প্রতি সেমিস্টারের শুরুতেই আমরা ঠিক করি যে, এবার আগের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু, কীভাবে করব সেটা ভাবতে গেলে আমরা অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলি। অনেকে হতাশ হয়ে উদ্যোগ নেয়াই ছেড়ে দেই। আজকের এই লেখাটা তাদের জন্য, যারা তাদের রেজাল্ট আগের চেয়ে ভাল করার উপায় খুঁজছে।
১। ছোট ছোট গোল সেট করা:
বেশ কিছু রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে যে, পড়তে বসার আগে গোল সেট করে নেয়াটা খুবই কার্যকরী। তাই, শুরুতেই কী কী বিষয়ের কতটুকু অংশ কতটা সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে তার একটি গোল সেট করে নেয়া উচিত। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যেন সেগুলো অবাস্তব না হয়। ঝোঁকের বশে অল্প সময়ে অনেক পড়ে ফেলার গোল সেট করলে, তা কাজে তো লাগবেই না; বরং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারার হতাশা ভর করবে।
২। পড়ার একটি প্ল্যান তৈরি করা:
সারাবছর আজ পড়ব, কাল পড়ব ভেবে সব পরীক্ষার আগের রাতের জন্য জমিয়ে রাখার দুর্দশার অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই আছে। এমন ঝামেলার মুখোমুখি আমাদের হতে হয় পড়ার সঠিক কোন প্ল্যান না থাকার ফলে। তাই, সেমিস্টারের শুরুতেই পড়ার একটা প্ল্যান তৈরি করে ফেলতে হবে। এই প্ল্যান যে শুধু আমাদের আরো গোছালো করে তুলবে তাই না, বরং সময়কেও পুরোপুরি কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
সবসময় এই প্ল্যান যে শতভাগ কাজ করবে, তা কিন্তু নয়। কখনো হয়তো একটু এদিক সেদিক হবে। কিন্তু তারপরও সময়কে কাজে লাগিয়ে দিনের পড়া দিনে পড়ে ফেলতে পরিকল্পনার কোন জুড়ি নেই।
৩। পড়ার মাঝে ছোট ছোট বিরতি নেয়া:
এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমাদের পড়তে খুব একটা ভালো লাগে না। কিন্তু, তারপরও জানতে হবে বলেই পড়া। আবার এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমাদের এতো ভালো লাগে যে একবার পড়তে বসলে সময়ের কথা খেয়ালই থাকে না। এই দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু পড়ার মাঝে ছোট করে ব্রেক নেয়া উচিত।
কেননা, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, অনেকক্ষণ ধরে পড়ার ফলে আমাদের মাঝে এক ধরণের ক্লান্তি চলে আসে। আমাদের ব্রেইনেরও তখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয় । তখন ৫-১০ মিনিটের ছোট একটা ব্রেক নিয়ে কারো সাথে কথা বলা, বা একটা গান শোনা আমাদেরকে আবার চাঙ্গা হতে সাহায্য করে। কিন্তু, এই ব্রেক নেয়ার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই ব্রেক যেন ১০ মিনিটের জায়গায় কয়েক ঘন্টায় না রূপ নেয়।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৫
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৪। নতুন নতুন টেকনোলোজি সম্পর্কে জানা:
একটা সময় ছিল, যখন পড়াশোনা বলতে বই নিয়ে টেবিলে বসে পড়াটাই বোঝাতো। কিন্তু, সেই দিন এখন আর নেই। এখন বই শুধু আর দুই মলাটের মধ্যে আটকে থাকা পৃষ্ঠাগুলোই না, বরং এখন বই এর রয়েছে নানান রূপ। অনলাইন ব্লগ আর্টিকেল হোক, বই এর পিডিএফ ফর্ম হোক কী বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে নেয়া ক্লাসই হোক না কেন – শেখার জন্য এখন উপায় আর অপশনের কোন অভাব নেই এখন।
আর এই একবিংশ শতাব্দীতে পড়াশোনায় ভালো করতে চাইলে এই নতুন নতুন টেকনোলোজি সম্পর্কে জানতে হবে এবং এদের নিজের ব্যবহারে পটু হতে হবে।
৫। গ্রুপ স্টাডি করা:
গ্রুপ করে পড়া সবসময়ই খুব ফলপ্রসূ একটি পন্থা। কিন্তু এর দু’টি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, দেখা করাটা সবসময় সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময়েই গ্রুপ স্টাডি আড্ডায় রূপ নেয়। এ দু’টি সমস্যারই সমাধান রয়েছে। প্রযুক্তির বদৌলতে এখন গ্রুপ স্টাডি করার জন্য দেখা করাটা খুব জরুরী না। বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমেই সেটা করা যায়। আর, এর ফলে গ্রুপ স্টাডিটা আড্ডায় পরিণত হবার সম্ভাবনাও কমে যায়।
আরো পড়ুন: পড়ার সময় অন্য সব চিন্তা দূর করার জাদুকরী টিপস
পড়াশোনা বিষয়টা আমাদের অনেকের কাছেই খুব বোরিং মনে হয়। চাইলেও একে আমরা উপভোগ করতে পারি না। কিন্তু, গল্প পড়তে বা শুনতে কিন্তু সবাইই পছন্দ করে। তাই, এই বোরিং সময়গুলোতে পড়াশোনাটা যদি আমরা গল্পের মতো বানিয়ে ফেলি, তাহলে কিন্তু একঘেয়েমি কাটানোটা খুব কষ্টকর থাকে না।
প্রথমত, আমাদের টেনে পড়তে হবে। ঠিক যেমন গল্পের বই পড়ি তেমন। এবং পড়ার সময় কতটুকু মুখস্থ হচ্ছে তা নিয়েও ভাবা যাবে না। ধরে নিতে হবে যে, আমরা গল্প পড়ছি।
দ্বিতীয়ত, চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে গল্পের কোন একটি চরিত্র বানিয়ে ফেলতে হবে। চ্যাপ্টারটা যত হাস্যকর আর আজগুবি শোনাবে, পড়া মনে রাখতে ততটাই সহজ হবে।
নিজের শক্তিগুলো জানতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে!
৭। রুটিন তৈরি করা:
এই রুটিন তৈরি করার বিষয়ে আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব শিক্ষার্থীই আছে, যারা আসলেই রুটিন তৈরি করে। কেউ যদি করেও থাকে, তাহলে এক-দু’দিন পর তা আর ফলো করে না।
কিন্তু ভালো রেজাল্ট করার জন্য পড়াশোনাটাকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসাটা খুবই জরুরী। তাই, একটা রুটিন তৈরি করে; টাইমিং একটু এদিক-ওদিক হলেও সেই রুটিন মেনে চলা উচিত।
English Writing for Students
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
৮। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য চাওয়া:
আমরা একটা কাজ খুব করে থাকি। ক্লাসে কোন কিছু না বুঝলে, স্যার/ মিসকে জিজ্ঞেস করি না। মনে করি যে, পরে বই দেখে বুঝে নিবো অথবা পাশের কোন বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি। প্রায়ই যেটা হয়, বই দেখলেও আমাদের সঠিকভাবে বিষয়টা বোঝা হয় না। আর বন্ধু নিজে যত ভালোভাবেই বুঝে থাক না কেন, একজন শিক্ষক/ শিক্ষিকা যত যত্ন নিয়ে আমাদের পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দিতে পারবেন; সহপাঠী বন্ধু তা কখনোই পারবে না।
তাই, ক্লাসে বা পরীক্ষার পরেও যদি কোন বিষয় পরিষ্কারভাবে না বুঝে থাকি, এমনকি যদি আমাদের পড়ার পরিকল্পনা নিয়েও কোন সাহায্য দরকার হয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষক/ শিক্ষিকার কাছে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো ফল বয়ে আনবে।
৯। নিজেকে পরীক্ষা করা:
ভাবতে খুব অবাক লাগলেও সত্যি যে, মাঝে মাঝে শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার হলে ঢোকার ফলেই আমাদের অনেক পড়া আমরা ভুলে যেতে পারি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, আমাদের নিজেদেরকে পরীক্ষার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আর এই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য মডেল টেস্ট দেয়া, বিভিন্ন কুইজ দেয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই, পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করতে হলে, আমাদের নিজেদেরই নিজেদের পরীক্ষা করতে হবে।
আরো পড়ুন: মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়
১০। ইতিবাচক মনোভাব রাখা:
“মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়” – এই কথাটা শুধু আমাদেরকে নিজেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখার উপরই জোর দেয় না। বরং, ইতিবাচক মানসিকতার শক্তি নিয়েও কথা বলে। আমরা জীবনে কী করছি এবং কী পাচ্ছি, তার অনেকটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর উপর নির্ভর করে। তাই, শুরুতেই আমাদের ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। সবকাজেই যে সবসময় সফল হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু, ব্যর্থতাগুলো মেনে নিয়ে, আমাদের প্রাপ্তিগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
নিজের শক্তিগুলো জানতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে, বরং সেগুলো কীভাবে দূর করা যায় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। মানসিকভাবে সুখী হলেই কেবল আমরা পড়াশোনায় পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারবো।
১০ মিনিট স্কুলের অনলাইন ব্যাচগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করো:
- ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির পড়াশোনার সবকিছু নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন ব্যাচ!
- ৯ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩ [বিজ্ঞান বিভাগ]
- ১০ম শ্রেণি [SSC 2024] অনলাইন ব্যাচ [বিজ্ঞান বিভাগ]
- SSC 2023 শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স [বিজ্ঞান বিভাগ]
- HSC 2023 শর্ট সিলেবাস ক্র্যাশ কোর্স [বিজ্ঞান বিভাগ]
- HSC 2024 ক্র্যাশ কোর্স – প্রথম পত্র [বিজ্ঞান বিভাগ]
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন