পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
জীবনে চলার পথে কতজনের কাছে কতরকম উপদেশের দেখা মেলে। বেশিরভাগই ভুলে যাই আমরা, জীবনে প্রয়োগ করা হয়ে উঠে না। কিন্তু কিছু উপদেশ, বিশেষ কিছু কথা– মনে গেঁথে যায় চিরদিনের জন্য, ঘুরিয়ে দেয় জীবনের মোড়।
দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করে রাখা বিল গেটসও জীবনে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন মায়ের দেওয়া তিনটি উপদেশ।
বিল গেটস তখন বয়সে অনেক ছোট। স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছেন সবে। সেদিন পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, মা জানতেন। তিনি ঘরে পা রাখতেই সামনে দাঁড়িয়ে মা!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
“বাবা, গণিত পরীক্ষায় কতো নাম্বার পেয়েছিস?”
গেটস মাকে তার নাম্বার বললেন। মা খুশি হয়ে বললেন, “বাহ! এতো ভাল নাম্বার তোর ক্লাসে আর কয়জন পেয়েছে?”
“আমি একাই পেয়েছি মা!”
“বেশ বেশ! আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুই একাই এই নাম্বার পেয়েছিস। তুই দশ–বিশ, চল্লিশ–পঞ্চাশ এমনকি আশি–নব্বই পেলেও আমি রাগ করতাম। কিন্তু তুই একদম শূন্য পেয়েছিস! এবার নতুন করে এই শূন্য থেকেই শুরু কর সবকিছু। তবে তোর জন্য মায়ের তিনটি উপদেশ রইলো–
১. প্রচুর বই পড়বি। ক্লাসের পড়ার বাইরেও বিশাল একটি জগত রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে বেশি করে জানবি, বেশি করে পড়বি। আর নতুন নতুন সব বিষয়ের বই পড়বি, যেগুলো সচরাচর অন্যরা পড়ে না।
২. তুই যেরকম চিন্তা করবি, তোর জীবন সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই সবসময় স্রোতের বাইরে চিন্তা করবি। সবার মতো হুজুগের পেছনে ছুটবি না। কখনো ছোট চিন্তা করবি না। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখবি, এতো বড় যেন নিজের কাছেই অসম্ভব লাগে,
অন্যদের কাছে সে স্বপ্নের কথা বলতে ভয় হয়!
৩. জীবনে এমন কাজ করবি যা অন্য কেউ করছে না। বেশিরভাগ মানুষ ঘুরেফিরে প্রতিষ্ঠিত কিছু পথেই ক্যারিয়ার গড়ে তোলে, কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। তুই সবার চেয়ে ভিন্ন পথে হাঁটবি, ভিন্ন কাজ করবি। তুই নিজেই পথ তৈরি করবি, মানুষকে স্বপ্ন দেখাবি।
সময় তখন ১৯৬৩ সাল। বিল গেটসের বয়স তখন আট বছর। তার মা স্কুল শিক্ষিকা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস তাঁকে যখন এই উপদেশ তিনটি দিলেন তখন কেউ চিন্তাও করেনি এই তিনটি উপদেশ কীভাবে বিল গেটসের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হবে একদিন, বিপ্লব বয়ে আনবে পৃথিবীজুড়ে, স্রোতের বাইরে গিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শেখাবে কোটি কোটি মানুষকে!
প্রথম উপদেশটি ছিল বই পড়া নিয়ে।
বিল গেটস এখনও প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে বই পড়েন। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “সুপারহিরোদের যেমন বিভিন্ন অতিমানবীয় ক্ষমতা থাকে, আপনি যদি সুপারহিরো হতেন আপনি কোন ক্ষমতা চাইতেন?”
সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি হেসে উত্তর দিলেন, “আমি আরো দ্রুত বই পড়ে শেষ করার ক্ষমতা চাইতাম!”
বিল গেটস তাঁর সাফল্যের রহস্য হিসেবে এই বই পড়ার অভ্যাসকেই তুলে ধরেন। কারণ পৃথিবী এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত যে, জ্ঞানের দখলে অন্যদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে না রাখলে টিকে থাকা অসম্ভব। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে অনেকে ভুল করে। তারা প্রচুর বই পড়ে, কিন্তু সেখান থেকে শেখার জিনিস খুব কমই থাকে।
বিল গেটস বলেন, “আপনার বইয়ের বাছাই এমন হওয়া উচিত, যেগুলো আপনার জীবনে অনন্য মূল্যবোধ যোগ করবে। বইটি পড়া শুরুর আগে আপনি যেমন ছিলেন, বইটি পড়ে শেষ করার পর আপনি একদম পরিবর্তিত একজন মানুষ হয়ে যাবেন। বাইরে থেকে দেখতে আগের মতোই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে মানসিকতায় বদলে যাবে অনেক কিছু।“
বিল গেটস শুধু যে প্রচুর বই পড়েন তাই নয়, সেগুলো নিয়ে তাঁর মতামত, অনুভূতি, কী কী শিখলেন ইত্যাদি নিয়ে তাঁর একটি ব্লগও আছে-
https://www.gatesnotes.com/Books
দ্বিতীয় উপদেশটি ছিল অন্যরকমভাবে ভাবতে শেখা নিয়ে।
ভেড়ার পালের গল্প নিশ্চয়ই সবাই জানা আছে। পালের সামনের ভেড়াগুলোকে পেছনের ভেড়াগুলো অন্ধভাবে অনুসরণ করতে থাকে। রাখালের পাহারাও দিতে হয় না। বাস্তব জীবনেও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমরা অনেকেই সেই ভেড়ার পালের মতোই গণ্ডিবদ্ধ কিছু চিন্তাভাবনায় আটকা পড়ে আছি। সমাজ যা বলে, পরিবার যা চায়– আমরা তার বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না অনেক ক্ষেত্রেই। এজন্য পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে কমন অজুহাত হলো, “লোকে কী বলবে?”, “আমার বাবা–মা এটা মেনে নিবে না!” ইত্যাদি।
আমরা কবে এই অজুহাতের বেড়াজাল ভেঙ্গে নতুন আঙ্গিকে ভাবতে শিখবো?
তৃতীয় উপদেশটি ছিল নতুন কিছু করা নিয়ে।
আইনস্টাইনের একটি কথা রয়েছে, “বোকামি হলো সেটাই– যখন মানুষ ঘুরেফিরে একই কাজ করে যায় সবার মতো, আর আশা করে ভিন্ন ফলাফলের।”
অনেকেরই স্বপ্ন জীবনে অনেক বড় হওয়ার, “Mediocrity”- এর গণ্ডি ভেঙে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর। গ্যারি ভেইনারচাক নামে আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ আছেন, খুব সফল উদ্যোক্তা। তাঁর কাছে একবার কিছু তরুণ এলো যারা সবাই তাঁর মতো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সবাই ঘুরেফিরে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প করছে হঠাৎ গ্যারি সবাইকে একটি প্রশ্ন করলেন, “গত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবাই কে কী করেছে?”
আরও পড়ুন:
৫টি ফ্রি অনলাইন কোর্স: ঘরে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষা
ফ্রিল্যান্সিং কি? এই ক্যারিয়ার গাইডলাইনগুলো জেনে নিন
একেকজনের একেক উত্তর– কেউ বেড়াতে গিয়েছে, কেউ বিশ্রাম নিয়েছে, কেউ বিনোদনে কাটিয়েছে। গ্যারি মুচকে হেসে বললেন, “তোমরা এই এক শুক্রবারে যে পরিমাণ ছুটি কাটিয়েছো আমি গত পাঁচ বছরেও সে পরিমাণ ছুটি কাটাইনি! ছুটির দিনে আমি আরও বেশি করে কাজ করি। সুতরাং আমাকে কীভাবে ছুঁতে পারবে সে চিন্তা না করে নিজেকে আরো পরিশ্রমী করে তোলায় মনোযোগ দাও।”
রবার্ট ফ্রস্টের চমৎকার কিছু পংক্তি রয়েছে-
Two roads diverged in a wood, and I—
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.
ভিন্নপথে, নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটতে চাওয়ার ঝুঁকি অনেক, তাই পরিশ্রমও করতে হবে আর সবার চেয়ে বেশি, কিন্তু একবার সাফল্যের দেখা পেয়ে গেলে যেই তৃপ্তি, যেই গৌরব অনুভব করবে, তার সাথে পৃথিবীর আর কোনকিছুর তুলনা হয় না!
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মনিরা আক্তার লাবনী
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন