ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন

August 20, 2024 ...

বর্তমান সময়ে একটা কথা চারপাশ থেকে বেশ অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। সেটা হলো নিজের ইনকাম সোর্স একদিকে আবদ্ধ না রেখে, অর্থ উপার্জনের আরো কয়েকটি রাস্তা তৈরি করা৷ কিন্তু আপনি যদি ইতিমধ্যে ফুলটাইম চাকরি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আরো একটা চাকরি নিয়ে কিন্তু সামলানো বেশ মুশকিল।

এই টাইম ব্যালেন্সিং এর ঝামেলার কারণেই, বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং হলো অনলাইনে উপার্জনের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম। সারাবিশ্বের অসংখ্য মানুষ নিজেদের ফুলটাইম চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ছোট-বড় কোম্পানিতে কাজ করছেন। আমাদের দেশেও ফ্রিল্যান্সারদের হার বেশ বেড়ে চলেছে৷ ফ্রিল্যান্সিং-এ ক্যরিয়ার গঠন তুলনামূলক সহজ হয়। কারণ এখানে দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ বেশি থাকে। একজন ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে ফিরিয়ে দেয়, সাথে সাথে আপনি অন্য ক্লায়েন্টদের কাছে যেতে পারবেন। 

কিন্তু বেশি মানুষ এই পেশায় নেমে যাওয়ার কারণে প্রতিযোগিতাটাও বেড়ে গেছে, ফলে এই পেশায় টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে৷ তাই ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে হলো, নিজের যোগ্যতা ও স্কিল দিয়ে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়। কিন্ত এ ক্ষেত্রে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অনেকেই বুঝতে পারেন না যে কিভাবে তারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন। চিন্তার কোনো কারণ নেই! যারা ফ্রিল্যান্সিং জগতে নতুন কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান অথবা নিছক আগ্রহের বশেই ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জানতে চান, এই ব্লগটি তাদের সবার জন্য।

ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন

ফ্রিল্যান্সিং কী? ঘরে বসে কি আসলেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং কী

ফ্রিল্যান্সিং মানে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা। ফ্রিল্যান্সাররা প্রথাগত ৯-৫টার চাকরি করেন না। তারা বাসায় বসে নিজেদের সুবিধামত কাজ করেন। যেহেতু তাদের কাজটা চুক্তিভিত্তিক, তাই এখানে অফিসের সময়সূচি বলে কিছু নেই। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের একজন ফ্রিল্যান্সার খুব সহজেই আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্সার কারা

যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তারাই ফ্রিল্যান্সার। একজন ফ্রিল্যান্সার কোনো প্রতিষ্ঠানের ফুলটাইম কর্মী না হয়েও একসাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস দিতে পারেন৷ তারা চাইলে একসাথে অনেক প্রজেক্টেও কাজ করতে পারেন। কয়টা কাজ নিবেন বা কোন কাজগুলো করবেন সব ফ্রিল্যান্সারদের উপরে নির্ভর করে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সাররা কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত কর্মচারী নয়, তাই তারা অন্যান্য চাকরিজীবীদের মতো স্বাস্থ্য বীমা কিংবা অবসর ভাতার মত সুবিধাগুলো পান না।  

এখন কথা হচ্ছে, একটা কোম্পানির কেন ফ্রিল্যান্সার প্রয়োজন হয়। মনে করুন আপনি একটি বার্গারের দোকান দিবেন। এখন আপনার একটি লোগো প্রয়োজন। এখন এই একটা কাজের জন্য কী আপনি পুরো মাস বেতন দিয়ে কোনো কর্মচারী রাখবেন? নাকি শুধু একটা কাজ করিয়ে সেই কাজের টাকাটা ডিজাইনারকে দিয়ে দিবেন? অবশ্যই একটা কাজের টাকাই দিবেন। আবার মনে করুন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মাসে ১২টি ছবি পোস্ট করার জন্য আপনার একজন ডিজাইনার প্রয়োজন। এখন এইটার জন্য কি আপনি পুরো মাসের বেতন দিয়ে কাউকে রাখবেন? নাকি একবারে ৩ দিনের মধ্যে ১২টি ডিজাইন রেডি করে দিবে এমন কাউকে নিবেন? অবশ্যই ৩ দিনে যিনি ১২টি ডিজাইন করে কাজ ভিত্তিক টাকা নিবে, এমন কাউকেই রাখবেন। আপনি চাইলে বাংলাদেশ না, জাপানের কোনো ফ্রিল্যান্সারকে দিয়েও এই কাজটা করাতে পারেন।

freelancer who

এটিই হলো ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা। আর বুঝতেই পারছেন, ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের কাজ ঘরে বসেই করতে পারবেন। যারা আপনাকে কাজ দিবে, তারা ক্লায়েন্ট এবং এই কাজগুলোকেই গিগ বা প্রজেক্ট বলে।

 

ফ্রিল্যান্সারের ধরন

শুধু পার্টটাইম বা ফুলটাইম ছাড়াও কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের অনেক ধরন আছে। চলুন, সে সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক!

  • মুনলাইটার: যারা ফুলটাইম চাকরি করার পাশাপাশি আলাদা ইনকাম সোর্সের জন্য ফ্রিল্যান্সিংও করে থাকেন। যেমন আপনি হয়তো কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম চাকরি করেন। আবার ছুটির দিনে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে টুকটাক কোডিং রিলেটেড প্রজেক্টও করে থাকেন। 
  • ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্রিয়েটর: এরা প্রজেক্ট বেসিসে কাজ নেন। তাদের কোনো রেগুলার চাকরি নেই। তারা লং-টার্ম প্রজেক্ট নেন যেগুলো করতে ১ বছরের মত সময় লাগে। অর্থাৎ তারা কখনো খালি বসে থাকেন না। আবার একসাথে অনেকগুলো গিগ না নিয়ে একটা শেষ করে আরেকটা নেন। তারা অন্যদের থেকে অনেক বেশি স্কিলড হন। বিশেষ করে ফাইন্যান্স, হেলথ, আইটি, প্রোগ্রামিং সেক্টরে এসব ফ্রিল্যান্সারদের বেশি দেখা যায়। 
  • টেম্পোরারি ওয়ার্কার: তারা ফুলটাইম চাকরি করেন, তবে তা চুক্তিভিত্তিক। অর্থাৎ, কোনো কোম্পানিতে প্রজেক্ট বেসড কাজগুলোতে তাদেরকে নেওয়া হয়। যেমন একটা প্রতিষ্ঠানের হয়তো এই মাসে ১০০টি ব্লগ লাগবে। তখন তারা  ৫ জন ফুলটাইম ব্লগার নেন যারা এই মাসে ২০টি করে মোট ১০০টি ব্লগ লিখে দিতে পারবে। আর প্রজেক্ট অনুযায়ীই তাদেরকে পেমেন্ট দেওয়া হয়৷ 
  • ফ্রিল্যান্সার কনসালটেন্ট: এরা স্বাধীনভাবে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা এক্সপার্ট এডভাইজর হিসেবে কাজ করেন। এই কাজটা কঠিন হলেও ভালো আয় হয়।  
  • ডাইভার্সিফাইড ওয়ার্কার: ডাইভার্সিফাইড ওয়ার্কাররা একসাথে একাধিক কাজ করে থাকেন৷ তারা নিজেদের ফ্রি টাইমে ইচ্ছেমতো কাজ নেন।  
  • এক্সপেরেনশিয়াল ফ্রিল্যান্সার: তারা বিভিন্ন ফিল্ড এক্সপ্লোর করেন। যেকোনো একটা পদ বা স্কিলে নিজেদের আবদ্ধ রাখেন না। 

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কী

মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো মূলত বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এসব সাইটগুলোতে বিশ্বের নানান প্রান্তের বায়াররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজটি করানোর জন্য ঐ কাজটিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে থাকেন। মার্কেটপ্লেসে পুরো ব্যাপারটা ঘটে সুসংগঠিত একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

প্রথমে ক্লায়েন্টরা মার্কেটপ্লেসে এসে, সেখানে তারা ফ্রিল্যান্সারদের করা বিভিন্ন বিড পর্যালোচনা করে দেখেন। একজন ফ্রিল্যান্সার তার করা বিডে বলে দেন যে তিনি কাজটি কত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারবেন আর কতো পারিশ্রমিক নিবেন। ক্লায়েন্ট এরপর সব বিড থেকে যেটিকে সবচেয়ে ভালো মনে করবেন, সেটিই গ্রহণ করবেন। তারপর ফ্রিল্যান্সারদের কাজ শেষ হয়ে গেলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পরিশোধ করে দেওয়া হয়। তবে আপনার আয় করা অর্থ থেকে মার্কেটপ্লেস কিছু অর্থ কেটে রেখে বাকিটা আপনার একাউন্টে জমা করে দিবে।

 

ঘরে বসে Freelancing

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত গাইডলাইন।
  • আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (যেমন: Upwork, Fiverr) এ নিজের প্রোফাইল তৈরি এবং কাজ পাবার উপায়।
  •  

    কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হলো:

    যেসব ফিল্ডে কাজ বেশি হয়

    • একাউন্টিং 
    • ফাইন্যান্স
    • অ্যাডমিনিস্ট্রেশন  
    • রাইটিং
    • কাস্টমার সার্ভিস 
    • ট্রান্সলেশন
    • কম্পিউটার অ্যান্ড আইটি 
    • মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ 
    • এডিটিং 
    • হিউম্যান রিসোর্স 
    • এডুকেশন 

    ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে কী কী প্রয়োজন? 

    ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যা যা প্রয়োজন

    need for freelancing

    ১. স্কিল: ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রথমেই আপনাকে আপনার স্কিল বিল্ড আপ করতে হবে। আপনাকে এমন একটি বিষয়ের স্কিল ডেভেলপ করতে হবে যেটার মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন। সেটা হতে পারে কন্টেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডিজাইনিং, ডাটা অ্যানালাইসিস, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, এসইও বা ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি।

    ২. ডিভাইস: এরপর আপনার প্রয়োজন একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের। যদি আপনি গ্রাফিক ডিজাইনিং, ভিডিও এডিটিং বা প্রোগ্রামিং এর মত কাজ করতে চান, সেক্ষেত্রে হাই কনফিগারেশনের ডিভাইস থাকতে হবে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন যে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে কিনা। হ্যাঁ, করা যাবে। তবে নিয়মিত ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে মোবাইলের চাইতে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সহজে কাজ করতে পারবেন।

    ৩. ইন্টারনেট সংযোগ: ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার ডিভাইসের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। কারণ এটা পুরোটাই ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ।  

    ৪. পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখতে হবে: অনেকে দুই-তিন দিন কোনো স্কিল প্র‍্যাকটিস করার পর সময়ের অভাবে অনুশীলন করা ছেড়ে দেন। এটা করলে চলবে না৷ ফ্রিল্যান্সিং করার আগেই আপনাকে দেখে নিতে হবে যে এইটা চালিয়ে যাওয়ার মত পর্যাপ্ত সময় আপনার আছে নাকি নেই৷ 

    এই চারটি বিষয় যদি আপনার থাকে তবে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনি তৈরি

     

    সহজ কিছু স্কিল যা দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়

    সহজ কিছু স্কিল যা দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়

    ক্যানভা ডিজাইন:

    ক্যানভা হলো একধরনের ডিজাইনিং টুল যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এবং কম সময়ে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ক্যানভা ক্রিয়েটরদের নানান সুযোগ থাকে। যেমন: থাম্বনেইল ডিজাইনিং, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট তৈরি, পিচ ডেক তৈরি, স্লাইড তৈরি ইত্যাদি৷ 

    এটি শিখতে চাইলে কয়েকটা টিউটোরিয়াল দেখলেই যথেষ্ট। ক্যানভায় কাজ করা কঠিন কিছু না, কেবল কালার গ্রেডিং ও কালার প্যালেট নিয়ে ধারণা থাকলেই চলবে। ক্যানভার ফ্রি ও পেইড উভয় ভার্সনই রয়েছে৷ 

    সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ডিজাইনিং:

    আজকাল বেশিরভাগ ব্যক্তি বা কোম্পানি নিজেদের ব্র‍্যান্ডিং এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন৷ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমোশনের কাজ চালানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টার্গেট অডিয়েন্স বুঝে কন্টেন্ট তৈরি করা৷

    সেক্ষেত্রে তারা ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট ডিজাইনার হায়ার করে থাকেন। এই কাজটা বেশ সহজ৷ শুধু আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে ভালোমতো রিসার্চ করতে হবে। আর জানতে হবে যে কী কী পোস্ট করলে অডিয়েন্সের সাথে ব্র‍্যান্ডের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে।

    কন্টেন্ট ডিজাইনিং শেখার জন্য আপনাকে ইউজার এক্সপিরিয়েন্স এবং ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে ভালোমতো জানতে হবে। লেখালেখি ও সম্পাদনা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে৷ কমিউনিকেশন স্কিল থাকা লাগবে এবং ব্র‍্যান্ডিং সম্পর্কে জানতে হবে।

    একেকটি প্ল্যাটফর্মের জন্য একেকভাবে কন্টেন্ট ডিজাইন করতে হবে। কারণ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও লিংকডইনে ইউজার কিন্তু এক না৷ সে কথা মাথায় রেখে আপনাকে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। নাহলে আপনার পোস্ট রিচ পাবে না। ইনস্টাগ্রামে একটু ইনফরমাল টোন মেইনটেইন করা হয়, যেখানে লিংকডইনের কমিউনিকেশন পুরোটাই ফরমাল হয়।

    কন্টেন্ট রাইটিং:

    ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানান জায়গায় কন্টেন্ট রাইটারের দরকার পড়ে৷ কারণ অর্থবহ কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে অডিয়েন্সকে বিভিন্ন তথ্য জানানোর জন্য কন্টেন্ট রাইটিং এর দরকার হয়৷ 

    কন্টেন্ট রাইটিং সোশ্যাল মিডিয়া এনগেজমেন্টের পাশাপাশি ব্র‍্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে তোলে, ব্র‍্যান্ড ও অডিয়েন্সের মধ্যকার গ্যাপ কমিয়ে আনে, ট্রাফিক জেনারেট করে এবং ব্র‍্যান্ডের ওয়েবসাইটকে এসইও অপ্টিমাইজ করে। 

    কন্টেন্ট রাইটিং রিলেটেড কিছু কাজ হলো: ব্লগ রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট রাইটিং, ইমেইল রাইটিং, সিভি রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, স্পোর্টস রাইটিং, ইনফোগ্রাফিকস রাইটিং, প্রোডাক্ট ডেস্ক্রিপশন রাইটিং, ওয়েব কন্টেন্ট রাইটিং, এসইও কন্টেন্ট রাইটিং, একাডেমিক রাইটিং, রিপোর্ট রাইটিং, গোস্ট রাইটিং, বিজনেস রাইটিং, কপিরাইটিং, স্ক্রিপ্ট রাইটিং ইত্যাদি৷ 

    লেখার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো জায়গা থেকে লেখা হুবহু কপি না হয়৷ ক্লায়েন্ট যেই টোনে লেখাটা চাচ্ছে, সেই টোনে লিখবেন। চেষ্টা করবেন কন্টেন্টটা যেন এসইও অপ্টিমাইজড হয়৷  

    প্রুফরিডিং:

    কোনো একটা লেখা পড়ে সেখান থেকে ভুল বের করে তা ঠিক করাই হলো প্রুফ রিডিং। সেটা হতে পারে কোনো বইয়ের স্ক্রিপ্ট কিংবা ভিডিও স্ক্রিপ্ট। আপনাকে একসাথে কয়েক হাজার বা লাখ শব্দের একটি স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেওয়া হবে এবং সেখান থেকে আপনাকে বানান ভুলকে ঠিক করা থেকে শুরু করে বিরামচিহ্নের ব্যবহার, সঠিক ব্যাকরণের ব্যবহারসহ সব নিশ্চিত করতে হবে।

    এই ক্ষেত্রে সাধারণত শব্দ প্রতি বা পৃষ্ঠা প্রতি পেমেন্ট দেওয়া হয়৷ প্রুফরিডার হওয়ার জন্য আপনার যেই যেই স্কিলগুলো থাকতে হবে তা হলো চট করেই ভুল ধরে ফেলার দক্ষতা, বিরামচিহ্ন, ব্যাকরণ এবং বানান নিয়ে সঠিক ধারণা। 

    ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট:

    ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ হলো আপনার ক্লায়েন্টের কাজ করে দেওয়া৷ শুনতে একটু কনফিউজিং শোনাচ্ছে? তাহলে খুলেই বলি৷ 

    নরমাল অফিসে দেখা যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকেন, যিনি তাদের সব কাজের ট্র‍্যাক রাখার পাশাপাশি কাজগুলো করেও দেন৷ এখন ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশে বসে কানাডার এমন কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ক্লায়েন্টের কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন। এটাই হলো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ। 

    এই কাজের জন্য আপনাকে মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যার, ছোটখাটো গ্রাফিকসের কাজ, ওয়েব রিসার্চের কাজ পারতে হবে। এছাড়াও যোগাযোগ দক্ষতা অনেক ভালো হতে হবে, ঠিকমতো ইংরেজিতে কথা বলতে পারতে হবে, ভালো সময় জ্ঞান থাকতে হবে, প্রফেশনাল ইমেইল রাইটিং পারতে হবে, সৃজনশীলতা থাকতে হবে, কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে বেসিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি এবং টুকটাক সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ জানতে হবে৷ 

    তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্লায়েন্টের কাজ সম্পর্কে ভালোমতো সব তথ্য জানা। 

    virtual assistant

    সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার:

    সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ হলো ক্লায়েন্টের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজ করা৷ তাকে কোম্পানির ব্র্যান্ডিং প্রোমোশন থেকে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন-সহ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। 

    একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারকে সেই কোম্পানির যত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক, এক্স, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, টেলিগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, লিঙ্কডইন, হোয়াটসঅ্যাপ) রয়েছে সেখানে সব তথ্য তুলে ধরতে হয় এবং সবসময় আপডেটেড রাখতে হয়।

    সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে আপনার যেসব গুণাবলি থাকতে হবে, সেগুলো হলো: বেসিক গ্রাফিক ডিজাইনিং স্কিল, অ্যানালাইটিকস স্কিল যাতে ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস করতে পারেন, কাস্টমার সার্ভিস, কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট, সৃজনশীলতা, ডিজিটাল মার্কেটিং জ্ঞান, স্ট্র‍্যাটেজিক নলেজ ইত্যাদি৷ 

    ইমেইল মার্কেটিং:

    Email Marketing

    আমরা প্রায়ই নানান ধরনের প্রমোশনাল ইমেইল পেয়ে থাকি৷ যেখানে কোনো কোম্পানির অফার বা সার্ভিস সম্পর্কে লেখা থাকে৷ এটা মূলত কোনো ওয়েবসাইটে সাইন আপ করার পরেই আসতে থাকে৷ একেই মূলত ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটালভাবে পণ্য বা সেবার প্রচারণা চালানোর একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতা বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের ইমেইল দেয়া হয়ে থাকে। যেমন: প্রমোশনাল বা প্রচারণামূলক ইমেইল, নিউজলেটার, ইভেন্টে আমন্ত্রণ ইত্যাদি।

    ইমেইল মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ইমেইলের মাধ্যমে পণ্য বা সেবাকে গ্রাহকের নিকট তুলে ধরা যাতে তার বিক্রি বাড়ে। 

    যেহেতু কাজটা শেখা সহজ, তাই ইমেইল মার্কেটিংয়ের চাহিদা দিনে দিনে আরও বেড়ে চলেছে। ইমেইল মার্কেটিং শেখার জন্য আপনার অডিয়েন্সের মেইল আইডি ট্র‍্যাক করা জানতে হবে, অল্প কথায় ইমেইলে অফার সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে, কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে এবং ইমেইল ট্র‍্যাক করা জানতে হবে। 

    ডাটা এন্ট্রি:

    ডাটা এন্ট্রি হলো ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা মোবাইল ফোনে টাইপিং এর মাধ্যমে যেকোনো হার্ডকপি থেকে ডাটাগুলোকে সফটকপিতে স্থানান্তরিত করা এবং এক জায়গায় স্টোর করে রাখা। সেটা যে শুধু রিটেন ডকুমেন্টই হতে হবে, তা না। সেটা হতে পারে যেকোনো অডিও ক্লিপ, ভিডিও ক্লিপ, ইমেইজ কিংবা অব্জেক্ট ফাইল।  

    এই কাজের জন্য টাইপিং স্পিড অনেক দ্রুত হতে হবে, ৭০-৯০ ওয়ার্ড পার মিনিট হলে ভালো। শুধু টাইপ করলেই হবে না, সেটা নির্ভুল হতে হবে৷ গুগল শিট ও এক্সেল নিয়ে ধারনা থাকতে হবে এবং ডাটা রিসার্চ সম্পর্কে জানতে হবে।

    আপনার জন্য কোন স্কিলটি সঠিক, তা নির্ধারণ করবেন কিভাবে?

    এবার আসি স্কিল নির্বাচনের ক্ষেত্রে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে নিয়মিত অর্থ উপার্জনের পথটা চালু রাখতে চান, সেক্ষেত্রে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সেটা আগে জানতে হবে। নতুন ফ্রিল্যান্সাররা এই ভুলটাই সবচেয়ে বেশি করে থাকেন। তারা জানেন না যে কোন কাজের ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি। সেটা জানলে কিন্তু সেই কাজ রিলেটেড স্কিলগুলো শিখে ফেললেই হয়। 

    তবে শুধু ডিমান্ড থাকলেই হবে না, সেই কাজে আপনার আগ্রহ আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। নাহলো কিছু সময়ের পর কাজ করতে আপনার আর ভালো নাও লাগতে পারে। 

    ছবি আঁকতে ভালো লাগে? তাহলো গ্রাফিক ডিজাইন করার চেষ্টা করতে পারেন। মাথার মধ্যে নানান শব্দ আর আইডিয়া ঘুরতে থাকে? তাহল কন্টেন্ট রাইটিং শুরু করে দিন! ট্রেন্ড নিয়ে সবসময় আপ টু ডেট থাকেন? ডিজিটাল মার্কেটিং তাহলে আপনার জন্যই! ক্যালকুলেট করতে ভালো লাগলে একাউন্টিংয়ে চেষ্টা করুন? অর্থাৎ যেই দিকে আপনার ঝোঁক বেশি, সেইদিকেই যান। 

    এভাবেও যদি সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন, তাহলে নিচের কাজগুলো করে দেখুন:

    • যেকোনো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে যেয়ে সেখানে যত ক্যাটাগরি আছে সেগুলো এক্সপ্লোর করতে থাকুন। তাহলে বুঝতে পারবেন কোন স্কিলের চাহিদা বেশি এবং আদৌ আপনি সেই স্কিলগুলো শিখতে চান কিনা। 
    • ৩-৫টি স্কিল শর্টলিস্ট করুন। সবগুলো নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে যেকোনো একটা সিলেক্ট করুন। 
    • প্রথম ১-২ সপ্তাহ ধরে এই কাজটিই করুন।
    • যদি কপিরাইটিং ইন্টারেস্টিং মনে হয়, তাহলে ইউটিউবে যেয়ে “What is copywriting?” বা “How to start copywriting” লিখে সার্চ দিয়ে সে সম্পর্কে জানতে পারেন। এভাবে এই সম্পর্কিত ভিডিও, টিউটোরিয়াল বা এক্সপার্ট অ্যাডভাইজগুলো দেখতে পারেন। 
    • ২ সপ্তাহ পর এই স্কিলগুলো প্র‍্যাকটিস করা শুরু করে দিন। তাহলে বুঝতে পারবেন কাজটা করতে আপনার কেমন লাগছে৷ 
    • এবার যেইটা করতে বেশি ভালো লাগছে, সেটার পেছনে ৩ থেকে ৬ মাস সময় দিন। শিখুন এবং অনুশীলন করুন। কোনো স্কিল শিখতে চাইলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। 
    • বাংলায় ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য টেন মিনিট স্কুলের “ঘরে বসে Freelancing” কোর্সটা করে ফেলতে পারেন। এখানে খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং এর খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷ এছাড়াও Udemy, Coursera এর মতো ওয়েবসাইটেও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। 

    একবার যখন মনে আত্মবিশ্বাস চলে আসবে যে হ্যাঁ, আমি এখন এইটা নিয়ে কাজ করতে পারবো, তখন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে নেমে পড়ুন। নিজের সার্ভিস সম্পর্কে পরিবারের মানুষজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের জানান। এভাবে করে নিজের পোর্টফোলিওটা সমৃদ্ধ করুন।

    ২০২৪ সালে যেসব ফ্রিল্যান্সিং স্কিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি

    • ডাটা অ্যানালাইসিস
    • ডাটা মাইনিং
    • মেশিন লার্নিং
    • ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট 
    • ওয়েব ডিজাইন
    • মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট 
    • ইউএক্স/ইউআই ডিজাইন
    • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং 
    • এসইও অপ্টিমাইজেশন
    • লিড জেনারেশন
    • ইমেইল মার্কেটিং 
    • মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি
    • ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্ট 
    • একাউন্টিং 
    • ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস
    • বুককিপিং

     

    ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে যা যা মাথায় রাখতে হবে

    ফ্রিল্যান্সিং এর উদেশ্য কী

    প্রথমেই ঠিক করে ফেলুন যে আপনি কেন ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। সেক্ষেত্রে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন আপনি কী ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নামতে চান? নাকি কয়েকটি প্রজেক্ট করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান? 

    নিশ খুঁজে বের করা

    নিশ হলো যেকোনো একটি টপিক বা বিষয়। নিশ সম্পর্কে আপনার আলাদা করে বিশেষ জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ, আপনার যদি নিশ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান না থাকে তবে আপনি কখনই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ভাল কিছু করতে পারবেন না।

    ধরা যাক, আপনি একজন ব্লগ রাইটার। আপনি হেলথ কেয়ার সংক্রান্ত ব্লগ লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন৷ তাহলে এইটাই আপনার নিশ৷ নিশ কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন ব্রড নিশ, মাইক্রো নিশ ইত্যাদি৷ যেমন হেলথ কেয়ার যদি ব্রড নিশ হয়, তাহলে মাইক্রো নিশ হিসেবে মেন্টাল হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েট থাকতে পারে। নিশ ঠিক করার মাধ্যমেই পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু সহজ হয়ে আসে। 

    অর্থাৎ আপনার বেছে নেয়া টপিক এমন হতে হবে যার বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং জ্ঞান রয়েছে। একইসাথে যেই কাজ করে এবং যার বিষয়ে নতুন নতুন জিনিস শিখে আপনি ভালো করতে পারেন সেটাকেই৷ নিশ হিসেবে নির্বাচন করবেন। এর পাশাপাশি আপনি যেই নিশকে ধরে এগোতে চাচ্ছেন, মার্কেটপ্লেসে সেই নিশের চাহিদা ও প্রয়োজন কেমন আছে, সেটাও দেখে নিতে হবে। 

    কাজের অভিজ্ঞতা

    এরপর সেই নিশে আপনার কয় বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তা চিন্তা করুন। সেই অনুযায়ী আপনার কাজের পেমেন্ট নির্ধারণ করুন।  

    টার্গেট ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করুন

    আমাদের এখানে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোর প্রচুর জনপ্রিয়তার কারণে আপনার পক্ষে হয়তো ক্লায়েন্ট পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হন। আপনি ভাবতে পারেন যে ক্লায়েন্টরা হয়তো হাই রেটেড ফ্রিল্যান্সারদেরকেই কাজ দেয়। 

    ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে ইন্ডাস্ট্রি কমিউনিটিগুলোতে ঢুঁ মারুন। ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড গ্রুপগুলো দেখতে থাকুন, ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কোন কোন জায়গায় মানুষ নেওয়া হচ্ছে তা দেখুন। 

    নেটওয়ার্কিং বাড়ান

    নেটওয়ার্কিং বাড়ান

    প্রথম ক্লায়েন্ট পাওয়ার পর তিনিই আবার আপনাকে কাজে নিতে পারেন কিংবা কাউকে রেফার করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্যারেটো প্রিন্সিপাল নীতি কাজ করে। যেমন আপনার ২০% ক্লায়েন্ট আপনাকে ৮০% নতুন কাজ দিতে সাহায্য করবে। আবার প্রতি নতুন ২০ রেফারেলে আপনি ৮০% নতুন প্রজেক্ট পাবেন।

    নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য ইন্ডাস্ট্রি ওয়েবিনারে যেতে পারেন, ইভেন্ট এটেন্ড করতে পারেন, লিংকডইন-ফেসবুকের মাধ্যমে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট পেতে পারেন। আবার সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলেও তার সাথে কথা বলতে পারেন। তাকে সরাসরি আপনাকে কাজ দেওয়ার জন্য না বলে আপনার কী কী স্কিল আছে সেসব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। 

    অনেক সময় আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবদের থেকেই কাজের অফার পাওয়া যায়। যেমন পরিচিত কোনো বন্ধু টিশার্টের দোকান খুললে টিশার্ট ডিজাইন করার কাজ পেয়ে যেতে পারেন৷

    ফুল টাইম চাকরির সাথে গিগের ব্যালেন্স

    এত সব কথার মাঝে কি নিজের ফুলটাইম চাকরির কথা ভুলে গেছেন? ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না, কারণ ফুলটাইম চাকরি আপনার বেতনের একটা বড় অংশ সামাল দিচ্ছে, তাই দুই কাজেরই ব্যালেন্স করতে হবে। 

    কোন কাজের প্রায়োরিটি কেমন, সেটা নির্ধারণ করুন। আর দুইটা কাজের ডেডলাইনই সমানতালে মেইনটেইন করুন। অফিসে যেখানে সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘন্টা কাজ করতে হয়, সেখানে ফ্রিল্যান্সিং করলে সপ্তাহে ৮০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। তাই শরীরের যত্ন নিতে ভুলবেন না।

     

    ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার স্টেপ বা ধাপ সমূহ

    প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট

    যেটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার অবশ্যই একটি ভালো ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি৷ কারণ, নিজের জন্য কাজ খোঁজা থেকে শুরু করে, ক্লায়েন্ট খুঁজে আনা, কাজটি করে আপনার ক্লায়েন্টকে জমা দেয়া– সবটাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে যেয়ে আপনার করতে হবে। 

    যথাযথভাবে একটি স্কিল শিখুন

    একসাথে অনেকগুলো স্কিল না শিখে ধৈর্য নিয়ে একটি স্কিল শিখে কাজ শুরু করা উচিত। প্রথমেই একাধিক স্কিল শিখতে গেলে সব হযবরল হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া কম সময় নিয়ে অনুশীলন করলে সেই স্কিলে আপনি দক্ষ নাও হতে পারেন৷ কিভাবে সঠিক স্কিল নির্বাচন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করে ফেলেছি।

    স্কিলভিত্তিক প্রোজেক্ট করে পোর্টফোলিও তৈরি করুন

    ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সাথে সাথে আপনাকে পোর্টফোলিও তৈরি করে ফেলতে হবে। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা কঠিন লাগতে পারে৷ যদি আপনার আগের কোনো কাজের স্যাম্পল না থাকে, সেক্ষেত্রে পোর্টফোলিওতে যুক্ত করার মত কিছু না পেলেও পোর্টফোলিও বানিয়ে রাখতে ভুলবেন না। পোর্টফোলিও ভারি করার জন্য লোকাল মার্কেটে কিছু কাজ করে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। 

    ভালো মানের পোর্টফোলিওর অভাবে অনেক ফ্রিল্যান্সারদের ক্লায়েন্টরা এড়িয়ে চলেন। কারণ অনেক ক্লায়েন্ট কাজের অর্ডার দেওয়ার আগে আপনার কাজের স্যাম্পলটা দেখতে চান, কাজ সম্পর্কে ধারণা পেতে চান৷ আপনি যদি দ্রুত পোর্টফোলিও না দেন তাহলে তারা আপনাকে কাজ দিবেন না। 

    সব মার্কেটপ্লেসেই আলাদা করে পোর্টফোলিও তৈরির অপশন আছে৷ তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজের একটা ওয়েবসাইট খুলে ফেলেন। সেখানে নিজের কাজ, পূর্বের অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত তথ্য সব দিয়ে রাখতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড ব্লগও পাবলিশ করতে পারেন। 

    পোর্টফোলিওতে আপনার কাজের নমুনা দেওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ছবি যুক্ত করতে হবে। আপনার কাজের তথ্য অল্প কথায় বর্ণনা করতে পারলে ভালো। কারণ, লেখা বড় হলে ক্লায়েন্টরা পড়তে চান না এবং প্রোফাইল থেকেই বের হয়ে যায়।     

    প্রতিনিয়ত প্র‍্যাকটিস করুন

    কোনো কাজে দক্ষ হতে চাইলে অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। যেই স্কিলটা শিখতে চান সেই স্কিলের উপরে কোর্স করতে পারেন, ব্লগ পড়তে পারেন কিংবা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে পারেন। 

    তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করে নিজের মত কাজ করুন। ধরা যাক আপনি গ্রাফিক্স এর কাজ করবেন, সেক্ষেত্রে আগে গ্রাফিক্স সম্পর্কিত কাজ কী কী আছে তা জানুন, তারপর নিজের মত করে লোগো, ভিজিটিং কার্ড, টি-শার্ট বা আপনি যা শিখেছেন তা প্র্যাকটিস করুন। আস্তে আস্তে যখন আপনি নিজের মত করে ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন, তখন আপনার জন্য এই সেক্টরগুলোতে কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। কাজ করার ক্ষেত্রে যখন কোনো কিছুর সমস্যা হবে তখন সাথে সাথে গুগলে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন।

    দক্ষতা অর্জন করার পরেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে নামুন।

    মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলুন

    account

    ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার একটি বায়োডাটা প্রয়োজন। যেটা দেখলে মানুষ আপনার সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই বায়োডাটাটাই হলো আপনার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের একাউন্ট বা প্রোফাইল। আপনার প্রোফাইলটিকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে আপনি যখন বিড করবেন অর্থাৎ কাজের আবেদন করবেন, তখন ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল দেখেই আকৃষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

    ১. প্রোফাইল পিকচার: আপনার প্রোফাইলে ঢুকে সবার আগে যা চোখে পড়ে তা হচ্ছে আপনার ছবি। প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ফরমাল ছবি ব্যবহার করুন। আপনার স্কিল অনুযায়ী ডেসক্রিপশন লিখবেন। বানিয়ে কোনো কিছু লেখার দরকার নেই। আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট, সে বিষয়টি নিয়ে লিখুন এবং কাজের স্যাম্পল যুক্ত করুন। 

    ২. স্কিলের পরীক্ষা: Upwork, Freelancer.com এর মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং স্কিল মেজারমেন্ট নামে একটা পরীক্ষা দেওয়া যায়। এগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সেটি আপনার প্রোফাইলে বাড়তি সুবিধা যুক্ত করবে। এই টেস্টগুলো বিনামূল্যে দেওয়া যায়। আর আপনি যদি টেস্টে খারাপ করেন তাহলে চাইলে ফলাফলটা লুকিয়ে ফেলতে পারবেন এবং আবার ১৪ দিন পরে পরীক্ষা দিতে পারবেন। কোনো ফ্রিল্যান্সার যদি ভালো স্কোর দেখাতে পারেন তাহলে তার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

    ৩. বুঝেশুনে রেট লিখুন: আপনি কী রকম প্রতি ঘণ্টা রেটে কাজ করতে আগ্রহী তার একটি সাধারণ ধারণা ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইলে দেয়া ঘণ্টা প্রতি রেট থেকে পায়। এটা ভেবেচিন্তে লিখবেন। 

    ৪. ভুল তথ্য দিবেন না: একাউন্ট তৈরির সময় কোনো প্রকার ভুল তথ্য দিবেন না। আপনার একাউন্টের নাম, এনআইডি এবং ব্যাংক একাউন্ট সব জায়গায় নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি একই হতে হবে। 

    কাজ অনুসন্ধান এবং আবেদন

    শুধু একাউন্ট খুলে বসে থাকলেই হবে না, আপনাকে কাজের অনুসন্ধান করতে হবে এবং সেই সাথে কাজের জন্য আবেদনও করতে হবে। 

    প্রথম কাজের ক্ষেত্রে যেই কাজে আপনি দক্ষ সেই কাজের জন্যই আবেদন করুন। আর খুব সতর্কতার সাথে কাজটি করবেন যাতে ক্লায়েন্ট আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ না দেয়৷ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে দুই ধরনের কাজ আছে। একটা হলো প্রজেক্ট এবং টাস্ক বেসিস, আরেকটা হলো আওয়ারলি বেসিস৷ 

    শুরুতে টাস্ক বা প্রজেক্ট বেসিসে কাজ করা গেলেই ভালো। কারণ একটা কাজ শেষ করতে আপনার ঠিক কতটা সময় লাগতে পারে, সে নিয়ে আপনার এখনো কোনো ধারণা, নাই থাকতে পারে। অভিজ্ঞ হওয়ার পরে যখন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে পারবেন, তখনই আওয়ারলি বেসিসে কাজ শুরু করতে পারেন৷ 

    একেক মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড বা আবেদন করার পদ্ধতি একেক রকম। অনেক জায়গায় মেইলের মাধ্যমেও কাজের আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে যেসব জিনিস মাথায় রাখবেন:

    • খুব বিনয়ের সাথে মেইল লেখা শুরু করবেন।
    • অল্প কথায় নিজের স্কিলগুলো তার কাছে তুলে ধরুন। 
    • ক্লায়েন্টের জব ডেস্ক্রিপশন অনুযায়ী তাকে বুঝান যে তিনি যা চাচ্ছেন, আপনার মধ্যে সেসব কোয়ালিটি আছে। 
    • তাকে বলুন যে আপনি নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই কাজটি শেষ করে দিতে পারবেন। 
    • তিনি যেন আপনার মেসেজ দেখে বুঝতে পারেন যে তিনি যা চাচ্ছেন আপনি তা খুব ভালোভাবেই করতে পারবেন। 
    • ক্লায়েন্ট যেই কাজ চাচ্ছেন, সেই কাজ আপনার পোর্টফোলিওতে থাকলে তাকে সেটা দেখান। 
    • তারপর বিনয়ের সাথে লেটারটি শেষ করুন। এটা বেশি বড় করবেন না। 

    জেনে নিন কিভাবে একটি সফল ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হয়!

    একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প

    সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে কী কী করনীয়, কীভাবে কাজ করতে হয়? কেমন ছিলো তৌহিদুর রহমানের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জার্নি? চলুন দেখে নেই ভিডিও থেকে!

     


    ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ২০টি শব্দ ও তার ব্যাখ্যা

    ফ্রিল্যান্স ইন্ডাস্ট্রিতে ফ্রিল্যান্সাররা প্রায়শই এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেন, যেগুলোর অর্থ আগে থেকে জানা না থাকলে মুশকিলে পড়তে পারেন। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য এখানে ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত ২০টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও তার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: 

    ১. ক্লায়েন্ট অন-বোর্ডিং: নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে আনার প্রক্রিয়া। 

    ২. ফিডব্যাক: ক্লায়েন্টের যদি কোনো কাজ পছন্দ না হয়, কিংবা কিভাবে কাজটা আরো ভালোমত করা যায় বা তার মনমতো হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তারা যেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

    ৩. ফলোআপ: কাজ নিয়ে ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার প্রক্রিয়া। এখানে কাজের অগ্রগতি কেমন, কোথাও কিছু বুঝতে সমস্যা হচ্ছে নাকি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

    ৪. ফ্রিল্যান্স কন্ট্র্যাক্ট: ফ্রিল্যান্স কাজের কনফারমেশনের জন্য ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে যেই কন্ট্র্যাক্ট হয়ে থাকে। এখানে কাজের শর্তগুলো উল্লেখ করা থাকে। 

    ৫. গিগ: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনি যেই সার্ভিস বা সেবা দিয়ে থাকেন৷ একে ফ্রিল্যান্স প্রজেক্টও বলা যায়।  

    ৬. আওয়ারলি রেট: প্রতি ঘণ্টায় একজন ফ্রিল্যান্সার যত টাকা চার্জ করেন।

    ৭. ইনভয়েস: কাজের বিল, যা দেখে পেমেন্ট দেওয়া হবে। 

    ৮. লিড জেনারেশন: কোনো বিজনেস সার্ভিসের জন্য পটেনশিয়াল কাস্টমার খুঁজে আনার প্রক্রিয়া। 

    ৯. পিচ: ক্লায়েন্টকে নিজের কাজ সম্পর্কে জানানোর জন্য ফ্রিল্যান্সার যেই প্রেজেন্টেশন দেয়। 

    ১০. পোর্টফোলিও: ফ্রিল্যান্সারের স্কিল, কাজের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও  জ্ঞানের স্যাম্পল। পোর্টফোলিও দেখেই একজন ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারের কাজের কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন৷  

    ১১. রিটেইনার: কোনো ফ্রিল্যান্সারকে বুকিং দেওয়ার জন্য ক্লায়েন্ট কাজের শুরুতেই যেই টাকাটা দিয়ে থাকেন। 

    ১২. টেস্টিমোনিয়াল: ক্লায়েন্টের স্টেটমেন্ট, যেইটা পড়ে ফ্রিল্যান্সারের সাথে তার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, সে আদৌ কাজটা ঠিকমত করেছিল কিনা, তার কী কী স্কিল রয়েছে এসব জানা যায়। 

    ১৩. টাইম ট্র‍্যাকিং: কোনো প্রজেক্ট করার জন্য ঠিক কত সময় লাগছে তা রেকর্ড করা। মূলত আওয়ারলি সিস্টেমে এটি ব্যবহার করা হয়। 

    ১৪. কনফিডেনসিয়াল ক্লজ: কন্ট্র্যাক্টের ভেতরে থাকা একধরনের শর্ত যা তৃতীয় পক্ষকে জানানো যাবে না। 

    ১৫. কন্সাল্টেশন: ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে কোনো প্রজেক্ট নিয়ে পরামর্শ চাওয়ার যেই পেইড কমিউনিকেশন। 

    ১৬. ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (আইপি) রাইটস: যেই কাজ করা হবে, ওইটার মেধাস্বত্ব ক্লায়েন্ট পাবেন নাকি তা নির্ণয় করা। অর্থাৎ কে পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই এই কাজটা বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন, তা একধরনের চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা।

    ১৭. কিল ফি: যদি ফ্রিল্যান্সার কাজ শুরু করে দেওয়ার পর ক্লায়েন্ট সেটা ক্যান্সেল করে দেন, তখন যেই অ্যামাউন্টটা ক্লায়েন্টের পে করতে হয়।

    ১৮. লেট ফি:  ক্লায়েন্ট পেমেন্ট নির্ধারিত সময়ে না দিতে পারলে তাকে বাড়তি যেই টাকাটা ফ্রিল্যান্সারকে দিতে হয়। 

    ১৯. ফিডব্যাক লুপ: প্রজেক্টটা যাতে ভালো হয়, সে জন্য ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হওয়ার প্রক্রিয়া। 

    ২০. কোল্ড ইমেইল: অনেক ফ্রিল্যান্সারেরই নিজেদের পছন্দের ক্লায়েন্ট থাকে, যাদের সাথে তারা কাজ করতে আগ্রহী। তারা কোনো ফ্রিল্যান্সার লাগবে এমন পোস্ট না দেওয়ার পরেও কিন্তু আপনি তাদেরকে নিজের পোর্টফোলিওটা মেইল করতে পারেন৷ এটাকেই কোল্ড মেইল বলে৷ এখানে সাধারণত আপনার কাজের স্যাম্পলের পাশাপাশি আপনি কেনো এখানে কাজ করতে চান, কেনো আপনাকে তাদের কাজে নেওয়া উচিত ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। 

     

    আপনার জন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টটি সঠিক, তা নির্ধারণ করবেন কিভাবে

    ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনি অনেকধরনের প্রজেক্ট বা গিগের সন্ধান পাবেন। কিন্তু তার মধ্যে থেকে কোনটা আপনার জন্য মানানসই, তা আপনাকে বুঝেশুনে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সব চাকরি আপনার মনমতো নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে পারেন:  

    প্রজেক্ট রিকোয়ারমেন্টে কী কী আছে:

    প্রথমেই দেখুন প্রজেক্ট ডেস্ক্রিপশনে কোন কোন জিনিস থাকার কথা বলা রয়েছে৷ রিকোয়ারমেন্টে মূলত প্রয়োজনীয় স্কিল, অভিজ্ঞতা এবং রিসোর্সের কথা বলা থাকে। একইসাথে ডেডলাইনও উল্লেখ করা থাকে। এগুলোর সাথে যদি আপনার স্কিল ও অভিজ্ঞতার মিল থাকে, পর্যাপ্ত সময় আপনার হাতে থাকে এবং আপনি যদি মনে করেন যে হ্যাঁ, এই কাজটা নিলে আমি ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে পারব, তাহলেই আবেদন করুন। 

    টাকা-পয়সা ছাড়া এই কাজ থেকে কী কী সুবিধা পেতে পারেন:

    ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধাদি বাদে এই প্রজেক্ট থেকে আপনি আর কী কী সুবিধা পেতে পারেন সেটা চিন্তা করুন। যদি এইটা কোন লং-টার্ম প্রজেক্ট হয়, তাহলে এটা করতে যেয়ে আপনি নতুন কোন স্কিল শিখতে পারবেন নাকি, আপনি আলাদা কোন সম্মান পাবেন নাকি না ইত্যাদি। যেমন, আপনি হয়তো টেক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। এখন আপনি এমন কোন এজেন্সির কাজ পেলেন, যারা এই নিশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তাই তাদের কাজটা করলে কিন্তু আপনার পোর্টফেলিও বেশ ভারি হবে, তাদের মাধ্যমে অনেকেই আপনার কাজের কথা জানবে। 

    মানসিক শান্তি সবার আগে:

    এমন কোনো কাজ করবেন না, যা আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধরা যাক একটা ১২ ঘণ্টার ক্লিপ দেখে ভিডিও এডিট করতে আপনার ন্যূনতম ৩ দিন সময় লাগবে। সেখানে আপনাকে বলা হলো ৬ ঘণ্টার মধ্যেই পুরো ভিডিও এডিট করে জমা দিতে হবে। তাহলে কিন্তু আপনার উপর অমানুষিক চাপ পড়বে এবং এই কাজটা করা হয়তো সম্ভবও নয়৷ তাই এমন কাজ এড়িয়ে চলবেন।

    আপনি যদি ফুলটাইম চাকরি করে থাকেন, তাহলে দেখুন চাকরি ম্যানেজ করার পাশাপাশি ছোটখাটো গিগ নেওয়া যায় নাকি। যদি ফুলটাইম চাকরির কাজের চাপ কম থাকে, তাহলে ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। তবে দুটোই সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করতে হবে।  

    ক্লায়েন্ট কী চান তা উনি নিজে জানেন কিনা:

    অনেকসময় অনেক জব ডেস্ক্রিপশন পড়ে ঠিকমতো বোঝা যায় না যে ক্লায়েন্ট আসলে কী চান। তাই যেসব ডেস্ক্রিপশনে পরিপাটি ক্লায়েন্টের সব চাহিদার কথা উল্লেখ করা থাকবে, সেগুলোই নির্বাচন করুন। যাতে ব্রিফ দেখলেই আপনি প্রজেক্টের আউটকামটা কল্পনা করতে ফেলতে পারেন। এতে করে দুই পক্ষেরই সময় বাঁঁচবে। নাহলে অযথা ক্লায়েন্ট ফিডব্যাক দিতে থাকবেন এবং আপনাকে সে অনুযায়ী এডিট করতে হবে। এটা বিশেষ করে গ্রাফিক ডিজাইনার বা ভিডিও এডিটরদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। ক্লায়েন্ট ঠিকমতো প্রজেক্টটা সম্পর্কে না জানার কারণে ডিজাইনারকে ঠিকমতো নির্দেশনা দিতে পারেন না, ফলে ডিজাইনারও তার মনমতো কাজ করতে পারেন না। 

    অন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে তিনি কী বলেছেন:

    ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে গেলে আপনার ক্লায়েন্ট অন্য ফ্রিল্যান্সারদেরকে কী রেটিং বা ফিডব্যাক দিয়েছেন, সেগুলো দেখতে পারেন। এতে করে বুঝবেন যে তিনি ঠিক কত সময় ধরে এখান থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন এবং অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাজ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নাকি। যদি ১০টার মধ্যে ৮টা ফিডব্যাকই নেতিবাচক হয়, তাহলে বুঝতে হবে এই ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করা একটু কঠিনই বটে! 

    ডেডলাইন চেক করুন:

    তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ না নিয়ে, হাতে সময় রেখে ঠিকমতো কাজটা শেষ করুন৷ কারণ তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে কোনো ভুল করে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার পুরো পেমেন্ট আটকে যেতে পারে কিংবা নেগেটিভ রিভিউ পেতে পারেন। আমরা সবসময় যেই ভুলটা করি সেটা হলো দ্বিগুণ রেট দেখে কাজটা লুফে নেই। কিন্তু ডেডলাইন যে সাধারণ সময়ের চেয়ে অর্ধেক থাকে, সেটা খেয়াল করি না৷ সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে কম সময়ে হয়তো মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া নাও আসতে পারে৷ এজন্য এসব কাজ হাতে সময় রেখে করা উচিত। 

     

    কিভাবে বুঝবেন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য তৈরি

    এতক্ষণ তো ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে অনেককিছুই জানা হলো৷ কিন্তু আপনি কি আদৌ এই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তৈরি? নাকি এখনো মনের মধ্যে একটু কনফিউশন আছে৷ দেখুন তো, নিচের পয়েন্টগুলো পড়ে কনফিউশন দূর হলো নাকি! 

    ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করার অনেক সুযোগ থাকলেও, অনেকে এই কালচারের সাথে তাল মেলাতে পারেন না। অনেকে কেবল ঝোঁকের বশেই সব বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেন৷ আবার অনেকে শুরু করেও শেষ পর্যন্ত আর ক্লায়েন্ট পান না। তাই আপনাকে আগে বুঝে নিতে হবে যে আপনি আসলেও এই কাজের জন্য তৈরি কিনা৷ 

    কারো অধীনে কাজ করা আপনার পছন্দ না

    ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। তাও আবার দিনের যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গায় বসে। অফিসে কাজ করতে গেলে দেখা যায় যেই কাজ পছন্দ না, সেই কাজও করতে হচ্ছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করলে আপনি আপনার পছন্দমতো কাজ বাছাই করে সেটা সম্পন্ন করতে পারবেন। 

    কিন্তু আপনি যদি বসের নির্দেশনা ছাড়া কাজ করতে না পারেন কিংবা কাজ করার জন্য আপনার অফিসের পরিবেশই প্রয়োজন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য না। 

    আপনি সবসময় আরো ভালো করার সুযোগ খোঁজেন

    আপনি যদি কাজ করতে যেয়ে নতুন স্কিল শিখতে চান বা আগের চেয়ে আরো ভালো করতে চান, সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং পেশা আপনার জন্য মানানসই। 

    আপনার যদি আসলেই কোনো স্কিলের প্রতি দক্ষতা থাকে

    ফ্রিল্যান্সিং জবের চাহিদা যেমন বেশি, এখানে প্রতিযোগিতাটাও বেশি৷ তাই এখানে কাজের অর্ডার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের থেকে ভালো হতে হবে৷ 

    ফুলটাইম ও পার্টটাইম চাকরির ব্যালেন্স করা জানতে হবে

    আপনি যদি এই দুই প্রকার চাকরির মধ্যে ব্যালেন্স না করতে পারেন, তাহলে কিন্তু ভালোই বিপদে পড়বেন। একদিকে আপনার বস আপনার প্রতি রাগ হবেন, অপরদিকে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে চলে যাবে। 

    নেগোসিয়েশন স্কিল থাকতে হবে

    ফ্রিল্যান্স সেক্টরে নেগোসিয়েশন করতে পারা খুবই ভালো একটি স্কিল। কারণ অনেকসময় দেখা যায় যে ক্লায়েন্টরা হয়তো উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে চান না। তখন আপনাকে তাদের সাথে কথা বলে একটি সমঝোতায় আসতে হবে যাতে দুই পক্ষেরই লাভ হয়। 

    কখন হ্যাঁ বলা উচিত আর কখন না বলা উচিত তা আপনি জানেন

    ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার জানা উচিত যে কখন কোন কোন কাজকে হ্যাঁ বলা উচিত, আর কোন কাজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। 

    একইসঙ্গে একাধিক জায়গায় কাজ করতে চান

    সাধারণ চাকরিজীবীরা একসাথে একাধিক জায়গায় কাজ না করতে পারলেও, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই সুযোগটা রয়েছে৷ কারণ এটা মূলত চুক্তিভিত্তিক কাজ। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দিতে পারলেই হলো৷ 

    সবসময় কাজ নাও পেতে পারেন

    ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কখনো অনেক কাজ থাকতে পারে, কখনো আবার কোন কাজই থাকে না। এতে করে যারা শুধু ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদের আয়ের ধারাবাহিকতাটা আর থাকে না। এমনকি বেতনের ক্ষেত্রেও একটা ঝুঁকি কাজ করে যে কোনো স্ক্যামারের পাল্লায় পড়লেন কিনা৷ এভাবে কাজের সংকটে পড়তে পারেন। তাই সবকিছু দেখে শুনেই কাজ নেওয়া উচিত। 

     

    ঘরে বসে Freelancing

    ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জেনে এবং বিগিনার স্কিল শিখে শুরু করুন আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। আজই এনরোল করে ফ্রিল্যান্সিং শিখুন এবং স্বল্প সময়ে ঘরে বসে আয় শুরু করুন।

     

    শেষ কথা

    এতদিন ফ্রিল্যান্সিং শেখা কিংবা ফ্রিল্যান্সার পেশা নিয়ে আপনাদের মনে যত প্রশ্ন ছিল, আশা করি একটু হলেও তার উত্তর আমরা দিতে পেরেছি। আসলে ফ্রিল্যান্সিং-এ দক্ষ হতে চাইলে প্রয়োজন এই বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের থেকে জ্ঞান অর্জন। সে জন্য ১০ মিনিট স্কুলের বিশেষ কোর্স “ঘরে বসে Freelancing”। এই কোর্সটি তৈরি করেছেন দীর্ঘদিন যাবত ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে লিড করা ফ্রিল্যান্সাররা। যা আপনাকে শূন্য থেকে শুরু করে একদম অ্যাডভান্সড পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তাই আজই এনরোল করুন, এই কোর্সটিতে।


    ক্যারিয়ারে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে, আজই ভিজিট করো আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সগুলোতে:


    তথ্যসূত্র:


    টেন মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com

    এছাড়াও যেকোনো জিজ্ঞাসায় কল করুন 16910 নম্বরে।

    আপনার কমেন্ট লিখুন