‘ফোবিয়া’ মানে হচ্ছে ‘অমূলক ভীতি’, অর্থাৎ একটি জিনিসকে অহেতুক ভয় পাওয়া। পৃথিবীতে অসংখ্য ফোবিয়া আছে, কিন্তু কিছু বিচিত্র ফোবিয়া আছে- যেগুলোর অন্তত একটি হলেও আমাদের প্রায় সবার মাঝেই পাওয়া যাবে! এমনই ১০টি ফোবিয়া জেনে নাও লেখাটি পড়ে।
১। Philophobia (ভালবাসাকে ভয় পাওয়া!)
Phil এর মানে হচ্ছে ভালবাসা। যেমন ‘Philosopher’ এ ‘Phil (ভালবাসা) + Sophy (জ্ঞান)’ অর্থাৎ যিনি জ্ঞানচর্চা করতে ভালবাসেন, দার্শনিক। ঠিক সেরকম ভালবাসাকে ভয় পাওয়া হচ্ছে ফিলোফোবিয়া!
মনে হতে পারে ভালবাসাকে কেন কেউ ভয় পাবে? মজার ব্যাপার হলো পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য মানুষ ফিলোফোবিয়াতে ভুগে! তোমার চারপাশে তাকালেও এমন অনেক মানুষ দেখতে পাবে। হয়তো কেউ একজনকে ভালবেসেছিল, কিন্তু সেই ভালবাসার যখন শেষটা হয় তিক্ততায়- ভালবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে গেলো মানুষটার! তারপর থেকে কোনরকম সম্পর্ক- যেখানে আবেগের কোন ব্যাপার থাকে, সেটির উপর একরকম ভয় চলে আসে! আবারও যদি আহত হতে হয়! এবং তখন দেখা যায় নিজের অজান্তেই রূক্ষতা ভর করে মনে।
একটি কথা আছে- সবচেয়ে রূক্ষ ব্যবহার করে যে মানুষগুলো, তাদের আসলে অনেক বেশি ভালবাসা প্রয়োজন। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের ক্ষত থেকে তৈরি হয় রূক্ষতা, সে ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে কেবল ভালবাসা।
২। Glossophobia (মঞ্চভীতি)
পৃথিবীজুড়ে একটা জরিপ করা হয়েছিল- মানুষ কোন কোন জিনিসকে সবচেয়ে ভয় পায়? অবধারিতভাবেই এক নাম্বারে ছিল মৃত্যু। দুই নাম্বারে কি ছিল? পাবলিক স্পিকিং! দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি ভয়াবহ জিনিসকে পেছনে ফেলে মৃত্যুর পর সবচেয়ে ভয়ের তালিকায় উঠে এসেছে- মানুষের সামনে মঞ্চে কথা বলা!
Gloss শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে, এর অর্থ ‘জিহ্বা’। সেখান থেকেই সবার সামনে কথা বলতে ভয় পাওয়াকে বলে গ্লসোফোবিয়া। শুধু যে মঞ্চে কথা বলতে ভয় পাওয়াকে বুঝায় তা না, অপরিচিত মানুষের সামনে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করাও গ্লসোফোবিয়ার ভেতর পড়ে।
এই ভয়টা কমবেশি আমাদের সবারই থাকে। কিন্তু একটু অনুশীলন করলে আর সাহস করে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালে দেখবে ভয়টা আপনাতেই দূর হয়ে যাবে!
৩। Claustrophobia (বদ্ধ জায়গার ভীতি)
লাতিন শব্দ ‘Claustrum’ বা বদ্ধ জায়গা থেকে ক্লস্ট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গার ভীতি শব্দটি এসেছে। ধারণা করা হয় আদিম যুগে গুহায় আটকা পড়লে মানুষ গুহায় বসবাসকারী হিংস্র জন্তু বা বিষধর সাপের ভয় করতো। সেখান থেকেই আমাদের অবচেতনে এই ভয়টি ঢুকে গেছে।
বর্তমান যুগে ক্লস্ট্রোফোবিয়ার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ পাওয়া যাবে লিফটে উঠলে! আমাদের বাসার লিফট অনেকসময় দেখা যায় ঘটাং করে বন্ধ হয়ে যায়- এবং তখন হৃদপিণ্ড একলাফে গলায় উঠে আসে! দেখা গেলো ফজরের নামাজ পড়ে মুরুব্বিরা সবাই লিফটে উঠেছে, চারতলায় উঠে লিফটটা হঠাত আটকে গেল, কোন বাটনই কাজ করছে না- সবার মুখ শুকিয়ে গেছে, কপালে চিকন ঘামের রেখা ফুটে উঠেছে! তারপর হঠাত তিরিশ সেকেন্ড পর লিফট আবার চলা শুরু করলো সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো! বদ্ধ জায়গা নিয়ে এই ভীতিকেই বলা হয় ক্লস্ট্রোফোবিয়া।
৪। Gamophobia (বিয়ে করতে ভয়!)
গ্রীক Gamos শব্দটি প্রজননের সাথে সম্পর্কিত। জীববিজ্ঞানে যেমন এটি দিয়ে অনেক শব্দ আছে। সেখান থেকেই গ্যামোফোবিয়া মানে বিয়ে করতে ভয় পাওয়া।
ভালবাসার ভয়ের কথা শুনেছি, সেরকম বিয়ে করতে ভয় পাওয়াও বিস্ময়করভাবে বেশ কমন একটি ভীতি! আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম- ছোটবেলা থেকেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে দেওয়া হয়। এখনও অনেক ছেলে-মেয়ে আছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি অনুভব করে। ‘ছেলে’ ‘মেয়ে’ এভাবে না দেখে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখলে কিন্তু এই সমস্যা থাকতো না। গ্যামোফোবিয়াও অনেক কমে আসতো বিশ্বজুড়ে।
৫। Katsaridaphobia (তেলাপোকা ভীতি)
Arachnophobia অনেক প্রচলিত একটি শব্দ, অর্থ মাকড়সা ভীতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাকড়সার চেয়ে তেলাপোকা ভীতিটাই বেশি লক্ষ্যণীয়! এখন ছোটখাটো তেলাপোকা হলে তেমন ভয়ের কিছু নেই, তারা বেশ নীরিহও বটে! স্যান্ডেল দিয়ে একটা পিটুনি দিলে ঠাণ্ডা হয়ে যায় বেচারারা। কিন্তু ফরফর শব্দে জানালা দিয়ে যখন ইয়া বড় কদাকার আরশোলা উড়ে আসে- তখন অনেক বীরপুরুষও আঁতকে উঠে!
(আমার অনেক ক্যাটসারিডাফোবিয়া ছিল। ওগি এন্ড দ্যা ককরোচেস কার্টুনটা দেখে এই ভয়টা অনেক কমে গেছে! তেলাপোকা দেখলেই কার্টুনের লম্বু, মোটু, ছোটুর কথা মনে পড়ে যায়। তেলাপকার সাইজ দেখে বিচার করি এটা কি লম্বু নাকি মোটু নাকি ছোটু! তখন ভয়ের বদলে হাসি পেয়ে যায়!)
৬। Telephonophobia (ফোনে কথা বলার ভীতি)
শুধু টেলিফোনেই নয়, মেসেঞ্জার, ভাইবার– যেকোন কথা বলার মাধ্যমে অস্বস্তি বোধ করাকে টেলেফোনোফোবিয়া বলে। তোমার বন্ধুদের মধ্যে খুঁজলে নির্ঘাত পেয়ে যাবে এমন কাউকে না কাউকে! আমার নিজেরই ফোনে কথা বলতে বিশাল আপত্তি (এখন যদিও অনেক কমেছে)! মেসেজে গরু রচনা লিখে ফেলতে পারি, কিন্তু ফোনে কথা বলতে কেমন যেন লাগে!
এই ভীতিটি দূর করা খুব প্রয়োজন। কারণ জীবনে চলার পথে তোমাকে অনেক মানুষের সাথে কথা বলা শিখতে হবে সুন্দর করে- হোক সামনাসামনি, বা ফোনে। সুতরাং সুন্দর করে কথা বলা অনুশীলন করো, টেলেফোনোফোবিয়া আর থাকবে না!
ঘরে বসে Spoken English
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
৭। Monophobia (একাকিত্বের ভয়)
এর আরো অনেক নাম আছে- Autophobia, Isolophobia, Eremophobia ইত্যাদি। সবগুলো ঘুরেফিরে একই অর্থ দেয়- জীবনে একা হয়ে যাওয়ার ভয়।
আজকাল বৃদ্ধ্বাশ্রম যেভাবে বেড়ে চলেছে- এই ভীতিটি মনে গেড়ে বসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
জাপানে ‘হিকিকোমোরি’ (Hikikomori) নামে একটি শব্দ আছে- সে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা মাসের পর মাস একদম একাকী কাটিয়ে দেয়, ঘর থেকে বেরই হয় না। দেখা যায় বাসায় পরিবারের সদস্যরা সবাই আছে, কিন্তু হিকিকোমোরি মানুষটা কারো সাথে কথা বলে না, দরজা আটকে কাটিয়ে দেয় দিনের পর দিন। যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে- এখন অনেক চাকরিতেই একটি কম্পিউটার হলেই চলে, human interaction এর কোন প্রয়োজন হয় না। তাই এই ব্যাপারগুলো ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় যে মানুষগুলো- তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়- মনে জমে থাকা বিষণ্ণতা শেয়ার করার মতো একটাও মানুষ খুঁজে পায়নি তারা। সবার মাঝে থেকেও অসম্ভব একাকিত্বে ভুগে শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণার ইতি টেনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
মনোফোবিয়া খুব সর্বনাশা একটি জিনিস, এবং দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- এই জিনিসটি ভবিষ্যতে আরো বেড়েই চলবে।
আরও পড়ুন:
মজার দেশ জাপান: ১০টি মজার তথ্য!
বিশ্বসেরা পাঁচ ব্লগসাইট: কাজে লাগবে আপনারও!
৮। Allodoxaphobia (সমালোচনার ভয়)
গ্রীক ভাষায় ‘Allos’ (অন্যরা), ‘Doxa’ (মতামত, সমালোচনা) মিলে হয়েছে এলোডোক্সাফোবিয়া। এই ভয়টি কমবেশি সবারই আছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে, ‘আপনি যদি সমালোচনার ভয় করেন, তাহলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না! কারণ আপনি একটি কাজ করলে তা যতো ভালই হোক না কেন, কেউ না কেউ সমালোচনা করবেই!’
কথাটি খুব সত্যি! সমালোচনা বা অন্যদের মতামতকে ভয় না পেয়ে ভালবাসা উচিত। কারণ তারা সেধে সেধে বিনামূল্যে তোমার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে! ‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভাল’ এমনই হওয়া উচিত সবার মনোভাব।
৯। Metathesiophobia (পরিবর্তনের ভয়)
আমাদের সবার একটা Comfort Zone আছে, আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কিছু করতে খুব ভয় পাই! যেই মানুষটি সারাজীবন শুনে এসেছে সে লাজুক, তার জন্য সবার সামনে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে দুটো কথা বলা ভয়াবহ কঠিন একটি কাজ! আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের কোন কষ্ট হোক সেটি সহ্য করতে পারে না, সে সবসময় আমাদের আগলে রাখতে চায়। তাই যখনই পরিবর্তনের কোন ব্যাপার সামনে আসে- আমাদের মস্তিষ্ক আঁতকে উঠে, একশো একটা কারণ খুঁজে বের করে কেন এই কাজটি করার কোন মানেই হয় না!
কিন্তু সত্যি কথাটি হচ্ছে- পরিবর্তন ছাড়া জীবনে কখনো আগানো সম্ভব নয়। মেটাথেসিওফোবিয়াকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। তোমার ভয়গুলোকে দূর করো, অপছন্দের কাজটি দাঁতে দাঁত চেপে করে যাও। মালয়েশিয়ার পরিবর্তনের রূপকার মাহাথির মুহাম্মদ ছেলেবেলায় কুকুরকে খুব ভয় পেতেন। তিনি কিন্তু কুকুরকে এড়িয়ে চলতে পারতেন, কিন্তু তাহলে ভয়টি রয়ে যেতো সারাজীবন। তিনি এর পরিবর্তন চাইলেন- কুকুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। হাঁটু কাঁপছে, প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার অবস্থা! কিন্তু তিনি ঠিকই ভয়টির মুখোমুখি হলেন, এবং জয় করলেন! পরিবর্তনকে ভয় করো না, ভালবেসে বুকে টেনে নাও।
ঘরে বসে Freelancing
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
১০। Atychiphobia (ব্যর্থতার ভয়)
এটিকিফোবিয়া- ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু কী ভয়াবহ এর পরিণাম! এই একটি ভীতির কারণে যে ক্ষতি হয় তার কাছে আর সব ভীতি তুচ্ছ। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এই ভীতিটিও আমাদের অনেকের মাঝেই খুব প্রবলভাবে আছে। আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখতে চাই না, আমরা খুব সহজে হাল ছেড়ে দেই কারণ আমাদের হেরে যাওয়ার ভয়টা অনেক বেশি! ‘থাক না বাবা, এটা আমার জন্য না। সবাইকে দিয়ে কি সবকিছু হয় নাকি?’ এমন নানা অজুহাতে দেখা দেয় এই এটাকিফোবিয়া, থামিয়ে দেয় আমাদের এগিয়ে যাওয়া। আমি বলবো- শিশুদের থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছু। যেই শিশুটি এখন হামাগুড়ি দেয়, সে যখন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, বারবার পড়ে যায়। একবারও কিন্তু শিশুটি ভাবে না ‘থাক আমাকে দিয়ে হাঁটাহাঁটি হবে না! আমি হামাগুড়ি দিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেবো!’ সে ঠিকই ব্যর্থতার ভয় না করে নিজের মতো করে চেষ্টা করে যায় এবং সত্যি সত্যি দাঁড়াতে শিখে যায়, কয়দিন পর দৌঁড়াতেও শুরু করে! আমরা বড় মানুষরা ব্যর্থতার ভয়ে অনেককিছু থেকে নিজেকে পিছিয়ে রাখি- সর্বনাশ করি নিজেদের।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন