড়াটির পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দেওয়ার ছলে একলাফে পিঠের উপর উঠে বসেন! ছেলের সাহস ও বুদ্ধিমত্তা দেখে মুগ্ধ হলেন বাবা। তিনি আলেকজান্ডারকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তুমি একদিন অনেক বড় সাম্রাজ্যের অধিকারী হবে, নতুন নতুন রাজ্য জয় করবে।”
প্রকৃতপক্ষে ফিলিপ অনুভব করেছিলেন তার ছেলের ভেতরের ছাইচাপা অমিত প্রতিভার কথা। প্রতিভা বিকশিত করার জন্য একজন সত্যিকারের গুরুর দীক্ষা প্রয়োজন, যিনি আলোকিত করবেন আলেকজান্ডারকে প্রকৃত শিক্ষায়। তাই ফিলিপ আমন্ত্রণ জানালেন আরেক জীবন্ত কিংবদন্তীকে- এলেন মহাজ্ঞানী অ্যারিস্টটল।
অ্যারিস্টটলের কাছে প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন আলেকজান্ডার। ঐতিহাসিকদের অভিমত, নিজেকে বিশ্বজয়ী হিসেবে গড়ে তোলার রসদ তিনি পেয়েছিলেন অ্যারিস্টটলের কাছেই, নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব আর মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে। অ্যারিস্টটলকে আমৃত্যু গভীর সম্মান প্রদর্শন করে এসেছেন আলেকজান্ডার। গবেষণার যাবতীয় অনুষঙ্গ যোগাড়, খরচা ইত্যাদির সমস্ত দায়িত্বভার নিজের হাতে দেখভাল করেছেন। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “জীবন পেয়েছি পিতার কাছে। কিন্তু সেই জীবনকে কী করে সুন্দর করতে হয়, সে শিক্ষা পেয়েছি গুরুর কাছে।”
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
আলেকজান্ডার বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৩ বছর। তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীব্যাপী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর এই অদম্য বাসনাকে পূর্ণ করার অতিমানবীয় লক্ষ্যে ক্ষণজীবী এই মানুষটি সারাজীবনের অর্ধেকই কাটিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনি সেতু বন্ধন রচনা করেছিলেন প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের। সেই সুদূর গ্রীস থেকে একের পর এক সাম্রাজ্য জয় করে তাঁর বাহিনী চলে এসেছিল ভারত পর্যন্ত। তাঁকে নিয়ে কতো কিংবদন্তী, কতো লোকগাথা!
পারস্যের কাছে তিনি পরিচিত ইস্কান্দার বাদশাহ হিসেবে, ভারতবর্ষেও ইস্কান্দারের অপভ্রংশ “সেকান্দার বাদশাহ” নামে খ্যাত তিনি। দুই হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও আলেকজান্ডারকে নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহে যেন এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। আলেকজান্ডার জয় করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাম্রাজ্য।ভারত, পারস্য ও গ্রীক এই তিনটি অসামান্য সভ্যতার সম্মিলন সম্ভব হয়েছিল, যদিও খুব স্বল্প সময়ের জন্য, কেবল তাঁর বিজয়াভিযানের ফলেই। সেজন্যই ইতিহাসে আলেকজান্ডার এত অভিনন্দিত, এত বেশি আলোচিত।
বহু দেশ ঘুরে বহু রাজ্য জয় করে টগবগে তরুণ আলেকজান্ডার ম্যালেরিয়ার কবলে পড়লেন। প্রবল পরাক্রমশালী শাসক আজ সামান্য মশার কামড়ে শয্যাশায়ী, নিজের রাজ্য থেকে অনেকদূরে, শত্রুরাজ্যে অসহায়ভাবে পড়ে আছেন। জীবনের প্রতাপ দেখেছেন, আজ প্রদীপের তলার আঁধারটাও দেখা হয়ে গেল এই মহান বীরের। এক পর্যায়ে তাঁর বোধোদয় হলো- এতদিনের তিলে তিলে অর্জিত সম্পদ, সুবিশাল সাম্রাজ্য, অপ্রতিরোধ্য সৈন্যবাহিনী- সবই যেন মূল্যহীন! আলেকজান্ডারের মনে তখন মূর্ত একটিই ভাবনা- চিরজীবন কারো কাছে হার না মানা সম্রাট আজ নতজানু, মৃত্যু নিকটবর্তী এবং তাঁর আর কোনদিন নিজ মাতৃভূমিতে ফেরা হবে না।
বিষণ্ণ আলেকজান্ডার তাঁর সেনাপতিদের ডাকলেন, সবচেয়ে বিশ্বস্ত, কাছের মানুষ, পৃথিবীর এমাথা থেকে ওমাথা তাঁর পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে যারা। তিনি সবাইকে সমবেত করে বললেন, ‘আমি ওপারের ডাক শুনতে পাচ্ছি, বুঝতে পারছি খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেবো। আমার অন্তিম তিনটি ইচ্ছে আছে, সেগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়।’
সেনাপতিরা অশ্রুসজল চোখে আলেকজান্ডারের কথায় সম্মতি জানালেন। আলেকজান্ডার বলা শুরু করলেন, ‘আমার প্রথম ইচ্ছে- আমার শবদেহ সমাধিক্ষেত্রে বহন করে নিয়ে যাবে কেবল আমার চিকিৎসকেরা।’
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়, এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে- মানুষের জন্য কিছু করা।
একটু থেমে তিনি টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবার বললেন, ‘আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে- সমাধি পানে আমার শবদেহ বয়ে নিয়ে যাবে যে পথে- সেই পথে আমার অর্জিত সব সোনা-রূপা, মণি-মুক্তা, ধনরত্ন ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার তিনি বললেন, ‘আমার তৃতীয় এবং শেষ ইচ্ছে হলো- শবদেহ বহনের সময় আমার হাত দুটো কফিনের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে রাখবে।’
আলেকজান্ডারের প্রিয় সেনাপতি তাঁর হাতে গভীর শ্রদ্ধামাখা চুম্বন করে বললেন, ‘আমরা অবশ্যই আপনার এসব ইচ্ছে পূরণ করব।’ কিন্তু মহান সম্রাট! আমাদের বড় কৌতূহল জাগছে; আপনি অনুগ্রহ করে বলবেন, কেন এমন আদেশ?’
আলেকজান্ডারের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করে উঠলো, কিন্তু ঠোঁটের কোণে খেলছে রহস্যময় হাসি। তিনি বললেন, “আমি আমার জীবনের বিনিময়ে তিনটি বিষয় শিখেছি, তা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। প্রথমত, আমার শবদেহ চিকিৎসকেরা বহন করবে, যেন সবাই উপলব্ধি করতে পারে- মানুষের জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে এলে পৃথিবীর কোন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয় তাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনা।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স
দ্বিতীয় ইচ্ছের ব্যাখ্যায় আলেকজান্ডার বলেন, ‘সমাধিপানের পথে ধনরত্ন ছড়িয়ে দেবে, যেন সবাই জেনে যায়- আমি সারাটি জীবন ব্যয় করেছি সম্পদ অর্জনের পেছনে, কিন্তু তার কিছুই সাথে করে নিতে পারছি না!
তৃতীয়ত, কফিনের বাইরে হাত বের করে রাখবে। কারণ আমি বিশ্বকে জানাতে চাই- আমি পৃথিবীতে শূন্য হাতে এসেছিলাম; আবার যাওয়ার সময় শূন্য হাতেই ফিরে যাচ্ছি।
সময় সব সম্পদের চেয়ে মূল্যবাদ। আমরা আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারি কিন্তু সময় একবার চলে গেলে তা আর কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব না। আমরা যখন কাউকে সময় দিই- প্রকৃতপক্ষে তাকে আমাদের জীবনেরই একটি অংশ দিয়ে দিচ্ছি যা আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না। আমার সময়ই যে আমার জীবন!’
প্রিয় সেনাপতিদের সাথে কথপোকথনের এক পর্যায়ে চোখ দুটি বুঁজে আসে সম্রাটের, পরিসমাপ্তি ঘটে এক অসম বীরত্বমাখা অধ্যায়ের।
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট মৃত্যশয্যায় উপলব্ধি করেছিলেন জীবনের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য- পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়, এবং জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে- মানুষের জন্য কিছু করা।
(খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডার ব্যাবিলনে (বর্তমান ইরাকে) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরেই স্ত্রী রোক্সানার কোল জুড়ে তাঁর পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং উত্তরাধিকারীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে খানখান করে ফেলে। এভাবে কালের পরিক্রমায় গ্রীস এবং প্রাচ্যের সমন্বয়ে গঠিত আলেকজান্ডারের সেই সুবিশাল সাম্রাজ্য হারিয়ে যায়, কিন্তু ‘আলেকজান্ডার‘ নামটি অমর হয়ে থেকে যায় ইতিহাসের পাতা জুড়ে।)
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে ফাবিহা বুশরা
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন