পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষক হিসেবে যোগদানের দু’বছরের কিছু বেশি সময় চলে গেলো। সাধারণত, আমার এই পরিচয়টি একান্ত প্রয়োজন না হলে সামনে আনি না। আমার উদ্যোক্তা পরিচয়টি নিয়েই আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করি। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। আজ সেরকম একান্ত একটি প্রয়োজন বলে বোধ হচ্ছে: গত ৮ জানুয়ারী হতে এফবিএস বা ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজ এর ২৩ তম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে।
গত দু’টি ব্যাচকে শুরু থেকে পড়ানো এবং বিভিন্নভাবে তাদের সাথে সংযুক্ত থাকার সুবাদে দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির একটা ফারাক রয়েছে তাদের ভেতরে, যেখান থেকে জন্ম নিচ্ছে হতাশা। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকেও ঝরে যেতে দেখছি এই হতাশা থেকে। সেই প্রেক্ষাপটেই এই লম্বা লেখা। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে লেখা তারপরও বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্যই কম-বেশি প্রযোজ্য।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিখন পদ্ধতি এবং পরিমাণ:
প্রথম কথা- বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর পড়তে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়া কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত করে আসা টাইপের পড়ালেখা না। এখানে ক্লাসে শিক্ষকের কাজ আপনাকে সবকিছু ধরে ধরে গুলিয়ে খাইয়ে দেয়া নয়। তাঁরা প্রধানত আলোচনা করবেন, ডিরেকশন ধরিয়ে দেবেন কিন্তু আসল পড়ালেখাটা করতে হবে আপনাকেই- স্ব-উদ্যোগে। সুতরাং এর আগে যেই আপনাকে বলে থাকুক না যে “ঢাবিতে ভর্তি হয়েছো, এখন তো অটোমেটিকালি পাশ করে বের হয়ে যাবে” – তার কথায় বিন্দুমাত্র কান দেওয়ার কোন কারণ নেই।
যে বলবে এমন কথা, আমি ভালোমত নিশ্চিত যে সে ঢাবিতে কখনো আধুনিককালে পড়েইনি। এখানে ফাইনাল ইয়ারে উঠেও মানুষ ফেইল করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়! তাই বলে সারাক্ষণ শুধু বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে থাকবো সেটাও ঠিক নয়। আমার অভিমত হলো ৬০% শিক্ষা হয় ক্লাসরুম আর পাঠ্যবইয়ের গণ্ডিতে আর ৪০% শিক্ষা হয় ক্লাসরুমের বাইরে।
আমিই সেরা:
“ঢাবিতে আমি সুযোগ পেয়েছি/স্কুল-কলেজে আমি ফার্স্ট ছিলাম তাই এখানেও থাকবো”- এটা একদমই ভুল ধারণা। এখানের সবাই কোথাও না কোথাও থেকে ফার্স্ট হওয়া। সুতরাং আপনি এখানেও খুব ভালো রেজাল্ট করবেন এটা আশা করা (এবং সেটা না পেয়ে হতাশ হওয়া/শিক্ষকের উপর দায় চাপানো) বাতুলতা মাত্র।
আপনার বিভাগ/শিক্ষক আপনার প্রতিপক্ষ নয়
সহপাঠী:
ঢাবির একটা অনন্য সাধারণ বিষয় হলো এখানে দিনমজুরের সন্তানেরাও পড়ে আবার দেশের শীর্ষ ধনীর সন্তানেরাও পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আপনাদের কাজ হল এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা এবং সেই অনুযায়ী সহমর্মী আচরণ প্রদর্শন করা। এখানে কেউ কারো প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া:
এই কথাটি অনেক শুনেছি যে স্যার মানিয়ে নিতে পারছি না। দেখুন, দিনশেষে কিন্তু আপনাকে সবখানে মানিয়ে নিতে পারাটা শিখতেই হবে। মানিয়ে নিতে না পারার কারণে যদি আপনি হারিয়ে যান, তাহলে ভুগবেন আপনি নিজে আর আপনার বাবা-মা। মানিয়ে নেয়াটাও কোন কঠিন কাজ নয়- সামান্য একটু “উইল পাওয়ার” বা ইচ্ছেশক্তি থাকলেই চলে।
শিক্ষক/বিভাগ:
আপনার বিভাগ/শিক্ষক আপনার প্রতিপক্ষ নয়। তাঁরা সবসময় আপনাদের ভালো-ই চান। কড়াকড়ি করলেও আপনাদের ভালোর জন্যই করে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সকলের ব্যবহার সমান ভালো নয়- কিন্তু সেটার কারণে সবাইকে ঢালাওভাবে প্রতিপক্ষ মনে করাটাও কিন্তু ভালো কথা নয়।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়:
আপনি ঢাবিতে সুযোগ পেয়েছেন বলে আপনিই বাংলাদেশের সেরা মেধাবী এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তাদের সকলেই গাধা/গরু- এই ধরণের সংকীর্ণ চিন্তা-ভাবনা অন্ততঃ ঢাবি’র কারো কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। শুধু একটি ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু কখনোই একজন মানুষকে বিচার করার মানদণ্ড হতে পারে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাটাও কিন্তু নেহাত কম নয়।
সর্বোপরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক রকমেরই সুবিধা-অসুবিধা আছে/থাকবে। রুটিনটা সবার মনঃপূত হবে না, সব শিক্ষকের ক্লাস ইন্টারেস্টিং লাগবে না, ক্লাসের সবাইকে ভালো লাগবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এগুলো কিন্তু জীবনের বেড়ে ওঠা বা সামাজিকীকরণেরই এক-একটা অংশ। তো, এগুলি নিয়ে ফেইসবুকে সম্ভব-অসম্ভব গালিগালাজ না করে/কথায় কথায় অভিযোগ না দিয়ে সেগুলোর সাথে “ডিল” করতে পারাটাই জীবনে এগিয়ে যাবার মূলমন্ত্র। কারণ, যে যা-ই বলুক না কেন, দিনশেষে কিন্তু “লাইফ ইজ নট ফেয়ার”।
সকলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মনোমুগ্ধকর এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হোক- এই কামনায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন