সমুদ্র ভালো লাগে না এমন মানুষের দেখা পেয়েছো কখনো?
সূর্যের আলোয় সিক্ত হয়ে রুপালি ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ে মিলিয়ে যায়। ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে সন্ধ্যা নামে। দূর সীমানায় রক্তিম সূর্য আর পানসে নীল সাগর একে অপরকে আলিঙ্গন করে। এমন অনবদ্য সৌন্দর্য দেখার পর কেউ মুখ ভার করে থাকলে সে সত্যিকার অর্থেই একটা হুতোম প্যাঁচা।
সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ে ইতোমধ্যে তুমি জেনে গেছো যে বাংলাদেশে মোট সাগর সৈকতের সংখ্যা হচ্ছে তিনটি। সেগুলো হচ্ছে কক্সবাজার, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা আর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা। এতো গেলো কেতাবি ভাষায় সমুদ্র সৈকতের সংখ্যা। কিন্তু প্রকৃতি বাংলার মাটিকে এতো কার্পণ্যভরে সাজায়নি। এই তিনটি ছাড়াও আরও প্রায় বারোটির মতো সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে রয়েছে। যেমন ধরো, ইনানি বিচ, পারকি, লালদিয়া, চরগঙ্গামতি আর কটকা, কাট্টালি, মান্দারবাড়িয়া, গুলিয়াখালি সহ আরও অনেকগুলো। প্রত্যেকটি সৈকত তোমাকে দেবে ভিন্ন অভিজ্ঞতা আর অপার সুন্দর প্রকৃতিকে অবলোকন করার অফুরন্ত সুযোগ।
দেশের সেরা কিছু সমুদ্র সৈকত নিয়ে আজকের এই লেখা। লেখা দিয়ে তো আর সমুদ্র সৈকতের সাবলীল সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও বোঝাতে পারবো না, তারপরও এই লেখায় কোন সমুদ্র সৈকতটি তোমার সবচেয়ে ভালো লাগলো দেখো তো ?
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
কক্সবাজার নামটির উৎপত্তি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের একজন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসারের নাম থেকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পর্যটক শহর কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বালুময় সমুদ্র সৈকত যার দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ১২০ কিমি। বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন আর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মাছের বন্দর এইখানেই অবস্থিত। কক্সবাজারের পুরনো দু’টি নাম আছে। একটি হল পানোয়া যার অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। আরেক নাম হচ্ছে পালংকি। শোনা যায়, মুঘল সম্রাট শাহ সুজা নাকি পাহাড়ি রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হন। শাহ সুজা কক্সবাজারেই তাঁর ক্যাম্প স্থাপন করার নির্দেশ দেন।
আরো পড়ুন: খাদ্যে খাদ্যে বিশ্বভ্রমণ : কয়েকটি দেশের জাতীয় খাবার
কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের মূল আকর্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে ঝিনুক মার্কেটসহ আরও অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান। আর কক্সবাজারের সীমানা পথে আছে মিয়ানমার আর থাইল্যান্ড। সেখানকার জিনিস নিয়ে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট। কক্সবাজার গিয়েও বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটা করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আমার মনে হয় সম্ভব না !
কক্সবাজার শহর থেকে দূরত্বে খানিকটা কাছে হওয়ায় লাবণী পয়েন্টই কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত। ছোট বড় অনেক রকমের জিনিসপত্রের বাহারি সব দোকান সাজিয়ে স্থানীয়রা পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি করেছে বাড়তি আকর্ষণ।
কক্সবাজার থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে রয়েছে হিমছড়ির ভঙ্গুর পাহাড় আর নয়নাভিরাম ঝর্ণা। আর এই হিমছড়ির সৌন্দর্য না দেখলে কক্সবাজার যাওয়াটাই বৃথা।
আর সূর্যাস্তের অপার্থিব মোহ তুমি নিজেই গিয়ে পরখ করে নিয়ো।
ইনানী সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার থেকে ২৭ কিমি দুরেই আছে প্রকৃতির আরেক অপরূপ উপাদান ইনানী বীচ। হিমছড়ি থেকে এটি প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত। ইনানী সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কক্সবাজারের উত্তাল ঢেউয়ের বিপরীতে পর্যটকেরা এখানে খুঁজে পান শান্ত সাবলীল ঢেউ। শান্ত সাগর মনে প্রশান্তির ঢেউ তুলে। ইনানী বীচে যাবার সময় মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুপাশে দেখা যায় ঝাউবনের সারি। আরও দেখা যায় হিমছড়ির পাহাড় আর তাঁর সাথে সমুদ্রের তীরের সাম্পান নৌকা। কক্সবাজার থেকে ইনানীতে আসতে চাইলে তোমার জন্য রয়েছে জীপ গাড়ির ব্যাবস্থা। বিকেল বেলায় এখানে পর্যটকের আনাগোনা কিছুটা কম থাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তুমি ইনানী বীচের সূর্যাস্তের দৃশ্যটা চোখবন্দি করে ফেলতে পারো!
ইনানী বীচের প্রবালে পা কাটলেও ইনানীর শান্ত সমুদ্রের সাবলীল সৌন্দর্য তোমার সেই দুঃখ ঘুচিয়ে দিবে!
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা নামের পেছনে ছোট একটা ইতিহাস আছে। আরাকানদের বার্মা থেকে তাড়িয়ে দিলে তারা এই অঞ্চলে এসে ঘাঁটি গড়ে তুলে।কিন্তু সমস্যা হল এখানে সুপেয় পানির অনেক অভাব। সেই সমস্যা দূর করতে তারা এই অঞ্চলে কুপ খন শুরু করে। সেই কুপ থেকেই আসে কুয়া আর কুয়াকাটা! ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সাগর কন্যার সবচেয়ে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত- দু’টিরই দেখা মিলে।
পূর্বদিকের গঙ্গামতির বাঁক থেকে তুমি সূর্যোদয়ের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবে। আর সূর্যাস্ত ভালোভাবে দেখতে চাইলে তোমাকে কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিমে যেতে হবে। মোটর সাইকেল আর ঘোড়া ভাড়া করে একপাশে সাগর আরেকপাশে নারকেল গাছের সারি দাঁড় করিয়ে তুমি সমুদ্র সৈকত চষে বেড়াতে পারবে।
সৈকত ধরে পূর্ব দিকে এগুতে থাকলে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে হাজার হাজার লাল রঙের কাঁকড়ার। এই লাল কাঁকড়াদের জন্য এই জায়গার নাম হয়েছে ক্র্যাব আইল্যান্ড। পূর্বদিকে আরও এগিয়ে গেলে তোমার চোখে পড়বে গঙ্গামতির খাল । এখানে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত শেষ হলেও গঙ্গামতির জঙ্গলের শুরু এখানেই। সেখানে বানর, বন মোরগ সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সাথে সাক্ষাৎ হবে তোমার। গঙ্গামতির জঙ্গলের ঠিক উল্টো পাশেই আছে ফাতরার বন। রাখাইনদের কেরানিপাড়ায় তুমি কুয়াকাটার সেই বিখ্যাত প্রাচীন কুয়া দেখতে পাবে। চাইলে রাখাইন নারীদের তৈরি শীতের চাদর সস্তায় কিনে ফেলতে পারো। সৈকত থেকে মাত্র আট কিমি দুরেই আছে মিশ্রিপাড়ার বৌদ্ধমন্দির। লোকমুখে শোনা যায়, এখানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এক প্রকাণ্ড ঘূর্ণিঝড় হয়। সেই ঘূর্ণিঝড়ে আহত পতেঙ্গা সৈকতে গেলে তোমার দেখা মিলবে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেড়িবাঁধের সাথে। চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা বীচ প্রায় ১৭ কিমি দূরে অবস্থিত।
মাত্র ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখতে পারবে তুমি। এখানে আরও আছে স্পীডবোট আর কাঠের তৈরি নৌকা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত খুব বেশি একটা চওড়া নয়। যার ফলে সাঁতার কাঁটার ব্যাপারটা এখানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র সৈকতের আশপাশেই রয়েছে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। আর রাতের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা থাকায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠেছে আরও বেশি আকর্ষণীয়। খুব ভোরে সমুদ্র সৈকতে গেলে তুমি সুন্দর একটি সূর্যোদয়ের দেখা পাবে।
সম্প্রতি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তৈরি হচ্ছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকয়ে। তাঁর সাথে থাকবে কিডস জোন। আর সবার জন্য থাকবে বিভিন্ন রকমের রাইড। মোট কথা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য প্রায় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।
তারুয়া
দ্বীপের দেশ ভোলার জেলা শহর থেকে প্রায় দেড়শ কিমি দূরে লোক চক্ষুর আড়ালে রয়েছে এক অনবদ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত। এই তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে তোমাকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৩৫ কিমি পাকা রাস্তা আর প্রায় ১৫ কিমি দীর্ঘ নদীপথ।
কিন্তু তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে পারলে এই দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি বোধ হয় আর থাকবে না। সমুদ্রের শুভ্র জলরাশির উত্তাল গর্জন, হরেক রকমের পাখির কিচির মিচির আর ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের শ্যামল সবুজাভ পরিবেশ তোমাকে ক্লান্ত শরীরকে সতেজ করে তুলবে। আরও আছে বন্য হরিণ আর লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। প্রায় দীর্ঘ ১০ কিমি এই সমুদ্র ভ্রমণের জন্য নির্ধারিত কোন নৌযান নেই। কাজেই তোমাকে স্পীডবোট কিংবা ট্রলার ভাড়া করতে হবে।
তারুয়া সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হল এটি এখন সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। তাই এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশটাও ঠিকঠাক মতো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যে তারুয়া সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের আকর্ষণের একটি অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
লালদিয়া
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে আছে লালদিয়া বন। এই লালদিয়া বনের পূর্ব প্রান্তে আছে ছোট্ট একটি সমুদ্র সৈকত যার নাম লালদিয়া সমুদ্র সৈকত। লালদিয়া সমুদ্র সৈকতে গাংচিলের আনাগোনা, লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবে। উপরি পাওনা হিসেবে আছে অতিথি পাখির দেখা মেলা। কুয়াকাটা থেকে ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই তুমি এই ছোট্ট স্বর্গের দেখা পাবে।
গুলিয়াখালী
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে তুমি এই অদ্ভুত সমুদ্র সৈকতের দেখা পাবে। এখানে কেওড়া গাছের বন সমুদ্রের অনেকটা ভিতরে চলে গিয়েছে। সবুজ ঘাসের সমারোহ দেখে তোমার মনে হবে কেউ হয়তোবা সবুজ রঙের কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে এখানে। আর মানুষের আনাগোনা কম হওয়ায় পরিবেশটাও এখানে বেশ শান্তশিষ্ট।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Video Making Course
আরও আছে বাঁশখালী আর খানখানাবাদ আর পারকি সমুদ্র সৈকত। এদের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য তোমাকে বারবার মুগ্ধ করবে।
লেখা তো পড়লে এবার দুই চোখ ভরে দেখার পালা। সমুদ্র সৈকত অভিযানে কবে নামছো?
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন